Thread Rating:
  • 14 Vote(s) - 3.21 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
বিপ্লব পোদ্দার- ব্যাংকার অফ দ্যা ইয়ার- complete
#36
আলমারির দরজাটা খট করে খোলার একটা শব্দ হোল। এবার আমি কি করব? কোথায় লুকাব? আমি মারা গেলে আমার এনজিওর কি হবে? যে মানুষগুলোকে এতো স্বপ্ন দেখিয়ে ফেলেছি তাদের কি হবে? অথচ লুকিয়ে যাওয়ার সুযোগটুকুও নেই। কাঁচের দেওয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে জড় বস্তুর মত নিঃশ্বাস বন্ধ করে দাঁড়িয়ে থাকলাম। জুতোর খটখট শব্দ হচ্ছে, এবং সেই শব্দ ক্রমশ এদিকেই এগিয়ে আসছে। হাতের কাছে কিছুই নেই। লড়াই করতে গেলে একটা অস্ত্রর তো দরকার। জুতোর আওয়াজটা অনেকটাই ম্রিয় হয়ে গেলো এবং তার জায়গায় ভেসে আসতে লাগলো একটা গোঙানির আওয়াজ। এই গোঙানি কোন নারীর। ওরা আমাকে ফাঁদে ফেলার জন্যই কি এরকম করছে? আমি একিভাবে দাঁড়িয়ে থাকলাম। এবার সেই গোঙানির সাথে ভেসে আসলো ‘বিপ্লব’ ‘বিপ্লব’ বলে জড়ানো একটা শব্দ। কে কাঁদছে? রমা? নামটা মুখে নিতেও লজ্জা করছে। ও তো রমা নয় ও জুলি। একিভাবে আমি দাঁড়িয়ে থাকলাম। ‘বিপ্লব আমার খুব ভয় লাগছে’। বুকটা একটু হলেও কেঁপে উঠল; একেই তো একদিন ভালোবেসে ক্যারিয়ারের গাঁড়টা মেরেছিলাম। ‘বিপ্লব আমায় বাঁচাও’ না আর নিজেকে সংবরন করা আমার পক্ষে সম্ভব ছিলনা। মরলে মরব তবুও যাকে ভালবেসেছি তারই হাতে মরব! আমি ভেতরের ঘরটার দিকে দৌড়াতে শুরু করলাম। সেই পুরনো সালোয়ারটা পড়ে রমা এক কোনে দাঁড়িয়ে কাঁপছে। হাতে দুটো ভারী ব্যাগ। আমি কি আর রমাকে ভালবাসিনা? কেন বারবার মনে হচ্ছে সবই রমার ছলনা! কেন আমি দৌড়ে যাচ্ছিনা ওর কাছে, কেন ওকে বলছিনা ‘রমা, একদম টেনশন করবে না! দেখো ডাক্তার তোমায় টেনশন করতে বারন করেছে না?’ কেন ওর মাথায় হাতটা রেখে ওর মাথাটা নিজের বুকে লুকিয়ে নিচ্ছিনা। আমি কি নিজের ভালবাসাকেই হারিয়ে ফেললাম।
আমি রমার কাছে যাইনি। রমাই আমায় দেখতে পেয়ে ভারী ব্যাগদুটো নিয়ে এঁকে বেঁকে এসে আমায় জড়িয়ে ধরল। ‘বিপ্লব, পালিয়ে চল। এখানে ডাকাত এসেছে। বিপ্লব পালিয়ে চল, এখানে ডাকাত’ আমি ওর দুই চোখের দিকে তাকিয়ে রয়েছি। সত্যিই কি রমা নিষ্পাপ? নাকি রমা হোল সেই জুলি যে প্রতি মুহূর্তে এই সমাজটাকে এফোঁড় ওফোঁড় করে দিচ্ছে। নিমনিয়া রুগির মত রমা