03-02-2019, 11:16 AM
ছয়
আমাদের চোখের সামনে থেকে সুজাতা, রমা আর মিনতি হারিয়ে যাওয়ার পর আমরা অরূপের দিকে তাকালাম। ও আমাদের মুখের দিকেই তাকিয়ে রয়েছে। “বন্ধুরা, এরা জিজ্ঞেস করছে আমরা উগ্রপন্থী কি না? এর কি উত্তর দেব তোমরা বুঝিয়ে দেবে এদের দুজন কে? এদের কেন ধরে আনা হয়েছে সেই উত্তর আমি এর পরে দেব। আর ডাক্তার তোমার পরীক্ষার ব্যাপারে এর একটা থিওরি আছে। তুমি নাকি ওকে রেপ করেছ!!” ওর গলায় একটা বিদ্রুপের সুর। “ডাক্তার তুমি শেষে বলবে। আগে বাকিরা এদের বাকি উত্তর দিক। তবে তার আগে আমি কিছুটা বলব। আর তাড়াতাড়ি বলব।“ দেখলাম ওর কথায় আতলেমি আর নেই। সাবলীল কথা বলছে। তার মানে এর আগে যে ভাবে কথা বলছিল সেটা পুরোটাই মন বশ করার নাটক। আমার ওই কটাক্ষগুলো মাথায় ঢুকেছে মালটার। খুব উঁচু গলায় ভাষণ দেওয়ার মতন করে শুরু করল ওর ভাষণ। “আমি এদের দোষ দি না। তোদের আমি নিজের দলের লোক মনে করেই নিয়ে এসেছি এখানে। তবে হ্যাঁ...” ওর বাকি কথাটা শেষ না করতে দিয়েই অদিতি চেঁচিয়ে উঠল “ লুক হিয়ার মিস্টার। আমার সাথে তুই তুকারি করবেন না। আমি আপনাকে আপনিই বলব। আর আশা করব অ্যাট লিস্ট তুমি সম্বোধনটা পাব।“ উত্তর এলো “বেশ। তোমাদের আমি নিজের দলের লোক মনে করে নিয়েছি। বেশ, এইবার খুশি তো?” এইবার সবার দিকে তাকিয়ে বললেন “অনেকের বোধহয় অনেকগুলো জিনিস জানা নেই। আমি সবার সামনে দাঁড়িয়ে খোলা খুলি দাঁড়িয়ে এই প্রশ্নের উত্তরগুলো দেব। আর এখনই দেব। “ একটা মেয়ে এসে ওর হাতে একটা জলের গ্লাস দিয়ে চলে গেল। ও শুরু করল। “হ্যাঁ আমরা উগ্রপন্থী। আমরা মানুষ খুন করেছি। কিন্তু কেন করতে বাধ্য হয়েছি সেটা আমি বলব না। যারা এখানে দাঁড়িয়ে আছে তারাই বলবে। আমাদের নতুন বন্ধুরা আমাকে অভিযোগ করেছে যে আমি নকশাল। সেটা হলেও ক্ষতি ছিল না। কিন্তু না। আমরা তো নকশাল নই। তবে আমরা দেশদ্রোহী নই। এখানে কেউ দেশদ্রোহী নই আমরা। কিন্তু দেশ আমাদের ওদের শ্ত্রু মনে করে। আর পাঁচটা উগ্রপন্থী সংস্থার মতন মনে করে। কিন্তু আমরা তা নই।“ দুচুমুক জল খেলেন। একটু নিঃশ্বাস নিলেন। এরকম রগরগে ভাষণের কেউ এরকম বিরাম দিলেই কেন জানি না আমার মনে হয় এবার শুরু হল আতলেমি। আর হলও তাই। তবে কেউ কেউ যদিও জল খাওয়ার পর নতুন উদ্যমে চেঁচাতে শুরু করেন আর এক দমে। তবে আঁতেলগুলো এমন করে না। এই মালটা যে আঁতেল তাতে সন্দেহ নেই। ও শুরু করল “আমি মুক্ত সমাজে বিশ্বাস করি। আমার মতন অনেকেই এখানে আছে যারা মুক্ত সমাজ, মুক্ত মেলামেশায় বিশ্বাসী। কিন্তু এতে দোষ কোথায়। কিন্তু এই দল গোড়ে ওঠেনি মুক্ত সমাজ তৈরি করার জন্য। আমাদের আরও একটা দৃষ্টিভঙ্গি আছে। মানে আরেকটা লক্ষ্য আছে। সেটা হল মেয়েদের মুক্তি। সেটার ব্যাপারে বলার আগে আমি কয়েকজনকে সবার সামনে ডাকতে চাই। নতুনরাও শুনুক। পুরাতনরাও একবার স্মৃতিগুলোকে তাজা করে নিক। আমার অনেক কথা বলার আছে। কিন্তু আগে এরা বলবে আর তারপর আমি বলব। কিন্তু এখনই বলব। ট্রেনিং আজ একটু পরে শুরু করলেও চলবে। আজ আমাদের সুখের দিন। আমার বোন, তোমাদের সবার দিদি সুজাতা ফিরে এসেছে। গুলি খেয়েও ঈশ্বর চাইলে এই দুই নতুন কমরেডের আশীর্বাদে ও বেঁচে যাবে। সবাই পূজা, ঈদ, খ্রিস্টমাসের ছুটিতে মেতে থাকে। আমরা কি একজন কমরেডের নতুন জীবন লাভের খুশিতে মেতে উঠতে পারি না? কিন্তু না। আজ আমাদের ছুটি নয়। নতুন উদ্যোগে কাজ শুরু করার দিন। এটাই ওর প্রতি আমার আর তোদের বেস্ট গিফট হবে। কিন্তু এখন আমাদের একটু আলোচনা করা দরকার। তবে হ্যাঁ সবাই এখানে বাঙালি নয় যাদের আহ্বান করব। কারোর বোঝার অসুবিধা হলে তখনই হাত তুলে জিজ্ঞেস করবি। আমি বুঝিয়ে দেব। “ একটু বিরতি নিয়ে বললেন “ প্রথমে ডাকব মায়াকে।“ আরে এ তো আমার চেনা মায়া নয়। এ কে? অবশ্য তারপরেই মনে হল মায়া নামটা তো খুব বিরল নয়। মায়া এলো।
মাইক নেই তবু ভাব খানা এমন যেন অতিথির জন্য উনি মাইক ছেড়ে দিয়েছেন। অরূপ একটু সরে দাঁড়িয়েছে। মায়ার একটু বিবরন দিয়েই দি। ইনিও হাঁটু অব্দি শাড়ি পরে আছেন। বয়স চল্লিশের কাছাকাছি। শাড়ি নাভির অনেক নিচে পরা। কোমরের কাছে শাড়ির ফাঁক থেকে যেন যৌনাঙ্গ বা তার পাশে থেকে বেড়িয়ে আসা চুলের ছিটে ফোঁটা দেখা যাচ্ছে। গায়ের রঙ চাপা। আমাদের সামনে এসে আমার আর অদিতির ঠিক মাঝখানে দাঁড়িয়ে হাত তুলে নিজের চুল খোঁপায় বেঁধে নিলেন। ভীষণ নোংরা একটা গন্ধ নাকে এল ওনার শরীরের থেকে। আর বগলে একগুচ্ছ চুল। পাতলা শাড়ির ভেতর থেকে ওনার পাছার অবয়ব স্পষ্ট। আর যোনী কেশের কিছুটাও যেন বাইরে থেকে বোঝা যাচ্ছে, মানে আভাষ আর কি। ওনার কোনও লজ্জা নেই। আর বাকি দের দেখেও মনে হল না যে এরকম নোংরা ভাবে দাঁড়িয়ে থাকা দেখে কারোর মধ্যে কোনও পরিবর্তন আছে। হাত আর পা ভর্তি লোম। আসলে এরা সবাই এমন। এদের ছোট করছি না। কিন্তু এটাই স্বাভাবিক এদের কাছে। ওনার স্তন একটা পাতলা কাপড়ের আবরণের ভেতর থেকে ফুটে আছে। বেশ বড় নয়। কিন্তু বেশ গোল ভাবে উঁচিয়ে আছে বাইরের দিকে। বয়সের ভারে নেমে যায় নি। পাছাটাও বেশ ফোলা ফোলা। আর হাঁটা চলা বেশ দুলিয়ে দুলিয়ে। আর কোমরের কাছে শাড়ির গোঁজের জায়গাটা দেখে বুঝলাম এনার কোমরেও স্ট্রেচ মার্ক রয়েছে। কি মনে হওয়ায় এই স্বল্প বসনা সব কটা মেয়ের তলপেটের ওপরে চোখ বুলিয়ে নিলাম, মানে যতটা দেখতে পাই। প্রায় সবার পেটে চামড়ার ওপর ভাঁজ আর দাগ। সবাই বাচ্চা ধরেছে পেটে? তাহলে সেই বাচ্চাগুলোই বা কই? এই মায়া শুরু করল নিজের ভাষণ। “ বন্ধুরা। আমি ছেলেদের নিজের শ্ত্রু মনে করি না। কিন্তু একটা ছেলেই যে আমার শ্ত্রু হয়ে উঠেছিল তাতে সন্দেহ নেই। আমি একা হয়ে পড়েছিলাম এই সমাজে।“ অরূপ ওকে থামিয়ে দিয়ে বলে উঠল, আর বেশ উচ্চ স্বরেই বলে উঠলো যাতে সবাই শুনতে পারে, “ সব কথা খুলে বলো মায়া। আর এখানে এসে তোমার সাথে কি কি হয়েছে সব কিছু খুলে বলবে। কিছু ঢাকবে না। শুরু করো। “ নিজের গ্লাসটা ওর দিকে এগিয়ে দিল। ও ঘোঁত ঘোঁত করে সব জল গলায় ঢেলে দিল। আবার শুরু করল। “ আমার বয়স একচল্লিশ। আমার বিয়ে হয়েছিল সাতাশ বছর বয়সে। দেখা শুনা করে বিয়ে। আমি এম এ করার পর আমি কোলকাতায় ভালো চাকরি করতাম। কিন্তু বাবার আদেশে বিয়ে করে চলে গেলাম কলকাতা বাইরে। আমার বর ছিল পার্টির গুন্ডা। লোকাল থানায় গিয়ে সপ্তাহে এক দিন করে ওকে হাজিরা দিতে হত। আগে একটা কি কাজ করত, কিন্তু ইউনিয়নের গণ্ডগোলে জড়িয়ে পড়ায় আর থানা পুলিশের হ্যাপা শুরু হওয়ার পর সেই চাকরিটাও গেল। এরপর থেকে সংসারে টাকার আমদানি শূন্য। সংসারের হাল ধরার জন্য আমি আবার চাকরি শুরু করলাম। কিন্তু। আমার প্রমোশন হবার পর থেকে বিষিয়ে গেল ওর মন। কোনও মেয়ের যে ভালো কাজের জন্য প্রমোশন হতে পারে সেটা ওর ধারণার বাইরে। ওর