28-01-2020, 11:34 PM
‘প্রিয় বিপ্লব, আজও তোমায় ততটাই ভালোবাসি যতটা হাতিবাগানের রমা মুখুজ্জে বিপ্লব পোদ্দারকে ভালোবাসতো। ............’ এরপর ৩ পাতার একটা দীর্ঘ করুন ইতিহাস। চিঠি শেষ হয় প্রায় অনুরুপ একটা লাইন দিয়ে। ‘বিপ্লব, আমি নিজেকে চিনি। আমি কোনোদিন এই চিঠিটা তোমায় দিতে পারবোনা। কোনোদিন এটা বিশ্বাস করতে পারবোনা যে বিপ্লব রমাকে ঘেন্না করে। যদি কোনোদিন চিঠিটা সাহস করে তোমায় দিয়েও দি, আমায় বিষ খাইয়ে মেরে ফেলো। এই সত্যিটা জানার পর আমি তোমার সামনে কিছুতেই বেঁচে থাকতে পারবো না। বিপ্লব তোমাকে আজও অতটাই ভালোবাসি যতটা তোমায় সেদিন ভালবাসতাম’। সোফায় বসেছিলাম আমি। পাশের টেবিলটা ক্রমাগত নড়ছিল, মোজাইক করা মেঝেটা ক্রমশ সমুদ্রের ঢেউয়ের মত ওলট পালট হয়ে যাচ্ছিল। না ওরা তো জড় বস্তু, জীবন্ত একা আমি। তাও আজ যেন ওদেরই মত মৃত। মাথাটা ক্রমাগত ঘুরিয়ে যাচ্ছিল, কিছুতেই সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারছিলাম না। কোনরকমে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। রমাকে একবার জিজ্ঞেস করব। একটাবার রমাকে জিজ্ঞেস করব ‘রমা, চিঠিতে যা লেখা আছে সব মিথ্যে না? শুধুই আমায় ভয় দেখাতে এই চিঠিটা তুমি লিখেছ তাইতো?’ ধীরে ধীরে দরজার কাছে এগিয়ে গেলাম। বিছানার ওপর রমার নগ্ন শরীরটা পড়ে রয়েছে। ওর সেই সেক্সি কোমর, ৩৬ সাইজের লোভনীয় স্তন আমারই বীর্য মখামাখি করে থাকা ওর লাল টুকটুকে চেরা গুদ। হথাত করে কেমন গাটা গুলিয়ে উঠল। একটা বীভৎস রকম মৃতদেহ দেখলে যেমন মনে হয় ঠিক তেমন। বাথরুমে ঢোকার সাথেসাথে সারা শরীরটা দুলিয়ে বেরিয়ে এলো একরাশ বমি। আমি যে আমার ভালোবাসার রক্তাক্ত মৃতদেহ দেখে ফেলেছি। চোখে মুখে ভালো করে জল দিয়ে বাইরে এলাম। এই ছাদটার তলায় আমি যদি আর এক মুহূর্ত থাকি দমবন্ধ হয়ে মরে যাবো। আমার স্কুটারটা প্রচণ্ড বেগে ছুটে চলেছে। গন্তব্য নিমতলা মহাশ্মশান। এখানেই আমি আমার ছেলেটার মৃতদেহে আগুন দিয়েছিলাম। কলকাতা শহরে এমন অনেক জায়গা আছে যা নাকি মনখারাপের রাতে বহু মানুষের গন্তব্যস্থল। কিন্তু আমার গন্তব্যটা একটু আলাদা। নিমতলার ঘাটে বসে আমি দেখি কত মানুষ তাদের প্রিয়জনের শবদেহ নিয়ে আসছে। আর তারপর গঙ্গায় ডুব দিয়ে নতুন জীবনের অঙ্গীকার, বেঁচে থাকার প্রতিজ্ঞা। ঠিক এরকমই একটা অঙ্গীকার আমিও করেছিলাম। দিনটা ছিল ২৫ শে মাঘ। রমা তখন ভাড়া বাড়িটাতেই, অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছে। ছেলের মুখে যখন আগুনটা লাগাচ্ছিলাম ছেলের চেয়েও রমার কথাই বেশী মনে পড়ছিল। সমস্ত কাজ সেরে যখন