31-01-2020, 07:37 AM
পর্ব-০৬
রাতের বেলা বাসায় আসলাম, দরজা টোকা দেওয়ার একটু পর দরজা খুলে দেয়। তাকিয়ে দেখি এটা অবন্তী।
রীতিমতো একটা টাসকি খেলাম। কি ব্যাপার অবন্তীকে আমি নিয়ে আসতে গেলাম, আসলো না। কিন্তু এখন নিজে থেকেই এসে হাজির!
অবশ্য ভালোই হয়েছে। সে কোনো কথা না বলে চলে গেলো। আমি দরজা লাগিয়ে রুমে গেলাম, ফ্রেশ হয়ে এসে সবাই মিলে খেতে বসলাম।
খাওয়ার এক পর্যায়ে বাবা বললো……
বাবাঃ একটা কথা বলার ছিলো।
আমিঃ কি কথা?
বাবাঃ তোমাদের বিয়ের তো অনেক দিন হইছে, এবার অন্তত ভবিষ্যৎ এর কথা কিছু চিন্তা করো।
আমিঃ কি বলছো কিছুই তো বুঝতেছিনা।
আম্মুঃ বাসাটা খালি খালি লাগে, আমাদেরও তো ইচ্ছা করে নাতি/নাতনীর সাথে খেলতে।
আম্মুর কথা শুনে আমার গলায় ভাত আটকে গেলো, কাশতে শুরু করলাম।
মনে মনে বললাম এখনো ফ্লোর থেকে খাটে উঠতে পারিনি আর আম্মু বাচ্ছার চিন্তা করতেছে। আম্মু দিল্লী এখনো বহু দূর। তোমার কপালে নাতি নাই।
কিছু না বলে চুপচাপ খেয়ে উঠে গেলাম। রুমে গিয়ে বসে আছি। একটু পর অবন্তী আসলো।
আমার দিকে তাকিয়ে রইলো, দেখে মনে হচ্ছে কিছু একটা বলবে।
আমিঃ কিছু বলবেন?
অবন্তীঃ হুম একটা কথা ছিলো।
আমিঃ বলুন।
অবন্তীঃ তুমি আরেকটা বিয়ে করো।
আমিঃ কিহ! বিয়ে করবো মানে? আপনার মাথা ঠিক আছে?
অবন্তীঃ মাথা একদম ঠিক আছে, আব্বু আম্মু ঠিকই বলেছে, বাসাটা কেমন খালি খালি লাগে। উনাদের জন্য হলেও বিয়েটা করো।
আমিঃ বিয়ে করে লাভ কি হবে?
অবন্তীঃ তোমারও মনের আশা পূরণ হলো আর উনাদেরও নাতি নাতনী আসলো।
আমিঃ শুনেন বিয়েটা কোনো ছেলে খেলা নয়, যে বললেই বিয়ে করে ফেলবো। বিয়ে মানুষের লাইফে একবারই হয়। বুঝলেন,,,,,
অবন্তীঃ কিন্তু আমার লাইফে তো একাধিক। সেটাকে কি বলবে?
আমিঃ শুনেন এটা একটা এক্সিডেন্ট। আপনি তো আর ইচ্ছা করে করেন নি, পরিস্থিতির স্বীকার। আর আমি মনে করি আপনার লাইফে ২য় বিয়ে হয়নি।
অবন্তীঃ হয়নি মানে, কি বলছো?
আমিঃ জ্বি আমি ঠিকই বলছি। বিয়ের পর থেকে আপনার আর আমার সম্পর্ক সেই দেবর/ভাবির মতোই রয়ে গেলো। না আছে কোনো আন্ডারেস্টিং, না আছে শেয়ারি আর না আছে কেয়ারিং। আগে তো একটু হলেও হেসে হেসে কথা বলতেন কিন্তু বিয়ের পর থেকে তো সেটাও নাই।
অবন্তীঃ আমি তো আব্বু আম্মুর জন্য বলতেছি।
আমিঃ আম্মুর জাস্ট ইচ্ছা হইছে যে যদি একটা নাতি থাকতো তাহলে খেলতে পারতো তার মানে এই নয় যে, ইচ্ছাটা পূরন করার জন্য আমাকে আবার বিয়ে করতে হবে।
আমারওতো অনেক ইচ্ছা ছিলো ভালোভাবে পড়ালেখা টা শেষ করে ভালো একটা চাকরি করবো, মহা ধুমধামে বিয়ে করবো। ভাইয়া আর আমি মিলে অনেক সুন্দর একটা বাড়ি করবো, প্রতিদিন ভালোমন্দ খাবো কিন্তু ইচ্ছা কি পূরণ হইছে? হয়নি, কারণ একজন মানুষের সব গুলো ইচ্ছা পূরণ হয় না।
পড়ালেখা শেষ করা তো দূরের কথা পরীক্ষাটাও অন্যের সহযোগিতায় দিয়েছি। আর ভালো চাকরি সেটা তো এখন করতেছি এই যে ভ্যান গাড়ি ঠ্যালতেছি এর থেকে ভালো চাকরি আর কি হতে পারে। ভালো খাবার সেটা তো প্রতিদিনই খাচ্ছি, পানিতে পাউরুটি চুবিয়ে খাইতেছি এর থেকে ভালো খাবার আর কি হতে পারে?
