Thread Rating:
  • 17 Vote(s) - 2.35 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
সুরাজপুরে শুরু [সংগৃহীত]
#20
যৌন উল্লাস ১
 
সোফার সামনে টেবিলটাতে জণি ওয়াকার ব্ল্যাক লেবেলটা হাফ বোতল পড়ে আছে। সামনের চারটে গ্লাসের মধ্যে খুঁজে আমারটা বের করলাম। হ্যাঁ এইটাই আমার ছিল। বাকী তিনটের একটাতে উদিতার পিঙ্ক লিপস্টিক লেগে আছে, একটা অম্লানদার আধ-খাওয়া গ্লাস আর একটাতে করণের সিগারেট ডোবানোসামান্য সোডা ওয়াটার আর আইস বক্স থেকে তিনটে কিউব ঢেলে সিপটা নিলাম। হ্যাঁ ভালোই বানানো হয়েছে পেগটা। বারান্দায় উঠে গিয়ে বেতের চেয়ারটা টেনে হাত-পা ছড়িয়ে বসলাম। খুব রিল্যাক্সড লাগছে। সন্ধ্যে থেকে এই নিয়ে আমার সাত নম্বর। ছয় আর সাতের মাঝের এই এক ঘণ্টার ব্রেকটা দরকার ছিল। সানিকে গল্প বলে ঘুম পাড়াতে হয় আবার। আমি বা উদিতা পালা পালা করে এক একদিন এক একজন করে সেই কাজটা করি যাতে এক গল্প তাড়াতাড়ি পুরোনো না হয়ে যায়। আজকে আমার পালা ছিল।
 
সমুদ্রের দিক থেকে একটা মৃদু হাওয়া আসছে আর তাতে যেন নেশাটা বেশী করে চড়ছে। ওরলীর এই ফ্ল্যাটের সাঁইত্রিশ তলায় বসে রাতের মুম্বাইয়ের সৌন্দর্য্য দেখার এক আলাদা আনন্দ। ঘড়িতে দেখলাম দশটা বাজে প্রায়। এত তাড়াতাড়ি মাতাল হলে চলবে নাকি। পুরো রাত পড়ে আছে তো মস্তি করার জন্যে।
 
 
 
নেশা করতে বসলেই না চাইলেও ওই দিনটার কথা মনে পড়ে যায়। দেখতে দেখতে এক বছর হয়ে গেল। কালকে দেওয়ালী, আবার আমরা কোলকাতার বাইরে। সেই অভিশপ্ত দিনটাকে নিয়ে আমি বা আমরা অনেক ভাবে ভেবেছি তারপরে। কি করলে হয়তো ভালো হতো, হয়তো কিছু কিছু জিনিস আটকাতে পারতাম। কিন্তু সত্যি করে বলছি কিছুই ভেবে পাইনি। না আমি, না উদিতা। করণকে অনেক খুঁচিয়ে, অনেক সেন্টু দিয়ে শেষমেষ কিছু খবর বের করতে পারলেও বাকী অনেকটাই আমার কল্পণা দিয়ে পূরণ করতে হয়েছে। তাই সেগুলোর কতটা সত্যি আর কতটা নিছক আমার কল্পবিলাসী মনের ভ্রান্তি সেটা পরখ করার কেউ নেই।
 
