Thread Rating:
  • 10 Vote(s) - 2.7 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
প্রবাসে দৈবের বশে (সংগ্রহীত)
#34
রাত তখন প্রায় একটা। দেয়াল-ঘড়িতে বাজলো বলেই বুঝতে পারল সুরজিত। কখন ঘুম এসেছে কখন ঘুম ভাঙ্গলো মনে নেই, তবে জানে যে এখন একটা বাজে। ইস পাসের মোবাইল ফোনটা ভাগ্যিস অফ করা ছিল। খুলতেই একটা ছবি ভেসে উঠলো যেটা সত্যি ও দেখতে চায়না। সত্যি বলতে কি চাওয়া উচিত নয়। লাল বেনারসী পরা নীতার বিয়ের ছবি। নীতার বিয়ের দিন তুলেছিল। বেশ ভালো দেখাচ্ছিল নীতাকে। লাল শাড়িতে আর এক গা গয়না পরে দারুন মানাচ্ছিল। একটা সস্তা দোকানের পাঞ্জাবি পরে গেছিলো সুরজিত। ওই পরিবেশে নিজেই বুঝতে পারছিল ওকে মানাচ্ছে না। সঞ্জয়ের পরিবারের লোকেরা বেশ বড়লোক, নীতার পরিবার মোটামুটি বেশ সচ্ছল। গানের স্কুলের বন্ধু হিসেবে এইটুকুই তো পরিচয় ওর। তাও নীতার বন্ধু মন্দাক্রান্তা, লোপা আর সুমিতা এসেছিল বলে ভালো, নয়তো পুরো বোর হতে হতো। ওদের যদিও অত সুন্দরী দেখতে না তবে কথা বলার জন্যে। সত্যি সুন্দরী লাগছিল নীতাকে। ফর্সা টকটকে গায়ের রং আর ওই পোশাক। অন্য মেয়েরাও একটু ঈর্ষার চোখেই দেখছিল নীতাকে আর কেউ কেউ হয়ত ভাবছিল নিজেদের বিয়ের কথা। নীতার হাসি, নীতার চাউনি সব অন্যরকম ছিল সেদিন। কিন্তু সুরজিতের একটু কেমন কেমন লাগছিল। মনে হচ্ছিল আজ শেষ দিন নীতাকে দেখার। আর দেখতে পাবে না। অনেক অনেক দুরে চলে যাবে নীতা। আর গানের স্কুল থেকে ফেরা হবেনা, আর রেওয়াজ হবে না, কত সহজে নীতার সঙ্গে কথা বলা যেত, আজ তার চারিদিকে কত লোক। সবার সঙ্গে মিষ্টি হেসে কথা বলছে নীতা। সুরজিতের সঙ্গেও। তাই ওর অনুমতি নিয়ে একটা ছবি তুলেছিল ও। সেই ছবিটাই খোলা ছিল মোবাইলে। এখন তো আর নীতা থাকবে না। শুধু ওই ছবিটাই থাকবে। গানের স্কুলে কেমন একা একা লাগে। যেতে ইচ্ছে করে না। শুধু একটা গান মনে পরে কবিগুরুর।
আমার জীবনপাত্র উচ্ছলিয়া মাধুরী করেছ দান–
তুমি জান নাই, তুমি জান নাই,
তুমি জান নাই তার মূল্যের পরিমাণ॥
রজনীগন্ধা অগোচরে
যেমন রজনী স্বপনে ভরে সৌরভে,
তুমি জান নাই, তুমি জান নাই,
তুমি জান নাই, মরমে আমার ঢেলেছ তোমার গান॥
নীতা তো রজনীগন্ধা, সে কি করে বুঝবে কার জীবন ভরে দিয়েছে সে তার সৌরভে। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল সুরজিত। কোথায় সে আর কোথায় নীতা। বড়লোক বরের কাছে চলে যাবে নীতা।
নীতার বর আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করেনি ও আর। ফার্স্ট ব্যাচে খেয়ে বাড়ি চলে এসেছিল। কেমন একটা ঘোরের মধ্যে কেটেছিল সেই রাত। কি একটা যেন হারিয়ে গেল চিরদিনের মত। তবে কি সত্যি প্রেমে পড়েছিল ও নীতার? মুর্খ। প্রেম হয় সমান সমানে। নীতার সঙ্গে হতে পারেনা সুরজিতের। নীতার যোগ্য পুরুষ সঞ্জয়।
কিন্তু মন কি মানে? মাঝে মাঝে মন মানত না। মোবাইল ফোনে তোলা নীতার ছবি একলা ঘরে দেখত। কেমন যেন নেশার মত হয়ে গেল। নীতার চোখ নীতার মুখের দিকে ঘন্টার পর ঘন্টা তাকিয়ে থাকত। কেউ দেখত না ওকে, শুধু ও আর নীতা। মনে পড়ত সেই গান। এও কান্তকবির। একসঙ্গেই তুলেছিল ও আর নীতা।
স্বপনে তাহারে কুড়ায়ে পেয়েছি রেখেছি স্বপনে ডাকিয়া, স্বপনে তাহারি মুখানি নিরখি, স্বপন কুহেলি মাখিয়া।।
তারে বরমালা দিনু স্বপনে হল হৃদি বিনিময় গোপনে স্বপনে দুজনে প্রেম আলাপনে যাপি সারা নিশি জাগিয়া।।
করি স্বপ্নে মিলন সুখ গান কবি স্বপ্নে প্রণয় অভিমান হয় স্বপ্নে প্রেম কলহ, যায় গো, স্বপনেরি সনে ভাঙিয়া। যা কিছু আমার দিতে পারি সব সুখ স্বপনেরি লাগিয়া।।
ঠিক আছে। এখন থেকে নীতাকে স্বপ্নেই দেখবে ও। সত্যি না হলো তো কি হলো? সত্যিকারের নীতাকে তো কোনদিন পাবে না ও। তার থেকে এই ভালো। নীতার এই ছবিটাই ওর কাছে সত্যি হয়ে থাক। এই নিয়েই বেঁচে থাকবে সুরজিত।
All the contents posted by me have been downloaded from the internet. Credit goes to the original uploaders. Anyone having any issues with pictures posted, please message for removal.
Like Reply


Messages In This Thread
RE: প্রবাসে দৈবের বশে (সংগ্রহীত) - by stallionblack7 - 28-01-2020, 05:00 PM



Users browsing this thread: 3 Guest(s)