আর বিয়ে সেটার কথা নাই বা বলি। এমন বিয়ে করেছি ধুমধাম তো দূরের কথা যাদের সাথে বড় হইছি, পড়ালেখা করেছি সেই বন্ধু গুলারেও এখনো বলতে পারিনি। যেখানে মানুষ বিয়ের পরে সুখি হয় ভালোভাবে থাকে সেখানে আমি খাট ছেড়ে ফ্লোরে ঘুমাই। সো একজন মানুষের সব গুলো ইচ্ছা পূরণ হয় না। আম্মু আব্বুরটাও হয়তো হবে না।
অবন্তীঃ……. (চুপ করে আছে)
আমিঃ আপনি যে বললেন আমাকে আবার বিয়ে করতে! কোন মেয়ে আমার কাছে বিয়ে বসবে? কোন বাপ তার মেয়েকে আমার হাতে তুলে দিবে? কি আছে আমার, না আছে পড়ালেখা না আছে টাকা পয়সা আর না আছে ভালো কোনো চাকরি? কিছুই নেই আমার।
তার উপর যদি শুনে আমি আরো এক বিয়ে করেছি সেখানে আমাকে মেয়ে তো দূরের কথা ঝাড়ুর বাড়ি ছাড়া কিছুই দিবে না।
আপনি বলছেন বিয়ে করার জন্য, বিয়ে করে খাওয়াবো কি? যে টাকা পাই সেটা দিয়ে নিজেও তো চলতে পারি না। এক বেলা খেলে অন্য বেলা না খেয়ে থাকি। প্রতিদিন হেটে হেটে কাজে যাই।
দুপুরে যেখানে সবাই লান্স করে সেখানে আমি পানিতে পাউরুটি চুবিয়ে খাই। সো এগুলো বাদ দেন।
অবন্তীঃ……. (আমার দিকে তাকিয়ে আছে, চোখের কোনে স্পর্শ পানি দেখা যাচ্ছে)
আমিঃ হুম এটা ঠিক যে, আমি আপনার আর আব্বু আম্মুর সব গুলো চাওয়া পূরণ করতে পারছিনা। যা যা দরকার সেগুলো দিতে পারছিনা। কিন্তু কি করবো বলেন আমিও অনেক চেষ্টা করতেছি। কিছুই হচ্ছে না। হয়তো একদিন সব হবে।
সো এসব আজাইরা কথা বাদ দিয়ে অন্য কথা থাকলে বলুন।
অবন্তীঃ তুমি ঘুমাও, অনেক রাত হইছে।
আমিঃ আপনার বান্ধবীর বিয়ে কখন?
অবন্তীঃ আগামী সপ্তাহে।
আমিঃ ওকে আমি আব্বুর কাছে ৫ হাজার টাকা দিবো। আপনি শপিং করিয়েন আর বিয়েতে কিছু একটা গিফট দিয়েন।
অবন্তীঃ লাগবে না,আমি বিয়েতে যাবো না।
আমিঃ যাবেন না কেন?
অবন্তীঃ তুমি এতো টাকা দিয়ে দিলে ঘর চলবে কেমনে?
আমিঃ সেটা আপনার না জানলেও চলবে। এখন ঘুমান,,,
আর কিছু না বলে ঘুমিয়ে গেলাম। অবন্তী কিছু বলতে গিয়েও বলনি।
মাঝরাতে কারো কান্নার শব্দে ঘুম ভেঙ্গে যায়, লাইট টা অন করে দেখি অবন্তী ভাইয়ার ছবি টা নিয়ে বসে আছে। আর কান্না করতেছে।
আমিঃ কি ব্যাপার আপনি ঘুমান নি এখনো?
অবন্তীঃ….. (চুপ করে আছে)
আমিঃ কি হইছে কথা বলেন না কেন?
অবন্তীঃ না, ঘুম আসছে না। তুমি ঘুমাও,,,
আমিঃ কেমনে ঘুমাবো, চিল্লাচিল্লির মধ্যে কি ঘুমানো যায়?
