02-02-2020, 06:21 AM
পর্ব-০৭
অনেকক্ষণ হাটার পর বাসায় গেলাম, আমি গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আসলাম।
তারপর আমি আব্বু, আম্মু আর অবন্তী খেয়ে নিলাম।
রুমে গিয়ে সোফায় বসে আছি, কিছুক্ষণ পর অবন্তী আসলো, এসে কিছুক্ষণ আনাগোনা করলো। তারপর বললো…
অবন্তীঃ জুয়েল! একটা কথা বলতাম।
আমিঃ হুম বলেন।
অবন্তীঃ এই নাও, এটা তোমার জন্য। (একটা প্যাকেট)
আমিঃ কি এটা?
অবন্তীঃ খুলে দেখো।
আমি প্যাকেট টা খুললাম। দেখলাম একটা পাঞ্জাবী। অবাক হয়ে জিজ্ঞাস করলাম….
আমিঃ এটা কখন নিলেন?
অবন্তীঃ এতো কিছু তোমার না জানলেও চলবে। হলুদের দিন তুমি এইটা গায়ে দিবে।
আমিঃ…. (হ্যা সূচক মাথা নাড়ালাম)
অবন্তীঃ মনে থাকে যেন।
আমি আবারও একটা বালিশ নিয়ে ফ্লোরে ঘুমিয়ে পড়লাম।
মাঝরাতে কারো নরম হাতের স্পর্শে আমার ঘুম ভেঙ্গে যায়, আমি জেগে গেলাম কিন্তু না জাগার ভান ধরে রাখলাম যাতে কেউ কিছু না বুঝতে পারে।
আমি আস্তে আস্তে চোখ মেলে তাকিয়ে দেখি অবন্তী আমার পাশে বসে, মাথায় হাত বুলাচ্ছে আর কান্না করতেছে।
আমি বুঝেও না বুঝার ভান ধরে শুয়ে আছি, ভালোই লাগতেছে। বিয়ের পর এই প্রথম ওর স্পর্শ পেলাম।
কিছুক্ষণ পর আমি চোখ বন্ধ করে বললাম “অনেক হইছে,এবার ঘুমিয়ে পড়ুন”।
অবন্তী আমার কথায় অবাক হয়ে যায়। তাড়াতাড়ি বসা থেকে উঠে খাটে চলে যায়। আমি ওপাশ হয়ে ঘুমিয়ে গেলাম।
সকালবেলা রেড়ি হয়ে কাজে যাচ্ছি এমন সময় আব্বু আর অবন্তী আমার সামনে পথ আটকে দাঁড়ালো।
বাবাঃ কিরে জুয়েল কই যাস?
আমিঃ কই আবার, কাজে।
বাবাঃ কালকে তোকে কি বললাম?
অবন্তীঃ আমার বান্ধবীর বিয়ে যে, সে কথা বলিনি?
আমিঃ হুম মনে আছে।
বাবাঃ তাহলে কাজে কেন যাচ্ছিস?
আমিঃ সারা দিন বাসায় থেকে কি করবো? বিয়েতে যাবো সন্ধ্যায়।
বাবাঃ সন্ধ্যায় গেলে খাবি কখন?
আমিঃ আরে ধুর আজকে বিয়ে না। আজকে গায়ে হলুদ। সো সন্ধ্যায় গেলে হবে।
অবন্তীঃ প্লিজ একটু তাড়াতাড়ি আসিও।
আমি আর কিছু না বলে বেরিয়ে গেলাম। সারা দিন কাজ শেষ করে বিকালবেলা বাসায় চলে আসলাম।
এসে দেখি অবন্তী আগে থেকে রেড়ি, আমিও ফ্রেশ হয়ে রেড়ি হলাম। অবন্তী একটা ব্যাগে কাপড়চোপড় নিয়ে নিলো।
তারপর আব্বু আম্মুকে বলে বেরিয়ে গেলাম।
একটা CNG নিলাম। অনেকক্ষণ পর বিয়ে বাড়িতে গিয়ে পৌঁছালাম। চারপাশ খুব সুন্দর করে সাজানো।
বাড়িতে গেলাম, অবন্তীকে দেখেই ওর ফ্রেন্ড জড়িয়ে ধরলো। তারপর আমার সাথে পরিচয় করিয়ে দিলো।
তারপর একটা রুম দেখিয়ে দিয়ে বললো সেখানে যেতে। আমি ওখানে গিয়ে বসলাম।
রাতের বেলা একা একা ভালো লাগছে না। এদিকওদিক হাটতেছি এমন কিছু একটার সাথে ধাক্কা খেলাম। তাকিয়ে দেখি একটা মেয়ে,,, আমার দিকে না তাকিয়েই বলতে লাগলো “” ওই মিয়া চোখে দেখেন না, দিলেন তো শাড়িটার ১২ টা বাজিয়ে””
তারপর আমার দিকে তাকালো, আমি তো ওরে দেখেই একটা টাসকি খেলাম। এটা যে লিমা, আমার ক্লাসমেট, আমাকে দেখেই বলতে লাগলো….
