Thread Rating:
  • 19 Vote(s) - 3.47 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
বিপ্লব পোদ্দার- ব্যাংকার অফ দ্যা ইয়ার - Copy
#31
‘মাথাটা বেঞ্চের ওপর ঠেকিয়ে উবুড় হয়ে বস। একটু নড়চড় করলেই মাথা ফুড়ে গুলি এদিক ওদিক করে দেবো’ গলাটা অস্বাভাবিক রকম; কিছুটা প্রচণ্ড কফ জমে গেলে মানুষের গলা যেমন হয় তেমন অথবা ইচ্ছাকৃতভাবে নিজের গলাটা অন্যের কাছে অপরিচিত করতে চাইলে যেমন হয় তেমন। আমি কানটা খাড়া রাখলাম, জানি পেছনের সেই ব্যাক্তি আমার অতি পরিচিত। কিছুতেই নিজের পরিচয় আমার কাছে দিতে চায়না। আমি যেভাবে বসে ছিলাম সেভাবেই বসে থাকলাম; লক্ষ্য একটাই আরও একবার ওর গলাটা শুনে চিনে নেওয়া। মানুষই ভুল করে। হ্যাঁ, ঠিক যা চাইছিলাম তাই হোল। ‘কি হোল; শুনতে পাচ্ছনা। মাথাটা নিচু কর, নয়ত এক্ষুনি গুলি চালিয়ে দেবো’ এবারে গলার স্বরটা আর আগের মত বিকৃত করতে পারলো না, আর সেই কারনেই হয়ত রিভালবারের বাঁটটা দিয়ে সজোরে আমার মাথায় আঘাতটা নেমে এলো। আমার মাথায় বীভৎস যন্ত্রণা হচ্ছিল, কিন্তু এতকিছুর মধ্যেও মনের মধ্যে একটা আনন্দ ছিল। মাথাটা বেঞ্চের ওপর রাখতে রাখতে আমি নিজের মনেই হেঁসে উঠলাম; ও মনে মনে বলে উঠলাম ‘আমি তোমায় চিনে ফেলেছি’। কলেজে পড়াকালীন বহুবার পাড়ায় নাটক, যাত্রাপালা করেছি। একবার সিতার পাট ও করেছিলাম। তাই জানি অভিনয় করা ও গলাকে পরিবর্তন করা এই দুই একসাথে ঠিক কি পরিমান কষ্টসাধ্য কাজ। শান যে আমার এতো পরিচিত ও কাছের লোক তা আগে জানা ছিলনা। কষ্ট হচ্ছিল, কাছের মানুষের এতো বড় বেইমানী দেখে কিন্তু আনন্দও হচ্ছিল যেহেতু সম্পূর্ণ রহস্যের অন্তত ৭৫ ভাগ আমি সল্ভ করে ফেলেছি। বিজয়দাকে আমি নিজের দাদা মনে করি। অনেকবারই ওনার ওপর সন্দেহ হয়েছে কিন্তু কখনোই সেভাবে ওনাকে অবিশ্বাস করিনি। মাদারচোঁদের দুনিয়ায় সত্যিই কেউ কারুর হয়না। আর ভাবতে পারলাম না কিছু কারন আবার প্রচণ্ড জোরে রিভলবারের বাঁটটা দিয়ে মাথায় সজোরে একটা আঘাত। মনে হোল এবার বুঝি সত্যিই মাথাটা ফেটে গেলো। আবার বিকৃত করা গলায় একটা আওয়াজ ‘এই গাড়িটা এবার এখানে নিয়ে আয়। আর লুকিয়ে থাকার দরকার নেই’ তাহলে এতক্ষন সেই সাদা গাড়িটা এখানে অপেক্ষা করছিল। গাড়ির স্টার্ট নেওয়ার আওয়াজ শুনে একটু অনুধাবন করার চেষ্টা করলাম। রাস্তাটার ঠিক উল্টোদিকে কিছু ঝাউ আর ইউক্যালিপটাস গাছের জঙ্গল রয়েছে। নিশ্চয়ই গাড়িটা ওখানেই কোথাও লুকানো ছিল। গাড়িটা যে ধীরে ধীরে এদিকেই এগিয়ে আসছে তা আমি বেশ ভালোই বুঝতে পেরেছি। ‘যে কথাটা বলার কন্য এতকিছু; রমার কিচ্ছু