অবন্তীঃ সরি তুমি ঘুমাও।
আমি আবারও ঘুমাতে গেলাম ঘুম আসছে না, অবন্তীর হাতে ভাইয়ার ছবিটা দেখে ভাইয়ার কথা মনে পড়ে গেলো।
ঘড়ি দেখলাম ২.০০ টা বাজে, আমি উঠে বাসা থেকে বের হয়ে ভাইয়ার কবরের পাশে গেলাম।
বসে বসে কল্পনা করতে লাগলাম ভাইয়ার স্মৃতি গুলো। তারপর নিজে নিজে বলতে লাগলাম,,,,
“ভাইয়া কেমন আছিস, তোর কথা খুব মনে পড়ছে তাই চলে আসলাম। ভাইয়া তোর অবন্তীকে আমি সুখে রাখতে পারছিনা রে, কি করবো বল। সে এখনো তোকে অনেক ভালোবাসে, সব কিছুর মাঝে তোর অস্তিত্ব খুঁজে বেড়ায়।
জানিস তুই খুব লাকি, অবন্তী তোকে এতোই ভালোবাসে যে তোর জায়গায় অন্য কাওকে বসানো তো দূরের কথা, কল্পনাও করে না। জানিস ভাই সে এখনো তোর ছবি নিয়ে কান্না করে।
তুই চলে যাওয়ার পর আমাদের সবার মুখ থেকে হাসিটা চলে গেছে। সব কিছু ঠিকঠাক আছে তবুও কেমন জানি একা একা লাগে।
অবন্তী এখনো তোর পথ চেয়ে বসে থাকে। ওর ধারণা তুই আসবি।
অবন্তী তোকে এতোটাই ভালোবাসে যে, আমাকে বিয়ে করার পরও সে আমাকে বলছে অন্য কাওকে বিয়ে করে সংসার করতে।
জানিস ভাই মাঝেমাঝে অবন্তীর উপর খুব রাগ হয়, ইচ্ছা করে ওরে অনেক বকা দিই কিন্তু ওর দিকে তাকালেই তোর কথা মনে পড়ে।
জানিস ভাই আমারও অনেক কষ্ট হয় তোরে ছাড়া থাকতে, চাইলেও ভেঙ্গে পড়তে পারিনা আব্বু আম্মুর কথা চিন্তা করে,,,,
ভাই তুই যেমন আমাদের সব চাওয় পাওয়া মিটিয়ে ছিলি আমি তেমন পারছিনা রে ভাই। ভাই তুই আমাকে মাফ করে দিস, দোয়া করিস আমার জন্য যেন ওদের সবার মুখে হাসি ফুটাতে পারি। “””
আরো কিছুক্ষণ সেখানে থেকে বাসায় চলে গেলাম। তাহাজ্জত এর নামাজ পড়ে নিলাম, তারপর ফজরের নামাজ পড়ে আবারও ভাইয়ার কবরের পাশে গেলাম। কবর জিয়ারত করে বাসায় এসে রেড়ি হলাম।
প্রতিদিনের মতো রওনা দিবো তখন অবন্তী আসলো….
অবন্তীঃ জুয়েল, একটা কথা বলতাম।
আমিঃ হুম বলেন।
অবন্তীঃ বিয়েতে তুমি যেতে পারবে?
আমিঃ আমি গিয়ে কি করবো, আপনার বান্ধবীর বিয়ে আপনিই যান।
অবন্তীঃ আমার অন্য বান্ধবীরা সবাই ওদের হ্যাসবেন্ডকে সাথে নিয়ে যাবে।
আমিঃ সমস্যা কি, আপনি একা যাবেন।
অবন্তীঃ প্লিজ না করো না।
আমিঃ আমার কাজ আছে, আপনি নিজেই চলে যাবেন।
অবন্তীঃ তুমি না গেলে আমিও যাবো না। আমার নিজেরওতো একটা পার্সোনালিটি আছে।
আমিঃ তারমানে আপনার পার্সোনালিটি রক্ষা করার জন্য আমাকে নিয়ে যাবেন!
অবন্তীঃ না তোমাকে……
আমিঃ হইছে আর মিথ্যা বলতে হবে না। আমি যাবো না।
এমন সময় আব্বু আসলো,,,,
আব্বুঃ কি ব্যাপার এতো চিল্লাচিল্লি কিসের?
অবন্তীঃ দেখো না আব্বু তোমার ছেলেকে আমার সাথে যাওয়ার জন্য বলছি সে নাকি যাবে না।
বাবাঃ কিরে সত্যি নাকি?
আমিঃ আব্বু আমার কথাটা শোনো,,,,
বাবাঃ কোনো কথা শোনার দরকার নেই। তুই বিয়েতে যাবি এটাই ফাইনাল।
কিছু বলতে গিয়েও পারলাম না, সোজা বাসা থেকে বের হয়ে কাজে চলে গেলাম।
রাস্তায় আয়মানের সাথে দেখা হলো…..
আয়মানঃ কিরে জুয়েল! দোস্ত কি অবস্থা?
আমিঃ আছি। তোর কি খবর?
আয়মানঃ সব ঠিকঠাক, কয়েকদিন পর তো রেজাল্ট দিবে।
আমিঃ কোন দিবে জানিস?
আয়মানঃ মনে হয় ৫ তারিখ। তুই জানিস না,,,
আমিঃ না। তোর কাছেই শুনলাম,,, আগের মতো অনলাইনে থাকি না তেমন কোনো নিউজ জানা নেই।
আয়মানঃ আচ্ছা শোন তোর জন্য একটা সুখবর আছে।
আমিঃ কি?
আয়মানঃ একটা কোম্পানিতে কয়েকজন সুপারভাইজার নিয়োগ দিবে, স্নাতক কমপ্লিট করা লাগবে। তোর রেজাল্ট ভালো আসলে তুই আবেদন করিস।
আমিঃ থেংক্স দোস্ত।
আয়মানঃ অবন্তী এসেছে?
আমিঃ হুম এসেছে।
আয়মানঃ তুই নিয়ে আসছিস নাকি নিজে থেকেই এসেছে?
আমিঃ ও নিজে থেকেই এসেছে। আমি যখন ওর বাবার বাড়িতে গিয়েছিলাম ওরে আনতে তখন আসেনি। গত কাল নিজে থেকেই এসেছে।
আয়মানঃ তো এখন কি সিদ্ধান্ত নিলি? ডিভোর্স দিবি?
