09-02-2020, 02:29 PM
তমাল সেনের প্রোফাইলটা আরও একবার দেখার ইচ্ছে হোল। খোলা মাত্র বাঁদিকে লেখা ওয়ান মিউচুয়াল ফ্রেন্ড। বুকের ভেতরটা ঢিপ ঢিপ করছে একটা অজানা আতঙ্কে। ক্লিক করেই দিলাম। ভাগ্যিস আমার হার্ট এর অসুখ নেই, নয়ত সত্যিই হার্ট ফেল হয়ে যেত। শালা, রমার কি সত্যিই মাথাটা খারাপ হয়ে গেছে, এরকম একটা ফক্কর ছেলের ফ্রেন্ড রিকোয়েস্টটা ও একসেপ্ট করল কি করে? মাথাটা ঝিমঝিম করছে আর বারবার মনে হচ্ছে এই মুহূর্তে রমাকে একটা ফোন করি আর বলি মোবাইল থেকে ফেসবুকে লগ ইন করে বানচোঁদটাকে ব্লক করে দিতে। সেই সিদ্ধান্তই নিলাম, কিন্তু সব চৌপাট করে কলিং বেলটা আবার বেজে উঠল। ঘড়িতে বাজে ঠিক ৮ টা ১০। হ্যাঁ, আমি নিশ্চিত বিজয় সামন্তই এসেছে। দ্রুত লগ আউট করে সিস্টেম শাট ডাউন করে দরজার দিকে এগিয়ে গেলাম।
দরজাটা খোলা মাত্র অন্য এক মানুষ, যেন কোন এক বিশেষ মন্ত্রবলে এক রাশভারী গম্ভীর পুরুষ হাসিখুশি এক মানুষে পরিনত হয়েছেন। আমি কিছু বলার আগেই গেটের বাইরে থেকে ভেসে এলো রুদ্ধশ্বাসে কয়েকটা শব্দ “আরে আপনি কিরকম লোক মশাই, একবার তো বলবেন আপনিই সেই বিপ্লব পোদ্দার, অর্থাৎ দীপালির বন্ধু বিপ্লব পোদ্দার। যিনি নিজের সঞ্চয়ের অর্ধেক টাকা শুধুই গরীবের ছেলেকে মানুষ করার পেছনে খরচ করেন। আরে আমি আপনার কতবড় ফ্যান আপনি জানেন? শুধু আপনার এনজিওটার নাম আমি জানতাম না, তাই। ওহ আর জানলেও বা কি, শালা পুলিশ তো স্বভাবটাই খারাপ হয়ে গেছে” কথাগুলো শেষ করার পর বিজয় সামন্ত আগে একটা লম্বা নিঃশ্বাস নিলেন। আমিও কথাটা ঘোরাবার জন্য ওনাকে বললাম ‘আরে স্যার, আগে ভেতরে তো আসুন’। ভেতরে ঢুকেও উনি একিভাবে বলে চললেন ‘আরে আজকাল কার যুগেও যে দাতা কর্ণ রয়েছে তা আপনার কথা না জানলে কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারতাম না’ সত্যি এবার একটা প্রতিবাদ করার দরকার ছিল তাই আমিও উত্তর দিলাম ‘স্যার আপনাকে বোধ হয় দীপালী একটা কথা জানায়নি। এই এনজিওটা চালু করার পেছনে আমার জীবনের একটা বিশাল কষ্টের অধ্যায় আছে। নিজেকে মদের বোতলে চুবিয়ে না রেখে মনে হয়েছিল পরের জন্য কিছু করার কথা তাই এইসব’। দেখলাম বিজয়বাবু কিছুটা আবেগপ্রবণ হয়ে পড়লেন। তারপর আমার কাঁধে হাতটা রেখে বলে উঠলেন ‘আর স্যার বলবেন না, তাহলে জেলে পুরে দেবো। আমায় আপনি বিজয়দা বলেই ডাকুন। আর এখনো একটু আধটু ড্রিঙ্কস