29-01-2020, 09:29 PM
(28-01-2020, 03:10 PM)Senian Wrote: "গল্পটি একজন বিখ্যাত লেখকের একটি ছোটগল্প থেকে অনুপ্রাণিত। কোনো দেশ বা কারো অনুভূতিতে আঘাত করা এ গল্পের উদ্দেশ্য নয়৷ নিছকই যৌন আনন্দের উদ্দেশ্যে এই গল্প।"
সময়টা ১৯৭১। বর্তমান বাংলাদেশে তথা তৎকালীন পূর্বপাকিস্তানে ভয়াবহ যুদ্ধ চলছে। বিরলা বাংলার একটি ছোট্ট গ্রাম। গ্রামটি বেশ ভিতরে। গ্রামের অধিকাংশ মানুষই চাষাভুষা। শিক্ষার আলো তেমনভাবে পৌঁছায়নি তখনও। এ গ্রামে একটি প্রাইমারি কলেজ রয়েছে। ছাত্র খুব একটা হয়না৷ বাপ-মা সন্তানকে পড়ানোর চেয়ে খেতে-খামারে কাজ করাতেই চান বেশি। চারদিকে অভাব। পশ্চিম পাকিস্তানের শোষণে বাংলার অবস্থা বেশ নাজুক। কলেজটিতে চারজন শিক্ষক থাকার কথা থাকলেও আছেন দুজন৷ এখন অবশ্যি একজনই আছেন। মতিন সাহেব৷ আরেকজন শিক্ষক যুদ্ধ শুরু হবার পর চলে গেছেন, আর ফেরেননি৷ মতিন সাহেব কোথাও যাননি। যাওয়ার জায়গাও নেই। এতিম মানুষ তিনি। বাবা-মা ভাইবোন কেউই নেই। এক খালা আছে। তিনিও অনেক দূরে থাকেন৷ তারা বেঁচে আছে কিনা কে জানে। মতিন বিয়ে করেছেন বেশি দিন হয়নি৷ তার স্ত্রী সাত মাসের গর্ভবতী। স্ত্রীর এই অবস্থায় মতিন আর কোথাও যাননি। কারণ বিরল গ্রামটি বেশ ভিতরে হওয়ায় পাকিস্তানি বাহিনী এখনও এদিকে আসেনি৷ তারউপর এই গ্রামেই মুক্তিবাহিনীর ক্যাম্প আছে৷ তাই এখানে থাকাই আপাতত নিরাপদ।
মতিনের স্ত্রীর নাম নাসিমা। অল্প বয়স। ঊনিশ কি বিশ হবে৷ বিয়ের পরে স্বামীর চাকরিসূত্রে এই গ্রামে এসেছে৷ এখানে একটা ছোট্ট বাড়িতে তারা থাকে৷ নিজের বাড়ি নয়, আবার ভাড়া বাড়িও নয়৷ কলেজের কাছেই তাদের বাড়িটা৷ বেশ সুন্দর। সংসারে নতুন অতিথি আসবে৷ আর এমন সময়ই কিনা যুদ্ধ শুরু হল৷ তার বাবার বাড়িও অনেক দূরের গ্রামে। চিঠিতে এতদিন কথা হত৷ তারা জানিয়েছিল তারা ভালই আছে, সেদিকেও মিলিটারিরা যায়নি। কিন্তু এখন আর চিঠিও পাঠানো যাচ্ছেনা৷নাসিমার বেশ চিন্তা হয় বাড়ির লোকদের জন্য৷ গ্রামের বাইরে যাওয়া বিপদ৷ তাই সে স্বামীর সাথে এখানেই আছে।
