28-01-2020, 11:35 PM
বিজয়দাকে এর আগে আমি কখনো নার্ভাস হতে দেখিনি। আজ কেন জানিনা ওনার চোখে মুখে বিশাল একটা চিন্তার ছাপ, যেন উনি বুঝি ধরা পড়ে গেছেন কারুর হাতে। আমার আর এই দৃশ্য সহ্য হচ্ছিলনা। আমি পেছন ঘুরে রমার দিকে তাকিয়ে বললাম ‘রমা যাও তৈরি হয়ে নাও। আমাদের এক্ষুনি বেরোতে হবে’ রমা কিছুটা ঘাবড়ে গেলো, আর সাথে সাথে বেডরুমের মধ্যে ঢুকে দরজাটা লাগিয়ে দিলো। রমা ভেতরে প্রবেশ করার পর কিছুটা অন্যমনস্ক হয়েই বিজয়দা বললেন ‘শি ইস বিউটিফুল’। বিজয়দার ওপর সন্দেহ আমার ক্রমশ বেড়েই চলেছে। মুখ দিয়ে বেফাঁস কথা বেরিয়ে গেছে এটা বিজয়দা বেশ ভালোই বুঝতে পারলেন। সঙ্গে সঙ্গে নিজেকে সংবরন করে উনি বললেন ‘এখন বাজে সাড়ে ৬ টা। রঞ্জন বাবুর মিসেস আর ১ ঘণ্টার মধ্যেই কলকাতা পৌঁছে যাবেন’ ওনার কথা শুনে আমার হুঁশ ফিরল। হ্যাঁ, সত্যিই তো আমিও তো মিতাকে জানাইনি। অথচ মিতাকে আমারই জানানো উচিত ছিল। এর চেয়েও অদ্ভুত যা হোল, সব জেনেও মিতা কেন আমাদের কিছু জানালো না। যতই নাকউঁচু হোক ও, এই মুহূর্তে ওর পাশে দাঁড়ানোর মত তো শুধুই আমি আর রমা। ‘আচ্ছা, বিপ্লব বাবু, মিতা দেবীর সম্বন্ধে আপনার কি মত?’ প্রশ্নটা শুনে আমি কি বলব তাই বুঝতে পারলাম না। ‘না, মানে আমি বলছি, মিতা দেবী কি কোনভাবে এইসবের সঙ্গে যুক্ত’ সত্যি বলতে মিতার ব্যাপারে আমিও কখনো ভেবে দেখিনি। এতটুকুই জানি, মিতা প্রচণ্ড অহংকারী। হয়ত নিজের স্বামী ও আপনজনের চেয়েও টাকাকেই ও বেশী ভালোবাসে। আর এরচেয়েও অদ্ভুত হোল আমার বিয়ের পর থেকে মিতা আমাদের বাড়িতে মাত্র ৫ বার এসেছে। তার মধ্যে ২-৩ বার বাবাই প্রচণ্ড অসুস্থ এই খবর শুনে। ‘এই ব্যাপারে আমি সেরকম কিছুই জানিনা আর ভাবিওনি’ এই বলেই আমি ব্যাপারটা এড়িয়ে গেলাম। কিন্তু গুরু মস্তিস্কে ভর হওয়া প্রদোষ মিত্তিরকে কি করে আঁটকে রাখি। এই মুহূর্তে সন্দেহের তালিকায় মোট ৩ জন চলে এলো বিজয়দা, শর্মাজী ও নবতম সংযোজন মিতা, রমার দিদি। রমা, রেডি হয়ে আমাদের কাছে এসে দাঁড়িয়েছে। ওকে দেখা মাত্রই বিজয়দা টপিকটা সম্পূর্ণ চেঞ্জ করে দিলেন। যেন উনি চাননা রমা কিছুতেই এই ব্যাপারে কিছু জানুক। ‘চলুন, আমাদের এবার বেরনো উচিত। আর হ্যাঁ, মিসেস পোদ্দার, আপনি কিন্তু নিজেকে একটু সংবরন করবেন। কারন মৃতদেহের অবস্থা শোচনীয়’ হ্যাঁ, এই কথাটা বিজয়দা সত্যিই বলেছেন। রমার শরীরের যা অবস্থা তাতে সত্যিই ওকে এরকম বীভৎস একটা মৃতদেহ দেখতে না দেওয়াই উচিত। আমি তাই বিজয়দাকে বললাম ‘আচ্ছা, বিজয়দা, মিতা তো আসছেই, আমিও আছি তাহলে কি রমাকে আর নিয়ে যাওয়ার কোন দরকার আছে?’ আমার কথা শুনে বিজয়দা একবার রমার মুখের দিকে তাকালেন এবং সেই অবস্থাতেই বললেন ‘ওকে, মিসেস পোদ্দারকে যেতে হবেনা। কিন্তু আমি ওনার সাথে পার্সোনালি কয়েকটা কথা বলতে চাই। আপনি যদি একটু নীচে গিয়ে দাঁড়ান খুব ভালো হয়’ আমার চরম আপত্তি ছিল, কিন্তু একজন পুলিশ অফিসার একজন সাধারন নাগরিককে জেরা করতে চান, সত্যিই এতে আমার বাধা দেওয়ার কিছুই নেই। আমি মুখটা বিজয়দার কানের কাছে নিয়ে গিয়ে ফিসফিস করে বললাম ‘বিজয়দা, দেখবেন, ওর কিন্তু মানসিক অবস্থা ভালো নয়’ আমায় প্রায় অবাক করেই বিজয়দা কিছুটা জোরে হেঁসে উঠে বললেন ‘আরে ধুস, আপনি মিসেস পোদ্দারকে যতটা অসুস্থ মনে করেন উনি ততটাও নন। আপনি নীচে যান আমি আসছি’ প্রায় পিলে চমকে গিয়ে আমি রমার দিকে তাকালাম। রমার দুই চোখ যেন বারবার করে আমায় বলছে ‘বিপ্লব, এই লোকটার কাছে আমাকে একা ছেড়ে কোথাও যেওনা প্লিস’। আমি বিজয়দার চোখটার দিকেও তাকালাম। যেন এক আদিম হিংস্র পশু ওনার দুই চোখ ঠিকরে বাইরে বেরিয়ে আসছে। আমার আর কিছুই করার ছিলনা। আমি ধীরে ধীরে রুমের বাইরে বেরিয়ে গেলাম। ল্যাদ খেয়ে দাঁড়িয়ে আছি ফ্ল্যাটের বাইরে, কখন বিজয়দা রমাকে জিজ্ঞাসাবাদ সম্পূর্ণ করে আসবেন তার অপেক্ষায়। ‘বিজয়দা’ এই চরিত্রটি বড় বড় উপন্যাসের জটিল চরিত্রকে হার মানায়। কখনো মানুষটিকে চরম আদর্শবান ও সিস্টেমের প্রতি নিবেদিতপ্রান মনে হয় কখনো আবার সেই লোকটিই চরম রহস্যময়। আমি আর রমা যে হিন্দি সিনেমার আদব কায়দায় মধুকর ভিলা থেকে বেরইনি তা আমি খুব ভালো করেই জানি। এর পেছনে যে বিজয়দার অদৃশ্য হাত ও সহযোগিতা রয়েছে তা আমি ভালোই বুঝি। কিন্তু কেন? কেন এই লোকটি আমায় প্রতি মুহূর্তে এই রহস্যের সাথে ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে দিচ্ছে। কখনো কখনো বিজয়দাকে প্রচণ্ড সন্দেহ হয়। আসলে মানুষের চরিত্র একটা সাদা কালো নেগেটিভ ফিল্ম। এর সাদা স্পটগুলো সেই মানুষকে বিশ্বাস করতে বাধ্য করে আর নেগেটিভ স্পটগুলো সেই মানুষকেই চরম অবিশ্বাস করতে বাধ্য করে। আমি রয়েছি গোলকধাঁধায়, বিজয়দার অদ্ভুত ও অত্যন্ত আকর্ষক এই চরিত্র বিশ্লেষণে আমি সত্যিই অপারগ। তবে, এটা প্রচণ্ড সত্য যে এই মুহূর্তে ঘটে যাওয়া কিছু ঘটনায় আমার মনে কালো স্পটগুলোই ভেসে উঠছে। সত্যিই কি বিজয়দা এই খুনের সাথে জড়িয়ে? বিজয়দা যে ঘুষের টাকার কথা বলেছিলেন, অথবা হথাত করে বিজয়দা ও রঞ্জনকে একসাথে বিজি দেখতে পাওয়া, অথবা আমার বাড়িতে কিছুক্ষন আগে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো তো আমাকে বারবার বিজয়দাকে সন্দেহ করতে বাধ্য করছে। এইসবই ভাবছি এমন সময় দেখি বেশ হাসিহাসি মুখে বিজয়দা