গঙ্গায় ডুব দিলাম একটাই শপথ করেছিলাম ‘রমাকে আমি ঠিক সুস্থ করে তুলবো’। সেদিন বিশ্বাস করিনি, অনেক পরে বিশ্বাস করে নিয়েছিলাম রমা সত্যিই কোনোদিন আর সুস্থ হবেনা। সেই গঙ্গার পাড়েই গিয়ে বসলাম। তখনও ভেতরে ধিকধিক করে একটা চিতা জ্বলে চলেছে। কয়েকটা মানুষ শ্রান্ত শরীরে পাশে দাঁড়িয়ে আছে। হয়ত মনে মনে বলছে যে গেছে সে গেছে কিন্তু যে আছে সে অনেক দামী। আমিও ঠিক এই কথাটাই বলেছিলাম। আজও আমাকে একটা অঙ্গীকার করতে হবে। আমি যে সমস্ত সত্যিটা জেনে গেলাম তা যেন রমা কোনোদিন না জানে। রমা অসুস্থ, মানসিক চাপ ওকে ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেবে। এভাবে কতক্ষন যে বসে আছি খেয়াল নেই। চিতার মধ্যে থেকে ফটাস ফটাস করে শব্দগুলো ভেসে আসছে। আর হয়ত একটা ঘণ্টা তারপরই এই শরীরটা এক মুঠো ধুলোয় পরিনত হবে ঠিক যেমনটা আমার ছেলে হয়েছিল। মাথার ওপর সূর্যটা ক্রমশ মাথা তুলে উঠছিল। হ্যাঁ, ভোর হয়ে আসছে। রাতের অন্ধকারের বিভীষিকা ঠেলে সূর্যদেব বেরিয়ে আসছে। আমাকেও ঠিক একিভাবে নিজের মন শান্ত করতে হবে। কিছুটা দূরে একটা চা দোকান। এক কাপ চা খেয়ে গঙ্গায় একটা ডুব দিয়ে আবার ফিরে যাবো। রমা নিশ্চয়ই এখনো ঘুমাচ্ছে। সবে চা টা বসিয়েছে। এফএমে সবে চ্যানেলগুলো চালু হয়েছে। একসময় প্রচুর এফেম শুনতাম। ঠিক ভোরের দিকের গানগুলো দুর্ধর্ষ লাগে। প্রথমে একটা ক্যাঁচ ক্যাঁচ শব্দ আর তারপর ভেসে এলো ভুপেন হাজারিকার সেই বিখ্যাত গানটা ‘মানুষ মানুষের জন্য, জীবন জীবনের জন্য...’ মন ভালো করে দেওয়া নতুন করে বাঁচতে শেখানোর একটা গান। সত্যিই মানুষ মানুষের জন্য। আমিও বাঁচব শুধুই রমার জন্য। চায়ের পয়সা দিয়ে সোজা হাঁটা লাগালাম ঘাটের দিকে। প্যান্টটা খুলে শুধু জাঙ্গিয়াটা পরে জলে নামলাম। হাতদুটো জড় করে একটা প্রতিজ্ঞা ‘ঈশ্বর আমায় শক্তি দাও, ওই অসুস্থ মেয়েটার জন্য আমায় সুস্থ রাখো। যেন জীবনে কোনোদিন রমাকে কষ্ট না দি’ ডুব দিয়ে পাড়ে উঠবো ঠিক এমনসময় অন্য আরেকজন, হয়ত এই মৃতব্যাক্তিরই কোন আত্মীয় স্নান করার জন্য প্রস্তুত হচ্ছিলেন, হাতে একটা রিষ্ট ওয়াচ। রিষ্ট ওয়াচের কথাটা মনে পড়তেই আমার মনে হোল কেসটা অনেকটাই সল্ভ হয়ে যাবে যদি আমি সেই চেনা রিষ্ট ওয়াচ ও সেটা কার হাতে দেখেছিলাম তা মনে করতে পারি। সেই রিষ্ট ওয়াচ, পিঠে একটা কালো দাগ এগুলো থেকে আমায় খুঁজে বার করতে হবে সেই লোকগুলোকে। জামা, প্যান্ট পড়ছিলাম। দুজন বুড়ো মর্নিং ওয়াকে বেরিয়েছিল। ওদেরই খোশ গল্প কানে আসতে লাগলো। ‘এই যে দুতলা বাড়ি, এতদিন ধরে মানুষ করার কষ্ট সব তো এই শর্মাই করেছে। আর আজ বুড়ো হয়ে