28-01-2020, 10:35 PM
নাসিমার ঘুম আসছেনা না চিন্তায়৷ সকাল হলে কি করবে সে? মতিন যদি কিছু টের পায় সর্বনাশ হবে৷ এই যুদ্ধের সময় কি না সে শত্রুপক্ষের একজনকে বাড়িতে আশ্রয় দিয়েছে! কি ভয়ানক ব্যাপার! নাসিমা শুনেছে পাকিস্তানি সেনারা অনেক খারাপ। মানুষ মারা এদের কাছে কোনো ব্যাপারই না। আবার এরা নাকি মেয়েদের ;.,ও করে। না, নাসিমার উচিৎ হয়নি লোকটাকে আশ্রয় দেওয়া৷ মতিনকে বলে ফেলবে নাকি? কিন্তু লোকটা এমন অসহায়ভাবে তার কাছে আশ্রয় চাইলো৷ মতিনকে বললে লোকটাকে মুক্তিবাহিনীর হাতে তোলে দেবে৷ তারা তাকে মেরে ফেলবে৷ এসব ভাবতে ভাবতেই এক সময় নাসিমার চোখটা লেগে গেল৷
সকালে মতিন খেয়েদেয়ে একটু বাজারের দিকে গেল৷ গতকাল নাকি গ্রামে পাকবাহিনী এসেছিল৷ কিন্তু সুবিধা করতে না পেরে পালিয়ে গেছে৷ বিষয়টা খুবই চিন্তার৷ যদিও এই গ্রামে মুক্তিবাহিনীর ক্যাম্প আছে কিন্তু পাকিস্তানি সেনাদের তো অস্ত্রশস্ত্র অনেক৷ কয়দিনই বা তারা প্রতিরোধ করতে পারবে৷ বাজারে মিটিং হবে কি করা যায় তা নিয়ে৷ মতিন সেখানেই যাচ্ছে।
মতিন যাওয়ার পর নাসিমা ভয়ে ভয়ে লাকড়ির ঘরের দরজাটা খুলল। শব্দ পেয়ে লোকটা জড়সড় হয়ে গেল ভয়ে। নাসিমা দেখল লোকটা গুটি মেরে বসে আছে। চোখ তুলে তাকাল সে৷ নাসিমাকে দেখে একটু আশ্বস্ত হল৷ নাসিমাও যেন একটু ভরসা পেল৷ এ হয়ত এত খারাপ না। আর খারাপ হলেও সে এখন কিছু করতে পারবেনা। সে আহত এবং দুর্বল। পায়ে জখম হয়েছে। তার প্রাণের ভয় আছে৷ কেউ দেখলেই সে প্রাণটা হারাবে৷ তাই নাসিমাই তার শেষ ভরসা। সে নাসিমার দিকে ভীরু চোখে চেয়ে বলল-
-কিসিকো শক তো নেহি হুয়ানা, বেহেনজি?
নাসিমা গ্রামের মেয়ে হলেও একেবারে মূর্খ না। এইট পাশ৷ সে উর্দু ভালো না বুঝলেও মোটামুটি বুঝতে পারল৷ নাসিমা মাথা নেড়ে বুঝিয়ে দিল, না কেউ কিছু সন্দেহ করেনি?
নাসিমা জানতে চাইল তার পায়ে কি হয়েছে৷ গুলি লেগেছে কিনা? লোকটা বলল, গুলি লাগেনি কিন্তু কেটে গেছে মারাত্মকভাবে। নাসিমা ঘর থেকে এক টুকরো কাপড় এনে দিল কাটা পায়ে বাঁধতে। তারপর কিছু ভাত এনে দিল৷ লোকটা গ্রোগাসে তা গিলল। সে যখন ভাত খাচ্ছিল নাসিমার ভীষণ মায়া হচ্ছিল৷ নিশ্চয়ই তার অনেক খিদে পেয়েছিল৷ নাসিমা বলল -
-আপনার নাম কি?
-মেরা নাম জামশেদ হে। ম্যা পাকিস্তান কি বালাকোট সে হু।
খাওয়া শেষ হলে নাসিমা থালা নিয়ে গেল। ঘর থেকে একটা পুরনো গামছা এনে দিল হাত মুছতে। খাবার খেয়ে জমশেদ এর চোখেমুখে তৃপ্তি। সে জানেনা তার ভাগ্যে কি আছে। হয়ত সে মারা যাবে৷ হয়ত মেয়েটি তাকে ধরিয়ে দেবে৷
একটু পর নাসিমা ফিরে এল৷ সে একটা মাদুর এনে বিছিয়ে দিল৷ তার উপর একটা কাঁথা রেখে তাতে একটা বালিশ দিল৷ জমশেদ নিজের চোখকেই বিশ্বাস করতে পারছিলনা, একজন বাঙালি গৃহবধূ তার প্রতি এত দয়ালু হবে! নাসিমা তাকে বলে গেল সে যেন কোনো প্রকার শব্দ না করে। তার স্বামী টের পেলে সমস্যা হবে৷ তাকে ধরিয়ে দেবে। নাসিমা সুযোগ বুঝে তাকে খাবার দিয়ে যাবে৷ নাসিমা চলে যাওয়ার সময় জমশেদ বলল,"বেহেনজি, আপনা নাম?"