একদিন বিকেলবেলা নাসিমা বাড়ির পেছেনে নিমগাছতলায় একটা মোড়া পেতে বসে ছিল। মতিন বাড়িতে নেই৷ হয়ত বাজারে গেছে৷ সেখানে গেলে দেশের খবরাখবর ভালো পাওয়া যায়। নানান মানুষ আলোচনা করে৷ নাসিমা তার ফুলে উঠা পেট নিয়ে বসেছিল আর দূরে তাকিয়েছিল৷ হঠাৎ সে দেখতে পেল ঝোপের ভেতর থেকে বেরিয়ে কে তারদিকেই আসছে৷ নাসিমা ভালো করে দেখতে লাগল৷ না এটা তার স্বামী নয়৷ লোকটার খুড়িয়ে হাঁটছে৷ আরেকটু সামনে আসতে বোঝা গেল তার পরনে খাকি পোশাক৷ একি মুক্তিযোদ্ধা? না, দেখে তো মনে হচ্ছেনা৷ তবে কি পাকিস্তানি সেনা? নাসিমার বুকের ভেতরটা কেঁপে উঠল৷ লোকটা ক্রমশই তার দিকে আসছে৷ নাসিমা এবার বুঝে গেল এটা পাকিস্তানিই৷ কি লম্বা! আর ফর্সা গায়ের রঙ। নাসিমা উঠে দ্রুত ঘরের দিকে যেতে থাকল৷ মতিনও বাড়িতে নেই৷ নাসিমা দ্রুত পায়ে হাঁটতে লাগল৷ এমন সময় পেছনে ধপ করে শব্দ হল৷ নাসিমা পেছন ফিরে দেখল লোকটা মাটিতে পড়ে গেছে৷ তার পায়ে রক্ত। সে হাঁটতে পারছেনা৷ লোকটা ক্ষীণ গলায় বলল,"বেহেনজি, পানি মিলেগা?"
লোকটা পানি খেল তৃপ্তি করে। তারপর বলল-
-ডরিয়ে মাত বেহেনজি৷ ম্যা পাকিস্তানি হু। মুক্তি ফৌজ নে হামারে উপার হামলা কিয়া৷ ম্যা ভাগকে ইদার আয়ি হু৷ আগার ও লোগ মুঝে দেখ লিয়া তো মার দেগা। মুঝে বাচালো বেহেনজি ।
কথাটা বলেই লোকটা কাঁদতে লাগল৷ নাসিমা কিছুক্ষণ বোবার মত দাঁড়িয়ে রইল৷ সে কি করবে কিছুই বুঝতে পারছেনা৷ তার স্বামী হয়ত কিছুক্ষণের মধ্যেই চলে আসবে৷ সে কি করবে? একটা পাকিস্তানি যারা কিনা এদেশের লোকদের নির্বিচারে মারছে তাকে সে বাঁচাবে? চারদিকে সন্ধ্যা হয়ে আসছে। নাসিমা হঠাৎ লক্ষ করল মতিন আসছে বাড়ির দিকে যদিও এখনও সে বেশ দূরে আছে। কিন্তু খোলা ফসলের মাঠ হওয়ায় তাকে দেখা যাচ্ছে৷ নাসিমা এখনও জানেনা কি করবে। হঠাৎ সে লোকটাকে বলল তার পেছেনে আসতে৷ নাসিমা তাকে তাদের ঘরের সাথে অন্য একটা ঘরে নিয়ে ঢুকাল৷ ঘরটাতে লাকড়ি রাখা৷ নাসিমা দরজা লাগিয়ে দিল আর লোকটাকে ইশারায় বুঝিয়ে এল যাতে কোনো শব্দ না করে৷ মতিন এর মধ্যে চলে এল৷ নাসিমার বুক ধকধক করতে লাগল৷ সে আসলে এটা কি করল? সাক্ষাৎ দুশমনকে ঘরে আশ্রয় দিল? তার স্বামী জানতে পারলে কি হবে? মতিন এসে বলল, "এ সময় বাইরে দাঁড়িয়ে আছ কেন? ভিতরে চল৷"
রাতে একবার বেরিয়ে নাসিমা ঐ ঘরটায় তালা মেরে এল৷ লোকটাকে দেখল ঘুমিয়ে আছে মাটিতে।
চলবে...
লেখাটি বাংলাদেশের সাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ এর "মিসির আলী সমগ্র" থেকে হুবুহু কপি করা। এটা চটি নয়। so sad আপনি কার্টেসি দেন নি