28-01-2020, 11:36 PM
আমার হৃদয়ে রমার অংশই সর্বাধিক। ‘না রমা জুলি নয়’ এই কথাটাই তাই বারবার করে ভেসে আসতে লাগলো। আমার তো আর কলার আইডি নেই, তাই ল্যান্ড ফোনে কে ফোন করেছে তা ওর পক্ষে বোঝা সম্ভব নয়। শেষ উপায় রমার মোবাইলে ফোন করা। যদি সত্যিই ও শর্মাজীর সাথে থেকে থাকে তাহলে আশেপাশের ট্রাফিকের আওয়াজেই আমি তা বুঝে যাবো। কল লাগালাম রমার মোবাইলে। সুইচড অফ। চোখদুটো হতাশায় বন্ধ করে নিলাম। মনিদা খুন হয়েছিল শুক্রবার। শুক্রবার অফিসে চরম ব্যস্ততা ছিল। ফিরতে একটু দেরী হবে এটা বলার জন্য ওকে ফোন করেছিলাম। একদম একি অবস্থা ছিল। ল্যান্ড ফোনে কেউ ফোন রিসিভ করেনি। রমার মোবাইলটা সুইচ অফ বলছিল। বাড়ি ফিরে দেখলাম বিছানার ওপর রমার ঘামে ভিজে প্যানটিটা পড়ে রয়েছে। সাধারনত সালোয়ার পরে বাইরে না বেরলে রমা প্যানটি ইউস করেনা। সঙ্গে সঙ্গে রমাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম ‘রমা, তুমিকি কোথাও গিয়েছিলে?’ কিছুটা চমকে উঠেছিল রমা। ও তারপর উত্তর দেয় ‘কই না তো’। আরও অনেক অনেক ঘটনা রয়েছে এবং তার সাথে যোগ হয়েছে রমার এই ফোন না ধরা। রমাকি সত্যিই আমায় ছলনা করে চলেছে। নিজের মনকে বিশ্বাস করাতে পারছিলাম না। আবার ল্যান্ড ফোনে একবার ফোন করলাম। সেই একি ক্রিং ক্রিং করে শব্দ হোল আর তারপর ফোনটা কেটে গেলো। হতাশা শুধুই হতাশা। চোখদুটো বন্ধ করে পড়ে রইলাম। এইভাবে কতক্ষন গাড়িটা চলেছে খেয়াল নেই। বাইপাশের ঠাণ্ডা হাওয়া আর সারাদিনের ধকল; সবমিলিয়ে এতো ক্লান্তি এসেছিল কখন ঘুমিয়ে পড়েছিলাম খেয়াল নেই। ড্রাইভারের প্রচণ্ড জোরে একটা চিৎকারে ঘুমটা ভাঙল। ‘স্যার, ওই যে গাড়িটা’। চোখ খুলে দেখি, বাইপাশের একধারে গাড়িটা পার্ক করা আছে। আমাদের গাড়িটা ঠিক ওর পেছনে পার্ক করা হোল। আমরা দুজনেই দৌড়ে গাড়িটার কাছে গেলাম। আবার দুটো মৃতদেহ, শর্মাজী আর শর্মাজীর ড্রাইভার। আশপাশটা সম্পূর্ণ জনহীন। একজনকেও দেখা যাচ্ছেনা। খালি কয়েকটা গাড়ি প্রচণ্ড স্পীডে বেরিয়ে চলে যাচ্ছে। ড্রাইভারের মুখের দিকে একবার তাকালাম। ভয়ঙ্কররকম ভয় পেয়ে গেছে। আমাকে ফিসফিস করে বলতে শুরু করল ‘স্যার, চলুন এখান থেকে পালিয়ে যাই, নয়ত পুলিশ কেসে ফেঁসে যাবো’। সত্যি ও ঠিকই বলছে, এই অবস্থায় যদি আমাদের কেউ দেখে ফেলে তাহলে স্বয়ং ভগবানও আমাদের বাঁচাতে পারবেনা। দ্রুত গাড়িটা স্টার্ট করে আবার অফিসের দিকে যেতে শুরু করলাম। কাল রাতে রঞ্জন খুন আর আজ সকালে চিন্ময় খুন আর এখন শর্মাজী খুন। কোন উর্বর মস্তিস্কের সিরিয়াল কিলার এতো দ্রুত খুন করার চেষ্টা করেনা