31-01-2020, 10:56 PM
আগেই বলে দিচ্ছি এখানে সেক্স নেই , আর সেক্স আসতেও সময় লাগবে বলে মনে হচ্ছে ।
জীবনে প্রথম আম্মু কে দখে ভয় পেলাম , আম্মুর এমন রূপ আমি দেখিনি আব্বুর গায়ে হাত ! নিজের চোখ কে বিশ্বাস করতে পারছি না । যার সাথে কোনদিন চোখে চোখ রেখে কথা বলতে শুনি নাই গলা উচু করে যার সাথে কোনদিন কথা বলে নাই তার গায়ে হাত তোলা । এই শক্তি আম্মু পেলো কোথায় । এটা কি এতো দিন পড়ে নিজের সত্যিকার ভালোবাসার মানুষ এর দেখা পাওয়ার ফল । আম্মু কি বুঝে গেছে আব্বু ছারাও তার যাওয়ার আরও জায়গা আছে তাই এমন সাহসিকত দেখালো ।
তাহলে কি আম্মু এতদিন চুপচাপ আব্বু কে সহ্য করে গেছে এই ভেবে যে , নিজের ভুলের এর প্রায়শ্চিত্ত করছে । না না এতো দ্রুত কোন উপসংহার এ আশা ঠিক হবে না । আম্মু কিন্তু প্রথমে ঢুকেই আব্বুর গায়ে হাত তুলে নি উল্টো রাজু কে চড় মেরেছে আব্বুর সাথে বেয়াদবি করার কারনে । এই ভয় আর দুঃখের মাঝে ও হাসি পেলো আমার চড় খেয়ে ব্যায়াম বীর রাজু কুপোকাত । আম্মু তখনি আব্বুর উপর হাত তুলেছে যখন আব্বু রাঙা হাতে ধরা পড়ার পর ও আম্মু কে নোংরা ভাষায় মিথ্যা সব দোষারোপ করে যাচ্ছিলো ।
যেগুলি ছিলো সম্পূর্ণ মিথ্যা , হ্যাঁ আব্বুর সাথে ষড়যন্ত্র হয়েছে , কিন্তু সেই ষড়যন্ত্রের মুল হোতা আমি । আম্মু তো কিছুই জানে না এই ব্যাপারে । রাজুর ষড়যন্ত্র কে চিট করতে গিয়েই আমার এই ষড়যন্ত্র ছিলো । এবং আমার এই ষড়যন্ত্রের মুল যন্ত্র ছিলো মিনা । মিনা !! ওই টুকু মেয়ে কি করে কয়েক ঘণ্টার বেবধানে আমার পুরো পরিবার ধংস করে দিলো । ওই টুকু মেয়ের ভেতররে কি ঠাসা আছে কে জানে । সদু মাত্র রেনু আনটি কে বাচাতে বলেছিলাম আমি আর রাজুর ষড়যন্ত্র কে ভেস্তে দেয়ার কথা ছিলো আমার পরিবার ধংস করার কথা আমি বলিনি ওকে ।
কিন্তু মিনা কে কি দোষ দেয়া যায় পুরো ? মিনা কিন্তু আমাকে আগেই বলেছিলো আজকে আমার আব্বুর চরিত্রের পরীক্ষা হবে । এবং সেই পরিক্ষায় আমার আব্বুর শোচনীয় পরাজয় হয়েছে । মিনা নিশ্চয়ই জোর করে নিয়ে আসেনি আব্বু কে এখানে । আর আব্বুর প্যান্ট এর চেইন খোলা এবং লিঙ্গ বেরিয়া থাকা সাফ ইশারা করে আব্বু মিনার সাথে কিছু একটা করার চেষ্টা করছিলো এবং সেই কিছু একটা নিশ্চয়ই ভালো কিছু ছিলো না । তবুও আজকের ঘটনা টা মেনে নিতে পারছিলাম না ।
কিন্তু শত হলেও নিজের বাবা তো তার এমন মাথা নিচু করে বেরিয়ে যাওয়া আমার বুকে কাঁটার মতো বিঁধছে , আর কষ্ট বেশি হচ্ছে এই ভেবে যে আব্বুর এই অবস্থার জন্য কিছুটা হলেও আমি দাই ।। এমন ও তো হতে পারে যে আম্মু আব্বুর সাথে সুখেই ছিলো । আব্বুর এমন কড়া শাসন ই আম্মু এঞ্জয় করতো । কারো অধিনে থাকাই আম্মুর পছন্দ । আমি তো আর আব্বু আম্মুর একান্ত মুহূর্ত গুলি দেখিনি ওখানে আব্বু কেমন আচরন করে আম্মুর সাথে সেটা তো আমি জানি না । নিজে নিজে এতো বড় সিধান্ত নেয়া কি ভুল হয়েছে । এমন ও হতে পারে আম্মুর প্রতি এই মাস্টার সুলভ আচরন ই আব্বুর ভালবসার বহিঃপ্রকাশ ।
ভুল মনে হয় আমি ই করলাম , নিজের মনগড়া কাহিনী বানিয়ে আব্বু কে ভিলেন এর রূপ দিলাম । তারপর আম্মু কে বন্দিনি নায়িকা মনে করে তাকে উদ্ধার এর বেবস্থা করতে লাগলাম । প্রথমে নায়ক হিসেবে আমার মনে এলো রাজু । ভাবলাম রাজুর সাথে যৌন সম্পর্ক হলে আম্মু আব্বুর মতো দানব এর হাত থেকে মুক্ত হতে পারবে । কিন্তু কত বড় ভুলে ছিলাম আমি সেটা আমার মাথায় ই আসেনি । রাজুর সাথে যৌন মিলন হয়তো হতে পারে কিন্তু দীর্ঘ জুগল জীবন পাড় কড়া যে অসম্ভব এটা আমার মাথায় ই এলো না । এই সমাজ কি একজন ভাই পো ফুপি যুগল কে মেনে নেবে ? কক্ষনো না । তা ছাড়া রাজু কি আম্মুর যোগ্য ? না যোগ্য না , আম্মুর প্রতি রাজু যে টান অনুভব করে সেটা হচ্ছে ওর প্রথম যৌবন এর দস্যুতা , দামি রত্নের প্রতি আকর্ষণ ওর থাকবেই । যখন সেই রত্ন মলিন হতে শুরু করবে তখন আর ওই রত্নের প্রতি তার কোন আকর্ষণ থাকবে না । অথবা এর চেয়ে দামি কোন রত্ন পেলে এই রত্ন ফেলে সেটার পেছনে ছুটবে । যেটা রাজু আজ রেনু আনটির সাথে করেছে । আম্মু কে পাওয়ার জন্য রেনু আনটি কে বলি দিতে প্রস্তত । এমন কি রেনু আনটি কে ব্যাবহার করতে ও পিছ পা হয় নি ।
এর পর এলো নাগমনি দত্ত , বিশাল বেক্তিত্ববাণ বয়সের কোষ্ঠী পাথরে ঘসা খাঁটি লোক । আমি দেখলাম আম্মুর সাথে এই লোক এর একটি রহস্য ময় সম্পর্ক রয়েছে । যত টুকু আমাই জানতে পেরেছি আম্মু কে অনেক ছোট বয়স থেকে জানে এই লোক । এমন কি একসময় নিজের মেয়ের মতো আদর করে পালন করেছে নিসন্তান এই বেক্তি । এমন কি সুধু মাত্র আম্মুর জন্য ই নিজের দেশ ছেড়ে এই গায়ে এসে পড়ে ছিলো । আম্মুর উপর ভালো প্রভাব আছে এই লোক এর । এই পর্যন্ত ঠিক ই আছে একজন বয়স্ক পিতৃ স্থানীয় লোক একটি বাচ্চা কে আদর করতেই পারে । কিন্তু এই লোক আর আম্মুর কথোপকথন আর শিউলি আনটি আর আম্মুর কথোপকথন থেকে এটা জানতে পেরেছি যে আম্মুর কিশোরী বয়সে এই লোকের সাথে আম্মুর একধরণের যৌন সম্পর্ক তৈরি হয়েছিলো । এবং সাথে সাথে এ ও জানতে পারি যে সেই সম্পর্ক চূড়ান্ত মিলন পর্যন্ত গড়ায় নি । এ থেকে বোঝা লোকটা আম্মুর জন্য কিছুটা হলেও দায়িত্ব বোধ এর ছিলো , তাই কচি বয়সে চূড়ান্ত কিছু করেনি নিজেকে সংবরন করেছে ।