লিমাঃ আরে জুয়েল! তুই?
আমিঃ কিরে তুই, কি অবস্থা তোর?
লিমাঃ আমি তো ভালোই আছি তোর কি খবর?
আমিঃ আছি আলহামদুলিল্লাহ।
লিমাঃ তো বিয়েতে আসলি নাকি?
আমিঃ হুম, তুইও কি সেম?
লিমাঃ হুম, আমার মামাতো বোনের বিয়ে। মাহি (পাত্রী) তোর কি হয়?
আমিঃ অবন্তীর বান্ধবী।
লিমাঃ অবন্তী কে?
আমিঃ তোর ভাবি,,,,,
লিমাঃ কিহ তুই বিয়ে করেছিস? হারামি একটু বললিও না।
আমিঃ সরি রে হুট করেই বিয়েটা হয়ে গেছে।
লিমাঃ হুম হইছে। চল আমার কাজিন গুলার সাথে তোর পরিচয় করিয়ে দিই।
আমিঃ সবার সাথে তো পরিচিত হলাম।
লিমাঃ অবন্তীর জামাই হিসেবে হইছস,আমার বন্ধু হিসেবে তো আর হসনি। চল তো,,,,
আমিঃ আচ্ছা ঠিক আছে চল।
তারপর লিমার সাথে গেলাম,সবার সাথে আবারও পরিচিত হলাম। তারপর আমি আর লিমা কলেজের কথা গুলো মনে করে খুব হাসাহাসি করতেছি।
অন্যদিকে চোখ পড়তেই দেখি অবন্তী তাকিয়ে আছে আমাদের দিকে। আমি ওরে দেখে আরো জোরে হাসতে শুরু করলাম।
অবন্তী হঠ্যাৎ করেই এসে আমাকে হাত ধরে টেনে নিয়ে যায়।
অবন্তীঃ ওই এখানে কি করো?
আমিঃ দেখেন না কি করি? আড্ডা দিচ্ছি।
অবন্তীঃ আড্ডা দিচ্ছো মানে? ওই মেয়েটা কে?
আমিঃ ও আমার বেস্টফ্রেন্ড।
অবন্তীঃ কিহ! তোমার মেয়ে বেস্টফ্রেন্ড আছে? কই আগে তো কখনো শুনিনি।
আমিঃ আপনাকে কে সব কিছু বলবো। আমার পার্সোনাল ব্যাপার আমার কাছেই থাকবে
অবন্তীঃ আচ্ছা খেয়ে যাও।
আমিঃ আপনি খেয়ে নেন। আমি ওদের সাথে খাবো। (একটু ভাব নিলাম)
অবন্তীঃ কাদের সাথে?
আমিঃ আমার ফ্রেন্ড আর ওর কয়েকজন বান্ধবী।
অবন্তী কিছু না বলে রাগ দেখিয়ে চলে গেলো,আমি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে হাসতেছি এমন সময় পেছন থেকে কেউ একজন টোকা দেয়। তাকিয়ে দেখি লিমা,,,
লিমাঃ কিরে তোর বউ তো রেগে গেলো।
আমিঃ হা হা হা, নাহ রাগে নি
লিমাঃ জুয়েল ভাই তুই আর আমার সাথে কথা বলিস না। পরে দেখবি তোরে চিবায় খাইবো
আমিঃ শোন তোকে একটা অভিনয় করতে হবে।
লিমাঃ কি অভিনয়?
