Thread Rating:
  • 14 Vote(s) - 3.21 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
বিপ্লব পোদ্দার- ব্যাংকার অফ দ্যা ইয়ার- complete
#46
বিজয়দা টানতে টানতে আমায় বাইরে নিয়ে গেলেন, প্রচণ্ড জোরে চিৎকার করে বলে উঠলেন ‘আপনি কি মানুষ! কিভাবে? কিকরে আপনি পারলেন! এইরকম বীভৎস একটা মৃতদেহের দিকে আপনি কি করে তাকিয়ে রয়েছেন?’ আমার হুঁশ ফিরল। হাবিলদারটা একটা জলের বোতল নিয়ে আমার দিকে এগিয়ে এলো। ভালো করে চোখেমুখে জলের ঝাপটা দিয়ে শান্ত করলাম নিজেকে। মনে পড়ল, মিতার কথা। সত্যি এই মুহূর্তে মিতার পাশে দাঁড়ানো ও ওকে স্বান্তনা দেওয়াই আমার প্রধান কর্তব্য। বিজয়দাকে প্রশ্ন করলাম ‘বিজয়দা, মিতা মানে রঞ্জনের স্ত্রী কি এসে গেছে?’ বিজয়দা একবার ওই হাবিলদারের দিকে তাকালেন। সেই আমাকে জবাব দিলো ‘হ্যাঁ, উনি এসে গেছেন। ওনাকে বাইরের ঘরটায় বসিয়ে এসেছি’ আমরা প্রত্যেকেই মিতার সাথে দেখা করতে চললাম। বেশ কিছুটা যাওয়ার পর দেখলাম মিতা সিঁড়ির ওপর বসে। মাথায় দুহাত দিয়ে রয়েছে, দেখেই মনে হচ্ছে, মানসিকভাবে সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত। আমিই সবার আগে এগিয়ে গেলাম। আমাকে দেখেই মিতা উঠে দাঁড়াল। আমি কিছু বোঝানোর আগেই বা স্বান্তনা দেওয়ার আগেই মিতা বলে উঠল ‘বিপ্লব আমার কি হবে! আমি তো দেউলিয়া হয়ে গেলাম!’ হাতটা মিতার মাথার দিকে নিয়ে যাচ্ছিলাম ওকে স্বান্তনা দিতে, লঘুমস্তিস্কের কোন এক জটিল প্রক্রিয়ায় হাতটা ওখানেই দাঁড়িয়ে গেলো। বলে কি মেয়েটা। ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠে সকলের সামনেই ও বলল ‘বিপ্লব, রঞ্জনের সমস্ত টাকা কোন এক ফেক আকাউন্তে রয়েছে। আমার হাতে ৩-৪ লাখ টাকা ছাড়া কিছু নেই। আমি তো দেউলিয়া হয়ে গেলাম’ শালা হাসবো না কাঁদবো তাই বুঝলাম না। সত্যিই কি তাহলে উচ্চবিত্তের আবেগও আমাদের থেকে আলাদা হয়। একটা মানুষ যে মিতার স্বামী ছিল সে মারা গেছে। আর আজ তার মৃত্যুর যন্ত্রণাকে হার মানিয়ে ওপরে উঠে আসছে একটা যন্ত্র যার নাম টাকা। টাকা দিয়ে এরা ভালোবাসা কেনে, শরীর কেনে, এগুলো আমি আগেই জানতাম এখন দেখছি টাকা দিয়ে এরা মানুষের আবেগও কিনে নেয়।
‘তুমি কোন চিন্তা করোনা। কোন না কোন একটা ব্যাবস্থা ঠিকই হয়ে যাবে’ এই কথাটা বলা ছাড়া আমার কাছে আর কোন উপায় ছিলনা। ‘মিতাদেবী আপনি এখন তাহলে বিপ্লববাবুর বাড়িতে উঠুন। যেকোনো সময় আপনাকে জেরা করার জন্য ডাকা হতে পারে’ হাতের রুমালটা দিয়ে চোখের জলটা একবার মুছে মিতা শুধু মাথাটা নাড়াল। ‘চলুন আপনাদের ছেড়ে দিয়ে আসি’ হাবিলাদারের কথায় আমার একটু স্বস্তি ফিরল। আমরা দুজনেই গাড়ির পেছনে বসে আছি। সামনে সেই হাবিলদার ও একজন ড্রাইভার। বিজয়দা ডাক্তারের সাথে কথা বলার জন্য ওখানেই থেকে গেলেন। হথাত দেখি আমার হাতের ওপর মিতার হাতটা এসে স্পর্শ করল। কিছুটা চমকে গিয়েই ওর দিকে তাকালাম। ‘বিপ্লব, আমাকে তুমিই বাঁচাতে পারবে। রঞ্জন আমায় কোনোদিন জানায়নি কোন নামে ওর আকাউন্ত আছে। শুধু এটাই জানি তোমাদের ব্যাঙ্কেই ওর আকাউন্ত আছে। তুমি যেভাবে হোক আমায় বাঁচাও। নয়ত আমি নিঃস্ব হয়ে যাবো’ আমি কোন