Thread Rating:
  • 14 Vote(s) - 3.21 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
বিপ্লব পোদ্দার- ব্যাংকার অফ দ্যা ইয়ার- complete
#5
“আপনাদের ব্যাঙ্কের ঠিক উল্টোদিকের যে বিল্ডিংটা আছে তার ৫ তলা থেকে নীচে ফেলে দেওয়া হয়েছে। শুধু এটাই নয়, মৃত্যু নিশ্চিত করতে তার আগে মদের সাথে বিষ মেশানো হয়েছিল। সবচেয়ে আশ্চর্যের ব্যাপারটা হোল এটা এমন একধরনের বিষ যা সাধারনত এক বিশেষ প্রজাতির ছত্রাক থেকে তৈরি হয়। আফ্রিকার ৩-৪ তে দেশের জঙ্গলেই শুধু এই ছত্রাক পাওয়া যায়। ভারত কেন এশিয়ার ও কোন দেশে এই ছত্রাক পাওয়া সম্ভব নয়। আর এই বিষ হাতে গোনা কিছু গবেষণাগারেই রয়েছে। কিকরে খুনী এই বিষ প্রয়োগ করল তা সত্যিই খুব আশ্চর্যের”
বড়বাবু কথাগুলো প্রায় এক নিঃশ্বাসে শেষ করলেন। সত্যিই অদ্ভুত ব্যাপার, মনিদার মত নির্ভেজাল ভালো মানুষকে কেউ এভাবে খুন কেন করতে যাবে। “শুনুন আপনাদের বেশিক্ষন আটকাবো না, কয়েকটা প্রশ্ন আছে, ঠিক ঠিক জবাব দিয়ে দিন, কোন ঝামেলায় পড়তে হবেনা” বড়বাবুর কথা শুনে সকলেই একটু নড়ে চড়ে বসল। আমাদের দিকে তাকিয়ে বড়বাবু প্রশ্ন করা শুরু করলেন।
“আচ্ছা, আপনারা কেউ আগ্নেয় ট্রাস্ট ফান্ড নামে কোন এনজিওর নাম শুনেছেন?” আমার বুকটা ধড়াস করে উঠল। মনে হোল এই বুঝি হার্ট ফেল হয়ে যাবে। সবাই দেখছি আমার দিকে তাকাচ্ছে। ওদের চাহুনি দেখে বড়বাবুও গোলগোল চোখ করে আমার দিকে তাকালেন। বুঝলাম এই মুহূর্তে কোন জবাব না দিলে আরও বিপদ বাড়বে।
“ওটা আমার এনজিও। আমার ছেলে বাবাই এর ভালো নাম আগ্নেয়। ও ১০ বছর আগে পৃথিবী ছেড়ে চলে গেছে। ওর স্মৃতিতে আমিই ওই এনজিওটা শুরু করি। মূলত কলকাতার বস্তির ছেলেদের পড়াশুনা ও খেলাধুলার...” বড়বাবু আমায় কথাটা শেষ করতে দিলেন না। তার আগেই ধমক দিয়ে বলে উঠলেন “সে আপনি চ্যারিটি করুন, কিন্তু আপনার সংস্থাকে হথাত মনীন্দ্র বাবু ১০ লাখ টাকা ডোনেশন দেওয়ার কথা ভাবলেন কেন?”
সবাই দেখছি বড় বড় চোখ করে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমার তো বিচি আউট। শালা ১০ লাখ ডোনেশন অথচ আমিই জানিনা। কই আজি সকালে তো চেক করেছি। ১ পয়সাও তো ব্যাল্যান্স বাড়েনি। কোনরকমে আমতা আমতা করে বলে উঠলাম “স্যার, আমার সাথে মনিদার শেষ কথা হয়েছে প্রায় ৬ মাস আগে। উনি কেন এতো টাকা আমার এনজিওকে দান করার কথা ভাবলেন আমি জানিনা” বড়বাবু বেশ কিছুক্ষন চুপ করে বসে থাকলেন তারপর আমার দিকে তাকিয়ে বলে উঠলেন “বিপ্লব বাবু আপনার যতগুলো মোবাইল আছে ও টেলিফোন আছে তাদের নাম্বারগুলো এইখানে লিখুন, আমরা আপনার কললিস্ট দেখতে চাই। আর একটা কথা, আমাকে না জানিয়ে কলকাতার বাইরে যাবেন না”
কোত্থেকে যে কি হয়ে গেলো আমার কিছুই মাথায় ঢুকছে না। আমি নিজের সবকটা নাম্বার ই লিখে দিলাম। বড়বাবু কর্কশ গলায় বলে উঠলেন “আপনারা এখন আসুন। প্রয়োজনে আপনাদের আবার ডাকা হবে”
