09-02-2020, 03:09 PM
16
বিজয়দার কথা শুনে আমার হ্রিদস্পন্দন প্রায় স্তব্ধ হয়ে গেলো। এটা কি করে হয়! আমি তো ওর গলা শুনে চিনে ফেলেছিলাম যে ওই শান। এমনকি মেকআপ লোশন দিয়ে প্রলেপ লাগানোর পরও আমি ওর হাতের কালো দাগটা চিনতে পেরেছিলাম। এটা কি করে হয়। আমাকে নির্বাক থাকতে দেখে বিজয়দাই বললেন ‘নিজেকে শান্ত করুন, বিপ্লববাবু, সত্যিই রঞ্জন খুন হয়েছে। আপনার মত আমারও সন্দেহের তালিকায় এক নম্বরে ওই ছিল। ওই যে শান তার বেশ কিছু সুনির্দিষ্ট প্রমান আমার হাতে ছিল, কিন্তু তা ওকে গ্রেফতার করার জন্য যথেষ্ট ছিলনা’ নিজেকে কোনরকমে শান্ত করলাম। এতদিন ধরে ধীরে ধীরে আমি রহস্যের জালটা গুটিয়ে এনেছিলাম রঞ্জন তথা শানের মৃত্যুতে রহস্যের জালটা আরও বুনিয়াদ হয়ে গেলো। কিছুটা আক্ষেপের স্বরেই বললাম ‘বিজয়দা, সব আমার দোষ। আমার সেদিন ওরকম আবেগপ্রবণ হয়ে ওখান থেকে চলে আসা উচিত হয়নি। আমি ওখানে থাকলে আরও কিছু তথ্য জোগাড় করতে পারতাম’ বিজয়দা কিছুটা গম্ভীর হয়ে বললেন ‘কি বলেছিলাম বিপ্লব বাবু, নিজেকে শারলক হোমস ভাববেন না। আপনার থেকে ওদের মস্তিষ্ক অনেক বেশী উর্বর। আপনাকে এই রহস্যটা আবার প্রথম থেকে ভাবতে হবে’। বিজয়দা ফোনটা কেটে দিলো।
একটা অদ্ভুত জিনিষ আমি লক্ষ্য করলাম। রঞ্জনই যে শান এবং আমি তাকে চিনতে পেরেছি এই কথা আমি বিজয়দাকে একবারের জন্যও বলিনি। বিজয়দা বারবার দাবী করে এসেছেন যে উনি জুলি কে চিনতে পেরেছেন। কিন্তু একবারও দাবী করেন নি যে উনি শানকেও চিনতে পেরেছেন। বরঞ্চ শানকে চিনতে পাড়ার জন্যই আমাকে আর রমাকে মধুকর ভিলায় পাঠানো। আরও একটা অদ্ভুত জিনিষ, বিজয়দার কাছ থেকে ‘নিজেকে শারলক হোমস ভাববেন না, পুলিশ আপনার চেয়ে বেশী বুদ্ধিমান’ এই কথাটা আমি অন্তত ১০০ বার শুনেছি। কিন্তু আজ কথাটা একটু হলেও পরিবর্তিত। ‘কি বলেছিলাম বিপ্লব বাবু, নিজেকে শারলক হোমস ভাববেন না। আপনার থেকে ওদের মস্তিষ্ক অনেক বেশী উর্বর। আপনাকে এই রহস্যটা আবার প্রথম থেকে ভাবতে হবে’- এর সাথে সাথে ফোনটা কাটার আগে এক অদ্ভুত সন্তোষজনক হাঁসি। কিসের সন্তোষ? আমার মত পুলিশেরও তো সমস্ত ভাবনা চিন্তায় জল মিশে গেছে। তাহলে কেন হতাশার স্থলে এই সন্তোষ। আমি যে রঞ্জনকে চিনতে পেরেছি তা কোনমতেই বিজয়দার জানা সম্ভব নয় যদি না রঞ্জন নিজে বিজয়দাকে...
