28-01-2020, 11:35 PM
রঞ্জন আমায় কোনোদিন জানায়নি কোন নামে ওর আকাউন্ত আছে। শুধু এটাই জানি তোমাদের ব্যাঙ্কেই ওর আকাউন্ত আছে। তুমি যেভাবে হোক আমায় বাঁচাও। নয়ত আমি নিঃস্ব হয়ে যাবো’ আমি কোন জবাব দিলাম না। শুধুই সামনের দিকে তাকিয়ে থাকলাম। ‘কি অদ্ভুত এই পৃথিবী, একদিন এই মেয়েটিই চাইত যেন কোনমতেই আমার আর রমার বিয়ে না হয়। আমার সাথে রমার বিয়ে হওয়ার পর শুধুই গঞ্জনা আর হেয় হওয়া, তাও আজ সেই মানুষটিই আমার দুহাত ধরে অনুরোধ করে চলেছে। শুধু মিতাকে নিজের পাওনা গণ্ডা ফিরিয়ে দিতে নয়, রঞ্জনের আসল আকাউন্তটির ব্যাপারে আমারও জানা অত্যন্ত জরুরি। আজ আমায় যেভাবে হোক অফিসে যেতে হবে। আজ প্রায় ৩ দিন হয়ে গেলো আমি অফিস যাইনি। লিফটে করে আমি ও মিতা দুজনেই ওপরে উঠছি। আমি ভেবে চলেছি কি করে লাখ লাখ আকাউন্তের মধ্যে থেকে একটা বেনামী আকাউন্ত আমি খুঁজে বার করব। বিজয়দার থেকেই জেনেছিলাম যে রঞ্জনের ফেক আকাউন্তটি মুম্বাইতে আছে। পরপর কতগুলো ঘটনা আমার মাথায় সেজেগুজে বসে গেলো। মনীন্দ্রদার খুন হওয়া, শর্মাজীর দ্বিতীয় প্রপসাল এবং তারপর রঞ্জনের খুন হওয়া। ‘স্পেশাল আকাউন্ত’ হ্যাঁ, সবার আগে এই টার্মটাই আমার মাথায় এসেছিল। আমাদের ব্যাঙ্কে কিছু স্পেশাল আকাউন্ত আছে। ব্যাঙ্কের অফিসিয়ালদের পার্সোনাল রেকমেনডেশনে কিছু আকাউন্ত খোলা হয়। এর জন্য ডকুমেন্ট ও যৎসামান্যই লাগে। এই পাসপোর্ট জাতীয় কিছু হলেই যথেষ্ট। মনিদা কেন খুন হলেন? এর পেছনে কোন সুনির্দিষ্ট কারন রয়েছে। মিতার দিকে তাকিয়ে বললাম ‘মিতা তুমি বাড়িতে ঢোক, রমা আছে। আমি একটু বাইরে থেকে আসছি’। মিতা কিছু বলল না, আমিও ঝড়ের বেগে ফ্ল্যাট থেকে বেরোতে শুরু করলাম। আমাদের অফিস অনেক সকালেই খুলে যায় কিন্তু স্টাফরা সবাই ১১ টা নাগাদ আসে। এটাই পারফেক্ট সময়। দ্রুত স্কুটারটা স্টার্ট দিয়ে অফিসের দিকে যেতে শুরু করলাম। অফিসে যখন পৌছাই তখন প্রায় ৯ টা। সিকিউরিটি গার্ডটা আমাকে দেখে কিছুটা ভুরু কুঁচকে উঠে দাঁড়াল। আমিও হাত পা নাড়িয়ে বুঝিয়ে দিলাম ‘হেব্বি চাপ, বাপু। কাজ করতে হবে নয়ত স্যাক হয়ে যাবো’। দ্রুত অফিসে ঢুকে পড়লাম, হ্যাঁ সত্যিই আমি ছাড়া অন্য কোন স্টাফ এই মুহূর্তে নেই। কিন্তু আমার সিস্টেম থেকে তো আকাউন্ত সেকশন অ্যাকসেস করা যায়না। অতএব অন্য কারুর সিস্টেমে হাত মারতে হবে। সবচেয়ে বেস্ট চিনুর সিস্টেম। ওর আলাদা কেবিন রয়েছে, মেন এন্ট্রান্স থেকে চট করে কারুর নজরও পড়বে না। সঙ্গে সঙ্গে ওর