বিশ্বাস আমি অফিসের পর আমার বসের সাথে শুই আর তাই এই প্রমোশন। আমি একজন দুশ্চরিত্রা মেয়ে। সবাইকে আমি সত্যি কথা বলছি যে আমি কোনও দিন বর ছাড়া কারোর সাথে শুইনি সেদিন অব্দি। কিন্তু আমাকে (নিজের নরম বুকের ওপর হাত চেপে ধরে বলল) বাড়ি ফেরার পর অনেক কথা শুনতে হত আর রোজ শুনতে হত। (ওনার গলার স্বর শুনে বুঝতে পারছিলাম যে উনি কতটা অসহায় হয়ে নিজের ভেতরের কথাগুলো উগড়ে দিচ্ছেন।) কোনও দিন অফিস থেকে ফিরতে দেরী হলেই শুনতে হত ওর বাজে কথা। মদ্যপ অবস্থায় বাড়ি ফিরে কি যে বলত কেউ জানে না। একদিনকার ঘটনা। কোম্পানি থেকে সেদিন সবাইকে বোনাস দেওয়া হয়েছিল। মন ছিল বেশ খুশি খুশি। খুশি খুশি ভাবটা এসে গিয়েছিল বলেই কি না জানি না, কিন্তু সেদিন বাড়ি ফেরার পথে ভাবলাম বরের জন্য কিছু নিয়ে যাই। পছন্দ করে ওর জন্য একটা শার্টের পিস কিনেছিলাম সেদিন। কিন্তু হিতে বিপরীত হল। শার্টের কাপড়টা দেখে খুশি হওয়ার বদলে জ্বলে উঠল ও। কোথা থেকে এত টাকা আসছে, কার কার সাথে শুয়ে বেড়াচ্ছি, এই সব বলতে বলতে তেলে বেগুনে জ্বলে উঠলো কয়েক মিনিটে। তারপর শুরু হল বেধড়ক মার। এর আগে ও আমাকে অনেকবার অকথ্য গালি গালাজ করেছে, কিন্তু কোনও দিন গায়ে হাত দেয় নি। কিন্তু সেদিন দেখলাম ওর ভয়ানক রূপ। চোখের তলায় কালশিটে পড়ে গিয়েছিল। (বা হাতটা তুলে কনুইয়ের কাছটা ধরে সবাইকে দেখিয়ে বলল) এই হাতটা ভেঙ্গে দিয়েছিল মেরে। রাত্রে বেলায় বের করে দিয়েছিল বাড়ি থেকে। আমার শাশুড়ি অনেক বারণ করেছিল, কিন্তু আমার বরকে আটকাতে পারে নি। রাত্রে গিয়ে আশ্রয় নিলাম এক কলিগের বাড়িতে। ও একটা মেসে থাকত। আরও কয়েকটা মেয়ে ছিল। ওরাই আমাকে হাঁসপাতালে নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা করিয়েছিল। তিন দিন জ্বরের ঘোরে ছিলাম। ডাক্তার বলেছিল জ্বরটা এসেছে মানসিক শকের জন্য। সুস্থ হওয়ার পর ওদেরই একজন বলেছিল যে এইসব গৃহবধূ নির্যাতনের ব্যাপারে থানায় ডাইরি করতে হয়। থানায় গেলাম ডাইরি করতে। কমপ্লেন লেখা হল। কিন্তু পড়ায় এক মাস হয়ে গেল কোনও কাজ হল না। আবার গেলাম থানায়। ওখানকার ও সি বলল সামনে ইলেকশন আসছে, ওপর তলা থেকে বলা আছে ওকে ছোঁয়া যাবে না এই কটা দিন। ও এখন পার্টির জন্য দৌড়া দৌড়ী করছে। একজন আমাকে বুদ্ধি দিল এখানে একটা এন জি ও আছে ওরা নাকি এইসব কেসে হেল্প করে থাকে। গেলাম ওদের কাছে। সব কথা শোনার পর আমাকে আশ্বস্ত করল। কিন্তু কোনও কাজ হল না। আরেকটা স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার দ্বারস্থ হলাম। সেখানেও কোনও কাজ হল না। বন্ধুরা এরা শুধু জানে ভাষণ দিতে আর মিছিল করতে। যদি সত্যি কেউ বিপদে পড়ে আসে তাদের জন্য এরা কিছু করে না। অসহায়ের মতন আমি এক দরজা থেকে অন্য দরজায় ঘুরে চলেছি। এমন সময় একদিনকার ঘটনা। আমি সেদিনও একজনের সাথে দেখা করতে গিয়েছিলাম। সে ওই এলাকার একজন লিডার। তার জন্য দেখা করার জন্য যখন বসে আছি, তখন আমার সাথে আলাপ হল সীমাদির। এখানকার অনেকেই হয়ত তাঁকে দেখে থাকবে। গত বছর উনি মারা গেছেন। সীমাদি আমার মুখে সব কথা শুনে আমাকে বলল এখানে বলে কিছু লাভ হবে না। থানা পুলিশ এন জি ও সব কিছু এখন ইলেকশনের ব্যালট বক্সের ভেতর বন্দী। যদি মনে সাহস থাকে আর নিজের ভাগ্য নিজের হাতে তুলে নেওয়ার অদম্য ইচ্ছা থাকে তাহলে এসো আমার সাথে। আমাকে নিয়ে এলো এখানে। “
এরপর ও যা বলল আর যত সহজে বলল তাতে শুধু আমার নয় অদিতির ও রক্ত হিম হয়ে গেল। মায়া বলে উঠল “দু মাস পর যখন আমার ব্যাপারটা প্রায় ঠাণ্ডা হয়ে গেছে তখন ফিরে গেলাম বাড়ি। আমাকে দেখে আমার বর খুশি হয় নি ঠিকই কিন্তু থানায় কমপ্লেন তুলে নেওয়ার শর্তে আমাকে বাড়িতে থাকার অনুমতি দিল। ওর ধারণা ছিল আমার এখনও মাথা গোঁজার ঠায় হয় নি। রাত্রে খাওয়ার পর মেয়েলি ছল কলা দেখিয়ে ওর সাথে ঘন হয়ে এলাম। এসবই ছিল পূর্ব পরিকল্পিত। ওর রক্তে তখন কামনার আগুন। খুবলে খুবলে নিল আমাকে, নিতে দিলাম আমি। আমাকে ভোগ করে ক্লান্ত শরীর নিয়ে পাশ ফিরে ঘুমিয়ে পড়ল। উঠে পড়লাম আমি। ব্যাগ থেকে বের করে নিলাম আগ্নেয়াস্ত্র। আমার মাথায় তখন প্রতিশোধের আগুণ। ঘুম থেকে তুললাম ওকে। ওর নাকের ডগায় তখন বন্দুক হাতে আমি দাঁড়িয়ে আছি। আমার এই হিংস্র রূপ ও আগে কোনও দিন দেখে নি। ক্ষমা চাইল, প্রান ভিক্ষা চাইল, কিন্তু না দিলাম না ভিক্ষা। মাথায় লাগিয়ে টিপে দিলাম ট্রিগার। শাশুড়ি উঠে পড়েছিলেন গুলির শব্দে। কিন্তু উনি কিছু বুঝে ওঠার আগেই আমি বেড়িয়ে গেলাম বাড়ি থেকে বাইরে গাড়ি দাঁড়িয়ে ছিল। (একটু থেমে বলল) তখন থেকে আমি ফেরার আসামি। অবশ্য এর পরেও আমি আরও দুটো খুন করেছি। “ ওর চোখের কোণায় জল। সবাই নিরব। ও আর কিছু বলল না, চলে গেল। অরূপ আমার দিকে তাকিয়ে বলল “মিনতি কে তো তুমি দেখেছ?” সুজাতাকে শুইয়ে দিয়ে মিনতি তখন এসে দাঁড়িয়েছে ভিড়ের মধ্যে। “মিনতি এখানে এসো। তোমার গল্প বলো ওকে।“ মিনতি আমাদের দিকে এগিয়ে এসে আমার আর অদিতির হাত ধরে আমাদের ধন্যবাদ জানাল সুজাতাকে বাঁচানোর জন্য। ওর গলায় আন্তরিকতার সুর স্পষ্ট। ও যখন কথা শুরু করল আমাদের আশ্চর্য হবার পালা। ঝরঝরে ইংরেজিতে গড়গড় করে বলে গেল ওর অভিজ্ঞ্রতার কথা।
ওর বক্তব্য খানিকটা এই রকম। “ আমি প্রেসিডেন্সির ছাত্রী। পাশ করে চাকরি করতে গিয়েছিলাম দিল্লীতে। আলাপ হল এক ছেলের সাথে। ওরই সিনিয়র কলিগ। প্রেম হল। বিয়ের প্রস্তাব ওঠানোর পর জানতে পারলাম ছেলেটা বিবাহিত, একটা নাকি বাচ্চাও আছে। অথচ আমাদের সম্পর্ক যখন শুরু হয়েছিল, তখন ছেলেটা একবারও বলে নি যে ও বিবাহিত। আমার পেটে তখন ছেলেটার বাচ্চা এসে গেছে। জানাজানি হলে সর্বনাশ হয়ে যাবে ভেবে গোপনে গর্ভপাত করতে বাধ্য হলাম। ছেলেটার সাথে কাটাকাটি হয়ে গেল সেটা বলাই বাহুল্য। কিন্তু কিছুদিন পর থেকে ছেলেটা আবার আমার পেছনে ঘুর ঘুর করতে শুরু করে দিয়েছে। আমি না বলার পর থেকে শুরু হল ব্ল্যাকমেইল, আর শুধু ব্ল্যাকমেইল নয় সিনিয়র হওয়ার সুযোগ নিয়ে যখন তখন শরীরে হাত দেওয়া, পিছনে লেগে থাকা এই সব। রাত বিরেতে কাজের ভান করে ফোন করে ডিস্টার্ব করা। আর তার সাথে ছিল আমার গর্ভবতি হওয়ার খবর অফিসের বাকিদের জানিয়ে দেওয়ার ব্ল্যাক মেইল। কাজ কর্ম সব মাথায় উঠল। আমার নামে ভুরি ভুরি মিথ্যে কথা বলা শুরু করল অফিসের ম্যানেজারের কাছে। ছেলেটা ছিল ম্যানেজারের পেয়ারের লোক। তাই ওখানে গিয়ে নালিশ করে কোনও লাভ হবে না। চাকরি বাঁচানোর তাগিদে আবার ছেলেটার কাছে নিজেকে সপে দিতে বাধ্য হলাম। ছেলেটা আমার কাছে যেটা চায় সেটাকে ঠিক প্রেম বলা যায় না। সপ্তাহে একদিন বা দুদিন, মানে যেদিন ছেলেটার মুড আসবে সেদিন অফিসের পর আমার সাথে আমার ভাড়া করা বাড়িতে আসবে। নিংড়ে