আমিঃ জানি না, তবে আমার মনে হচ্ছে অবন্তী ঠিকই আমাকে মেনে নিবে কিন্তু একটু সময় লাগবে। ভাইয়ার স্মৃতি থেকে আমি নিজেই এখনো বের হতে পারিনি। আর অবন্তী এতো তাড়াতাড়ি বের হতে না পারাটাই স্বাভাবিক,,,
আয়মানঃ হুম তাহলে তো ভালোই।
আমিঃ হুম। আচ্ছা দোস্ত তুই থাক আমার দেরি হয়ে যাচ্ছে। পরে বস হারামি ঝাড়ি দিবে।
আয়মানঃ আচ্ছা ঠিক আছে যা।
তারপর কাজে চলে গেলাম, রাতে আসার সময় বেতন নিয়ে আসলাম। বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে আব্বুর হাতে টাকা গুলো দিলাম।
আব্বু অবন্তীকে ডেকে টাকাটা দিলো। অবন্তী আব্বুকে বললো….
অবন্তীঃ আব্বু একটা কথা বলতাম।
আব্বুঃ হুম মা বল।
অবন্তীঃ আপনি একটু জুয়েলকে বলে দেন যাতে কালকে আমার সাথে একটু শপিং এ যায়, আমি কিছু গিফট কিনবো।
আব্বুঃ যাবে সমস্যা কি? এই জুয়েল কালকে ওর সাথে বের হইস।
আমিঃ বাবা আমার কাজ আছে,আমি পারবো না।
বাবাঃ পারবি না কেন?
আমিঃ আজকেই বেতন দিয়েছে আর কালকে যদি কাজে না যাই, পরের দিন গেলে লাথি দিয়ে বের করে দিবে।
বাবাঃ তাহলে সন্ধ্যায় যাবি।
আমিঃ তখন টিউশনি করানো লাগবে।
বাবাঃ একদিন না করালে কিছু হয় না। কালকে ওরে নিয়ে শপিংয়ে যাবি এটাই ফাইনাল।
আমি কিছু না বলে রুমে চলে গেলাম।
পরেরদিন কাজে গেলাম, সেখান থেকে এসে রেড়ি হয়ে অবন্তীকে নিয়ে বের হলাম। বিয়ের পর এই প্রথম অবন্তীকে নিয়ে বের হইছি।
একটা রিক্সা নিয়ে যাচ্ছি, আমি একটু সরে বসে আছি।
অবন্তীঃ তোমার কি আমার পাশে বসতে অস্বস্তি লাগছে?
আমিঃ না, কেন?
অবন্তী; তাহলে ওদিকে চেপে বসছো কেন? আরো ক্লোজ ভাবে বসো।
আমিঃ সমস্যা নেই,আমি ঠিক আছি।
তারপর দুজনেই চুপ,, নীরবতা ভেঙ্গে অবন্তী বললো…..
অবন্তীঃ জুয়েল!
আমিঃ হুম বলেন।
অবন্তীঃ তোমার কি মন খারাপ?
আমিঃ না কেন?
অবন্তীঃ গোমড়া মুখ করে বসে আছো তাই।
আমিঃ ওহ, না আমি ঠিক আছি।
কথা বলতে বলতে শপিংমলের সামনে চলে আসলাম।
অবন্তী অনেক গুলো গিফট দেখলো, তারপর একটা চয়েস করে ওটা কিনলো। এরপর একটা শাড়ির দোকানে গেলো, আমাকে বললো শাড়ি পছন্দ করে দেওয়ার জন্য। দোকানের মধ্যে অনেক লোক তাই কিছু না বলে নীল রঙের একটা শাড়ি পছন্দ করে দিলাম।
ভাইয়ার সাথে যখন বিয়ে হয়েছিলো তখন একদিন অবন্তী ওদের বাসায় যাওয়ার সময় একটা নীল শাড়ি পরেছিলো, সেদিন অনন্তীকে অনেক সুন্দর দেখাচ্ছিলো। সাথে ভাইয়া নীল পাঞ্জাবি পরেছিলো, দুজনকেই অনেক সুন্দর লাগছিলো।
তাই অবন্তীর জন্য নীল শাড়িটাই পছন্দ করে দিলাম।
তারপর অবন্তী আমাকে বাইরে দাঁড়িয়ে রেখে কোথায় যেন গেছে, অনেকক্ষণ পর আসলো।
আমিঃ কোথায় গিয়েছিলেন?
অবন্তীঃ ওয়াশরুমে।
আমিঃ আর কিছু নিবেন নাকি রিক্সা ডাকবো?
অবন্তীঃ রিক্সা নেওয়ার দরকার নেই, হেটে হেটে যাবো।
আমিঃ পাগল নাকি আপনি হাটবেন তাও এই রাতের বেলায়?
অবন্তীঃ কেন রাতের বেলায় হাটলে সমস্যা নাকি?
আমিঃ সেটা না।
অবন্তীঃ এতো কথা না বলে হাটো।
তারপর দুজনে হাটতে লাগলাম। খুব দারুণ একটা অনুভূতি কাজ করলো। রাস্তায় আমার আর ওর কোনো কথা হয়নি।
অনেকক্ষণ হাটার পর বাসায় গেলাম, তারপরেই……..