কিন্তু কোন একটা অজানা কারনে আম্মু নিজের কিশোর বয়সী ভালবাসা কে ফেলে নিজের লজিং মাস্টার এর হাত ধরে বাড়ি ছেরেছিলো। নিশ্চয়ই আব্বুর মাঝে আম্মু প্রকিত ভালোবাসা দেখেছিলো । নাহলে কেন একজন এর সাথে সম্পর্ক থাকা সত্ত্বেও আর একজন কে জীবন সঙ্গী করবে । আম্মু কে আমি যতটুকু জানি আম্মু এমন নয় আম্মু একজন বিশ্বস্ত জীবন সঙ্গী হিসেবে আব্বুর সাথে এতো বছর সংসার করেছে , আপাত দৃষ্টি তে আব্বুর চরম বাজে ব্যাবহার সত্ত্বেও । অবশ্য সেদিন বুড়োর ঘরে সেই বিচ্ছিন চুম্বন এর ঘটনা টি বাদ দিলে । আমি অবশ্য সেটা কে বাদ ই রাখবো কারন সেটা ছিলো বুড়োর আগ্রাসন ।
তবে এই ক্ষেত্রে আম্মুর একটা কথা আমাকে ভাবাতে বাধ্য করেছিলো যে বুড়ো ই আম্মুর যথার্থ সঙ্গী , কারন সেই চুমুর ঘটনার পর আম্মু আমাকে আব্বু আর নিজের সম্পর্কের ভবিষ্যৎ নিয়ে একটা আভাস দিয়েছিলো । আম্মু বলেছিলো সে আব্বুর কাছ থেকে দূরে চলেও যেতে পারে । আর আমি তখনি ধরে নিলাম আমার কাল্পনিক দানব আব্বুর কাছ থেকে আমার বন্দিনি আম্মুর মুক্তির এক মাত্র উপায় হছে এই নাগমনি দত্ত । কিন্তু আমি একবার ও ভাবিনি যে আম্মু কি সত্যি ই চায় আব্বুর কাছ থেকে মুক্তি । বা চাইলেও কি এতো দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে চায় ? আম্মু কিন্তু ওই চুমু কাণ্ডের পর একবার সধু মাছ ধরতে যাওয়া ছাড়া বুড়োর সাথে একান্তে মিলিত হয় নি । অবশ্য অনেক সুযোগ ছিলো । আম্মু যদি বুড়োর ঘরে গিয়ে ঘণ্টা দুই সময় পাড় করে আসতো কেউ সেটা নিয়ে কোন প্রশ্ন তুলত না ।
এদিকে আমি রেনু আনটি কে পাওয়ার লোভে সব ভুলে গিয়েছিলাম । রাজু মতিন কে সম্পূর্ণ সুযোগ করে দিচ্ছিলাম আম্মুর দিকে অগ্রসর হওয়ার জন্য । তবে আব্বু কে দেখার পর আমার মনে একটু পরিবর্তন এসেছিলো । আমি চেয়েছিলাম আব্বু ও একটা সুযোগ পাক । তাই সন্দেস এর বাহানা করে বুড়োর ঘরে যাওয়ার ব্যাপারটা আব্বু কে জানিয়ে দিয়েছিলাম । যেন আব্বু আম্মুর প্রতি একটু মনোযোগী হয় । কিন্তু সব কিছু দ্রুত ঘটে গেলো রাজু একেবারে পাগল হয়ে উঠলো । তাই আমি বাধ্য হয়ে মিনার সাহায্য চাইলাম । আর মিনার ফাঁদে পা দিলো আব্বু । এখন মনে হচ্ছে আমার এইসব করার কোন দরকার ই ছিলো না । রাজু আর মতিন এর ব্যাপারটা আগেই শেষ করে দেয়ার দরকার ছিলো । কিন্তু আমার মনের কালো দিকটা আমাকে সেটা করতে দেয়নি । আম্মু কে অন্য কারো সাথে যৌন সম্ভোগ করতে দেখার চরম উত্তেজক চিন্তা আর এদিকে প্রথম নারী দেহের স্পর্শের লোভে আমি রাজু কে বরং সাহায্য করেছি নানা ভাবে ।
আমি ধীরে ধীরে আম্মুর ঘরে উকি দিলাম , আম্মু মিনা আর শিউলি আনটি সেখানে । আম্মু মিনা কে বুকে জড়িয়ে রেখেছে । আম্মুর চোখ দুটো লাল টপ টপ করে পানি ঝরছে ,
_ কাঁদিস না রুনা , সব ঠিক হয়ে যাবে । আমাদের সৌভাগ্য যে ঘটনা সীমা ছাড়িয়ে যায়নি
শিউলি আনটির সান্তনা আম্মুর উপর কোন প্রভাব পড়লো না । আম্মু তেমনি মিনা কে জড়িয়ে ধরে চোখের পানি ফেলতে লাগলেন । আমি কি ঘরের ভেতরে ধুকব কিনা ভাবতে লাগলাম । তারপর ভেবে চিনতে ঢুকে পড়লাম ঘরের ভেতর । আমাকে দেখে সবাই ঠিক হয়ে গেলো । আম্মু মিনা কে ছেড়ে চোখের পানি মুছে ফেললো । আর মিনা আম্মু কে লুকিয়ে আমাকে চোখ টিপে দিলো । আমার সাড়া শরীর জলে উঠলো যেন । যদিও আমি জানি এখানে মিনার কোন দোষ নেই তবুও কাজ তা মিনা কে দিয়েই সম্পন্ন হয়েছে তাই মনে হয়না যে আমি আর মিনা কে আগের মতো গ্রহন করতে পারবো ।
_ এতক্ষন কথায় ছিলি রে অপু ?
শিউলি আনটি এমন ভাবে প্রশ্ন করলো যে সে কিছুই জানে না । কি উত্তর দেবো ভেবে পাচ্ছিলাম না । আসলে এটা আগে থেকে ঠিক করা হয়নি । মিনা ব্যাপারটা বুঝতে পারলো । চোখ রাঙ্গিয়ে আমাকে কিছু একটা বানিয়ে বলতে বলল ইশারায় । তবে আমি উত্তর দিলাম না কোন। শিউলি আনটি ই আবার বলল
_ যাই রে রুনা
তার পর মিনা কে নিয়ে বেরিয়ে গেলো । আমি আর দাড়াতে পারলাম না । আম্মু কে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেললাম । হাউ মাউ করে কান্না । তবে আমার মুখ আম্মুর শরীরে চেপে থাকায় শব্দ বেশ হচ্ছিলো না । আম্মু অবাক হয়ে গেলো আমার কান্না দেখে আমাকে জড়িয়ে ধরে জিজ্ঞাস করতে লাগলো
_ কি হয়েছে বাবা ? তুই কাদছিস কেন? কি হয়েছে ?
আম্মুর গলা ও কান্না ভেজা । আমার কান্নার জোর আরও বেড়ে গেলো এটা বুঝতে পেরে যে আজ যা ঘটল এতে কারো কিচ্ছু আসবে যাবে না যা হওয়ার সুধু আমার আর আম্মুর হলো । বিশেষ করে আম্মুর । কিচ্ছুক্ষন পর আমার কান্না একটু থেমে এলে আম্মু দুহাতে আমার মুখটা ধরে উচু করলো । এখনো আম্মুর চোখ থেকে টপ টপ করে পানি পড়ছে । আমাকে জিজ্ঞাস করলো
_ তুই সুনেছিস ?
আমি মাথা নেড়ে বললাম হু । মনে মনে বললাম সুধু দেখিনি এই সব কিছুর পেছনে আমার ই হাত । আম্মু আমাকে জড়িয়ে ধরল পিঠে হাত বুলাতে লাগলো ।
_ কাঁদিস না সোনা আমার , কাঁদিস না কিচ্ছু হবে না , আমার কলিজার টুকরা ছেলে , তুই থাকলেই হবে আমার অন্য কিচ্ছু লাগবে না
আমার কান্না আরও বেড়ে গেলো , আম্মু যদি জানতে পারে যার উপর আম্মুর এতো ভরসা সেই আজ তার সংসার এর বারোটা বাজিয়ে দিয়েছে । তাহলে আম্মুর মনের অবস্থা কি হবে ?
_ তুই কি সব সুনেছিস না কি দেখেছিস ?
আমি আর মিথ্যা বললাম না বলে দিলাম দেখেছি । আম্মু শুনে একটা দীর্ঘ নিশ্বাস ফেললো । আমি কাঁদতে কাঁদতে জিজ্ঞাস করলাম
_ আমারা কি আর আব্বুর কাছে যাবো না ?
যদিও জানি আমার এই প্রশ্ন হাস্যকর তবুও কেন জানি আমার ভেতর তা হাহাকার করছে । কেন জানি আমার খুব ইচ্ছা হচ্ছে আমারা আবার এক হয়ে যাই । আমি যদি পারতাম সময় তা আরও এক সপ্তাহ আগে নিয়ে যেতাম ।
_ তুই কি চাস আব্বুর কাছে যেতে ?