চলে নাকি? আসলে আজ একটু মুড ছিল’। আমার তো মেঘ না চাইতেই জলের অবস্থা। থানার বড়বাবু আমার সাথে বসে মদ খাবে এরচেয়ে সৌভাগ্যের আর কি আছে? আমিও বেশ গদগদ হয়ে বলে উঠলাম ‘বিজয়দা আমারও একটা দাবী রয়েছে; আমাকে দাতা কর্ণ বা ওইধরনের কোননামে ডাকবেন না, কারন আমি নিজের সুনাম শুধুই একজন ব্যাংকার হিসেবে শুনতে চাই’।
বিজয়দার মদ্যপান করার ইচ্ছাপ্রকাশ হয়ত আমার ও রবির জন্য মঙ্গলদায়ক হতে চলেছে। কারন এতদিনের এই বেচুগিরির লাইফে এটা শিখেছি যে সে যতবড়ই ধুরন্ধর মাল হোক না কেন পেটে ৪-৫ পেগ মাল পড়লে আপনে আপ অনেক কথাই বাইরে চলে আসে। আর আমিও বুঝতে পারবো এই মুহূর্তে কেসটা নিয়ে পুলিশ কি চিন্তা ভাবনা করছে। যেভাবে হোক রবিকে এই বিপদ থেকে বার করতেই হবে।
মদের গ্লাসে চিয়ারস বলে প্রথম চুমুকটা দেওয়ার পরই বিজয়দা কিছুটা গম্ভীর হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন ‘আমি শুধু আপনার সুনাম করতে বা আপনার সাথে আলাপ করতে এখানে আসিনি। এই কেসটায় আমার একজন প্রফেশনাল ব্যাংকারের সাহায্য প্রচণ্ড দরকার’ আমিও কৌতুকের সুরে বলে উঠলাম ‘পুলিশ ডিপার্টমেন্টকে আমি আইনি/বেআইনি দুভাবেই ফিনান্স করতে রাজী আছি। বলুন কত টাকা লোণ প্রয়োজন? কিন্তু এটাও মনে রাখবেন, সুদসহ টাকাটাও কিন্তু গলায় আঙুল দিয়ে বার করব’। আমার কথা শুনে বিজয়দা তো প্রচণ্ড জোরে হেঁসে প্রায় গড়িয়ে গেলেন। কোনরকমে নিজেকে সামলে বলে উঠলেন ‘আপনি সত্যিই বিশাল রসিক মানুষ। আরে না লোণ নয়, আসলে এই কেসটার সাথে অদ্ভুতভাবে কতগুলো বিষয় জড়িয়ে আছে’। জানি ওর পেট থেকে এবার কথাগুলো বার করতেই হবে। আমিও কৌতূহল নিয়ে প্রশ্ন করলাম ‘কিরকম? মানে ঠিক কোন কোন বিষয়ের কথা আপনি বলছেন?’ উনি বেশ কিছুক্ষন গম্ভীর থেকে বলে উঠলেন ‘বিপ্লববাবু, কেসের ব্যাপারে অন্যকে জানানো আমার কাছে অপেশাদারী আচরন। তবুও যেহেতু মানুষ হিসেবে আপনাকে শ্রদ্ধা করি ও যেহেতু এই কেসে আপনার মত একজন ব্যাংকারকে আমার প্রচণ্ড প্রয়োজন, তাই আপনাকে কিছু গোপন করবো না’। এক চুমুকে মদের গ্লাসটা পুরো শেষ করে উনি শুরু করলেন থ্রিলার গল্প।