আমিঃ…….(সব শিখিয়ে দিলাম)
লিমাঃ না ভাই আমি পারবো না। তুই অন্য কাওকে বল। তোর বউ যে রাগি পরে আমার মাথা পাঠাবে।
আমিঃ প্লিজ না করিস না, তুই ছাড়াতো এতো ক্লোজ কোনো ফ্রেন্ড নাই আমার (একটু পাম দিলাম)
লিমাঃ আচ্ছা দেখি কি করা যায়।
আমিঃ দেখি না কাজটা তোকেই করতে হবে। আর তোর সাথে আরো কয়েকটা মেয়ে নিয়ে নে।
লিমাঃ আচ্ছা ঠিক আছে।
এরপর আমরা আমাদের প্ল্যান অনুসারে কাজ করতে শুরু করলাম। লিমা আমার হাত ধরে মাহির (পাত্রী) রুমে আসলো। অবন্তীও সেখানে ছিলো। আমাদের এই অবস্থায় দেখে অবন্তীর চোখ কপালে উঠে গেলো।
আমি আর লিমা কথা বলতেছি, লিমা হাসতে হাসতে বার বার আমার গায়ে পড়তেছে। এদিকে অবন্তী রেগে লাল হয়ে আছে। মনে মনে বললাম জানু তোমার মনে ভালোবাসা সৃষ্টি করতেছি।
তারপর আমি, লিমা আর ওর কয়েকটা কাজিন মিলে আড্ডা দিচ্ছি আর হাসাহাসি করতেছি এমন সময় দেখি অবন্তী দূর থেকে আমাকে ফলো করতেছে।
রাতে খাওয়ার সময় আমি আর লিমা একসাথে বসেছি। অবন্তীর আমাদের টেবিলে ছিলো। আরো কয়েকজন মেয়ে ছিলো।
লিমাঃ জুয়েল দোস্ত তোর মনে আছে কলেজে থাকতে তুই আমাকে খাইয়ে দিতি আমিও তোকে খাইয়ে দিতাম?
ওর কথা শুনে নিজেই আবুল হয়ে গেলাম, অভিনয় করতে বলেছি, কিন্তু এমন অভিনয় করবে আমি জীবনে কল্পনাও করিনি।
আমিঃ হুম মনে থাকবে না কেন, তুই কতো আমার আঙ্গুলে কামড় দিছস, দিন গুলো কি এতো সহজে ভুলতে পারি?
লিমাঃ মনে আছে আমার জন্মদিনে আমাকে খুব সুন্দর একটা গিফট দিয়েছিলি?
আমি; হুম, তোর জন্মদিন এর তারিখ কখনো আমি ভুলি না।
অবন্তী বার বার আমার দিকে তাকাচ্ছে। চোখের মধ্যে পানি টলোমলো করতেছে। আমাদের আরো কথাবার্তা দেখে সে টেবিল থেকে উঠে চলে গেলো।
তারপর সবাই খেয়ে উঠলাম, অন্য মেয়ে গুলাও জানে আমাদের প্ল্যান সম্পর্কে।
তারপর বাইরে চলে আসলাম, বিয়ে বাড়িতে চিল্লাচিল্লির জন্য কোনো কথাই ভালোভাবে শোনা যাচ্ছে না।
লিমাঃ জুয়েল তোর বউ কিন্তু তোকে অনেক ভালোবাসে।
আমিঃ কচু, তুই তাহলে কিছুই জানস না। আচ্ছা তোর কথা বল, বিয়ে করেছিস?
লিমাঃ করেছি আবার করিও নি।
আমিঃ মানে?
লিমাঃ বিয়ে ঠিক হয়ে আছে, কিন্তু উনি দেশের বাইরে। এমনিতে মোবাইলে সারাদিন কথা হয়। বিয়ের পর আমাকেও নিয়ে যাবে তো তাই সব কিছু ঠিকঠাক করতে একটু সময় লাগছে।
আমিঃ বাহ! তাহলে দেশের বাইরে চলে যাবি। দেখিস আমাদের আবার ভুলিস না।
লিমাঃ একটা মাইর দিবো, ভুলবো কেন। আচ্ছা তোর ভাই কোন দেশে থাকেরে?
ভাইয়ার কথা বলার কারনে মনটা খারাপ হয়ে গেলো,,,,
আমিঃ ভাইয়া এমন এক দেশে থাকে যেই দেশে গেলে কেউ আর ফিরে আসেনা।
লিমাঃ মানে?
