28-01-2020, 11:35 PM
মদ্যপান করলেন, প্রচণ্ড মাতলামি করলেন। এই রহস্যটা নিয়ে পুলিশ ডিপার্টমেন্ট ঠিক কি ভাবছে তা আমার সামনে গড়গড় করে সব বলে দিলেন। এতদিনের অভিজ্ঞ একজন পুলিশ অফিসার কি এতটাও ভুল করতে পারেন! যতই হোক পুলিশের সন্দেহে প্রত্যেকেই থাকে। আর শর্মাজী সেই দুর্গা পুজার দিন থেকে আজ অবধি লোকটা সত্যিই প্রচণ্ড রহস্যময়। রঞ্জনের ক্ষতি করার জন্য আমাকে একটা প্রপসাল দেওয়া। ও কেন রঞ্জনের ক্ষতি করতে চায় তা আমি কখনো ভাবিওনি আর জিজ্ঞেস ও করিনি। তাহলে কি রঞ্জনকে সরিয়ে দেওয়াটা অনেকদিন আগে থেকেই প্ল্যান করা ছিল। সবকিছু তালগোল পাকিয়ে যেতে শুরু করল। এইসব ভাবতে ভাবতেই আমি ফ্ল্যাটের সামনে এসে পৌছালাম। ভেতরে ঢুকে আগে টেবিলের কাছে খেয়াল করলাম। না, শান্তনু আসেনি। ওকে যদি পুলিশ জেরা করত তাহলেও অনেক তথ্য বাইরে আসত। কিন্তু ওকি আদৌ আর এই ফ্ল্যাটে ফিরবে! আমার তো মনে হয় শুধু আমার আর রমার ওপর নজরদারির জন্যই ওকে এখানে আনা হয়েছিল। লিফট দিয়ে ওপরে উঠে গেলাম। না, রমা সত্যিই ঘুম থেকে ওঠেনি। দরজাটাও তাই খোলাই ছিল। ভেতরে ঢোকার সাথে সাথে আবার ফোন। মোবাইলটা হাতে নিয়ে দেখি বিজয়দা করেছে। রিসিভ করলাম। ‘বিপ্লব বাবু, মৃতদেহ সনাক্ত করতে হবে। আর মৃতদেহ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। আমি আপনার বাড়িতে আসছি। আপনি আর মিসেস পোদ্দার আমার সাথে যাবেন’ আমি আর কি উত্তর দিতাম। ‘হুম’ বলে একটা শব্দ করলাম। বিজয়দাও ফোনটা কেটে দিলেন। রমাকে যত দ্রুত সম্ভব উঠিয়ে দিতে হবে। ভেতরের ঘরে গিয়ে ৩-৪ বার রমা রমা বলে ডাকতেই ওর ঘুম ভেঙে গেলো। রমার ঘুম বরাবরই খুব পাতলা। আমি ওর পাশে বসে পিঠে কিছুটা সহানুভুতির ছোঁয়া দিয়ে বললাম ‘রমা, খুব খারাপ একটা খবর আছে’। রাতে ভালো ঘুম হয়নি, তার ওপর ওর কাঁচা ঘুমটা আমি ভাঙিয়ে দিলাম, তাই ওর চোখদুটো টকটকে লাল হয়ে রয়েছে। বেশ কিছুটা চমকে গিয়ে আমার দুহাত ধরে রমা বলল ‘কি হয়েছে বিপ্লব’ কিছুটা নম্রভাবে বললাম ‘রমা, রঞ্জনদা খুন হয়েছে’ রমা ডুকরে উঠল। ওকে নিজের বুকের মধ্যে চেপে ধরে ক্রমাগত স্বান্তনা দিয়ে চললাম। রমার মুখ দিয়ে খালি একটাই অস্পষ্ট কথা বাইরে বেরচ্ছিল ‘আমার দিদিটার কি হবে?’ এই এতো বছর ধরে দিদি বোনের মধ্যে কি যে সম্পর্ক রয়েছে আমার জানা নেই। মিতা শেষ আমাদের বাড়িতে এসেছিল প্রায় ৩ বছর আগে। আমাকে বিয়ে করা থেকে শুরু করে প্রতিটা ক্ষেত্রেই মিতা নিজের বোনকে খালি খোঁটাই দিয়েছে। অথচ রঞ্জন মারা যাওয়ার পর রমার রঞ্জনের চেয়ে নিজের দিদির ভবিষ্যৎ নিয়েই বেশী দুশ্চিন্তা। ভাবলেও কেমন অবাক লাগে। রমার পিঠে হাত বোলাতে বোলাতে আমি বললাম ‘রমা, তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে নাও। বিজয়দা আসবেন। ওনার সাথে আমাদের যেতে হবে। ডেড বডি সনাক্ত করতে হবে’ আমার কথা শুনে রমা কিছুটা হলেও নিজেকে শান্ত করে বাথরুমের দিকে যেতে উদ্যত হয়। আমি বিছানায় বসেই ভাবতে শুরু করি। যেদিন প্রথমবার শর্মাজী আমার কাছে এসেছিলেন আমি খুব একটা বিস্মিত হইনি। ব্যাক্তিগত জীবনে উনি ভালো না মন্দ তা নিয়ে আমার কোন মাথাব্যাথাই ছিলনা। আমার কাছে লোণের জন্য এইধরনের ধরিবাজ মানুষই আসেন সাধারনত। আর তাদেরকেই টুপি পড়ানো এবং লোণের বোঝা চাপিয়ে দেওয়া, এই হোল আমার ছোট্টখাট্টো প্রফেশন। বিশাল অঙ্কের একটা লোণ পাইয়ে দেওয়ার দাবী জানান শর্মাজী। এতে কোন অবাক হওয়ার মত ব্যাপার ছিলনা। অবাক করার ব্যাপারটা হয়েছিল তার প্রায় ১ মাস পর। একদিন শর্মাজীর ফোন আসে আমার কাছে। আমার তো তখন মাথা খারাপ হওয়ার জোগাড়, কারন বহু চেষ্টা করেও আমি কিছুতেই শর্মাজীর লোণটা জোগাড় করতে পারিনি। কিছুটা ভয়েই আমি ফোনটা রিসিভ করলাম ও ওপাশ থেকে কোন কথা ভেসে আসার আগেই উত্তর দিলাম ‘শর্মাজী, সত্যি বলতে আমি এখনো লোণের টাকাটা জোগাড় করতে পারিনি। আমার কিছুদিন সময় লাগবে’ একটা বিকট অট্টহাস্য ও ওপাশ থেকে ভেসে এলো রহস্যময় এক প্রস্তাব। ‘আরে ধুর বোকা, কে আপনাকে লোণের জন্য তাগাদা করছে। আপনার ওপর আমার ফুল বিসবাস আছে। হামি ফোন করেছি দুসরা একটা প্ল্যান লিয়ে। এতো মুনাফা দেবো যে আপনি জিন্দেগী ভর হামায় ইয়াদ রাখবেন’ আমি তো প্রায় থ হয়ে গেছিলাম। কি এমন প্রস্তাব! শর্মাজীর পরের প্রস্তাবটা সত্যিই আমার পক্ষে মেনে নেওয়া সম্ভব ছিলনা। ‘রঞ্জন, আপনার সম্বন্ধী আছে?’ ওর মুখে রঞ্জনের নাম শুনে আমি সত্যিই কিছুটা চমকে উঠেছিলাম। ‘ওই শালা হারামজাদাটা আমার এক নাম্বারেরর কম্পিটিটর আছে। ও শালা আমার চেয়েও বড় জালী’ রঞ্জনের ওপর রাগ তো আমার বরাবরই ছিল। রঞ্জনের দুনাম্বারি ব্যাবসাটা ঠিক কিসের ওপর তা সত্যিই আমি জানতাম না। শর্মাজীই ছিল একমাত্র উৎস যার থেকে আমি সব জানতে পারি। আমিও শর্মাকে টোপটা দিলাম। কিছুটা শর্মার সাথে গলা মিলিয়ে বললাম ‘আরে বলবেন না, এক নাম্বারের নচ্ছার লোক। আমাকে তো মানুষ বলেই মনে করেনা। ওর কোন সর্বনাশ করতে পারলে আমি নিজেকে ধন্য মনে করব’ সঙ্গে সঙ্গে শর্মার উৎফুল্ল হয়ে ওঠা কণ্ঠস্বর ভেসে এলো ‘আরে হারামিটা বেনামে ব্যাঙ্ক আকাউন্ত খুলেছে। ওর বেশির ভাগ ক্যাশ ওই আকাউন্তেই থাকে। একসাথে গরমেনট, পুলিশ সবাইকে চুনা লাগাচ্ছে। ওর কাছে কোটি কোটি টাকার ব্ল্যাক মানি রয়েছে’ আমি তো অবাক হয়ে গেলাম। আমাদের ব্যাঙ্কে যে কিছু ফেক আকাউন্ত আছে টা আমার জানা। কিন্তু সেগুলো সবই ভিভিআইপিদের। রঞ্জনও যে ফেক আকাউন্তে টাকা রাখে তা সত্যিই আমার জানা ছিলনা। আসলে এইসব ফেক আকাউন্তের ব্যাপারে সামান্য কিছু তথ্য আমার কাছে থাকলেও সেভাবে আমি বিশদে জানতাম না। কারন এগুলো সবই অফিসিয়াল লেভেলের ব্যাপার সাপার। আমি তো সামান্য লোণ সেক্সানের কর্মচারী। শর্মাজীর পরের কথাটায় আমার বিচি মাথায় উঠে গেছিল। ‘কি করতে হবে তা বাদ মে বলছি। লেকিন আগে কমিশনটা জেনে লিন। পুরা ৫০ লাখের কমিশন’ শালা বাপের জন্মে কখনো ৫০ লাখ কামাতে পারবো বলে ভাবিনি। কিন্তু এটাও জানতাম যে কাজটার মধ্যেও ৫০ লাখের রিস্ক আছে। সেই কারনে নিজেকে সংবরন করে উত্তর দিয়েছিলাম ‘টাকাটা বড় কথা নয় শর্মাজী। আগে কাজটা শুনি। আর এটা বোঝেন তো যে রঞ্জন আমার রিলেটিভ’ একটা অট্টহাস্য আর তার সাথে সাথেই শর্মাজীর গলাটা ভেসে আসে। ‘আরে, দাদা, রিস্ক হি লিলেন না তো লাইফে কি লিবেন! শোনেন আপনাকে হামি চোরি ভি করতে বলছিনা আর ডাকা ভি ডালতে বলছিনা। আপনার কাজটা খুব সিম্পিল আছে। আপনি খোঁজ লিন, কোন নামে রঞ্জনের ফেক আকাউন্ত আছে। আর সেটা গরমেনট কে ফাঁস করে দিন। ব্যাস, কাম খতম’ শর্মাজীর কাছে ব্যাপারটা ঠিক যত সরল ছিল আমার কাছে ততটাই কঠিন। কারন ফাঁস করতে আমার কয়েকটা মাস সময় লাগবে। কিন্তু এতে আমার ব্যাঙ্কিং ক্যারিয়ার একদম শেষ হবে। যে কাজটা এতদিন ধরে দুবেলা ভাত জুগিয়ে গেছে তার সাথে বেইমানি করার কথা ভাবতেও পারিনি। প্রথম শোনার পর থেকেই আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম কখনোই শর্মাজীর দ্বিতীয় প্রপসালটা একসেপ্ট করবোনা। তা রঞ্জনের ওপর আমার যতই রাগ থাকুক না কেন। ‘দাদা, একটু শুধু মেহনত করতে হবে। কারন ওর ফেক আকাউন্তটা কলকাতা নয়, মুম্বাইএর ব্রাঞ্চে রয়েছে। এবার আপনার দায়িত্ব এটা যে আপনি কি করে মুম্বাই এর ব্রাঞ্চ থেকে ওর আকাউন্তটার হদিশ জানবেন’ সেদিন আমি শুধু একটাই কথা বলেছিলাম ‘ভেবে দেখছি’। মন থেকে কোনোদিনই এই কাজটা গ্রহন করতে পারিনি তাই একসেপ্ট ও করিনি। আমি বেচু হই আর চাপরাশি কখনো নিজের প্রফেশনের সাথে বেইমানি করতে পারবোনা। রমা এখনো বাথরুমে। আমি শুধু ভেবে চলেছিলাম; শর্মাজীর এই দ্বিতীয় প্রপসালটার সাথে রঞ্জনের খুন হওয়ার বেশ ভালোই যোগ রয়েছে। এমনসময় হথাত কলিং বেলটা বেজে উঠল। জানি বিজয়দাই এসেছে। দরজা খুলতে যাচ্ছি এমনসময় হথাত ই মনে পড়ল যে রমা বাড়িতে থাকা অবস্থায় এর আগে কখনোই বিজয়দা আসেনি। বিজয়দা রমাকে মাত্র একবারই দেখেছে; রমাকে দ্বিতীয় হুগলী সেতুর থেকে উদ্ধার করার সময়। যেকোনো মানুষ সে যত চালাকই হোক না কেন, শরীরের ভাষায় অনেক কিছু প্রকাশ পায়। না কথাটা আমার নয় আমার গুরু প্রদোষ মিত্তিরের। অর্থাৎ এই মুহূর্তে আমার একটাই লক্ষ্য, বিজয়দাকে ভালো করে পর্যবেক্ষণ করা ও ওনার সাথে কিছুই না বোঝার অভিনয় করে যাওয়া। আমি দরজাটা খুলে দিলাম। হ্যাঁ, বাইরে বিজয়দাই কিছুটা গম্ভীর মুখে দাঁড়িয়ে আছে। ভেতরে আসতে বলব তার আগেই উনি নিজের থেকে ভেতরে প্রবেশ করে গেলেন। দরজাটা লক করব এমন সময়েই উনি বলে উঠলেন ‘বিপ্লব বাবু সমস্ত রহস্যটা আরও জটিল হয়ে গেলো’ আমি দরজাটা বন্ধ করতে করতে উত্তর দিলাম ‘হুম, ঠিকই বলেছেন। সেদিন যদি আমি এতটা ভুল না করতাম!’ সঙ্গে সঙ্গে বিজয়দা উত্তর দিলেন ‘ছাড়ুন, ওই কথা যা হওয়ার তা হয়ে গেছে। কিন্তু একটা সামান্য ক্লু আমি পেয়েছি। এবং তা আপনাকে না জানিয়ে সত্যিই পারলাম না’ আমিও কিছুটা উদ্বেগের ভান করে বললাম ‘কি ক্লু বিজয়দা?’ ‘বিপ্লব বাবু, এতদিন ধরে আমরা ভাবছিলাম রবির খুনটা একটু তাড়াহুড়ো করে হয়ে গেছিল। কিন্তু মনীন্দ্র বাবুর খুনটা ছিল একদম প্রিপ্ল্যানড। ওই সিরিয়াল কিলিং এ ঠিক যেরকম হয়, সেরকম’। বিজয়দার কথা শুনে আমিও মাথা নাড়লাম কারন সত্যিই আমারও মত তাই। মনীন্দ্র বাবুকে প্রথমে স্লো পয়সন ও তারপর ছাদ থেকে ফেলে খুন করা হয়েছিল। খুনের পদ্ধতি যথেষ্ট পরিকল্পনামাফিক। এইসব ভাবতে ভাবতেই বিজয়দা বলে উঠলেন ‘আজকের খুনের পর নতুন একটা লিঙ্ক মাথায় এসেছে। তা হোল দ্বিতীয় হুগলী সেতু’ আমি প্রায় চমকে গিয়ে বললাম ‘কি, খুনের সাথে দ্বিতীয় হুগলী সেতুর সম্পর্ক?’ মনে মনে ভাবলাম ‘লোকটা কি সত্যিই ভাঁট বকছে নাকি সত্যিই কোন সম্পর্ক আছে’। আমার কথা শেষ হতে না হতেই বিজয়দা বললেন ‘রবির মৃতদেহ পাওয়া গেছিল দ্বিতীয় হুগলী সেতুর ঠিক নীচে। আর রঞ্জনের মৃতদেহও পাওয়া গেলো দ্বিতীয় হুগলী সেতুতে। আরেকটা অদ্ভুত জিনিষ জানেন; মনীন্দ্র বাবুর ময়না তদন্তের রিপোর্টে জানা গেছে যে ছাদ থেকে ফেলে দেওয়ার আগে ওনার সাথে খুনির যথেষ্ট ধ্বস্তাধস্তি হয়েছে’ আমিই ওনাকে চুপ করিয়ে বললাম ‘না, বিজয়দা, আপনার এই যুক্তিটা আমি কিছুতেই মানতে পারছিনা। দ্বিতীয় হুগলী সেতুর ব্যাপারটা নেহাতই কাকতালীয়। কারন, আমি গতরাতে সত্যিই শানের দেখা পেয়েছিলাম। ওর মুখ দেখতে পাইনি কিন্তু কণ্ঠস্বর শুনতে পেয়েছিলাম। চেষ্টা করেছিল গলাটা বিকৃত করে আমার সাথে কথা বলতে। কিন্তু আমি নিশ্চিত ছিলাম যে রঞ্জনই আসলে শান। এবার দেখুন, কোলাঘাট থেকে কলকাতা আসতে গেলে দ্বিতীয় হুগলী সেতু হয়েই আসতে হবে। দ্বিতীয় কোন রাস্তা নেই’ আমাকে মাঝপথেই থামিয়ে প্রচণ্ড জোরে চিৎকার করে উনি বলে উঠলেন ‘কিন্তু দ্বিতীয় হুগলী সেতুই কেন? অন্য কোন জায়গা কেন নয়?’ সত্যিই আমার কাছে এই প্রশ্নের উত্তর ছিলনা। নিজেকে কিছুটা সংযত করে বিজয়দা বললেন ‘ভালো করে বুঝুন। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট, খুনের স্টাইল এসব থেকে একদম পরিস্কার যে মনীন্দ্র বাবুকে খুন করেছিলেন মোট দুজন আলাদা আলাদা সময়। প্রথম খুনী একজন নারী, যিনি মদের গ্ল্যাসে বিষ মিশিয়েছিলেন এবং দ্বিতীয় খুনি একজন পুরুষ যিনি মনীন্দ্র বাবুকে ওপর থেকে নীচে ফেলে দিয়েছিলেন’ শুধুই চুপ করে শুনে যাওয়া ছাড়া আমার কাছে দ্বিতীয় কোন উপায় ছিলনা। ‘শুধু তাই নয়, সেই নারী ও পুরুষ দুজনেই জানতেন না যে তারা প্রত্যেকেই খুনের মোটিভ নিয়ে এসেছেন। পরে উভয়েই জানতে পারেন। এবং তার পর থেকেই খুনের স্টাইলটা চেঞ্জ হয়ে যায়’ হুম, সত্যিই বিজয়দার লজিকে দম আছে। এই ব্যাপারটা আমার মাথায় আগে আসেনি। কিন্তু সবার আগে আমায় যা বুঝতে হবে তা হোল রঞ্জন ঠিক কিভাবে খুন হয়েছে? আমি বিজয়দাকে জিজ্ঞেস করলাম ‘আচ্ছা, বিজয়দা, রঞ্জনের খুনটা ঠিক কিভাবে হয়েছে?’ সঙ্গে সঙ্গে বিজয়দার উত্তর ‘আরে মশাই এটাই তো সবচেয়ে জটিল ব্যাপার। এবারের খুনের সাথে আগের খুনগুলোর কোন মিল নেই। এর আগের প্রতিটা ম্রিতদেহে একটা কমন ব্যাপার ছিল। মৃত্যুর আগে মুখ দিয়ে গ্যাঁজা উঠেছে। অর্থাৎ বিষ প্রয়োগ হয়েছে। কিন্তু এক্ষেত্রে তা হয়নি। অর্থাৎ বিষ প্রয়োগ হয়নি’ আমি আর ধৈর্য রাখতে পারলাম না। জিজ্ঞেস করেই বসলাম ‘তাহলে খুনটা কিভাবে হয়েছে?’ ‘অন্তত ৪ বার শরীরের বিভিন্ন স্থানের ওপর দিয়ে গাড়িটা চলে গেছে। মাথাটা প্রায় থেঁতলে গেছে। বিকৃত একটা শরীর। আশেপাশে কোন পার্সোনাল কার ও লক্ষ্য করিনি। অতএব কেউ একজন রঞ্জনকে গাড়ি চাপিয়ে দ্বিতীয় হুগলী সেতুতে নিয়ে এসেছে এবং ওখানেই গাড়ি থেকে নামিয়ে খুন করেছে’ বিজয়দার মুখ থেকে এই কথাটা শুনে আমার মাথাটা বোঁ বোঁ করে ঘুরতে শুরু করল। ‘বিপ্লব বাবু আমি নিশ্চিত যে এই খুনের পেছনে কাজ করছে এক চরম প্রতিশোধের স্পৃহা। এই দ্বিতীয় হুগলী সেতুর ওপরই কোন না কোন ঘটনা ঘটেছিল। আর সেই কারনেই তার পাণ্ডাদেরকে এক এক করে এখানে এনে মেরে ফেলা হচ্ছে। খুনটা যেই করুক তাকে আমি ঠিক ধরবই। কারন আইনের চোখকে কেউ...’ বিজয়দা কথাটা শেষ করলেন না, কথাটা বলার সময় ওনার চোখে এক চরম আত্মবিশ্বাস লক্ষ্য করেছিলাম অথচ সেই আত্মবিশ্বাসই হথাত এক চরম যৌন লালসার আগুনে পরিনত হোল। আমি একদৃষ্টিতে বিজয়দার চোখের দিকে তাকিয়ে আছি, কোন এক দুর্মূল্য বস্তুর লোভে ওনার চোখদুটো চকচক করে চলেছে। শ্বাস প্রশ্বাস, হ্রিদস্পন্দন সবই কেমন অস্বাভাবিকরকম হয়ে গেছে। আমি পেছন ঘুরে দেখি তো আমারও বিচি টোটালি আউট। বাথরুমের দরজার কাছে শুধু একটা সাদা তোয়ালে জড়িয়ে দাঁড়িয়ে আছে রমা। যেন সম্মানটুকু ঢেকে দিতেই কোনোমতে দুহাত দিয়ে তোয়ালের মুখটা বুকের কাছে ধরে থাকা। রমার দুচোখ পাগলের মত বিজয়দাকে দেখে যাচ্ছে। যেন কিছু একটা মনে করতে চেষ্টা করছে ও। আমিও মাথাটা ঘুরিয়ে একবার বিজয়দার দিকে তাকালাম। বিজয়দার শরীরী ভাষা এখন আর শুধুই নিষিদ্ধ যৌনাচারকে প্রকাশ করছেনা তার সাথে কিছু একটা ভয়ও রয়েছে।