“এই কেসটার সাথে কতগুলো আপাত দৃষ্টিতে সম্পর্কহীন ব্যাপার জড়িয়ে আছে। আপনাদের ব্যাঙ্কের উল্টো দিকের যে বিল্ডিংটায় মনীন্দ্রবাবু খুন হয়েছেন, আপনি কি কখনো ওটায় গেছেন? (আমি কিছু উত্তর দেওয়ার আগেই উনি নিজেই উত্তর দিয়ে দিলেন) ওর ফিফথ অর্থাৎ লাস্ট ফ্লোরটা একটা লজ কাম হোটেল। মনীন্দ্রবাবু সেইরাতে এই লজটায় একটা রুম বুক করেছিলেন। সাথে ছিল এক মহিলা। সেই মহিলার নাম বা পরিচয়পত্র কোনকিছুই লজে নথিভুক্ত নেই। এমনকি সেই মহিলা লজে আসা ও বেরিয়ে যাওয়া উভয় ক্ষেত্রেই * পরিহিত ছিলেন। খোচরদের থেকে খবর নিয়ে জেনেছি ওই মহিলা জুলি। কিন্তু কে এই জুলি? কোথায় থাকে? কেমন ই বা দেখতে এর কোন তথ্য আমাদের কাছে নেই। (একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে) শহরে বহুমাস ধরে একটা সেক্স র*্যাকেট চলছে, এবং ওদের নেটওয়ার্ক আমাদের থেকে অনেক বেশী শক্তিশালী। আমরা কোন হোটেলে কবে রেড করব তার সব খবর ওদের কাছে থাকে। এবং, এরা কোন পাতি বেশ্যা অথবা কল গার্ল নয় রীতিমত সম্ভ্রান্ত পরিবারের গৃহবধূ অথবা মহিলা। এদের নামকরা সব বিজনেস এজেন্সির মত মার্কেট রিসার্চ উইং আছে। এরা সোশ্যাল মিডিয়ায় বিবাহিত বা অবিবাহিত পুরুষদের টার্গেট করে।
অর্থাৎ যদি সেক্স র*্যাকেট এই কেসের প্রথম মিসিং লিঙ্ক হয় তো দ্বিতীয় মিসিং লিঙ্ক হোল সোশ্যাল মিডিয়া যেমন ফেসবুক। আমি বিশ্বস্ত হ্যাকার দিয়ে মনীন্দ্র বাবুর প্রোফাইল চেক করিয়েছি। প্রায় ৩-৪ বছর ধরেই এই র*্যাকেটটার সাথে ওনার ফেসবুকে সংযোগ আছে”।
“কি বিপ্লব বাবু বোর হচ্ছেন নাকি” আমি প্রায় চমকে উঠলাম ওনার কথা শুনে। কিছুটা হেঁসে উত্তর দিলাম “আরে মশাই, বোর কি হব এতো অ্যাডলফ হিচককের গল্পকেও হার মানাচ্ছে। আপনি চালিয়ে যান। তবে এটা মানতেই হবে যে এই কেসটায় পুলিশ ডিপার্টমেন্ট বেশ নাকুনি চুবুনি খেয়েছে”
কিছুটা উপহাস করার ছলে বিজয়দা বলে উঠলেন ‘আরে মশাই, আমি ৭ বছর গোয়েন্দা বিভাগে কাটিয়েছি। এই কেসটা আমি আপনাকে চ্যালেঞ্জ করে বলছি, আর ২-৩ দিনের মধ্যেই সল্ভ করে দেবো। (কিছুক্ষন চুপ করে থেকে) আমরা শুধুই মনীন্দ্র বাবুর প্রোফাইল চেক করেছি, কাল আমরা ওনার স্ত্রী অর্থাৎ সুমিতা দেবীর প্রোফাইল ও চেক করব”
কথাটা আমার কাছে একদিকে খুশি আর আরেকদিকে ভয়ের। খুশি এই কারনে যে বিজয়দার যে নেশা ভালোই চড়েছে তা এই ওভার কনফিডেন্স বিহেভ দেখেই বোঝা যায়। আর দুশ্চিন্তা এই যে সম্ভবত কালই রবি গ্রেফতার হতে চলেছে।
