Thread Rating:
  • 14 Vote(s) - 3.21 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
বিপ্লব পোদ্দার- ব্যাংকার অফ দ্যা ইয়ার- complete
#8
“রমা, একটা কথা তোমাদের দুজনকেই বলার ছিল। আচ্ছা, তোমরা তো একটা বাচ্চাকে দত্তক নিলেই পারো। এভাবে কাজের মেয়ের ছেলেকে নিজের ছেলে ভেবে চলাটা সত্যিই নির্বুদ্ধিতা। যতই হোক ও মানুষ তোমাদের কাছে হয়না, সেই তো বস্তিতেই ফিরে যায়। তোমরা বরং...” রঞ্জনকে নিজের কথাটা শেষ করতে দেয়না রমা। তার আগেই বলে ওঠে “রঞ্জনদা আপনি প্রচণ্ড ক্লান্ত। এখন রেস্ট নিন আমরা বরং পরে কথা বলব” বলেই রমা গট গট করে হেঁটে আমাদের বেডরুমের দিকে চলে যেতে শুরু করে।
আমি স্বপ্নেও ভাবতে পারিনি রঞ্জন এইকথা রমাকে বলতে পারে। রঞ্জন খুব ভালো করেই বোঝে রমার মানসিক অবস্থা। রমার এই আকস্মিক গাম্ভীর্যে রঞ্জনও যথেষ্ট অপ্রস্তুত অবস্থার মধ্যে পরে যায়। রমা অনেক কেঁদেছে, জীবনে আর যাই করি রমার চোখের জল আমি সত্যি সহ্য করতে পারিনা। রঞ্জনের দিকে তাকিয়ে আমি বললাম “রঞ্জনদা, বাবাই যদি বেঁচে থাকতো তাহলে সত্যিই আমাদের বাবাইএর মতই দেখতে হত। আমরা ওকে নিজের ছেলে বলে বিশ্বাস করি। এই বিশ্বাসটায় দয়া করে আঘাত দিওনা” রঞ্জনের মুখ লজ্জায় লাল হয়ে গেলো। কোনরকমে মাথাটা নিচু করে ‘অ্যাই আম এক্সত্রিমলি সরি’ বলে রঞ্জন ভেতরে চলে গেলো।
জানি বউটা হয় কাঁদছে, নয় জানলার দিকে আপন মনে তাকিয়ে আছে। নিজেকে বিশাল অপরাধী মনে হয় মাঝে মাঝে। শালা, একটা অপারেশন, শুধু একটা অপারেশন। যদি ৬ টা ঘণ্টা আগে টাকাটা জোগাড় হত, ছেলেটা বেঁচে যেত। আমার এই পুরনো কথাগুলো ভাবতে ভালো লাগেনা। বাবাই মারা যাওয়ার পর কষ্ট আমিও পেয়েছি, কিন্তু বউটার মুখের দিকে তাকিয়ে নিজেকে সংবরন করেছি। বউটা টানা ৬ মাস একটাও কথা বলেনি। তারপর একদিন অনেক জোরাজুরি করতে মুখ দিয়ে কান্নার রব কিছুটা বন্যার তোড়ের মত ভেসে এলো। খুব আনন্দ পেয়েছিলাম, সত্যি এটাই বিশ্বাস করে ফেলেছিলাম যে বউটা বোধ হয় আর বাঁচবে না। শালা মাদারচোঁদদের দুনিয়ায় আমি একা নই সবাই দালাল।
এখন একটাই কর্তব্য কিকরে পাগলী বউটার মুখে একটু হাঁসি ফোটাবো। রমা জানলার গরাদগুলো দুহাতে আঁকড়ে ধরে আনমনে বাইরের দিকে তাকিয়ে ছিল। আমি ওর ২-৩ হাত পেছনে এসে দাঁড়ালাম। আমার একটা হৃদয় আছে এবং আমার একটা শরীর আছে। এই দুইই রমার জন্য উৎসর্গীকৃত সেই কোন আদিম কাল থেকে। আমার বউটা একফোঁটা পাল্টায়নি। বাড়ি থেকে পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করেছিলাম আমরা। শ্বশুরবাড়ির