09-02-2020, 03:07 PM
15
‘মনিরুল তোমার নাম্বারটা হারিয়ে গেছে। নাম্বারটা দেবে প্লিস?’ আমার প্রশ্নে মনিরুল উদাস হয়ে একবার পেছন ঘুরে দেখল। তারপর কিছুটা হতাশার সাথে উত্তর দিলো ‘দাদা, নাম্বার কেন দেবনা। তবে অনেক হেল্প পেয়েছি আপনার থেকে বিজয়দার থেকে। আর উপকার নিতে পারবো না দাদা, আল্লা আমায় তাহলে মাফ করবে না’ খুব খারাপ লাগলো ছেলেটার কথা শুনে। একটু সামনের দিকে এগিয়ে ওর কাঁধে একটা হাত দিয়ে বললাম ‘মনিরুল, মানুষই তো মানুষের পাশে থাকে। আর তুমিই বা ভাবছ কেন আমি তোমার উপকার করার জন্য ফোন নাম্বারটা নিচ্ছি। হয়ত তুমিই আমার কোন উপকারে লেগে যাবে’ বেশ কিছুক্ষন নীরব থাকার পর মনিরুল বলে উঠল ‘ইমানে লাগে দাদা। আর কত অন্যের দয়া নেবো। আল্লা মেহেরবান হোক। একটিবার আপনাদের মত মানুষের জন্য কিছু করার সুযোগ দিক’। রমা চুপ করে আমাদের কথা শুনে যাচ্ছিল। আজ বহুবছর ও নিজেকে স্বাভাবিক পৃথিবী থেকে দূরে সরিয়ে নিয়েছে। মনিরুলের বাড়িতে ২ অবিবাহিত দিদি ও এক বিধবা মা। ওর ক্যান্সার ধরা পড়ার পর থেকে দিদিরা লোকের বাড়ি কাজ ধরেছে, মা সেলাই টেলাই করেও কিছু রোজগার করার চেষ্টা করে। মনিরুলের সহ্য হয়না এটা। বাড়ির একমাত্র রোজগেরে মনিরুল। তাই এই শরীরেও মাঝে মাঝে মনিরুল ভাড়ার ট্যাক্সিটা নিয়ে বেরিয়ে পড়ে। মনিরুলের কথাগুলো শুনে আমিও কেমন একটা অন্যমনস্ক হয়ে পড়েছিলাম। গাড়িটা কখন যে দ্বিতীয় হুগলী সেতু পেরিয়ে এক্সাইড মোড়ে ঢুকে গেছে খেয়াল করিনি। হলুদ নিয়নের বাতিতে রাতের মহানগরী হয়ত অনেকের ই চোখে তিলোত্তমা হয়ে ওঠে কিন্তু আমার কাছে শুধুই এক বেশ্যা মাগী। এই মহানগরী কত মানুষকে দুবেলা খাবার দেওয়ার স্বপ্ন দেখিয়ে নিজের বুকে টেনে আনে, কাজ ফুরিয়ে গেলে ছুঁড়ে ফেলেও দেয়। আদ্যোপান্ত স্বার্থপর খামখেয়ালি বড়লোকের মেয়ের মত এই মহানগরীকে আমি ঘেন্না করি।
‘দাদা, কোনোদিন কোন প্রয়োজন হলে একটা খবর দেবেন। আজ বিজয় বাবুর ফোন এসেছিল। বলল আপনি বিশাল বিপদে রয়েছেন, গাড়িটা নিয়ে যেতে হবে। এক ডাকে চলে এলাম। দাদা, কোন প্রয়োজন হলে খবর দেবেন’ মনিরুলের কথায় আমার হুঁশ ফেরে। একটু মুচকি হেঁসে আমি মনিরুলকে উত্তর দিলাম ‘মনিরুল, প্রয়োজন আছে। তাইতো ফোন নাম্বারটা নিলাম’ আর কথা বলতে ইচ্ছে করছিল না। রাস্তার দুধারে সার দিয়ে কিছু ফুটপাথবাসী শুয়ে আছে। কিছুটা দূরে কতগুলো নোংরা ছেলে একটা চিকচিকির মধ্যে মুখ ডুবিয়ে পড়ে রয়েছে। বঞ্চিত বানচোঁদগুলো ৫ টাকার ডেনড্রাইট এর প্যাকেট থেকেই জীবনের সব সুখ উশুল করে নিচ্ছে। প্রচণ্ড জোরে চিৎকার করতে ইচ্ছে হোল ‘ওরে বানচোঁদরা