আমি মাথা ঝাকালাম কারন আমি জানি আজকের ঘটনার মুল অপরাধী আমি । যদিও আব্বু পরিক্ষায় ফেল হয়েছে তবুও এই পরীক্ষা তো নিয়েছি আমি । যদি এই পরীক্ষা না আসতো আব্বু ফেল ও করতো না । আমাদের পরিবার ও বিভক্ত হতো না ।
_ আমারা যাবো বিয়ে , শেষ হলেই আমারা ফিরে যাবো । তুই কাঁদিস না
কথাটা বলার সাথে সাথে আম্মুর চোখ থেকে এক ফোটা পানি এসে আমার গালে পড়লো । আম্মুর ঠোঁট দুটো কাঁপছে ।
_ সব কিছু জানার পর ও তুমি যাবে
_ হ্যাঁ যাবো, তোর জন্য যাবো , আমি এতো বছর তো তোর জন্য ই ছিলাম ।
আম্মুর এই বাক্যটি শুনে আমি গা ঝাড়া দিয়ে উঠলাম , আমি আজ আম্মুর সাথে কথা বলতে চাই , এই বাক্য দিয়ে আম্মু কি বোঝাতে চায় ?
_ আমার জন্য ছিলে কেন আম্মু ?
_ তোর জন্য ই তো আমার বেঁচে থাকা রে বোকা ছেলে , তোর ভালর জন্য আমি সব কিছু করতে রাজি । তোর আব্বু যত কিছুই করুক আমি তোকে কোনদিন পিতা হীন করবো না ।
গলার ভেতরে কান্না দলা পাকিয়ে এলো । তবে আমি আজ জানতে চাই কতটুকু ক্ষতি আমি করেছি আম্মুর ।
_ না আম্মু তুমি না যেতে চাইলে আমি যাবো না । তুমি যা চাইবে তাই হবে ।
আম্মু আমার কপালে একটা চুমু খেলো । আমার সোনা ছেলে বলে জড়িয়ে ধরলো তারপর খুব ধীরে ধীরে আমাকে বোঝাতে লাগলো ।
_ যত খারাপ ই হোক তোর আব্বু হয় সে তুই কখনো তার সাথে খারপ ব্যাবহার করবি না , অন্য কারো সাথে যেমন ই করুক তোকে কিন্তু তোর আব্বু অনেক ভালোবাসে । আর আজকে যা করেছে তোর আব্বু সেটা আমার সাথে করেছে এর জন্য তুই কেন তাকে দূরে ঠেলে দিবি।
_ না আম্মু তোমার সাথে আব্বু এমন কেন করলো , আমি শুনেছি তোমারা একে অপর কে ভালোবেশে বিয়ে করেছো তাহলে আব্বু তোমার সাথে কেন এমন খারাপ ব্যাবহার করে ।
আজ জিজ্ঞাস করেই ফেললাম সব লজ্জা ফেলে , আজ আমাকে সব জানতে হবে । আম্মু কান্নার মাঝে ও একটু হেঁসে ফেললো , তবে এই হাসি যে দুঃখের হাসি সেটা বোঝার জন্য কষ্ট করতে হবে না ।
_ তুই ছোট মানুষ তোর এতো কিছু জানতে হবে না ?
_ না আম্মু তুমি বলো , আমি এখন ছোট না আমি বড় হয়েছি ।
আমি দৃঢ় গলায় বললাম । আম্মু আমার কথা শুনে হেঁসে ফেললো ।
_ বাবা মায়ের প্রেম এর কথা শুনতে নেই বাবা ।
_ না আম্মু শুনবো আমি আব্বু কেন তোমার সাথে এমন করে , আর তুমি কেন সুধু আমার জন্য ই আব্বুর সাথে থাকো ?
আম্মু বড় একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো । তবে কিছু বলল না মুখটা ফিরিয়ে নিলো আমার কাছ থেকে । আমি বুঝতে পারলাম উপরে থেকে যেমন দেখা যায় আব্বু আর আম্মুর সম্পর্ক আরও খারাপ । আমি আম্মুর মুখ জোর করে আমার দিকে ফেরালাম । দু চোখ দিয়ে পানি ঝরছে আম্মুর । ঠোঁট দুটো কাঁপছে ।
_ আম্মু এখন আমি বড় হয়েছি , এতদিন তুমি আমাকে সব কিছু থেকে রক্ষা করে এসেছ এখন আমি তোমাকে সব কিছু থেকে রক্ষা করবো । আমি এখন তোমার বন্ধুর মতো । এখন থেকে আমি সুধু তোমার ছেলে ই না বন্ধু । তুমি আমাকে বলো কেন ভালোবেসে বিয়ে করার পর ও তোমাকে নিজের ইচ্ছার বিরুদ্ধে ওখানে থাকতে হচ্ছে ।
আম্মু হাসল একটু , কি সুন্দর দেখালও আম্মু কে । আমার বুকের ভেতর টা দুমড়ে গেলো । এই ফুলের মতো মুখে কান্নার এর কষ্টের ছাপ দেখে ।
_ ঠিক আছে শোন তাহলে , আমি তখন অনেক ছোট ছিলাম , এই তোর বয়সী হবো । কিন্তু আমি ভুল করেছিলাম , ওই বয়সে একজন এর প্রেমে পড়ে গিয়েছিলাম । এমন অবস্থা ছিলো যে সে যা বলতো তাই করতাম । উঠতে বলে উঠতাম বসতে বললে বসতাম । পুরো অন্ধ ছিলাম তার ব্যাপারে ।
বর্ণনা করার সময় আম্মুর মুখ উজ্জল হয়ে উঠলো , দেখে মনে হচ্ছে আম্মু কল্পনায় সেই সময় ফিরে গেছে । আমার কাছে মনে হলো আম্মু বুড়োর কথা বলছে । তাই আমি আম্মু কে কথার মাঝে বাধা দিলাম । জিজ্ঞাস করলাম
_ ওই লোক ই কি আব্বু ?
_ কথার মাঝে কথা বলবি না , জানতে যখন চাস সব বলছি শোন । না ওই লোক তোর আব্বু নয় , তবে ওই লোকের নাম আমি তোকে বলবো না । তবে এই বাড়িতে তোর আব্বু কে সেই নিয়ে এলো । আমার লজিং শিক্ষক হিসেবে । খুব বিরক্ত হলাম আমি তোর আব্বুর উপর । কারন তোর আব্বু কে দেখেলি আমি খুব বিরক্ত হতাম । কিন্তু তোর আব্বু প্রথম থেকেই আমার পেছনে লাগলো । এমন কি একপর্যায়ে সেই লোকের কোথাও জেনে ফেললো । কিন্তু তাতে সে থামল না আমাকে নানা ভাবে বুঝাতে লাগলো যে আমি যা করছি সেটা আমার জন্য ভালো হবে না । কিন্তু সেই লোক কে ভয় পেত বলে আমার বাড়িতে কাউকে বলে নি তোর আব্বু । এমন সময় আমি সেই লোক সম্পর্কে এমন কিছু জানতে পারলাম যে রাগে দুঃখে আমি তোর আব্বু কে নিয়ে পালিয়ে গেলাম ।
_ কি জানতে পেরেছিলে আম্মু , সেই লোক কি তোমার সাথে চিট করেছিলো আব্বুর মতো ।
_ না না সে তখন চিট করেনি , তবে তার অতিতের একটা কথা আমি জানতে পেরেছিলাম , সেটা আমি মেনে নিতে পারিনি । আর তখন সেই লোক এখানে ছিলো ও না । তাই তার অনুপুস্থিতিতে আমি ভুল করে বসলাম , তোর বাবা কে নিয়ে পালিয়ে গেলাম । বিয়ে করলাম আমারা । তোর বাবা আমাকে অনেক বলতে লাগলো বাড়িতে ফেরার কথা । কিন্তু আমার এতো অভিমান হয়েছিলো যে আমি আর ফিরে আসতে চাই নি ।
_ কেন আম্মু ? এই বাড়ির মানুষ কি করেছিলো তোমাকে । তুমি নানা নানুর সাথে রাগ করেছিলে কেন ।
_ কেন জানি সবার উপর রাগ হয়েছিলো আমার আমি জানি না তবে প্রচণ্ড অভিমান হয়েছিলো আমার । আসলে কারো কোন দোষ ছিলো না । তবুও আমি রাগ করে ছিলাম । ওদিকে তোর দাদা বাড়ি খুব গরীব সুধু তোর আব্বুর টাকায় চলে ওরা । ভীষণ অভাব যাচ্ছিলো । কিন্তু আমার অভিমান এতো গভীর ছিলো যে আমি অভাব সহ্য করতে রাজি ছিলাম , কিন্তু ফিরে আসতে রাজি ছিলাম না । তখন তোর দাদা বাড়ির লোকজন আর তোর আব্বুর আসল চেহারা খুলে গেলো । অত্যাচার করা শুরু করলো আমার উপর । পুরো ভেঙ্গে পড়লাম আমি, ভুল যে করেছি সেটা বুঝতে আর বাকি রইলো না । কিন্তু ততো দিনে তুই আমার পেতে চলে এসেছিস । আমার আর উপায় ছিল না যে ওখান থেকে চলে আসবো ।
_ কেন আম্মু তোমার সেই লোক কি তোমাকে ফেলে দিত ?