বিশ্ববখাটে ডাকাবুকো করণ সৎ-বাবার ব্যবসায়ে যোগ দিয়ে এক বছরের মধ্যে বুঝে গিয়েছিল সে কাজ ওর জন্যে নয়। তারপর সেখান থেকে কি করে রএর ইকনমিক সারভেইল্যান্স উইংয়ে ঢুকেছিল তা আমার জানা নেই। নিজের বাবা, সৎ-বাবা, নিজের মা বা সৎ-মা কারোর না কারোর খুব ভালো যোগাযোগেই হবে হয়তো। প্রথমে পোস্টিং ছিল মুম্বাইতেই। শেয়ার বাজারে পাকিস্তানের কালো টাকা কিভাবে খাটছে সেটার ওপরে ফিল্ড এজেন্ট হিসেবে কাজ করছিল। সেখানেই আলাপ হয় তরুণী আইপিএস অফিসার সুদেষ্ণা রাউতের সাথে। সুদেষ্ণা ডেপুটেশনে এসেছিল রতে। সুদেষ্ণার বিভাগ ছিল ইন্টারন্যাল সিকিউরিটি আর সেই সূত্রে পোস্টিং হয় পাটনাতে। দায়িত্ব ছিল বিহার-ছত্তিসগড় এলাকার মাওবাদী আর রণবীর সেনার আর্মস স্মাগলিং নেটওয়ার্কটার খোঁজ লাগানো। করণের সাথে ঠিক প্রেমিক-প্রেমিকার সম্পর্ক না থাকলেও একটা লিভ ইন রিলেশন বা ইংরেজীতে যাকে বলে 'ফ্রেন্ডস উইথ বেনিফিটস' টাইপের কিছু একটা ছিল। মেঠো ছেলে করণও চেষ্টাচরিত্র করে দপ্তর বদল করে চলে আসে সুরাজপুরে। দীর্ঘ তিন বছরের চেষ্টায় ও আর সুদেষ্ণা গড়ে তুলেছিল একটা স্ট্রং ইনফরমেশন নেটওয়ার্ক যেটা এতদিন আইবি বা লোকাল পুলিশ করে উঠতে পারেনি।
 
আমরা সুরাজপুরে ঘুরতে যাওয়ার ছয়মাস আগে হাজারীবাগের কাছে লোকাল ট্রেনে একজন সন্দেহজনক চীনা ট্যুরিস্ট ধরা পড়ে। পিএলএ গোয়েন্দা বিভাগের সদস্য ওই চাইনীজকে ধরার খবর একদম চেপে দেওয়া হয়, এমনকি পুলিশও জানতে পারেনি যে এরকম কিছু একটা হয়েছে। আর সেখানেই অপারেশন চীনা চাচার জন্ম। করণ নিঃশব্দে অনুপ্রবেশ করে সত্যিকারের চীনা চাচার জালে। যেহেতু ভদ্রলোক কোনোদিন কাউকে নিজের মুখ দেখান নি গোপনীয়তা রক্ষা করার জন্য, করণের সেদিক দিয়ে একটা সুবিধাই হয়েছিল। কে যে এই চীনা চাচা সেটা না জেনেই সবাই ওর সাথে যোগাযোগ চালিয়ে যাচ্ছিলোসেখান থেকেই জানতে পারে ডাবল এজেন্ট সামশের দু' নৌকায় পা রেখে চলছে।
 
এরকম মাস তিন চারেক চলার পর হঠাৎ শুকিয়ে যেতে থাকে খবরের সূত্র। একের পর এক রেপ বা খুন হতে থাকে সুদেষ্ণার নেটওয়ার্কের খবরীরা, যার একজন ছিল ঝুম্লা। ঝুম্লার গণ ;., আর খুনের পরে সুদেষ্ণা যেন আগুন হয়ে গেছিলো। পাল্টা আঘাতে রণবীর সেনার চার-পাঁচ জনকে এক রাত্তিরে উড়িয়ে দেয় স্পেশাল এজেন্টরা আর ছড়িয়ে যায় চীনা চাচার লিফলেট। ওদের আসল টার্গেট ছিল সামশের কিন্তু করণ শেষ মুহূর্তে আঁচ পেয়ে ওকে খবর দিয়ে দেয়। সামশের বেঁচে যায় ও যাত্রা। সামশেরকে বাঁচানোর ওর একমাত্র উদ্দেশ্য ছিল অপারেশনটাকে সফল করা। কিন্তু এই ঘটনাতে করণ আর সুদেষ্ণার মধ্যে একটা চাপা দ্বন্দ্ব শুরু হয়ে যায় এবং ওরা একে অন্যকে এড়িয়ে নিজে নিজের মতন কাজ করা শুরু করে।
 