লোকেদের কাছে চিরকালই আমি ব্রাত্য। এতো সুন্দরী ও শিক্ষিত মেয়ের কেরানী জামাই ওদের কারুর পক্ষেই মানা সম্ভব ছিলনা। বাপের বাড়ি গিয়ে অপমানিত হয়ে এসে ঠিক এভাবেই জানলায় মুখ গুঁজে বাইরের দিকে তাকিয়ে থাকতো রমা। তখন অবশ্য এই ফ্ল্যাটটা ছিলনা, ছিল একটা ভাড়া বাড়ি। পেছন থেকে গিয়ে ওর কোমরটা জড়িয়ে ধরে ওকে স্বপ্ন দেখাতাম। বলতাম “রমা, দেখো ওই তাল গাছটার দিকে দেখো। দুটো বাবুই পাখী দিনরাত পরিশ্রম করে চলেছে শুধু একটা বাসা বানাবে বলে। আজ হয়ত এই বাগানের সমস্ত পাখী ওদের দেখে হাসছে, ভাবছে ধুস এভাবে কি আর হয় নাকি। কিন্তু ওদের ভালোবাসা এতটাই সত্য দেখো ওদের বাসা একদিন হবেই। আর তা বাকি পাখিদের থেকে অনেক ভালো হবে” রমা প্রতিদিন দুপুরে ওই তালগাছটার দিকে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতো আর দেখত কিভাবে আসতে আসতে দুটো পাখী নিজেদের বাসা বানাচ্ছে। আমি মাইনের পুরো টাকাটা রমার হাতে তুলে দিতাম আর রমা আলমারি থেকে রোজ টাকা বার করে গুনত। ও বিশ্বাস করত আমরাও একদিন ওই বাবুই পাখীদের মতই নিজেদের বাসা বানাবো। আমাদের ঘর হবে, সমাজে সম্মান হবে। রমার চোখে আমি আমার প্রতি এক গভীর বিশ্বাস ও ভরসা দেখতে পেতাম। মনে হত এই পাগলিটার জন্য একদিন আমি তাজমহলটাই কিনে নেবো। সবকিছু ভেঙে তছনছ হয়ে গেলো। বাবাই এর হৃদয়ে একটা ছোট ফুটো ছিল। ডাক্তার প্রথমে ধরতে পারেনি। তখন ওর দেড় বছর বয়স। একদিন রাতে প্রচণ্ড চিৎকার করে কাঁদতে থাকে। আমি সঙ্গে সঙ্গে একটা ট্যাক্সি ডেকে ওকে নার্সিংহোমে নিয়ে যাই। ডাক্তার একটাই কথা বলে ১২ ঘণ্টার মধ্যে অপারেশন করতে হবে প্রায় ১০ লাখ টাকা খরচা। না আর ভাবতে পারছিনা। ওই যে... রমা কাঁদতে পারে কিন্তু আমি নই। আমার চোখে জল এলে সংসারটাই ভেসে যাবে। আমি রমার কাঁধে নিজের ডান হাতটা রাখলাম। রমা ফিরেও তাকাল না।
“রমা, সেই ভাড়াবাড়ির কথা মনে আছে। ঠিক এরকমই একটা জানলা ছিল, আর জানলার ওইধারে একটা বাগান। সেই বাবুই পাখীগুলোকে মনে আছে তোমার?” আমি বিশ্বাস করি এই কথার উত্তর রমা দেবেই। আমি জানি শত যন্ত্রণার মধ্যেও রমার হৃদয়ে এখনো বিপ্লবের জন্য ভালোবাসা রয়েছে। এই কথার উত্তর রমাকে দিতেই হবে। রমা আমার দিকে ফিরে আমার বুকে নিজের দুহাত রাখল। মুখটা নিচু করে আছে, চোখের কোনে জল থিকথিক করছে। জল তো আমারও চোখে এসে গেছে, রমাও তা বোঝে। “আমি তোমায় খুব খুব খুব ভালোবাসি রমা” না এই কথাটা আমি রমার মন ভালো করে দেওয়ার জন্যও বলিনি। হথাত ই মুখ দিয়ে বেরিয়ে গেলো। আমার জামাটাকে শক্ত করে দুহাত