যেতেই আমি নন্দ ঘোষ। শালা, ছেলেপুলেকে এতো কষ্ট করে মানুষ করাই উচিত হয়নি’ আমার কানে যেন একটা চকলেট ব্যোম ফাটল। ‘শর্মা’ এই শব্দটা শুনে যেন কতদিনের পুরনো একটা রহস্য আমি সমাধান করে ফেললাম। মনে পড়ে গেলো সেদিনের কথা। শর্মাজীর গাড়ি আমাকে ওভারটেক করে দাঁড়াল। নেমে এসে নিজের পা থেকে চপ্পলটা খুলে আমার দিকে এগিয়ে দিলো এবং মুখে সেই অদ্ভুত ন্যাকামো ‘লিন দাদা, লিন। এই লিন আমার চপ্পলটা লিয়ে আমারই গালে ঠাস ঠাস করে মারুন’। সেদিনই প্রথম ওই সোনার ঘড়িটা আমি ওর হাতে দেখেছিলাম। হয়ত তার কিছুদিন আগেই ও কিনেছিল। শর্মার সাথে আমার প্রথম পরিচয় আমারই কেবিনে। মাস তিনেক আগে। ‘দাদা, একটা নতুন বিজনেস স্টার্ট করছি। আমাকে একটা লোণ পাইয়ে দেন, হামি আপনারটা দেখবো আপনি হামারটা দেখবেন। হি হি হি (সেই বিচ্ছিরি হাঁসিটা)’ সেটা প্রথম পরিচয় হলেও সাক্ষাত হয়েছিল তারও মাস দুয়েক আগে। যদিও আমি সেটাকে নেহাতই কাকতালীয় একটা ব্যাপার ভেবে উড়িয়ে দিয়েছিলাম। সেটা ছিল মহাঅষ্টমীর রাত। আমি আর রমা সুরুচি সংঘের প্যান্ডেল দেখতে গিয়েছিলাম। ছেলেদের একটা আলাদা লাইন ও মেয়েদের একটা আলাদা লাইন ছিল। যথারীতি দুজনে আলাদা হয়ে পড়ি। প্যান্ডেলের ভেতর থেকে বেরিয়ে আর কিছুতেই রমাকে খুঁজে পাইনি। পাগলের মত এদিক ওদিক খুঁজে অবশেষে বহুদুরে একটা দোকানের মধ্যে রমাকে দেখতে পাই। রমা দাঁড়িয়ে আছে, আর একটা লোক রমাকে কিসব বলে যাচ্ছে। আমি সামনে যেতেই সেই লোকটা পাশ কাটিয়ে বেরিয়ে যায়। রমাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম ‘রমা লোকটা কি বলছিল?’ রমার উত্তর ছিল ‘আমাকে নাকি কোথায় দেখেছে, বারবার করে জিজ্ঞেস করছিল’ সেদিন ভেবেছিলাম পাতি মাগিবাজ মাল বোধ হয়। পরে সেই শর্মাজীই আমার কেবিনে আসে। প্রথমে ভেবেছিলাম মালটাকে ভাগিয়ে দেবো। কিন্তু সব তো আর আমার হাতে নেই। অবশেষে লোণের কেসটা আমায় নিতেই হোল। ঠিক এই কারনেই আমি শর্মাজীকে কখনো বাড়িতে নিয়ে আসিনি। আমার ভিজিটিং কার্ডটাতে ল্যান্ড ফোন ও মোবাইল দুটো নাম্বারই দেওয়া থাকে। কিন্তু কেন জানিনা ও অধিকাংশ সময়ই ল্যান্ড নাম্বারটায় ফোন করত। মনে পড়ে গেলো আরও একটা ঘটনা। সেদিন অফিস থেকে বেরচ্ছি, এমন সময় হথাত শর্মাজীর সাথে দেখা। কথা প্রসঙ্গে ওর ছেলের কথা উঠল। অদ্ভুত একটা কথা বলেছিল। ‘আরে দাদা, পড়াশুনা শিখলে কি হয়! আমি তো এইট ফেল আছি। আপনি জানেন হামার প্রথম বিজনেস কি ছিল; রেলের লুহা চুরি। একবার পুলিশ তাড়া করল, একদম ব্রিজের ওপর থেকে ঝাঁপ মারলাম। পিঠে এমন লেগেছিল যে এখনো দাগ রয়েছে। কিন্তু সেই শর্মা আজ কত তারকি করেছে