আমিঃ…..(পুরো ঘটনা বললাম)
লিমাঃ সরি দোস্ত আমি জানতাম না।
আমিঃ ইটস ওকে।
লিমাঃ তারপর তুই তোর ভাবি মানে অবন্তীকে বিয়ে করে নিলি?
আমিঃ হুম।
লিমাঃ ভালো করছিস, মেয়েটা যথেষ্ট ভালো। তো এখন কি করিস?
আমিঃ তেমন কিছু না, চাকরি নাই। বেকার বেকার ঘুরতেছি।
সত্যিটা বললাম না, কারণ যতোই হোক একটু হলেও মান ইজ্জত আছে আমার।
লিমাঃ কি বলিস তাহলে ফ্যামিলি কে দেখে? কিভাবে চলে.????
আমিঃ আল্লাহ চালাইতেছে কোনো ভাবে।
লিমাঃ এই আমাদের কোম্পানির জন্য কয়েকজন লোক দরকার। তুই চাকরি করবি, আমি বাবাকে বলে দিলে তোর কোনো ইন্টার্ভিউ নিবেনা সরাসরি চাকরি দিয়ে দিবে।
আমিঃ কিন্তু…
লিমাঃ কিন্তু কি? বেতনের কথা বলতেছিস তো? আচ্ছা বেতনও বাড়িয়ে দিবে। তুই তোর সার্টিফিকেট জমা দিয়ে দিস।
আমিঃ থেংক্স দোস্ত।
লিমাঃ আরে থেংক্স এর কি আছে? চাকরি হয়ে গেলে ট্রিট দিবি।
আমিঃ আচ্ছা ঠিক আছে দিবো।
মনে মনে ভাবতেছি এই মেয়েটার সাথে কলেজে তেমন একটা কথা বলতাম না, জাস্ট হাই/হ্যালো ছাড়া। আর আজকে সেই আমাকে চাকরি দিয়ে দিলো। আসলেই উপরওয়ালা কাকে কখন প্রয়োজনে এনে দেয় বলা যায় না।
তারপর একটি মেয়ে এসে আমাদের যেতে বললো, হলুদ নাকি শুরু হয়ে গেছে।
লিমাঃ এই শোন!
আমিঃ হুম বল।
লিমাঃ এবার তোর বউকে আসল ডোজ দিবো।
আমিঃ কি সেটা?
লিমাঃ তুই শুধু দেখ।
তারপর সে আমার হাত ধরে স্টেজের সামনে যায়, অবন্তী আমাদের দেখে বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে আছে।
গায়ে হলুদ শুরু হলো, সবাই গায়ে হলুদ দিচ্ছে। সব শেষে আমি আর অবন্তী রয়ে গেলাম। তারপর দুজনে একসাথে স্টেজে উঠলাম, মাহিকে হলুদ লাগিয়ে দিলাম। মাহি আমাকে মিষ্টি খাইয়ে দিলো আমিও দিলাম।অবন্তীও দিলো। তারপর আমি একটা মিষ্টি অবন্তীর মুখের কাছে নিলাম।
সে কিছুক্ষণ আমার দিকে তাকিয়ে রইলো, তারপর মিষ্টিটার কিছু অংশ খেলো। তারপর সেও আমাকে একটা মিষ্টি খাইয়ে দিলো।
ভিতরে ভিতরে আমার মনটা নাচানাচি করতেছে এমন সময় লিমা একটা অদ্ভুত কাজ করে বসলো,সে স্টেজে উঠে অনেক গুলো হলুদ নিয়ে আমার পুরো মুখে মেখে দিলো, আমিও অবন্তীকে দেখিয়ে লিমাকে হলুদ লাগিয়ে দিলাম।
লিমার কাজিন গুলা এসে আমার মাথা থেকে শুরু করে হাত মুখ সব জায়গায় হলুদের পুরো অংশ ঢেলে দিলো।
অবন্তী আমাদের এই অবস্থা দেখে উঠে চলে গেলো। তারপর বাইরে এসে আমি আবারও লিমার সাথে কথা বলতেছি এমন সময় অবন্তী কোথায় থেকে এসে আমার পাঞ্জাবীর কলার চেপে ধরে টেনে রুমে নিয়ে যায়। ঠাস করে দরজাটা লাগিয়ে দেয়।
তারপরে……
চলবে……….