হবেনা। এই বড় রাস্তায় কলকাতাগামী অনেক বাস পেয়ে যাবে। তার মধ্যে কোন একটায় উঠে কেটে পড়ো দেখি। রমাকে ৩-৪ দিন বাদে সুস্থ স্বাভাবিক অবস্থায় ফেরত পাঠিয়ে দেবো। যদি নিজের ও রমার ভালো চাও তো এক্ষুনি এখান থেকে কেটে পড়ো’ আমার মুখ দিয়ে একটাও শব্দ বেরোল না, আমি কিছুই বুঝতে পারছিলাম না আমার কি করা উচিত। রিভালবারের বাঁটটা ক্রমশ আমার মাথা থেকে ধীরে ধীরে সরে গেলো। আমি কি মাথাটা ওপরে ওঠাবো। ধীরে ধীরে মাথাটা ওপরের দিকে তুলতে লাগলাম। ‘খবরদার, তোমায় প্রানে মারলাম না কারন একদিন তোমার থেকে সাহায্য পেয়েছিলাম, যেমন আছো ওইভাবেই বেঞ্চে মাথা দিয়ে শুয়ে থাকো। গাড়িটা বেরিয়ে যাওয়ার পর মাথা তুলবে’ এবারে আওয়াজটা বেশ কিছুটা পেছন থেকে আসলো। বুঝলাম যে ও গাড়ির দিকে চলে যাচ্ছে। না মাথা ওঠানোর কোন প্রশ্ন নেই, ওটা মুর্খামি হবে। কিন্তু শান যেটা লক্ষ্য করল না তা হোল আমার মুখের একটা সন্তোষের হাঁসি। ‘তোমায় প্রানে মারলাম না কারন একদিন তোমার থেকে সাহায্য পেয়েছিলাম’ এবং সেই পরিচিত গলাটা আমায় শানের পরিচয়ের ব্যাপারে নিশ্চিত করে তুলল। প্রচণ্ড বেগে গাড়িটা কাচা রাস্তা বরাবর আমাদের বাংলোর দিকে চলতে শুরু করল। গাড়িতে কে কে ছিল, শুধুই কি শান ও তার ড্রাইভার? নাকি আরও অনেকজন? নাকি বিশেষ একজন? এইসব কিছুই আমার পক্ষে বোঝা সম্ভব হোল না। শুধু একটাই কথা বুঝলাম তা হোল ...ই হোল শান। এই মুহূর্তে আমার একটাই কর্তব্য রমাকে রক্ষা করা। কিন্তু কি করে? ওদের কাছে অস্ত্র আছে। যা কিছু করেছি তা শুধুই বিজয়দাকে ভরসা করে। উনি বলেছিলেন বাংলোতে কোন একজন রয়েছে যে পুলিশের চর এবং শুধু সেকথা বিশ্বাস করেই আমার এতো বড় সিদ্ধান্ত নেওয়া। তাহলে কি সত্যিই কোন পুলিশের চর বাংলোতে নেই! বিজয়দার ওপর অবিশ্বাস হওয়াটা এই মুহূর্তে খুব স্বাভাবিক ব্যাপার। মাথার পেছনে হাত দিয়ে দেখলাম, মাথাটা ফাটেনি, শুধুই ফুলে গেছে। শান কি ইচ্ছে করেই আমায় বেশী আঘাত করতে চায়নি? কাঁচা রাস্তা বরাবর আমি দৌড়াতে শুরু করলাম। মাথায় শুধুই নতুন কিছু সমীকরন; বিজয়দার আমাদের বাড়িতে আসা- এটা শুধু আমিই জানি অন্য কেউ নয়, সেদিন বিজয়দা কার সাথে কথা বলছিলেন; রঞ্জনের সাথে? এটাও পরিস্কার নয়, যদি বিজয়দা জানতেন এখানে শান ও জুলি আসবেই তাহলে আমাকে ও রমাকে কেন গিনিপিগ বানিয়ে পাঠালেন; উনি তো নিজেই আসতে পারতেন এবং সর্বোপরি আমার এনজিওতে এতো টাকা দান করার ইচ্ছা প্রকাশ এবং তা ঘুষের টাকা বলে স্বীকার করে নেওয়া। সমস্ত ষড়যন্ত্রের কারিগর তাহলে বিজয়দাই! আর ভাবতে ভালো লাগছিল না। এই