লাইফে দেখে লিন’ অঙ্কের প্রতিটা হিসেব অদ্ভুতরকম ভাবেই মিলে যেতে শুরু করল। জানি এবার সম্পূর্ণ কেসটাই আমি বুঝে ফেলেছি। মনে পড়ে গেলো বিজয়দার কথা। ‘যেকোনো কেসে পুলিশ হোক বা ডিটেকটিভ, প্রথম লক্ষ্য হওয়া উচিত, শক্তিশালী একটা চার্জশিট। যাতে কিছুতেই আইনের ফাঁক ফোঁকর দিয়ে অপরাধীরা পালাতে না পারে’ শুধু সন্দেহ আর কিছু সামান্য তথ্যপ্রমান দিয়ে কখনোই শর্মার মত পয়সাওয়ালাদের জেলে পোড়া যায়না। আমার সবকিছু বিজয়দাকে জানানো উচিত। মোবাইলটা বার করে দেখলাম ভোর ৫ টা। নাহ, এতো ভোরে আর ওকে ফোন করতে মন গেলনা। স্কুটারটা চালিয়ে আবার ফ্ল্যাটের দিকে যেতে শুরু করলাম। রমা যদি ঘুম থেকে না ওঠে এর মধ্যে তাহলে দরজাটা খোলাই থেকে যাবে। সত্যি খুব খারাপ লাগছিল, যতই হোক রমা সুস্থ নয়। মিনিট পাঁচেক গাড়ি চালিয়েছি হথাত ফোনটা বেজে উঠল। এতো সকালে কে ফোন করবে? ফোনটা হাতে নিয়ে দেখি, বিজয়দার ফোন। রিসিভ করার সাথে সাথেই ওপাশ থেকে ভেসে এলো একটা উদ্বিগ্ন গলা। ‘দেখুন বিপ্লব বাবু কাল যদি আপনি ওরকম ভয় না পেয়ে সঠিক তথ্য প্রমান জোগাড় করে আনতেন! আজ হয়ত এতো প্রবলেমের মধ্যে পড়তে হতনা’ সত্যি বিজয়দাকে অবিশ্বাস করে বিশাল একটা ভুল কাজ করেছিলাম। আমি চাইলেই ওখান থেকে অনেক কিছু তথ্য জোগাড় করে আনতে পারতাম। কিছুটা সহানুভুতির সুরেই বললাম ‘কেন কি হয়েছে বিজয়দা?’ সঙ্গে সঙ্গে ভেসে এলো বিজয়দার উত্তর। ‘কাল এই রাত ২ টো নাগাদ আবার একটা খুন হয়েছে। মৃতদেহ আবার দ্বিতীয় হুগলী সেতুর পাশেই পাওয়া গেছে। কিন্তু সবচেয়ে অদ্ভুত ব্যাপার হোল এবার খুনের স্টাইলটা একদম আলাদা। বিষ প্রয়োগ হয়নি, যদিও এখনো ময়নাতদন্ত হয়নি তবে আমি চেক করে দেখেছি, আগের মৃতদেহগুলোর মত নয়। কেসটা আরও জটিল হয়ে গেলো বিপ্লব বাবু কারন খুন হয়েছে...’ দেখলাম বিজয়দা কিছুটা থমকে গেলেন। আমি আর ধৈর্য রাখতে না পেরে চেঁচিয়ে উঠলাম ‘কে খুন হয়েছে বিজয়দা?’ বিজয়দার কথা শুনে আমার হ্রিদস্পন্দন প্রায় স্তব্ধ হয়ে গেলো। এটা কি করে হয়! আমি তো ওর গলা শুনে চিনে ফেলেছিলাম যে ওই শান। এমনকি মেকআপ লোশন দিয়ে প্রলেপ লাগানোর পরও আমি ওর হাতের কালো দাগটা চিনতে পেরেছিলাম। এটা কি করে হয়। আমাকে নির্বাক থাকতে দেখে বিজয়দাই বললেন ‘নিজেকে শান্ত করুন, বিপ্লববাবু, সত্যিই রঞ্জন খুন হয়েছে। আপনার মত আমারও সন্দেহের তালিকায় এক নম্বরে ওই ছিল। ওই যে শান তার বেশ কিছু সুনির্দিষ্ট প্রমান আমার হাতে ছিল, কিন্তু তা ওকে গ্রেফতার করার জন্য যথেষ্ট ছিলনা’ নিজেকে কোনরকমে শান্ত করলাম। এতদিন ধরে ধীরে ধীরে আমি রহস্যের জালটা গুটিয়ে