বাইরে বেরোনোর পর দেখি সবাই একদম থমকে গেছে। সম্ভবত ওই ১০ লাখের ব্যাপারটা নিয়েই ওদের মধ্যে যত চিন্তা। আমি বুঝলাম আমাকেই কিছু একটা করতে হবে নয়ত অফিসের রেপুটেশনটা একদম মাটিতে মিশে যাবে। আমি রবির দিকে তাকিয়ে বলে উঠলাম “রবি, মনেহয় সেদিনের আমার কথাগুলো মনিদা খুব আন্তরিকভাবে নিয়েছিলেন” রবি কোন উত্তর দিলনা বাকিরা আমার মুখের দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকলো। আমি আবার বললাম “আমার সাথে মনিদার শেষ কথা হয়েছে মাস ছয়েক আগে। তখন বলেছিলাম আমার এনজিওটার কথা। ভাবিনি মানুষটা এতটা গভীরভাবে নেবে ব্যাপারটা। সত্যি মনিদাকে আজ প্রনাম করতে ইচ্ছে হচ্ছে” বাকিরাও আমার কথায় সম্মতি জানালো, কিন্তু প্রত্যেকেই চায় থানা থেকে দ্রুত চলে যেতে তাই যে যার গাড়ি নিয়ে রওনা হলাম। আমার রুটটা একদম আলাদা। তাই আমি আলাদাই গেলাম। ওরা তিনজন ই নর্থ এ থাকে তাই একিসাথে রওনা দিলো। জানি সারা রাস্তা আমাকে নিয়ে ও এই খুনে আমার যোগের সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করতে করতেই ওরা পুরো রাস্তাটা কাটাবে। সে করুক, অন্যের মুখ তো আর বন্ধ করা যায়না। বাড়ি থেকে আর কয়েক মিনিটের ই রাস্তা বাকি আছে। হথাত একটা সাদা আম্বাসাডার গাড়ি আমার পাশে এসে দাঁড়াল। এই গাড়িটা আমি খুব ভালো করে চিনি। ভেতর থেকে শর্মাজী হাত নেড়ে ইশারা করে আমায় দাঁড়াতে বলল। ঠিক বানচোঁদটা টাকা চাইতে চলে এসেছে। মনে মনে ঠিক করলাম আজ ই ওকে অগ্রীম নেওয়া টাকাটা ফেরত দিয়ে দেবো। গম্ভীর মুখ করে স্কুটারটা ফুটপাথের ধারে পার্ক করলাম।
“আরে দাদা, মালটা একটু বেশীই খেয়ে ফেলেছিলাম। মাফ করেন দাদা। আপনি লোণটা না পাইয়ে দিলে যে মারা পড়ব। পুরো ১০ লাখের বিনিয়োগ আছে। পাইয়ে দিন দাদা যেভাবে হোক। এই লিন আমার ই চপ্পল, মারুন আমার গালে দুটা, দেখবেন ঠিক শুধরে গেছি” আমি ভাবতেও পারিনি শর্মাজী এরকমভাবে কারুর কাছে কাকুতি মিনতি করতে পারেন বলে। আমিও প্রফেশনাল ব্যাংকার, এরকম কত গালাগাল আমি খেয়েছি। আমিও একটু হাসিহাসি মুখ করে বললাম “আরে শর্মাজী বাজে বিহেভ তো আমিও করেছি। তাই সব ভুলে যান। আমি সত্যি ই চেষ্টা করছি। কিন্তু লোণটা তো আমি দিই না দেয় ব্যাংক। তাই একটু সময় তো লাগবেই” শর্মাজীর কালো কালো পান খাওয়া দাঁতগুলো প্রায় সব বাইরে বেরিয়ে এলো। আমার দুহাত জড়িয়ে ধরে বলে উঠলেন “দাদা, আপনাকে পুরো বিশ্বাস আছে আমার, আপনি ঠিক আমায় লোণটা পাইয়ে দেবেন, তবে দাদা...” আমি জানি ও ঠিক কি বলতে যাচ্ছে। আমিও সঙ্গে সঙ্গে ওকে বাধা দিয়ে বললাম “না, শর্মাজী, আমি শুধু আপনাকে লোণটা পাইয়ে দেওয়ার জন্য টাকা নিয়েছি। আপনার দ্বিতীয় প্রপসালটা আমার পক্ষে মানা সম্ভব নয়”
জানিনা কেন শর্মাজী আজ একদম নাছোড়বান্দা হয়ে আছেন। “দাদা পুরো এক করোর এর প্রফিট। নিন আজকে আপনার জন্য আরও ভালো কমিসন নিয়ে এসেছি। ৫০ আপনি আর ৫০ আমি” কথাটা শুনে মাথা খারাপ হয়ে গেলো আমার। শালা ৫০ লাখ দেওয়ার জন্যও মালটা তৈরি আছে। ৫০ লাখ আমি জীবনেও কামাতে পারবো না। কিন্তু যে কাজটা ও আমায় দিয়ে করাতে চায় তাতে প্রতিটা সেকেন্ডে রিস্ক। রিস্কটা কি নেবো না ছেড়ে দেবো, এই ভাবছি। আমার মুখের অবস্থা দেখে শর্মাজীই বলে উঠলেন “আরে দাদা, কোন ব্যাপার নয়। আপনি টাইম লিন। ভাবুন। একটা কথা মাইন্ডে রাখুন যে যেমন রিস্ক আছে তেমন টাকা ভি আছে” আমিও ঠিক প্রফেশনাল ব্যাংকার এর মত বলে উঠলাম “ওকে শর্মাজী, আমার একটু সময় চাই তারপর আপনাকে জানাচ্ছি” শর্মাজী আমার এই উত্তর শুনে দাঁত কেলিয়ে এমন একটা মিষ্টি হাঁসি উপহার দিলো যে পারলে গুড বাই কিসটাও দিয়ে দেয়।
Like Reply


Messages In This Thread
RE: বিপ্লব পোদ্দার- ব্যাংকার অফ দ্যা ইয়ার- complete - by samss400 - 09-02-2020, 11:52 AM



Users browsing this thread: 2 Guest(s)