“একি মশাই, আপনি তো দেখি চিন্তায় পড়ে গেলেন। আমি আসি এই গল্পের তৃতীয় মিসিং লিঙ্ক এর ব্যাপারে আর সেই কারনেই আপনার কাছে আসা। ব্যাঙ্কিং প্রফেশনাল অথবা ব্যাঙ্কিং নলেজ অথবা ব্যাংকার এই হোল এই কেসের তৃতীয় মিসিং লিঙ্ক। (বেশ কিছুক্ষন নীরব থাকার পর) হোটেলের ঘর থেকে আমরা একটা অদ্ভুত খাতা আবিস্কার করেছি। সাদা, রুলটানা দিস্তা খাতা। আর তার প্রতিটা পেজে বেশ বড় বড় হরফে কিছু ব্যাঙ্কিং এর প্রফেশনাল ল্যাঙ্গুয়েজ। যেটা এই কেসের কোড ওয়ার্ড অন্তত আমাদের কাছে। ছোটবেলায় ধাঁধা সল্ভ করেছেন? তাহলে আপনিই পারবেন এই কথাগুলোর মানে উদ্ধার করতে। আমার প্রতিটা লাইন মনে নেই। যতটুকু মনে আছে বলছি।
“account opening date ২৫শে মাঘ (এবার আপনিই ভাবুন বাংলায় কখনো আকাউনট ওপেনিং ডেট হয়)”
“check will bounce if you are not July (এতো ব্যাকরণগত ভুলের পরও এটাই বুঝেছি যে জুলাই মাসে চেক বাউন্স হয়েছে বা হতে পারে)”
বাকিগুলো ঠিক মনে পড়ছে না, কাল আপনার কাছে খাতাটা নিয়ে আসবো। যা উদ্ধার করার আপনিই করবেন। কিন্তু এখানেই শেষ নয় আরও একটা ব্যাঙ্ক সংক্রান্ত রহস্য আছে। যে ১০ লাখ টাকা আপনার এনজিও তে উনি দান করবেন ভেবেছিলেন সেটা ৫০০০০ টাকার ২০টা ড্রাফ্*ট। একবার ভেবে দেখুন কারুর আকাউনট এ টাকা ট্রান্সফার করার কত প্রসেস আছে, কিন্তু উনি ড্রাফ্*ট বানানোর মত এতো কষ্টসাধ্য একটা কাজ করলেন। তাও আবার ২০ টা। ওনার ব্রাঞ্চে খোঁজ নিয়ে জানতে পেরেছি শেষ ১ সপ্তাহে উনি অফিসের সব কাজ ফেলে শুধু ড্রাফ্*ট বানিয়েছেন। একটু ভেবে দেখুন একটি ব্রাঞ্চের ম্যানেজার নিজে হাতে ড্রাফ্*ট বানাচ্ছেন।
সব কেমন ওপর দিয়ে বেরিয়ে গেলো, মাথাটা ঝিমঝিম করতে শুরু করল। শালা ব্যাঙ্কিংএও যে এতো ধাঁধা আছে জানলে ব্যাংকার হতাম না।
দরজাটা খোলা মাত্র অন্য এক মানুষ, যেন কোন এক বিশেষ মন্ত্রবলে এক রাশভারী গম্ভীর পুরুষ হাসিখুশি এক মানুষে পরিনত হয়েছেন। আমি কিছু বলার আগেই গেটের বাইরে থেকে ভেসে এলো রুদ্ধশ্বাসে কয়েকটা শব্দ “আরে আপনি কিরকম লোক মশাই, একবার তো বলবেন আপনিই সেই বিপ্লব পোদ্দার, অর্থাৎ দীপালির বন্ধু বিপ্লব পোদ্দার। যিনি নিজের সঞ্চয়ের অর্ধেক টাকা শুধুই গরীবের ছেলেকে মানুষ করার পেছনে খরচ করেন। আরে আমি আপনার কতবড় ফ্যান আপনি জানেন? শুধু আপনার এনজিওটার নাম আমি জানতাম না, তাই। ওহ আর জানলেও বা কি, শালা পুলিশ তো স্বভাবটাই খারাপ হয়ে গেছে” কথাগুলো শেষ করার পর বিজয় সামন্ত আগে একটা লম্বা নিঃশ্বাস নিলেন। আমিও কথাটা ঘোরাবার জন্য ওনাকে বললাম ‘আরে