Thread Rating:
  • 17 Vote(s) - 2.35 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
সুরাজপুরে শুরু [সংগৃহীত]
#17
একটু পরেই আমরা রেল লাইন ছেড়ে মাঠের মাঝখান দিয়ে হাঁটা পথ ধরলাম। কোনও কারণে ও স্টেশনের পাশের রাস্তাটা দিয়ে গেল না। আমি এখন ওর সমান তালে দৌঁড়াতে পারছি। ভিতর থেকে উঠে আসছে জোরটা, ক্লান্তি এখন অনেক দূরের কোনও জিনিস। মিনিট দশেক চলার পর কুয়াশাটা একটু হালকা হতেই দেখতে পেলাম ইয়াদবের কোঠা। অবন্তীপুরের একচালা ঘরগুলোর মাঝে দোতলা বাড়ীটা বেশ রাজপ্রাসাদের মতই লাগছে। আমাদের চলার গতি আরও বেড়ে গেল। বি-ওয়ান-এর কথা মতন আমরা পিছনের গোডাউনের দরজা দিয়ে ঢুকবো বলে ঠিক করলাম।
 
"এটাকে আঙটির মতো করে পড়ে নিন বা গলায় লকেটের সাথে ঝুলিয়ে দিন।" বি-ওয়ান আমার দিকে একটা সরু গোল মেটে রঙের রিং এগিয়ে দিল, ওপরে যেখানে পাথর বসানো থাকার কথা সেখানে একটা খুব ছোট্ট মেটালিক বক্সের মতন কিছু একটা রয়েছে।
 
আঙ্গুলে দেখলাম ভালোই ফিট করলো, রিংটা একটু যেন ইলাস্টিক টাইপের, সবার হাতে সমান ভাবে লেগে থাকবে। জিজ্ঞাসা করলাম, "কি জিনিস এটা?"
 
"এটা একটা মাইক্রো ট্রান্সমিটার, প্রতি তিরিশ সেকেন্ড পরপর একটা খুব হাই ফ্রিকোয়েন্সির সিগন্যাল রিলীজ করে যেটা শুধুমাত্র একরকম স্পেশাল রিসিভার দিয়েই ট্র্যাক করা যায়।" ও বললো
 
আমি বুঝে গেলাম জিনিসটা কি আর আমাকে কেন দেওয়া হচ্ছে। করণ মউয়াকে এরকমই কোনও একটা জিনিস দিয়ে খুঁজে বের করেছিল হয়তো। আমি বন্দুকটা ওর কাছ থেকে নিয়ে নিলাম। মনে মনে নিজেকে আরেকটা লড়াইয়ের জন্যে প্রস্তুত করলাম।
 
 
 
ইয়াদবের গোডাউনের দরজার কাছে গিয়ে একটা অদ্ভূত দৃশ্য দেখলাম। একটা লোক ছেঁড়া-ফাটা জামাকাপড় পড়ে দরজার ঠিক বাইরে হাঁটুর ওপরে বসে আছে। যেন কেউ ওকে কোনও শাস্তি দিয়েছে। মার খেয়ে চোখ এতটাই ফুলে আছে যে খুলতেই পারছে না, গালের কাছে গভীর কাটা থেকে রক্ত গড়াচ্ছে। আমাদের দেখেই কিছু একটা বলে ওঠার চেষ্টা করলো কিন্তু বি-ওয়ান ক্ষিপ্র হাতে লোকটার মুখ চেপে ধরে টেনে দেওয়ালের পাশে টেনে নিয়ে আসলো। গলার নীচ দিয়ে হাতটা এমন ভাবে নিয়েছে যাতে লোকটা চাইলেও চেঁচাতে না পারে। আস্তে করে মুখের ওপর থেকে হাত সরিয়ে নিলো তারপরে।
 
"...দশরথ...চেতনা...মেরি বিবি...অন্দর ইয়াদবকে পাস।" ফিস ফিস করে বলতে পারলো শুধু লোকটা।
 