অনেকক্ষণ হাটার পর বাসায় গেলাম, আমি গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আসলাম।
তারপর আমি আব্বু, আম্মু আর অবন্তী খেয়ে নিলাম।
রুমে গিয়ে সোফায় বসে আছি, কিছুক্ষণ পর অবন্তী আসলো, এসে কিছুক্ষণ আনাগোনা করলো। তারপর বললো…
অবন্তীঃ জুয়েল! একটা কথা বলতাম।
আমিঃ হুম বলেন।
অবন্তীঃ এই নাও, এটা তোমার জন্য। (একটা প্যাকেট)
আমিঃ কি এটা?
অবন্তীঃ খুলে দেখো।
আমি প্যাকেট টা খুললাম। দেখলাম একটা পাঞ্জাবী। অবাক হয়ে জিজ্ঞাস করলাম….
আমিঃ এটা কখন নিলেন?
অবন্তীঃ এতো কিছু তোমার না জানলেও চলবে। হলুদের দিন তুমি এইটা গায়ে দিবে।
আমিঃ…. (হ্যা সূচক মাথা নাড়ালাম)
অবন্তীঃ মনে থাকে যেন।
আমি আবারও একটা বালিশ নিয়ে ফ্লোরে ঘুমিয়ে পড়লাম।
মাঝরাতে কারো নরম হাতের স্পর্শে আমার ঘুম ভেঙ্গে যায়, আমি জেগে গেলাম কিন্তু না জাগার ভান ধরে রাখলাম যাতে কেউ কিছু না বুঝতে পারে।
আমি আস্তে আস্তে চোখ মেলে তাকিয়ে দেখি অবন্তী আমার পাশে বসে, মাথায় হাত বুলাচ্ছে আর কান্না করতেছে।
আমি বুঝেও না বুঝার ভান ধরে শুয়ে আছি, ভালোই লাগতেছে। বিয়ের পর এই প্রথম ওর স্পর্শ পেলাম।
কিছুক্ষণ পর আমি চোখ বন্ধ করে বললাম “অনেক হইছে,এবার ঘুমিয়ে পড়ুন”।
অবন্তী আমার কথায় অবাক হয়ে যায়। তাড়াতাড়ি বসা থেকে উঠে খাটে চলে যায়। আমি ওপাশ হয়ে ঘুমিয়ে গেলাম।
সকালবেলা রেড়ি হয়ে কাজে যাচ্ছি এমন সময় আব্বু আর অবন্তী আমার সামনে পথ আটকে দাঁড়ালো।
বাবাঃ কিরে জুয়েল কই যাস?
আমিঃ কই আবার, কাজে।
বাবাঃ কালকে তোকে কি বললাম?
অবন্তীঃ আমার বান্ধবীর বিয়ে যে, সে কথা বলিনি?
আমিঃ হুম মনে আছে।
বাবাঃ তাহলে কাজে কেন যাচ্ছিস?
আমিঃ সারা দিন বাসায় থেকে কি করবো? বিয়েতে যাবো সন্ধ্যায়।
বাবাঃ সন্ধ্যায় গেলে খাবি কখন?
আমিঃ আরে ধুর আজকে বিয়ে না। আজকে গায়ে হলুদ। সো সন্ধ্যায় গেলে হবে।
অবন্তীঃ প্লিজ একটু তাড়াতাড়ি আসিও।
আমি আর কিছু না বলে বেরিয়ে গেলাম। সারা দিন কাজ শেষ করে বিকালবেলা বাসায় চলে আসলাম।
এসে দেখি অবন্তী আগে থেকে রেড়ি, আমিও ফ্রেশ হয়ে রেড়ি হলাম। অবন্তী একটা ব্যাগে কাপড়চোপড় নিয়ে নিলো।
তারপর আব্বু আম্মুকে বলে বেরিয়ে গেলাম।
একটা CNG নিলাম। অনেকক্ষণ পর বিয়ে বাড়িতে গিয়ে পৌঁছালাম। চারপাশ খুব সুন্দর করে সাজানো।
বাড়িতে গেলাম, অবন্তীকে দেখেই ওর ফ্রেন্ড জড়িয়ে ধরলো। তারপর আমার সাথে পরিচয় করিয়ে দিলো।
তারপর একটা রুম দেখিয়ে দিয়ে বললো সেখানে যেতে। আমি ওখানে গিয়ে বসলাম।
রাতের বেলা একা একা ভালো লাগছে না। এদিকওদিক হাটতেছি এমন কিছু একটার সাথে ধাক্কা খেলাম। তাকিয়ে দেখি একটা মেয়ে,,, আমার দিকে না তাকিয়েই বলতে লাগলো “” ওই মিয়া চোখে দেখেন না, দিলেন তো শাড়িটার ১২ টা বাজিয়ে””
তারপর আমার দিকে তাকালো, আমি তো ওরে দেখেই একটা টাসকি খেলাম। এটা যে লিমা, আমার ক্লাসমেট, আমাকে দেখেই বলতে লাগলো….