-নাসিমা৷
-বহত পেয়ারা নাম হে৷ বেহেনজি কিয়া আপকি বাচ্চা হোগি?
-হ্যাঁ৷
-ইদার স্রিফ আপ অউর আপকি শোহর রেহতি হো? অউর কই নেহে রেহতা?
-না।
দুপুরে নাসিমা বেশি করে ভাত রান্না করল যাতে জমশেদও খেতে পারে। মতিন দুপুরে বাড়ি ফিরল। গোসল সেরে বারান্দায় খেতে বসল পাটি বিছিয়ে৷ নাসিমা খাবার বেড়ে দিল।
-বুঝলে নাসিমা, গতকাল নাকি মিলিটারি রা গ্রামে ঢোকার চেষ্টা করেছে৷ পরিস্থিতি বেশি ভালোনা।
-আমরা এখন কি করুম? এখান থাইকা চইলা যাইবা?
-জানিনা৷ অবস্থা খারাপ হলে তো যেতেই হবে।
নাসিমা একবার লাকড়ির ঘরের দিকে তাকাল৷ তারা চলে গেলে জমশেদের কি হবে? হয়ত না খেয়ে মারা যাবে৷ অথবা ধরা পড়বে৷
দুপুরে খাওয়ার পর মতিন একটু বিছানায় গা এলিয়ে দিল৷ দেশের এমন অবস্থায় শান্তিতে ঘুমও আসেনা৷ কিন্তু তাও সে একটু ঘুমাতে চেষ্টা করল অভ্যাসমত৷ নাসিমা এই ফাঁকে খাবারের থালা নিয়ে লাকড়ির ঘরে গেল৷ জমশেদ খেয়ে নিল। খাওয়া শেষে নাসিমা যখন থালা বাটি নিয়ে চলে আসছিল, জমশেদ বলল-
-বেহেনজি বেইঠিয়ে না।
-কেন?
-কুচ নেহি। থোরা বাতচিত কার লেতি৷ ম্যা আপকো এহসান কাভি নেহি ভুলোঙা৷ আপকা শোহর কিদার হ্যায়?
নাসিমা তাকে বোঝাল যে তার স্বামী ঘরেই আছে ঘুমিয়ে আছে৷ কথায় কথায় জমশেদ অনেক কথাই বলল৷ তার স্বপ্ন ছিল আর্মিতে চাকরি করা৷ স্বপ্ন পূরণ হয়েছে৷ কিন্তু সে যুদ্ধ, মানুষ হত্যা এসব পছন্দ করেনা৷ কিন্তু বাধ্য হয়ে এসব করতে হচ্ছে। সে অনেকদিন বাড়ি যায়না৷ তার বিয়ে ঠিক হয়ে আছে৷ ফিরলেই বিয়ে হবে৷ কিন্তু আদৌ ফিরবে কিনা এখন তারই ঠিক নেই৷ কনের নাম রেশমি৷ জমশেদ কনের একটা সাদাকালো ছবি দেখালো৷ সালোয়ার কামিজ পড়া ছিপছিপে এক তরুণীর ছবি।
বিকেলবেলা মতিন আবার বাইরে গেল৷ নাসিমা তখন জমশেদ এর কাছে গেল। এবার আর খাবার দিতে নয়৷ এমনি গেল৷ কিছুক্ষণ কথা বলল। জমশেদ এর ইচ্ছা পাকিস্তান ফিরে যাবে৷ কিন্তু কিভাবে যাবে সে জানেনা৷ জমশেদ হঠাৎ কিছু বলতে ইতস্ত করছিল। পরে নাসিমা বুঝতে পারল সে টয়লেটে যেতে চাচ্ছে৷ নাসিমা তাকে নিয়ে গেল এবং নিজে টয়লেটের সামনে দাঁড়িয়ে রইল৷ কেউ দেখে ফেললে সর্বনাশ। এমন সময় এক বিপত্তি ঘটল। বাড়ির পাশ দিয়ে রাস্তা দিয়ে কেউ একজন আসছে এদিকে৷ নাসিমা ভয় পেয়ে বাথরুমের দরজায় টোকা দিল৷ জমশেদ বেরিয়ে এলে বলল তাড়াতাড়ি ঘরে যেতে। জমশেদ খুড়িয়ে হাঁটছিল৷ তাই দেখে নাসিমা জমশেদের একটা হাত তার কাঁধের উপর রেখে জমশেদকে দ্রুত ঘরে যেতে সাহায্য করল৷ নাসিমার হাতের আচমকা স্পর্শ পেয়ে জমশেদ এর শরীরটা কেমন করে উঠল। এদিকে নাসিমা জমশেদকে ঘরে ঢুকিয়ে বাইরে এসে দেখল লোকটা রাস্তা ধরে অন্যদিকে চলে গেছে। নাসিমা একটু স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল।