সিস্টেমটা খুলে ফেললাম। আকাউন্ত সেক্সানে ক্লিক করতেই দেখি অলরেডি লগ ইন করা রয়েছে। মাথা থেকে একটা বিশাল চাপ নেমে গেলো। বিশাল লম্বা একটা লিস্ট। কারসারটা ধরে একদম নীচের দিকে নামতে শুরু করলাম। একদম তলার দিকে স্পেশাল আকাউন্ত এর একটা কলাম। কিন্তু এখানেও লিস্টটা বেশ বড়সড়। খুঁজে বার করা যথেষ্ট চাপের। কলামের একদম শেষ রো টার নাম ‘রেকমেনডেড বাই’। যদি আমার অনুমান সঠিক হয়ে যায় তাহলে আমি ৫ মিনিটের মধ্যেই রঞ্জনের ফেক আকাউন্তটি খুঁজে বার করে দেবো। ওই রো বরাবর মনিদার নাম খুঁজতে শুরু করলাম। কারসার ক্রমশ নীচের দিকে নামছে কিন্তু মনিদার নাম নেই। আমারও হতাশা বেড়েই চলেছে। কারসারটা একদম শেষে এসে থেমে গেলো। সবার শেষে পেলাম একটি আকাউন্ত, নাম সুধীররঞ্জন গুপ্তা, রেকমেনডেড বাই মনীন্দ্র বসু। আমার আর বুঝতে কোন অসুবিধেই রইলনা এটাই রঞ্জনের ফেক আকাউন্ত। ঘড়ির দিকে তাকালাম ৯ টা ১০। অর্থাৎ হাতে এখনো বেশ কিছুটা সময় রয়েছে আমার। ক্লিক করলাম, আকাউন্তটির ওপর। সাথে সাথে সম্পূর্ণ আকাউন্ত ডিটেলস আমার হাতে চলে এলো। নিউ জেনারেটেড পেজটায় আমার চোখ পড়তেই হার্ট ফেল হওয়ার উপক্রম হোল। ‘নেট ব্যালেন্স ৮০ লাখ’। আকাউন্ত ডিটেলসটা একবার মিলিয়ে দেখার জন্য ক্লিক করলাম। হ্যাঁ, যা ভেবেছি ঠিক তাই। জালী পাসপোর্ট দিয়ে ফেক আকাউন্ত। এটা রঞ্জনের ই ফেক আকাউন্ত। শালা, মানুষ দুবেলা খাবার পেতে মাথার ঘাম পায়ে ফেলছে আর এরা খোলাম কুচির মত কালোটাকা নিয়ে ফুর্তি করছে। হথাত মোবাইলটা বেজে উঠল। সবার আগে সিস্টেমটা বন্ধ করলাম। কারন এটাকে খুলে রাখা উচিত নয়। ফোনটা রিসিভ করতে যাবো দেখি তার আগেই ফোনটা কেটে গেলো। এইসময় কে ফোন করল? কল লিস্ট হাতড়ে বুঝলাম চিন্ময় ফোন করেছে। চিন্ময়? কিন্তু কেন? সঙ্গে সঙ্গে ফোনটা লাগিয়ে দিলাম। রিং হয়েই গেলো কিন্তু চিনু ফোনটা রিসিভ করলনা। আমার উদ্বেগ হুহু করে বাড়তে শুরু করল। চিনু আমায় কি জানাতে চায়। মধুকর ভিলায় যে আসলে চিনুই আমাদের দুজনকে বার করেছে সে ব্যাপারে আমি নিশ্চিত। আমি আবার কল করতে যাচ্ছি এমন সময় দেখি চিনুর ই ফোন চলে এলো। ‘বিপ্লবদা আপনি কোথায়? আমি আপনাকে এক্ষুনি একটা ম্যাসেজ করেছি চেক করুন। ওই ম্যাসেজটার মধ্যে অনেককিছু রয়েছে। বিপ্লবদা আমি কিছুক্ষন পরে ফোন করছি। আমি বিশাল বিপদে’ আমি কিছু বলার আগেই চিনু ফোনটা কেটে দিলো। নতুন এক রহস্য। ফোনটা ভালো করে চেক করলাম, না কোন ম্যাসেজ আসেনি। আসলে অফিসের মধ্যে নেটওয়ার্কের এতো প্রবলেম