আমার দিকে আসছেন। ‘চলুন যাওয়া যাক’। বিজয়দার কথাটা শুনে তো মনে হচ্ছিল যে আমরা বোধ হয় ম্যাটিনি শো দেখতে যাচ্ছি। যাই হোক আমি গাড়িতে চেপে বসলাম। আমার ফ্ল্যাট থেকে হসপিটাল এমন কিছু দূর নয়। এই মিনিট দশেকের রাস্তা। বিজয়দার চোখে মুখে একটা প্রশস্তির ছাপ। যেন কোন এক অজানা ভয়কে উনি সবে মাত্র জয় করেছেন। অল্প কিছুক্ষনের মধ্যেই আমরা হাসপাতালে পৌছালাম। একটা ভুঁড়িওয়ালা হাবিলদার এগিয়ে এসে বিজয়দাকে বলল ‘স্যার, ময়নাতদন্ত হয়ে গেছে’ কিছুটা সিরিয়াস হয়ে বিজয়দা ওকে বললেন ‘ডাক্তারের সাথে মৌখিক কিছু পরামর্শ করতে বলেছিলাম তোমায়?’ সঙ্গে সঙ্গে উত্তর এলো ‘হ্যাঁ, স্যার, সবই জিজ্ঞেস করেছি। না, এবার সত্যিই আর সেই আফ্রিকান বিষ প্রয়োগ করা হয়নি। খুন হয়েছে এই রাত দুটো নাগাদ। শরীরের ওপর দিয়ে মোট ৫ বার ও মাথার ওপর দিয়ে মোট ২ বার গাড়ি চালিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে’ দুটো হাত দিয়ে প্রচণ্ড জোরে একটা শব্দ করে বিজয়দা আমার দিকে তাকালেন। আমি কিছুটা হতবাক হয়েই তাকিয়ে থাকলাম। ‘ব্যাস, আর কি পুরো কেসটাই তো হাতের মুঠোয় চলে এলো। এবার একটাই কাজ পড়ে রয়েছে। কি?’ আমারই মুখ দিয়ে নিজের অজান্তে একটা শব্দ বেরিয়ে এলো ‘চার্জসিট’। প্রচণ্ড জোরে অট্টহাস্য করে উঠলেন বিজয়দা। আবার মুখটা কিছুটা গম্ভীর করে আমার উদ্দেশ্যে বললেন ‘বউয়ের জন্য কিছু রাখা আছে তো? মানে এই ইনসিওরেন্স বা নগদ টাকা ইত্যাদি?’ কথাটা শুনে ওখানে দাঁড়িয়েই আমার পা থরথর করে কাঁপতে শুরু করে দিলো। তবে কি বিজয়দা...? আমি বিজয়দার দিকে স্থিরদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকলাম। বিজয়দার দুটো অনুসন্ধিৎসু চোখ যেন আমার শরীরটা গিলে খেয়ে নেবে। আমার মাথার চুল থেকে পায়ের পাতা অবধি বারবার করে লক্ষ্য করতে শুরু করলেন। যেন আমার শরীরটা নয় শরীরের মধ্যে থাকা মনটাকে উনি রিড করতে চাইছেন। কিছুটা অধৈর্য হয়েই আমি বলে উঠলাম ‘কি বলতে চাইছেন আপনি?’ আবার একটা অট্টহাস্য। আমার কাঁধে একটা হাত রেখে বললেন ‘একটু সাইডে আসুন’ ওনার কথা শুনে সেই হাবিলদারটিই হেঁটে কিছুটা দূরে সরে গেলো। আমার সাড়া শরীরে এক অদ্ভুত শিহরন শুরু হয়েছে। তাহলে কি সত্যি বিজয়দাই...। ওনার ঠোঁটদুটো ধীরে ধীরে আমার কানের কাছে এসে গেলো। আমিও শুনতে চাই, উনি আমায় ঠিক কি বলতে চান। ‘আপনার কিছু হয়ে গেলে রমার কি হবে?’ সাথে অত্যন্ত নোংরা একটা হাঁসি। হাঁসিটার ইঙ্গিত হয়ত আমার নয় রমার দিকে। নিজেকে আর সংবরন করতে পারলাম না, কিছুটা চিৎকার বলেই বলে ফেললাম ‘বিজয়দা আপনি?’ সঙ্গে সঙ্গে বিজয়দার মুখের হাঁসিটা কর্পূরের মত উড়ে গিয়ে তার জায়গায় ভেসে এলো এক পর্বত কঠিন কঠোর মানসিকতার মানুষ। কিছুটা গলাটা গম্ভীর করে উনিও বলে উঠলেন ‘আমি কি?’ জানি বিজয়দার মত একজন পুলিশ অফিসারের সাথে লড়ার ক্ষমতা আমার নেই। তাই নিজেকে কিছুটা সংবরন করে নিয়ে কিছুটা কাতরভাবেই বললাম ‘আপনি কি চান বিজয়দা?’ এতো জটিল একটা প্রশ্নের উত্তরে শুধুই একটা অমলীন হাঁসি। এমন এক হাঁসি যার মধ্যে হাজারো রহস্য ও তার সমাধান লুকিয়ে রয়েছে। ‘চার্জশিট’ আবার ওই শব্দটাই উচ্চারন করলেন বিজয়দা। এই মানুষটা কে? এই পৃথিবীতে কি এনার আগমন শুধুই আমাকে মানব জনমের জটিলতা ও বাস্তবের কঠোরতা বোঝানোর জন্য? ‘চলুন মর্গের দিকে যাওয়া যাক’। আর কথা না বাড়িয়ে আমিও চলতে লাগলাম। চারপাশে ক্ষতবিক্ষত মৃতদেহ। কোনটা সেলাই করা। কোনটার বা চোখগুলো বেরিয়ে আছে। কি বীভৎস, জানি রমা আসেনি ভালো হয়েছে। রমা সহ্য করতে পারতো না। কিন্তু আমি পারবো, বাবাইএর মৃত্যুকে আমি নিজের চোখে দেখেছি। দেখেছি কিভাবে একটা মানবদেহ থেকে ধীরে ধীরে প্রাণবায়ুটা বেরিয়ে যায়। শেষ ২ মিনিট বাবাই যখন ক্রমাগত হেঁচকি তুলে যাচ্ছিল আমার গলা দিয়ে কিছুতেই আওয়াজ বেরচ্ছিল না। চোখের সামনে যমরাজকে দেখেছিলাম। ‘সরি, নিজেকে নিয়ন্ত্রন করুন, স্ত্রীর পাশে থাকুন, আমরা আপনার ছেলেটাকে নিয়ে যাচ্ছি’ যেন যমরাজ এই কথাটাই আমার মুখের ওপর বলেছিল। আমি বুঝতে পারছিলাম বাবাইকে আমি বাঁচাতে পারবো না। ডাক্তার মৃতদেহর মুখের ওপর থেকে চাদরটা সরিয়ে নিল। কি বীভৎস! হাবিলদারটা ওয়াক করে একটা আওয়াজ করে দরজার দিকে দৌড়ে গেলো। বিজয়দাও দেখলাম মুখটা অন্যদিকে সরিয়ে নিয়েছে। কিন্তু আমি তাকিয়ে আছি। একটা মৃতদেহ; আমারই আত্মীয় রঞ্জনের। আমি ওই চেপ্টে যাওয়া নৃশংস মুখটার দিকে তাকিয়ে আছি। কে যেন হয়ত আমার বিবেক আমাকে প্রশ্ন করে চলেছে, ‘কি বিপ্লব, এই মৃতদেহটা কার? উচ্চবিত্তের? মধ্যবিত্তের? নিম্নবিত্তের? শোষকের? শোষিতর? জবাব দাও বিপ্লব। ব্যাখ্যা কর তোমার ওই বস্তাপচা তত্ব দিয়ে’। নিজের মনেই বিড়বিড় করে উঠলাম ‘এই মৃতদেহ একটা জানোয়ারের! টাকা নামক যন্ত্র দিয়ে যে গোটা পৃথিবীকে কুক্ষিগত করতে চেয়েছিল’ বীভৎস ওই নারকীয় পরিবেশে আর কেউ থাকতে পারছিলনা, আমি ছাড়া। খেয়ালই করিনি পেছন ঘুরে বিজয়দা আমার হাতটা ধরে টেনে টেনে বাইরে নিয়ে যাচ্ছে। ওরা কেউ আমার মুখের হাঁসিটা দেখেনি। আমি হাসছিলাম, আমি বিদ্রুপ করছিলাম, একটা জানোয়ার মরেছে, একটা বিপ্লব হয়েছে, সমাজ পাল্টাচ্ছে। বিজয়দা টানতে টানতে আমায় বাইরে নিয়ে গেলেন, প্রচণ্ড জোরে চিৎকার করে বলে উঠলেন ‘আপনি কি মানুষ! কিভাবে? কিকরে আপনি পারলেন! এইরকম বীভৎস একটা মৃতদেহের দিকে আপনি কি করে তাকিয়ে রয়েছেন?’ আমার হুঁশ ফিরল। হাবিলদারটা একটা জলের বোতল নিয়ে আমার দিকে এগিয়ে এলো। ভালো করে চোখেমুখে জলের ঝাপটা দিয়ে শান্ত করলাম নিজেকে। মনে পড়ল, মিতার কথা। সত্যি এই মুহূর্তে মিতার পাশে দাঁড়ানো ও ওকে স্বান্তনা দেওয়াই আমার প্রধান কর্তব্য। বিজয়দাকে প্রশ্ন করলাম ‘বিজয়দা, মিতা মানে রঞ্জনের স্ত্রী কি এসে গেছে?’ বিজয়দা একবার ওই হাবিলদারের দিকে তাকালেন। সেই আমাকে জবাব দিলো ‘হ্যাঁ, উনি এসে গেছেন। ওনাকে বাইরের ঘরটায় বসিয়ে এসেছি’ আমরা প্রত্যেকেই মিতার সাথে দেখা করতে চললাম। বেশ কিছুটা যাওয়ার পর দেখলাম মিতা সিঁড়ির ওপর বসে। মাথায় দুহাত দিয়ে রয়েছে, দেখেই মনে হচ্ছে, মানসিকভাবে সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত। আমিই সবার আগে এগিয়ে গেলাম। আমাকে দেখেই মিতা উঠে দাঁড়াল। আমি কিছু বোঝানোর আগেই বা স্বান্তনা দেওয়ার আগেই মিতা বলে উঠল ‘বিপ্লব আমার কি হবে! আমি তো দেউলিয়া হয়ে গেলাম!’ হাতটা মিতার মাথার দিকে নিয়ে যাচ্ছিলাম ওকে স্বান্তনা দিতে, লঘুমস্তিস্কের কোন এক জটিল প্রক্রিয়ায় হাতটা ওখানেই দাঁড়িয়ে গেলো। বলে কি মেয়েটা। ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠে সকলের সামনেই ও বলল ‘বিপ্লব, রঞ্জনের সমস্ত টাকা কোন এক ফেক আকাউন্তে রয়েছে। আমার হাতে ৩-৪ লাখ টাকা ছাড়া কিছু নেই। আমি তো দেউলিয়া হয়ে গেলাম’ শালা হাসবো না কাঁদবো তাই বুঝলাম না। সত্যিই কি তাহলে উচ্চবিত্তের আবেগও আমাদের থেকে আলাদা হয়। একটা মানুষ যে মিতার স্বামী ছিল সে মারা গেছে। আর আজ তার মৃত্যুর যন্ত্রণাকে হার মানিয়ে ওপরে উঠে আসছে একটা যন্ত্র যার নাম টাকা। টাকা দিয়ে এরা ভালোবাসা কেনে, শরীর কেনে, এগুলো আমি আগেই জানতাম এখন দেখছি টাকা দিয়ে এরা মানুষের আবেগও কিনে নেয়। ‘তুমি কোন চিন্তা করোনা। কোন না কোন একটা ব্যাবস্থা ঠিকই হয়ে যাবে’ এই কথাটা বলা ছাড়া আমার কাছে আর কোন উপায় ছিলনা। ‘মিতাদেবী আপনি এখন তাহলে বিপ্লববাবুর বাড়িতে উঠুন। যেকোনো সময় আপনাকে জেরা করার জন্য ডাকা হতে পারে’ হাতের রুমালটা দিয়ে চোখের জলটা একবার মুছে মিতা শুধু মাথাটা নাড়াল। ‘চলুন আপনাদের ছেড়ে দিয়ে আসি’ হাবিলাদারের কথায় আমার একটু স্বস্তি ফিরল। আমরা দুজনেই গাড়ির পেছনে বসে আছি। সামনে সেই হাবিলদার ও একজন ড্রাইভার। বিজয়দা ডাক্তারের সাথে কথা বলার জন্য ওখানেই থেকে গেলেন। হথাত দেখি আমার হাতের ওপর মিতার হাতটা এসে স্পর্শ করল। কিছুটা চমকে গিয়েই ওর দিকে তাকালাম। ‘বিপ্লব, আমাকে তুমিই বাঁচাতে পারবে।