কেঁপেই চলেছে। আমার কিছুই ভালো লাগছিল না। কিন্তু রমাই হোক আর জুলিই হোক সে তো মানুষ আগে। এক মানুষ আমার কাছে প্রান ভিক্ষা চাইছে। আমরা দুজনেই ধীরে ধীরে সুরঙ্গটার দিকে এগিয়ে চললাম। শক্ত করে রমা আমার কাঁধটা জড়িয়ে আছে, কিন্তু আমি ওকে স্পর্শ করিনি। একি কথা বারবার করে রমা বলে চলেছে ‘পালিয়ে চল, ডাকাত’। হ্যাঁ, অতিরিক্ত মানসিক প্রেসারে এটাই ওর স্বাভাবিক লক্ষন। অন্যদিন হলে হয়ত ওকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনার জন্য আমি ক্লাউন সাজতেও পিছপা হতাম না। কিন্তু আজ কিছুই ভালো লাগছেনা। এমনকি ওই কাঁচের দেওয়ালের বাইরে থেকে জুলি কে? এই রহস্য উদ্ঘাতনের চেষ্টাও আমি করিনি। অবশেষে আমরা আবার জঙ্গলের মধ্যে এসে উঠলাম।
রমা তখনও শক্ত করে আমার কাঁধটা চেপে আছে, প্রচণ্ড জোরে কাঁপতে কাঁপতে বিড়বিড় করে চলেছে ‘পালিয়ে চল ডাকাত’। আমি জড় বস্তুর মত স্ট্যাচু হয়ে ওর দিকে তাকিয়ে আছি। কৌতূহল ওর প্রতি নয়, নিজের প্রতি বেশী হচ্ছে। আমি কি আর সত্যিই রমাকে ভালবাসতে পারবো না। আজ থেকে কি প্রতি মুহূর্তে আমার মনে একটা সন্দেহের বীজ ঢুকে যাবে ‘রমাই কি জুলি?’ রাগ হচ্ছিল; রমার ওপর, নিজেরও ওপর। আমার সামনে দাঁড়িয়ে রমা, দুহাতে আমার জামার কলারটা চেপে ধরে কেঁপে কেঁপে বলেই চলেছে ‘পালিয়ে চল, ডাকাত’। আমার আর সহ্য হচ্ছিলনা। দুহাত দিয়ে প্রচণ্ড জোরে ওর গালদুটো চেপে ধরলাম। ওর মনে ভয়টা আরও বেড়ে গেলো। কাঁপতে কাঁপতে আবার বলে উঠল ‘পালিয়ে চল, ডাকাত’ আর পারলাম না নিজেকে সংবরন করতে। জীবনে কখনো রমার গায়ে হাত দিইনি। এতো জোরে যে আমি রমাকে কখনো চড় মারতে পারবো স্বপ্নেও কল্পনা করিনি। রমা ছিটকে গিয়ে ঝোপের মধ্যে পড়ল। চিৎকার করে উঠলাম আমি ‘রমা, তুমি তো আমাকেই বিষটা আগে খাওয়াতে পারতে! রমা তুমিই জুলি, আমি জানি তুমিই জুলি। তোমাদের এই নোংরা চক্রটার ব্যাপারে যারাই জেনেছে, তুমি তাদেরকেই সরিয়ে দিয়েছ। আমায় কেন মারলে না, রমা?’ রমার মুখ দিয়ে কোন শব্দ নেই, শুধু ওর শরীরটা থরথর করে কেঁপে চলেছে। মাটির ওপর উবু হয়ে বসে আমি ওর মুখের দিকে তাকালাম। রমার ঠোঁটটা কেটে টিপ টিপ করে রক্ত ঝরছে। আমি কি জানোয়ার হয়ে গেছি? আমার কষ্ট হচ্ছে কিন্তু কিছুতেই হাতটা রমার দিকে যাচ্ছেনা।