লিমাঃ আরে জুয়েল! তুই?
আমিঃ কিরে তুই, কি অবস্থা তোর?
লিমাঃ আমি তো ভালোই আছি তোর কি খবর?
আমিঃ আছি আলহামদুলিল্লাহ।
লিমাঃ তো বিয়েতে আসলি নাকি?
আমিঃ হুম, তুইও কি সেম?
লিমাঃ হুম, আমার মামাতো বোনের বিয়ে। মাহি (পাত্রী) তোর কি হয়?
আমিঃ অবন্তীর বান্ধবী।
লিমাঃ অবন্তী কে?
আমিঃ তোর ভাবি,,,,,
লিমাঃ কিহ তুই বিয়ে করেছিস? হারামি একটু বললিও না।
আমিঃ সরি রে হুট করেই বিয়েটা হয়ে গেছে।
লিমাঃ হুম হইছে। চল আমার কাজিন গুলার সাথে তোর পরিচয় করিয়ে দিই।
আমিঃ সবার সাথে তো পরিচিত হলাম।
লিমাঃ অবন্তীর জামাই হিসেবে হইছস,আমার বন্ধু হিসেবে তো আর হসনি। চল তো,,,,
আমিঃ আচ্ছা ঠিক আছে চল।
তারপর লিমার সাথে গেলাম,সবার সাথে আবারও পরিচিত হলাম। তারপর আমি আর লিমা কলেজের কথা গুলো মনে করে খুব হাসাহাসি করতেছি।
অন্যদিকে চোখ পড়তেই দেখি অবন্তী তাকিয়ে আছে আমাদের দিকে। আমি ওরে দেখে আরো জোরে হাসতে শুরু করলাম।
অবন্তী হঠ্যাৎ করেই এসে আমাকে হাত ধরে টেনে নিয়ে যায়।
অবন্তীঃ ওই এখানে কি করো?
আমিঃ দেখেন না কি করি? আড্ডা দিচ্ছি।
অবন্তীঃ আড্ডা দিচ্ছো মানে? ওই মেয়েটা কে?
আমিঃ ও আমার বেস্টফ্রেন্ড।
অবন্তীঃ কিহ! তোমার মেয়ে বেস্টফ্রেন্ড আছে? কই আগে তো কখনো শুনিনি।
আমিঃ আপনাকে কে সব কিছু বলবো। আমার পার্সোনাল ব্যাপার আমার কাছেই থাকবে
অবন্তীঃ আচ্ছা খেয়ে যাও।
আমিঃ আপনি খেয়ে নেন। আমি ওদের সাথে খাবো। (একটু ভাব নিলাম)
অবন্তীঃ কাদের সাথে?
আমিঃ আমার ফ্রেন্ড আর ওর কয়েকজন বান্ধবী।
অবন্তী কিছু না বলে রাগ দেখিয়ে চলে গেলো,আমি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে হাসতেছি এমন সময় পেছন থেকে কেউ একজন টোকা দেয়। তাকিয়ে দেখি লিমা,,,
লিমাঃ কিরে তোর বউ তো রেগে গেলো।
আমিঃ হা হা হা, নাহ রাগে নি
লিমাঃ জুয়েল ভাই তুই আর আমার সাথে কথা বলিস না। পরে দেখবি তোরে চিবায় খাইবো
আমিঃ শোন তোকে একটা অভিনয় করতে হবে।
লিমাঃ কি অভিনয়?
