Thread Rating:
  • 14 Vote(s) - 3.21 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
বিপ্লব পোদ্দার- ব্যাংকার অফ দ্যা ইয়ার- complete
#43
কিছুটা ভয়েই আমি ফোনটা রিসিভ করলাম ও ওপাশ থেকে কোন কথা ভেসে আসার আগেই উত্তর দিলাম ‘শর্মাজী, সত্যি বলতে আমি এখনো লোণের টাকাটা জোগাড় করতে পারিনি। আমার কিছুদিন সময় লাগবে’ একটা বিকট অট্টহাস্য ও ওপাশ থেকে ভেসে এলো রহস্যময় এক প্রস্তাব। ‘আরে ধুর বোকা, কে আপনাকে লোণের জন্য তাগাদা করছে। আপনার ওপর আমার ফুল বিসবাস আছে। হামি ফোন করেছি দুসরা একটা প্ল্যান লিয়ে। এতো মুনাফা দেবো যে আপনি জিন্দেগী ভর হামায় ইয়াদ রাখবেন’ আমি তো প্রায় থ হয়ে গেছিলাম। কি এমন প্রস্তাব! শর্মাজীর পরের প্রস্তাবটা সত্যিই আমার পক্ষে মেনে নেওয়া সম্ভব ছিলনা। ‘রঞ্জন, আপনার সম্বন্ধী আছে?’ ওর মুখে রঞ্জনের নাম শুনে আমি সত্যিই কিছুটা চমকে উঠেছিলাম। ‘ওই শালা হারামজাদাটা আমার এক নাম্বারেরর কম্পিটিটর আছে। ও শালা আমার চেয়েও বড় জালী’ রঞ্জনের ওপর রাগ তো আমার বরাবরই ছিল। রঞ্জনের দুনাম্বারি ব্যাবসাটা ঠিক কিসের ওপর তা সত্যিই আমি জানতাম না। শর্মাজীই ছিল একমাত্র উৎস যার থেকে আমি সব জানতে পারি। আমিও শর্মাকে টোপটা দিলাম। কিছুটা শর্মার সাথে গলা মিলিয়ে বললাম ‘আরে বলবেন না, এক নাম্বারের নচ্ছার লোক। আমাকে তো মানুষ বলেই মনে করেনা। ওর কোন সর্বনাশ করতে পারলে আমি নিজেকে ধন্য মনে করব’ সঙ্গে সঙ্গে শর্মার উৎফুল্ল হয়ে ওঠা কণ্ঠস্বর ভেসে এলো ‘আরে হারামিটা বেনামে ব্যাঙ্ক আকাউন্ত খুলেছে। ওর বেশির ভাগ ক্যাশ ওই আকাউন্তেই থাকে। একসাথে গরমেনট, পুলিশ সবাইকে চুনা লাগাচ্ছে। ওর কাছে কোটি কোটি টাকার ব্ল্যাক মানি রয়েছে’ আমি তো অবাক হয়ে গেলাম। আমাদের ব্যাঙ্কে যে কিছু ফেক আকাউন্ত আছে টা আমার জানা। কিন্তু সেগুলো সবই ভিভিআইপিদের। রঞ্জনও যে ফেক আকাউন্তে টাকা রাখে তা সত্যিই আমার জানা ছিলনা। আসলে এইসব ফেক আকাউন্তের ব্যাপারে সামান্য কিছু তথ্য আমার কাছে থাকলেও সেভাবে আমি বিশদে জানতাম না। কারন এগুলো সবই অফিসিয়াল লেভেলের ব্যাপার সাপার। আমি তো সামান্য লোণ সেক্সানের কর্মচারী।
শর্মাজীর পরের কথাটায় আমার বিচি মাথায় উঠে গেছিল। ‘কি করতে হবে তা বাদ মে বলছি। লেকিন আগে কমিশনটা জেনে লিন। পুরা ৫০ লাখের কমিশন’ শালা বাপের জন্মে কখনো ৫০ লাখ কামাতে পারবো বলে ভাবিনি। কিন্তু এটাও জানতাম যে কাজটার মধ্যেও ৫০ লাখের রিস্ক আছে। সেই কারনে নিজেকে সংবরন করে উত্তর দিয়েছিলাম ‘টাকাটা বড় কথা নয় শর্মাজী। আগে কাজটা শুনি। আর এটা বোঝেন তো যে রঞ্জন আমার রিলেটিভ’ একটা অট্টহাস্য আর তার সাথে সাথেই