আবার কেমন সমীকরনগুলো মিলে যেতে শুরু করল। এই চক্রটাকে আজ ১০ বছর ধরে আমি খুঁজে চলেছি। কখনো ব্যাঙ্কের নেটওয়ার্কে, কখনো ফেসবুকে অথবা কখনো ব্যাক্তিগতভাবে। প্রতিটা ক্ষেত্রেই বুঝেছি, মুখ্য অপারেটর শান। কিন্তু এই প্রমান আমি কখনো পাইনি যে শানই এই চক্রটার মাথায় রয়েছে। আজকে অন্তত আমি নিশ্চিত যে শান এর মাথায় নয়, এর মাথায় অন্য কেউ। যে শানকে সরিয়ে দিয়ে বিশাল একটা মিসিং লিঙ্ক তৈরি করে দিলো। সন্দেহের তালিকায় মোট দুজন। কিন্তু নিশ্চিতভাবে কিছুই বলা সম্ভব নয়। স্কুটারটা নিয়ে যে কতক্ষন দাঁড়িয়ে রয়েছি সেদিকে কোন খেয়াল নেই। হথাত হুঁশ ফিরল, বাড়িতে রমা একা রয়েছে, যত দ্রুত সম্ভব আমায় ওখানে পৌঁছে যেতে হবে।
প্রচণ্ড বেগে স্কুটারটা চালিয়ে চলেছি আর মাথার মধ্যে দুটো নাম বারবার করে কিলবিল করে উঠছে। বিজয় সামন্ত ওরফে বিজয়দা এবং শর্মাজী। বিজয়দা সবচেয়ে বেশী রহস্যময়। আমার বাড়িতে এলেন, কিন্তু কখন এলেন তা আমি ছাড়া কেউ জানেনা। মদ্যপান করলেন, প্রচণ্ড মাতলামি করলেন। এই রহস্যটা নিয়ে পুলিশ ডিপার্টমেন্ট ঠিক কি ভাবছে তা আমার সামনে গড়গড় করে সব বলে দিলেন। এতদিনের অভিজ্ঞ একজন পুলিশ অফিসার কি এতটাও ভুল করতে পারেন! যতই হোক পুলিশের সন্দেহে প্রত্যেকেই থাকে। আর শর্মাজী সেই দুর্গা পুজার দিন থেকে আজ অবধি লোকটা সত্যিই প্রচণ্ড রহস্যময়। রঞ্জনের ক্ষতি করার জন্য আমাকে একটা প্রপসাল দেওয়া। ও কেন রঞ্জনের ক্ষতি করতে চায় তা আমি কখনো ভাবিওনি আর জিজ্ঞেস ও করিনি। তাহলে কি রঞ্জনকে সরিয়ে দেওয়াটা অনেকদিন আগে থেকেই প্ল্যান করা ছিল। সবকিছু তালগোল পাকিয়ে যেতে শুরু করল। এইসব ভাবতে ভাবতেই আমি ফ্ল্যাটের সামনে এসে পৌছালাম।
ভেতরে ঢুকে আগে টেবিলের কাছে খেয়াল করলাম। না, শান্তনু আসেনি। ওকে যদি পুলিশ জেরা করত তাহলেও অনেক তথ্য বাইরে আসত। কিন্তু ওকি আদৌ আর এই ফ্ল্যাটে ফিরবে! আমার তো মনে হয় শুধু আমার আর রমার ওপর নজরদারির জন্যই ওকে এখানে আনা হয়েছিল। লিফট দিয়ে ওপরে উঠে গেলাম। না, রমা সত্যিই ঘুম থেকে ওঠেনি। দরজাটাও তাই খোলাই ছিল। ভেতরে ঢোকার সাথে সাথে আবার ফোন। মোবাইলটা হাতে নিয়ে দেখি বিজয়দা করেছে। রিসিভ করলাম।