_ মনে হয় না , তবুও কি করে আসি , আরও বড় হ তখন বুঝবি একজন এর সন্তান পেটে চলে এলে সেই মেয়েকে আর কেউ আপন করতে চায় না । আর অন্য কেউ কি তোকে আপন ছেলের মতো দেখবে , যতই সে ভালো মানুষ হোক । তোকে পিতার আদর থেকে দূরে রাখতে চাইনি । অত্যাচার সহ্য করেও সেখানে থেকে গেলাম । এদিকে তোর নানা নানু অনেক চেষ্টা করেছে আমাকে আনতে । কিন্তু আমি এলাম না । এর মাঝে তুই হলি , তোকে পেয়ে আমি সব ভুলে গেলাম ।
এটুকু বলে আম্মু আমার কপালে একটা চুমু খেলো । আর এদিকে আমিও গ্লানি থেকে একটু একটু মুক্তি পাচ্ছি । আব্বুর আর দাদা বাড়ির মানুষ দের অত্যাচার এর বর্ণনা শুনে আমার মাঝে ঘৃণা দানা বাধতে শুরু করেছে । এখন মনে হচ্ছে যা করেছি বেশ করেছি ।
_ ভেবে নিলাম এই তো আমার সাত রাজার ধন চলে এসেছে এখন আর আমার কোন দুঃখ নেই । সব কিছু আমি সহ্য করতে পারবো । কিন্তু এর পর তোর দাদি এমন এক কাজ করলো যা আমি সহ্য করতে পারলাম না । চিঠি লিখলাম বাবা মা কে ।
_ কি করেছিলো আমার দাদি আম্মু ?
_ নাহ থাক ওইসব তোর শুনতে হবে না
আমি বুঝতে পারলাম , আম্মু বলতে চায় সব কিছু , আজ বলার লোক পেয়ে আম্মু খুশি ই হয়েছে । কিন্তু আম্মুর ভালো মানুষী আম্মু কে সব বলতে বাধা দিচ্ছে । এতক্ষনে আমার কাছে পরিষ্কার হয়ে গেছে যে আমি যা করেছি একদম ঠিক করেছি । আজ থেকে আম্মুর ক্ষতি হবে এমন কিছু আম্মুর কাছে ঘেষতে দেবো না ।
_ বলো আম্মু কিচ্ছু হবে না । আজকে সব বল অন্য দিন আর হয়তো বলতে পারবে না ।
আম্মু একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে আবার বলতে লাগলো ।
_ তোর দাদি এমন কাজ করলো যা আমার সমস্ত দুনিয়া কাপিয়ে দিলো , আমি সব সহ্য করতে পারতাম খেয়ে না খেয়ে কত থেকেছি , ছেঁড়া কাপড় পড়ে থেকেছি , যে আমি নিজের বাড়িতে একটা কাজ করিনি সেই আমি দাসী বাঁদির মতো খেটেছি । কিন্তু কিচ্ছু বলিনি কোনদিন কিন্তু সেদিন যা হলো তা মেনে নিতে পারলাম না রুখে দারিয়েছিলাম । এমন কি দা নিয়ে সবাই কে মারতে পর্যন্ত গিয়েছিলাম । কিন্তু একা সবার সাথে পারনি , সবাই মিলে সেদিন আমাকে বেদম মেরেছে । তোর বয়স তখন মাত্র ছয় মাস । এমনিতে আমার বয়স কম ছিল , তার উপর প্রেগন্যান্ট থাকার সময় যত্ন হয়নি তাই শরীর দুর্বল ছিলো । বার বার অজ্ঞান হয়ে গেছি কিন্তু তোকে ছারিনি ।
বলতে বলতে আম্মুর চোখ দুটো ছলছল করে উঠলো । আমার চোখেও পানি চলে এসেছে । এবার আর নিজের আব্বুর জন্য নয় । আম্মুর দুক্ষ দুর্দশার জন্য । এখন যদি আব্বু আমার সামনে থাকতো তবে আমি আব্বু কে নিজেই বের করে দিতাম ।
_ তোর দাদি একজন লোক নিয়ে এসেছিলো তোকে বিক্রি করে দেবে বলে । দু লক্ষ্য টাকা দাম ও ঠিক হয়ে গিয়েছিলো । সেই টাকায় তোর আব্বু ব্যেবসা করবে । ওদের কথা ছিলো ছেলে গেলে ছেলে আরও হবে । সেদিন আমি রাজি হয়েছিলাম , আমার আব্বা আম্মার কাছ থেকে টাকা এনে দিতে । আর তোর আব্বুর সাথে ও আমার সব সম্পর্ক ছিন্ন হয় সেদিন এর পর । সুধু তোর জন্য ই থেকে গিয়েছিলাম ।
_ তবে যে একটু আগে বললে আব্বু আমাকে ভালোবাসে ?
আমি রাগান্বিত ভাবে প্রশ্ন করলাম । কিন্তু আম্মু চপ করে রইলো , তার চোখ দিয়ে আবার পানি পড়ছে ।
_ আম্মু বলো , তুমি যে বললে আব্বু আমাকে ভালো বাসে ?
_ অভাবে মানুষ কত কিছু করে , আর সেদিন এর পর তোর আব্বু আর এমন করেনি ।
আমি দাতে দাঁত পিষতে লাগলাম , মনে মনে নিজেকে ঘৃণা হতে লাগলো , আমি যে ওই লোকের সন্তান সেটা ভেবে নিজেকে কলঙ্কিত মনে হতে লাগলো । আমি বুঝতে পারলাম , যে আব্বু আম্মুর সম্পর্ক অনেক আগেই শেষ হয়ে গেছে এতদিন আম্মু সুধু আমার জন্য ই রয়ে গেছে। যদিও আমি কোন কারন দেখি না , কারন যে পিতা নিজের সন্তান বিক্রি হওয়ার পক্ষে থাকে সে পিতার মতো পিতা না থাকাই ভালো । হঠাত আমার মনে একটা প্রশ্ন এলো ।
_ আচ্ছা আম্মু আব্বু কি আজকেই প্রথম এমন করলো না আগেও করেছে ? একদম মিথ্যা বলবে না আম্মু বলে দিলাম ।
আমি অনেকটাই শিওর আব্বু এর আগেও এমন করেছে ? আমি আম্মুর দিকে চোখ পাকিয়ে তাকিয়ে আছি । যেন আম্মু মিথ্যা না বলে ।
_ এইসব জানা কি খুব দরকার , আমার লজ্জা হয়ে বলতে
আম্মু মিনতির স্বরে বলল । কিন্তু আমি কান দিলাম না যদিও আমি এখন শিওর তবুও আমি জানতে চাই ।
_ তুই নিশ্চয়ই দেখেছিস আমার বাসায় কাজের মেয়ে রাখি না ? এর চেয়ে বেশি আমি বলতে পারবো না
আম্মু লজ্জা পেয়েছে বোঝা গেলো । তবে এর চেয়ে বেশি বলার দরকার ও পড়লো না । আমি বুঝে গেলাম । আমি আম্মু কে জড়িয়ে ধরলাম । আর বললাম
_ তুমি কখনো আর ফিরে যাবে না ওই লোকের কাছে । আমার জন্য তো নয় ই । আর তুমি যদি যাও যাবে আমি যাবো না ।
আম্মু আমাকে চুমু খেলো একটা । তারপর বলল
_ কি আর হবে না গিয়ে সমাজ পুরুষ দের দোষ দেখে না । পুরুষ হচ্ছে হীরের আংটি বাঁকা হলেও লাখ টাকা , সমাজে জানা জানি হলে সবাই আমাকেই দোষ দেবে । বলবে পুরুষ মানুষ এর ওই একটু দোষ থাকেই ।
আমি আম্মু কে আরও জোরে জড়িয়ে ধরলাম আর বললাম
_ না তুমি যাবে না ।
মনে মনেপ্রতিজ্ঞা করলাম , আম্মু কে নিয়ে আমি আর কোন নোংরা চিনাতা করবো না । আম্মু কষ্ট পাবে এমন কোন কাজ ই করবো না । সারাজীবন আম্মু কে আগলে রাখবো । রাজু মতিন কে আম্মুর ধারে কাছেও ঘেষতে দেবো না ।
_ তাহলে কোথায় থাকবো ? বাবার বাড়ি , মেয়েরা বাবার বাড়ি থাকা কি ভালো ? পাগল ছেলে
_ সে আমি জানি না প্রয়োজনে আমি কাজ করবো তুমি আমার কাছে থাকবে ।
একটু আবেগ আপ্লূত হয়ে বলে ফেললাম , যদিও সেটা সম্ভব নয় ।