আবার রমাকে প্রশ্ন করলাম ‘রমা, তুমি কে? কেন তুমি কখনো রঞ্জন, কখনো বা চিন্ময়ের গায়ে ঢলে পড়ো? রমা তুমি কে? কেন তুমি পরপুরুষের সামনে বেশ্যার মত নিজের শরীরকে এক্সপোষ কর, কি মজা পাও তুমি? ভালো লাগে নিজের স্বামীকে চাপরাশি পরিচয় দিতে?’ জানি আমার গলার যা তীব্রতা তাতে এতক্ষনে জঙ্গলের বাইরে পাহারায় থাকা দুই গুণ্ডার কাছে খবর চলে গেছে। আমাদের বেঁচে থাকার কোন উপায় আর নেই। শুধু মরবার আগে একবার জানতে চাই, রমা কি সত্যিই জুলি? রমার ঠোঁটদুটো কেঁপে উঠল, ভালো করে কান পাতলাম। ‘ডাকাত’ এই একটাই শব্দ ওর মুখ দিয়ে বেরোল। আর সত্যিই পারলাম না, এতটা অভিনয় রমা করতে পারেনা। আমার নিশ্চয়ই কোথাও ভুল হচ্ছে। দুহাত দিয়ে রমাকে নিজের বুকের মধ্যে টেনে নিলাম। আমার হাতের সেই ছোঁয়ায় স্নেহের উষ্ণতা পেতেই রমা ডুকরে উঠল। ক্রমশ রমার পিঠে হাত বুলিয়ে গেলাম। নিজের অজান্তেই প্রশ্ন করে ফেললাম ‘রমা, তোমায় কে বলেছে, ডাকাতের কথা?’ আবার রমা ডুকরে উঠল ‘আমার কিচ্ছু মনে নেই। আমায় আর মেরো না বিপ্লব। আমার সত্যিই কিচ্ছু মনে নেই’ শালা ছেলেটা মরবার সময়ও নিজেকে দাগী ক্রিমিনাল মনে হচ্ছিল, ব্যাঙ্কে যখন কোন গরীব মানুষ বিপদে পড়ে লোণ চাইতে আসে ও আমি না বলি তখনও মনে হয় আর আজকে নিজেকে সত্যিই একটা রেপিস্ত মনে হচ্ছে। আমি কি জানোয়ার? কি করছি আমি? আমি রমাকে অবিশ্বাস করছি!
নাহ, রমাকে যেভাবে হোক বাঁচিয়ে এখান থেকে বার করতে হবে। জঙ্গলের ভেতর দিয়ে রমার হাতটা ধরে হাঁটতে থাকলাম। রমা জুলি হোক বা না হোক ও আমার। ও যদি সত্যিই জুলি হয় তাহলে ওরই হাতে বিষ খেয়ে আমি মরতে চাই। জীবনটা যাকে একদিন সঁপে দিয়েছি, ফেরত চাওয়ার কোন অর্থ নেই। ফোনটা ভাইব্রেট মোডে ছিল প্রায় ৫ মিনিট ধরে ফোনটা কেঁপে চলেছে, বার করার ইচ্ছে করেনি। এবার বার করলাম; দেখি বিজয়দার ফোন। ওকে তো বিশ্বাস করতেই হবে কারন ওর কথা মত আমাদের সত্যিই কোন ক্ষতি হয়নি। ‘কোথায় আছেন এখন?’ ‘আমরা জঙ্গলের মধ্যে’ ‘ওকে, বড় রাস্তার মোড়ে একটা গাড়ি পাবেন, সেটায় উঠে যাবেন। গাড়িতে উঠুন, আবার ফোন করছি’। ২০-৪০ সেকেন্ড এর কথোপকথন অথচ নতুন করে জীবনটা আবার ফেরত দিয়ে দিলো। জঙ্গল অতিক্রম করে যখন বড় রাস্তার মোড়ে এসে দাঁড়ালাম, দেখি সত্যিই একটা গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে। আমাদের দেখে গাড়ির দরজাটা খুলে দিলো সে। গাড়িতে দুজনেই চেপে বসলাম, মুহূর্তের মধ্যে গাড়িটা ওখান থেকে বেরিয়ে গেলো। আবার বিজয়দার ফোন।