স্যার, আগে ভেতরে তো আসুন’। ভেতরে ঢুকেও উনি একিভাবে বলে চললেন ‘আরে আজকাল কার যুগেও যে দাতা কর্ণ রয়েছে তা আপনার কথা না জানলে কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারতাম না’ সত্যি এবার একটা প্রতিবাদ করার দরকার ছিল তাই আমিও উত্তর দিলাম ‘স্যার আপনাকে বোধ হয় দীপালী একটা কথা জানায়নি। এই এনজিওটা চালু করার পেছনে আমার জীবনের একটা বিশাল কষ্টের অধ্যায় আছে। নিজেকে মদের বোতলে চুবিয়ে না রেখে মনে হয়েছিল পরের জন্য কিছু করার কথা তাই এইসব’। দেখলাম বিজয়বাবু কিছুটা আবেগপ্রবণ হয়ে পড়লেন। তারপর আমার কাঁধে হাতটা রেখে বলে উঠলেন ‘আর স্যার বলবেন না, তাহলে জেলে পুরে দেবো। আমায় আপনি বিজয়দা বলেই ডাকুন। আর এখনো একটু আধটু ড্রিঙ্কস চলে নাকি? আসলে আজ একটু মুড ছিল’। আমার তো মেঘ না চাইতেই জলের অবস্থা। থানার বড়বাবু আমার সাথে বসে মদ খাবে এরচেয়ে সৌভাগ্যের আর কি আছে? আমিও বেশ গদগদ হয়ে বলে উঠলাম ‘বিজয়দা আমারও একটা দাবী রয়েছে; আমাকে দাতা কর্ণ বা ওইধরনের কোননামে ডাকবেন না, কারন আমি নিজের সুনাম শুধুই একজন ব্যাংকার হিসেবে শুনতে চাই’।
বিজয়দার মদ্যপান করার ইচ্ছাপ্রকাশ হয়ত আমার ও রবির জন্য মঙ্গলদায়ক হতে চলেছে। কারন এতদিনের এই বেচুগিরির লাইফে এটা শিখেছি যে সে যতবড়ই ধুরন্ধর মাল হোক না কেন পেটে ৪-৫ পেগ মাল পড়লে আপনে আপ অনেক কথাই বাইরে চলে আসে। আর আমিও বুঝতে পারবো এই মুহূর্তে কেসটা নিয়ে পুলিশ কি চিন্তা ভাবনা করছে। যেভাবে হোক রবিকে এই বিপদ থেকে বার করতেই হবে।
মদের গ্লাসে চিয়ারস বলে প্রথম চুমুকটা দেওয়ার পরই বিজয়দা কিছুটা গম্ভীর হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন ‘আমি শুধু আপনার সুনাম করতে বা আপনার সাথে আলাপ করতে এখানে আসিনি। এই কেসটায় আমার একজন প্রফেশনাল ব্যাংকারের সাহায্য প্রচণ্ড দরকার’ আমিও কৌতুকের সুরে বলে উঠলাম ‘পুলিশ ডিপার্টমেন্টকে আমি আইনি/বেআইনি দুভাবেই ফিনান্স করতে রাজী আছি। বলুন কত টাকা লোণ প্রয়োজন? কিন্তু এটাও মনে রাখবেন, সুদসহ টাকাটাও কিন্তু গলায় আঙুল দিয়ে বার করব’। আমার কথা শুনে বিজয়দা তো প্রচণ্ড জোরে হেঁসে প্রায় গড়িয়ে গেলেন। কোনরকমে নিজেকে সামলে বলে উঠলেন ‘আপনি সত্যিই বিশাল রসিক মানুষ। আরে না লোণ নয়, আসলে এই কেসটার সাথে অদ্ভুতভাবে কতগুলো বিষয় জড়িয়ে আছে’। জানি ওর পেট থেকে এবার কথাগুলো বার করতেই হবে। আমিও কৌতূহল নিয়ে প্রশ্ন করলাম ‘কিরকম? মানে ঠিক কোন কোন বিষয়ের কথা আপনি বলছেন?’ উনি বেশ কিছুক্ষন গম্ভীর থেকে বলে উঠলেন ‘বিপ্লববাবু, কেসের ব্যাপারে অন্যকে জানানো আমার কাছে অপেশাদারী আচরন। তবুও যেহেতু মানুষ হিসেবে আপনাকে শ্রদ্ধা করি ও যেহেতু এই কেসে আপনার মত একজন ব্যাংকারকে আমার প্রচণ্ড প্রয়োজন, তাই আপনাকে কিছু গোপন করবো না’। এক চুমুকে মদের গ্লাসটা পুরো শেষ করে উনি শুরু করলেন থ্রিলার গল্প।
“এই কেসটার সাথে কতগুলো আপাত দৃষ্টিতে সম্পর্কহীন ব্যাপার জড়িয়ে আছে। আপনাদের ব্যাঙ্কের উল্টো দিকের যে বিল্ডিংটায় মনীন্দ্রবাবু খুন হয়েছেন, আপনি কি কখনো ওটায় গেছেন? (আমি কিছু উত্তর দেওয়ার আগেই উনি নিজেই উত্তর দিয়ে দিলেন) ওর ফিফথ অর্থাৎ লাস্ট ফ্লোরটা একটা লজ কাম হোটেল। মনীন্দ্রবাবু সেইরাতে এই লজটায় একটা রুম বুক করেছিলেন। সাথে ছিল এক মহিলা। সেই মহিলার নাম বা পরিচয়পত্র কোনকিছুই লজে নথিভুক্ত নেই। এমনকি সেই মহিলা লজে আসা ও বেরিয়ে যাওয়া উভয় ক্ষেত্রেই * পরিহিত ছিলেন। খোচরদের থেকে খবর নিয়ে জেনেছি ওই মহিলা জুলি। কিন্তু কে এই জুলি? কোথায় থাকে? কেমন ই বা দেখতে এর কোন তথ্য আমাদের কাছে নেই। (একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে) শহরে বহুমাস ধরে একটা সেক্স র*্যাকেট চলছে, এবং ওদের নেটওয়ার্ক আমাদের থেকে অনেক বেশী শক্তিশালী। আমরা কোন হোটেলে কবে রেড করব তার সব খবর ওদের কাছে থাকে। এবং, এরা কোন পাতি বেশ্যা অথবা কল গার্ল নয় রীতিমত সম্ভ্রান্ত পরিবারের গৃহবধূ অথবা মহিলা। এদের নামকরা সব বিজনেস এজেন্সির মত মার্কেট রিসার্চ উইং আছে। এরা সোশ্যাল মিডিয়ায় বিবাহিত বা অবিবাহিত পুরুষদের টার্গেট করে।
অর্থাৎ যদি সেক্স র*্যাকেট এই কেসের প্রথম মিসিং লিঙ্ক হয় তো দ্বিতীয় মিসিং লিঙ্ক হোল সোশ্যাল মিডিয়া যেমন ফেসবুক। আমি বিশ্বস্ত হ্যাকার দিয়ে মনীন্দ্র বাবুর প্রোফাইল চেক করিয়েছি। প্রায় ৩-৪ বছর ধরেই এই র*্যাকেটটার সাথে ওনার ফেসবুকে সংযোগ আছে”।
“কি বিপ্লব বাবু বোর হচ্ছেন নাকি” আমি প্রায় চমকে উঠলাম ওনার কথা শুনে। কিছুটা হেঁসে উত্তর দিলাম “আরে মশাই, বোর কি হব এতো অ্যাডলফ হিচককের গল্পকেও হার মানাচ্ছে। আপনি চালিয়ে যান। তবে এটা মানতেই হবে যে এই কেসটায় পুলিশ ডিপার্টমেন্ট বেশ নাকুনি চুবুনি খেয়েছে”