নেবে আমার শরীরের রস। চলে যাবে নিজের খিদে মিটিয়ে। এরপর এলো এক মহা বিপদ। একদিন ছেলেটা ওর এক বন্ধুকে নিয়ে এলো আমার কাছে। ছেলেটা আমাদের অফিসেই কাজ করে। আমি ওকে অনেক মানা করলাম, কিন্তু ও শুনল না। শুতে হল দুজনের সাথে। এক বিছানায় ভোগ করল আমাকে দুজন মিলে। পরের দিন অফিসে গিয়ে কিছু ছেলের মধ্যে ফিস ফিস শুনতে পাচ্ছিলাম। আমি কাছে গেলেই কথা থামিয়ে দিচ্ছে। বুঝতে বাকি রইল না ব্যাপারটা জানাজানি হয়ে গেছে। বেশীক্ষণ অপেক্ষা করতে হল না। ম্যানেজারের কেবিনে আমার ডাক পড়ল। আমি নাকি প্রমোশনের লোভে অফিসের কর্মচারীদের শারীরিক ভাবে প্রলুব্ধ করি, সিদিউস করি আর তাদের শয্যাসঙ্গিনী হয়ে কাজ হাসিল করি। অফিসের তাতে ক্ষতি হচ্ছে। আমি যে গর্ভবতী হয়েছিলাম সেই খবরও ওর অজানা নয়। কাজ না করে আমি যে এই শস্তা পথ বেছে নিয়েছি তার জন্য অফিস আমাকে ক্ষমা করতে পারবে না। আমার কাজ নিয়ে ম্যানেজমেন্ট একেবারে খুশি নয়। পাতা কাটা হল আমার। বাড়ি থেকে অনেক যুদ্ধ করে আমি কলকাতার বাইরে চাকরি করতে এসেছিলাম। এখন আর বাড়িতে ফিরে যাওয়ার রাস্তা নেই। আবার চাকরির খোঁজ শুরু করলাম। কিন্তু সময় ভালো না হলে যা হয়। পাচ্ছিলাম না চাকরি। এদিকে জমানো টাকা ফুরিয়ে আসছে। এমন সময় ছেলেটা একদিন আমার সাথে দেখা করতে এলো। আমাকে বলল যে আমি যদি ওর সাথে শুই তাহলে ও আমাকে হাত খরচের টাকা দিতে পারে, অন্তত যতক্ষণ আমি নতুন চাকরি পাচ্ছি। রাস্তার বেশ্যাদের মুল্যও আমার হাত খরচের থেকে অনেক বেশী। কেন আমি শোব ওর সাথে, কেন এত শস্তায় বিক্রি করে দেব নিজেকে। মনে আছে কলেজে পড়ার সময় একটি মেয়ের রেপের প্রতিবাদে আমি রাস্তায় মিছিলে নেমেছিলাম। তখন আমাদের স্লোগান ছিল মেয়েদের শরীর তাদের নিজস্ব জিনিস, সেটা সে কাকে দেবে সেটা তার নিজের অধিকার, সে রাস্তার বেশ্যাই হোক না কেন, জোর করে কেউ কোনও মেয়ের শরীর ভোগ করতে পারে না। কিন্তু আজ আমাকেই শুধু সমাজে টিকে থাকার তাগিদে নিজের ইচ্ছের বিরুদ্ধে একটা ছেলের সাথে শুতে হবে। আর মানসিক ভাবে ওর শরীরটাকে আমি মেনে নিতে পাচ্ছিলাম। আমার সব সর্বনাশ তো ওই করেছে। এক মাস ঘুরে গেল ছেলেটার আর কোনও ফোন এল না। দেখাও করতে এলো না। এদিকে আমার তখন টানাটানির শেষ পর্যায়ে এসে ঠেকেছে। বেশ কয়েক জায়গায় ধার দেনা ও হয়ে গেছে। সামনের মাসে বাড়ি ভাড়া দেব কি ভাবে সেটাও ঠিক বুঝতে পারছি না এখন। অবশেষে সংকোচ কাটিয়ে ফোন করলাম ছেলেটাকে। এক রাতে এসে সারা রাত আমার সাথে ফুর্তি করে সকাল বেলায় কয়েক হাজার টাকা আমার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বিদায় নিল। যাওয়ার আগে অবশ্য বলে গেল যে বেশ কয়েকদিনের জন্য ও শহরের বাইরে যাচ্ছে, এসে মেসেজ করবে। বাড়ি ভাড়ার টাকা তবুও উঠলো না। এতবড় বিপদে পড়ে যাব কোনও দিন ভাবতে পারিনি। যেদিন প্রেম করেছিলাম সেদিন কি সত্যি ভেবে ছিলাম যে এত বড় বিপদ ডেকে আনছি নিজের জন্য। ছেলেটা যে এরকম সে তো স্বপ্নেই ভাবতে পারিনি। বাড়ি ভাড়া নিতে এলেন কাকু। বয়স প্রায় পঞ্চাশের কোটায়। ওনার কাছ থেকে কয়েকদিন সময় চেয়ে নিলাম। কিন্তু না কিছুই জোগাড় হল না। বুঝতে পারলাম বাড়ি ছেড়ে দিতে হবে। এই দিকে এই শহরে মাথা গোঁজার আর কোনও জায়গা জানা নেই। একবার ভাবলাম আমার এক্স প্রেমিক যে আরেকটা ছেলেকে নিয়ে এসেছিল তাঁকে ফোন করে দেখলে কেমন হয়। কিন্তু না। আর নিচে নামতে মন চাইছে না। বাড়িওয়ালা কাকু এসে আমাকে বলে গেল যে এরপর যদি বাড়ি ভাড়া না দি তো পুলিশে দিয়ে দেবে। কি করব ভেবে কূল পাচ্ছি না। ওকে অনেক করে বোঝানোর চেষ্টা করলাম যে চাকরি পেলেই সবার আগে ওর ভাড়া আমি মিটিয়ে দেব। উনি তখনকার মতন চলে গেলেন বটে, কিন্তু কিছুক্ষণ পরে মোবাইলে ঢুকল তার এস এম এস। খুব নোংরা ইঙ্গিত আছে তাতে।ভাড়ার বদলে শরীর। ছিঃ, এত পড়াশুনা করলাম, কিন্তু এখন এই পুরুষশাসিত সমাজে আমার মূল্য হল আমার শরীরের কয়েকটা ফুটো আর শরীরের ওপর গজিয়ে থাকা কিছু মাংসপিণ্ড? কি করব বুঝতে না পেরে সেই রাত্রেই ছোট একটা ব্যাগ নিয়ে বাড়ি ছাড়লাম। ষ্টেশনে গিয়েছিলাম ট্রেনের নিচে মাথা দেব বলে। কিন্তু না আলি দা সেই সময় আমাকে বাঁচিয়ে ফেরত নিয়ে আসে। ওকে সব কথা বলেছি। ও আমাকে আমাদের ওখানকার ক্যাম্পে নিয়ে গেল। সেখান থেকে এখানে পাঠিয়ে দেওয়া হল। এই ক্যাম্প আমাকে বাঁচিয়েছে। আমার শরীর, মন সব কিছু আমি সপে দিয়েছি এই সংগঠনকে। ওরা যেভাবে খুশি চায় আমাকে ব্যবহার করতে পারে, আর তাতে আমি ধন্য হব। “
আরও কয়েকজনের জবানবন্দী আমাদের দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে শুনতে হল। তারপর সভা ভেঙ্গে গেল। অদিতিরও যে আমার মতন বেশ কয়েকটা প্রশ্ন মনের মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে সেটা ওর চোখ মুখ দেখে স্পষ্ট বুঝতে পারছিলাম। আমরা আবার অরূপদার সাথে এসে তার ঘরে গিয়ে বসলাম। কথা ছিল অরূপদা ওই জমায়েতেই কিছু কথা বলবে, কিন্তু সেটা আর হল না কারণ ছয় সাত জনের জবানবন্দীতেই অনেকটা সময় পেড়িয়ে গিয়েছিল। ওদের ট্রেনিং শুরু হয়ে গেছে। আমাদের বসতে বলে অরূপদা বলল “আমি জানি তোমাদের দুজনের মনে অনেক প্রশ্ন ঘুরতে শুরু করেছে। আমি তোমাদের সাথে খুলে কথা বলব বলেই এখানে নিয়ে এসেছি।“ আমিই প্রথম মুখ খুললাম “ অর্থাৎ তোমরা সমাজে বঞ্চিত, নিগৃহীত, লুণ্ঠিত মেয়েদের সংঘবদ্ধ করার জন্য এইটা তৈরি করেছে?” অরূপদার জবাব কিন্তু এলো তৎক্ষণাৎ “ শুধু তাই নয়। জায়গায় জায়গায় এরকম অনেক মেয়েরা আজও নিপীড়িত হচ্ছে। মুখে আমরা যাই বলি না কেন এখনও অনেক জায়গায় মেয়েদের শুধু ভোগ্য বস্তু হিসাবে দেখা হয় আর তাদের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলা হয়। অফিস, বাড়ি রাস্তা ঘাট কোথায় নয়। সরকার আর প্রশাসন মুখে যাই বলুক না কেন এসব রুখতে তারা অসফল। হয় তাদের ইচ্ছে নেই, অথবা তাদের যে ইনফ্রাস্ট্রাকচার দরকার সেটা এখনও নেই। এই অবস্থায় একজন নাগরিক হিসাবে আমি আর আমার মতন অনেকে আইন নিজের হাতে তুলে নিতে বাধ্য হয়েছি। তোমরা শুধু ছয় কি সাত জনের জবানবন্দী শুনেছ। আরও অনেক জখন্য শোষণ আছে সমাজে। কে দাঁড়াবে সেই মেয়েদের পাশে? আমরা দাঁড়াব।” অদিতি বলল “সবই তো বুঝলাম, কিন্তু আমাদের দুজনকে এখানে তুলে আনার কারণ কি?” অরূপদা হেঁসে বলল “ আমাদের এখানে অনেক ঝুঁকি নেওয়া কাজ করতে হয়। প্রায়ই কেউ না কেউ আহত হয়। অনেকবার এরকম হয়েছে যে মেয়েরা বা ছেলেরাও বিনা চিকিৎসায় মারা গেছে। তাই অনেক দিন থেকে আমাদের ইচ্ছে ছিল যদি দু একজন ডাক্তার আমাদের দলে থাকে তাহলে হয়ত এতগুল প্রান যাবে না বিনা চিকিৎসায়। তোমাদের সাথে যোগাযোগ হয়েছে নিতান্ত ঘটনাচক্রে। কয়েকদিন আগে তোমাদের কোনও পরিচয় আমার জানা ছিল না। কিন্তু ...” অদিতি মাঝপথেই বলে উঠল “ ধরে নাও, আমাদের যদি না পেতে তখন কি করতে?” অরূপদা বলল “কি আর করতাম, খুঁজতে থাকতাম। যতদিন না আরেকজনকে পাচ্ছি।