ডেনড্রাইট ফেলে হাতে আধলা ইট ওঠা। যত বড়বড় দোকান দেখছিস, তাদের কাঁচের দরজায় ছুঁড়ে মার। আর চিৎকার করে বল আমরাও পড়াশুনা শিখতে চাই, মানুষ হতে চাই’ চিৎকার করলেও কি! বানচোঁদগুলো কিছু বুঝতে তো পারতো না। মহানগরীর বুক চিড়ে গাড়িটা সামনে এগিয়ে চলেছে, আশেপাশে শুধুই সর্বহারা। শালা, সব গনতন্ত্রের দোকানের কাঁচামাল এগুলো। যতদিন এরা আছে, গণতন্ত্রও আছে।
কখন যে বাড়ির কাছে পৌঁছে গেছি বুঝতেও পারিনি। মনিরুল আমার বাড়িটা আগে থেকেই চিনত। মনিরুল চলে গেলো আমরাও অন্ধকার কুয়োর মত ফ্ল্যাটের ভেতরে প্রবেশ করে গেলাম। দরজাটা বন্ধ করছি দেখি রমা পেছনে, একদৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আজ আমারও ওর দিকে তাকিয়ে থাকতে ইচ্ছে করছে। এই অসুস্থ মেয়েটার আমি গায়ে হাত তুলেছি, ওকে সন্দেহ করেছি ওর ভালোবাসা আর আত্মত্যাগকে অপমান করেছি। নিজেকে কখনোই নায়ক আমি মনে করিনা, আমিও তো এই পচে যাওয়া গলে যাওয়া সিস্টেমটার ই অঙ্গ। আমার পেশা অন্যকে লোণ দেওয়া; অথচ জীবনে কোনোদিন কোন বিপদে পড়া মানুষকে লোণ আমি পাইয়ে দিইনি। আমার ক্লায়েন্টরা প্রত্যেকেই সমাজের অনেক ওপরতলার মানুষ, আমি তাদের পোঁদ চেটে লোণ নিতে অনুরোধ করি, নিজে কমিশন খাই আর তারপর প্যাঁচ কষে তাদের থেকেই কড়া সুদ আদায় করে আমার ব্যাঙ্কটাকে বাঁচিয়ে রাখি। হ্যাঁ, আমার ব্যাঙ্কটা আমারই মত কিছু দালালের জন্য এখনো লেম্যান ব্রাদার্স হয়ে ওঠেনি। কিন্তু তাতে কি; মুনাফাটা তো ৫-৬ জন ম্যানেজমেন্ট এর লোকই খাচ্ছে, সমাজের দেশের মানুষের তো কোন মুনাফাই নেই। অতএব আমিও একটা অসুস্থ কৃমি তা সে যত খ্যাতনামা ব্যাংকারই হইনা কেন।
রমা, ধীরে ধীরে আমার শরীরের একদম কাছে এগিয়ে এলো। ট্যাক্সিতে ওকে বারবার লক্ষ্য করছিলাম, বুকের মধ্যে থেকে একটা সাদা কাগজ বার করে ৫ মিনিট ছাড়াই চোখ বুলিয়ে যাচ্ছে। ওকি আমায় কিছু বলতে চায়? এখনো তো পুরো রহস্যটা আমি বুঝতে পারিনি। শান কে? উত্তর আমার জানা। জুলি কে? বিজয়দা এর উত্তর জানেন তাই আমিও একদিন জেনে যাবো। কিন্তু কিছু প্রশ্ন বাতের ব্যাথার মত আমাকে বহুদিন ধরে কষ্ট দিয়ে চলেছে। কেন রমা, রঞ্জনের সামনে বা চিন্ময়ের মত একটা কমবয়সী ছেলের সামনে এরকম অদ্ভুত ব্যাবহার করে। ওকি শরীরের দিক থেকে সন্তুষ্ট নয়। আগে তো আমরা নিজেদের দাম্পত্য জীবন নিয়ে খোলামেলা আলোচনা করতাম, কিন্তু কেন রমা এতো রক্ষনশীল হয়ে গেলো। আজ বারবার রমাকে সব কিছু খুলে বলতে ইচ্ছে হচ্ছে। কিন্তু তার আগেই রমা বলে উঠল ‘বিপ্লব আমি তোমায় কিছু কথা বলতে চাই’ আমিও তো এটাই চাইছিলাম আজ ও মন খুলে সবকথা বলুক। তা