‘বিপ্লব বাবু, মৃতদেহ সনাক্ত করতে হবে। আর মৃতদেহ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। আমি আপনার বাড়িতে আসছি। আপনি আর মিসেস পোদ্দার আমার সাথে যাবেন’ আমি আর কি উত্তর দিতাম। ‘হুম’ বলে একটা শব্দ করলাম। বিজয়দাও ফোনটা কেটে দিলেন। রমাকে যত দ্রুত সম্ভব উঠিয়ে দিতে হবে। ভেতরের ঘরে গিয়ে ৩-৪ বার রমা রমা বলে ডাকতেই ওর ঘুম ভেঙে গেলো। রমার ঘুম বরাবরই খুব পাতলা। আমি ওর পাশে বসে পিঠে কিছুটা সহানুভুতির ছোঁয়া দিয়ে বললাম ‘রমা, খুব খারাপ একটা খবর আছে’। রাতে ভালো ঘুম হয়নি, তার ওপর ওর কাঁচা ঘুমটা আমি ভাঙিয়ে দিলাম, তাই ওর চোখদুটো টকটকে লাল হয়ে রয়েছে। বেশ কিছুটা চমকে গিয়ে আমার দুহাত ধরে রমা বলল ‘কি হয়েছে বিপ্লব’ কিছুটা নম্রভাবে বললাম ‘রমা, রঞ্জনদা খুন হয়েছে’ রমা ডুকরে উঠল। ওকে নিজের বুকের মধ্যে চেপে ধরে ক্রমাগত স্বান্তনা দিয়ে চললাম। রমার মুখ দিয়ে খালি একটাই অস্পষ্ট কথা বাইরে বেরচ্ছিল ‘আমার দিদিটার কি হবে?’ এই এতো বছর ধরে দিদি বোনের মধ্যে কি যে সম্পর্ক রয়েছে আমার জানা নেই। মিতা শেষ আমাদের বাড়িতে এসেছিল প্রায় ৩ বছর আগে। আমাকে বিয়ে করা থেকে শুরু করে প্রতিটা ক্ষেত্রেই মিতা নিজের বোনকে খালি খোঁটাই দিয়েছে। অথচ রঞ্জন মারা যাওয়ার পর রমার রঞ্জনের চেয়ে নিজের দিদির ভবিষ্যৎ নিয়েই বেশী দুশ্চিন্তা। ভাবলেও কেমন অবাক লাগে।
রমার পিঠে হাত বোলাতে বোলাতে আমি বললাম ‘রমা, তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে নাও। বিজয়দা আসবেন। ওনার সাথে আমাদের যেতে হবে। ডেড বডি সনাক্ত করতে হবে’ আমার কথা শুনে রমা কিছুটা হলেও নিজেকে শান্ত করে বাথরুমের দিকে যেতে উদ্যত হয়। আমি বিছানায় বসেই ভাবতে শুরু করি। যেদিন প্রথমবার শর্মাজী আমার কাছে এসেছিলেন আমি খুব একটা বিস্মিত হইনি। ব্যাক্তিগত জীবনে উনি ভালো না মন্দ তা নিয়ে আমার কোন মাথাব্যাথাই ছিলনা। আমার কাছে লোণের জন্য এইধরনের ধরিবাজ মানুষই আসেন সাধারনত। আর তাদেরকেই টুপি পড়ানো এবং লোণের বোঝা চাপিয়ে দেওয়া, এই হোল আমার ছোট্টখাট্টো প্রফেশন। বিশাল অঙ্কের একটা লোণ পাইয়ে দেওয়ার দাবী জানান শর্মাজী। এতে কোন অবাক হওয়ার মত ব্যাপার ছিলনা। অবাক করার ব্যাপারটা হয়েছিল তার প্রায় ১ মাস পর। একদিন শর্মাজীর ফোন আসে আমার কাছে। আমার তো তখন মাথা খারাপ হওয়ার জোগাড়, কারন বহু চেষ্টা করেও আমি কিছুতেই শর্মাজীর লোণটা জোগাড় করতে পারিনি।