“ কিছুক্ষণ কি একটা ভেবে নিয়ে আমাদের বলল “তোমরা নিজেরাও মেয়ে। তোমরা হয়ত নিজেরা এরকম পরিস্থিতির কোনও দিন শিকার হওঁ নি, কিন্তু ভেবে দেখো, তোমাদেরও কি একটা দায়িত্ব থেকে যায় না এই মেয়েগুলোর প্রতি?” এই প্রশ্নের কোনও উত্তর হয় না। আমরা চুপ করে বসে আছি দেখে আমাদের বলল “ ঠিক আছে, যখন এসেই গেছ তখন কয়েকদিন আমাদের সাথে থাকো। কাউকে জোর করে আঁটকে রাখা বা জোড়ে করে কাউকে দিয়ে কিছু করানো আমাদের নীতিবিরুদ্ধ। আমরা বাইরে আরও দু-একজন ভালো মেয়েদের ডাক্তার খোঁজার চেষ্টা করছি, পেলেই তোমাদের মুক্তি। “ আমি হেঁসে বললাম “এটা কি সহজে বিশ্বাস করা যায়? এখানে নিয়ে এলে জোর করে আর এখন বলছ আমরা চলে যেতে চাইলে এমনি এমনি ছেড়ে দেবে। এখানকার না হোক কিন্তু যে বাড়িতে রত্নাদি আমাকে আসতে বলেছিল সে বাড়িটার ঠিকানা তো আমি গিয়ে পুলিশকে বলে দিতে পারি। তখন কি করবে ভেবে দেখেছ?” অরূপদা হাঁহাঁ করে হেঁসে উঠল। “ এখানকার ঠিকানা তোমরা কোনও দিন জানতে পারবে না। আর দ্বিতীয়ত যে বাড়িটার কথা বলছ, সেই বাড়িটার সাথে আমাদের কোনও যোগাযোগ নেই। কেমন ভাবে কি সুত্রে ওই বাড়িটাতে আমরা ব্যবস্থাটা করতে পেরেছিলাম এখন সেই সব প্রশ্ন অবান্তর। কিন্তু জেনে রাখো ওই বাড়িটা সরকারের প্রপার্টি। হয়ত আর কয়েক দিনের মধ্যে ওইটাকে ভেঙ্গে চুড়ে দিয়ে একটা কলেজ বানানো হবে। ওই বাড়িটা থাকা না থাকা সমান। আর তাছাড়া আমরা এরকম অনেক অস্থায়ী জায়গায় মিট করি। সেগুলর সাথে আমার বা আমাদের কোনও কমরেডের সরাসরি কোনও যোগাযোগ নেই। “ অরূপদা আরও কিছু বলতে যাচ্ছিল, ঠিক সেই সময় একজন মাঝ বয়সী মহিলা এসে ঘরে ঢুকল। অরূপদা আলাপ করিয়ে দিল “ এর নাম আরতি। আমাকে এখন একটু বেরোতে হবে। আরতি, তুমি বসো এখানে। ওদের যা যা প্রশ্ন আছে উত্তর দিয়ে দাও। আচ্ছা জানি মুশকিল, কিন্তু আলি কে বলে দাও আরও দুজন ডাক্তারের সন্ধান করতে। যতদিন না পায় তত দিন ওরা এখানেই থাকবে। কিন্তু তোমাদেরও একটা অনুরোধ করছি, প্লীজ যে কটা দিন এখানে আছ, এখানকার নিয়ম মেনে থাকার চেষ্টা কর, দেখ যদি তোমরা এখানকার বোনদের জন্য কিছু করতে পারো।“ অরূপদা বেড়িয়ে যেতেই অদিতি প্রথম প্রশ্ন টা করল আরতিকে “তোমার বয়স কত?” বলল “চল্লিশের একটু নিচেই।“ অদিতি বলল “একটু আগে শুনলাম ট্রেনিং দেওয়া হচ্ছে। কিসের ট্রেনিং?” আরতি অনেক টু দি পয়েন্ট উত্তর দেয়, তাই অনেক কথা ওর পেট থেকে বের করে নেওয়া গেল। অরূপদা আমাদের প্রশের উত্তর দেওয়ার থেকে বেশী আমাদের ব্রেন অয়াশ করার কথা ভেবে উত্তর দিচ্ছিল, সমাজ , দেশ, নিজেদের ভাই বোন ইত্যাদি। এই মানসিক অবস্থায় সে সব কথা আমাদের শক্ত মাথায় ঢোকা কঠিন।
প্রঃ মেয়েদের কিসের ট্রেনিং দেওয়া হয়?
উঃ সব কিছুর। ব্যায়াম, আসন করানো হয়। খালি হাতে কি করে লড়াই করতে হয় তার ট্রেনিং দেওয়া হয়, শুধু আত্মরক্ষা নয়, আক্রমণ করারও ট্রেনিং দেওয়া হয়। বন্দুক চালানোর অভ্যাস করানো হয়। এছাড়া রান্না বান্না , গান, নাচ এসবও আছে।
প্রঃ খাবার দাবার কে বানায়?
উঃ আমরাই হাতে হাতে বানিয়ে নি। খুব সাধারণ খাবার খাই আমরা।
প্রঃ আনাজপাতি নিয়ে আসে কে?
উঃ কেউ নিয়ে আসে না। আমাদের একদম স্পেসিফিক কাজ বা টাস্ক ছাড়া ক্যাম্পের বাইরে যাওয়া বারণ। আর এটা বাজার হাট থেকে অনেক দূরে। বাইরের অঞ্চলে কিছু লোক চেনা আছে। ওরাই আমাদের খবরও দিয়ে থাকে। আলি ওদের সাথে যোগাযোগ করে। ওরাই বিভিন্ন ভাবে যোগান দেয়। দুদিন থাকো আপনা আপনি বুঝতে পারবে। তবে বাইরের লোক কেউ ক্যাম্প অব্দি আসে না। খাবার দাবার নিয়ে এসে একটা পূর্ব নির্দিষ্ট স্থানে এসে রেখে ওরা চলে যায়। সেখান থেকে নিয়ে আসে আমাদের লোক।
প্রঃ এখানে যদি কোনও দিন পুলিশের বা আরক্ষণ বিভাগের লোক চলে আসে আত্মরক্ষা করার মতন যথেষ্ট অস্ত্র আছে?
উঃ এই মুহূর্তে নেই, তবে চলে আসবে কয়েক দিনে। তারপর অবশ্য যারা বেঁচে যাবে তাদের অন্য স্থানে সরে যেতে হবে।
প্রঃ এত যে অস্ত্র , খাবার দাবার, এর পয়সা আসে কোথা থেকে?
উঃ (এই উত্তরটা এলো একটু দেরী তে) এক কথায় বলতে পারো ডাকাতি করে।
আমি আর অদিতি এর ওর মুখ চাওয়া চাওয়ি করলাম।
উঃ বিভিন্ন ভাবে ডাকাতি করতে হয়। হয়ত আমাদের কাছে খবর এলো যে কাছেই বা কোনও গদিতে অনেক টাকা এসেছে। সবাই চলে যাওয়ার পর রাতের অন্ধকারে গদি লোটা হয়। (গলাটা একটু নামিয়ে নিয়ে তারপর বলল) যদি আমরা খবর পাই যে কোনও বড় ব্যবসায়ী কোনও হোটেলে এসে উঠেছে তাহলে সেখানে আমাদের একজন কি দুজন মেয়েকে সাজিয়ে গুছিয়ে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। সব সময় যে কাজ হয় তাতে তেমন নয়, কিন্তু অনেক বারই হয়েছে। ওরা গিয়ে ব্যবসায়ীদের সাথে আলাপ করে। অবশ্য তার আগে একটা খবর আমাদের নিতে হয় যে ওদের কাছে প্রচুর নগদ টাকা আছে কিনা। সেটা সিওর না হয়ে আমরা মেয়েদের পাঠাই না। তো হ্যাঁ, যা বলছিলাম, মেয়েরা বা কোনও মেয়ের ওপর যদি তেমন কোনও ব্যবসাদারের মন এসে যায়, তো নিশ্চিত তার ডাক পড়বে ওর ঘরে। এরপর আর কি, নিজেদের শরীরের মায়াজালে জড়িয়ে ফেলা। তেমন লোক হলে কিছুই করতে হয় না। সোজা কপালে বন্দুক বা গলায় ছুরি ঠেকিয়ে হাত পা বেঁধে তালা ভেঙ্গে লুট করে নেওয়া তার সর্বস্ব, (হেঁসে ফেলল আরতি) আর যদি তেমন ঘুঘু লোক হয় তো খেলাটা সম্পূর্ণ করতে হয়। মানে লোকটা যে কারণে ওকে ঘরে ডেকেছে সেই কাজটা প্রথমে সম্পন্ন করা। তারপর লোকটার দুর্বল মুহূর্তে বা ঘুমন্ত অবস্থায় তার হাত পা বেঁধে তাঁকে লুট করা। আরেকটা কথা বলি।
প্রঃ কি?
উঃ বাইরের এলাকায়, এমনকি কলকাতাতেও মেয়েদের কিছু দালালের সাথে আমাদের চেনা শুনা আছে। ওদের কাছে অনেক মেয়েদের ডিমান্ড আসে। যদি তেমন কোনও বড়লোকের কাছ থেকে ডিমান্ড আসে তো আমাদের যোগাযোগ করে। আমরা একজন মেয়েকে পাঠিয়ে দি। কাজ শেষ না করে কিছু করতে পারলে তো কথাই নেই। তবে এসব ক্ষেত্রে অধিকাংশ ক্ষেত্রে যারা ডাকে তারা একা হয় না। হয়ত তাদের বন্ধু থাকে, বা সিকিউরিটি থাকে। তাই এদের সাথে খেলা শেষ করে সুযোগ বুঝে বাইরে সংকেত দেওয়া হয়। কোথায় টাকা রাখতে পারে ইত্যাদি বুঝে নিতে হয়। তখন বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা আমাদের লোক আচমকা আক্রমণ করে। বাড়ির মালিক যদি নেশা গ্রস্ত না হয়, বা যদি খুব সজাগ থাকে তো বিপদ হতে পারে, তাই চেষ্টা করা হয় শরীরের মিলন শেষ হওয়ার আগেই তার শরীর আর মনকে বশ করে ফেলা, মানে শরীরের খেলায় মাতিয়ে রেখে আর কি। তবে একাধিক লোক থাকলে ব্যাপারটা একটু জটিল হয়ে যায়। সুজাতার যেমন...