আমার গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠলো, বেশ বুঝতে পারলাম এর বউকেও তুলে নিয়ে এসেছে ইয়াদবের লোকজন। এদের পাশবিক অত্যাচারের কি কোনও শেষ নেই? উদিতার কথা ভেবে চোখ ছলছল করে এলো আমার। প্রাণপণে বন্দুকটা চেপে ধরে দরজাটা ঠেলে খুললাম। আমাকে ইশারায় পিছু নিতে বলে বি-ওয়ান ওর হাতের ছোট্ট কার্বাইনটা কাঁধের কাছে তুলে হলোগ্রাফিক সাইটে চোখ লাগিয়ে পা টিপে টিপে ভিতরে ঢুকল। আমি ভিতরে পা দিয়েই থতমত খেয়ে গেলাম। দেওয়ালে একটা টিমটিমে বাল্ব লাগানো আছে, আর তার মৃদু আলোতে দেখতে পেলাম মাটিতে বস্তাগুলোর কাছে উপুড় হয়ে পড়ে আছে একটা লোকের দেহ। রক্তের একটা ধারা ওর পেটের কাছ থেকে বেরিয়ে পাশের নর্দমায় গিয়ে মিশেছে। বি-ওয়ান ওর হাতটা খুব আস্তে করে পড়ে থাকা লোকটার গলার কাছে নিয়ে গেল। হাতের ইঙ্গিতে আমাকে বোঝাল যে প্রাণ দেহত্যাগ করেছে। দশরথ ও আমার পিছন পিছন ঢুকেছিল। বিড়বিড় করে বলতে শুনলাম "খিলাওন।" বুঝলাম এটাই এই মৃত ব্যাক্তির নাম। কিন্তু ওকে মারল কে?
 
বি-ওয়ান, বডিটাকে পাশ কাটিয়ে টিনের দরজাটা ঠেলে গোডাউনের ভিতরে পা রাখলো আর তার পিছনেই আমি। আমাদের অবাক হওয়া যেন আরও বাকী ছিল। ঘরের ভিতরে আরেকটা মৃতদেহ আর তার পাশে দেওয়ালে ঠেস দিয়ে বসে আছে এক নগ্ন নারীশরীর, পায়ের কাছে পড়ে রয়েছে রক্তমাখা ছুরিমাথার চুল তার আলুথালু আর একটু ঝুঁকে পড়া ক্লান্ত মুখ ঢেকে গিয়েছে লাল রক্তে।
 
"...চেতনা...," দশরথ হাউমাউ করে কেঁদে উঠে মেয়েটার ওপরে হুমড়ি খেয়ে পড়লো।
 
"আপনি এখানেই থাকুন, আমি এদেরকে বের করে নিরাপদ জায়গায় পৌঁছে দিয়ে আসছি দু মিনিটে।" খুব চাপা গলায় বললো বি-ওয়ান
 
ওরা ঘর থেকে বেরিয়ে যেতে আমি এক পা দু'পা করে এগিয়ে গেলাম সামনের দরজা দিয়ে। বেশ কিছু চালের বস্তা ডাঁই করে রাখা আছে ওখানে, ওগুলোর পিছনে আড়াল করে বসলাম। এখান থেকে কোঠার সামনের উঠোনটা কিছুটা দেখা যাচ্ছে। বেশ অনেক লোকের জটলা ওখানে, ঠিক বুঝতে পারলাম না কি হচ্ছে, মাঝে মধ্যে সিটি মারার আওয়াজ পেলাম। আমি এদিক ওদিক ঘাড় ঘুড়িয়ে ঠাহর করার চেষ্টা করলাম যে উদিতাকে ওরা যদি এখানেই তুলে আনে তাহলে কোথায় রাখতে পারে। এই গোডাউনটা একটা আদর্শ জায়গা হতে পারতো
 
উঁকিঝুঁকি মেরে উঠোনের ভীড়টার কাজকর্ম লক্ষ্য করতে যাব তখনেই কানফাটানো শব্দটা ভেসে এলো স্টেশনের দিক থেকে। আমি আবার সিটিয়ে বসে পড়লাম বস্তাগুলোর পিছনে। প্রচুর চীৎকার চেঁচামেচি আর মেয়েদের কান্নাকাটির আওয়াজ পেলাম। কিছুই বুঝতে পারছিলাম না কি হচ্ছে বাইরে। বি-ওয়ান এর অপেক্ষায় থাকলাম, মূলতঃ ওকে ছাড়া আমার কিছুই প্রায় করার নেই। আমার যতই সাহস থাকুক না কেন এই এত লোকের সাথে একা লড়াই করার মতন বোকামি একমাত্র সিনেমাতেই সম্ভব।
 
মিনিট দুয়েক পড়েই একটানা গুলির শব্দ আসতে শুরু করলো কোঠার একদম বাইরে থেকেই। এদিক থেকেও পাল্টা গুলি ছোড়ার আওয়াজ পেলাম। লাল পার্টি এসে গেছে তার আর কোনও সন্দেহ নেই। উদিতাকে যে করেই হোক গণ্ডগোল আরও বেড়ে যাওয়ার আগেই উদ্ধার করতে হবে, বি-ওয়ান হয়তো বাইরেই আটকা পড়ে গেছে, ওর জন্যে আরও অপেক্ষা করলে হয়তো খুব বেশী দেরী হয়ে যাবে।
 