_ পাগল ছেলে তুই কেন কাজ করবি আমি থাকতে , তুই পড়াশুনা করে অনেক বড় হবি , আর পড়াশুনা বেশি না হলে না হবে কিন্তু ভালোমানুষ হবি ।
আমি মনে মনে প্রতিজ্ঞা করলাম আমি ভালো মানুষ হবো । দৃঢ় প্রতিজ্ঞা ।
চলবে
জীবনে প্রথম আম্মু কে দখে ভয় পেলাম , আম্মুর এমন রূপ আমি দেখিনি আব্বুর গায়ে হাত ! নিজের চোখ কে বিশ্বাস করতে পারছি না । যার সাথে কোনদিন চোখে চোখ রেখে কথা বলতে শুনি নাই গলা উচু করে যার সাথে কোনদিন কথা বলে নাই তার গায়ে হাত তোলা । এই শক্তি আম্মু পেলো কোথায় । এটা কি এতো দিন পড়ে নিজের সত্যিকার ভালোবাসার মানুষ এর দেখা পাওয়ার ফল । আম্মু কি বুঝে গেছে আব্বু ছারাও তার যাওয়ার আরও জায়গা আছে তাই এমন সাহসিকত দেখালো ।
তাহলে কি আম্মু এতদিন চুপচাপ আব্বু কে সহ্য করে গেছে এই ভেবে যে , নিজের ভুলের এর প্রায়শ্চিত্ত করছে । না না এতো দ্রুত কোন উপসংহার এ আশা ঠিক হবে না । আম্মু কিন্তু প্রথমে ঢুকেই আব্বুর গায়ে হাত তুলে নি উল্টো রাজু কে চড় মেরেছে আব্বুর সাথে বেয়াদবি করার কারনে । এই ভয় আর দুঃখের মাঝে ও হাসি পেলো আমার চড় খেয়ে ব্যায়াম বীর রাজু কুপোকাত । আম্মু তখনি আব্বুর উপর হাত তুলেছে যখন আব্বু রাঙা হাতে ধরা পড়ার পর ও আম্মু কে নোংরা ভাষায় মিথ্যা সব দোষারোপ করে যাচ্ছিলো ।
যেগুলি ছিলো সম্পূর্ণ মিথ্যা , হ্যাঁ আব্বুর সাথে ষড়যন্ত্র হয়েছে , কিন্তু সেই ষড়যন্ত্রের মুল হোতা আমি । আম্মু তো কিছুই জানে না এই ব্যাপারে । রাজুর ষড়যন্ত্র কে চিট করতে গিয়েই আমার এই ষড়যন্ত্র ছিলো । এবং আমার এই ষড়যন্ত্রের মুল যন্ত্র ছিলো মিনা । মিনা !! ওই টুকু মেয়ে কি করে কয়েক ঘণ্টার বেবধানে আমার পুরো পরিবার ধংস করে দিলো । ওই টুকু মেয়ের ভেতররে কি ঠাসা আছে কে জানে । সদু মাত্র রেনু আনটি কে বাচাতে বলেছিলাম আমি আর রাজুর ষড়যন্ত্র কে ভেস্তে দেয়ার কথা ছিলো আমার পরিবার ধংস করার কথা আমি বলিনি ওকে ।
কিন্তু মিনা কে কি দোষ দেয়া যায় পুরো ? মিনা কিন্তু আমাকে আগেই বলেছিলো আজকে আমার আব্বুর চরিত্রের পরীক্ষা হবে । এবং সেই পরিক্ষায় আমার আব্বুর শোচনীয় পরাজয় হয়েছে । মিনা নিশ্চয়ই জোর করে নিয়ে আসেনি আব্বু কে এখানে । আর আব্বুর প্যান্ট এর চেইন খোলা এবং লিঙ্গ বেরিয়া থাকা সাফ ইশারা করে আব্বু মিনার সাথে কিছু একটা করার চেষ্টা করছিলো এবং সেই কিছু একটা নিশ্চয়ই ভালো কিছু ছিলো না । তবুও আজকের ঘটনা টা মেনে নিতে পারছিলাম না ।
কিন্তু শত হলেও নিজের বাবা তো তার এমন মাথা নিচু করে বেরিয়ে যাওয়া আমার বুকে কাঁটার মতো বিঁধছে , আর কষ্ট বেশি হচ্ছে এই ভেবে যে আব্বুর এই অবস্থার জন্য কিছুটা হলেও আমি দাই ।। এমন ও তো হতে পারে যে আম্মু আব্বুর সাথে সুখেই ছিলো । আব্বুর এমন কড়া শাসন ই আম্মু এঞ্জয় করতো । কারো অধিনে থাকাই আম্মুর পছন্দ । আমি তো আর আব্বু আম্মুর একান্ত মুহূর্ত গুলি দেখিনি ওখানে আব্বু কেমন আচরন করে আম্মুর সাথে সেটা তো আমি জানি না । নিজে নিজে এতো বড় সিধান্ত নেয়া কি ভুল হয়েছে । এমন ও হতে পারে আম্মুর প্রতি এই মাস্টার সুলভ আচরন ই আব্বুর ভালবসার বহিঃপ্রকাশ ।
ভুল মনে হয় আমি ই করলাম , নিজের মনগড়া কাহিনী বানিয়ে আব্বু কে ভিলেন এর রূপ দিলাম । তারপর আম্মু কে বন্দিনি নায়িকা মনে করে তাকে উদ্ধার এর বেবস্থা করতে লাগলাম । প্রথমে নায়ক হিসেবে আমার মনে এলো রাজু । ভাবলাম রাজুর সাথে যৌন সম্পর্ক হলে আম্মু আব্বুর মতো দানব এর হাত থেকে মুক্ত হতে পারবে । কিন্তু কত বড় ভুলে ছিলাম আমি সেটা আমার মাথায় ই আসেনি । রাজুর সাথে যৌন মিলন হয়তো হতে পারে কিন্তু দীর্ঘ জুগল জীবন পাড় কড়া যে অসম্ভব এটা আমার মাথায় ই এলো না । এই সমাজ কি একজন ভাই পো ফুপি যুগল কে মেনে নেবে ? কক্ষনো না । তা ছাড়া রাজু কি আম্মুর যোগ্য ? না যোগ্য না , আম্মুর প্রতি রাজু যে টান অনুভব করে সেটা হচ্ছে ওর প্রথম যৌবন এর দস্যুতা , দামি রত্নের প্রতি আকর্ষণ ওর থাকবেই । যখন সেই রত্ন মলিন হতে শুরু করবে তখন আর ওই রত্নের প্রতি তার কোন আকর্ষণ থাকবে না । অথবা এর চেয়ে দামি কোন রত্ন পেলে এই রত্ন ফেলে সেটার পেছনে ছুটবে । যেটা রাজু আজ রেনু আনটির সাথে করেছে । আম্মু কে পাওয়ার জন্য রেনু আনটি কে বলি দিতে প্রস্তত । এমন কি রেনু আনটি কে ব্যাবহার করতে ও পিছ পা হয় নি ।
এর পর এলো নাগমনি দত্ত , বিশাল বেক্তিত্ববাণ বয়সের কোষ্ঠী পাথরে ঘসা খাঁটি লোক । আমি দেখলাম আম্মুর সাথে এই লোক এর একটি রহস্য ময় সম্পর্ক রয়েছে । যত টুকু আমাই জানতে পেরেছি আম্মু কে অনেক ছোট বয়স থেকে জানে এই লোক । এমন কি একসময় নিজের মেয়ের মতো আদর করে পালন করেছে নিসন্তান এই বেক্তি । এমন কি সুধু মাত্র আম্মুর জন্য ই নিজের দেশ ছেড়ে এই গায়ে এসে পড়ে ছিলো । আম্মুর উপর ভালো প্রভাব আছে এই লোক এর । এই পর্যন্ত ঠিক ই আছে একজন বয়স্ক পিতৃ স্থানীয় লোক একটি বাচ্চা কে আদর করতেই পারে । কিন্তু এই লোক আর আম্মুর কথোপকথন আর শিউলি আনটি আর আম্মুর কথোপকথন থেকে এটা জানতে পেরেছি যে আম্মুর কিশোরী বয়সে এই লোকের সাথে আম্মুর একধরণের যৌন সম্পর্ক তৈরি হয়েছিলো । এবং সাথে সাথে এ ও জানতে পারি যে সেই সম্পর্ক চূড়ান্ত মিলন পর্যন্ত গড়ায় নি । এ থেকে বোঝা লোকটা আম্মুর জন্য কিছুটা হলেও দায়িত্ব বোধ এর ছিলো , তাই কচি বয়সে চূড়ান্ত কিছু করেনি নিজেকে সংবরন করেছে ।