এনেছিলাম রঞ্জন তথা শানের মৃত্যুতে রহস্যের জালটা আরও বুনিয়াদ হয়ে গেলো। কিছুটা আক্ষেপের স্বরেই বললাম ‘বিজয়দা, সব আমার দোষ। আমার সেদিন ওরকম আবেগপ্রবণ হয়ে ওখান থেকে চলে আসা উচিত হয়নি। আমি ওখানে থাকলে আরও কিছু তথ্য জোগাড় করতে পারতাম’ বিজয়দা কিছুটা গম্ভীর হয়ে বললেন ‘কি বলেছিলাম বিপ্লব বাবু, নিজেকে শারলক হোমস ভাববেন না। আপনার থেকে ওদের মস্তিষ্ক অনেক বেশী উর্বর। আপনাকে এই রহস্যটা আবার প্রথম থেকে ভাবতে হবে’। বিজয়দা ফোনটা কেটে দিলো। একটা অদ্ভুত জিনিষ আমি লক্ষ্য করলাম। রঞ্জনই যে শান এবং আমি তাকে চিনতে পেরেছি এই কথা আমি বিজয়দাকে একবারের জন্যও বলিনি। বিজয়দা বারবার দাবী করে এসেছেন যে উনি জুলি কে চিনতে পেরেছেন। কিন্তু একবারও দাবী করেন নি যে উনি শানকেও চিনতে পেরেছেন। বরঞ্চ শানকে চিনতে পাড়ার জন্যই আমাকে আর রমাকে মধুকর ভিলায় পাঠানো। আরও একটা অদ্ভুত জিনিষ, বিজয়দার কাছ থেকে ‘নিজেকে শারলক হোমস ভাববেন না, পুলিশ আপনার চেয়ে বেশী বুদ্ধিমান’ এই কথাটা আমি অন্তত ১০০ বার শুনেছি। কিন্তু আজ কথাটা একটু হলেও পরিবর্তিত। ‘কি বলেছিলাম বিপ্লব বাবু, নিজেকে শারলক হোমস ভাববেন না। আপনার থেকে ওদের মস্তিষ্ক অনেক বেশী উর্বর। আপনাকে এই রহস্যটা আবার প্রথম থেকে ভাবতে হবে’- এর সাথে সাথে ফোনটা কাটার আগে এক অদ্ভুত সন্তোষজনক হাঁসি। কিসের সন্তোষ? আমার মত পুলিশেরও তো সমস্ত ভাবনা চিন্তায় জল মিশে গেছে। তাহলে কেন হতাশার স্থলে এই সন্তোষ। আমি যে রঞ্জনকে চিনতে পেরেছি তা কোনমতেই বিজয়দার জানা সম্ভব নয় যদি না রঞ্জন নিজে বিজয়দাকে... আবার কেমন সমীকরনগুলো মিলে যেতে শুরু করল। এই চক্রটাকে আজ ১০ বছর ধরে আমি খুঁজে চলেছি। কখনো ব্যাঙ্কের নেটওয়ার্কে, কখনো ফেসবুকে অথবা কখনো ব্যাক্তিগতভাবে। প্রতিটা ক্ষেত্রেই বুঝেছি, মুখ্য অপারেটর শান। কিন্তু এই প্রমান আমি কখনো পাইনি যে শানই এই চক্রটার মাথায় রয়েছে। আজকে অন্তত আমি নিশ্চিত যে শান এর মাথায় নয়, এর মাথায় অন্য কেউ। যে শানকে সরিয়ে দিয়ে বিশাল একটা মিসিং লিঙ্ক তৈরি করে দিলো। সন্দেহের তালিকায় মোট দুজন। কিন্তু নিশ্চিতভাবে কিছুই বলা সম্ভব নয়। স্কুটারটা নিয়ে যে কতক্ষন দাঁড়িয়ে রয়েছি সেদিকে কোন খেয়াল নেই। হথাত হুঁশ ফিরল, বাড়িতে রমা একা রয়েছে, যত দ্রুত সম্ভব আমায় ওখানে পৌঁছে যেতে হবে। প্রচণ্ড বেগে স্কুটারটা চালিয়ে চলেছি আর মাথার মধ্যে দুটো নাম বারবার করে কিলবিল করে উঠছে। বিজয় সামন্ত ওরফে বিজয়দা এবং শর্মাজী। বিজয়দা সবচেয়ে বেশী রহস্যময়। আমার বাড়িতে এলেন, কিন্তু কখন এলেন তা আমি ছাড়া কেউ জানেনা।