আমিঃ…….(সব শিখিয়ে দিলাম)
লিমাঃ না ভাই আমি পারবো না। তুই অন্য কাওকে বল। তোর বউ যে রাগি পরে আমার মাথা পাঠাবে।
আমিঃ প্লিজ না করিস না, তুই ছাড়াতো এতো ক্লোজ কোনো ফ্রেন্ড নাই আমার (একটু পাম দিলাম)
লিমাঃ আচ্ছা দেখি কি করা যায়।
আমিঃ দেখি না কাজটা তোকেই করতে হবে। আর তোর সাথে আরো কয়েকটা মেয়ে নিয়ে নে।
লিমাঃ আচ্ছা ঠিক আছে।
এরপর আমরা আমাদের প্ল্যান অনুসারে কাজ করতে শুরু করলাম। লিমা আমার হাত ধরে মাহির (পাত্রী) রুমে আসলো। অবন্তীও সেখানে ছিলো। আমাদের এই অবস্থায় দেখে অবন্তীর চোখ কপালে উঠে গেলো।
আমি আর লিমা কথা বলতেছি, লিমা হাসতে হাসতে বার বার আমার গায়ে পড়তেছে। এদিকে অবন্তী রেগে লাল হয়ে আছে। মনে মনে বললাম জানু তোমার মনে ভালোবাসা সৃষ্টি করতেছি।
তারপর আমি, লিমা আর ওর কয়েকটা কাজিন মিলে আড্ডা দিচ্ছি আর হাসাহাসি করতেছি এমন সময় দেখি অবন্তী দূর থেকে আমাকে ফলো করতেছে।
রাতে খাওয়ার সময় আমি আর লিমা একসাথে বসেছি। অবন্তীর আমাদের টেবিলে ছিলো। আরো কয়েকজন মেয়ে ছিলো।
লিমাঃ জুয়েল দোস্ত তোর মনে আছে কলেজে থাকতে তুই আমাকে খাইয়ে দিতি আমিও তোকে খাইয়ে দিতাম?
ওর কথা শুনে নিজেই আবুল হয়ে গেলাম, অভিনয় করতে বলেছি, কিন্তু এমন অভিনয় করবে আমি জীবনে কল্পনাও করিনি।
আমিঃ হুম মনে থাকবে না কেন, তুই কতো আমার আঙ্গুলে কামড় দিছস, দিন গুলো কি এতো সহজে ভুলতে পারি?
লিমাঃ মনে আছে আমার জন্মদিনে আমাকে খুব সুন্দর একটা গিফট দিয়েছিলি?
আমি; হুম, তোর জন্মদিন এর তারিখ কখনো আমি ভুলি না।
অবন্তী বার বার আমার দিকে তাকাচ্ছে। চোখের মধ্যে পানি টলোমলো করতেছে। আমাদের আরো কথাবার্তা দেখে সে টেবিল থেকে উঠে চলে গেলো।
তারপর সবাই খেয়ে উঠলাম, অন্য মেয়ে গুলাও জানে আমাদের প্ল্যান সম্পর্কে।
তারপর বাইরে চলে আসলাম, বিয়ে বাড়িতে চিল্লাচিল্লির জন্য কোনো কথাই ভালোভাবে শোনা যাচ্ছে না।
লিমাঃ জুয়েল তোর বউ কিন্তু তোকে অনেক ভালোবাসে।
আমিঃ কচু, তুই তাহলে কিছুই জানস না। আচ্ছা তোর কথা বল, বিয়ে করেছিস?
লিমাঃ করেছি আবার করিও নি।
আমিঃ মানে?
লিমাঃ বিয়ে ঠিক হয়ে আছে, কিন্তু উনি দেশের বাইরে। এমনিতে মোবাইলে সারাদিন কথা হয়। বিয়ের পর আমাকেও নিয়ে যাবে তো তাই সব কিছু ঠিকঠাক করতে একটু সময় লাগছে।
আমিঃ বাহ! তাহলে দেশের বাইরে চলে যাবি। দেখিস আমাদের আবার ভুলিস না।
লিমাঃ একটা মাইর দিবো, ভুলবো কেন। আচ্ছা তোর ভাই কোন দেশে থাকেরে?
ভাইয়ার কথা বলার কারনে মনটা খারাপ হয়ে গেলো,,,,
আমিঃ ভাইয়া এমন এক দেশে থাকে যেই দেশে গেলে কেউ আর ফিরে আসেনা।
লিমাঃ মানে?