কিন্তু কোন একটা অজানা কারনে আম্মু নিজের কিশোর বয়সী ভালবাসা কে ফেলে নিজের লজিং মাস্টার এর হাত ধরে বাড়ি ছেরেছিলো। নিশ্চয়ই আব্বুর মাঝে আম্মু প্রকিত ভালোবাসা দেখেছিলো । নাহলে কেন একজন এর সাথে সম্পর্ক থাকা সত্ত্বেও আর একজন কে জীবন সঙ্গী করবে । আম্মু কে আমি যতটুকু জানি আম্মু এমন নয় আম্মু একজন বিশ্বস্ত জীবন সঙ্গী হিসেবে আব্বুর সাথে এতো বছর সংসার করেছে , আপাত দৃষ্টি তে আব্বুর চরম বাজে ব্যাবহার সত্ত্বেও । অবশ্য সেদিন বুড়োর ঘরে সেই বিচ্ছিন চুম্বন এর ঘটনা টি বাদ দিলে । আমি অবশ্য সেটা কে বাদ ই রাখবো কারন সেটা ছিলো বুড়োর আগ্রাসন ।
তবে এই ক্ষেত্রে আম্মুর একটা কথা আমাকে ভাবাতে বাধ্য করেছিলো যে বুড়ো ই আম্মুর যথার্থ সঙ্গী , কারন সেই চুমুর ঘটনার পর আম্মু আমাকে আব্বু আর নিজের সম্পর্কের ভবিষ্যৎ নিয়ে একটা আভাস দিয়েছিলো । আম্মু বলেছিলো সে আব্বুর কাছ থেকে দূরে চলেও যেতে পারে । আর আমি তখনি ধরে নিলাম আমার কাল্পনিক দানব আব্বুর কাছ থেকে আমার বন্দিনি আম্মুর মুক্তির এক মাত্র উপায় হছে এই নাগমনি দত্ত । কিন্তু আমি একবার ও ভাবিনি যে আম্মু কি সত্যি ই চায় আব্বুর কাছ থেকে মুক্তি । বা চাইলেও কি এতো দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে চায় ? আম্মু কিন্তু ওই চুমু কাণ্ডের পর একবার সধু মাছ ধরতে যাওয়া ছাড়া বুড়োর সাথে একান্তে মিলিত হয় নি । অবশ্য অনেক সুযোগ ছিলো । আম্মু যদি বুড়োর ঘরে গিয়ে ঘণ্টা দুই সময় পাড় করে আসতো কেউ সেটা নিয়ে কোন প্রশ্ন তুলত না ।
এদিকে আমি রেনু আনটি কে পাওয়ার লোভে সব ভুলে গিয়েছিলাম । রাজু মতিন কে সম্পূর্ণ সুযোগ করে দিচ্ছিলাম আম্মুর দিকে অগ্রসর হওয়ার জন্য । তবে আব্বু কে দেখার পর আমার মনে একটু পরিবর্তন এসেছিলো । আমি চেয়েছিলাম আব্বু ও একটা সুযোগ পাক । তাই সন্দেস এর বাহানা করে বুড়োর ঘরে যাওয়ার ব্যাপারটা আব্বু কে জানিয়ে দিয়েছিলাম । যেন আব্বু আম্মুর প্রতি একটু মনোযোগী হয় । কিন্তু সব কিছু দ্রুত ঘটে গেলো রাজু একেবারে পাগল হয়ে উঠলো । তাই আমি বাধ্য হয়ে মিনার সাহায্য চাইলাম । আর মিনার ফাঁদে পা দিলো আব্বু । এখন মনে হচ্ছে আমার এইসব করার কোন দরকার ই ছিলো না । রাজু আর মতিন এর ব্যাপারটা আগেই শেষ করে দেয়ার দরকার ছিলো । কিন্তু আমার মনের কালো দিকটা আমাকে সেটা করতে দেয়নি । আম্মু কে অন্য কারো সাথে যৌন সম্ভোগ করতে দেখার চরম উত্তেজক চিন্তা আর এদিকে প্রথম নারী দেহের স্পর্শের লোভে আমি রাজু কে বরং সাহায্য করেছি নানা ভাবে ।
আমি ধীরে ধীরে আম্মুর ঘরে উকি দিলাম , আম্মু মিনা আর শিউলি আনটি সেখানে । আম্মু মিনা কে বুকে জড়িয়ে রেখেছে । আম্মুর চোখ দুটো লাল টপ টপ করে পানি ঝরছে ,
_ কাঁদিস না রুনা , সব ঠিক হয়ে যাবে । আমাদের সৌভাগ্য যে ঘটনা সীমা ছাড়িয়ে যায়নি
শিউলি আনটির সান্তনা আম্মুর উপর কোন প্রভাব পড়লো না । আম্মু তেমনি মিনা কে জড়িয়ে ধরে চোখের পানি ফেলতে লাগলেন । আমি কি ঘরের ভেতরে ধুকব কিনা ভাবতে লাগলাম । তারপর ভেবে চিনতে ঢুকে পড়লাম ঘরের ভেতর । আমাকে দেখে সবাই ঠিক হয়ে গেলো । আম্মু মিনা কে ছেড়ে চোখের পানি মুছে ফেললো । আর মিনা আম্মু কে লুকিয়ে আমাকে চোখ টিপে দিলো । আমার সাড়া শরীর জলে উঠলো যেন । যদিও আমি জানি এখানে মিনার কোন দোষ নেই তবুও কাজ তা মিনা কে দিয়েই সম্পন্ন হয়েছে তাই মনে হয়না যে আমি আর মিনা কে আগের মতো গ্রহন করতে পারবো ।
_ এতক্ষন কথায় ছিলি রে অপু ?
শিউলি আনটি এমন ভাবে প্রশ্ন করলো যে সে কিছুই জানে না । কি উত্তর দেবো ভেবে পাচ্ছিলাম না । আসলে এটা আগে থেকে ঠিক করা হয়নি । মিনা ব্যাপারটা বুঝতে পারলো । চোখ রাঙ্গিয়ে আমাকে কিছু একটা বানিয়ে বলতে বলল ইশারায় । তবে আমি উত্তর দিলাম না কোন। শিউলি আনটি ই আবার বলল
_ যাই রে রুনা
তার পর মিনা কে নিয়ে বেরিয়ে গেলো । আমি আর দাড়াতে পারলাম না । আম্মু কে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেললাম । হাউ মাউ করে কান্না । তবে আমার মুখ আম্মুর শরীরে চেপে থাকায় শব্দ বেশ হচ্ছিলো না । আম্মু অবাক হয়ে গেলো আমার কান্না দেখে আমাকে জড়িয়ে ধরে জিজ্ঞাস করতে লাগলো
_ কি হয়েছে বাবা ? তুই কাদছিস কেন? কি হয়েছে ?
আম্মুর গলা ও কান্না ভেজা । আমার কান্নার জোর আরও বেড়ে গেলো এটা বুঝতে পেরে যে আজ যা ঘটল এতে কারো কিচ্ছু আসবে যাবে না যা হওয়ার সুধু আমার আর আম্মুর হলো । বিশেষ করে আম্মুর । কিচ্ছুক্ষন পর আমার কান্না একটু থেমে এলে আম্মু দুহাতে আমার মুখটা ধরে উচু করলো । এখনো আম্মুর চোখ থেকে টপ টপ করে পানি পড়ছে । আমাকে জিজ্ঞাস করলো
_ তুই সুনেছিস ?
আমি মাথা নেড়ে বললাম হু । মনে মনে বললাম সুধু দেখিনি এই সব কিছুর পেছনে আমার ই হাত । আম্মু আমাকে জড়িয়ে ধরল পিঠে হাত বুলাতে লাগলো ।
_ কাঁদিস না সোনা আমার , কাঁদিস না কিচ্ছু হবে না , আমার কলিজার টুকরা ছেলে , তুই থাকলেই হবে আমার অন্য কিচ্ছু লাগবে না
আমার কান্না আরও বেড়ে গেলো , আম্মু যদি জানতে পারে যার উপর আম্মুর এতো ভরসা সেই আজ তার সংসার এর বারোটা বাজিয়ে দিয়েছে । তাহলে আম্মুর মনের অবস্থা কি হবে ?
_ তুই কি সব সুনেছিস না কি দেখেছিস ?
আমি আর মিথ্যা বললাম না বলে দিলাম দেখেছি । আম্মু শুনে একটা দীর্ঘ নিশ্বাস ফেললো । আমি কাঁদতে কাঁদতে জিজ্ঞাস করলাম
_ আমারা কি আর আব্বুর কাছে যাবো না ?
যদিও জানি আমার এই প্রশ্ন হাস্যকর তবুও কেন জানি আমার ভেতর তা হাহাকার করছে । কেন জানি আমার খুব ইচ্ছা হচ্ছে আমারা আবার এক হয়ে যাই । আমি যদি পারতাম সময় তা আরও এক সপ্তাহ আগে নিয়ে যেতাম ।
_ তুই কি চাস আব্বুর কাছে যেতে ?