সে যতই অপ্রিয় হোক, আমি শুনতে চাই। রমার দু কাঁধ আমি স্পর্শ করলাম। ওকে সময় দিলাম। রমা মাটির দিকে মুখ করে নিস্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। রমার চোখের ভাষা আমি পড়তে জানি। আমি জানি এই মুহূর্তে ওর মনের মধ্যে একটা টাইফুন বয়ে চলেছে। কিন্তু কেন? কি এমন কথা যা ও আমার থেকে লুকিয়ে রেখেছিল আজ আবেগপ্রবণ হয়ে বলে ফেলতে চায়। আমি ওকে সময় দিতে চাইলাম। একদৃষ্টিতে ওর চোখের দিকে তাকিয়ে থাকলাম। রমার দুই চোখে ধীরে ধীরে জল জমছে, মেঘ থেকে বৃষ্টি হওয়ার মত টিপ টিপ করে সেই জল মেঝেতে পড়ছে। আহ, আবার, আরও একবার বউটার চোখে জল দেখতে হোল। আমি ওকে টেনে নিজের বুকে লুকিয়ে নিলাম। আমারই বুকে ডুকরে উঠল রমা। ওর পিঠে স্বান্তনার পরশ দিয়ে চলেছিলাম কিন্তু আমার মনে একটা দ্বিধা থেকেই গেলো। বারবার প্রার্থনা করতে লাগলাম ‘আর কোন অপ্রিয় সত্য আমি জানতে চাইনা’। রমা শান্ত হলে আমি আবার প্রশ্ন করলাম ‘রমা, কোন চিন্তা করোনা। যা বলতে চাও বল’ অনেকক্ষণ মাটির দিকে তাকিয়ে থেকে রমা বলে উঠল ‘বিপ্লব অনেকদিন তুমি আমায় ভালোবাসোনি, আজ একটু ভালবাসবে?’ আমার মনটা আরও বিষণ্ণ হয়ে গেলো। কি এমন কথা যা রমা কিছুতেই আমায় বলতে চাইছেনা। রমার ঠোঁটদুটো ক্রমশ আমার ঠোঁটের দিকে এগিয়ে আসতে শুরু করল।
‘মনিরুল তোমার নাম্বারটা হারিয়ে গেছে। নাম্বারটা দেবে প্লিস?’ আমার প্রশ্নে মনিরুল উদাস হয়ে একবার পেছন ঘুরে দেখল। তারপর কিছুটা হতাশার সাথে উত্তর দিলো ‘দাদা, নাম্বার কেন দেবনা। তবে অনেক হেল্প পেয়েছি আপনার থেকে বিজয়দার থেকে। আর উপকার নিতে পারবো না দাদা, আল্লা আমায় তাহলে মাফ করবে না’ খুব খারাপ লাগলো ছেলেটার কথা শুনে। একটু সামনের দিকে এগিয়ে ওর কাঁধে একটা হাত দিয়ে বললাম ‘মনিরুল, মানুষই তো মানুষের পাশে থাকে। আর তুমিই বা ভাবছ কেন আমি তোমার উপকার করার জন্য ফোন নাম্বারটা নিচ্ছি। হয়ত তুমিই আমার কোন উপকারে লেগে যাবে’ বেশ কিছুক্ষন নীরব থাকার পর মনিরুল বলে উঠল ‘ইমানে লাগে দাদা। আর কত অন্যের দয়া নেবো। আল্লা মেহেরবান হোক। একটিবার আপনাদের মত মানুষের জন্য কিছু করার সুযোগ দিক’। রমা চুপ করে আমাদের কথা শুনে যাচ্ছিল। আজ বহুবছর ও নিজেকে স্বাভাবিক পৃথিবী থেকে দূরে সরিয়ে নিয়েছে। মনিরুলের বাড়িতে ২ অবিবাহিত দিদি ও এক বিধবা মা। ওর ক্যান্সার ধরা পড়ার পর থেকে দিদিরা লোকের বাড়ি কাজ ধরেছে, মা সেলাই টেলাই করেও কিছু রোজগার করার চেষ্টা করে। মনিরুলের সহ্য হয়না এটা। বাড়ির একমাত্র রোজগেরে মনিরুল। তাই এই শরীরেও মাঝে মাঝে মনিরুল ভাড়ার ট্যাক্সিটা নিয়ে বেরিয়ে