মুহূর্তে একটাই কাজ রমাকে উদ্ধার করা। আমি কাঁচা রাস্তাটা বরাবর দৌড়ে চলছিলাম। রাস্তাটা বেশ অন্ধকার, তাই আমি যে দউরাচ্ছি এটাও যেমন অন্যের পক্ষে বোঝা সম্ভব নয় তেমনই সামনে কেউ দাঁড়িয়ে আছে কিনা তা আমার পক্ষে বোঝা সম্ভব নয়। আরও কিছুটা দূরে যাওয়ার পর হথাত একটা অত্যন্ত উজ্জ্বল ও চকচকে বস্তু আমার চোখে পড়ল। মন বলছে সামনের মোড়টায় কেউ একজন দাঁড়িয়ে রয়েছে। দ্রুত নিজেকে পাশের একটা গাছের পেছনে লুকিয়ে নিলাম। এক দৃষ্টিতে সামনের দিকে তাকিয়ে থাকলাম। হ্যাঁ, যা ভেবেছি তাই। এইসময় ওর মোবাইলটা বেজে না উঠলে হয়ত বুঝতেই পারতাম না। মোবাইলের আলোতে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে; হাতে একটা একে ৪৭ রাইফেল; ওই গোপন ঘরটায় যে দুজন গুণ্ডাকে দেখেছিলাম তাদেরই একজন। বুঝলাম এর কাজ, বাংলোর মধ্যে কে ঢুকছে আর কে বেরোচ্ছে সেদিকে নজর রাখা। রমাকে বাঁচাবো কি করে? ২-৩ দিন ধরে কি এই জানোয়ারগুলো রমার শরীরটা ছিঁড়ে ছিঁড়ে খাবে? আর তারপর ছিবড়ে করে নষ্ট মেয়েমানুষটাকে আমার কাছে পাঠিয়ে দেবে? না, এটা আমার পক্ষে মেনে নেওয়া সম্ভব নয়। বেঁচে থাকতে আমি যেভাবে হোক রমাকে এখান থেকে উদ্ধার করব। আমার বাঁ দিকে কয়েকটা ঝাউ গাছের পাতলা জঙ্গল। আমাদের বাংলোর উল্টোদিকেও ঠিক একিরকম দেখতে কয়েকটা গাছের জঙ্গল ছিল। নিশ্চয়ই এই জঙ্গলটার ভেতর দিয়ে গেলে বাংলোর উল্টো দিকে উঠবো। যা ভাবা তাই কাজ। আমি ধীরে ধীরে জঙ্গলের মধ্যে প্রবেশ করলাম। প্রথমে বুঝতে পারিনি, এখন পারছি, জঙ্গলটা বাইরে থেকে দেখে যতটা পাতলা লাগে ও ছোট লাগে বাস্তবে তা নয়। এক পা এক পা করে যত ভেতরের দিকে এগচ্ছি জঙ্গলটা ততই ঘন হয়ে যাচ্ছে। পাতায় খসখস করে শব্দ হচ্ছে, সেটা আমার পায়ের শব্দ নাকি অন্য কিছু তা সত্যিই আমার বোধগম্য হচ্ছেনা। এই জঙ্গলে যে বেশকিছু বিষধর সাপ থাকবে তা একটা বাচ্চা ছেলেও বলে দিতে পারে। না প্রানের ভয় আমার নেই, ভয় একটাই তা হোল রমা। যেভাবে হোক, রমাকে ওদের হাত থেকে উদ্ধার করতে হবে। যত এগচ্ছি ততই খসখস করে শব্দটা বাড়ছে। মাঝে মধ্যে মনে হচ্ছে কেউ বুঝি আমার পিছু নিচ্ছে আবার মাঝে মধ্যে মনে হচ্ছে এটা বুঝি আমার মনের ভুল। বেশকিছুটা দূরে সামান্য একটা আলোর দিশা দেখা যাচ্ছে। হলফ করে বলতে পারি ওটাই আমাদের বাংলোর উল্টো দিকটা। আমি প্রানপনে দৌড় লাগালাম। আমাকে যেভাবে হোক বাংলোতে প্রবেশ করতে হবে। যত দৌড়াচ্ছি গাছগুলোর মধ্যে পারস্পরিক দূরত্বও ক্রমশ কমে যেতে শুরু করছে। আমিও নিশ্চিত হচ্ছি যে আমি সঠিক দিশাতেই রয়েছি। বেশ কিছুদুর যাওয়ার পর