আমি মাথা ঝাকালাম কারন আমি জানি আজকের ঘটনার মুল অপরাধী আমি । যদিও আব্বু পরিক্ষায় ফেল হয়েছে তবুও এই পরীক্ষা তো নিয়েছি আমি । যদি এই পরীক্ষা না আসতো আব্বু ফেল ও করতো না । আমাদের পরিবার ও বিভক্ত হতো না ।
_ আমারা যাবো বিয়ে , শেষ হলেই আমারা ফিরে যাবো । তুই কাঁদিস না
কথাটা বলার সাথে সাথে আম্মুর চোখ থেকে এক ফোটা পানি এসে আমার গালে পড়লো । আম্মুর ঠোঁট দুটো কাঁপছে ।
_ সব কিছু জানার পর ও তুমি যাবে
_ হ্যাঁ যাবো, তোর জন্য যাবো , আমি এতো বছর তো তোর জন্য ই ছিলাম ।
আম্মুর এই বাক্যটি শুনে আমি গা ঝাড়া দিয়ে উঠলাম , আমি আজ আম্মুর সাথে কথা বলতে চাই , এই বাক্য দিয়ে আম্মু কি বোঝাতে চায় ?
_ আমার জন্য ছিলে কেন আম্মু ?
_ তোর জন্য ই তো আমার বেঁচে থাকা রে বোকা ছেলে , তোর ভালর জন্য আমি সব কিছু করতে রাজি । তোর আব্বু যত কিছুই করুক আমি তোকে কোনদিন পিতা হীন করবো না ।
গলার ভেতরে কান্না দলা পাকিয়ে এলো । তবে আমি আজ জানতে চাই কতটুকু ক্ষতি আমি করেছি আম্মুর ।
_ না আম্মু তুমি না যেতে চাইলে আমি যাবো না । তুমি যা চাইবে তাই হবে ।
আম্মু আমার কপালে একটা চুমু খেলো । আমার সোনা ছেলে বলে জড়িয়ে ধরলো তারপর খুব ধীরে ধীরে আমাকে বোঝাতে লাগলো ।
_ যত খারাপ ই হোক তোর আব্বু হয় সে তুই কখনো তার সাথে খারপ ব্যাবহার করবি না , অন্য কারো সাথে যেমন ই করুক তোকে কিন্তু তোর আব্বু অনেক ভালোবাসে । আর আজকে যা করেছে তোর আব্বু সেটা আমার সাথে করেছে এর জন্য তুই কেন তাকে দূরে ঠেলে দিবি।
_ না আম্মু তোমার সাথে আব্বু এমন কেন করলো , আমি শুনেছি তোমারা একে অপর কে ভালোবেশে বিয়ে করেছো তাহলে আব্বু তোমার সাথে কেন এমন খারাপ ব্যাবহার করে ।
আজ জিজ্ঞাস করেই ফেললাম সব লজ্জা ফেলে , আজ আমাকে সব জানতে হবে । আম্মু কান্নার মাঝে ও একটু হেঁসে ফেললো , তবে এই হাসি যে দুঃখের হাসি সেটা বোঝার জন্য কষ্ট করতে হবে না ।
_ তুই ছোট মানুষ তোর এতো কিছু জানতে হবে না ?
_ না আম্মু তুমি বলো , আমি এখন ছোট না আমি বড় হয়েছি ।
আমি দৃঢ় গলায় বললাম । আম্মু আমার কথা শুনে হেঁসে ফেললো ।
_ বাবা মায়ের প্রেম এর কথা শুনতে নেই বাবা ।
_ না আম্মু শুনবো আমি আব্বু কেন তোমার সাথে এমন করে , আর তুমি কেন সুধু আমার জন্য ই আব্বুর সাথে থাকো ?
আম্মু বড় একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো । তবে কিছু বলল না মুখটা ফিরিয়ে নিলো আমার কাছ থেকে । আমি বুঝতে পারলাম উপরে থেকে যেমন দেখা যায় আব্বু আর আম্মুর সম্পর্ক আরও খারাপ । আমি আম্মুর মুখ জোর করে আমার দিকে ফেরালাম । দু চোখ দিয়ে পানি ঝরছে আম্মুর । ঠোঁট দুটো কাঁপছে ।
_ আম্মু এখন আমি বড় হয়েছি , এতদিন তুমি আমাকে সব কিছু থেকে রক্ষা করে এসেছ এখন আমি তোমাকে সব কিছু থেকে রক্ষা করবো । আমি এখন তোমার বন্ধুর মতো । এখন থেকে আমি সুধু তোমার ছেলে ই না বন্ধু । তুমি আমাকে বলো কেন ভালোবেসে বিয়ে করার পর ও তোমাকে নিজের ইচ্ছার বিরুদ্ধে ওখানে থাকতে হচ্ছে ।
আম্মু হাসল একটু , কি সুন্দর দেখালও আম্মু কে । আমার বুকের ভেতর টা দুমড়ে গেলো । এই ফুলের মতো মুখে কান্নার এর কষ্টের ছাপ দেখে ।
_ ঠিক আছে শোন তাহলে , আমি তখন অনেক ছোট ছিলাম , এই তোর বয়সী হবো । কিন্তু আমি ভুল করেছিলাম , ওই বয়সে একজন এর প্রেমে পড়ে গিয়েছিলাম । এমন অবস্থা ছিলো যে সে যা বলতো তাই করতাম । উঠতে বলে উঠতাম বসতে বললে বসতাম । পুরো অন্ধ ছিলাম তার ব্যাপারে ।
বর্ণনা করার সময় আম্মুর মুখ উজ্জল হয়ে উঠলো , দেখে মনে হচ্ছে আম্মু কল্পনায় সেই সময় ফিরে গেছে । আমার কাছে মনে হলো আম্মু বুড়োর কথা বলছে । তাই আমি আম্মু কে কথার মাঝে বাধা দিলাম । জিজ্ঞাস করলাম
_ ওই লোক ই কি আব্বু ?
_ কথার মাঝে কথা বলবি না , জানতে যখন চাস সব বলছি শোন । না ওই লোক তোর আব্বু নয় , তবে ওই লোকের নাম আমি তোকে বলবো না । তবে এই বাড়িতে তোর আব্বু কে সেই নিয়ে এলো । আমার লজিং শিক্ষক হিসেবে । খুব বিরক্ত হলাম আমি তোর আব্বুর উপর । কারন তোর আব্বু কে দেখেলি আমি খুব বিরক্ত হতাম । কিন্তু তোর আব্বু প্রথম থেকেই আমার পেছনে লাগলো । এমন কি একপর্যায়ে সেই লোকের কোথাও জেনে ফেললো । কিন্তু তাতে সে থামল না আমাকে নানা ভাবে বুঝাতে লাগলো যে আমি যা করছি সেটা আমার জন্য ভালো হবে না । কিন্তু সেই লোক কে ভয় পেত বলে আমার বাড়িতে কাউকে বলে নি তোর আব্বু । এমন সময় আমি সেই লোক সম্পর্কে এমন কিছু জানতে পারলাম যে রাগে দুঃখে আমি তোর আব্বু কে নিয়ে পালিয়ে গেলাম ।
_ কি জানতে পেরেছিলে আম্মু , সেই লোক কি তোমার সাথে চিট করেছিলো আব্বুর মতো ।
_ না না সে তখন চিট করেনি , তবে তার অতিতের একটা কথা আমি জানতে পেরেছিলাম , সেটা আমি মেনে নিতে পারিনি । আর তখন সেই লোক এখানে ছিলো ও না । তাই তার অনুপুস্থিতিতে আমি ভুল করে বসলাম , তোর বাবা কে নিয়ে পালিয়ে গেলাম । বিয়ে করলাম আমারা । তোর বাবা আমাকে অনেক বলতে লাগলো বাড়িতে ফেরার কথা । কিন্তু আমার এতো অভিমান হয়েছিলো যে আমি আর ফিরে আসতে চাই নি ।
_ কেন আম্মু ? এই বাড়ির মানুষ কি করেছিলো তোমাকে । তুমি নানা নানুর সাথে রাগ করেছিলে কেন ।
_ কেন জানি সবার উপর রাগ হয়েছিলো আমার আমি জানি না তবে প্রচণ্ড অভিমান হয়েছিলো আমার । আসলে কারো কোন দোষ ছিলো না । তবুও আমি রাগ করে ছিলাম । ওদিকে তোর দাদা বাড়ি খুব গরীব সুধু তোর আব্বুর টাকায় চলে ওরা । ভীষণ অভাব যাচ্ছিলো । কিন্তু আমার অভিমান এতো গভীর ছিলো যে আমি অভাব সহ্য করতে রাজি ছিলাম , কিন্তু ফিরে আসতে রাজি ছিলাম না । তখন তোর দাদা বাড়ির লোকজন আর তোর আব্বুর আসল চেহারা খুলে গেলো । অত্যাচার করা শুরু করলো আমার উপর । পুরো ভেঙ্গে পড়লাম আমি, ভুল যে করেছি সেটা বুঝতে আর বাকি রইলো না । কিন্তু ততো দিনে তুই আমার পেতে চলে এসেছিস । আমার আর উপায় ছিল না যে ওখান থেকে চলে আসবো ।
_ কেন আম্মু তোমার সেই লোক কি তোমাকে ফেলে দিত ?
