09-02-2020, 03:12 PM
17
ল্যাদ খেয়ে দাঁড়িয়ে আছি ফ্ল্যাটের বাইরে, কখন বিজয়দা রমাকে জিজ্ঞাসাবাদ সম্পূর্ণ করে আসবেন তার অপেক্ষায়। ‘বিজয়দা’ এই চরিত্রটি বড় বড় উপন্যাসের জটিল চরিত্রকে হার মানায়। কখনো মানুষটিকে চরম আদর্শবান ও সিস্টেমের প্রতি নিবেদিতপ্রান মনে হয় কখনো আবার সেই লোকটিই চরম রহস্যময়। আমি আর রমা যে হিন্দি সিনেমার আদব কায়দায় মধুকর ভিলা থেকে বেরইনি তা আমি খুব ভালো করেই জানি। এর পেছনে যে বিজয়দার অদৃশ্য হাত ও সহযোগিতা রয়েছে তা আমি ভালোই বুঝি। কিন্তু কেন? কেন এই লোকটি আমায় প্রতি মুহূর্তে এই রহস্যের সাথে ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে দিচ্ছে। কখনো কখনো বিজয়দাকে প্রচণ্ড সন্দেহ হয়। আসলে মানুষের চরিত্র একটা সাদা কালো নেগেটিভ ফিল্ম। এর সাদা স্পটগুলো সেই মানুষকে বিশ্বাস করতে বাধ্য করে আর নেগেটিভ স্পটগুলো সেই মানুষকেই চরম অবিশ্বাস করতে বাধ্য করে। আমি রয়েছি গোলকধাঁধায়, বিজয়দার অদ্ভুত ও অত্যন্ত আকর্ষক এই চরিত্র বিশ্লেষণে আমি সত্যিই অপারগ। তবে, এটা প্রচণ্ড সত্য যে এই মুহূর্তে ঘটে যাওয়া কিছু ঘটনায় আমার মনে কালো স্পটগুলোই ভেসে উঠছে। সত্যিই কি বিজয়দা এই খুনের সাথে জড়িয়ে? বিজয়দা যে ঘুষের টাকার কথা বলেছিলেন, অথবা হথাত করে বিজয়দা ও রঞ্জনকে একসাথে বিজি দেখতে পাওয়া, অথবা আমার বাড়িতে কিছুক্ষন আগে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো তো আমাকে বারবার বিজয়দাকে সন্দেহ করতে বাধ্য করছে। এইসবই ভাবছি এমন সময় দেখি বেশ হাসিহাসি মুখে বিজয়দা আমার দিকে আসছেন।
‘চলুন যাওয়া যাক’। বিজয়দার কথাটা শুনে তো মনে হচ্ছিল যে আমরা বোধ হয় ম্যাটিনি শো দেখতে যাচ্ছি। যাই হোক আমি গাড়িতে চেপে বসলাম। আমার ফ্ল্যাট থেকে হসপিটাল এমন কিছু দূর নয়। এই মিনিট দশেকের রাস্তা। বিজয়দার চোখে মুখে একটা প্রশস্তির ছাপ। যেন কোন এক অজানা ভয়কে উনি সবে মাত্র জয় করেছেন। অল্প কিছুক্ষনের মধ্যেই আমরা হাসপাতালে পৌছালাম। একটা ভুঁড়িওয়ালা হাবিলদার এগিয়ে এসে বিজয়দাকে বলল ‘স্যার, ময়নাতদন্ত হয়ে গেছে’ কিছুটা সিরিয়াস হয়ে বিজয়দা ওকে বললেন ‘ডাক্তারের সাথে মৌখিক কিছু পরামর্শ করতে বলেছিলাম তোমায়?’ সঙ্গে সঙ্গে উত্তর এলো ‘হ্যাঁ, স্যার, সবই জিজ্ঞেস করেছি। না, এবার সত্যিই আর সেই আফ্রিকান বিষ প্রয়োগ করা হয়নি। খুন হয়েছে এই রাত দুটো নাগাদ। শরীরের ওপর দিয়ে মোট ৫ বার ও মাথার ওপর দিয়ে মোট ২ বার গাড়ি চালিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে’ দুটো হাত দিয়ে প্রচণ্ড জোরে একটা শব্দ করে বিজয়দা আমার দিকে তাকালেন। আমি কিছুটা হতবাক হয়েই তাকিয়ে থাকলাম। ‘ব্যাস, আর কি পুরো কেসটাই তো হাতের মুঠোয় চলে এলো। এবার একটাই কাজ পড়ে রয়েছে। কি?’ আমারই মুখ দিয়ে নিজের অজান্তে একটা শব্দ বেরিয়ে এলো ‘চার্জসিট’। প্রচণ্ড জোরে অট্টহাস্য করে উঠলেন বিজয়দা। আবার মুখটা কিছুটা গম্ভীর করে আমার উদ্দেশ্যে বললেন ‘বউয়ের জন্য কিছু রাখা আছে তো? মানে এই ইনসিওরেন্স বা নগদ টাকা ইত্যাদি?’ কথাটা শুনে ওখানে দাঁড়িয়েই আমার পা থরথর করে কাঁপতে শুরু করে দিলো। তবে কি বিজয়দা...?