প্রঃ হ্যাঁ আমিও সেটাই জানতে চাইছিলাম, সুজাতার কি হয়েছে।
উঃ ওর কপাল খারাপ। নইলে এরকম হত না। একজনের বাগান বাংলো তে ওর যাওয়ার কথা ছিল। সুলেমান বলে একজন দালাল খবর এনেছিল। আগেও অনেকবার খবর দিয়েছে। দু দুটো গাড়ির শো রুম আছে কোলকাতায়। এখানেও একটা বাগান বাড়িও আছে। এখানে নাকি বেশ কিছু কালো ধান্দা করছে। হাট্টা খাট্টা লোক। আর দামী গাড়িতে লাখ লাখ টাকা নিয়ে ঘোরে। আমরা সুজাতাকে পাঠিয়েছিলাম ওর কাছে। এখানে বাগান বাড়িতে একা থাকবে বলে মেয়ের খোঁজ করছিল। খবর ছিল লোকটা নাকি একাই ঘোরে, আর কাউকে বিশ্বাস করে না। দুদিনের জন্য মোটা টাকা দিতেও রাজি হয়েছিল। প্রথম দিন ওর সাথে কাটানোর পর সুজাতা বুঝে গিয়েছিল যে কোথায় আছে ওর টাকার সুটকেস। দ্বিতীয় দিন যখন লোকটা ঘুমাচ্ছিল, সুজাতা টাকার সুটকেস তুলে বেড়িয়ে এলো। কিন্তু বরাত খারাপ ও জানত না যে ওর কয়েকজন লোক বাইরে অপেক্ষা করছিল। সুজাতা আগের দিন যখন লোকটার কাছে গিয়েছিল, তখনও ওরা ছিল, কিন্তু এমন সাধারণ ভাবে ঘুরছিল যে সন্দেহ হয় নি। সুজাতাকে দেখে ওরা বুঝতে পারে যে কিছু একটা হয়েছে। ব্যস গুলি চালায়, সুজাতাও গুলি চালায়। ওদের একজন আহত হয়েছে, কিন্তু সুজাতা বেচারিও গুলি খায়। তারপর পড়ি কি মরি করে কিছুদুরে যেখানে আমাদের গাড়ি ছিল সেখানে এসে পৌঁছায়, বাকিটা তো দেখতেই পেলে।
প্রঃ টাকাগুলো?
উঃ সুজাতা সাহসী মেয়ে। এত কষ্ট করে যে টাকায় ওর হাত পড়েছে সে টাকা হাত ছাড়া করার মেয়ে ও নয়।
প্রঃ এই অরূপদাকে তোমরা কতদিন ধরে চেন?
উঃ আমি এখানে এসেছি তা প্রায় বছর তিন হয়ে গেছে। অবশ্য আগে আমাদের ঘাঁটি অন্য জায়গায় ছিল। জানা জানি হয়ে যাওয়ায় আমরা দু বছর হল এখানে মুভ করেছি। জায়গাটা খুজে পাওয়া বেশ মুশকিল।
প্রঃ অরূপদার বয়স কত?
উঃ তেতাল্লিশ। ও হ্যাঁ ওর স্ত্রীও আছে এখানে। বিনীতা দিকে তোমরা দেখনি। আমরা সবাই বয়স বেশী কম যাই হোক না কেন অরূপদা আর বিনীতাদি ডাকি। ও ফিল্ডে আছে। আটত্রিশ বছর বয়স। এই জায়গা দাঁড় করাতে ওর প্রতিদান কম নয়।
প্রঃ ফিল্ড মানে বাইরে কাজে গেছে?
উঃ হ্যাঁ। আগের মাসে একটা মেয়েকে অ্যাসিড দিয়ে পোড়ান হয়েছিল। মেয়েটি বাঁচে নি। ওর এক আত্মীয় এখানে আছে আমাদের মধ্যে। মেয়েটার বর বড়লোকের একমাত্র ছেলে। টাকা দিয়ে পুরো ব্যাপারটা চেপে দেওয়া হয়েছে।
প্রঃ তার মানে আজ ওকে লুণ্ঠন করা হবে?
উঃ না সে কাজ কাল হয়ে গেছে। আজ ভোরের মধ্যেই এখানে ফিরে আসার কথা ছিল। কিন্তু কিছু একটা কারণে দেরী হয়েছে। তবে শুনেছি কাজ হয়ে গেছে। বিনীতাদি অক্ষত। (একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল) অক্ষত ঠিক বলা যায় না। অচেনা অজানা কারুর সাথে নিজের অনিচ্ছা সত্ত্বেও শোয়ার পর শরীর অক্ষত থাকে না। তবে হ্যাঁ যা খবর এসেছে লাখ চারেক টাকা নগদ লুট করা গেছে। আমাদের ওখানকার এজেন্টের কাছে কিছু টাকা জমা দেওয়া হয়েছে। আনাজপাতির টাকা মেটাতে হবে। আজ সন্ধ্যার আগে পৌঁছে যাওয়া উচিৎ। আলাপ হলে দেখবে ভীষণ খোলা মনের মানুষ, খুব স্বাধীনচেতা।
প্রঃ আচ্ছা একটা জিনিস লক্ষ্য করলাম যে এখানে যারা আছে তাদের প্রায় সবাই একবার অন্তত প্রেগন্যান্ট হয়েছে। কি করে এটা সম্ভব হল?
উঃ ওই যে বললাম অবাধে যৌন মিলন করলে...
কথায় খেদ পড়ল। আলি একটা ছেলেকে নিয়ে এসে ঘরে ঢুকেছে। আমাদের দেখে ও কথা বলতে ইতস্তত করছে দেখে আমরা উঠে পড়তে যাচ্ছিলাম, কিন্তু আরতি আমাদের বসতে বলল। ইশারায় আলি দাকে বুঝিয়ে দিল যে আমাদের সামনে ওরা কথা বার্তা বলতে পারে।
আমাদের চোখের সামনে থেকে সুজাতা, রমা আর মিনতি হারিয়ে যাওয়ার পর আমরা অরূপের দিকে তাকালাম। ও আমাদের মুখের দিকেই তাকিয়ে রয়েছে। “বন্ধুরা, এরা জিজ্ঞেস করছে আমরা উগ্রপন্থী কি না? এর কি উত্তর দেব তোমরা বুঝিয়ে দেবে এদের দুজন কে? এদের কেন ধরে আনা হয়েছে সেই উত্তর আমি এর পরে দেব। আর ডাক্তার তোমার পরীক্ষার ব্যাপারে এর একটা থিওরি আছে। তুমি নাকি ওকে রেপ করেছ!!” ওর গলায় একটা বিদ্রুপের সুর। “ডাক্তার তুমি শেষে বলবে। আগে বাকিরা এদের বাকি উত্তর দিক। তবে তার আগে আমি কিছুটা বলব। আর তাড়াতাড়ি বলব।“ দেখলাম ওর কথায় আতলেমি আর নেই। সাবলীল কথা বলছে। তার মানে এর আগে যে ভাবে কথা বলছিল সেটা পুরোটাই মন বশ করার নাটক। আমার ওই কটাক্ষগুলো মাথায় ঢুকেছে মালটার। খুব উঁচু গলায় ভাষণ দেওয়ার মতন করে শুরু করল ওর ভাষণ। “আমি এদের দোষ দি না। তোদের আমি নিজের দলের লোক মনে করেই নিয়ে এসেছি এখানে। তবে হ্যাঁ...” ওর বাকি কথাটা শেষ না করতে দিয়েই অদিতি চেঁচিয়ে উঠল “ লুক হিয়ার মিস্টার। আমার সাথে তুই তুকারি করবেন না। আমি আপনাকে আপনিই বলব। আর আশা করব অ্যাট লিস্ট তুমি সম্বোধনটা পাব।“ উত্তর এলো “বেশ। তোমাদের আমি নিজের দলের লোক মনে করে নিয়েছি। বেশ, এইবার খুশি তো?” এইবার সবার দিকে তাকিয়ে বললেন “অনেকের বোধহয় অনেকগুলো জিনিস জানা নেই। আমি সবার সামনে দাঁড়িয়ে খোলা খুলি দাঁড়িয়ে এই প্রশ্নের উত্তরগুলো দেব। আর এখনই দেব। “ একটা মেয়ে এসে ওর হাতে একটা জলের গ্লাস দিয়ে চলে গেল। ও শুরু করল। “হ্যাঁ আমরা উগ্রপন্থী। আমরা মানুষ খুন করেছি। কিন্তু কেন করতে বাধ্য হয়েছি সেটা আমি বলব না। যারা এখানে দাঁড়িয়ে আছে তারাই বলবে। আমাদের নতুন বন্ধুরা আমাকে অভিযোগ করেছে যে আমি নকশাল। সেটা হলেও ক্ষতি ছিল না। কিন্তু না। আমরা তো নকশাল নই। তবে আমরা দেশদ্রোহী নই। এখানে কেউ দেশদ্রোহী নই আমরা। কিন্তু দেশ আমাদের ওদের শ্ত্রু মনে করে। আর পাঁচটা উগ্রপন্থী সংস্থার মতন মনে করে। কিন্তু আমরা তা নই।“ দুচুমুক জল খেলেন। একটু নিঃশ্বাস নিলেন। এরকম রগরগে ভাষণের কেউ এরকম বিরাম দিলেই কেন জানি না আমার মনে হয় এবার শুরু হল আতলেমি। আর হলও তাই। তবে কেউ কেউ যদিও জল খাওয়ার পর নতুন উদ্যমে চেঁচাতে শুরু করেন আর এক দমে। তবে আঁতেলগুলো এমন করে না। এই মালটা যে আঁতেল তাতে সন্দেহ নেই। ও শুরু করল “আমি মুক্ত সমাজে বিশ্বাস করি। আমার মতন অনেকেই এখানে আছে যারা মুক্ত সমাজ, মুক্ত মেলামেশায় বিশ্বাসী। কিন্তু এতে দোষ কোথায়। কিন্তু এই দল গোড়ে ওঠেনি মুক্ত সমাজ তৈরি করার জন্য। আমাদের আরও একটা দৃষ্টিভঙ্গি আছে। মানে আরেকটা লক্ষ্য আছে। সেটা হল মেয়েদের মুক্তি। সেটার ব্যাপারে বলার আগে আমি কয়েকজনকে সবার সামনে ডাকতে চাই। নতুনরাও শুনুক। পুরাতনরাও একবার স্মৃতিগুলোকে তাজা করে নিক। আমার অনেক কথা বলার আছে। কিন্তু আগে এরা বলবে আর তারপর আমি বলব। কিন্তু এখনই বলব। ট্রেনিং আজ একটু পরে শুরু করলেও চলবে। আজ আমাদের সুখের দিন। আমার বোন, তোমাদের সবার দিদি সুজাতা ফিরে এসেছে। গুলি খেয়েও ঈশ্বর চাইলে এই দুই নতুন কমরেডের আশীর্বাদে ও বেঁচে যাবে। সবাই পূজা, ঈদ, খ্রিস্টমাসের ছুটিতে মেতে থাকে। আমরা কি একজন কমরেডের নতুন জীবন লাভের খুশিতে মেতে উঠতে পারি না? কিন্তু না। আজ আমাদের ছুটি নয়। নতুন উদ্যোগে কাজ শুরু করার দিন। এটাই ওর প্রতি আমার আর তোদের বেস্ট গিফট হবে। কিন্তু এখন আমাদের একটু আলোচনা করা দরকার। তবে হ্যাঁ সবাই এখানে বাঙালি নয় যাদের আহ্বান করব। কারোর বোঝার অসুবিধা হলে তখনই হাত তুলে জিজ্ঞেস করবি। আমি বুঝিয়ে দেব। “ একটু বিরতি নিয়ে বললেন “ প্রথমে ডাকব মায়াকে।“ আরে এ তো আমার চেনা মায়া নয়। এ কে? অবশ্য তারপরেই মনে হল মায়া নামটা তো খুব বিরল নয়। মায়া এলো।