শর্মাজীর গলাটা ভেসে আসে। ‘আরে, দাদা, রিস্ক হি লিলেন না তো লাইফে কি লিবেন! শোনেন আপনাকে হামি চোরি ভি করতে বলছিনা আর ডাকা ভি ডালতে বলছিনা। আপনার কাজটা খুব সিম্পিল আছে। আপনি খোঁজ লিন, কোন নামে রঞ্জনের ফেক আকাউন্ত আছে। আর সেটা গরমেনট কে ফাঁস করে দিন। ব্যাস, কাম খতম’ শর্মাজীর কাছে ব্যাপারটা ঠিক যত সরল ছিল আমার কাছে ততটাই কঠিন। কারন ফাঁস করতে আমার কয়েকটা মাস সময় লাগবে। কিন্তু এতে আমার ব্যাঙ্কিং ক্যারিয়ার একদম শেষ হবে। যে কাজটা এতদিন ধরে দুবেলা ভাত জুগিয়ে গেছে তার সাথে বেইমানি করার কথা ভাবতেও পারিনি। প্রথম শোনার পর থেকেই আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম কখনোই শর্মাজীর দ্বিতীয় প্রপসালটা একসেপ্ট করবোনা। তা রঞ্জনের ওপর আমার যতই রাগ থাকুক না কেন। ‘দাদা, একটু শুধু মেহনত করতে হবে। কারন ওর ফেক আকাউন্তটা কলকাতা নয়, মুম্বাইএর ব্রাঞ্চে রয়েছে। এবার আপনার দায়িত্ব এটা যে আপনি কি করে মুম্বাই এর ব্রাঞ্চ থেকে ওর আকাউন্তটার হদিশ জানবেন’ সেদিন আমি শুধু একটাই কথা বলেছিলাম ‘ভেবে দেখছি’। মন থেকে কোনোদিনই এই কাজটা গ্রহন করতে পারিনি তাই একসেপ্ট ও করিনি। আমি বেচু হই আর চাপরাশি কখনো নিজের প্রফেশনের সাথে বেইমানি করতে পারবোনা।
রমা এখনো বাথরুমে। আমি শুধু ভেবে চলেছিলাম; শর্মাজীর এই দ্বিতীয় প্রপসালটার সাথে রঞ্জনের খুন হওয়ার বেশ ভালোই যোগ রয়েছে। এমনসময় হথাত কলিং বেলটা বেজে উঠল। জানি বিজয়দাই এসেছে। দরজা খুলতে যাচ্ছি এমনসময় হথাত ই মনে পড়ল যে রমা বাড়িতে থাকা অবস্থায় এর আগে কখনোই বিজয়দা আসেনি। বিজয়দা রমাকে মাত্র একবারই দেখেছে; রমাকে দ্বিতীয় হুগলী সেতুর থেকে উদ্ধার করার সময়। যেকোনো মানুষ সে যত চালাকই হোক না কেন, শরীরের ভাষায় অনেক কিছু প্রকাশ পায়। না কথাটা আমার নয় আমার গুরু প্রদোষ মিত্তিরের। অর্থাৎ এই মুহূর্তে আমার একটাই লক্ষ্য, বিজয়দাকে ভালো করে পর্যবেক্ষণ করা ও ওনার সাথে কিছুই না বোঝার অভিনয় করে যাওয়া।
আমি দরজাটা খুলে দিলাম। হ্যাঁ, বাইরে বিজয়দাই কিছুটা গম্ভীর মুখে দাঁড়িয়ে আছে। ভেতরে আসতে বলব তার আগেই উনি নিজের থেকে ভেতরে প্রবেশ করে গেলেন। দরজাটা লক করব এমন সময়েই উনি বলে উঠলেন ‘বিপ্লব বাবু সমস্ত রহস্যটা আরও জটিল হয়ে গেলো’ আমি দরজাটা বন্ধ করতে করতে উত্তর দিলাম ‘হুম, ঠিকই বলেছেন। সেদিন যদি আমি এতটা ভুল না করতাম!’ সঙ্গে সঙ্গে বিজয়দা উত্তর দিলেন ‘ছাড়ুন, ওই কথা যা হওয়ার তা হয়ে গেছে। কিন্তু একটা সামান্য ক্লু আমি পেয়েছি। এবং তা আপনাকে না জানিয়ে সত্যিই পারলাম না’ আমিও কিছুটা উদ্বেগের ভান করে বললাম ‘কি ক্লু বিজয়দা?’