আমি বিজয়দার দিকে স্থিরদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকলাম। বিজয়দার দুটো অনুসন্ধিৎসু চোখ যেন আমার শরীরটা গিলে খেয়ে নেবে। আমার মাথার চুল থেকে পায়ের পাতা অবধি বারবার করে লক্ষ্য করতে শুরু করলেন। যেন আমার শরীরটা নয় শরীরের মধ্যে থাকা মনটাকে উনি রিড করতে চাইছেন। কিছুটা অধৈর্য হয়েই আমি বলে উঠলাম ‘কি বলতে চাইছেন আপনি?’ আবার একটা অট্টহাস্য। আমার কাঁধে একটা হাত রেখে বললেন ‘একটু সাইডে আসুন’ ওনার কথা শুনে সেই হাবিলদারটিই হেঁটে কিছুটা দূরে সরে গেলো। আমার সাড়া শরীরে এক অদ্ভুত শিহরন শুরু হয়েছে। তাহলে কি সত্যি বিজয়দাই...। ওনার ঠোঁটদুটো ধীরে ধীরে আমার কানের কাছে এসে গেলো। আমিও শুনতে চাই, উনি আমায় ঠিক কি বলতে চান। ‘আপনার কিছু হয়ে গেলে রমার কি হবে?’ সাথে অত্যন্ত নোংরা একটা হাঁসি। হাঁসিটার ইঙ্গিত হয়ত আমার নয় রমার দিকে। নিজেকে আর সংবরন করতে পারলাম না, কিছুটা চিৎকার বলেই বলে ফেললাম ‘বিজয়দা আপনি?’ সঙ্গে সঙ্গে বিজয়দার মুখের হাঁসিটা কর্পূরের মত উড়ে গিয়ে তার জায়গায় ভেসে এলো এক পর্বত কঠিন কঠোর মানসিকতার মানুষ। কিছুটা গলাটা গম্ভীর করে উনিও বলে উঠলেন ‘আমি কি?’ জানি বিজয়দার মত একজন পুলিশ অফিসারের সাথে লড়ার ক্ষমতা আমার নেই। তাই নিজেকে কিছুটা সংবরন করে নিয়ে কিছুটা কাতরভাবেই বললাম ‘আপনি কি চান বিজয়দা?’ এতো জটিল একটা প্রশ্নের উত্তরে শুধুই একটা অমলীন হাঁসি। এমন এক হাঁসি যার মধ্যে হাজারো রহস্য ও তার সমাধান লুকিয়ে রয়েছে। ‘চার্জশিট’ আবার ওই শব্দটাই উচ্চারন করলেন বিজয়দা। এই মানুষটা কে? এই পৃথিবীতে কি এনার আগমন শুধুই আমাকে মানব জনমের জটিলতা ও বাস্তবের কঠোরতা বোঝানোর জন্য? ‘চলুন মর্গের দিকে যাওয়া যাক’। আর কথা না বাড়িয়ে আমিও চলতে লাগলাম।
চারপাশে ক্ষতবিক্ষত মৃতদেহ। কোনটা সেলাই করা। কোনটার বা চোখগুলো বেরিয়ে আছে। কি বীভৎস, জানি রমা আসেনি ভালো হয়েছে। রমা সহ্য করতে পারতো না। কিন্তু আমি পারবো, বাবাইএর মৃত্যুকে আমি নিজের চোখে দেখেছি। দেখেছি কিভাবে একটা মানবদেহ থেকে ধীরে ধীরে প্রাণবায়ুটা বেরিয়ে যায়। শেষ ২ মিনিট বাবাই যখন ক্রমাগত হেঁচকি তুলে যাচ্ছিল আমার গলা দিয়ে কিছুতেই আওয়াজ বেরচ্ছিল না। চোখের সামনে যমরাজকে দেখেছিলাম। ‘সরি, নিজেকে নিয়ন্ত্রন করুন, স্ত্রীর পাশে থাকুন, আমরা আপনার ছেলেটাকে নিয়ে যাচ্ছি’ যেন যমরাজ এই কথাটাই আমার মুখের ওপর বলেছিল। আমি বুঝতে পারছিলাম বাবাইকে আমি বাঁচাতে পারবো না। ডাক্তার মৃতদেহর মুখের ওপর থেকে চাদরটা সরিয়ে নিল। কি