মাইক নেই তবু ভাব খানা এমন যেন অতিথির জন্য উনি মাইক ছেড়ে দিয়েছেন। অরূপ একটু সরে দাঁড়িয়েছে। মায়ার একটু বিবরন দিয়েই দি। ইনিও হাঁটু অব্দি শাড়ি পরে আছেন। বয়স চল্লিশের কাছাকাছি। শাড়ি নাভির অনেক নিচে পরা। কোমরের কাছে শাড়ির ফাঁক থেকে যেন যৌনাঙ্গ বা তার পাশে থেকে বেড়িয়ে আসা চুলের ছিটে ফোঁটা দেখা যাচ্ছে। গায়ের রঙ চাপা। আমাদের সামনে এসে আমার আর অদিতির ঠিক মাঝখানে দাঁড়িয়ে হাত তুলে নিজের চুল খোঁপায় বেঁধে নিলেন। ভীষণ নোংরা একটা গন্ধ নাকে এল ওনার শরীরের থেকে। আর বগলে একগুচ্ছ চুল। পাতলা শাড়ির ভেতর থেকে ওনার পাছার অবয়ব স্পষ্ট। আর যোনী কেশের কিছুটাও যেন বাইরে থেকে বোঝা যাচ্ছে, মানে আভাষ আর কি। ওনার কোনও লজ্জা নেই। আর বাকি দের দেখেও মনে হল না যে এরকম নোংরা ভাবে দাঁড়িয়ে থাকা দেখে কারোর মধ্যে কোনও পরিবর্তন আছে। হাত আর পা ভর্তি লোম। আসলে এরা সবাই এমন। এদের ছোট করছি না। কিন্তু এটাই স্বাভাবিক এদের কাছে। ওনার স্তন একটা পাতলা কাপড়ের আবরণের ভেতর থেকে ফুটে আছে। বেশ বড় নয়। কিন্তু বেশ গোল ভাবে উঁচিয়ে আছে বাইরের দিকে। বয়সের ভারে নেমে যায় নি। পাছাটাও বেশ ফোলা ফোলা। আর হাঁটা চলা বেশ দুলিয়ে দুলিয়ে। আর কোমরের কাছে শাড়ির গোঁজের জায়গাটা দেখে বুঝলাম এনার কোমরেও স্ট্রেচ মার্ক রয়েছে। কি মনে হওয়ায় এই স্বল্প বসনা সব কটা মেয়ের তলপেটের ওপরে চোখ বুলিয়ে নিলাম, মানে যতটা দেখতে পাই। প্রায় সবার পেটে চামড়ার ওপর ভাঁজ আর দাগ। সবাই বাচ্চা ধরেছে পেটে? তাহলে সেই বাচ্চাগুলোই বা কই? এই মায়া শুরু করল নিজের ভাষণ। “ বন্ধুরা। আমি ছেলেদের নিজের শ্ত্রু মনে করি না। কিন্তু একটা ছেলেই যে আমার শ্ত্রু হয়ে উঠেছিল তাতে সন্দেহ নেই। আমি একা হয়ে পড়েছিলাম এই সমাজে।“ অরূপ ওকে থামিয়ে দিয়ে বলে উঠল, আর বেশ উচ্চ স্বরেই বলে উঠলো যাতে সবাই শুনতে পারে, “ সব কথা খুলে বলো মায়া। আর এখানে এসে তোমার সাথে কি কি হয়েছে সব কিছু খুলে বলবে। কিছু ঢাকবে না। শুরু করো। “ নিজের গ্লাসটা ওর দিকে এগিয়ে দিল। ও ঘোঁত ঘোঁত করে সব জল গলায় ঢেলে দিল। আবার শুরু করল। “ আমার বয়স একচল্লিশ। আমার বিয়ে হয়েছিল সাতাশ বছর বয়সে। দেখা শুনা করে বিয়ে। আমি এম এ করার পর আমি কোলকাতায় ভালো চাকরি করতাম। কিন্তু বাবার আদেশে বিয়ে করে চলে গেলাম কলকাতা বাইরে। আমার বর ছিল পার্টির গুন্ডা। লোকাল থানায় গিয়ে সপ্তাহে এক দিন করে ওকে হাজিরা দিতে হত। আগে একটা কি কাজ করত, কিন্তু ইউনিয়নের গণ্ডগোলে জড়িয়ে পড়ায় আর থানা পুলিশের হ্যাপা শুরু হওয়ার পর সেই চাকরিটাও গেল। এরপর থেকে সংসারে টাকার আমদানি শূন্য। সংসারের হাল ধরার জন্য আমি আবার চাকরি শুরু করলাম। কিন্তু। আমার প্রমোশন হবার পর থেকে বিষিয়ে গেল ওর মন। কোনও মেয়ের যে ভালো কাজের জন্য প্রমোশন হতে পারে সেটা ওর ধারণার বাইরে। ওর বিশ্বাস আমি অফিসের পর আমার বসের সাথে শুই আর তাই এই প্রমোশন। আমি একজন দুশ্চরিত্রা মেয়ে। সবাইকে আমি সত্যি কথা বলছি যে আমি কোনও দিন বর ছাড়া কারোর সাথে শুইনি সেদিন অব্দি। কিন্তু আমাকে (নিজের নরম বুকের ওপর হাত চেপে ধরে বলল) বাড়ি ফেরার পর অনেক কথা শুনতে হত আর রোজ শুনতে হত। (ওনার গলার স্বর শুনে বুঝতে পারছিলাম যে উনি কতটা অসহায় হয়ে নিজের ভেতরের কথাগুলো উগড়ে দিচ্ছেন।) কোনও দিন অফিস থেকে ফিরতে দেরী হলেই শুনতে হত ওর বাজে কথা। মদ্যপ অবস্থায় বাড়ি ফিরে কি যে বলত কেউ জানে না। একদিনকার ঘটনা। কোম্পানি থেকে সেদিন সবাইকে বোনাস দেওয়া হয়েছিল। মন ছিল বেশ খুশি খুশি। খুশি খুশি ভাবটা এসে গিয়েছিল বলেই কি না জানি না, কিন্তু সেদিন বাড়ি ফেরার পথে ভাবলাম বরের জন্য কিছু নিয়ে যাই। পছন্দ করে ওর জন্য একটা শার্টের পিস কিনেছিলাম সেদিন। কিন্তু হিতে বিপরীত হল। শার্টের কাপড়টা দেখে খুশি হওয়ার বদলে জ্বলে উঠল ও। কোথা থেকে এত টাকা আসছে, কার কার সাথে শুয়ে বেড়াচ্ছি, এই সব বলতে বলতে তেলে বেগুনে জ্বলে উঠলো কয়েক মিনিটে। তারপর শুরু হল বেধড়ক মার। এর আগে ও আমাকে অনেকবার অকথ্য গালি গালাজ করেছে, কিন্তু কোনও দিন গায়ে হাত দেয় নি। কিন্তু সেদিন দেখলাম ওর ভয়ানক রূপ। চোখের তলায় কালশিটে পড়ে গিয়েছিল। (বা হাতটা তুলে কনুইয়ের কাছটা ধরে সবাইকে দেখিয়ে বলল) এই হাতটা ভেঙ্গে দিয়েছিল মেরে। রাত্রে বেলায় বের করে দিয়েছিল বাড়ি থেকে। আমার শাশুড়ি অনেক বারণ করেছিল, কিন্তু আমার বরকে আটকাতে পারে নি। রাত্রে গিয়ে আশ্রয় নিলাম এক কলিগের বাড়িতে। ও একটা মেসে থাকত। আরও কয়েকটা মেয়ে ছিল। ওরাই আমাকে হাঁসপাতালে নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা করিয়েছিল। তিন দিন জ্বরের ঘোরে ছিলাম। ডাক্তার বলেছিল জ্বরটা এসেছে মানসিক শকের জন্য। সুস্থ হওয়ার পর ওদেরই একজন বলেছিল যে এইসব গৃহবধূ নির্যাতনের ব্যাপারে থানায় ডাইরি করতে হয়। থানায় গেলাম ডাইরি করতে। কমপ্লেন লেখা হল। কিন্তু পড়ায় এক মাস হয়ে গেল কোনও কাজ হল না। আবার গেলাম থানায়। ওখানকার ও সি বলল সামনে ইলেকশন আসছে, ওপর তলা থেকে বলা আছে ওকে ছোঁয়া যাবে না এই কটা দিন। ও এখন পার্টির জন্য দৌড়া দৌড়ী করছে। একজন আমাকে বুদ্ধি দিল এখানে একটা এন জি ও আছে ওরা নাকি এইসব কেসে হেল্প করে থাকে। গেলাম ওদের কাছে। সব কথা শোনার পর আমাকে আশ্বস্ত করল। কিন্তু কোনও কাজ হল না। আরেকটা স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার দ্বারস্থ হলাম। সেখানেও কোনও কাজ হল না। বন্ধুরা এরা শুধু জানে ভাষণ দিতে আর মিছিল করতে। যদি সত্যি কেউ বিপদে পড়ে আসে তাদের জন্য এরা কিছু করে না। অসহায়ের মতন আমি এক দরজা থেকে অন্য দরজায় ঘুরে চলেছি। এমন সময় একদিনকার ঘটনা। আমি সেদিনও একজনের সাথে দেখা করতে গিয়েছিলাম। সে ওই এলাকার একজন লিডার। তার জন্য দেখা করার জন্য যখন বসে আছি, তখন আমার সাথে আলাপ হল সীমাদির। এখানকার অনেকেই হয়ত তাঁকে দেখে থাকবে। গত বছর উনি মারা গেছেন। সীমাদি আমার মুখে সব কথা শুনে আমাকে বলল এখানে বলে কিছু লাভ হবে না। থানা পুলিশ এন জি ও সব কিছু এখন ইলেকশনের ব্যালট বক্সের ভেতর বন্দী। যদি মনে সাহস থাকে আর নিজের ভাগ্য নিজের হাতে তুলে নেওয়ার অদম্য ইচ্ছা থাকে তাহলে এসো আমার সাথে। আমাকে নিয়ে এলো এখানে। “