‘গাড়িতে চেপেছেন তো?’ আমি ক্যাজুয়ালি ‘হুম’ বলে একটা উত্তর দিলাম। সঙ্গে সঙ্গে কিছুটা উদ্বেগের সাথে ওনার কতগুলো প্রশ্ন ভেসে এলো। ‘আপনি জুলিকে দেখেছেন? শানকে দেখেছেন? কোন এভিডেন্স মানে এই ফটো বা ভিডিও টাইপের কিছু তুলতে পেরেছেন?’ আমার আর এইসব সত্যিই ভালো লাগছিলনা। কে জুলি? কে শান? কে খুন করছে? কেন করছে? এইসব আমার মাথায় আর নেই। আমার দু চোখ রমার দিকে। ঠোঁটটা বেশ ফুলে উঠেছে। উদাস মনে রমা জানলার বাইরে তাকিয়ে আছে। একটাই কথা নিজের মনে ভেবে চলেছি ‘কি করে আমি রমাকে এরকমভাবে মারলাম? আমি কি জানোয়ার?’ বিবেকের দংশন যে কি তা এর আগে বহুবার আমি বুঝেছি; আবার একবার বুঝলাম। বিজয়দার ওই একি প্রশ্নগুলো ভেসে এলো। এবার সত্যিই উত্তর দিতে হত। কিছুটা অবজ্ঞার সুরে আমি বলে উঠলাম ‘আমি জুলি, শান কাউকে দেখতে পাইনি। শুধু প্রান বাঁচিয়ে ফিরে আসছি’ বিজয়দা যে কোনোদিন আমার সাথে এভাবে ব্যাবহার করবে তা আমি জীবনেও ভাবতে পারিনি। তারস্বরে চিৎকার করে বলে উঠলেন ‘দেখতে পাননি মানে? বললেই হোল। এতো কষ্ট করে একটা মাস্টারপ্ল্যান বানালাম আর আপনি সমস্তকিছুতেই জল ঢেলে দিলেন। আমি চার্জশিট কি করে বানাবো? আমি আপনাকে কেন পাঠালাম? আপনাকে কেউ সন্দেহ করবেনা, ওরাও অতিরিক্ত সতর্ক হবেনা, ও আপনি কিছু এভিডেন্স নিয়ে আসবেন’ ওনাকে মাঝপথেই থামিয়ে আমি বলে উঠলাম ‘বিজয়দা, আমার মানসিক অবস্থাটা যদি আপনি বুঝতে পারতেন? কোনরকমে রমাকে বাঁচিয়ে ফিরছি’ আবার প্রচণ্ড জোরে চেঁচিয়ে উঠলেন বিজয়দা ‘রমাকে আপনি বাঁচিয়েছেন? আপনার ক্ষমতা আছে, ওদের হাত থেকে রমাকে বাঁচানোর? আপনি বেঁচেছেন শুধু আমার জন্য। আমার ইনফরমারই আপনাকে বাঁচিয়েছে’ মনেমনে বললাম ‘আপনার ইনফরমার মানে ওই চিনু তাইতো’ আবার বিজয়দা চেঁচিয়ে উঠলেন ‘কেন নিজে যাইনি জানেন? ওদের গ্রেফতার করতে কয়েক মিনিট লাগবে। কিন্তু ওই চার্জশিট। চার্জশিট প্রপার না হলে কিছুতেই সমাজের এতো ওপরের তলার লোককে গ্রেফতার করা যায়না। আপনি কোন কর্মের নয়; আপনি একটি অকর্মার ঢেঁকী’
Like Reply


Messages In This Thread
RE: বিপ্লব পোদ্দার- ব্যাংকার অফ দ্যা ইয়ার- complete - by samss400 - 09-02-2020, 03:05 PM



Users browsing this thread: 4 Guest(s)