Thread Rating:
  • 14 Vote(s) - 3.21 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
বিপ্লব পোদ্দার- ব্যাংকার অফ দ্যা ইয়ার- complete
#33
আর ভাবতে ভালো লাগছিল না। এই মুহূর্তে একটাই কাজ রমাকে উদ্ধার করা। আমি কাঁচা রাস্তাটা বরাবর দৌড়ে চলছিলাম। রাস্তাটা বেশ অন্ধকার, তাই আমি যে দউরাচ্ছি এটাও যেমন অন্যের পক্ষে বোঝা সম্ভব নয় তেমনই সামনে কেউ দাঁড়িয়ে আছে কিনা তা আমার পক্ষে বোঝা সম্ভব নয়। আরও কিছুটা দূরে যাওয়ার পর হথাত একটা অত্যন্ত উজ্জ্বল ও চকচকে বস্তু আমার চোখে পড়ল। মন বলছে সামনের মোড়টায় কেউ একজন দাঁড়িয়ে রয়েছে। দ্রুত নিজেকে পাশের একটা গাছের পেছনে লুকিয়ে নিলাম। এক দৃষ্টিতে সামনের দিকে তাকিয়ে থাকলাম। হ্যাঁ, যা ভেবেছি তাই। এইসময় ওর মোবাইলটা বেজে না উঠলে হয়ত বুঝতেই পারতাম না। মোবাইলের আলোতে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে; হাতে একটা একে ৪৭ রাইফেল; ওই গোপন ঘরটায় যে দুজন গুণ্ডাকে দেখেছিলাম তাদেরই একজন। বুঝলাম এর কাজ, বাংলোর মধ্যে কে ঢুকছে আর কে বেরোচ্ছে সেদিকে নজর রাখা। রমাকে বাঁচাবো কি করে? ২-৩ দিন ধরে কি এই জানোয়ারগুলো রমার শরীরটা ছিঁড়ে ছিঁড়ে খাবে? আর তারপর ছিবড়ে করে নষ্ট মেয়েমানুষটাকে আমার কাছে পাঠিয়ে দেবে? না, এটা আমার পক্ষে মেনে নেওয়া সম্ভব নয়। বেঁচে থাকতে আমি যেভাবে হোক রমাকে এখান থেকে উদ্ধার করব। আমার বাঁ দিকে কয়েকটা ঝাউ গাছের পাতলা জঙ্গল। আমাদের বাংলোর উল্টোদিকেও ঠিক একিরকম দেখতে কয়েকটা গাছের জঙ্গল ছিল। নিশ্চয়ই এই জঙ্গলটার ভেতর দিয়ে গেলে বাংলোর উল্টো দিকে উঠবো। যা ভাবা তাই কাজ।
আমি ধীরে ধীরে জঙ্গলের মধ্যে প্রবেশ করলাম। প্রথমে বুঝতে পারিনি, এখন পারছি, জঙ্গলটা বাইরে থেকে দেখে যতটা পাতলা লাগে ও ছোট লাগে বাস্তবে তা নয়। এক পা এক পা করে যত ভেতরের দিকে এগচ্ছি জঙ্গলটা ততই ঘন হয়ে যাচ্ছে। পাতায় খসখস করে শব্দ হচ্ছে, সেটা আমার পায়ের শব্দ নাকি অন্য কিছু তা সত্যিই আমার বোধগম্য হচ্ছেনা। এই জঙ্গলে যে বেশকিছু বিষধর সাপ থাকবে তা একটা বাচ্চা ছেলেও বলে দিতে পারে। না প্রানের ভয় আমার নেই, ভয় একটাই তা হোল রমা। যেভাবে হোক, রমাকে ওদের হাত থেকে উদ্ধার করতে হবে। যত এগচ্ছি ততই খসখস করে শব্দটা বাড়ছে। মাঝে মধ্যে মনে হচ্ছে কেউ বুঝি আমার পিছু নিচ্ছে আবার মাঝে মধ্যে মনে হচ্ছে এটা বুঝি আমার মনের ভুল। বেশকিছুটা দূরে সামান্য একটা আলোর দিশা দেখা