গাছগুলোর ফাঁক দিয়ে বাংলোর প্রাচীরটা দৃশ্যমান হোল। আমিও কিছুটা হাঁপাতে হাঁপাতে সামনের দিকে এগিয়ে গেলাম। যখন স্পষ্টভাবে বাংলোটা দৃশ্যমান হোল, তখন এক মুহূর্তের জন্যও আমার মনে আনন্দের সঞ্চার ঘটেছিল, কিন্তু পরক্ষনেই সেই আনন্দ কোথায় যেন হারিয়ে গেলো। বাংলোর সামনে অপর গুন্ডাটি পাহারায় রয়েছে, এবং এমনভাবে দাঁড়িয়ে আছে যে কিছুতেই আমি নিজেকে লুকিয়ে বাংলোর মধ্যে ঢোকাতে পারবোনা। হথাত দেখি সেই ষণ্ডমার্কা লোকটি আমারই দিকে এগিয়ে আসছে। কিন্তু ওর পক্ষে তো বোঝা সম্ভব নয় যে আমি এখানে রয়েছি, জঙ্গলের ভেতরটা অন্ধকার আর বাংলোর দিকে আলো। দৌড়ে যে পেছনে চলে যাবো তারও উপায় নেই। পাতায় যা খসখস করে শব্দ হয়, তাতে ওরা নিশ্চিত হয়ে যাবে যে আমি এখানে লুকিয়ে আছি। ক্রমশ একপা একপা করে আমি বাঁদিকে কোনাকুনি ভাবে সরে যেতে শুরু করলাম। একদম জঙ্গলের কাছাকাছি লোকটা আসার অনেক আগেই আমি অন্তত ১০ মিটার পেছনে চলে গেছি। নিজেকে একটা গাছের পেছনে সম্পূর্ণ লুকিয়ে রেখে সামনের দিকে তাকালাম। লোকটা জঙ্গলের সামান্য ভেতরে প্রবেশ করে কি একটা খুঁজে চলেছে। ওরা কি জেনে গেছে আমিই জঙ্গলের মধ্যে লুকিয়ে রয়েছি? প্রায় মৃত মানুষের মত নিঃশ্বাস বন্ধ করে চুপটি করে একটা গাছের পেছনে লুকিয়ে থাকলাম। হথাত দেখি লোকটা জঙ্গল থেকে বাইরে বেরিয়ে পকেটের মোবাইলটা বার করল। কাকে ফোন করছে ও? চোখ ও কান এই দুই ইন্দ্রিয়কেই সজাগ রেখে আমি সামনের দিকে তাকিয়ে থাকলাম। ‘কাঁহা হো? বাহার আও?’ লোকটার কথাটা শুনে আমারও গাটা ছমছম করতে শুরু করল। তাহলে কি জঙ্গলের মধ্যেও পাহারার ব্যাবস্থা ছিল, কেউ কি আমার উপস্থিতি জঙ্গলের মধ্যে থেকেই জানান দিয়েছে? হথাত দেখি পেছন থেকে একটা খসখস শব্দ ভেসে আসছে। গাছের গুঁড়িটার সাথে নিজেকে একদম সেঁটে রেখে আমি দাঁড়িয়ে থাকলাম। আওয়াজটা আরও বাড়তে লাগলো, আমিও অপেক্ষায় থাকলাম কে আসছে তা দেখার জন্য। পেছন থেকে হলেও চিন্ময়কে চিনতে আমার কোন অসুবিধা হলনা। ওই লোকটার দিকে তাকিয়ে চিন্ময় বলে উঠল ‘তাহলে আমি এখন কি করব’ সঙ্গে সঙ্গে উত্তর ‘শান সাব আগেয়া হ্যায়। সুরঙ্গ কি মুখ ঢাককে ওয়াপাশ আ যাও’ গায়ের রোমগুলো খাড়া হয়ে যাচ্ছিল। এই মধুকর ভিলায় যে এতো রহস্য একসাথে লুকিয়ে আছে তা সত্যিই আমার বিশ্বাস হচ্ছেনা। অর্থাৎ এই মধুকর ভিলায় প্রবেশ করার জন্য একটা সুরঙ্গও রয়েছে।
Like Reply


Messages In This Thread
RE: বিপ্লব পোদ্দার- ব্যাংকার অফ দ্যা ইয়ার - Copy - by Raj1100 - 28-01-2020, 11:33 PM



Users browsing this thread: 5 Guest(s)