পড়ে। মনিরুলের কথাগুলো শুনে আমিও কেমন একটা অন্যমনস্ক হয়ে পড়েছিলাম। গাড়িটা কখন যে দ্বিতীয় হুগলী সেতু পেরিয়ে এক্সাইড মোড়ে ঢুকে গেছে খেয়াল করিনি। হলুদ নিয়নের বাতিতে রাতের মহানগরী হয়ত অনেকের ই চোখে তিলোত্তমা হয়ে ওঠে কিন্তু আমার কাছে শুধুই এক বেশ্যা মাগী। এই মহানগরী কত মানুষকে দুবেলা খাবার দেওয়ার স্বপ্ন দেখিয়ে নিজের বুকে টেনে আনে, কাজ ফুরিয়ে গেলে ছুঁড়ে ফেলেও দেয়। আদ্যোপান্ত স্বার্থপর খামখেয়ালি বড়লোকের মেয়ের মত এই মহানগরীকে আমি ঘেন্না করি।
‘দাদা, কোনোদিন কোন প্রয়োজন হলে একটা খবর দেবেন। আজ বিজয় বাবুর ফোন এসেছিল। বলল আপনি বিশাল বিপদে রয়েছেন, গাড়িটা নিয়ে যেতে হবে। এক ডাকে চলে এলাম। দাদা, কোন প্রয়োজন হলে খবর দেবেন’ মনিরুলের কথায় আমার হুঁশ ফেরে। একটু মুচকি হেঁসে আমি মনিরুলকে উত্তর দিলাম ‘মনিরুল, প্রয়োজন আছে। তাইতো ফোন নাম্বারটা নিলাম’ আর কথা বলতে ইচ্ছে করছিল না। রাস্তার দুধারে সার দিয়ে কিছু ফুটপাথবাসী শুয়ে আছে। কিছুটা দূরে কতগুলো নোংরা ছেলে একটা চিকচিকির মধ্যে মুখ ডুবিয়ে পড়ে রয়েছে। বঞ্চিত বানচোঁদগুলো ৫ টাকার ডেনড্রাইট এর প্যাকেট থেকেই জীবনের সব সুখ উশুল করে নিচ্ছে। প্রচণ্ড জোরে চিৎকার করতে ইচ্ছে হোল ‘ওরে বানচোঁদরা ডেনড্রাইট ফেলে হাতে আধলা ইট ওঠা। যত বড়বড় দোকান দেখছিস, তাদের কাঁচের দরজায় ছুঁড়ে মার। আর চিৎকার করে বল আমরাও পড়াশুনা শিখতে চাই, মানুষ হতে চাই’ চিৎকার করলেও কি! বানচোঁদগুলো কিছু বুঝতে তো পারতো না। মহানগরীর বুক চিড়ে গাড়িটা সামনে এগিয়ে চলেছে, আশেপাশে শুধুই সর্বহারা। শালা, সব গনতন্ত্রের দোকানের কাঁচামাল এগুলো। যতদিন এরা আছে, গণতন্ত্রও আছে।
কখন যে বাড়ির কাছে পৌঁছে গেছি বুঝতেও পারিনি। মনিরুল আমার বাড়িটা আগে থেকেই চিনত। মনিরুল চলে গেলো আমরাও অন্ধকার কুয়োর মত ফ্ল্যাটের ভেতরে প্রবেশ করে গেলাম। দরজাটা বন্ধ করছি দেখি রমা পেছনে, একদৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আজ আমারও ওর দিকে তাকিয়ে থাকতে ইচ্ছে করছে। এই অসুস্থ মেয়েটার আমি গায়ে হাত তুলেছি, ওকে সন্দেহ করেছি ওর ভালোবাসা আর আত্মত্যাগকে অপমান করেছি। নিজেকে কখনোই নায়ক আমি মনে করিনা, আমিও তো এই পচে যাওয়া গলে যাওয়া সিস্টেমটার ই অঙ্গ। আমার পেশা অন্যকে লোণ দেওয়া; অথচ জীবনে কোনোদিন কোন বিপদে পড়া মানুষকে লোণ আমি পাইয়ে দিইনি। আমার ক্লায়েন্টরা প্রত্যেকেই সমাজের অনেক ওপরতলার মানুষ, আমি তাদের পোঁদ চেটে লোণ নিতে অনুরোধ করি, নিজে কমিশন খাই আর তারপর প্যাঁচ কষে তাদের থেকেই কড়া সুদ আদায় করে আমার ব্যাঙ্কটাকে বাঁচিয়ে রাখি। হ্যাঁ, আমার ব্যাঙ্কটা আমারই মত কিছু দালালের জন্য এখনো লেম্যান ব্রাদার্স হয়ে ওঠেনি। কিন্তু তাতে কি; মুনাফাটা তো ৫-৬ জন ম্যানেজমেন্ট এর লোকই খাচ্ছে, সমাজের দেশের মানুষের তো কোন মুনাফাই নেই। অতএব আমিও একটা অসুস্থ কৃমি তা সে যত খ্যাতনামা ব্যাংকারই হইনা কেন।