কারন এতে ধরা পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা প্রবল হয়। তাহলে কেন? কেউকি পথের কাঁটাগুলোকে সরিয়ে দিয়ে নিজেকে সেফ স্থানে রাখতে চাইছে। কিন্তু কে? রঞ্জন, চিন্ময়, শর্মাজী মৃত। তাহলে কে? সন্দেহ করার মত একজনই বাকি রয়েছে তিনি বিজয়দা। মধুকর ভিলা থেকে প্রায় ফিল্মি আদবকায়দায় পালিয়ে আসার সময় থেকেই বিজয়দার ওপর আমার প্রবল সন্দেহ। কিন্তু, সত্যি বলতে বিজয়দা ঠিক কিভাবে এই ঘটনার সাথে জড়িত তা এখনো আমার কাছে পরিস্কার নয়। ভাবলাম আরও একবার রমাকে ফোন করি। বাড়ির ল্যান্ড ফোনে ফোন করে লাভ নেই কারন আমি সিওর যে বাড়িতে নেই। রমার মোবাইলে আবার একবার ফোনটা লাগালাম। অদ্ভুতভাবে এবার রিং হোল অথচ কিছুক্ষন আগেও সুইচ অফ ছিল। বার ৬-৭ রিং হওয়ার পরই রমা রিসিভ করল। আমার মাথা থেকে যেন একরাশ কালো মেঘ নেমে গেলো। ‘হ্যালো, রমা তুমি কোথায়? তুমি জানো তোমায় কতবার ফোন করেছি আমি। তোমার মোবাইল সুইচ অফ...’ আমার কথাটা সম্পূর্ণ হওয়ার আগেই রমা বেশ কাঁপা কাঁপা গলায় বলে উঠল ‘বিপ্লব, তুমি কোথায়? আমায় এক্ষুনি তোমার সাথে দেখা করতে হবে’ ওর কথাটা মোটামুটি বুঝতে পারলেও ভয়েসটা ক্লিয়ার আসছিলনা। আশপাশ থেকে বেশ কিছু বাস ট্রামের শব্দে বিশাল একটা নয়েস তৈরি হচ্ছিল। এতোটুকু বুঝলাম যে রমা খুব ভয়ের মধ্যে রয়েছে। আমি বললাম ‘রমা তুমি কোথায় আছো বল আমি এক্ষুনি আসছি’ মনে হয় রমা আমার কথাটা শুনতে পেলো না। ‘হ্যালো, হ্যালো’ বলতে বলতে লাইনটা কেটে গেলো। এ এক ভয়ঙ্কর বিপদ। রমা কোথায় আছে তা না জানলে ওকে কোনমতেই উদ্ধার করা সম্ভব নয়। আমি আবার একবার ওকে ফোন করতে যাচ্ছি দেখি আমার মোবাইলেই ফোন চলে এলো। কার ফোন না দেখে সঙ্গে সঙ্গে রিসিভ করে নিলাম। ‘হ্যালো রমা তুমি কোথায়? প্লিস বল তুমি কোথায়? আমি সত্যিই খুব চিন্তায় আছি’ আমাকে সম্পূর্ণ স্তম্ভিত করে দিয়ে ওপাশ থেকে এক পুরুষ কণ্ঠ ভেসে এলো। ‘আরে বিপ্লব বাবু আপনি কোথায় বলুন তো? কতবার বলেছি যে নিজেকে শারলক হোমস ভাববেন না। যা কিছু হবে পুলিশকে জানাবেন। আবার আপনি একা একা...’ আমার আর সহ্য হচ্ছিলনা। প্রচণ্ড জোরে চিৎকার করে বললাম ‘বিজয়দা, আমার স্ত্রী ছাড়া এই পৃথিবীতে সত্যিই আমার কেউ নেই। ওর কোন ক্ষতি যেন না হয়’ বিজয়দার উত্তরটা ছিল ভয়ঙ্কর রহস্যময়। ‘নিজেকে একটু বেশীই স্মার্ট ভেবে ফেলেছেন আপনি। রমাদেবী কি করে বিপদ কাটিয়ে উঠবেন তা আমি জানিনা। কিন্তু আপনি ভাবুন আপনি নিজের বিপদটা কিকরে কাটাবেন?’ যেন মাথার ওপর বাজ পড়ল। বিজয়দা কি আমায় হুঁশিয়ারি দিচ্ছেন। নিজের অজান্তেই বলে ফেললাম ‘আপনি কি বলতে চান?’ সঙ্গে সঙ্গে ওপাশ থেকে ঠাণ্ডা গলায় যা ভেসে এলো তা আমার হৃদয়ে কম্পন ধরাতে বাধ্য। ‘যেদিন মনীন্দ্র বাবু খুন হয়েছিলেন হোটেলের ঠিক বাইরে আপনার স্কুটার পার্ক করা ছিল। হোটেলের পারকিং লিস্টে আপনার স্কুটারের নাম্বার পাওয়া গেছে। পার্ক করেছিলেন ঠিক ৯-১০.০০ এর মধ্যে। মনিবাবুকে ওপর থেকে নীচে ফেলে দেওয়া হয় ঠিক সাড়ে ৯ টার সময়’ আর সত্যিই নিজেকে সংবরন করা সম্ভব ছিলনা। প্রচণ্ড জোরে চিৎকার করে বলে উঠলাম ‘বিজয়দা আপনি কি মনে করেন খুনগুলো আমি করছি। আর আপনি বোধ হয় এটা ভুলে গেছেন যে হোটেলে মনিবাবু উঠেছিলেন তার ঠিক উল্টো দিকেই আমার অফিস। অফিস যাওয়ার পথে হোটেলটা বাঁ দিকে পরে তাই মাঝে মধ্যে ওখানে আমি গাড়িটা পার্ক করে দি। সেদিন অর্ধেক রাস্তা যাওয়ার পর আমি ফেরত আসি। শর্মাজীর লোণের কাগজ অফিসেই ফেলে এসেছিলাম। ওটাই আনতে যাই। সাক্ষী হিসেবে আমি...’ আর বলতে পারলাম না, কিকরে বলি সাক্ষী হিসেবে আমি শর্মাজীর নাম বলতে পারি, ও তো মৃত। ফোনে হলেও বিজয়দার অট্টহাস্য চিনতে আমার খুব একটা অসুবিধে হলনা। ‘সাক্ষী হিসেবে কার নাম আপনি পেশ করবেন বিপ্লব বাবু? শর্মাজী? শর্মা তো মরে ভূত হয়ে গেছে’ আমার মাথাটা বনবন করে ঘুরতে শুরু করে দিলো। শর্মাজী যে মারা গেছে তা বিজয়দা কিকরে জানলেন? আমার কোন জবাব দেওয়ার আগেই বিজয়দা বলে উঠলেন ‘চিন্ময়ের খুন হওয়ার সময়ও ঘটনাস্থলে আপনি ছিলেন’ এবার আর আমার পক্ষে নিজেকে সংবরন করা সম্ভব ছিলনা। চেঁচিয়ে বলে উঠলাম ‘রাষ্ট্র ব্যাবস্থা আপনাদের অস্ত্র দিয়েছে, শক্তি দিয়েছে তার মানে তো এটা নয় যা ইচ্ছে তাই বলবেন। চিন্ময়ের খুন হওয়ার সময় তো আগে ঘটনাস্থলে আপনি পৌঁছেছিলেন’ আমার কথা সম্পূর্ণ হওয়ার আগেই বেশ জোরে একটা অট্টহাস্যের সাথে বিজয়দা বলে উঠলেন ‘কই না তো আমি তো ঘটনাস্থলে খুন হওয়ার অনেক পরে গেছিলাম। এক সোর্স এর দেওয়া ইনফরমেশন পেয়ে গেলাম আর দেখি আপনি দাঁড়িয়ে আছেন, আপনার হাতে রক্তের দাগ। কি বিপ্লব বাবু, চার্জশিটটা কেমন হবে বলুন তো? ওহ মিডিয়া থেকে পলিটিসিয়ান প্রত্যেকেই একদম চেটে পুটে খাবে’ নিজের কানকেই বিশ্বাস হচ্ছিলনা। কিছুটা হতাশার সুরে আমি বললাম ‘বিজয়দা, কোন প্রমান ছাড়া আপনি কিছুতেই আমায় গ্রেফতার করতে পারবেন না’ আবার একটা অট্টহাস্য। ‘আপনার বাবা কি এমএলএ না আপনার মেসোমশাই মন্ত্রী? কে বলল পুলিশ কোন প্রমান ছাড়া কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনা। শুধু একটা শক্তিশালী চার্জশিট বানাতে হয়’ আর সত্যি ধৈর্য রাখা সম্ভব ছিলনা। ‘আপনার যা করার করে নিন, পারলে ফাঁসি কাঠে চড়িয়ে দিন। এখনো দেশে গনতন্ত্র বলে...’ আমায় আবার থামিয়ে দিয়ে বিজয়দা কিছুটা উপহাস করেই বলে উঠলেন ‘একি ভুতের মুখে রামনাম শুনছি তো। বিপ্লব আর গনতন্ত্র। ওরে বাবা, বিপদে পড়লে যেমন মানুষ মন্দিরে যায় বিপ্লবও তাহলে গনতন্ত্রের কথা বলে’ সত্যিই আমার উত্তর দেওয়ার কিছুই ছিলনা। নিজেকে কিছুটা শান্ত করে বললাম ‘আপনি কি চান বিজয়দা? আপনি কার পক্ষে, সত্যের না মিথ্যার?’ প্রায় এক মিনিট নীরবতা। ‘আমি আপনাকে একটা শিক্ষা দিতে চাই, এমন শিক্ষা যা আপনি সারাজীবন মনে রাখবেন। কাল সকাল ৬ টায় আমি আপনাকে গ্রেফতার করব। ওপরমহল থেকে এই কেসটার চার্জশিট বানিয়ে ফেলার জন্য প্রচুর চাপ দিচ্ছে। আমার কাছে যা মেসিনারি আছে তাতে অনায়াসেই আপনাকে গ্রেফতার করা যায়’ আমার মুখ দিয়ে একটাও কথা বেরোল না। জানি বাঘের মুখে পড়ে গেছি, তবুও ঠাণ্ডা মাথার মানুষকে ছুঁতে বাঘও দুতিন বার ভাবে। তাই নিজেকে একটু সংবরন করে বললাম ‘বিজয়দা, যদি আমি পালিয়ে যাই তাহলে?’ আবার একটা অট্টহাস্য। ‘আপনি তো ড্রাইভারের পাশে বসে আছেন তাই তো। একবার আড় চোখে ওর প্যান্টের পকেটের দিকে তাকান’ কিছুটা বিস্মিত হয়েই আমি তাকালাম। প্যান্টের পকেটটা উঁচু হয়ে রয়েছে। ‘কি দেখলেন আর কি বুঝলেন?’ আমি ভেবেচিন্তে কিছু জবাব দেওয়ার আগেই বিজয়দা বললেন ‘ও পুলিশের ইনফরমার। ৭ বছর জেল খেটে এখন জামিনে মুক্ত। আমার এক বাক্যে ও আপনার মাথায় টুক করে একটা গুলি মেরে লাশটা বাইপাশে ফেলে চলে আসবে’ ভয়ে আমার হাত পা থরথর করে কাঁপতে শুরু করে দিলো। চুপ করে বসে থাকলাম। ‘পালাবার কোন চেষ্টা করবেন না। আপনাকে প্রতি মুহূর্তে কেউ না কেউ নজর রাখছে’ আমি জানি আমি চক্রব্যূহের মধ্যে পড়ে গেছি। এখান থেকে পালানো প্রায় অসম্ভব। মোবাইলটা কানে দিয়ে চুপ করে বসে থাকলাম। আবার একবার আড় চোখে ড্রাইভারের দিকে তাকালাম। ‘বিজয়দাকে আমার প্রনাম জানাবেন’ ড্রাইভারের কথায় আমার বুকের ধুকপুকানিটা ১০০ গুণ বেড়ে গেলো। ‘বিপ্লব বাবু, শারলক হোমস হওয়ার জন্য আমাদেরকে ২ বছরের ট্রেনিং দেওয়া হয়। আপনাদের মত সাধারন লোক যদি শারলক হোমস হয়ে যায় আমরা খাবো কি!’ আমার কাছে কোন দ্বিতীয় রাস্তা ছিলনা, শুধুমাত্র বিজয়দার কথা শুনে যাওয়া ছাড়া। ‘এই পুলিশের চাকরিটা করার জন্য আমি ২ খানা এসি ঘরের চাকরি ছেড়েছি বিপ্লব বাবু। আপনি তো এখনো জুলিকেই খুঁজে বার করতে পারলেন না। ওহ সরি, সত্যি বলতে চিনতে চাইলেন না। ভালোবাসা, বুঝলেন বিপ্লব বাবু ভালোবাসা এটা মানুষকে অন্ধই বানিয়ে এনেছে চিরকাল’ ফোনটা কেটে দিলেন বিজয়দা। ওনার শেষ কয়েকটা কথা হয়ত আমার কাছে অমৃতবানীর সমান। সত্যি ভালোবাসা, এই শব্দটার জন্য আমি কেরানী হয়েই জীবনটা কাটিয়ে দিলাম। চোখ দুটো বুজে ভেবে চলেছি, দেখি আবার ফোন। জানি রমাই ফোনটা করেছে। কিছুতেই মন চাইছিলনা ফোনটা রিসিভ করতে। বারবার মায়ের কথাগুলো মনে পড়ে যাচ্ছিল ‘বিপ্লব বাবা, সোনা আমার, আমাদের কথাও একটু ভাব। তুই একটা নিম্নবিত্ত পরিবারের ছেলে। এভাবে একটা মেয়ের জন্য পাগল হয়ে যাস না বাবা। কত সরকারী চাকরির পরীক্ষা বেরোয়, ওগুলোর জন্য পড়, তুই একটা সরকারী চাকরি পেলে আমাদের অবস্থা ফিরে যাবে, কত কষ্ট করে তোকে আমরা পড়িয়েছি বল তো?’ সেদিন নিজেকে সামলাতে পারিনি কেঁদে মায়ের কোলে মাথা গুঁজে দিয়েছিলাম। ‘মা, আমি রমাকে ছাড়া বাঁচব না মা। ওর বাড়িতে আমাদের বিয়েটা কিছুতেই মেনে নেবেনা। আমাকে একটা চাকরি জোগাড় করতেই হবে মা। নয়ত আমি রমাকে হারিয়ে ফেলব’ মায়ের চোখেও জল ছিল, ‘দেখ যা ভালো বুঝিস, তবে তোর বাবাও মানবে না। তোর জন্য আমরা সবই ছেড়েছি। তোর বাবা, কখনো মানবে না’ না আমার বিয়েটা আমার বাবা মেনে নেয়নি কখনো। প্রথমে এই ব্যাঙ্কের চাকরিটা জোগাড় করা তারপর রমাকে বিয়ে করে একটা ভাড়া বাড়িতে উঠলাম। শ্রেনী বৈষম্যই এই সমাজের সবচেয়ে বড় রোগ। অনেক পরে বুঝেছি, একটা বড়লোকের মেয়েকে বিয়ে করেই জীবনটা নষ্ট করেছি। মায়ের কথা, বাবার কথা, পুরনো বন্ধুদের কথা এগুলো যত মনে পড়ছিল, বুকের মধ্যে একরাশ ঘৃণা জমা হচ্ছিল। ফোনটা বাধ্য হয়েই রিসিভ করলাম। ‘বিপ্লব, আমার কথাটা মন দিয়ে শোন...’ ভালো লাগছিলনা আর রমার ওই ন্যাকা ন্যাকা মিষ্টি মিষ্টি কথাগুলো শুনতে। ওকে মাঝপথেই থামিয়ে দিলাম। ‘রমা, তুমি কি সত্যিই আমায় ভালোবাসো? পারবে আমি যদি তোমায় এক্ষুনি হাওড়া ব্রিজ থেকে ঝাঁপ দিতে বলি, ঝাঁপ দিতে। রমা তোমাকে না পেলে সত্যিই আমি আত্মহত্যা করতাম। রমা তুমি আমায় ঠকিয়েছ। রমা আমার ওই বস্তাপচা আইডিওলজিই ঠিক। শ্রেনী চরিত্রই শেষ কথা। আমার উচিত হয়নি তোমার মত একটা বড়লোকের আদুরে মেয়েকে ভালোবাসা। তোমার জন্য আমি আমার বাবা মার কাছে ছোট হয়ে গেছি’ আমি নিজেও বুঝতে পারিনি যে আমার কণ্ঠস্বর ক্রমশ এতো তীব্রতর হয়ে যাবে। ট্যাক্সিচালক কিছুটা ঘাবড়ে গিয়েই গাড়িটা রাস্তার একপাশে দাঁড় করায়। ফোনের অপর প্রান্ত থেকে তখন রমার ফুঁপিয়ে কেঁদে ওঠার শব্দ ভেসে আসছে। ‘বিশ্বাস কর বিপ্লব, আমি তোমায় ঠকাই নি। আমি তোমায় আজও ভালোবাসি আগের চেয়ে অনেক বেশী ভালোবাসি। আমি প্রতি মুহূর্তে তোমার খেয়াল রাখার চেষ্টা করি’