বীভৎস! হাবিলদারটা ওয়াক করে একটা আওয়াজ করে দরজার দিকে দৌড়ে গেলো। বিজয়দাও দেখলাম মুখটা অন্যদিকে সরিয়ে নিয়েছে। কিন্তু আমি তাকিয়ে আছি। একটা মৃতদেহ; আমারই আত্মীয় রঞ্জনের। আমি ওই চেপ্টে যাওয়া নৃশংস মুখটার দিকে তাকিয়ে আছি। কে যেন হয়ত আমার বিবেক আমাকে প্রশ্ন করে চলেছে, ‘কি বিপ্লব, এই মৃতদেহটা কার? উচ্চবিত্তের? মধ্যবিত্তের? নিম্নবিত্তের? শোষকের? শোষিতর? জবাব দাও বিপ্লব। ব্যাখ্যা কর তোমার ওই বস্তাপচা তত্ব দিয়ে’। নিজের মনেই বিড়বিড় করে উঠলাম ‘এই মৃতদেহ একটা জানোয়ারের! টাকা নামক যন্ত্র দিয়ে যে গোটা পৃথিবীকে কুক্ষিগত করতে চেয়েছিল’ বীভৎস ওই নারকীয় পরিবেশে আর কেউ থাকতে পারছিলনা, আমি ছাড়া। খেয়ালই করিনি পেছন ঘুরে বিজয়দা আমার হাতটা ধরে টেনে টেনে বাইরে নিয়ে যাচ্ছে। ওরা কেউ আমার মুখের হাঁসিটা দেখেনি। আমি হাসছিলাম, আমি বিদ্রুপ করছিলাম, একটা জানোয়ার মরেছে, একটা বিপ্লব হয়েছে, সমাজ পাল্টাচ্ছে।
ল্যাদ খেয়ে দাঁড়িয়ে আছি ফ্ল্যাটের বাইরে, কখন বিজয়দা রমাকে জিজ্ঞাসাবাদ সম্পূর্ণ করে আসবেন তার অপেক্ষায়। ‘বিজয়দা’ এই চরিত্রটি বড় বড় উপন্যাসের জটিল চরিত্রকে হার মানায়। কখনো মানুষটিকে চরম আদর্শবান ও সিস্টেমের প্রতি নিবেদিতপ্রান মনে হয় কখনো আবার সেই লোকটিই চরম রহস্যময়। আমি আর রমা যে হিন্দি সিনেমার আদব কায়দায় মধুকর ভিলা থেকে বেরইনি তা আমি খুব ভালো করেই জানি। এর পেছনে যে বিজয়দার অদৃশ্য হাত ও সহযোগিতা রয়েছে তা আমি ভালোই বুঝি। কিন্তু কেন? কেন এই লোকটি আমায় প্রতি মুহূর্তে এই রহস্যের সাথে ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে দিচ্ছে। কখনো কখনো বিজয়দাকে প্রচণ্ড সন্দেহ হয়। আসলে মানুষের চরিত্র একটা সাদা কালো নেগেটিভ ফিল্ম। এর সাদা স্পটগুলো সেই মানুষকে বিশ্বাস করতে বাধ্য করে আর নেগেটিভ স্পটগুলো সেই মানুষকেই চরম অবিশ্বাস করতে বাধ্য করে। আমি রয়েছি গোলকধাঁধায়, বিজয়দার অদ্ভুত ও অত্যন্ত আকর্ষক এই চরিত্র বিশ্লেষণে আমি সত্যিই অপারগ। তবে, এটা প্রচণ্ড সত্য যে এই মুহূর্তে ঘটে যাওয়া কিছু ঘটনায় আমার মনে কালো স্পটগুলোই ভেসে উঠছে। সত্যিই কি বিজয়দা এই খুনের সাথে জড়িয়ে? বিজয়দা যে ঘুষের টাকার কথা বলেছিলেন, অথবা হথাত করে বিজয়দা ও রঞ্জনকে একসাথে বিজি দেখতে পাওয়া, অথবা আমার বাড়িতে কিছুক্ষন আগে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো তো আমাকে বারবার বিজয়দাকে সন্দেহ করতে বাধ্য করছে। এইসবই ভাবছি এমন সময় দেখি বেশ হাসিহাসি মুখে বিজয়দা আমার দিকে আসছেন।