রমা, ধীরে ধীরে আমার শরীরের একদম কাছে এগিয়ে এলো। ট্যাক্সিতে ওকে বারবার লক্ষ্য করছিলাম, বুকের মধ্যে থেকে একটা সাদা কাগজ বার করে ৫ মিনিট ছাড়াই চোখ বুলিয়ে যাচ্ছে। ওকি আমায় কিছু বলতে চায়? এখনো তো পুরো রহস্যটা আমি বুঝতে পারিনি। শান কে? উত্তর আমার জানা। জুলি কে? বিজয়দা এর উত্তর জানেন তাই আমিও একদিন জেনে যাবো। কিন্তু কিছু প্রশ্ন বাতের ব্যাথার মত আমাকে বহুদিন ধরে কষ্ট দিয়ে চলেছে। কেন রমা, রঞ্জনের সামনে বা চিন্ময়ের মত একটা কমবয়সী ছেলের সামনে এরকম অদ্ভুত ব্যাবহার করে। ওকি শরীরের দিক থেকে সন্তুষ্ট নয়। আগে তো আমরা নিজেদের দাম্পত্য জীবন নিয়ে খোলামেলা আলোচনা করতাম, কিন্তু কেন রমা এতো রক্ষনশীল হয়ে গেলো। আজ বারবার রমাকে সব কিছু খুলে বলতে ইচ্ছে হচ্ছে। কিন্তু তার আগেই রমা বলে উঠল ‘বিপ্লব আমি তোমায় কিছু কথা বলতে চাই’ আমিও তো এটাই চাইছিলাম আজ ও মন খুলে সবকথা বলুক। তা সে যতই অপ্রিয় হোক, আমি শুনতে চাই। রমার দু কাঁধ আমি স্পর্শ করলাম। ওকে সময় দিলাম। রমা মাটির দিকে মুখ করে নিস্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। রমার চোখের ভাষা আমি পড়তে জানি। আমি জানি এই মুহূর্তে ওর মনের মধ্যে একটা টাইফুন বয়ে চলেছে। কিন্তু কেন? কি এমন কথা যা ও আমার থেকে লুকিয়ে রেখেছিল আজ আবেগপ্রবণ হয়ে বলে ফেলতে চায়। আমি ওকে সময় দিতে চাইলাম। একদৃষ্টিতে ওর চোখের দিকে তাকিয়ে থাকলাম। রমার দুই চোখে ধীরে ধীরে জল জমছে, মেঘ থেকে বৃষ্টি হওয়ার মত টিপ টিপ করে সেই জল মেঝেতে পড়ছে। আহ, আবার, আরও একবার বউটার চোখে জল দেখতে হোল। আমি ওকে টেনে নিজের বুকে লুকিয়ে নিলাম। আমারই বুকে ডুকরে উঠল রমা। ওর পিঠে স্বান্তনার পরশ দিয়ে চলেছিলাম কিন্তু আমার মনে একটা দ্বিধা থেকেই গেলো। বারবার প্রার্থনা করতে লাগলাম ‘আর কোন অপ্রিয় সত্য আমি জানতে চাইনা’। রমা শান্ত হলে আমি আবার প্রশ্ন করলাম ‘রমা, কোন চিন্তা করোনা। যা বলতে চাও বল’ অনেকক্ষণ মাটির দিকে তাকিয়ে থেকে রমা বলে উঠল ‘বিপ্লব অনেকদিন তুমি আমায় ভালোবাসোনি, আজ একটু ভালবাসবে?’ আমার মনটা আরও বিষণ্ণ হয়ে গেলো। কি এমন কথা যা রমা কিছুতেই আমায় বলতে চাইছেনা। রমার ঠোঁটদুটো ক্রমশ আমার ঠোঁটের দিকে এগিয়ে আসতে শুরু করল।