Thread Rating:
  • 14 Vote(s) - 3.21 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
বিপ্লব পোদ্দার- ব্যাংকার অফ দ্যা ইয়ার- complete
#41
চায়ের পয়সা দিয়ে সোজা হাঁটা লাগালাম ঘাটের দিকে। প্যান্টটা খুলে শুধু জাঙ্গিয়াটা পরে জলে নামলাম। হাতদুটো জড় করে একটা প্রতিজ্ঞা ‘ঈশ্বর আমায় শক্তি দাও, ওই অসুস্থ মেয়েটার জন্য আমায় সুস্থ রাখো। যেন জীবনে কোনোদিন রমাকে কষ্ট না দি’ ডুব দিয়ে পাড়ে উঠবো ঠিক এমনসময় অন্য আরেকজন, হয়ত এই মৃতব্যাক্তিরই কোন আত্মীয় স্নান করার জন্য প্রস্তুত হচ্ছিলেন, হাতে একটা রিষ্ট ওয়াচ। রিষ্ট ওয়াচের কথাটা মনে পড়তেই আমার মনে হোল কেসটা অনেকটাই সল্ভ হয়ে যাবে যদি আমি সেই চেনা রিষ্ট ওয়াচ ও সেটা কার হাতে দেখেছিলাম তা মনে করতে পারি। সেই রিষ্ট ওয়াচ, পিঠে একটা কালো দাগ এগুলো থেকে আমায় খুঁজে বার করতে হবে সেই লোকগুলোকে। জামা, প্যান্ট পড়ছিলাম। দুজন বুড়ো মর্নিং ওয়াকে বেরিয়েছিল। ওদেরই খোশ গল্প কানে আসতে লাগলো। ‘এই যে দুতলা বাড়ি, এতদিন ধরে মানুষ করার কষ্ট সব তো এই শর্মাই করেছে। আর আজ বুড়ো হয়ে যেতেই আমি নন্দ ঘোষ। শালা, ছেলেপুলেকে এতো কষ্ট করে মানুষ করাই উচিত হয়নি’ আমার কানে যেন একটা চকলেট ব্যোম ফাটল। ‘শর্মা’ এই শব্দটা শুনে যেন কতদিনের পুরনো একটা রহস্য আমি সমাধান করে ফেললাম। মনে পড়ে গেলো সেদিনের কথা। শর্মাজীর গাড়ি আমাকে ওভারটেক করে দাঁড়াল। নেমে এসে নিজের পা থেকে চপ্পলটা খুলে আমার দিকে এগিয়ে দিলো এবং মুখে সেই অদ্ভুত ন্যাকামো ‘লিন দাদা, লিন। এই লিন আমার চপ্পলটা লিয়ে আমারই গালে ঠাস ঠাস করে মারুন’। সেদিনই প্রথম ওই সোনার ঘড়িটা আমি ওর হাতে দেখেছিলাম। হয়ত তার কিছুদিন আগেই ও কিনেছিল।
শর্মার সাথে আমার প্রথম পরিচয় আমারই কেবিনে। মাস তিনেক আগে। ‘দাদা, একটা নতুন বিজনেস স্টার্ট করছি। আমাকে একটা লোণ পাইয়ে দেন, হামি আপনারটা দেখবো আপনি হামারটা দেখবেন। হি হি হি (সেই বিচ্ছিরি হাঁসিটা)’ সেটা প্রথম পরিচয় হলেও সাক্ষাত হয়েছিল তারও মাস দুয়েক আগে। যদিও আমি সেটাকে নেহাতই কাকতালীয় একটা ব্যাপার ভেবে উড়িয়ে দিয়েছিলাম।
সেটা ছিল মহাঅষ্টমীর রাত। আমি আর রমা সুরুচি সংঘের প্যান্ডেল দেখতে গিয়েছিলাম। ছেলেদের একটা আলাদা লাইন ও মেয়েদের একটা আলাদা লাইন ছিল। যথারীতি দুজনে আলাদা হয়ে পড়ি। প্যান্ডেলের ভেতর থেকে বেরিয়ে আর কিছুতেই রমাকে খুঁজে পাইনি। পাগলের মত এদিক ওদিক খুঁজে অবশেষে বহুদুরে একটা দোকানের মধ্যে রমাকে দেখতে পাই। রমা দাঁড়িয়ে আছে, আর একটা লোক রমাকে কিসব বলে যাচ্ছে। আমি সামনে যেতেই সেই লোকটা পাশ কাটিয়ে বেরিয়ে যায়। রমাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম ‘রমা লোকটা কি বলছিল?’ রমার উত্তর ছিল ‘আমাকে নাকি কোথায় দেখেছে, বারবার করে জিজ্ঞেস করছিল’ সেদিন ভেবেছিলাম পাতি মাগিবাজ মাল বোধ হয়। পরে সেই শর্মাজীই আমার কেবিনে আসে। প্রথমে ভেবেছিলাম মালটাকে ভাগিয়ে দেবো। কিন্তু সব তো আর আমার হাতে নেই। অবশেষে লোণের কেসটা আমায় নিতেই হোল। ঠিক এই কারনেই আমি শর্মাজীকে কখনো বাড়িতে নিয়ে আসিনি। আমার ভিজিটিং কার্ডটাতে ল্যান্ড ফোন ও মোবাইল দুটো নাম্বারই দেওয়া থাকে। কিন্তু কেন জানিনা ও অধিকাংশ সময়ই ল্যান্ড নাম্বারটায় ফোন করত।