আমিঃ…..(পুরো ঘটনা বললাম)
লিমাঃ সরি দোস্ত আমি জানতাম না।
আমিঃ ইটস ওকে।
লিমাঃ তারপর তুই তোর ভাবি মানে অবন্তীকে বিয়ে করে নিলি?
আমিঃ হুম।
লিমাঃ ভালো করছিস, মেয়েটা যথেষ্ট ভালো। তো এখন কি করিস?
আমিঃ তেমন কিছু না, চাকরি নাই। বেকার বেকার ঘুরতেছি।
সত্যিটা বললাম না, কারণ যতোই হোক একটু হলেও মান ইজ্জত আছে আমার।
লিমাঃ কি বলিস তাহলে ফ্যামিলি কে দেখে? কিভাবে চলে.????
আমিঃ আল্লাহ চালাইতেছে কোনো ভাবে।
লিমাঃ এই আমাদের কোম্পানির জন্য কয়েকজন লোক দরকার। তুই চাকরি করবি, আমি বাবাকে বলে দিলে তোর কোনো ইন্টার্ভিউ নিবেনা সরাসরি চাকরি দিয়ে দিবে।
আমিঃ কিন্তু…
লিমাঃ কিন্তু কি? বেতনের কথা বলতেছিস তো? আচ্ছা বেতনও বাড়িয়ে দিবে। তুই তোর সার্টিফিকেট জমা দিয়ে দিস।
আমিঃ থেংক্স দোস্ত।
লিমাঃ আরে থেংক্স এর কি আছে? চাকরি হয়ে গেলে ট্রিট দিবি।
আমিঃ আচ্ছা ঠিক আছে দিবো।
মনে মনে ভাবতেছি এই মেয়েটার সাথে কলেজে তেমন একটা কথা বলতাম না, জাস্ট হাই/হ্যালো ছাড়া। আর আজকে সেই আমাকে চাকরি দিয়ে দিলো। আসলেই উপরওয়ালা কাকে কখন প্রয়োজনে এনে দেয় বলা যায় না।
তারপর একটি মেয়ে এসে আমাদের যেতে বললো, হলুদ নাকি শুরু হয়ে গেছে।
লিমাঃ এই শোন!
আমিঃ হুম বল।
লিমাঃ এবার তোর বউকে আসল ডোজ দিবো।
আমিঃ কি সেটা?
লিমাঃ তুই শুধু দেখ।
তারপর সে আমার হাত ধরে স্টেজের সামনে যায়, অবন্তী আমাদের দেখে বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে আছে।
গায়ে হলুদ শুরু হলো, সবাই গায়ে হলুদ দিচ্ছে। সব শেষে আমি আর অবন্তী রয়ে গেলাম। তারপর দুজনে একসাথে স্টেজে উঠলাম, মাহিকে হলুদ লাগিয়ে দিলাম। মাহি আমাকে মিষ্টি খাইয়ে দিলো আমিও দিলাম।অবন্তীও দিলো। তারপর আমি একটা মিষ্টি অবন্তীর মুখের কাছে নিলাম।
সে কিছুক্ষণ আমার দিকে তাকিয়ে রইলো, তারপর মিষ্টিটার কিছু অংশ খেলো। তারপর সেও আমাকে একটা মিষ্টি খাইয়ে দিলো।
ভিতরে ভিতরে আমার মনটা নাচানাচি করতেছে এমন সময় লিমা একটা অদ্ভুত কাজ করে বসলো,সে স্টেজে উঠে অনেক গুলো হলুদ নিয়ে আমার পুরো মুখে মেখে দিলো, আমিও অবন্তীকে দেখিয়ে লিমাকে হলুদ লাগিয়ে দিলাম।
লিমার কাজিন গুলা এসে আমার মাথা থেকে শুরু করে হাত মুখ সব জায়গায় হলুদের পুরো অংশ ঢেলে দিলো।
অবন্তী আমাদের এই অবস্থা দেখে উঠে চলে গেলো। তারপর বাইরে এসে আমি আবারও লিমার সাথে কথা বলতেছি এমন সময় অবন্তী কোথায় থেকে এসে আমার পাঞ্জাবীর কলার চেপে ধরে টেনে রুমে নিয়ে যায়। ঠাস করে দরজাটা লাগিয়ে দেয়।
তারপরে……
চলবে……….