‘বিপ্লব বাবু, এতদিন ধরে আমরা ভাবছিলাম রবির খুনটা একটু তাড়াহুড়ো করে হয়ে গেছিল। কিন্তু মনীন্দ্র বাবুর খুনটা ছিল একদম প্রিপ্ল্যানড। ওই সিরিয়াল কিলিং এ ঠিক যেরকম হয়, সেরকম’। বিজয়দার কথা শুনে আমিও মাথা নাড়লাম কারন সত্যিই আমারও মত তাই। মনীন্দ্র বাবুকে প্রথমে স্লো পয়সন ও তারপর ছাদ থেকে ফেলে খুন করা হয়েছিল। খুনের পদ্ধতি যথেষ্ট পরিকল্পনামাফিক। এইসব ভাবতে ভাবতেই বিজয়দা বলে উঠলেন ‘আজকের খুনের পর নতুন একটা লিঙ্ক মাথায় এসেছে। তা হোল দ্বিতীয় হুগলী সেতু’ আমি প্রায় চমকে গিয়ে বললাম ‘কি, খুনের সাথে দ্বিতীয় হুগলী সেতুর সম্পর্ক?’ মনে মনে ভাবলাম ‘লোকটা কি সত্যিই ভাঁট বকছে নাকি সত্যিই কোন সম্পর্ক আছে’। আমার কথা শেষ হতে না হতেই বিজয়দা বললেন ‘রবির মৃতদেহ পাওয়া গেছিল দ্বিতীয় হুগলী সেতুর ঠিক নীচে। আর রঞ্জনের মৃতদেহও পাওয়া গেলো দ্বিতীয় হুগলী সেতুতে। আরেকটা অদ্ভুত জিনিষ জানেন; মনীন্দ্র বাবুর ময়না তদন্তের রিপোর্টে জানা গেছে যে ছাদ থেকে ফেলে দেওয়ার আগে ওনার সাথে খুনির যথেষ্ট ধ্বস্তাধস্তি হয়েছে’ আমিই ওনাকে চুপ করিয়ে বললাম ‘না, বিজয়দা, আপনার এই যুক্তিটা আমি কিছুতেই মানতে পারছিনা। দ্বিতীয় হুগলী সেতুর ব্যাপারটা নেহাতই কাকতালীয়। কারন, আমি গতরাতে সত্যিই শানের দেখা পেয়েছিলাম। ওর মুখ দেখতে পাইনি কিন্তু কণ্ঠস্বর শুনতে পেয়েছিলাম। চেষ্টা করেছিল গলাটা বিকৃত করে আমার সাথে কথা বলতে। কিন্তু আমি নিশ্চিত ছিলাম যে রঞ্জনই আসলে শান। এবার দেখুন, কোলাঘাট থেকে কলকাতা আসতে গেলে দ্বিতীয় হুগলী সেতু হয়েই আসতে হবে। দ্বিতীয় কোন রাস্তা নেই’ আমাকে মাঝপথেই থামিয়ে প্রচণ্ড জোরে চিৎকার করে উনি বলে উঠলেন ‘কিন্তু দ্বিতীয় হুগলী সেতুই কেন? অন্য কোন জায়গা কেন নয়?’ সত্যিই আমার কাছে এই প্রশ্নের উত্তর ছিলনা।
নিজেকে কিছুটা সংযত করে বিজয়দা বললেন ‘ভালো করে বুঝুন। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট, খুনের স্টাইল এসব থেকে একদম পরিস্কার যে মনীন্দ্র বাবুকে খুন করেছিলেন মোট দুজন আলাদা আলাদা সময়। প্রথম খুনী একজন নারী, যিনি মদের গ্ল্যাসে বিষ মিশিয়েছিলেন এবং দ্বিতীয় খুনি একজন পুরুষ যিনি মনীন্দ্র বাবুকে ওপর থেকে নীচে ফেলে দিয়েছিলেন’ শুধুই চুপ করে শুনে যাওয়া ছাড়া আমার কাছে দ্বিতীয় কোন উপায় ছিলনা। ‘শুধু তাই নয়, সেই নারী ও পুরুষ দুজনেই জানতেন না যে তারা প্রত্যেকেই খুনের মোটিভ নিয়ে এসেছেন। পরে উভয়েই জানতে পারেন। এবং তার পর থেকেই খুনের স্টাইলটা চেঞ্জ হয়ে যায়’ হুম, সত্যিই বিজয়দার লজিকে দম আছে। এই ব্যাপারটা আমার মাথায় আগে আসেনি। কিন্তু সবার আগে আমায় যা বুঝতে হবে তা হোল রঞ্জন ঠিক কিভাবে খুন হয়েছে? আমি বিজয়দাকে জিজ্ঞেস করলাম ‘আচ্ছা, বিজয়দা, রঞ্জনের খুনটা ঠিক কিভাবে হয়েছে?’ সঙ্গে সঙ্গে বিজয়দার উত্তর ‘আরে মশাই এটাই তো সবচেয়ে জটিল ব্যাপার। এবারের খুনের সাথে আগের খুনগুলোর কোন মিল নেই। এর আগের প্রতিটা ম্রিতদেহে একটা কমন ব্যাপার ছিল। মৃত্যুর আগে মুখ দিয়ে গ্যাঁজা উঠেছে। অর্থাৎ বিষ প্রয়োগ হয়েছে। কিন্তু এক্ষেত্রে তা হয়নি। অর্থাৎ বিষ প্রয়োগ হয়নি’ আমি আর ধৈর্য রাখতে পারলাম না। জিজ্ঞেস করেই বসলাম ‘তাহলে খুনটা কিভাবে হয়েছে?’
Like Reply


Messages In This Thread
RE: বিপ্লব পোদ্দার- ব্যাংকার অফ দ্যা ইয়ার- complete - by samss400 - 09-02-2020, 03:10 PM



Users browsing this thread: 6 Guest(s)