চলবে…….
রাতের বেলা বাসায় আসলাম, দরজা টোকা দেওয়ার একটু পর দরজা খুলে দেয়। তাকিয়ে দেখি এটা অবন্তী।
রীতিমতো একটা টাসকি খেলাম। কি ব্যাপার অবন্তীকে আমি নিয়ে আসতে গেলাম, আসলো না। কিন্তু এখন নিজে থেকেই এসে হাজির!
অবশ্য ভালোই হয়েছে। সে কোনো কথা না বলে চলে গেলো। আমি দরজা লাগিয়ে রুমে গেলাম, ফ্রেশ হয়ে এসে সবাই মিলে খেতে বসলাম।
খাওয়ার এক পর্যায়ে বাবা বললো……
বাবাঃ একটা কথা বলার ছিলো।
আমিঃ কি কথা?
বাবাঃ তোমাদের বিয়ের তো অনেক দিন হইছে, এবার অন্তত ভবিষ্যৎ এর কথা কিছু চিন্তা করো।
আমিঃ কি বলছো কিছুই তো বুঝতেছিনা।
আম্মুঃ বাসাটা খালি খালি লাগে, আমাদেরও তো ইচ্ছা করে নাতি/নাতনীর সাথে খেলতে।
আম্মুর কথা শুনে আমার গলায় ভাত আটকে গেলো, কাশতে শুরু করলাম।
মনে মনে বললাম এখনো ফ্লোর থেকে খাটে উঠতে পারিনি আর আম্মু বাচ্ছার চিন্তা করতেছে। আম্মু দিল্লী এখনো বহু দূর। তোমার কপালে নাতি নাই।
কিছু না বলে চুপচাপ খেয়ে উঠে গেলাম। রুমে গিয়ে বসে আছি। একটু পর অবন্তী আসলো।
আমার দিকে তাকিয়ে রইলো, দেখে মনে হচ্ছে কিছু একটা বলবে।
আমিঃ কিছু বলবেন?
অবন্তীঃ হুম একটা কথা ছিলো।
আমিঃ বলুন।
অবন্তীঃ তুমি আরেকটা বিয়ে করো।
আমিঃ কিহ! বিয়ে করবো মানে? আপনার মাথা ঠিক আছে?
অবন্তীঃ মাথা একদম ঠিক আছে, আব্বু আম্মু ঠিকই বলেছে, বাসাটা কেমন খালি খালি লাগে। উনাদের জন্য হলেও বিয়েটা করো।
আমিঃ বিয়ে করে লাভ কি হবে?
অবন্তীঃ তোমারও মনের আশা পূরণ হলো আর উনাদেরও নাতি নাতনী আসলো।
আমিঃ শুনেন বিয়েটা কোনো ছেলে খেলা নয়, যে বললেই বিয়ে করে ফেলবো। বিয়ে মানুষের লাইফে একবারই হয়। বুঝলেন,,,,,
অবন্তীঃ কিন্তু আমার লাইফে তো একাধিক। সেটাকে কি বলবে?
আমিঃ শুনেন এটা একটা এক্সিডেন্ট। আপনি তো আর ইচ্ছা করে করেন নি, পরিস্থিতির স্বীকার। আর আমি মনে করি আপনার লাইফে ২য় বিয়ে হয়নি।
অবন্তীঃ হয়নি মানে, কি বলছো?
আমিঃ জ্বি আমি ঠিকই বলছি। বিয়ের পর থেকে আপনার আর আমার সম্পর্ক সেই দেবর/ভাবির মতোই রয়ে গেলো। না আছে কোনো আন্ডারেস্টিং, না আছে শেয়ারি আর না আছে কেয়ারিং। আগে তো একটু হলেও হেসে হেসে কথা বলতেন কিন্তু বিয়ের পর থেকে তো সেটাও নাই।
অবন্তীঃ আমি তো আব্বু আম্মুর জন্য বলতেছি।
আমিঃ আম্মুর জাস্ট ইচ্ছা হইছে যে যদি একটা নাতি থাকতো তাহলে খেলতে পারতো তার মানে এই নয় যে, ইচ্ছাটা পূরন করার জন্য আমাকে আবার বিয়ে করতে হবে।
আমারওতো অনেক ইচ্ছা ছিলো ভালোভাবে পড়ালেখা টা শেষ করে ভালো একটা চাকরি করবো, মহা ধুমধামে বিয়ে করবো। ভাইয়া আর আমি মিলে অনেক সুন্দর একটা বাড়ি করবো, প্রতিদিন ভালোমন্দ খাবো কিন্তু ইচ্ছা কি পূরণ হইছে? হয়নি, কারণ একজন মানুষের সব গুলো ইচ্ছা পূরণ হয় না।
পড়ালেখা শেষ করা তো দূরের কথা পরীক্ষাটাও অন্যের সহযোগিতায় দিয়েছি। আর ভালো চাকরি সেটা তো এখন করতেছি এই যে ভ্যান গাড়ি ঠ্যালতেছি এর থেকে ভালো চাকরি আর কি হতে পারে। ভালো খাবার সেটা তো প্রতিদিনই খাচ্ছি, পানিতে পাউরুটি চুবিয়ে খাইতেছি এর থেকে ভালো খাবার আর কি হতে পারে?