এরপর ও যা বলল আর যত সহজে বলল তাতে শুধু আমার নয় অদিতির ও রক্ত হিম হয়ে গেল। মায়া বলে উঠল “দু মাস পর যখন আমার ব্যাপারটা প্রায় ঠাণ্ডা হয়ে গেছে তখন ফিরে গেলাম বাড়ি। আমাকে দেখে আমার বর খুশি হয় নি ঠিকই কিন্তু থানায় কমপ্লেন তুলে নেওয়ার শর্তে আমাকে বাড়িতে থাকার অনুমতি দিল। ওর ধারণা ছিল আমার এখনও মাথা গোঁজার ঠায় হয় নি। রাত্রে খাওয়ার পর মেয়েলি ছল কলা দেখিয়ে ওর সাথে ঘন হয়ে এলাম। এসবই ছিল পূর্ব পরিকল্পিত। ওর রক্তে তখন কামনার আগুন। খুবলে খুবলে নিল আমাকে, নিতে দিলাম আমি। আমাকে ভোগ করে ক্লান্ত শরীর নিয়ে পাশ ফিরে ঘুমিয়ে পড়ল। উঠে পড়লাম আমি। ব্যাগ থেকে বের করে নিলাম আগ্নেয়াস্ত্র। আমার মাথায় তখন প্রতিশোধের আগুণ। ঘুম থেকে তুললাম ওকে। ওর নাকের ডগায় তখন বন্দুক হাতে আমি দাঁড়িয়ে আছি। আমার এই হিংস্র রূপ ও আগে কোনও দিন দেখে নি। ক্ষমা চাইল, প্রান ভিক্ষা চাইল, কিন্তু না দিলাম না ভিক্ষা। মাথায় লাগিয়ে টিপে দিলাম ট্রিগার। শাশুড়ি উঠে পড়েছিলেন গুলির শব্দে। কিন্তু উনি কিছু বুঝে ওঠার আগেই আমি বেড়িয়ে গেলাম বাড়ি থেকে বাইরে গাড়ি দাঁড়িয়ে ছিল। (একটু থেমে বলল) তখন থেকে আমি ফেরার আসামি। অবশ্য এর পরেও আমি আরও দুটো খুন করেছি। “ ওর চোখের কোণায় জল। সবাই নিরব। ও আর কিছু বলল না, চলে গেল। অরূপ আমার দিকে তাকিয়ে বলল “মিনতি কে তো তুমি দেখেছ?” সুজাতাকে শুইয়ে দিয়ে মিনতি তখন এসে দাঁড়িয়েছে ভিড়ের মধ্যে। “মিনতি এখানে এসো। তোমার গল্প বলো ওকে।“ মিনতি আমাদের দিকে এগিয়ে এসে আমার আর অদিতির হাত ধরে আমাদের ধন্যবাদ জানাল সুজাতাকে বাঁচানোর জন্য। ওর গলায় আন্তরিকতার সুর স্পষ্ট। ও যখন কথা শুরু করল আমাদের আশ্চর্য হবার পালা। ঝরঝরে ইংরেজিতে গড়গড় করে বলে গেল ওর অভিজ্ঞ্রতার কথা।
ওর বক্তব্য খানিকটা এই রকম। “ আমি প্রেসিডেন্সির ছাত্রী। পাশ করে চাকরি করতে গিয়েছিলাম দিল্লীতে। আলাপ হল এক ছেলের সাথে। ওরই সিনিয়র কলিগ। প্রেম হল। বিয়ের প্রস্তাব ওঠানোর পর জানতে পারলাম ছেলেটা বিবাহিত, একটা নাকি বাচ্চাও আছে। অথচ আমাদের সম্পর্ক যখন শুরু হয়েছিল, তখন ছেলেটা একবারও বলে নি যে ও বিবাহিত। আমার পেটে তখন ছেলেটার বাচ্চা এসে গেছে। জানাজানি হলে সর্বনাশ হয়ে যাবে ভেবে গোপনে গর্ভপাত করতে বাধ্য হলাম। ছেলেটার সাথে কাটাকাটি হয়ে গেল সেটা বলাই বাহুল্য। কিন্তু কিছুদিন পর থেকে ছেলেটা আবার আমার পেছনে ঘুর ঘুর করতে শুরু করে দিয়েছে। আমি না বলার পর থেকে শুরু হল ব্ল্যাকমেইল, আর শুধু ব্ল্যাকমেইল নয় সিনিয়র হওয়ার সুযোগ নিয়ে যখন তখন শরীরে হাত দেওয়া, পিছনে লেগে থাকা এই সব। রাত বিরেতে কাজের ভান করে ফোন করে ডিস্টার্ব করা। আর তার সাথে ছিল আমার গর্ভবতি হওয়ার খবর অফিসের বাকিদের জানিয়ে দেওয়ার ব্ল্যাক মেইল। কাজ কর্ম সব মাথায় উঠল। আমার নামে ভুরি ভুরি মিথ্যে কথা বলা শুরু করল অফিসের ম্যানেজারের কাছে। ছেলেটা ছিল ম্যানেজারের পেয়ারের লোক। তাই ওখানে গিয়ে নালিশ করে কোনও লাভ হবে না। চাকরি বাঁচানোর তাগিদে আবার ছেলেটার কাছে নিজেকে সপে দিতে বাধ্য হলাম। ছেলেটা আমার কাছে যেটা চায় সেটাকে ঠিক প্রেম বলা যায় না। সপ্তাহে একদিন বা দুদিন, মানে যেদিন ছেলেটার মুড আসবে সেদিন অফিসের পর আমার সাথে আমার ভাড়া করা বাড়িতে আসবে। নিংড়ে নেবে আমার শরীরের রস। চলে যাবে নিজের খিদে মিটিয়ে। এরপর এলো এক মহা বিপদ। একদিন ছেলেটা ওর এক বন্ধুকে নিয়ে এলো আমার কাছে। ছেলেটা আমাদের অফিসেই কাজ করে। আমি ওকে অনেক মানা করলাম, কিন্তু ও শুনল না। শুতে হল দুজনের সাথে। এক বিছানায় ভোগ করল আমাকে দুজন মিলে। পরের দিন অফিসে গিয়ে কিছু ছেলের মধ্যে ফিস ফিস শুনতে পাচ্ছিলাম। আমি কাছে গেলেই কথা থামিয়ে দিচ্ছে। বুঝতে বাকি রইল না ব্যাপারটা জানাজানি হয়ে গেছে। বেশীক্ষণ অপেক্ষা করতে হল না। ম্যানেজারের কেবিনে আমার ডাক পড়ল। আমি নাকি প্রমোশনের লোভে অফিসের কর্মচারীদের শারীরিক ভাবে প্রলুব্ধ করি, সিদিউস করি আর তাদের শয্যাসঙ্গিনী হয়ে কাজ হাসিল করি। অফিসের তাতে ক্ষতি হচ্ছে। আমি যে গর্ভবতী হয়েছিলাম সেই খবরও ওর অজানা নয়। কাজ না করে আমি যে এই শস্তা পথ বেছে নিয়েছি তার জন্য অফিস আমাকে ক্ষমা করতে পারবে না। আমার কাজ নিয়ে ম্যানেজমেন্ট একেবারে খুশি নয়। পাতা কাটা হল আমার। বাড়ি থেকে অনেক যুদ্ধ করে আমি কলকাতার বাইরে চাকরি করতে এসেছিলাম। এখন আর বাড়িতে ফিরে যাওয়ার রাস্তা নেই। আবার চাকরির খোঁজ শুরু করলাম। কিন্তু সময় ভালো না হলে যা হয়। পাচ্ছিলাম না চাকরি। এদিকে জমানো টাকা ফুরিয়ে আসছে। এমন সময় ছেলেটা একদিন আমার সাথে দেখা করতে এলো। আমাকে বলল যে আমি যদি ওর সাথে শুই তাহলে ও আমাকে হাত খরচের টাকা দিতে পারে, অন্তত যতক্ষণ আমি নতুন চাকরি পাচ্ছি। রাস্তার বেশ্যাদের মুল্যও আমার হাত খরচের থেকে অনেক বেশী। কেন আমি শোব ওর সাথে, কেন এত শস্তায় বিক্রি করে দেব নিজেকে। মনে আছে কলেজে পড়ার সময় একটি মেয়ের রেপের প্রতিবাদে আমি রাস্তায় মিছিলে নেমেছিলাম। তখন আমাদের স্লোগান ছিল মেয়েদের শরীর তাদের নিজস্ব জিনিস, সেটা সে কাকে দেবে সেটা তার নিজের অধিকার, সে রাস্তার বেশ্যাই হোক না কেন, জোর করে কেউ কোনও মেয়ের শরীর ভোগ করতে পারে না। কিন্তু আজ আমাকেই শুধু সমাজে টিকে থাকার তাগিদে নিজের ইচ্ছের বিরুদ্ধে একটা ছেলের সাথে শুতে হবে। আর মানসিক ভাবে ওর শরীরটাকে আমি মেনে নিতে পাচ্ছিলাম। আমার সব সর্বনাশ তো ওই করেছে। এক মাস ঘুরে গেল ছেলেটার আর কোনও ফোন এল না। দেখাও করতে এলো না। এদিকে আমার তখন টানাটানির শেষ পর্যায়ে এসে ঠেকেছে। বেশ কয়েক জায়গায় ধার দেনা ও হয়ে গেছে। সামনের মাসে বাড়ি ভাড়া দেব কি ভাবে সেটাও ঠিক বুঝতে পারছি না এখন। অবশেষে সংকোচ কাটিয়ে ফোন করলাম ছেলেটাকে। এক রাতে এসে সারা রাত আমার সাথে ফুর্তি করে সকাল বেলায় কয়েক হাজার টাকা আমার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বিদায় নিল। যাওয়ার আগে অবশ্য বলে গেল যে বেশ কয়েকদিনের জন্য ও শহরের বাইরে যাচ্ছে, এসে মেসেজ করবে। বাড়ি ভাড়ার টাকা তবুও