_ মনে হয় না , তবুও কি করে আসি , আরও বড় হ তখন বুঝবি একজন এর সন্তান পেটে চলে এলে সেই মেয়েকে আর কেউ আপন করতে চায় না । আর অন্য কেউ কি তোকে আপন ছেলের মতো দেখবে , যতই সে ভালো মানুষ হোক । তোকে পিতার আদর থেকে দূরে রাখতে চাইনি । অত্যাচার সহ্য করেও সেখানে থেকে গেলাম । এদিকে তোর নানা নানু অনেক চেষ্টা করেছে আমাকে আনতে । কিন্তু আমি এলাম না । এর মাঝে তুই হলি , তোকে পেয়ে আমি সব ভুলে গেলাম ।
এটুকু বলে আম্মু আমার কপালে একটা চুমু খেলো । আর এদিকে আমিও গ্লানি থেকে একটু একটু মুক্তি পাচ্ছি । আব্বুর আর দাদা বাড়ির মানুষ দের অত্যাচার এর বর্ণনা শুনে আমার মাঝে ঘৃণা দানা বাধতে শুরু করেছে । এখন মনে হচ্ছে যা করেছি বেশ করেছি ।
_ ভেবে নিলাম এই তো আমার সাত রাজার ধন চলে এসেছে এখন আর আমার কোন দুঃখ নেই । সব কিছু আমি সহ্য করতে পারবো । কিন্তু এর পর তোর দাদি এমন এক কাজ করলো যা আমি সহ্য করতে পারলাম না । চিঠি লিখলাম বাবা মা কে ।
_ কি করেছিলো আমার দাদি আম্মু ?
_ নাহ থাক ওইসব তোর শুনতে হবে না
আমি বুঝতে পারলাম , আম্মু বলতে চায় সব কিছু , আজ বলার লোক পেয়ে আম্মু খুশি ই হয়েছে । কিন্তু আম্মুর ভালো মানুষী আম্মু কে সব বলতে বাধা দিচ্ছে । এতক্ষনে আমার কাছে পরিষ্কার হয়ে গেছে যে আমি যা করেছি একদম ঠিক করেছি । আজ থেকে আম্মুর ক্ষতি হবে এমন কিছু আম্মুর কাছে ঘেষতে দেবো না ।
_ বলো আম্মু কিচ্ছু হবে না । আজকে সব বল অন্য দিন আর হয়তো বলতে পারবে না ।
আম্মু একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে আবার বলতে লাগলো ।
_ তোর দাদি এমন কাজ করলো যা আমার সমস্ত দুনিয়া কাপিয়ে দিলো , আমি সব সহ্য করতে পারতাম খেয়ে না খেয়ে কত থেকেছি , ছেঁড়া কাপড় পড়ে থেকেছি , যে আমি নিজের বাড়িতে একটা কাজ করিনি সেই আমি দাসী বাঁদির মতো খেটেছি । কিন্তু কিচ্ছু বলিনি কোনদিন কিন্তু সেদিন যা হলো তা মেনে নিতে পারলাম না রুখে দারিয়েছিলাম । এমন কি দা নিয়ে সবাই কে মারতে পর্যন্ত গিয়েছিলাম । কিন্তু একা সবার সাথে পারনি , সবাই মিলে সেদিন আমাকে বেদম মেরেছে । তোর বয়স তখন মাত্র ছয় মাস । এমনিতে আমার বয়স কম ছিল , তার উপর প্রেগন্যান্ট থাকার সময় যত্ন হয়নি তাই শরীর দুর্বল ছিলো । বার বার অজ্ঞান হয়ে গেছি কিন্তু তোকে ছারিনি ।
বলতে বলতে আম্মুর চোখ দুটো ছলছল করে উঠলো । আমার চোখেও পানি চলে এসেছে । এবার আর নিজের আব্বুর জন্য নয় । আম্মুর দুক্ষ দুর্দশার জন্য । এখন যদি আব্বু আমার সামনে থাকতো তবে আমি আব্বু কে নিজেই বের করে দিতাম ।
_ তোর দাদি একজন লোক নিয়ে এসেছিলো তোকে বিক্রি করে দেবে বলে । দু লক্ষ্য টাকা দাম ও ঠিক হয়ে গিয়েছিলো । সেই টাকায় তোর আব্বু ব্যেবসা করবে । ওদের কথা ছিলো ছেলে গেলে ছেলে আরও হবে । সেদিন আমি রাজি হয়েছিলাম , আমার আব্বা আম্মার কাছ থেকে টাকা এনে দিতে । আর তোর আব্বুর সাথে ও আমার সব সম্পর্ক ছিন্ন হয় সেদিন এর পর । সুধু তোর জন্য ই থেকে গিয়েছিলাম ।
_ তবে যে একটু আগে বললে আব্বু আমাকে ভালোবাসে ?
আমি রাগান্বিত ভাবে প্রশ্ন করলাম । কিন্তু আম্মু চপ করে রইলো , তার চোখ দিয়ে আবার পানি পড়ছে ।
_ আম্মু বলো , তুমি যে বললে আব্বু আমাকে ভালো বাসে ?
_ অভাবে মানুষ কত কিছু করে , আর সেদিন এর পর তোর আব্বু আর এমন করেনি ।
আমি দাতে দাঁত পিষতে লাগলাম , মনে মনে নিজেকে ঘৃণা হতে লাগলো , আমি যে ওই লোকের সন্তান সেটা ভেবে নিজেকে কলঙ্কিত মনে হতে লাগলো । আমি বুঝতে পারলাম , যে আব্বু আম্মুর সম্পর্ক অনেক আগেই শেষ হয়ে গেছে এতদিন আম্মু সুধু আমার জন্য ই রয়ে গেছে। যদিও আমি কোন কারন দেখি না , কারন যে পিতা নিজের সন্তান বিক্রি হওয়ার পক্ষে থাকে সে পিতার মতো পিতা না থাকাই ভালো । হঠাত আমার মনে একটা প্রশ্ন এলো ।
_ আচ্ছা আম্মু আব্বু কি আজকেই প্রথম এমন করলো না আগেও করেছে ? একদম মিথ্যা বলবে না আম্মু বলে দিলাম ।
আমি অনেকটাই শিওর আব্বু এর আগেও এমন করেছে ? আমি আম্মুর দিকে চোখ পাকিয়ে তাকিয়ে আছি । যেন আম্মু মিথ্যা না বলে ।
_ এইসব জানা কি খুব দরকার , আমার লজ্জা হয়ে বলতে
আম্মু মিনতির স্বরে বলল । কিন্তু আমি কান দিলাম না যদিও আমি এখন শিওর তবুও আমি জানতে চাই ।
_ তুই নিশ্চয়ই দেখেছিস আমার বাসায় কাজের মেয়ে রাখি না ? এর চেয়ে বেশি আমি বলতে পারবো না
আম্মু লজ্জা পেয়েছে বোঝা গেলো । তবে এর চেয়ে বেশি বলার দরকার ও পড়লো না । আমি বুঝে গেলাম । আমি আম্মু কে জড়িয়ে ধরলাম । আর বললাম
_ তুমি কখনো আর ফিরে যাবে না ওই লোকের কাছে । আমার জন্য তো নয় ই । আর তুমি যদি যাও যাবে আমি যাবো না ।
আম্মু আমাকে চুমু খেলো একটা । তারপর বলল
_ কি আর হবে না গিয়ে সমাজ পুরুষ দের দোষ দেখে না । পুরুষ হচ্ছে হীরের আংটি বাঁকা হলেও লাখ টাকা , সমাজে জানা জানি হলে সবাই আমাকেই দোষ দেবে । বলবে পুরুষ মানুষ এর ওই একটু দোষ থাকেই ।
আমি আম্মু কে আরও জোরে জড়িয়ে ধরলাম আর বললাম
_ না তুমি যাবে না ।
মনে মনেপ্রতিজ্ঞা করলাম , আম্মু কে নিয়ে আমি আর কোন নোংরা চিনাতা করবো না । আম্মু কষ্ট পাবে এমন কোন কাজ ই করবো না । সারাজীবন আম্মু কে আগলে রাখবো । রাজু মতিন কে আম্মুর ধারে কাছেও ঘেষতে দেবো না ।
_ তাহলে কোথায় থাকবো ? বাবার বাড়ি , মেয়েরা বাবার বাড়ি থাকা কি ভালো ? পাগল ছেলে
_ সে আমি জানি না প্রয়োজনে আমি কাজ করবো তুমি আমার কাছে থাকবে ।
একটু আবেগ আপ্লূত হয়ে বলে ফেললাম , যদিও সেটা সম্ভব নয় ।
_ পাগল ছেলে তুই কেন কাজ করবি আমি থাকতে , তুই পড়াশুনা করে অনেক বড় হবি , আর পড়াশুনা বেশি না হলে না হবে কিন্তু ভালোমানুষ হবি ।
আমি মনে মনে প্রতিজ্ঞা করলাম আমি ভালো মানুষ হবো । দৃঢ় প্রতিজ্ঞা ।
চলবে