বিজয়দার কথা শুনে আমার হ্রিদস্পন্দন প্রায় স্তব্ধ হয়ে গেলো। এটা কি করে হয়! আমি তো ওর গলা শুনে চিনে ফেলেছিলাম যে ওই শান। এমনকি মেকআপ লোশন দিয়ে প্রলেপ লাগানোর পরও আমি ওর হাতের কালো দাগটা চিনতে পেরেছিলাম। এটা কি করে হয়। আমাকে নির্বাক থাকতে দেখে বিজয়দাই বললেন ‘নিজেকে শান্ত করুন, বিপ্লববাবু, সত্যিই রঞ্জন খুন হয়েছে। আপনার মত আমারও সন্দেহের তালিকায় এক নম্বরে ওই ছিল। ওই যে শান তার বেশ কিছু সুনির্দিষ্ট প্রমান আমার হাতে ছিল, কিন্তু তা ওকে গ্রেফতার করার জন্য যথেষ্ট ছিলনা’ নিজেকে কোনরকমে শান্ত করলাম। এতদিন ধরে ধীরে ধীরে আমি রহস্যের জালটা গুটিয়ে এনেছিলাম রঞ্জন তথা শানের মৃত্যুতে রহস্যের জালটা আরও বুনিয়াদ হয়ে গেলো। কিছুটা আক্ষেপের স্বরেই বললাম ‘বিজয়দা, সব আমার দোষ। আমার সেদিন ওরকম আবেগপ্রবণ হয়ে ওখান থেকে চলে আসা উচিত হয়নি। আমি ওখানে থাকলে আরও কিছু তথ্য জোগাড় করতে পারতাম’ বিজয়দা কিছুটা গম্ভীর হয়ে বললেন ‘কি বলেছিলাম বিপ্লব বাবু, নিজেকে শারলক হোমস ভাববেন না। আপনার থেকে ওদের মস্তিষ্ক অনেক বেশী উর্বর। আপনাকে এই রহস্যটা আবার প্রথম থেকে ভাবতে হবে’। বিজয়দা ফোনটা কেটে দিলো।
একটা অদ্ভুত জিনিষ আমি লক্ষ্য করলাম। রঞ্জনই যে শান এবং আমি তাকে চিনতে পেরেছি এই কথা আমি বিজয়দাকে একবারের জন্যও বলিনি। বিজয়দা বারবার দাবী করে এসেছেন যে উনি জুলি কে চিনতে পেরেছেন। কিন্তু একবারও দাবী করেন নি যে উনি শানকেও চিনতে পেরেছেন। বরঞ্চ শানকে চিনতে পাড়ার জন্যই আমাকে আর রমাকে মধুকর ভিলায় পাঠানো। আরও একটা অদ্ভুত জিনিষ, বিজয়দার কাছ থেকে ‘নিজেকে শারলক হোমস ভাববেন না, পুলিশ আপনার চেয়ে বেশী বুদ্ধিমান’ এই কথাটা আমি অন্তত ১০০ বার শুনেছি। কিন্তু আজ কথাটা একটু হলেও পরিবর্তিত। ‘কি বলেছিলাম বিপ্লব বাবু, নিজেকে শারলক হোমস ভাববেন না। আপনার থেকে ওদের মস্তিষ্ক অনেক বেশী উর্বর। আপনাকে এই রহস্যটা আবার প্রথম থেকে ভাবতে হবে’- এর সাথে সাথে ফোনটা কাটার আগে এক অদ্ভুত সন্তোষজনক হাঁসি। কিসের সন্তোষ? আমার মত পুলিশেরও তো সমস্ত ভাবনা চিন্তায় জল মিশে গেছে। তাহলে কেন হতাশার স্থলে এই সন্তোষ। আমি যে রঞ্জনকে চিনতে পেরেছি তা কোনমতেই বিজয়দার জানা সম্ভব নয় যদি না রঞ্জন নিজে বিজয়দাকে...