আর বিয়ে সেটার কথা নাই বা বলি। এমন বিয়ে করেছি ধুমধাম তো দূরের কথা যাদের সাথে বড় হইছি, পড়ালেখা করেছি সেই বন্ধু গুলারেও এখনো বলতে পারিনি। যেখানে মানুষ বিয়ের পরে সুখি হয় ভালোভাবে থাকে সেখানে আমি খাট ছেড়ে ফ্লোরে ঘুমাই। সো একজন মানুষের সব গুলো ইচ্ছা পূরণ হয় না। আম্মু আব্বুরটাও হয়তো হবে না।
অবন্তীঃ……. (চুপ করে আছে)
আমিঃ আপনি যে বললেন আমাকে আবার বিয়ে করতে! কোন মেয়ে আমার কাছে বিয়ে বসবে? কোন বাপ তার মেয়েকে আমার হাতে তুলে দিবে? কি আছে আমার, না আছে পড়ালেখা না আছে টাকা পয়সা আর না আছে ভালো কোনো চাকরি? কিছুই নেই আমার।
তার উপর যদি শুনে আমি আরো এক বিয়ে করেছি সেখানে আমাকে মেয়ে তো দূরের কথা ঝাড়ুর বাড়ি ছাড়া কিছুই দিবে না।
আপনি বলছেন বিয়ে করার জন্য, বিয়ে করে খাওয়াবো কি? যে টাকা পাই সেটা দিয়ে নিজেও তো চলতে পারি না। এক বেলা খেলে অন্য বেলা না খেয়ে থাকি। প্রতিদিন হেটে হেটে কাজে যাই।
দুপুরে যেখানে সবাই লান্স করে সেখানে আমি পানিতে পাউরুটি চুবিয়ে খাই। সো এগুলো বাদ দেন।
অবন্তীঃ……. (আমার দিকে তাকিয়ে আছে, চোখের কোনে স্পর্শ পানি দেখা যাচ্ছে)
আমিঃ হুম এটা ঠিক যে, আমি আপনার আর আব্বু আম্মুর সব গুলো চাওয়া পূরণ করতে পারছিনা। যা যা দরকার সেগুলো দিতে পারছিনা। কিন্তু কি করবো বলেন আমিও অনেক চেষ্টা করতেছি। কিছুই হচ্ছে না। হয়তো একদিন সব হবে।
সো এসব আজাইরা কথা বাদ দিয়ে অন্য কথা থাকলে বলুন।
অবন্তীঃ তুমি ঘুমাও, অনেক রাত হইছে।
আমিঃ আপনার বান্ধবীর বিয়ে কখন?
অবন্তীঃ আগামী সপ্তাহে।
আমিঃ ওকে আমি আব্বুর কাছে ৫ হাজার টাকা দিবো। আপনি শপিং করিয়েন আর বিয়েতে কিছু একটা গিফট দিয়েন।
অবন্তীঃ লাগবে না,আমি বিয়েতে যাবো না।
আমিঃ যাবেন না কেন?
অবন্তীঃ তুমি এতো টাকা দিয়ে দিলে ঘর চলবে কেমনে?
আমিঃ সেটা আপনার না জানলেও চলবে। এখন ঘুমান,,,
আর কিছু না বলে ঘুমিয়ে গেলাম। অবন্তী কিছু বলতে গিয়েও বলনি।
মাঝরাতে কারো কান্নার শব্দে ঘুম ভেঙ্গে যায়, লাইট টা অন করে দেখি অবন্তী ভাইয়ার ছবি টা নিয়ে বসে আছে। আর কান্না করতেছে।
আমিঃ কি ব্যাপার আপনি ঘুমান নি এখনো?
অবন্তীঃ….. (চুপ করে আছে)
আমিঃ কি হইছে কথা বলেন না কেন?
অবন্তীঃ না, ঘুম আসছে না। তুমি ঘুমাও,,,
আমিঃ কেমনে ঘুমাবো, চিল্লাচিল্লির মধ্যে কি ঘুমানো যায়?