যে ম্যাসেজ খুব কষ্টে ইনবক্সে ঢোকে। কিন্তু এটা বেশ ভালো মতই বুঝতে পারছিলাম যে এই ম্যাসেজটা অত্যন্ত জরুরি। যদি এক্ষুনি পাঠিয়ে থাকে, অফিসের বাইরে গেলে ম্যাসেজটা রিসিভ করার একটা সম্ভাবনা থেকে যায়। আমি প্রায় রুদ্ধশ্বাসে দৌড়ে অফিসের বাইরে চলে গেলাম। হাতে মোবাইলটা নিয়ে অপেক্ষা করছি, এমনসময় ম্যাসেজ রিং টোন টা বেজে উঠল। সঙ্গে সঙ্গে ইনবক্স ওপেন করলাম। এ এক অদ্ভুত ম্যাসেজ। এতটুকু বুঝলাম যে বলতে চাইছে রঞ্জন ই হোল শান। সেটা আমি গতরাতে মধুকর ভিলাতেই জেনে গেছিলাম। আর ২৫ শে মাঘ আমার ছেলের মৃত্যুদিন। এই দুটোর মধ্যে কি সম্পর্ক? একমাত্র চিনুই আমায় ভালো করে বুঝিয়ে সব বলতে পারে। সুতরাং আবার চিনুকেই ফোন লাগালাম। ওপাশ থেকে ‘হ্যালো, হ্যালো, হ্যালো বিপ্লবদা শুনতে পাচ্ছেন? হ্যালো হ্যালো’ এই কথাটাই ভেসে আসছে। আমি যত বলছি ‘হ্যাঁ চিনু আমি সব শুনতে পাচ্ছি’ ততই একি কথা ওপাশ থেকে ভেসে আসছে। বেশ কিছুক্ষন এরকম চলার পর চিনু বলে উঠল ‘বিপ্লবদা, আমি কিছুই শুনতে পাচ্ছিনা। আমি এই মুহূর্তে গাড়িতে। আপনি কোনা এক্সপ্রেসওয়ে ধরে এগিয়ে আসতে শুরু করুন। আমার পেছনে লোক লেগেছে। মনে হয় বাঁচব না। আর হ্যাঁ, বিজয়দাকে...’ হথাত লাইনটা কেটে গেলো। শালা কোনা এক্সপ্রেসওয়ে কি পাড়ার গলি, যে চিনুকে তুড়ি মেরে খুঁজে বার করব। তবুও আমায় যেতেই হত। স্কুটারটায় স্টার্ট মারলাম। যতটা স্পীডে এই স্কুটারটা চালানো যায় ঠিক ততটাই স্পীডে চালাচ্ছিলাম। একটু সকাল সকাল হওয়ায় সেভাবে ট্রাফিকের প্রবলেম ও হয়নি। বাধ সাধল রবীন্দ্র সদনের কাছে এসে। বিশাল একটা জ্যাম। কিছুই করার নেই, স্টার্টটা বন্ধ করে দাঁড়িয়ে পড়লাম। হথাত ই চোখে পড়ল বেশ কিছুটা দূরে একটা পুলিশের জিপ। কলকাতার রাস্তায় পুলিশের জিপ থাকাটা অস্বাভিক কিছু নয়। কিন্তু আমার মনে কিছু জটিল সমীকরন কিলবিল করে চলেছে। একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকলাম ওইদিকে। হথাত ই জটিল বহুঘাত সমীকরনের সমাধান হয়ে গেলো। গাড়ির ভেতর থেকে নেমে এলো বিজয়দা। হেঁটে কিছুটা গিয়ে ট্রাফিক পুলিশকে কিছুটা ধমকের স্বরে কিছু বললেন। আমি চুপ করে তকিয়ে আছি ওই দিকেই। ধাতানি খেয়ে ট্রাফিক পুলিশটাও কিছুটা তাড়াহুড়ো করে গাড়িগুলোকে এগিয়ে যেতে নির্দেশ দিলো। তাহলে কি বিজয়দাই? অল্প কিছুক্ষনের মধ্যেই ট্রাফিক ক্লিয়ার হয়ে গেলো। আমিও প্রচণ্ড বেগে স্কুটারটা ছোটাতে শুরু করলাম। কিন্তু পুলিশের জিপের সাথে কি আমার মধ্যবিত্ত স্কুটার