আবার কেমন সমীকরনগুলো মিলে যেতে শুরু করল। এই চক্রটাকে আজ ১০ বছর ধরে আমি খুঁজে চলেছি। কখনো ব্যাঙ্কের নেটওয়ার্কে, কখনো ফেসবুকে অথবা কখনো ব্যাক্তিগতভাবে। প্রতিটা ক্ষেত্রেই বুঝেছি, মুখ্য অপারেটর শান। কিন্তু এই প্রমান আমি কখনো পাইনি যে শানই এই চক্রটার মাথায় রয়েছে। আজকে অন্তত আমি নিশ্চিত যে শান এর মাথায় নয়, এর মাথায় অন্য কেউ। যে শানকে সরিয়ে দিয়ে বিশাল একটা মিসিং লিঙ্ক তৈরি করে দিলো। সন্দেহের তালিকায় মোট দুজন। কিন্তু নিশ্চিতভাবে কিছুই বলা সম্ভব নয়। স্কুটারটা নিয়ে যে কতক্ষন দাঁড়িয়ে রয়েছি সেদিকে কোন খেয়াল নেই। হথাত হুঁশ ফিরল, বাড়িতে রমা একা রয়েছে, যত দ্রুত সম্ভব আমায় ওখানে পৌঁছে যেতে হবে।
প্রচণ্ড বেগে স্কুটারটা চালিয়ে চলেছি আর মাথার মধ্যে দুটো নাম বারবার করে কিলবিল করে উঠছে। বিজয় সামন্ত ওরফে বিজয়দা এবং শর্মাজী। বিজয়দা সবচেয়ে বেশী রহস্যময়। আমার বাড়িতে এলেন, কিন্তু কখন এলেন তা আমি ছাড়া কেউ জানেনা। মদ্যপান করলেন, প্রচণ্ড মাতলামি করলেন। এই রহস্যটা নিয়ে পুলিশ ডিপার্টমেন্ট ঠিক কি ভাবছে তা আমার সামনে গড়গড় করে সব বলে দিলেন। এতদিনের অভিজ্ঞ একজন পুলিশ অফিসার কি এতটাও ভুল করতে পারেন! যতই হোক পুলিশের সন্দেহে প্রত্যেকেই থাকে। আর শর্মাজী সেই দুর্গা পুজার দিন থেকে আজ অবধি লোকটা সত্যিই প্রচণ্ড রহস্যময়। রঞ্জনের ক্ষতি করার জন্য আমাকে একটা প্রপসাল দেওয়া। ও কেন রঞ্জনের ক্ষতি করতে চায় তা আমি কখনো ভাবিওনি আর জিজ্ঞেস ও করিনি। তাহলে কি রঞ্জনকে সরিয়ে দেওয়াটা অনেকদিন আগে থেকেই প্ল্যান করা ছিল। সবকিছু তালগোল পাকিয়ে যেতে শুরু করল। এইসব ভাবতে ভাবতেই আমি ফ্ল্যাটের সামনে এসে পৌছালাম।
ভেতরে ঢুকে আগে টেবিলের কাছে খেয়াল করলাম। না, শান্তনু আসেনি। ওকে যদি পুলিশ জেরা করত তাহলেও অনেক তথ্য বাইরে আসত। কিন্তু ওকি আদৌ আর এই ফ্ল্যাটে ফিরবে! আমার তো মনে হয় শুধু আমার আর রমার ওপর নজরদারির জন্যই ওকে এখানে আনা হয়েছিল। লিফট দিয়ে ওপরে উঠে গেলাম। না, রমা সত্যিই ঘুম থেকে ওঠেনি। দরজাটাও তাই খোলাই ছিল। ভেতরে ঢোকার সাথে সাথে আবার ফোন। মোবাইলটা হাতে নিয়ে দেখি বিজয়দা করেছে। রিসিভ করলাম।