যাচ্ছে। হলফ করে বলতে পারি ওটাই আমাদের বাংলোর উল্টো দিকটা। আমি প্রানপনে দৌড় লাগালাম। আমাকে যেভাবে হোক বাংলোতে প্রবেশ করতে হবে। যত দৌড়াচ্ছি গাছগুলোর মধ্যে পারস্পরিক দূরত্বও ক্রমশ কমে যেতে শুরু করছে। আমিও নিশ্চিত হচ্ছি যে আমি সঠিক দিশাতেই রয়েছি। বেশ কিছুদুর যাওয়ার পর গাছগুলোর ফাঁক দিয়ে বাংলোর প্রাচীরটা দৃশ্যমান হোল। আমিও কিছুটা হাঁপাতে হাঁপাতে সামনের দিকে এগিয়ে গেলাম।
যখন স্পষ্টভাবে বাংলোটা দৃশ্যমান হোল, তখন এক মুহূর্তের জন্যও আমার মনে আনন্দের সঞ্চার ঘটেছিল, কিন্তু পরক্ষনেই সেই আনন্দ কোথায় যেন হারিয়ে গেলো। বাংলোর সামনে অপর গুন্ডাটি পাহারায় রয়েছে, এবং এমনভাবে দাঁড়িয়ে আছে যে কিছুতেই আমি নিজেকে লুকিয়ে বাংলোর মধ্যে ঢোকাতে পারবোনা। হথাত দেখি সেই ষণ্ডমার্কা লোকটি আমারই দিকে এগিয়ে আসছে। কিন্তু ওর পক্ষে তো বোঝা সম্ভব নয় যে আমি এখানে রয়েছি, জঙ্গলের ভেতরটা অন্ধকার আর বাংলোর দিকে আলো। দৌড়ে যে পেছনে চলে যাবো তারও উপায় নেই। পাতায় যা খসখস করে শব্দ হয়, তাতে ওরা নিশ্চিত হয়ে যাবে যে আমি এখানে লুকিয়ে আছি। ক্রমশ একপা একপা করে আমি বাঁদিকে কোনাকুনি ভাবে সরে যেতে শুরু করলাম। একদম জঙ্গলের কাছাকাছি লোকটা আসার অনেক আগেই আমি অন্তত ১০ মিটার পেছনে চলে গেছি। নিজেকে একটা গাছের পেছনে সম্পূর্ণ লুকিয়ে রেখে সামনের দিকে তাকালাম। লোকটা জঙ্গলের সামান্য ভেতরে প্রবেশ করে কি একটা খুঁজে চলেছে। ওরা কি জেনে গেছে আমিই জঙ্গলের মধ্যে লুকিয়ে রয়েছি? প্রায় মৃত মানুষের মত নিঃশ্বাস বন্ধ করে চুপটি করে একটা গাছের পেছনে লুকিয়ে থাকলাম। হথাত দেখি লোকটা জঙ্গল থেকে বাইরে বেরিয়ে পকেটের মোবাইলটা বার করল। কাকে ফোন করছে ও? চোখ ও কান এই দুই ইন্দ্রিয়কেই সজাগ রেখে আমি সামনের দিকে তাকিয়ে থাকলাম। ‘কাঁহা হো? বাহার আও?’ লোকটার কথাটা শুনে আমারও গাটা ছমছম করতে শুরু করল। তাহলে কি জঙ্গলের মধ্যেও পাহারার ব্যাবস্থা ছিল, কেউ কি আমার উপস্থিতি জঙ্গলের মধ্যে থেকেই জানান দিয়েছে? হথাত দেখি পেছন থেকে একটা খসখস শব্দ ভেসে আসছে। গাছের গুঁড়িটার সাথে নিজেকে একদম সেঁটে রেখে আমি দাঁড়িয়ে থাকলাম। আওয়াজটা আরও বাড়তে লাগলো, আমিও অপেক্ষায় থাকলাম কে আসছে তা দেখার জন্য।