পারে। কিছুক্ষনের মধ্যেই বিজয়দার জীপটা আমার নজরের বাইরে চলে গেলো। মনে মনে সঙ্কল্প করলাম যেভাবে হোক আমি চিনুকে বাঁচাবো। ক্রমশ সামনের দিকে এগিয়ে যেতে লাগলাম। আবার একটা জ্যাম। আশেপাশে ভালো করে লক্ষ্য করলাম। না পুলিশের জীপটা আর দেখা যাচ্ছেনা। হতাশা ক্রমশ আমাকে গ্রাস করে চলেছে। তাহলে কি আমি সত্যিই চিনুকে বাঁচাতে পারবো না। কিছুক্ষনের মধ্যেই ট্রাফিক ক্লিয়ার হয়ে গেলো ও আমি সোজা চলতে লাগলাম। এরপর রাস্তাটা সোজা হাইওয়েতে উঠেছে, আর সেরকম জ্যামে পড়ার কোন সম্ভাবনা নেই। কখন যে দ্বিতীয় হুগলী সেতু পেরিয়ে গেছি খেয়াল করিনি। কিছুটা দূরে একটা লাল গাড়ি দাঁড়িয়ে। চিনুর গাড়িটা আমি চিনি, এটা চিনুরই গাড়ি। আরও কিছুটা আগে যেতে বুঝলাম তার ঠিক পেছনে পুলিশের জিপও দাঁড়িয়ে। আমি একদম গাড়িটার পাশে এসে দাঁড়ালাম। ভেতরে দুটো মৃতদেহ। একটা চিনুর একটা চিনুর ড্রাইভারের। পেছনে জিপের ওপর হেলান দিয়ে বিজয়দা কাউকে ফোন করছেন, সম্ভবত থানা থেকে লোক পাঠানোর জন্য। আমাকে দেখে ফোনটা একটু কান থেকে নামিয়ে বলে উঠলেন ‘একি বিপ্লব বাবু আপনি এখানে?’ এর উত্তর দেওয়ার কোন ইচ্ছে আমার ছিলনা। শুধু জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছে হোল ‘আপনি এখানে কি করে?’ কিন্তু পারলাম না। আমাকে চুপ করে থাকতে দেখে বিজয়দা আবার ফোনে কথা বলতে শুরু করলেন। ‘হ্যাঁ, একটা এ্যাম্বুলেন্স আর ৪ জন পাঠাও’ ফোনটা রেখে আমায় বললেন ‘প্রচুর চেষ্টা করলাম কিন্তু বেচারাকে বাঁচাতে পারলাম না’। আমার মুখ দিয়ে একটাও শব্দ বেরোল না। মাথার মধ্যে একটাই চিন্তা ঘুরে বেড়াচ্ছে, তাহলে কি বিজয়দাই? চিনুর মৃত্যুর সাথে সাথে রহস্য সমাধানের একটা মুখ বন্ধ হয়ে গেলো। আমি একদৃষ্টিতে চিনুর মুখের দিকে তাকিয়ে আছি। আমার আর রমার শপিং মলে যাওয়া, একটা ছিঁচকে চোরের রমার ভ্যানিটি ব্যাগ চুরি করা, আমার পেছন থেকে চিনুর দৌড়, বেশ কিছুক্ষন পর ডান হাতে ক্ষত নিয়ে চিনুর ফিরে আসা, গায়ে একটা উগ্র সেন্ট, চিনুর রমাকে সিডিউস করা, আবার আমাকে কিছু অঙ্গভঙ্গি করে ওখান থেকে চলে যাওয়ার ইঙ্গিত করা, অবশেষে আমায় ফোন ও একটা অদ্ভুত ম্যাসেজ পাঠানো; সবকিছুকেই একটা সরলরেখায় নিয়ে চলে এসেছিলাম। কিন্তু চিনুর মৃত্যুতে সবকিছু কেমন এলোমেলো হয়ে গেলো। রমার চিঠিটা থেকে বুঝেছি শানের সহযোগী মোট ৫ জন। প্রত্যেকেই পুরুষ। অবিলম্বে খুন হয়ে যাওয়া প্রত্যেকে শানের সহযোগী হওয়ার প্রবল সম্ভাবনা। সেইরকম ভাবেই ভেবে