জবাব দিলাম না। শুধুই সামনের দিকে তাকিয়ে থাকলাম। ‘কি অদ্ভুত এই পৃথিবী, একদিন এই মেয়েটিই চাইত যেন কোনমতেই আমার আর রমার বিয়ে না হয়। আমার সাথে রমার বিয়ে হওয়ার পর শুধুই গঞ্জনা আর হেয় হওয়া, তাও আজ সেই মানুষটিই আমার দুহাত ধরে অনুরোধ করে চলেছে। শুধু মিতাকে নিজের পাওনা গণ্ডা ফিরিয়ে দিতে নয়, রঞ্জনের আসল আকাউন্তটির ব্যাপারে আমারও জানা অত্যন্ত জরুরি। আজ আমায় যেভাবে হোক অফিসে যেতে হবে। আজ প্রায় ৩ দিন হয়ে গেলো আমি অফিস যাইনি।
লিফটে করে আমি ও মিতা দুজনেই ওপরে উঠছি। আমি ভেবে চলেছি কি করে লাখ লাখ আকাউন্তের মধ্যে থেকে একটা বেনামী আকাউন্ত আমি খুঁজে বার করব। বিজয়দার থেকেই জেনেছিলাম যে রঞ্জনের ফেক আকাউন্তটি মুম্বাইতে আছে। পরপর কতগুলো ঘটনা আমার মাথায় সেজেগুজে বসে গেলো। মনীন্দ্রদার খুন হওয়া, শর্মাজীর দ্বিতীয় প্রপসাল এবং তারপর রঞ্জনের খুন হওয়া। ‘স্পেশাল আকাউন্ত’ হ্যাঁ, সবার আগে এই টার্মটাই আমার মাথায় এসেছিল। আমাদের ব্যাঙ্কে কিছু স্পেশাল আকাউন্ত আছে। ব্যাঙ্কের অফিসিয়ালদের পার্সোনাল রেকমেনডেশনে কিছু আকাউন্ত খোলা হয়। এর জন্য ডকুমেন্ট ও যৎসামান্যই লাগে। এই পাসপোর্ট জাতীয় কিছু হলেই যথেষ্ট। মনিদা কেন খুন হলেন? এর পেছনে কোন সুনির্দিষ্ট কারন রয়েছে। মিতার দিকে তাকিয়ে বললাম ‘মিতা তুমি বাড়িতে ঢোক, রমা আছে। আমি একটু বাইরে থেকে আসছি’। মিতা কিছু বলল না, আমিও ঝড়ের বেগে ফ্ল্যাট থেকে বেরোতে শুরু করলাম। আমাদের অফিস অনেক সকালেই খুলে যায় কিন্তু স্টাফরা সবাই ১১ টা নাগাদ আসে। এটাই পারফেক্ট সময়। দ্রুত স্কুটারটা স্টার্ট দিয়ে অফিসের দিকে যেতে শুরু করলাম।
অফিসে যখন পৌছাই তখন প্রায় ৯ টা। সিকিউরিটি গার্ডটা আমাকে দেখে কিছুটা ভুরু কুঁচকে উঠে দাঁড়াল। আমিও হাত পা নাড়িয়ে বুঝিয়ে দিলাম ‘হেব্বি চাপ, বাপু। কাজ করতে হবে নয়ত স্যাক হয়ে যাবো’। দ্রুত অফিসে ঢুকে পড়লাম, হ্যাঁ সত্যিই আমি ছাড়া অন্য কোন স্টাফ এই মুহূর্তে নেই। কিন্তু আমার সিস্টেম থেকে তো আকাউন্ত সেকশন অ্যাকসেস করা যায়না। অতএব অন্য কারুর সিস্টেমে হাত মারতে হবে। সবচেয়ে বেস্ট চিনুর সিস্টেম। ওর আলাদা কেবিন রয়েছে, মেন এন্ট্রান্স থেকে চট করে কারুর নজরও পড়বে না। সঙ্গে সঙ্গে ওর সিস্টেমটা খুলে ফেললাম। আকাউন্ত সেক্সানে ক্লিক করতেই দেখি অলরেডি লগ ইন করা রয়েছে। মাথা থেকে একটা বিশাল চাপ নেমে গেলো। বিশাল লম্বা একটা লিস্ট। কারসারটা ধরে একদম নীচের দিকে নামতে শুরু করলাম। একদম তলার দিকে স্পেশাল আকাউন্ত এর একটা কলাম। কিন্তু এখানেও লিস্টটা বেশ বড়সড়। খুঁজে বার করা যথেষ্ট চাপের। কলামের একদম শেষ রো টার নাম ‘রেকমেনডেড বাই’। যদি আমার অনুমান সঠিক হয়ে যায় তাহলে আমি ৫ মিনিটের মধ্যেই রঞ্জনের ফেক আকাউন্তটি খুঁজে বার করে দেবো। ওই রো বরাবর মনিদার নাম খুঁজতে শুরু করলাম। কারসার ক্রমশ নীচের দিকে নামছে কিন্তু মনিদার নাম নেই। আমারও হতাশা বেড়েই চলেছে।
Like Reply


Messages In This Thread
RE: বিপ্লব পোদ্দার- ব্যাংকার অফ দ্যা ইয়ার- complete - by samss400 - 09-02-2020, 03:13 PM



Users browsing this thread: 4 Guest(s)