খুব শীগগিরই লাল পার্টি সন্দেহ করা শুরু করে অন্য কেউ চীনা চাচার নাম নিয়ে এই খুনগুলো করেছে কারণ ওদের হাই কমান্ড থেকে কেউ সেরকম নির্দেশ দেয়নি বা অবন্তীপুরের মাটিতে রণবীর সেনার ওপরে এরকম মাপের হামলা করার মতন লোকবল তখনো ওদের ছিলো না। অপারেশন চীনা চাচার ভেঙ্গে পড়ার উপক্রম হতে করণের বারণ না শুনে মরিয়া সুদেষ্ণা নিজে ফিল্ডে নেমে সুরাজপুরে যায় সোর্সদের সাথে যোগাযোগ করার জন্যে। ছদ্ম পরিচয় নিয়েছিল পাটনার কলেজে পড়া এক মেয়ের যে সোশ্যাল স্টাডি করার জন্যে এসেছে ওখানে। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশতঃ সামশেরের লোকেরা ওকে তুলে নিয়ে যায় কোঠাতে আর পরের দিন ওর অর্ধনগ্ন মৃত দেহ পাওয়া যায় খালে।
 
করণের ঘোরতর সন্দেহ হয় যে সামশের জেনেশুনে সুদেষ্ণাকে তুলেছিল আর ওকে নিশ্চয়ই আর কেউ সুদেষ্ণার আসল পরিচয় দিয়ে দিয়েছিল। সেটা লোকাল পুলিশ বা আইবি-র ভিতরের কেউ হতে পারে। একটু খোঁজ-খবর নেওয়ার পরে জানতে পারে অবন্তীপুরের লাল পার্টির মাথা সুমন এই পরিকল্পনাটা ছকেছিল। করণ সেদিনই জানতে পারে যে সুমন এতদিন সুদেষ্ণার পে রোলে ছিল। ওই ফাঁদ পেতে সেদিন ডাবল ক্রস করেছিল সুদেষ্ণাকে। করণের নিজের কভারও খুব সম্ভবত লাল পার্টির সন্দেহের তালিকায় চলে গেছিলো। বেশ বুঝতে পারছিলো যে ওর প্রতিটা নড়াচড়া এখন নজরবন্দীএই অবস্থায় একমাত্র উপায় ছিল বুধন আর মউয়া। ওপরতলা থেকে মার্চিং অর্ডারও চলে এসেছিল। সুদেষ্ণার ঘটনার পরে ওর নিরাপত্তা নিয়ে কোনও গ্যারান্টি ছিল না আর। অপারেশন চীনা চাচাকে গোটানোর জন্যে করণের হাতে আর মাত্র সাত দিন সময় ছিল যখন আমি ওকে ফোন করে বলি যে আমরা আসছি।
 
করণ স্বার্থপরের মতন আমাদেরকে বারণ করেনি। সুরাজপুরের মতন দুনিয়াছাড়া জায়গায় নতুন লোকের আগমন বিশেষ করে উদিতার মতন অপূর্ব সুন্দরীর কথা কারোর নজর এড়াবে না সেটা ও ভালো করেই আন্দাজ করেছিল। আশা করেছিল সেটা কিছুটা হলেও লাল পার্টি আর রণবীর সেনার মধ্যে একটা কনফিউশন তৈরী করবে যেটাকে ও ব্যবহার করবে চীনা চাচার সাকসেসের জন্য। ও ভুলেও আন্দাজ করেনি, উদিতাকে ওর বাড়ী থেকে তুলে নিয়ে যাওয়ার প্ল্যান করবে সামশের তাও আবার ওইদিনই যেদিন লাল পার্টির অবন্তীপুর আক্রমণ করার কথা।
 
এর পরের ঘটনা আমি নিজে জানি বা উদিতার মুখে শুনেছি। ওর ওপর দিয়ে যা গেছে সেটা অমানুষিক বললেও কম বলা হয়। উদিতা সেই রাত্রেই গর্ভধারণ করেছিল। আমরা পরের দিনই সিআরপিএফ ক্যাম্পে মেডিক্যাল ট্রিটমেন্ট করিয়ে কলকাতাতে চলে আসি। উদিতা প্রচণ্ড শক্ত মেয়ে। একবারের জন্যেও ভেঙ্গে পড়েনি ধর্ষিতা হয়েছে বলে। পরের মাসে করণের সাহায্য নিয়ে ওর অ্যাবরশন করানো হয় একটা নামী প্রাইভেট নার্সিংহোম থেকে। আমি আর করণ ঠাট্টা করে একবার জিজ্ঞাসা করেছিলাম কে এর কারণ। জানি একজন ধর্ষিতার কাছে এর থেকে নির্মম নোংরা ঠাট্টা আর কিছু হতে পারে না। কিন্তু উদিতা ব্যাপারটাকে খুব সহজ ভাবে নিয়েছিল আর নিজেও হাসিঠাট্টা করেই সব কিছু ভুলতে চাইছিল। চোখের কোণায় একটা দুষ্টু হাসি ফুটিয়ে বলেছিল, "মনে হয় কুরেশি।"
 