মনে পড়ে গেলো আরও একটা ঘটনা। সেদিন অফিস থেকে বেরচ্ছি, এমন সময় হথাত শর্মাজীর সাথে দেখা। কথা প্রসঙ্গে ওর ছেলের কথা উঠল। অদ্ভুত একটা কথা বলেছিল। ‘আরে দাদা, পড়াশুনা শিখলে কি হয়! আমি তো এইট ফেল আছি। আপনি জানেন হামার প্রথম বিজনেস কি ছিল; রেলের লুহা চুরি। একবার পুলিশ তাড়া করল, একদম ব্রিজের ওপর থেকে ঝাঁপ মারলাম। পিঠে এমন লেগেছিল যে এখনো দাগ রয়েছে। কিন্তু সেই শর্মা আজ কত তারকি করেছে লাইফে দেখে লিন’ অঙ্কের প্রতিটা হিসেব অদ্ভুতরকম ভাবেই মিলে যেতে শুরু করল। জানি এবার সম্পূর্ণ কেসটাই আমি বুঝে ফেলেছি। মনে পড়ে গেলো বিজয়দার কথা। ‘যেকোনো কেসে পুলিশ হোক বা ডিটেকটিভ, প্রথম লক্ষ্য হওয়া উচিত, শক্তিশালী একটা চার্জশিট। যাতে কিছুতেই আইনের ফাঁক ফোঁকর দিয়ে অপরাধীরা পালাতে না পারে’ শুধু সন্দেহ আর কিছু সামান্য তথ্যপ্রমান দিয়ে কখনোই শর্মার মত পয়সাওয়ালাদের জেলে পোড়া যায়না। আমার সবকিছু বিজয়দাকে জানানো উচিত। মোবাইলটা বার করে দেখলাম ভোর ৫ টা। নাহ, এতো ভোরে আর ওকে ফোন করতে মন গেলনা।
স্কুটারটা চালিয়ে আবার ফ্ল্যাটের দিকে যেতে শুরু করলাম। রমা যদি ঘুম থেকে না ওঠে এর মধ্যে তাহলে দরজাটা খোলাই থেকে যাবে। সত্যি খুব খারাপ লাগছিল, যতই হোক রমা সুস্থ নয়। মিনিট পাঁচেক গাড়ি চালিয়েছি হথাত ফোনটা বেজে উঠল। এতো সকালে কে ফোন করবে? ফোনটা হাতে নিয়ে দেখি, বিজয়দার ফোন। রিসিভ করার সাথে সাথেই ওপাশ থেকে ভেসে এলো একটা উদ্বিগ্ন গলা।
‘দেখুন বিপ্লব বাবু কাল যদি আপনি ওরকম ভয় না পেয়ে সঠিক তথ্য প্রমান জোগাড় করে আনতেন! আজ হয়ত এতো প্রবলেমের মধ্যে পড়তে হতনা’ সত্যি বিজয়দাকে অবিশ্বাস করে বিশাল একটা ভুল কাজ করেছিলাম। আমি চাইলেই ওখান থেকে অনেক কিছু তথ্য জোগাড় করে আনতে পারতাম। কিছুটা সহানুভুতির সুরেই বললাম ‘কেন কি হয়েছে বিজয়দা?’ সঙ্গে সঙ্গে ভেসে এলো বিজয়দার উত্তর। ‘কাল এই রাত ২ টো নাগাদ আবার একটা খুন হয়েছে। মৃতদেহ আবার দ্বিতীয় হুগলী সেতুর পাশেই পাওয়া গেছে। কিন্তু সবচেয়ে অদ্ভুত ব্যাপার হোল এবার খুনের স্টাইলটা একদম আলাদা। বিষ প্রয়োগ হয়নি, যদিও এখনো ময়নাতদন্ত হয়নি তবে আমি চেক করে দেখেছি, আগের মৃতদেহগুলোর মত নয়। কেসটা আরও জটিল হয়ে গেলো বিপ্লব বাবু কারন খুন হয়েছে...’ দেখলাম বিজয়দা কিছুটা থমকে গেলেন। আমি আর ধৈর্য রাখতে না পেরে চেঁচিয়ে উঠলাম ‘কে খুন হয়েছে বিজয়দা?’
Like Reply
Do not mention / post any under age /rape content. If found Please use REPORT button.


Messages In This Thread
RE: বিপ্লব পোদ্দার- ব্যাংকার অফ দ্যা ইয়ার- complete - by samss400 - 09-02-2020, 03:08 PM



Users browsing this thread: 7 Guest(s)