Thread Rating:
  • 14 Vote(s) - 3.21 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
বিপ্লব পোদ্দার- ব্যাংকার অফ দ্যা ইয়ার- complete
#2
“কি খাবেন রঞ্জনদা? চিংড়ির মালাইকারী করে দেবো?”
“না না একি। আমি আপনাকে নিজে রেঁধে খাওয়াবার সুযোগটা পাই কোথায়?”
“আচ্ছা, আপনি যেমন চাইবেন”
“আরে না না রঞ্জনদা, ও এইসব পছন্দ করেনা খুব একটা। আচ্ছা ওকে জিজ্ঞেস করি, দেখি কি বলে”
মুচকি মুচকি হাঁসতে হাঁসতে রমা ফোনের রিসিভারটা নামিয়ে দিলো। কলকাতায় এখন কনকনে ঠাণ্ডা। এইসব ফেসবুক, সোশ্যাল নেটওয়ার্ক এর দৌলতে বাংলা মাসের কোন খোঁজ খবর আর রাখা হয়না। মনে হয় এখন পৌষ মাস। ছোটবেলায় মায়ের মুখে একটা প্রবাদ বাক্য প্রায়ই শুনতাম।
“কারুর পৌষমাস আর কারুর সর্বনাশ”
বানচোঁদটা আসছে তো আমার সর্বনাশ ই তো হবে। কিন্তু একটা কথাও সত্যি। শালা এই বেচুগিরির লাইফে কিছু পাই বা না পাই একটা হেব্বি খাসা বউ পেয়েছি। আজ প্রায় ১২ বছর হতে চলল আমার আর রমার বিয়ে হয়ে গেছে, কিন্তু রমা এখনো সেই ২৫-২৬ এর যুবতী। পাড়ার ছোকরা থেকে পাশের ফ্ল্যাটের ভদ্রলোক সবার কাছে আমি রমার স্বামী নামেই পরিচিত। বিপ্লব পোদ্দার অর্থাৎ আমি যে এই পাড়ার ই একটি জ্যান্ত মানুষ সেই খবর কেউ রাখেনা।
রমা বেশ হাঁসি হাঁসি মুখ করে পাশ কাটিয়ে চলে যাচ্ছিল। কাগজটা কোলের ওপর নামিয়ে রেখে রমার দিকে আড়চোখে একবার তাকালাম। রমার মুখ দেখে মনে হোল ও যেন লটারি পেয়ে গেছে। ওর মুখের এই অদ্ভুত বোকা বোকা হাঁসিটা আমার থেকে কোন অনুমতি পাওয়ারই লক্ষন। রমা ঠিক আমার পাশে এসে দাঁড়াল, আমার বাঁ হাতটার থেকে কয়েক ইঞ্চি দূরে রমার থলথলে সাদা থাইটা। শালা, ছেলেটা পাশেই দাঁড়িয়ে আছে, নয়ত এক্ষুনি হাতটা থাইগুলোকে ডোলে দিতে দিতে ভেতরের দিকে নিয়ে যেতাম। জানি রমা তেল মেরে কিছু একটা চাইবে।
‘এই ক্লাবে যাবে আজ? রঞ্জনদা বহুবছর ধরেই বলে আসছিল। আজ আর অনুরোধটা ফেলতে পারলাম না’ অত্যন্ত ধীরস্থিরভাবে রমা আমায় কথাটা বলল, ও জানে ওর এই মিষ্টি স্বরে অনুরোধ আমি জীবনে কখনো ফেলতে পারিনা।
মনে মনে বললাম ‘রমা তুমি যদি আমার ব্যাঙ্কের মার্কেটিং সেক্সানে থাকতে কাজটা অর্ধেক হয়ে যেত। আর ওই খানকির ছেলে রঞ্জনের মাকে আজ...’
আমিও ততোধিক ন্যাকামোর সাথে উত্তর দিলাম ‘কোন ক্লাবে যাবে গো? ইস্টবেঙ্গল না মোহনবাগান?’