‘চলুন যাওয়া যাক’। বিজয়দার কথাটা শুনে তো মনে হচ্ছিল যে আমরা বোধ হয় ম্যাটিনি শো দেখতে যাচ্ছি। যাই হোক আমি গাড়িতে চেপে বসলাম। আমার ফ্ল্যাট থেকে হসপিটাল এমন কিছু দূর নয়। এই মিনিট দশেকের রাস্তা। বিজয়দার চোখে মুখে একটা প্রশস্তির ছাপ। যেন কোন এক অজানা ভয়কে উনি সবে মাত্র জয় করেছেন। অল্প কিছুক্ষনের মধ্যেই আমরা হাসপাতালে পৌছালাম। একটা ভুঁড়িওয়ালা হাবিলদার এগিয়ে এসে বিজয়দাকে বলল ‘স্যার, ময়নাতদন্ত হয়ে গেছে’ কিছুটা সিরিয়াস হয়ে বিজয়দা ওকে বললেন ‘ডাক্তারের সাথে মৌখিক কিছু পরামর্শ করতে বলেছিলাম তোমায়?’ সঙ্গে সঙ্গে উত্তর এলো ‘হ্যাঁ, স্যার, সবই জিজ্ঞেস করেছি। না, এবার সত্যিই আর সেই আফ্রিকান বিষ প্রয়োগ করা হয়নি। খুন হয়েছে এই রাত দুটো নাগাদ। শরীরের ওপর দিয়ে মোট ৫ বার ও মাথার ওপর দিয়ে মোট ২ বার গাড়ি চালিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে’ দুটো হাত দিয়ে প্রচণ্ড জোরে একটা শব্দ করে বিজয়দা আমার দিকে তাকালেন। আমি কিছুটা হতবাক হয়েই তাকিয়ে থাকলাম। ‘ব্যাস, আর কি পুরো কেসটাই তো হাতের মুঠোয় চলে এলো। এবার একটাই কাজ পড়ে রয়েছে। কি?’ আমারই মুখ দিয়ে নিজের অজান্তে একটা শব্দ বেরিয়ে এলো ‘চার্জসিট’। প্রচণ্ড জোরে অট্টহাস্য করে উঠলেন বিজয়দা। আবার মুখটা কিছুটা গম্ভীর করে আমার উদ্দেশ্যে বললেন ‘বউয়ের জন্য কিছু রাখা আছে তো? মানে এই ইনসিওরেন্স বা নগদ টাকা ইত্যাদি?’ কথাটা শুনে ওখানে দাঁড়িয়েই আমার পা থরথর করে কাঁপতে শুরু করে দিলো। তবে কি বিজয়দা...?
আমি বিজয়দার দিকে স্থিরদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকলাম। বিজয়দার দুটো অনুসন্ধিৎসু চোখ যেন আমার শরীরটা গিলে খেয়ে নেবে। আমার মাথার চুল থেকে পায়ের পাতা অবধি বারবার করে লক্ষ্য করতে শুরু করলেন। যেন আমার শরীরটা নয় শরীরের মধ্যে থাকা মনটাকে উনি রিড করতে চাইছেন। কিছুটা অধৈর্য হয়েই আমি বলে উঠলাম ‘কি বলতে চাইছেন আপনি?’ আবার একটা অট্টহাস্য। আমার কাঁধে একটা হাত রেখে বললেন ‘একটু সাইডে আসুন’ ওনার কথা শুনে সেই হাবিলদারটিই হেঁটে কিছুটা দূরে সরে গেলো। আমার সাড়া শরীরে এক অদ্ভুত শিহরন শুরু হয়েছে। তাহলে কি সত্যি বিজয়দাই...। ওনার ঠোঁটদুটো ধীরে ধীরে আমার কানের কাছে এসে গেলো। আমিও শুনতে চাই, উনি আমায় ঠিক কি বলতে চান। ‘আপনার কিছু হয়ে গেলে রমার কি হবে?’ সাথে অত্যন্ত নোংরা একটা হাঁসি। হাঁসিটার ইঙ্গিত হয়ত আমার নয় রমার দিকে। নিজেকে আর সংবরন করতে পারলাম না, কিছুটা চিৎকার বলেই বলে ফেললাম ‘বিজয়দা আপনি?’ সঙ্গে সঙ্গে বিজয়দার মুখের হাঁসিটা কর্পূরের মত উড়ে গিয়ে তার জায়গায় ভেসে এলো এক পর্বত কঠিন কঠোর মানসিকতার মানুষ। কিছুটা গলাটা গম্ভীর করে উনিও বলে উঠলেন ‘আমি কি?’ জানি বিজয়দার মত একজন পুলিশ অফিসারের সাথে লড়ার ক্ষমতা আমার নেই। তাই নিজেকে কিছুটা সংবরন করে নিয়ে কিছুটা কাতরভাবেই বললাম ‘আপনি কি চান বিজয়দা?’ এতো জটিল একটা প্রশ্নের উত্তরে শুধুই একটা অমলীন হাঁসি। এমন এক হাঁসি যার মধ্যে হাজারো রহস্য ও তার সমাধান লুকিয়ে রয়েছে। ‘চার্জশিট’ আবার ওই শব্দটাই উচ্চারন করলেন বিজয়দা। এই মানুষটা কে? এই পৃথিবীতে কি এনার আগমন শুধুই আমাকে মানব জনমের জটিলতা ও বাস্তবের কঠোরতা বোঝানোর জন্য? ‘চলুন মর্গের দিকে যাওয়া যাক’। আর কথা না বাড়িয়ে আমিও চলতে লাগলাম।
চারপাশে ক্ষতবিক্ষত মৃতদেহ। কোনটা সেলাই করা। কোনটার বা চোখগুলো বেরিয়ে আছে। কি বীভৎস, জানি রমা আসেনি ভালো হয়েছে। রমা সহ্য করতে পারতো না। কিন্তু আমি পারবো, বাবাইএর মৃত্যুকে আমি নিজের চোখে দেখেছি। দেখেছি কিভাবে একটা মানবদেহ থেকে ধীরে ধীরে প্রাণবায়ুটা বেরিয়ে যায়। শেষ ২ মিনিট বাবাই যখন ক্রমাগত হেঁচকি তুলে যাচ্ছিল আমার গলা দিয়ে কিছুতেই আওয়াজ বেরচ্ছিল না। চোখের সামনে যমরাজকে দেখেছিলাম। ‘সরি, নিজেকে নিয়ন্ত্রন করুন, স্ত্রীর পাশে থাকুন, আমরা আপনার ছেলেটাকে নিয়ে যাচ্ছি’ যেন যমরাজ এই কথাটাই আমার মুখের ওপর বলেছিল। আমি বুঝতে পারছিলাম বাবাইকে আমি বাঁচাতে পারবো না। ডাক্তার মৃতদেহর মুখের ওপর থেকে চাদরটা সরিয়ে নিল। কি বীভৎস! হাবিলদারটা ওয়াক করে একটা আওয়াজ করে দরজার দিকে দৌড়ে গেলো। বিজয়দাও দেখলাম মুখটা অন্যদিকে সরিয়ে নিয়েছে। কিন্তু আমি তাকিয়ে আছি। একটা মৃতদেহ; আমারই আত্মীয় রঞ্জনের। আমি ওই চেপ্টে যাওয়া নৃশংস মুখটার দিকে তাকিয়ে আছি। কে যেন হয়ত আমার বিবেক আমাকে প্রশ্ন করে চলেছে, ‘কি বিপ্লব, এই মৃতদেহটা কার? উচ্চবিত্তের? মধ্যবিত্তের? নিম্নবিত্তের? শোষকের? শোষিতর? জবাব দাও বিপ্লব। ব্যাখ্যা কর তোমার ওই বস্তাপচা তত্ব দিয়ে’। নিজের মনেই বিড়বিড় করে উঠলাম ‘এই মৃতদেহ একটা জানোয়ারের! টাকা নামক যন্ত্র দিয়ে যে গোটা পৃথিবীকে কুক্ষিগত করতে চেয়েছিল’ বীভৎস ওই নারকীয় পরিবেশে আর কেউ থাকতে পারছিলনা, আমি ছাড়া। খেয়ালই করিনি পেছন ঘুরে বিজয়দা আমার হাতটা ধরে টেনে টেনে বাইরে নিয়ে যাচ্ছে। ওরা কেউ আমার মুখের হাঁসিটা দেখেনি। আমি হাসছিলাম, আমি বিদ্রুপ করছিলাম, একটা জানোয়ার মরেছে, একটা বিপ্লব হয়েছে, সমাজ পাল্টাচ্ছে।