দিয়ে ধরে রমা আমার চোখের দিকে তাকাল। রমার গলার নালীটা ধিকিধিকি করে কেঁপে চলেছে। আমার মন বলছে ‘না রমা আর নয়, আর কতবার তুমি এরকম করে কষ্ট পাবে। আমিও যে বাঁচতে চাই রমা। রোজ রাতে মদের গ্লাসে ডুবিয়ে আর কতদিন নিজের কষ্টগুলো ভুলে থাকবো আমি। আমিও বাঁচতে চাই রমা। আজ ১০ বছর শুধুই তোমায় একটু হাসাতে চেষ্টা করছি। জানি প্রতিটা চেস্তাই বৃথা, কিন্তু বিশ্বাস কর হাল কোনোদিন ছাড়িনি আর ছাড়বোওনা” না এই কথাগুলো আমি রমাকে বলতে পারিনি। প্রচণ্ড জোরে একটা গোঙানি বেরিয়ে এলো রমার বুকের ভেতর থেকে। আমার বুকে মাথা দিয়ে রমা ডুকরে উঠল “বিপ্লব আমি মা হব। বিপ্লব আমি মা হব”
আহ, আমি আর সত্যিই পারছিলামনা। কাঁদছিল ও, চোখের জলটা ওর, কিন্তু বুকের যন্ত্রণাটা আমার। রমাকে আমি কখনো বিশ্বাস করাতে পারিনি রমা কোনোদিন আর মা হতে পারবে না। সিজার করে বাচ্চাটা বার করার সময়ই ও মা হওয়ার ক্ষমতা হারিয়েছিল। আমার বুকটা ছিল পাথর, আর একটা হতভাগী মা নিজের সন্তানের শোকে সেই পাথরেই মাথা কুটে চলেছে। ওরে হতভাগী তুই কি বুঝিস পাথরের ও লাগে, ওর ও প্রান আছে। নাহ এই কথাগুলো আমি ওকে বলতে পারিনি। রমার মাথা থেকে হাতটা সরিয়ে আগে নিজের চোখের জলটা ভালো করে মুছে নিলাম। রমার পিঠে হাত বুলিয়ে কিছুটা সান্ত্বনা দেওয়ার মত করে বলে উঠলাম “রমা, তোমায় তো বলাই হয়নি। ওই বস্তির ছেলেটা গো, আরে ওই ছোটু। ওকে স্পোর্টস অ্যাকাডেমিতে ভর্তি করেছিলাম না। জানো ও ফাস্ট ডিভিশন ক্লাবে খেলার চান্স পেয়েছে। আজ সকালে যখন বস্তিতে গেলাম, সেকি লজ্জার ঘটনা। একদম মাটিতে শুয়ে সাষ্টাঙ্গে প্রনাম করল। বলে কিনা আমি নাকি ভগবান। আমি বললাম আমি কেউ নইরে, সবই তোদের বৌদি। ওই আমায় শিখিয়েছে কিভাবে অন্যের পাশে থাকতে হয়। পরকে আপন করতে হয়, কিন্তু রমা” আমি জানতাম অতীতের মরীচিকা থেকে বার করতে গেলে রমাকে এক টানে কঠোর বাস্তবের মরুভুমিতে নিয়ে আসতে হবে। এতক্ষনে রমা স্বাভাবিক হয়। “কিন্তু কি? দেখো, কখনো টাকার কথা ভাববে না। আমাদের কে আছে বলতো। এই বস্তির ছেলেমেয়েগুলো আর আমাদের এই এনজিও এগুলোই সব। তুমি অনেক কষ্ট কর জানি, কিন্তু এই কাজে কখনো ফাঁকি দিয়না, তাহলে তোমার রমা আর...” রমার মুখটা হাত দিয়ে আলতো করে চাপা দিলাম। “না রমা এই কথা মুখেও আনবেনা”
[+] 1 user Likes samss400's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: বিপ্লব পোদ্দার- ব্যাংকার অফ দ্যা ইয়ার- complete - by samss400 - 09-02-2020, 11:56 AM



Users browsing this thread: 6 Guest(s)