‘বিপ্লব বাবু, মৃতদেহ সনাক্ত করতে হবে। আর মৃতদেহ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। আমি আপনার বাড়িতে আসছি। আপনি আর মিসেস পোদ্দার আমার সাথে যাবেন’ আমি আর কি উত্তর দিতাম। ‘হুম’ বলে একটা শব্দ করলাম। বিজয়দাও ফোনটা কেটে দিলেন। রমাকে যত দ্রুত সম্ভব উঠিয়ে দিতে হবে। ভেতরের ঘরে গিয়ে ৩-৪ বার রমা রমা বলে ডাকতেই ওর ঘুম ভেঙে গেলো। রমার ঘুম বরাবরই খুব পাতলা। আমি ওর পাশে বসে পিঠে কিছুটা সহানুভুতির ছোঁয়া দিয়ে বললাম ‘রমা, খুব খারাপ একটা খবর আছে’। রাতে ভালো ঘুম হয়নি, তার ওপর ওর কাঁচা ঘুমটা আমি ভাঙিয়ে দিলাম, তাই ওর চোখদুটো টকটকে লাল হয়ে রয়েছে। বেশ কিছুটা চমকে গিয়ে আমার দুহাত ধরে রমা বলল ‘কি হয়েছে বিপ্লব’ কিছুটা নম্রভাবে বললাম ‘রমা, রঞ্জনদা খুন হয়েছে’ রমা ডুকরে উঠল। ওকে নিজের বুকের মধ্যে চেপে ধরে ক্রমাগত স্বান্তনা দিয়ে চললাম। রমার মুখ দিয়ে খালি একটাই অস্পষ্ট কথা বাইরে বেরচ্ছিল ‘আমার দিদিটার কি হবে?’ এই এতো বছর ধরে দিদি বোনের মধ্যে কি যে সম্পর্ক রয়েছে আমার জানা নেই। মিতা শেষ আমাদের বাড়িতে এসেছিল প্রায় ৩ বছর আগে। আমাকে বিয়ে করা থেকে শুরু করে প্রতিটা ক্ষেত্রেই মিতা নিজের বোনকে খালি খোঁটাই দিয়েছে। অথচ রঞ্জন মারা যাওয়ার পর রমার রঞ্জনের চেয়ে নিজের দিদির ভবিষ্যৎ নিয়েই বেশী দুশ্চিন্তা। ভাবলেও কেমন অবাক লাগে।
রমার পিঠে হাত বোলাতে বোলাতে আমি বললাম ‘রমা, তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে নাও। বিজয়দা আসবেন। ওনার সাথে আমাদের যেতে হবে। ডেড বডি সনাক্ত করতে হবে’ আমার কথা শুনে রমা কিছুটা হলেও নিজেকে শান্ত করে বাথরুমের দিকে যেতে উদ্যত হয়। আমি বিছানায় বসেই ভাবতে শুরু করি। যেদিন প্রথমবার শর্মাজী আমার কাছে এসেছিলেন আমি খুব একটা বিস্মিত হইনি। ব্যাক্তিগত জীবনে উনি ভালো না মন্দ তা নিয়ে আমার কোন মাথাব্যাথাই ছিলনা। আমার কাছে লোণের জন্য এইধরনের ধরিবাজ মানুষই আসেন সাধারনত। আর তাদেরকেই টুপি পড়ানো এবং লোণের বোঝা চাপিয়ে দেওয়া, এই হোল আমার ছোট্টখাট্টো প্রফেশন। বিশাল অঙ্কের একটা লোণ পাইয়ে দেওয়ার দাবী জানান শর্মাজী। এতে কোন অবাক হওয়ার মত ব্যাপার ছিলনা। অবাক করার ব্যাপারটা হয়েছিল তার প্রায় ১ মাস পর। একদিন শর্মাজীর ফোন আসে আমার কাছে। আমার তো তখন মাথা খারাপ হওয়ার জোগাড়, কারন বহু চেষ্টা করেও আমি কিছুতেই শর্মাজীর লোণটা জোগাড় করতে পারিনি।