পেছন থেকে হলেও চিন্ময়কে চিনতে আমার কোন অসুবিধা হলনা। ওই লোকটার দিকে তাকিয়ে চিন্ময় বলে উঠল ‘তাহলে আমি এখন কি করব’ সঙ্গে সঙ্গে উত্তর ‘শান সাব আগেয়া হ্যায়। সুরঙ্গ কি মুখ ঢাককে ওয়াপাশ আ যাও’ গায়ের রোমগুলো খাড়া হয়ে যাচ্ছিল। এই মধুকর ভিলায় যে এতো রহস্য একসাথে লুকিয়ে আছে তা সত্যিই আমার বিশ্বাস হচ্ছেনা। অর্থাৎ এই মধুকর ভিলায় প্রবেশ করার জন্য একটা সুরঙ্গও রয়েছে। লোকটা আবার নিজের অবস্থানে চলে গেলো এবার চিন্ময়ের পালা। চিন্ময় ধীরে ধীরে আবার জঙ্গলের মধ্যে প্রবেশ করতে শুরু করল। একমাত্র চিন্ময়ই পারে আমায় এই বাংলোতে ঢোকাতে। এই মুহূর্তে আমার একটাই কাজ চিন্ময়কে ফলো করে যাওয়া। কিন্তু ভয় একটাই, সারা জঙ্গল জুড়ে শুকনো পাতা ছড়িয়ে আছে, এক পা হাঁটলেই খসখস করে শব্দ হবে। যদি চিন্ময় বুঝে যায়; আমি তো মরবই সাথে রমাও। তবুও অত্যন্ত সন্তর্পণে আমি চিন্ময়কে ফলো করতে শুরু করলাম। ঠিক যা ভাবলাম তাই। সবে দুখান গাছ পাড় করেছি; চিন্ময় হথাত থমকে দাঁড়িয়ে গেলো। যেন ও বুঝতে পেরেছে কেউ ওকে ফলো করছে। একটা গাছের আড়ালে নিজেকে সম্পূর্ণ লুকিয়ে ফেললাম। আবার একটা খসখস করে শব্দ। অর্থাৎ চিন্ময় আবার সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। আমিও সামনের গাছটার পেছনে গিয়ে দাঁড়ালাম। কিন্তু এবার ঘটল সেই বিপত্তি। চিন্ময় পায়ের শব্দ শুনে দ্রুত পেছন ঘুরে দেখল। তখনও আমি নিজেকে সম্পূর্ণ গাছের পেছনে লুকাতে পারিনি। যতটা দ্রুত সম্ভব সম্পূর্ণ শরীরটা গাছের আড়ালে লুকিয়ে ফেললাম। চিন্ময়ের পায়ের কোন শব্দ নেই। ওকি বুঝে গেছে, আমি ওকে ফলো করছি। আমার বুকটা এতো জোরে ধুকপুক করছিল যে বারবার মনে হচ্ছিল যে এই বুঝি ধরা পড়ব। তবুও সামনের দিকে একবার তাকাতেই হত। খুব সন্তর্পণে আমি ডান চোখটা বাইরে বার করে সামনের দিকে তাকালাম। দেখি চিন্ময় ওখানেই দাঁড়িয়ে আছে এবং মাথাটা ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে চারপাশটা দেখছে। তারচেয়েও রহস্যময় চিন্ময়ের মুখের অদ্ভুত সেই হাঁসিটা। ছোটবেলায় লুকোচুরি খেলার সময় ঠিক এরকমই মজা আমি পেতাম। ভয় লাগছে; চিন্ময়ের কাছে নিশ্চয়ই কোন অস্ত্র আছে। আমি কি আদৌ প্রানে বাঁচব? হথাত চোখটা গেলো চিন্ময়ের পায়ের কাছে। একটা কফিনের মত দেখতে বাক্স, কফিনের চেয়ে আকারে হয়ত একটু বেশীই বড় হবে। একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকলাম চিন্ময়ের দিকে।
Like Reply


Messages In This Thread
RE: বিপ্লব পোদ্দার- ব্যাংকার অফ দ্যা ইয়ার- complete - by samss400 - 09-02-2020, 03:03 PM



Users browsing this thread: 1 Guest(s)