অবন্তীঃ সরি তুমি ঘুমাও।
আমি আবারও ঘুমাতে গেলাম ঘুম আসছে না, অবন্তীর হাতে ভাইয়ার ছবিটা দেখে ভাইয়ার কথা মনে পড়ে গেলো।
ঘড়ি দেখলাম ২.০০ টা বাজে, আমি উঠে বাসা থেকে বের হয়ে ভাইয়ার কবরের পাশে গেলাম।
বসে বসে কল্পনা করতে লাগলাম ভাইয়ার স্মৃতি গুলো। তারপর নিজে নিজে বলতে লাগলাম,,,,
“ভাইয়া কেমন আছিস, তোর কথা খুব মনে পড়ছে তাই চলে আসলাম। ভাইয়া তোর অবন্তীকে আমি সুখে রাখতে পারছিনা রে, কি করবো বল। সে এখনো তোকে অনেক ভালোবাসে, সব কিছুর মাঝে তোর অস্তিত্ব খুঁজে বেড়ায়।
জানিস তুই খুব লাকি, অবন্তী তোকে এতোই ভালোবাসে যে তোর জায়গায় অন্য কাওকে বসানো তো দূরের কথা, কল্পনাও করে না। জানিস ভাই সে এখনো তোর ছবি নিয়ে কান্না করে।
তুই চলে যাওয়ার পর আমাদের সবার মুখ থেকে হাসিটা চলে গেছে। সব কিছু ঠিকঠাক আছে তবুও কেমন জানি একা একা লাগে।
অবন্তী এখনো তোর পথ চেয়ে বসে থাকে। ওর ধারণা তুই আসবি।
অবন্তী তোকে এতোটাই ভালোবাসে যে, আমাকে বিয়ে করার পরও সে আমাকে বলছে অন্য কাওকে বিয়ে করে সংসার করতে।
জানিস ভাই মাঝেমাঝে অবন্তীর উপর খুব রাগ হয়, ইচ্ছা করে ওরে অনেক বকা দিই কিন্তু ওর দিকে তাকালেই তোর কথা মনে পড়ে।
জানিস ভাই আমারও অনেক কষ্ট হয় তোরে ছাড়া থাকতে, চাইলেও ভেঙ্গে পড়তে পারিনা আব্বু আম্মুর কথা চিন্তা করে,,,,
ভাই তুই যেমন আমাদের সব চাওয় পাওয়া মিটিয়ে ছিলি আমি তেমন পারছিনা রে ভাই। ভাই তুই আমাকে মাফ করে দিস, দোয়া করিস আমার জন্য যেন ওদের সবার মুখে হাসি ফুটাতে পারি। “””
আরো কিছুক্ষণ সেখানে থেকে বাসায় চলে গেলাম। তাহাজ্জত এর নামাজ পড়ে নিলাম, তারপর ফজরের নামাজ পড়ে আবারও ভাইয়ার কবরের পাশে গেলাম। কবর জিয়ারত করে বাসায় এসে রেড়ি হলাম।
প্রতিদিনের মতো রওনা দিবো তখন অবন্তী আসলো….
অবন্তীঃ জুয়েল, একটা কথা বলতাম।
আমিঃ হুম বলেন।
অবন্তীঃ বিয়েতে তুমি যেতে পারবে?
আমিঃ আমি গিয়ে কি করবো, আপনার বান্ধবীর বিয়ে আপনিই যান।
অবন্তীঃ আমার অন্য বান্ধবীরা সবাই ওদের হ্যাসবেন্ডকে সাথে নিয়ে যাবে।
আমিঃ সমস্যা কি, আপনি একা যাবেন।
অবন্তীঃ প্লিজ না করো না।
আমিঃ আমার কাজ আছে, আপনি নিজেই চলে যাবেন।
অবন্তীঃ তুমি না গেলে আমিও যাবো না। আমার নিজেরওতো একটা পার্সোনালিটি আছে।
আমিঃ তারমানে আপনার পার্সোনালিটি রক্ষা করার জন্য আমাকে নিয়ে যাবেন!
অবন্তীঃ না তোমাকে……
আমিঃ হইছে আর মিথ্যা বলতে হবে না। আমি যাবো না।
এমন সময় আব্বু আসলো,,,,
আব্বুঃ কি ব্যাপার এতো চিল্লাচিল্লি কিসের?
অবন্তীঃ দেখো না আব্বু তোমার ছেলেকে আমার সাথে যাওয়ার জন্য বলছি সে নাকি যাবে না।
বাবাঃ কিরে সত্যি নাকি?
আমিঃ আব্বু আমার কথাটা শোনো,,,,
বাবাঃ কোনো কথা শোনার দরকার নেই। তুই বিয়েতে যাবি এটাই ফাইনাল।
কিছু বলতে গিয়েও পারলাম না, সোজা বাসা থেকে বের হয়ে কাজে চলে গেলাম।
রাস্তায় আয়মানের সাথে দেখা হলো…..
আয়মানঃ কিরে জুয়েল! দোস্ত কি অবস্থা?
আমিঃ আছি। তোর কি খবর?
আয়মানঃ সব ঠিকঠাক, কয়েকদিন পর তো রেজাল্ট দিবে।
আমিঃ কোন দিবে জানিস?
আয়মানঃ মনে হয় ৫ তারিখ। তুই জানিস না,,,
আমিঃ না। তোর কাছেই শুনলাম,,, আগের মতো অনলাইনে থাকি না তেমন কোনো নিউজ জানা নেই।
আয়মানঃ আচ্ছা শোন তোর জন্য একটা সুখবর আছে।
আমিঃ কি?
আয়মানঃ একটা কোম্পানিতে কয়েকজন সুপারভাইজার নিয়োগ দিবে, স্নাতক কমপ্লিট করা লাগবে। তোর রেজাল্ট ভালো আসলে তুই আবেদন করিস।
আমিঃ থেংক্স দোস্ত।
আয়মানঃ অবন্তী এসেছে?
আমিঃ হুম এসেছে।
আয়মানঃ তুই নিয়ে আসছিস নাকি নিজে থেকেই এসেছে?
আমিঃ ও নিজে থেকেই এসেছে। আমি যখন ওর বাবার বাড়িতে গিয়েছিলাম ওরে আনতে তখন আসেনি। গত কাল নিজে থেকেই এসেছে।
আয়মানঃ তো এখন কি সিদ্ধান্ত নিলি? ডিভোর্স দিবি?