আমি গুড়ি মেরে বস্তার আড়াল থেকে বেরিয়ে এলাম, এই গোলমালটাই আমাকে আড়াল দেবে, সবাই এখন বাইরের শত্রুকে নিয়েই ব্যস্ত আছে। কিন্তু আমি বেশী এগোতে পারলাম না, টালির ছাদ বেয়ে জ্বলন্ত কেরসিন আমার সামনেই বারান্দার ওপরে ছড়িয়ে পড়লো, কেউ বোতল বোমা ছুঁড়ে মেরেছে ভিতরে। আর এক পা এগোলে আমার গায়েই এসে পড়তো ওই আগুন, তাও হল্কা প্রায় আমার গা ছুঁয়ে ফেলেছিল। আমি আবার উঠোনের দিকে তাকালাম, উদিতাকে দেখতে পেলাম না। ওকে কি তাহলে অন্য কোথাও নিয়ে গেছে নাকি দোতলার কারোর ঘরে রেখে অত্যাচার করছে?
 
আশেপাশের এত আওয়াজের মধ্যে উদিতার তীক্ষ্ণ আর্তনাদ আমার কান এড়ালো না। আগুনটা আমার একদম কাছে থাকায় খুব ভালো করে দেখতে না পারলেও একটা অবয়ব বারান্দার সিঁড়ির পাশ দিয়ে চলে গেল বুঝতে পারলাম। আমি কোনোমতে আগুনের থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে বারান্দায় উঠে এলাম। এখানে আর কেউ নেই, তার মানে যে ছায়ামূর্তিটাকে আমি দেখেছিলাম সেই হয়তো উদিতাকে বন্দী করে রেখেছে। আমি সিঁড়ির পিছনের দরজার দিকে এগোবো বলে ঠিক করলাম।
 
"সামশের কাহাঁ হ্যায়?" সিঁড়ির সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় কানের কাছ থেকে কথাটা শুনলাম। দেখলাম বাঁদিকে সিঁড়ির দুটো ধাপ ওপরে একজন দীর্ঘদেহী ফর্সা লোক দাঁড়িয়ে রয়েছে, কোমরের কাছে ধুতিটা লুঙ্গির মতো করে জড়ানো রয়েছে। আমি সোজা হয়ে ওর চোখে চোখ রেখে তাকালাম। ঠিক বুঝতে পারলাম না কে হতে পারে। অনুভব করলাম আমার হাতের কাঁপুনিটা, ধরা পড়ে গিয়েছি।
 
"কউন হ্যায় তুঁ?" ভুরু কুঁচকে জিজ্ঞাসা করলো আমাকে। হয়তো আগের বার আমাকে চেনা কেউ ভেবে সামশেরের কথা জিজ্ঞাসা করেছিল। আমি কোনও উত্তর না দিয়ে স্থির চোখে ওর দিকে তাকিয়ে রইলাম, আন্দাজ করার চেষ্টা করলাম ওর পরের মুভ কি হতে পারে। হাতে দেখলাম একটা মাঝারী সাইজের তরোয়াল ধরা রয়েছে। আগেকার দিনের রাজা-রাজরাদের দেওয়ালে যেমন ঝোলানো থাকে অনেকটা সেই রকম।
 
"শালে মেরে কো মারনে আয়া হ্যায়? ইয়াদব কো মারনে আয়া হ্যায়, তেরি ইতনী হিম্মৎ।" বাঘের মতন গর্জন করে বললো লোকটা। বেশ বুঝতে পারলাম, আমি যার সামনে দাঁড়িয়ে আছি সেই রামলালজী ইয়াদব। আমার মাথা লক্ষ্য করে হাত চালালেন রামলালজী, আড়চোখে তরোয়ালের ডগা থেকে আমার দূরত্ব আন্দাজ করলাম, মাথায় লাগলে মৃত্যু না হলেও ভালো রকম ক্ষতি হবে। নিজেই নিজেকে অবাক করে দিয়ে দ্রুতগতিতে মাথাটা নামিয়ে নিলাম আমি, তরোয়াল আমার মাথার চুল ছুঁয়ে সিঁড়ির দেওয়ালে ধাক্কা মারল। ওটা আবার ফেরৎ আসার আগেই বন্দুকের বাঁট দিয়ে সজোরে আঘাত করলাম রামলালজী ইয়াদবের বুকে। ওর বুকের পাঁজরার হাড় ভাঙ্গাটাও যেন বুঝতে পারলাম। একটা হালকা "ওক" শব্দ করে বুক চেপে ধরে বসে পড়লো ইয়াদব। পাঁজরের ভাঙ্গা হাড় ফুটো করে দিয়েছে হৃদপিণ্ড। হাত থেকে ঝনঝন করে পড়ে গেল ইয়াদব বংশের প্রাচীন তরবারি।
 
আমি ওর পিছনে আর সময় নষ্ট না করে সিঁড়ির দরজা দিয়ে বেরিয়ে এলাম, দেখলাম এখানে চলছে অন্য এক নাটক।
 
"তুঁ কাঁহা যা রহা হ্যায় সামশের? হম ইধার মর রহে হ্যায় অউর তুঁ ভাগ রহা হ্যায়?" জীপ গাড়ীর সামনে হাত তুলে দাঁড়িয়ে থাকা একটা লোক বললোযাকে বললো বুঝলাম সেই সামশের, গাড়ীর স্টিয়ারিংয়ে সেই বসে আছে। জীপের পিছনের সীটে তাকাতে আমার রক্ত হিম হয়ে গেল, অর্ধনগ্ন উদিতা ধ্বস্তাধস্তি করে নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করে যাচ্ছে আরেকটা লোকের হাত থেকে। কালো সায়াটা বুকে চেপে ধরে কোনোমতে নিজের আব্রু বাঁচাচ্ছে।
 
"হট যা বলদেও, শালা চৌবে কি কুত্তা, যা আপনি মালিক কে পাস।" সামশের রাগে গড়গড় করে উঠলো ওর হাতে লক্ষ্য করলাম গ্লক পিস্তলটা
 
বলদেওর হাতেও চলে এসেছে আগ্নেয়াস্ত্র, সেটা ও তাক করে আছে সামশেরের দিকে। এতদিন ধরে চৌবের কথামতো সামশেরের ওপরে নজরদারী করে এসেছে ও। সামশেরের খামখেয়ালীপনা, বর্বরতা, অপমানজনক কথাবার্তা সবই ওর মনে তীব্র ক্ষোভ সৃষ্টি করলেও এতদিন ধরে নিজেকে ধরে রেখেছিল বলদেও। কিন্তু আজকেই এই চরম দিনে সামশেরের সাথে হিসেব চুকতা করবে বলে ঠিক করলো।
 
সামশের জীপের হেড লাইটটা হঠাৎ অন করলো। তীব্র আলোতে বলদেও মুহূর্তের জন্য অন্ধ হয়ে গেল প্রায়, একটা হাত তুলে চোখের সামনে আনল, আর তখনি মৃদু বপ বপ শব্দে গর্জে উঠলো সামশেরের পিস্তল। পুরো ম্যাগাজিনটাই খালি করে দিল বলদেওর বুকে। মুখ থেকে একফোঁটাও আওয়াজ না বের করে ঢলে পড়ে গেল ও। আমি আর দেরী না করে লাফিয়ে বাইরে এলাম। আমার বন্দুকের নল এখন সামশেরের কানের ঠিক পিছনে তাক করা।
 
"সামশের, তেরা দিন খতম, ছোড় দে লড়কী কো।" আমার গলার শব্দে নিজেই চমকে গেলাম। বেশ একটা নায়কের স্টাইলে বললাম নাকি? উদিতা এখনো ঠিক খেয়াল করে ওঠেনি আমাকে, এখনো লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে অন্য লোকটার সাথে।
 
"আবে কৌন হ্যায় তুঁ মাদারচোদ?" মহা বিরক্তির চোখে আমার দিকে তাকালো সামশের। আমার হঠাৎ আবির্ভাবটা ওর একেবারেই পছন্দ হয়নি বলে মনে হল। মনে মনে ঠিক করলাম, বেশী নড়াচড়া করলে সামশেরের হাতে বা কাঁধে গুলি করবো, যাতে গাড়ী না চালাতে পারে। এখুনি হয়তো বি-ওয়ান এসে পড়বে আর বাকী কাজটা ওই সামলাবে।
 
মাথার পিছনে একটা প্রচণ্ড আঘাতে কয়েক মুহূর্তের জন্য চোখে অন্ধকার দেখলাম। শিথিল হয়ে আসা হাত থেকে বন্দুকটা নিমেষে পড়ে গেল আর আমিও জীপের ধার ঘেষে বসে পড়লাম। অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার আগে শুনতে পেলাম সামশেরের গলা, "সাব্বাস পাণ্ডে, ইসকো ভী উঠালে আউর তুঁ পিছে বৈইঠ যা।"
[+] 4 users Like ray.rowdy's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: সুরাজপুরে শুরু [সংগৃহীত] - by ray.rowdy - 16-01-2020, 02:51 AM



Users browsing this thread: 1 Guest(s)