 
 
কুরেশি আর সামশের দুজনেই সেই রাতে ধরা পড়েনি। কুরেশি উদিতাকে তাঁবুর ভিতরে ফেলে রেখে পিছন দিয়ে পালিয়ে যায় আর সামশেরকে আর কেউই দেখেনি। ভাঙ্গা পা নিয়ে ও কি করে পালাল কে জানে। করণ না মানলেও আমার ধারণা কুরেশিও করণের হয়ে কাজ করতো আর ওই ট্রিপল ক্রস করেছে বাকী সবাইকেচীনা চাচাও সফল আর ওরও আমার বউকে নিয়ে আয়েশ করা।
 
সেই রাতের অপারেশনে উত্তর-পূর্ব ভারতের লাল পার্টির কোর সেলটা ধরা পড়ে যায় আর তার সাথে শেষ হয় রণবীর সেনার দৌরাত্ম্যসুমন আর পাণ্ডের গুলিবিদ্ধ দেহ পরের দিন রামলালজীর কোঠার ভিতরে আরও অনেকের সাথে পাওয়া যায় খবরে দেখেছি। হয়তো এগুলো করণের ব্যক্তিগত প্রতিহিংসা ছিল। ওর জীবনের দুটো মেয়ের গায়ে হাত তোলার জন্য।
 
কিন্তু কোলকাতায় আমাদের থাকা দুষ্কর হয়ে উঠছিল। দু'-তিন মাস পর থেকেই মাঝরাতে হুমকি দিয়ে কল আসা শুরু হয়। পুলিশকে জানিয়েও কোনও লাভ হয়নি। রাস্তায় হাঁটাচলা করার সময় বেশ টের পেতাম যে কেউ বা কারা আমাকে অনুসরণ করছে সব সময়। তারপরে যেদিন উদিতার ওপরে অ্যাটাক হল সেদিনই করণকে ফোন করে সাহায্য চাইলাম। সেদিন উদিতা একাই গড়িয়াহাট গেছিলো শপিং করতে। সেখানে সন্ধ্যের আলো-আঁধারিতে দুটো লোক ওকে হঠাৎ করে একটা অন্ধকার গলির মধ্যে টেনে নিয়ে গিয়ে শ্লীলতাহানি করে। ব্লাউস ছিঁড়ে ফালাফালা করে দেয়। শাড়ী সায়া তুলে কোমর থেকে ছিঁড়ে নিয়ে যায় প্যান্টিহুমকি দেওয়া চিঠিটা দলা-মোচড়া করে গুঁজে দিয়ে যায় ব্রায়ের ভিতরে। পুরো ঘটনাটা ঘটেছিলো প্রায় এক মিনিটের মধ্যে। আতঙ্কিত উদিতা কোনোরকমে শাড়ীটা গায়ে জড়িয়ে লজ্জা নিবারণ করে ট্যাক্সি নিয়ে বাড়ী চলে আসে।
 
করণ পরের দিন সকালেই এসে আমাদের প্যাকিং করতে বলে। সাতদিনের মধ্যে চাকরি থেকে পদত্যাগ করে বাক্স-প্যাঁটরা গুছিয়ে আমরা চলে আসি মুম্বাইয়ের ওরলীর সাঁইত্রিশ তলার এই ফ্ল্যাটে। এটা করণের ২৫ বছরের জন্মদিনে ওর বাবা গিফট করেছিলেন। করণ মুম্বাইতে এলে এখানেই থাকে। কিন্তু এখন ও যে বিভাগে আছে তাতে মুম্বাইয়ের বাইরে গড়চউলিতেই বছরের বেশী সময় কাটাতে হয় ওকে। তাই আমরাই এখন জবর দখলকারী।
[+] 3 users Like ray.rowdy's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: সুরাজপুরে শুরু [সংগৃহীত] - by ray.rowdy - 16-01-2020, 03:19 AM



Users browsing this thread: 1 Guest(s)