সকালে মতিন খেয়েদেয়ে একটু বাজারের দিকে গেল৷ গতকাল নাকি গ্রামে পাকবাহিনী এসেছিল৷ কিন্তু সুবিধা করতে না পেরে পালিয়ে গেছে৷ বিষয়টা খুবই চিন্তার৷ যদিও এই গ্রামে মুক্তিবাহিনীর ক্যাম্প আছে কিন্তু পাকিস্তানি সেনাদের তো অস্ত্রশস্ত্র অনেক৷ কয়দিনই বা তারা প্রতিরোধ করতে পারবে৷ বাজারে মিটিং হবে কি করা যায় তা নিয়ে৷ মতিন সেখানেই যাচ্ছে।
মতিন যাওয়ার পর নাসিমা ভয়ে ভয়ে লাকড়ির ঘরের দরজাটা খুলল। শব্দ পেয়ে লোকটা জড়সড় হয়ে গেল ভয়ে। নাসিমা দেখল লোকটা গুটি মেরে বসে আছে। চোখ তুলে তাকাল সে৷ নাসিমাকে দেখে একটু আশ্বস্ত হল৷ নাসিমাও যেন একটু ভরসা পেল৷ এ হয়ত এত খারাপ না। আর খারাপ হলেও সে এখন কিছু করতে পারবেনা। সে আহত এবং দুর্বল। পায়ে জখম হয়েছে। তার প্রাণের ভয় আছে৷ কেউ দেখলেই সে প্রাণটা হারাবে৷ তাই নাসিমাই তার শেষ ভরসা। সে নাসিমার দিকে ভীরু চোখে চেয়ে বলল-
-কিসিকো শক তো নেহি হুয়ানা, বেহেনজি?
নাসিমা গ্রামের মেয়ে হলেও একেবারে মূর্খ না। এইট পাশ৷ সে উর্দু ভালো না বুঝলেও মোটামুটি বুঝতে পারল৷ নাসিমা মাথা নেড়ে বুঝিয়ে দিল, না কেউ কিছু সন্দেহ করেনি?
নাসিমা জানতে চাইল তার পায়ে কি হয়েছে৷ গুলি লেগেছে কিনা? লোকটা বলল, গুলি লাগেনি কিন্তু কেটে গেছে মারাত্মকভাবে। নাসিমা ঘর থেকে এক টুকরো কাপড় এনে দিল কাটা পায়ে বাঁধতে। তারপর কিছু ভাত এনে দিল৷ লোকটা গ্রোগাসে তা গিলল। সে যখন ভাত খাচ্ছিল নাসিমার ভীষণ মায়া হচ্ছিল৷ নিশ্চয়ই তার অনেক খিদে পেয়েছিল৷ নাসিমা বলল -
-আপনার নাম কি?
-মেরা নাম জামশেদ হে। ম্যা পাকিস্তান কি বালাকোট সে হু।
খাওয়া শেষ হলে নাসিমা থালা নিয়ে গেল। ঘর থেকে একটা পুরনো গামছা এনে দিল হাত মুছতে। খাবার খেয়ে জমশেদ এর চোখেমুখে তৃপ্তি। সে জানেনা তার ভাগ্যে কি আছে। হয়ত সে মারা যাবে৷ হয়ত মেয়েটি তাকে ধরিয়ে দেবে৷
একটু পর নাসিমা ফিরে এল৷ সে একটা মাদুর এনে বিছিয়ে দিল৷ তার উপর একটা কাঁথা রেখে তাতে একটা বালিশ দিল৷ জমশেদ নিজের চোখকেই বিশ্বাস করতে পারছিলনা, একজন বাঙালি গৃহবধূ তার প্রতি এত দয়ালু হবে! নাসিমা তাকে বলে গেল সে যেন কোনো প্রকার শব্দ না করে। তার স্বামী টের পেলে সমস্যা হবে৷ তাকে ধরিয়ে দেবে। নাসিমা সুযোগ বুঝে তাকে খাবার দিয়ে যাবে৷ নাসিমা চলে যাওয়ার সময় জমশেদ বলল,"বেহেনজি, আপনা নাম?"