আমিঃ জানি না, তবে আমার মনে হচ্ছে অবন্তী ঠিকই আমাকে মেনে নিবে কিন্তু একটু সময় লাগবে। ভাইয়ার স্মৃতি থেকে আমি নিজেই এখনো বের হতে পারিনি। আর অবন্তী এতো তাড়াতাড়ি বের হতে না পারাটাই স্বাভাবিক,,,
আয়মানঃ হুম তাহলে তো ভালোই।
আমিঃ হুম। আচ্ছা দোস্ত তুই থাক আমার দেরি হয়ে যাচ্ছে। পরে বস হারামি ঝাড়ি দিবে।
আয়মানঃ আচ্ছা ঠিক আছে যা।
তারপর কাজে চলে গেলাম, রাতে আসার সময় বেতন নিয়ে আসলাম। বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে আব্বুর হাতে টাকা গুলো দিলাম।
আব্বু অবন্তীকে ডেকে টাকাটা দিলো। অবন্তী আব্বুকে বললো….
অবন্তীঃ আব্বু একটা কথা বলতাম।
আব্বুঃ হুম মা বল।
অবন্তীঃ আপনি একটু জুয়েলকে বলে দেন যাতে কালকে আমার সাথে একটু শপিং এ যায়, আমি কিছু গিফট কিনবো।
আব্বুঃ যাবে সমস্যা কি? এই জুয়েল কালকে ওর সাথে বের হইস।
আমিঃ বাবা আমার কাজ আছে,আমি পারবো না।
বাবাঃ পারবি না কেন?
আমিঃ আজকেই বেতন দিয়েছে আর কালকে যদি কাজে না যাই, পরের দিন গেলে লাথি দিয়ে বের করে দিবে।
বাবাঃ তাহলে সন্ধ্যায় যাবি।
আমিঃ তখন টিউশনি করানো লাগবে।
বাবাঃ একদিন না করালে কিছু হয় না। কালকে ওরে নিয়ে শপিংয়ে যাবি এটাই ফাইনাল।
আমি কিছু না বলে রুমে চলে গেলাম।
পরেরদিন কাজে গেলাম, সেখান থেকে এসে রেড়ি হয়ে অবন্তীকে নিয়ে বের হলাম। বিয়ের পর এই প্রথম অবন্তীকে নিয়ে বের হইছি।
একটা রিক্সা নিয়ে যাচ্ছি, আমি একটু সরে বসে আছি।
অবন্তীঃ তোমার কি আমার পাশে বসতে অস্বস্তি লাগছে?
আমিঃ না, কেন?
অবন্তী; তাহলে ওদিকে চেপে বসছো কেন? আরো ক্লোজ ভাবে বসো।
আমিঃ সমস্যা নেই,আমি ঠিক আছি।
তারপর দুজনেই চুপ,, নীরবতা ভেঙ্গে অবন্তী বললো…..
অবন্তীঃ জুয়েল!
আমিঃ হুম বলেন।
অবন্তীঃ তোমার কি মন খারাপ?
আমিঃ না কেন?
অবন্তীঃ গোমড়া মুখ করে বসে আছো তাই।
আমিঃ ওহ, না আমি ঠিক আছি।
কথা বলতে বলতে শপিংমলের সামনে চলে আসলাম।
অবন্তী অনেক গুলো গিফট দেখলো, তারপর একটা চয়েস করে ওটা কিনলো। এরপর একটা শাড়ির দোকানে গেলো, আমাকে বললো শাড়ি পছন্দ করে দেওয়ার জন্য। দোকানের মধ্যে অনেক লোক তাই কিছু না বলে নীল রঙের একটা শাড়ি পছন্দ করে দিলাম।
ভাইয়ার সাথে যখন বিয়ে হয়েছিলো তখন একদিন অবন্তী ওদের বাসায় যাওয়ার সময় একটা নীল শাড়ি পরেছিলো, সেদিন অনন্তীকে অনেক সুন্দর দেখাচ্ছিলো। সাথে ভাইয়া নীল পাঞ্জাবি পরেছিলো, দুজনকেই অনেক সুন্দর লাগছিলো।
তাই অবন্তীর জন্য নীল শাড়িটাই পছন্দ করে দিলাম।
তারপর অবন্তী আমাকে বাইরে দাঁড়িয়ে রেখে কোথায় যেন গেছে, অনেকক্ষণ পর আসলো।
আমিঃ কোথায় গিয়েছিলেন?
অবন্তীঃ ওয়াশরুমে।
আমিঃ আর কিছু নিবেন নাকি রিক্সা ডাকবো?
অবন্তীঃ রিক্সা নেওয়ার দরকার নেই, হেটে হেটে যাবো।
আমিঃ পাগল নাকি আপনি হাটবেন তাও এই রাতের বেলায়?
অবন্তীঃ কেন রাতের বেলায় হাটলে সমস্যা নাকি?
আমিঃ সেটা না।
অবন্তীঃ এতো কথা না বলে হাটো।
তারপর দুজনে হাটতে লাগলাম। খুব দারুণ একটা অনুভূতি কাজ করলো। রাস্তায় আমার আর ওর কোনো কথা হয়নি।
অনেকক্ষণ হাটার পর বাসায় গেলাম, তারপরেই……..
চলবে…….