কিছুটা উপহাস করার ছলে বিজয়দা বলে উঠলেন ‘আরে মশাই, আমি ৭ বছর গোয়েন্দা বিভাগে কাটিয়েছি। এই কেসটা আমি আপনাকে চ্যালেঞ্জ করে বলছি, আর ২-৩ দিনের মধ্যেই সল্ভ করে দেবো। (কিছুক্ষন চুপ করে থেকে) আমরা শুধুই মনীন্দ্র বাবুর প্রোফাইল চেক করেছি, কাল আমরা ওনার স্ত্রী অর্থাৎ সুমিতা দেবীর প্রোফাইল ও চেক করব”
কথাটা আমার কাছে একদিকে খুশি আর আরেকদিকে ভয়ের। খুশি এই কারনে যে বিজয়দার যে নেশা ভালোই চড়েছে তা এই ওভার কনফিডেন্স বিহেভ দেখেই বোঝা যায়। আর দুশ্চিন্তা এই যে সম্ভবত কালই রবি গ্রেফতার হতে চলেছে।
“একি মশাই, আপনি তো দেখি চিন্তায় পড়ে গেলেন। আমি আসি এই গল্পের তৃতীয় মিসিং লিঙ্ক এর ব্যাপারে আর সেই কারনেই আপনার কাছে আসা। ব্যাঙ্কিং প্রফেশনাল অথবা ব্যাঙ্কিং নলেজ অথবা ব্যাংকার এই হোল এই কেসের তৃতীয় মিসিং লিঙ্ক। (বেশ কিছুক্ষন নীরব থাকার পর) হোটেলের ঘর থেকে আমরা একটা অদ্ভুত খাতা আবিস্কার করেছি। সাদা, রুলটানা দিস্তা খাতা। আর তার প্রতিটা পেজে বেশ বড় বড় হরফে কিছু ব্যাঙ্কিং এর প্রফেশনাল ল্যাঙ্গুয়েজ। যেটা এই কেসের কোড ওয়ার্ড অন্তত আমাদের কাছে। ছোটবেলায় ধাঁধা সল্ভ করেছেন? তাহলে আপনিই পারবেন এই কথাগুলোর মানে উদ্ধার করতে। আমার প্রতিটা লাইন মনে নেই। যতটুকু মনে আছে বলছি।
“account opening date ২৫শে মাঘ (এবার আপনিই ভাবুন বাংলায় কখনো আকাউনট ওপেনিং ডেট হয়)”
“check will bounce if you are not July (এতো ব্যাকরণগত ভুলের পরও এটাই বুঝেছি যে জুলাই মাসে চেক বাউন্স হয়েছে বা হতে পারে)”
বাকিগুলো ঠিক মনে পড়ছে না, কাল আপনার কাছে খাতাটা নিয়ে আসবো। যা উদ্ধার করার আপনিই করবেন। কিন্তু এখানেই শেষ নয় আরও একটা ব্যাঙ্ক সংক্রান্ত রহস্য আছে। যে ১০ লাখ টাকা আপনার এনজিও তে উনি দান করবেন ভেবেছিলেন সেটা ৫০০০০ টাকার ২০টা ড্রাফ্*ট। একবার ভেবে দেখুন কারুর আকাউনট এ টাকা ট্রান্সফার করার কত প্রসেস আছে, কিন্তু উনি ড্রাফ্*ট বানানোর মত এতো কষ্টসাধ্য একটা কাজ করলেন। তাও আবার ২০ টা। ওনার ব্রাঞ্চে খোঁজ নিয়ে জানতে পেরেছি শেষ ১ সপ্তাহে উনি অফিসের সব কাজ ফেলে শুধু ড্রাফ্*ট বানিয়েছেন। একটু ভেবে দেখুন একটি ব্রাঞ্চের ম্যানেজার নিজে হাতে ড্রাফ্*ট বানাচ্ছেন।
সব কেমন ওপর দিয়ে বেরিয়ে গেলো, মাথাটা ঝিমঝিম করতে শুরু করল। শালা ব্যাঙ্কিংএও যে এতো ধাঁধা আছে জানলে ব্যাংকার হতাম না।