-নাসিমা৷
-বহত পেয়ারা নাম হে৷ বেহেনজি কিয়া আপকি বাচ্চা হোগি?
-হ্যাঁ৷
-ইদার স্রিফ আপ অউর আপকি শোহর রেহতি হো? অউর কই নেহে রেহতা?
-না।
দুপুরে নাসিমা বেশি করে ভাত রান্না করল যাতে জমশেদও খেতে পারে। মতিন দুপুরে বাড়ি ফিরল। গোসল সেরে বারান্দায় খেতে বসল পাটি বিছিয়ে৷ নাসিমা খাবার বেড়ে দিল।
-বুঝলে নাসিমা, গতকাল নাকি মিলিটারি রা গ্রামে ঢোকার চেষ্টা করেছে৷ পরিস্থিতি বেশি ভালোনা।
-আমরা এখন কি করুম? এখান থাইকা চইলা যাইবা?
-জানিনা৷ অবস্থা খারাপ হলে তো যেতেই হবে।
নাসিমা একবার লাকড়ির ঘরের দিকে তাকাল৷ তারা চলে গেলে জমশেদের কি হবে? হয়ত না খেয়ে মারা যাবে৷ অথবা ধরা পড়বে৷
দুপুরে খাওয়ার পর মতিন একটু বিছানায় গা এলিয়ে দিল৷ দেশের এমন অবস্থায় শান্তিতে ঘুমও আসেনা৷ কিন্তু তাও সে একটু ঘুমাতে চেষ্টা করল অভ্যাসমত৷ নাসিমা এই ফাঁকে খাবারের থালা নিয়ে লাকড়ির ঘরে গেল৷ জমশেদ খেয়ে নিল। খাওয়া শেষে নাসিমা যখন থালা বাটি নিয়ে চলে আসছিল, জমশেদ বলল-
-বেহেনজি বেইঠিয়ে না।
-কেন?
-কুচ নেহি। থোরা বাতচিত কার লেতি৷ ম্যা আপকো এহসান কাভি নেহি ভুলোঙা৷ আপকা শোহর কিদার হ্যায়?
নাসিমা তাকে বোঝাল যে তার স্বামী ঘরেই আছে ঘুমিয়ে আছে৷ কথায় কথায় জমশেদ অনেক কথাই বলল৷ তার স্বপ্ন ছিল আর্মিতে চাকরি করা৷ স্বপ্ন পূরণ হয়েছে৷ কিন্তু সে যুদ্ধ, মানুষ হত্যা এসব পছন্দ করেনা৷ কিন্তু বাধ্য হয়ে এসব করতে হচ্ছে। সে অনেকদিন বাড়ি যায়না৷ তার বিয়ে ঠিক হয়ে আছে৷ ফিরলেই বিয়ে হবে৷ কিন্তু আদৌ ফিরবে কিনা এখন তারই ঠিক নেই৷ কনের নাম রেশমি৷ জমশেদ কনের একটা সাদাকালো ছবি দেখালো৷ সালোয়ার কামিজ পড়া ছিপছিপে এক তরুণীর ছবি।
বিকেলবেলা মতিন আবার বাইরে গেল৷ নাসিমা তখন জমশেদ এর কাছে গেল। এবার আর খাবার দিতে নয়৷ এমনি গেল৷ কিছুক্ষণ কথা বলল। জমশেদ এর ইচ্ছা পাকিস্তান ফিরে যাবে৷ কিন্তু কিভাবে যাবে সে জানেনা৷ জমশেদ হঠাৎ কিছু বলতে ইতস্ত করছিল। পরে নাসিমা বুঝতে পারল সে টয়লেটে যেতে চাচ্ছে৷ নাসিমা তাকে নিয়ে গেল এবং নিজে টয়লেটের সামনে দাঁড়িয়ে রইল৷ কেউ দেখে ফেললে সর্বনাশ। এমন সময় এক বিপত্তি ঘটল। বাড়ির পাশ দিয়ে রাস্তা দিয়ে কেউ একজন আসছে এদিকে৷ নাসিমা ভয় পেয়ে বাথরুমের দরজায় টোকা দিল৷ জমশেদ বেরিয়ে এলে বলল তাড়াতাড়ি ঘরে যেতে। জমশেদ খুড়িয়ে হাঁটছিল৷ তাই দেখে নাসিমা জমশেদের একটা হাত তার কাঁধের উপর রেখে জমশেদকে দ্রুত ঘরে যেতে সাহায্য করল৷ নাসিমার হাতের আচমকা স্পর্শ পেয়ে জমশেদ এর শরীরটা কেমন করে উঠল। এদিকে নাসিমা জমশেদকে ঘরে ঢুকিয়ে বাইরে এসে দেখল লোকটা রাস্তা ধরে অন্যদিকে চলে গেছে। নাসিমা একটু স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল।