16-01-2020, 02:10 AM
মউয়া
জঙ্গলটা যেখানে শেষ তার একটু নীচ থেকেই কাশ বনটা শুরু হয়ে চলে গেছে রেল লাইনের গা অবধি। মাটি থেকে প্রায় ছয়-সাড়ে ছয় ফিট অবধি উঁচু। একবার ওর ভিতরে ঢুকে গেলে বাইরে থেকে বোঝার কোনও উপায় নেই।
অবন্তীপুর একটা মাঝারি মাপের জংশন। এই জায়গাটা অনেকটা কারশেড টাইপের। রেল লাইনগুলো আঁকিবুঁকি কেটে একে অন্যের সাথে মিশেছে। এদিক ওদিক অনেক ছোটো বড় নানা সাইজের ওয়াগন পড়ে আছে। বেশীরভাগই পরিত্যক্ত। অবন্তীপুর ইস্ট কোল ফিল্ডটাতে কয়লার উৎপাদন এখন কমে এসেছে। যাও বা হয় তার শতকরা চল্লিশভাগ কয়লা মাফিয়া চুরি করে নেয়। মালগাড়ী এখান থেকে ইদানীং কমই যাতায়াত করে।। ওই পড়ে থাকা ওয়াগনগুলোতে এখন ইয়াদবের ছেলেরা রাত হলে তাশ, জুয়া মদের ঠেক বসায়। কখনও আশেপাশের এলাকা থেকে মেয়ে তুলে এনে গণ;., করে। নেশা একটু বেশী হয়ে থাকলে মেয়েগুলো প্রাণ নিয়ে পালাতে পারে। নাহলে পরের দিন সুরাজপুর খালে তাদের নগ্ন শরীর ভেসে যেতে দেখা যায়।
কাশ বনটার ওপরে একটা হালকা কুয়াশার মেঘ জমেছে। তেমন ঘন হয়নি এখনো। সুরাজপুরের দিক থেকে ধীরে ধীরে এগিয়ে আসছে। বেশ বোঝা যাচ্ছে যে আর একটু পরেই রেল লাইনটাকে পুরো ঢেকে ফেলবে। চাঁদের ফালিটা আকাশের মাঝখান পেরিয়ে গেছে। পরশু দিন অমাবস্যা, কালীপূজো।
জঙ্গলটা পেরোতে আমাদের প্রায় দশ মিনিট লেগেছে। আমি করণের কথা মতন ওর একটু পিছনে একটু কোণা করে অনুসরণ করছিলাম। প্রায় একশো মিটারের মতন করে দৌঁড়ানোর পর করণ হাতের ইশারা করে দাঁড়াতে বলছিল। তারপর মাটিতে ঝুঁকে বসে এক মিনিটের মতন দম নেওয়া। তারপরে আবার দৌঁড়। করণ কি করে পারছিলো জানি না, শেষের দিকে আমি তো প্রায় নিজেকে হ্যাঁচড়াতে হ্যাঁচড়াতে নিয়ে আসছিলাম। এখান থেকে রেল লাইনটা প্রায় শ'দুয়েক মিটার এখনো।
"এবার?" আমি কোনও মতে দম নিয়ে করণকে জিজ্ঞাসা করলাম। আমার যা অবস্থা তাতে এখন চীৎকার করে কুকুর তাড়াতে পারবো না, সামশেরের দলবল তো দূরের কথা।
করণ দেখলাম আশ্চর্য্য শান্ত। মাটিতে হাঁটু গেড়ে বসে, শালের ভিতর থেকে কিরকম একটা একনলা ছোটো দূরবীণ বের করে চোখে লাগাল।
"দূর শালা, এই অন্ধকারে দূরবীণ দিয়ে কি পাখী দেখছিস নাকি?" আমার মহা বিরক্তি লাগলো ওর রকমসকম দেখে। ওর আদৌ কোনও পরিকল্পণা আছে না নেই সেটাই বুঝতে পারছি না।
"চোখে লাগিয়ে দেখ," করণ হাত বাড়িয়ে আমার দিকে দূরবীণটা এগিয়ে দিল।
আমি খুব তাচ্ছিল্য সহকারে ওটা নিয়ে নেড়েচেড়ে দেখলাম। ঠিক দূরবীণ নয়, দু'পাশে বেশ কয়েকটা নব লাগানো আছে। মাঝখানটা সরু হয়ে গেছে আবার শেষদিকটা মোটা মতন। চোখে লাগানোর জায়গাটাতে একটা রাবারের গার্ড রয়েছে। বেশ ভারীই মনে হল। চোখে লাগালাম আর সাথে সাথে আমার আশপাশটা যেন চেঞ্জ হয়ে গেল। আশেপাশের গাছপালাগুলো সব ছাই ছাই রঙের, তার মাঝে মাঝে চকচকে সাদা সাদা কি সব উড়ে বেড়াচ্ছে। মনে হল জোনাকি। এমনকি কাশ বনে উড়ে বেড়ানো ফড়িংগুলোকেও দেখতে পেলাম মনে হল।
"মনোকুলার থার্মাল রমাল ইমেজার!!!" আমি অস্ফূটে বলে উঠলাম। হলিউডের সিনেমাতে অনেক দেখেছি সৈন্যদের বন্দুকে লাগানো থাকে।
"হুম! দে এবার আমাকে," করণ আমার হাত থেকে যন্তরটা নিয়ে নিল। আমার চোখের সামনে যেন ঝপ করে লোডশেডিং হয়ে গেল। আবার সব ঘুটঘুটে কালো অন্ধকার। আমি কিছুক্ষণ অবাক হয়ে করণের দিকে তাকিয়ে থাকলাম। কিছুই যেন তল পাচ্ছি না আমি। কোনভাবেই মেলাতে পারছি না আমার ছেলেবেলার প্রিয় বন্ধুর সাথে আজকে আমার পাশে হাঁটু গেড়ে বসে থাকা লোকটার। করণ বিশ্ববখাটে ছেলে হতে পারে, দেদার পয়সা খরচা করতে পারে সাধারণ লোকের কাছে যা আজেবাঁজে জিনিসের ওপরে। প্রচণ্ড দামী বিদেশী দূরবীণ কিনতে পারে এই জঙ্গলে জন্তু জানোয়ার পাখী দেখার জন্যে, কিন্তু থার্মাল ইমেজার? এটা তো মিলিটারী ইক্যুইপমেন্ট। ওর হাতে এলো কি করে? কোনও বদসঙ্গে পড়ে যায়নি তো?
"স্নাইপার!" করণের কথা শুনে চমকে গেলাম। সামশেরদের আবার ওই সব জিনিস আছে নাকি? করণ আবার আমার দিকে মনোকুলারটা এগিয়ে দিয়ে বললো, "টু ও' ক্লকে ওই যে একলা ওয়াগনটা আছে ওটার দিকে তাকা।"
আমি ওর কথামতন সেই দিকে তাক করতেই পরিস্কার অবয়বটাকে দেখতে পেলাম। ওয়াগনটার ছাদে উপুড় হয়ে শুয়ে আছে, সামনে একটা লম্বা লাঠির মতন বেরিয়ে আছে। ভাগ্য ভাল আমাদের দিকে পিছন করে আছে। রেল লাইনের পাশের যে রাস্তাটা সুরাজপুর থেকে এসেছে সেই দিকেই মুখ করে আছে। করণ ঠিকই বলেছিল, ওই রাস্তাটা ধরে এলে এতক্ষণে আমাদের খুলি উড়ে যেত। আর একটু ভাল করে লোকটার হাতের বন্দুকটাকে নজর করলাম।
"নাহ... স্নাইপার রাইফেল নয়। পাতি .৩০৩, এতো আমাদের পেটমোটা হাবিলদারগুলো নিয়ে ঘুরে বেড়ায়।" আমারও যে এই ব্যাপারে জ্ঞান কম নয় সেটা করণকে বুঝিয়ে দিলাম।
"হ্যাঁ, যদি ওটা তোর পেটমোটা হাবিলদারের হাতে থাকে তাহলে একটা লাঠির চেয়ে বেশী কিছু না। কিন্তু ট্রেনিং পাওয়া হাতে এটা আজকের যে কোনো মডার্ন স্নাইপার রাইফেলের থেকে কম নয়। ছয়শ থেকে হাজার গজ অবধি টার্গেট আরামসে লাগাতে পারবে। আমরা তার অনেক ভিতরে বসে আছি।" করণ আমার গর্বে ঠেশ দিয়ে বললো, "এটা নির্ঘাত সুরজমল, ইয়াদবের দলে ওই একমাত্র .৩০৩ নিয়ে ঘোরে, আর ওর হাতের নিশানাও নাকি দারুণ শুনেছি। কিন্তু..."
"কিন্তু কি?" ওর কপালে গভীর ভাঁজটা আমি কোনও যন্ত্র ছাড়াই দেখতে পেলাম।
"ও জানে যে ওই পথ দিয়ে কেউ আসবে আর তার জন্যেই অপেক্ষা করছে, ইয়াদবের ছেলেরা সাধারণতঃ এসব করে না। মেয়েছেলে নিয়ে মস্তি করতেই বেশী ব্যস্ত থাকে।" এক নিশ্বাসে বলে গেল করণ। "...ও আমাদের জন্যে বসে আছে...," ওর গলাটা যেন একটু কেঁপে গেল।
আমার গা-হাত থেকে সব জোর চলে গেল মুহূর্তের মধ্যে। হাতের বন্দুকটাকেও অসম্ভব ভারী মনে হতে লাগলো। এসব কি বলছে করণ। আমরা যে মউয়াকে বাঁচানোর জন্যে আসছি সেটা তো আমাদের বাড়ীর ওই কটা লোক ছাড়া কেউ জানে না। ইয়াদবের লোকেরা কি করে এর মধ্যে জেনে যাবে যে আমরা আসছি?
"করণ, তুই কি করে জানলি যে সামশের মউয়াকে এখানেই আনবে? আমরা হয়তো ভুল জায়গায় এসেছি। এটা হয়তো অন্য কোনও বাওয়াল, কয়লার স্মাগলিং তো এখানে হতেই থাকে।" আমি নিজেকে আর করণকে বোঝানোর চেষ্টা করলাম।
"হুম... আমি ভুল করতেই পারি, কিন্তু এ জিনিসটা করবে না," করণ ওর পকেট থেকে একটা ছোটো আইফোন সাইজের একটা জিনিস বের করলো। সেটার কালো স্ক্রীনে দুটো হলুদ ডট মাঝে মাঝে ব্লিঙ্ক করছে। ওদের মধ্যে একটাকে পয়েন্ট করে করণ বললো, "এটা আমরা...আর এইটা মউয়া। এই যন্তর তো বলছে আমরা ওর আড়াইশ মিটারের মধ্যেই রয়েছি। তাছাড়া মেয়েছেলে তুলে মস্তি করার এটাই পেটেন্টেড জায়গা ওদের।"
আমি নড়েচড়ে বসে করণকে প্রশ্নবাণে জর্জরিত করবো বলে ভাবলাম কিন্তু করণ আমাকে থামিয়ে দিয়ে বললো, "সমু, আমি জানি তোর মনে কি চলছে। কিন্তু তোকে সব কিছু বলার মতন সময় এখনো আসেনি। আমি তোকে সব খুলে বলব পরে, আজ নয়, এখন নয়। শুধু একটা কথা মনে রাখ, আমাদের যে করে হোক মউয়াকে বাঁচাতেই হবে।"
"মউয়া কে, করণ?" আমি অস্থির হয়ে জিজ্ঞাসা করলাম। আমাকে জানতে হবে কার জন্যে আমি এতটা জীবনের ঝুঁকি নিচ্ছি।
- "মউয়া... মউয়া... আমার কাছে, আমাদের কাছে খুব গুরুত্বপূর্ণ একজন কেউ, শুধু এটুকুই বলতে পারবো এখন।"
"আমাদের মানে কাদের করণ?" আমি হারিয়ে যাচ্ছিলাম একের পর আরেক কথার হেঁয়ালিতে।
করণ কোনও উত্তর দিল না। ফোনের মতন যন্ত্রটার ডান দিকের একটা বোতাম বিভিন্ন অনুপাতে থেমে থেমে টিপতে লাগলো। "টিক টিক...টিক টিক টিক... টিক টিক টিক টিক... টিক টিক..."
"মর্স কোড," আমি বুঝতে পারলাম। কাউকে ও কোনও সঙ্কেত দিচ্ছে। করণ কি এখানে একা? নাকি ওরও কোনও দলবল আছে? কি করে ও এখানে? আমাদের মানে কাদের কথা বলছে? আমার মনের মধ্যে উথাল পাথাল হতে থাকল। কোনও প্রশ্নের উত্তর নেই।
"চলে আয়," আমাকে হাত দিয়ে ইশারা করে করণ গুড়ি মেরে কাশ বনে ঢুকে গেল।
আমি কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে ওর পিছু নিলাম। আমরা ওয়াগনটাকে ডান হাতে রেখে প্রায় গোল করে ঘুরে পিছনের দিক দিয়ে এগোতে লাগলাম খুব সাবধানে। আমি বার বার ডান দিকে ঘাড় ঘুরিয়ে দেখছিলাম ওয়াগনের ওপরের লোকটা এখনো আমাদের দিকে পিছন করে আছে কিনা। কুয়াশার জন্যে বিশেষ কিছু দেখতে পারছিলাম না। মনে মনে আশ্বস্ত হলাম এই ভেবে যে এই কুয়াশার মেঘ নিশ্চয়ই আমাদেরকেও একই ভাবে ঢেকে রাখছে। সানি আর উদিতার মুখ বার বার মনে পড়তে লাগলো। খুব মিস করতে শুরু করলাম মা আর বাবাকে। নিজেকে এতদিন ঘোর নাস্তিক বলে ভাবতাম কিন্তু দেখলাম মনেপ্রাণে ডেকে চলেছি যতরকম ভগবানের নাম জানি।
লাইনের পাশের ওয়াগনগুলোর কাছাকাছি যেতে শুনতে পেলাম একটা মেয়ের গলার চাপা কান্না আর কিছু পুরুষ কণ্ঠ। কোনও শব্দ না করে আওয়াজ লক্ষ্য করে এগিয়ে গেলাম লাইন বরাবর। একটু পিছিয়ে যেতেই একটা পরিত্যক্ত ভাঙ্গাচোরা কামরার পিছনে লাইনের ওপরে শব্দের আর আলোর উৎস খুঁজে পেলাম। আমরা কামরার পাশটাতে নিশ্চল হয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম। করণ ইশারায় আমার কাছ থেকে বন্দুকটা চেয়ে নিল। খুব সাবধানে ওপরের রেলে মনুকুলারটা ফিট করে আমাকে ফেরৎ দিল। খুট করে একটা শব্দ হল শুধু। বেশ একটা মেড ইজি স্নাইপারের কাজ করবে এটা এখন।
"তুই কামরাটার ডান পাশটাতে লাইনের ধারে থাক, ওখান থেকে সামনের ওই ওয়াগনটার খোলা ভিউ পাবি। আমি বাঁ দিক দিয়ে যাচ্ছি। তুই আমার কথা ভুলে যা, আমি ঠিক মউয়াকে বের করে আনব। তুই শুধু ওপরে সুরজমলের দিকে নজর রাখবি। এখানে কোনও আওয়াজ হলেই কিন্তু ও ওখান থেকে নেমে আসবে। ওটুকুই তোর হাতে সময়। ওর মধ্যে তুই ওকে না ফেলতে পারলে, ও আমাকে ফেলে দেবে অনেক দূর থেকেই।" করণ প্রায় শুনতে না পাওয়ার মতন করে বললো।
আমি করণের হাতটা একবার শক্ত করে ধরলাম। কে জানে এরপরে আবার দেখা হবে কিনা। আমার মস্তিষ্ক এখন ভাবনা চিন্তা করা বন্ধ করে দিয়েছে। যন্ত্রের মতন করণের কথা শুনে পা টিপে টিপে কামরাটার ডান দিকের ধারে মাটির ওপরে এক হাঁটু ভাঁজ করে বসলাম। মনোকুলারের ভিউতে চোখ লাগিয়ে দেখলাম, ওয়াগনের ওপরে সুরজমলের কাঁধের কিছুটা দেখা যাচ্ছে। এখনো শুয়ে আছে। আমি কামরার তলা দিয়ে চাকার মাঝখান দিয়ে আলোর উৎসর দিকে তাকালাম।
লাইনের ওপরে একটা হ্যাজাক রাখা আছে। সেখান থেকেই যা আলো আসার আসছে। দুটো রেলের মাঝখানে কিছুটা ঘেসো জমি আছে সেখানেই তিনটে লোকের সাথে ধ্বস্তাধস্তি করে যাচ্ছে মউয়া। মুখ দিয়ে একটা চাপা বোবা কান্নার মতন আওয়াজ করছে কিন্তু বাঘিনীর মতন লড়ে যাচ্ছে সমানে। বাঁ দিকের ধুমসো মতন জিন্সপরা লোকটা ওর হাত দুটোকে বাগে পেয়ে খুব জোরে পিছনে মুচড়ে ধরলো। মনে হল যেন ভেঙ্গেই গেল ও দুটো। মউয়া চোখ বুঁজে কঁকিয়ে উঠে চিৎ হয়ে পড়ে গেল। ওর গায়ের শাড়ী অনেকক্ষণ আগেই কোমরের কাছ থেকে খুলে পড়ে সায়ার সাথে জড়িয়ে ছিল। মাঝখানের খাকি প্যান্টপরা লোকটা এই মুহূর্তের অপেক্ষা করছিল। মউয়ার গায়ের কালো ব্লাউসটা বুকের মাঝখান থেকে এক টানে ছিঁড়ে দিল। হ্যাজাকের আলোতে মউয়ার নিটোল সুডৌল স্তনযুগল ছেঁড়া ব্লাউজের ভিতর থেকে উপচে বেরিয়ে পড়লো। খাকি প্যান্ট দ্রুত হাতে পুরো জামাটাই ছিঁড়ে টুকরো টুকরো করে ফেললো। জিন্সপরা ধুমসোটা মুখ দিয়ে একটা হালকা শিস্ দিয়ে উঠলো।
- "জব্বর মাল হ্যায় শালী, বহুৎ চোদেঙ্গে আজ ইসকো।"
জঙ্গলটা যেখানে শেষ তার একটু নীচ থেকেই কাশ বনটা শুরু হয়ে চলে গেছে রেল লাইনের গা অবধি। মাটি থেকে প্রায় ছয়-সাড়ে ছয় ফিট অবধি উঁচু। একবার ওর ভিতরে ঢুকে গেলে বাইরে থেকে বোঝার কোনও উপায় নেই।
অবন্তীপুর একটা মাঝারি মাপের জংশন। এই জায়গাটা অনেকটা কারশেড টাইপের। রেল লাইনগুলো আঁকিবুঁকি কেটে একে অন্যের সাথে মিশেছে। এদিক ওদিক অনেক ছোটো বড় নানা সাইজের ওয়াগন পড়ে আছে। বেশীরভাগই পরিত্যক্ত। অবন্তীপুর ইস্ট কোল ফিল্ডটাতে কয়লার উৎপাদন এখন কমে এসেছে। যাও বা হয় তার শতকরা চল্লিশভাগ কয়লা মাফিয়া চুরি করে নেয়। মালগাড়ী এখান থেকে ইদানীং কমই যাতায়াত করে।। ওই পড়ে থাকা ওয়াগনগুলোতে এখন ইয়াদবের ছেলেরা রাত হলে তাশ, জুয়া মদের ঠেক বসায়। কখনও আশেপাশের এলাকা থেকে মেয়ে তুলে এনে গণ;., করে। নেশা একটু বেশী হয়ে থাকলে মেয়েগুলো প্রাণ নিয়ে পালাতে পারে। নাহলে পরের দিন সুরাজপুর খালে তাদের নগ্ন শরীর ভেসে যেতে দেখা যায়।
কাশ বনটার ওপরে একটা হালকা কুয়াশার মেঘ জমেছে। তেমন ঘন হয়নি এখনো। সুরাজপুরের দিক থেকে ধীরে ধীরে এগিয়ে আসছে। বেশ বোঝা যাচ্ছে যে আর একটু পরেই রেল লাইনটাকে পুরো ঢেকে ফেলবে। চাঁদের ফালিটা আকাশের মাঝখান পেরিয়ে গেছে। পরশু দিন অমাবস্যা, কালীপূজো।
জঙ্গলটা পেরোতে আমাদের প্রায় দশ মিনিট লেগেছে। আমি করণের কথা মতন ওর একটু পিছনে একটু কোণা করে অনুসরণ করছিলাম। প্রায় একশো মিটারের মতন করে দৌঁড়ানোর পর করণ হাতের ইশারা করে দাঁড়াতে বলছিল। তারপর মাটিতে ঝুঁকে বসে এক মিনিটের মতন দম নেওয়া। তারপরে আবার দৌঁড়। করণ কি করে পারছিলো জানি না, শেষের দিকে আমি তো প্রায় নিজেকে হ্যাঁচড়াতে হ্যাঁচড়াতে নিয়ে আসছিলাম। এখান থেকে রেল লাইনটা প্রায় শ'দুয়েক মিটার এখনো।
"এবার?" আমি কোনও মতে দম নিয়ে করণকে জিজ্ঞাসা করলাম। আমার যা অবস্থা তাতে এখন চীৎকার করে কুকুর তাড়াতে পারবো না, সামশেরের দলবল তো দূরের কথা।
করণ দেখলাম আশ্চর্য্য শান্ত। মাটিতে হাঁটু গেড়ে বসে, শালের ভিতর থেকে কিরকম একটা একনলা ছোটো দূরবীণ বের করে চোখে লাগাল।
"দূর শালা, এই অন্ধকারে দূরবীণ দিয়ে কি পাখী দেখছিস নাকি?" আমার মহা বিরক্তি লাগলো ওর রকমসকম দেখে। ওর আদৌ কোনও পরিকল্পণা আছে না নেই সেটাই বুঝতে পারছি না।
"চোখে লাগিয়ে দেখ," করণ হাত বাড়িয়ে আমার দিকে দূরবীণটা এগিয়ে দিল।
আমি খুব তাচ্ছিল্য সহকারে ওটা নিয়ে নেড়েচেড়ে দেখলাম। ঠিক দূরবীণ নয়, দু'পাশে বেশ কয়েকটা নব লাগানো আছে। মাঝখানটা সরু হয়ে গেছে আবার শেষদিকটা মোটা মতন। চোখে লাগানোর জায়গাটাতে একটা রাবারের গার্ড রয়েছে। বেশ ভারীই মনে হল। চোখে লাগালাম আর সাথে সাথে আমার আশপাশটা যেন চেঞ্জ হয়ে গেল। আশেপাশের গাছপালাগুলো সব ছাই ছাই রঙের, তার মাঝে মাঝে চকচকে সাদা সাদা কি সব উড়ে বেড়াচ্ছে। মনে হল জোনাকি। এমনকি কাশ বনে উড়ে বেড়ানো ফড়িংগুলোকেও দেখতে পেলাম মনে হল।
"মনোকুলার থার্মাল রমাল ইমেজার!!!" আমি অস্ফূটে বলে উঠলাম। হলিউডের সিনেমাতে অনেক দেখেছি সৈন্যদের বন্দুকে লাগানো থাকে।
"হুম! দে এবার আমাকে," করণ আমার হাত থেকে যন্তরটা নিয়ে নিল। আমার চোখের সামনে যেন ঝপ করে লোডশেডিং হয়ে গেল। আবার সব ঘুটঘুটে কালো অন্ধকার। আমি কিছুক্ষণ অবাক হয়ে করণের দিকে তাকিয়ে থাকলাম। কিছুই যেন তল পাচ্ছি না আমি। কোনভাবেই মেলাতে পারছি না আমার ছেলেবেলার প্রিয় বন্ধুর সাথে আজকে আমার পাশে হাঁটু গেড়ে বসে থাকা লোকটার। করণ বিশ্ববখাটে ছেলে হতে পারে, দেদার পয়সা খরচা করতে পারে সাধারণ লোকের কাছে যা আজেবাঁজে জিনিসের ওপরে। প্রচণ্ড দামী বিদেশী দূরবীণ কিনতে পারে এই জঙ্গলে জন্তু জানোয়ার পাখী দেখার জন্যে, কিন্তু থার্মাল ইমেজার? এটা তো মিলিটারী ইক্যুইপমেন্ট। ওর হাতে এলো কি করে? কোনও বদসঙ্গে পড়ে যায়নি তো?
"স্নাইপার!" করণের কথা শুনে চমকে গেলাম। সামশেরদের আবার ওই সব জিনিস আছে নাকি? করণ আবার আমার দিকে মনোকুলারটা এগিয়ে দিয়ে বললো, "টু ও' ক্লকে ওই যে একলা ওয়াগনটা আছে ওটার দিকে তাকা।"
আমি ওর কথামতন সেই দিকে তাক করতেই পরিস্কার অবয়বটাকে দেখতে পেলাম। ওয়াগনটার ছাদে উপুড় হয়ে শুয়ে আছে, সামনে একটা লম্বা লাঠির মতন বেরিয়ে আছে। ভাগ্য ভাল আমাদের দিকে পিছন করে আছে। রেল লাইনের পাশের যে রাস্তাটা সুরাজপুর থেকে এসেছে সেই দিকেই মুখ করে আছে। করণ ঠিকই বলেছিল, ওই রাস্তাটা ধরে এলে এতক্ষণে আমাদের খুলি উড়ে যেত। আর একটু ভাল করে লোকটার হাতের বন্দুকটাকে নজর করলাম।
"নাহ... স্নাইপার রাইফেল নয়। পাতি .৩০৩, এতো আমাদের পেটমোটা হাবিলদারগুলো নিয়ে ঘুরে বেড়ায়।" আমারও যে এই ব্যাপারে জ্ঞান কম নয় সেটা করণকে বুঝিয়ে দিলাম।
"হ্যাঁ, যদি ওটা তোর পেটমোটা হাবিলদারের হাতে থাকে তাহলে একটা লাঠির চেয়ে বেশী কিছু না। কিন্তু ট্রেনিং পাওয়া হাতে এটা আজকের যে কোনো মডার্ন স্নাইপার রাইফেলের থেকে কম নয়। ছয়শ থেকে হাজার গজ অবধি টার্গেট আরামসে লাগাতে পারবে। আমরা তার অনেক ভিতরে বসে আছি।" করণ আমার গর্বে ঠেশ দিয়ে বললো, "এটা নির্ঘাত সুরজমল, ইয়াদবের দলে ওই একমাত্র .৩০৩ নিয়ে ঘোরে, আর ওর হাতের নিশানাও নাকি দারুণ শুনেছি। কিন্তু..."
"কিন্তু কি?" ওর কপালে গভীর ভাঁজটা আমি কোনও যন্ত্র ছাড়াই দেখতে পেলাম।
"ও জানে যে ওই পথ দিয়ে কেউ আসবে আর তার জন্যেই অপেক্ষা করছে, ইয়াদবের ছেলেরা সাধারণতঃ এসব করে না। মেয়েছেলে নিয়ে মস্তি করতেই বেশী ব্যস্ত থাকে।" এক নিশ্বাসে বলে গেল করণ। "...ও আমাদের জন্যে বসে আছে...," ওর গলাটা যেন একটু কেঁপে গেল।
আমার গা-হাত থেকে সব জোর চলে গেল মুহূর্তের মধ্যে। হাতের বন্দুকটাকেও অসম্ভব ভারী মনে হতে লাগলো। এসব কি বলছে করণ। আমরা যে মউয়াকে বাঁচানোর জন্যে আসছি সেটা তো আমাদের বাড়ীর ওই কটা লোক ছাড়া কেউ জানে না। ইয়াদবের লোকেরা কি করে এর মধ্যে জেনে যাবে যে আমরা আসছি?
"করণ, তুই কি করে জানলি যে সামশের মউয়াকে এখানেই আনবে? আমরা হয়তো ভুল জায়গায় এসেছি। এটা হয়তো অন্য কোনও বাওয়াল, কয়লার স্মাগলিং তো এখানে হতেই থাকে।" আমি নিজেকে আর করণকে বোঝানোর চেষ্টা করলাম।
"হুম... আমি ভুল করতেই পারি, কিন্তু এ জিনিসটা করবে না," করণ ওর পকেট থেকে একটা ছোটো আইফোন সাইজের একটা জিনিস বের করলো। সেটার কালো স্ক্রীনে দুটো হলুদ ডট মাঝে মাঝে ব্লিঙ্ক করছে। ওদের মধ্যে একটাকে পয়েন্ট করে করণ বললো, "এটা আমরা...আর এইটা মউয়া। এই যন্তর তো বলছে আমরা ওর আড়াইশ মিটারের মধ্যেই রয়েছি। তাছাড়া মেয়েছেলে তুলে মস্তি করার এটাই পেটেন্টেড জায়গা ওদের।"
আমি নড়েচড়ে বসে করণকে প্রশ্নবাণে জর্জরিত করবো বলে ভাবলাম কিন্তু করণ আমাকে থামিয়ে দিয়ে বললো, "সমু, আমি জানি তোর মনে কি চলছে। কিন্তু তোকে সব কিছু বলার মতন সময় এখনো আসেনি। আমি তোকে সব খুলে বলব পরে, আজ নয়, এখন নয়। শুধু একটা কথা মনে রাখ, আমাদের যে করে হোক মউয়াকে বাঁচাতেই হবে।"
"মউয়া কে, করণ?" আমি অস্থির হয়ে জিজ্ঞাসা করলাম। আমাকে জানতে হবে কার জন্যে আমি এতটা জীবনের ঝুঁকি নিচ্ছি।
- "মউয়া... মউয়া... আমার কাছে, আমাদের কাছে খুব গুরুত্বপূর্ণ একজন কেউ, শুধু এটুকুই বলতে পারবো এখন।"
"আমাদের মানে কাদের করণ?" আমি হারিয়ে যাচ্ছিলাম একের পর আরেক কথার হেঁয়ালিতে।
করণ কোনও উত্তর দিল না। ফোনের মতন যন্ত্রটার ডান দিকের একটা বোতাম বিভিন্ন অনুপাতে থেমে থেমে টিপতে লাগলো। "টিক টিক...টিক টিক টিক... টিক টিক টিক টিক... টিক টিক..."
"মর্স কোড," আমি বুঝতে পারলাম। কাউকে ও কোনও সঙ্কেত দিচ্ছে। করণ কি এখানে একা? নাকি ওরও কোনও দলবল আছে? কি করে ও এখানে? আমাদের মানে কাদের কথা বলছে? আমার মনের মধ্যে উথাল পাথাল হতে থাকল। কোনও প্রশ্নের উত্তর নেই।
"চলে আয়," আমাকে হাত দিয়ে ইশারা করে করণ গুড়ি মেরে কাশ বনে ঢুকে গেল।
আমি কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে ওর পিছু নিলাম। আমরা ওয়াগনটাকে ডান হাতে রেখে প্রায় গোল করে ঘুরে পিছনের দিক দিয়ে এগোতে লাগলাম খুব সাবধানে। আমি বার বার ডান দিকে ঘাড় ঘুরিয়ে দেখছিলাম ওয়াগনের ওপরের লোকটা এখনো আমাদের দিকে পিছন করে আছে কিনা। কুয়াশার জন্যে বিশেষ কিছু দেখতে পারছিলাম না। মনে মনে আশ্বস্ত হলাম এই ভেবে যে এই কুয়াশার মেঘ নিশ্চয়ই আমাদেরকেও একই ভাবে ঢেকে রাখছে। সানি আর উদিতার মুখ বার বার মনে পড়তে লাগলো। খুব মিস করতে শুরু করলাম মা আর বাবাকে। নিজেকে এতদিন ঘোর নাস্তিক বলে ভাবতাম কিন্তু দেখলাম মনেপ্রাণে ডেকে চলেছি যতরকম ভগবানের নাম জানি।
লাইনের পাশের ওয়াগনগুলোর কাছাকাছি যেতে শুনতে পেলাম একটা মেয়ের গলার চাপা কান্না আর কিছু পুরুষ কণ্ঠ। কোনও শব্দ না করে আওয়াজ লক্ষ্য করে এগিয়ে গেলাম লাইন বরাবর। একটু পিছিয়ে যেতেই একটা পরিত্যক্ত ভাঙ্গাচোরা কামরার পিছনে লাইনের ওপরে শব্দের আর আলোর উৎস খুঁজে পেলাম। আমরা কামরার পাশটাতে নিশ্চল হয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম। করণ ইশারায় আমার কাছ থেকে বন্দুকটা চেয়ে নিল। খুব সাবধানে ওপরের রেলে মনুকুলারটা ফিট করে আমাকে ফেরৎ দিল। খুট করে একটা শব্দ হল শুধু। বেশ একটা মেড ইজি স্নাইপারের কাজ করবে এটা এখন।
"তুই কামরাটার ডান পাশটাতে লাইনের ধারে থাক, ওখান থেকে সামনের ওই ওয়াগনটার খোলা ভিউ পাবি। আমি বাঁ দিক দিয়ে যাচ্ছি। তুই আমার কথা ভুলে যা, আমি ঠিক মউয়াকে বের করে আনব। তুই শুধু ওপরে সুরজমলের দিকে নজর রাখবি। এখানে কোনও আওয়াজ হলেই কিন্তু ও ওখান থেকে নেমে আসবে। ওটুকুই তোর হাতে সময়। ওর মধ্যে তুই ওকে না ফেলতে পারলে, ও আমাকে ফেলে দেবে অনেক দূর থেকেই।" করণ প্রায় শুনতে না পাওয়ার মতন করে বললো।
আমি করণের হাতটা একবার শক্ত করে ধরলাম। কে জানে এরপরে আবার দেখা হবে কিনা। আমার মস্তিষ্ক এখন ভাবনা চিন্তা করা বন্ধ করে দিয়েছে। যন্ত্রের মতন করণের কথা শুনে পা টিপে টিপে কামরাটার ডান দিকের ধারে মাটির ওপরে এক হাঁটু ভাঁজ করে বসলাম। মনোকুলারের ভিউতে চোখ লাগিয়ে দেখলাম, ওয়াগনের ওপরে সুরজমলের কাঁধের কিছুটা দেখা যাচ্ছে। এখনো শুয়ে আছে। আমি কামরার তলা দিয়ে চাকার মাঝখান দিয়ে আলোর উৎসর দিকে তাকালাম।
লাইনের ওপরে একটা হ্যাজাক রাখা আছে। সেখান থেকেই যা আলো আসার আসছে। দুটো রেলের মাঝখানে কিছুটা ঘেসো জমি আছে সেখানেই তিনটে লোকের সাথে ধ্বস্তাধস্তি করে যাচ্ছে মউয়া। মুখ দিয়ে একটা চাপা বোবা কান্নার মতন আওয়াজ করছে কিন্তু বাঘিনীর মতন লড়ে যাচ্ছে সমানে। বাঁ দিকের ধুমসো মতন জিন্সপরা লোকটা ওর হাত দুটোকে বাগে পেয়ে খুব জোরে পিছনে মুচড়ে ধরলো। মনে হল যেন ভেঙ্গেই গেল ও দুটো। মউয়া চোখ বুঁজে কঁকিয়ে উঠে চিৎ হয়ে পড়ে গেল। ওর গায়ের শাড়ী অনেকক্ষণ আগেই কোমরের কাছ থেকে খুলে পড়ে সায়ার সাথে জড়িয়ে ছিল। মাঝখানের খাকি প্যান্টপরা লোকটা এই মুহূর্তের অপেক্ষা করছিল। মউয়ার গায়ের কালো ব্লাউসটা বুকের মাঝখান থেকে এক টানে ছিঁড়ে দিল। হ্যাজাকের আলোতে মউয়ার নিটোল সুডৌল স্তনযুগল ছেঁড়া ব্লাউজের ভিতর থেকে উপচে বেরিয়ে পড়লো। খাকি প্যান্ট দ্রুত হাতে পুরো জামাটাই ছিঁড়ে টুকরো টুকরো করে ফেললো। জিন্সপরা ধুমসোটা মুখ দিয়ে একটা হালকা শিস্ দিয়ে উঠলো।
- "জব্বর মাল হ্যায় শালী, বহুৎ চোদেঙ্গে আজ ইসকো।"