আমার এই নির্বুদ্ধিতায় রমা খিলখিল করে হেঁসে উঠে বলে ‘আরে খেলার ক্লাব নয়, রঞ্জনদা নাইট ক্লাবে যাওয়ার কথা বলেছে’
চোখগুলো বড় বড় করে রমার দিকে তাকিয়ে বললাম ‘রমা, তোমার কি মাথা খারাপ হয়েছে? জানো ওইসব ক্লাবে কি হয়?’ ভেবেছিলাম এর প্রত্যুত্তরে রমা হয়ত খেকিয়ে উঠে কিছু একটা জবাব দেবে। কিন্তু ও মাথাটা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকলো আর বেশকিছুক্ষন পর উত্তর দিলো ‘বিপ্লব, আজ রোববার’।
আমি রমার দিকে তাকাতে পারলাম না, রমা আস্তে আস্তে ভেতরে রান্নাঘরের দিকে চলে গেলো। ছেলেটাও সোফা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আমাদের কথা শুনছিল। দেখলাম ওর ও মুখটা শুকনো হয়ে গেলো। আজ যে রবিবার আজ বাবাই যে নিজের বাড়িতে চলে যাবে। আর এই একটা রাতের জন্য আমি, রমা আমরা দুজনেই নিজেদের বিশ্বাস করাবো এই বাবাই আমাদের ছেলে নয়, আমাদের ছেলে বাবাই অনেকদিন আগেই...
তবে এটাও সত্যি কাল আবার সোমবার আসবে। আবার আমার আর রমার একটা মিথ্যের জাল বোনা শুরু হবে। কিন্তু ঠিক ৭ দিন পর আবার সেই একি রোববার ও আমাদের আবার একবার নতুন করে স্মৃতিচারণ করা এই বাবাই আমাদের ছেলে নয় আমাদের বাবাই অনেকদিন আগেই মারা গেছে। এই ভাঙ্গাগড়ার খেলার সাথে আমি ও রমা দুজনেই মানিয়ে উঠেছিলাম। কিন্তু আষাঢ়ে কালো মেঘের মত কিছু আশঙ্কা শেষ কয়েকদিন ধরেই আমাদের জীবনে চলে এসেছে। যার নবতম সংযোজন হোল রঞ্জনের আগমন।
ফোনটা আবার ক্রিং ক্রিং শব্দে তারস্বরে বেজে উঠল। হ্যাঁ জানি এটা রঞ্জনেরই ফোন। আমি ইতিমধ্যেই এই সিদ্ধান্তে এসে পৌঁছেছি যে রমা আজ রঞ্জনের সাথে নাইট ক্লাবে যাবে। হ্যাঁ, আমি জানি বাবাই মারা গেছে শুধুই আমার অকর্মণ্যতায়। এই পাগলী মেয়েটাকে আর কোন কষ্ট আমি দিতে পারবো না। ও ভালো থাকুক, মন খুলে হাসুক তাহলেই আমি খুশি। গলার স্বরটা একটু উঁচু করে বললাম ‘রমা, ফোন’। ভেতর থেকে কোন উত্তর এলনা। ভেতরের দিকে একটু উঁকি মারতে দেখলাম রমা, দুহাতে মুখটা চাপা দিয়ে কেঁদে চলেছে।
ও মেয়ে কাঁদতে পারে, আমি পারিনা। ছেলেটার চিতায় আগুন দেওয়ার সময় ও ঠিক এরকম ই বুকটা ছ্যাঁত করে উঠেছিল কিন্তু আমি কাঁদিনি। আমি যে মার্কেটিং এর কাজ করি। এই পচা মৃতদেহ সদৃশ সমাজটাকে বেশ্যা বানিয়ে দুবেলার ভাত জোগাড় করি। আমায় কাঁদতে নেই। আমি ব্যাংকার। পলিটিসিয়ান থেকে বড় ব্যাবসায়ী সবার ফোন ই আমার কাছে আসে। অনুরোধ একটাই ‘দাদা, ব্যাঙ্কের ফাঁকফোকর সবই আপনার জানা, যেভাবে হোক লোণটা বার করুন, কমিশন নিয়ে ভাববেন না’ অথচ শালা শুধুই ১০ লাখ টাকা আমার প্রয়োজন ছিল। আমি, বিপ্লব পোদ্দার, ব্যাংকার অফ দ্যা ইয়ার, নিজের পরিবারের প্রয়োজনে ১০ লাখ টাকা জোগাড় করতে পারিনি।
ভালো লাগছিলনা, পুরনো কথাগুলো ভাবতে। জানি রঞ্জনের ফোন। না তবুও রমাকে ডাকবো না। গলাটা বুজে এসেছিল, তাই ভালো করে গলাটা একবার ঝেড়ে ফোনটা রিসিভ করলাম। ‘হ্যালো, কে বলছেন’ ওপাশ থেকে একটা অচেনা স্বর ভেসে এলো।
Like Reply


Messages In This Thread
RE: বিপ্লব পোদ্দার- ব্যাংকার অফ দ্যা ইয়ার- complete - by samss400 - 09-02-2020, 11:50 AM



Users browsing this thread: 6 Guest(s)