নিয়েছিলাম। মনিদা, রবি, ও রঞ্জন ওরফে শান অবিলম্বে খুন হয়ে গেছে। শানের আরও দুজন সঙ্গী রয়েছে। এই দুজন কারা? এই মুহূর্তে সন্দেহের তালিকায় বেশ কয়েকজন। তারমধ্যে একজন নিশ্চিত, কারন মধুকর ভিলায় আমি তার উপস্থিতি লক্ষ্য করেছি, সে হোল শর্মাজী। কিন্তু অপর জন কে? চিন্ময়? ফ্ল্যাটের সেই সিকিউরিটি গার্ড, শান্তনু? নাকি অন্যকেউ। মানুষের সবচেয়ে উত্তেজনা প্রবন ইন্দ্রিয় হোল সন্দেহ। সেই ষষ্ঠ ইন্দ্রিয়ই বারবার করে আমায় জানান দিচ্ছে, শানের দ্বিতীয় সহযোগী আর কেউ নয় বিজয়দা। এইসবই ভাবছিলাম, হথাত বিজয়দাই অদ্ভুত একটা প্রশ্ন করে উঠলেন ‘আচ্ছা, বিপ্লব বাবু, একটা অদ্ভুত জিনিষ খেয়াল করেছেন; শেষ দুখানা খুনে আর সেই আফ্রিকান বিষটি ব্যাবহার করা হচ্ছেনা’ আমি অন্যমনস্ক ছিলাম। বিজয়দার আকস্মিক এই প্রশ্নে আমি কিছুটা চমকে গিয়েই ওনার দিকে তাকালাম। বিজয়দার মুখে অদ্ভুত এক সন্তোষজনক হাঁসি। কিছুটা অপ্রস্তুত হয়েই উত্তর দিলাম ‘আসলে মনে হয় ওরা পুলিশএর চোখে ধুলো দেওয়ার জন্য...’ আমাকে মাঝপথেই থামিয়ে দিয়ে বিজয়দা প্রচণ্ড জোরে অট্টহাস্য করে উঠলেন। প্রায় মিনিট দুয়েক পরে ওনার হাঁসি থামল। হাঁসতে হাঁসতেই কিছুটা অবজ্ঞার ছলে আমায় বললেন ‘বিপ্লববাবু, ভাবছি পুলিশের চাকরিটা এবার ছেড়ে দেবো। যা টাকা জমিয়েছি তা দিয়ে শ্যামবাজারে একটা পান দোকান খুলে বসে যাবো’ আবার সেই বিচ্ছিরি একটা হাঁসি। ‘কেন জানেন? শালা, পুলিশের কোন সম্মান নেই। দিনরাত পলিটিসিয়ানের পোঁদে পোঁদে ঘোরা, মাঝেমাঝে পাবলিকের ক্যালানি তবুও নিজেদের একটা বেশ হিরো হিরো লাগত। কিন্তু আজকাল তো দেখছি ব্যাংকাররাও শারলক হোমস হয়ে যাচ্ছে’ বিজয়দার এই বিদ্রুপ আমার আর সহ্য হচ্ছিলনা। কিছুটা মেজাজ হারিয়েই বলে ফেললাম ‘আপনি কি বলতে চান বলুন তো? আমাকে এইসব বলবেন না। আমায় চিন্ময় কিছুক্ষন আগে ফোন করেছিল। ও বলল ও বিপদে পড়েছে, কোনা এক্সপ্রেসওয়ে বরাবর আসতে। আমাদের ওখানেই দেখা হয়ে যাবে। আর আপনাকে...’ ‘আমায় কি? আমায় না জানাতে বলেছিল তাই তো’ বিজয়দার শেষ কথাটার কোন উত্তর আমার কাছে ছিলনা। কারন সত্যিই চিনুর শেষ বাক্যটা আমি পরিস্কারভাবে শুনতে পাইনি। ‘আর হ্যাঁ, বিজয়দাকে...’ এটা শোনার পরই লাইনটা কেটে গেছিল। এই বাক্যটা তো মোট দুভাবে সম্পূর্ণ করা যায়। ‘আর হ্যাঁ বিজয়দাকেও খবরটা দিয়ে দিন অথবা আর হ্যাঁ বিজয়দাকে খবরটা দেবেন না কারন উনি ওদেরই লোক’ এর মধ্যে কোনটা সত্যি আর কোনটা ভ্রম? এর উত্তর আমার কাছে নেই।