উঠলো না। এতবড় বিপদে পড়ে যাব কোনও দিন ভাবতে পারিনি। যেদিন প্রেম করেছিলাম সেদিন কি সত্যি ভেবে ছিলাম যে এত বড় বিপদ ডেকে আনছি নিজের জন্য। ছেলেটা যে এরকম সে তো স্বপ্নেই ভাবতে পারিনি। বাড়ি ভাড়া নিতে এলেন কাকু। বয়স প্রায় পঞ্চাশের কোটায়। ওনার কাছ থেকে কয়েকদিন সময় চেয়ে নিলাম। কিন্তু না কিছুই জোগাড় হল না। বুঝতে পারলাম বাড়ি ছেড়ে দিতে হবে। এই দিকে এই শহরে মাথা গোঁজার আর কোনও জায়গা জানা নেই। একবার ভাবলাম আমার এক্স প্রেমিক যে আরেকটা ছেলেকে নিয়ে এসেছিল তাঁকে ফোন করে দেখলে কেমন হয়। কিন্তু না। আর নিচে নামতে মন চাইছে না। বাড়িওয়ালা কাকু এসে আমাকে বলে গেল যে এরপর যদি বাড়ি ভাড়া না দি তো পুলিশে দিয়ে দেবে। কি করব ভেবে কূল পাচ্ছি না। ওকে অনেক করে বোঝানোর চেষ্টা করলাম যে চাকরি পেলেই সবার আগে ওর ভাড়া আমি মিটিয়ে দেব। উনি তখনকার মতন চলে গেলেন বটে, কিন্তু কিছুক্ষণ পরে মোবাইলে ঢুকল তার এস এম এস। খুব নোংরা ইঙ্গিত আছে তাতে।ভাড়ার বদলে শরীর। ছিঃ, এত পড়াশুনা করলাম, কিন্তু এখন এই পুরুষশাসিত সমাজে আমার মূল্য হল আমার শরীরের কয়েকটা ফুটো আর শরীরের ওপর গজিয়ে থাকা কিছু মাংসপিণ্ড? কি করব বুঝতে না পেরে সেই রাত্রেই ছোট একটা ব্যাগ নিয়ে বাড়ি ছাড়লাম। ষ্টেশনে গিয়েছিলাম ট্রেনের নিচে মাথা দেব বলে। কিন্তু না আলি দা সেই সময় আমাকে বাঁচিয়ে ফেরত নিয়ে আসে। ওকে সব কথা বলেছি। ও আমাকে আমাদের ওখানকার ক্যাম্পে নিয়ে গেল। সেখান থেকে এখানে পাঠিয়ে দেওয়া হল। এই ক্যাম্প আমাকে বাঁচিয়েছে। আমার শরীর, মন সব কিছু আমি সপে দিয়েছি এই সংগঠনকে। ওরা যেভাবে খুশি চায় আমাকে ব্যবহার করতে পারে, আর তাতে আমি ধন্য হব। “
আরও কয়েকজনের জবানবন্দী আমাদের দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে শুনতে হল। তারপর সভা ভেঙ্গে গেল। অদিতিরও যে আমার মতন বেশ কয়েকটা প্রশ্ন মনের মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে সেটা ওর চোখ মুখ দেখে স্পষ্ট বুঝতে পারছিলাম। আমরা আবার অরূপদার সাথে এসে তার ঘরে গিয়ে বসলাম। কথা ছিল অরূপদা ওই জমায়েতেই কিছু কথা বলবে, কিন্তু সেটা আর হল না কারণ ছয় সাত জনের জবানবন্দীতেই অনেকটা সময় পেড়িয়ে গিয়েছিল। ওদের ট্রেনিং শুরু হয়ে গেছে। আমাদের বসতে বলে অরূপদা বলল “আমি জানি তোমাদের দুজনের মনে অনেক প্রশ্ন ঘুরতে শুরু করেছে। আমি তোমাদের সাথে খুলে কথা বলব বলেই এখানে নিয়ে এসেছি।“ আমিই প্রথম মুখ খুললাম “ অর্থাৎ তোমরা সমাজে বঞ্চিত, নিগৃহীত, লুণ্ঠিত মেয়েদের সংঘবদ্ধ করার জন্য এইটা তৈরি করেছে?” অরূপদার জবাব কিন্তু এলো তৎক্ষণাৎ “ শুধু তাই নয়। জায়গায় জায়গায় এরকম অনেক মেয়েরা আজও নিপীড়িত হচ্ছে। মুখে আমরা যাই বলি না কেন এখনও অনেক জায়গায় মেয়েদের শুধু ভোগ্য বস্তু হিসাবে দেখা হয় আর তাদের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলা হয়। অফিস, বাড়ি রাস্তা ঘাট কোথায় নয়। সরকার আর প্রশাসন মুখে যাই বলুক না কেন এসব রুখতে তারা অসফল। হয় তাদের ইচ্ছে নেই, অথবা তাদের যে ইনফ্রাস্ট্রাকচার দরকার সেটা এখনও নেই। এই অবস্থায় একজন নাগরিক হিসাবে আমি আর আমার মতন অনেকে আইন নিজের হাতে তুলে নিতে বাধ্য হয়েছি। তোমরা শুধু ছয় কি সাত জনের জবানবন্দী শুনেছ। আরও অনেক জখন্য শোষণ আছে সমাজে। কে দাঁড়াবে সেই মেয়েদের পাশে? আমরা দাঁড়াব।” অদিতি বলল “সবই তো বুঝলাম, কিন্তু আমাদের দুজনকে এখানে তুলে আনার কারণ কি?” অরূপদা হেঁসে বলল “ আমাদের এখানে অনেক ঝুঁকি নেওয়া কাজ করতে হয়। প্রায়ই কেউ না কেউ আহত হয়। অনেকবার এরকম হয়েছে যে মেয়েরা বা ছেলেরাও বিনা চিকিৎসায় মারা গেছে। তাই অনেক দিন থেকে আমাদের ইচ্ছে ছিল যদি দু একজন ডাক্তার আমাদের দলে থাকে তাহলে হয়ত এতগুল প্রান যাবে না বিনা চিকিৎসায়। তোমাদের সাথে যোগাযোগ হয়েছে নিতান্ত ঘটনাচক্রে। কয়েকদিন আগে তোমাদের কোনও পরিচয় আমার জানা ছিল না। কিন্তু ...” অদিতি মাঝপথেই বলে উঠল “ ধরে নাও, আমাদের যদি না পেতে তখন কি করতে?” অরূপদা বলল “কি আর করতাম, খুঁজতে থাকতাম। যতদিন না আরেকজনকে পাচ্ছি।“ কিছুক্ষণ কি একটা ভেবে নিয়ে আমাদের বলল “তোমরা নিজেরাও মেয়ে। তোমরা হয়ত নিজেরা এরকম পরিস্থিতির কোনও দিন শিকার হওঁ নি, কিন্তু ভেবে দেখো, তোমাদেরও কি একটা দায়িত্ব থেকে যায় না এই মেয়েগুলোর প্রতি?” এই প্রশ্নের কোনও উত্তর হয় না। আমরা চুপ করে বসে আছি দেখে আমাদের বলল “ ঠিক আছে, যখন এসেই গেছ তখন কয়েকদিন আমাদের সাথে থাকো। কাউকে জোর করে আঁটকে রাখা বা জোড়ে করে কাউকে দিয়ে কিছু করানো আমাদের নীতিবিরুদ্ধ। আমরা বাইরে আরও দু-একজন ভালো মেয়েদের ডাক্তার খোঁজার চেষ্টা করছি, পেলেই তোমাদের মুক্তি। “ আমি হেঁসে বললাম “এটা কি সহজে বিশ্বাস করা যায়? এখানে নিয়ে এলে জোর করে আর এখন বলছ আমরা চলে যেতে চাইলে এমনি এমনি ছেড়ে দেবে। এখানকার না হোক কিন্তু যে বাড়িতে রত্নাদি আমাকে আসতে বলেছিল সে বাড়িটার ঠিকানা তো আমি গিয়ে পুলিশকে বলে দিতে পারি। তখন কি করবে ভেবে দেখেছ?” অরূপদা হাঁহাঁ করে হেঁসে উঠল। “ এখানকার ঠিকানা তোমরা কোনও দিন জানতে পারবে না। আর দ্বিতীয়ত যে বাড়িটার কথা বলছ, সেই বাড়িটার সাথে আমাদের কোনও যোগাযোগ নেই। কেমন ভাবে কি সুত্রে ওই বাড়িটাতে আমরা ব্যবস্থাটা করতে পেরেছিলাম এখন সেই সব প্রশ্ন অবান্তর। কিন্তু জেনে রাখো ওই বাড়িটা সরকারের প্রপার্টি। হয়ত আর কয়েক দিনের মধ্যে ওইটাকে ভেঙ্গে চুড়ে দিয়ে একটা কলেজ বানানো হবে। ওই বাড়িটা থাকা না থাকা সমান। আর তাছাড়া আমরা এরকম অনেক অস্থায়ী জায়গায় মিট করি। সেগুলর সাথে আমার বা আমাদের কোনও কমরেডের সরাসরি কোনও যোগাযোগ নেই। “ অরূপদা আরও কিছু বলতে যাচ্ছিল, ঠিক সেই সময় একজন মাঝ বয়সী মহিলা এসে ঘরে ঢুকল। অরূপদা আলাপ করিয়ে দিল “ এর নাম আরতি। আমাকে এখন একটু বেরোতে হবে। আরতি, তুমি বসো এখানে। ওদের যা যা প্রশ্ন আছে উত্তর দিয়ে দাও। আচ্ছা জানি মুশকিল, কিন্তু আলি কে বলে দাও আরও দুজন ডাক্তারের সন্ধান করতে। যতদিন না পায় তত দিন ওরা এখানেই থাকবে। কিন্তু তোমাদেরও একটা অনুরোধ করছি, প্লীজ যে কটা দিন এখানে আছ, এখানকার নিয়ম মেনে থাকার চেষ্টা কর, দেখ যদি তোমরা এখানকার বোনদের জন্য কিছু করতে পারো।“ অরূপদা বেড়িয়ে যেতেই অদিতি প্রথম প্রশ্ন টা করল আরতিকে “তোমার বয়স কত?” বলল “চল্লিশের একটু নিচেই।“ অদিতি বলল “একটু আগে শুনলাম ট্রেনিং দেওয়া হচ্ছে। কিসের ট্রেনিং?” আরতি অনেক টু দি পয়েন্ট উত্তর দেয়, তাই অনেক কথা ওর পেট থেকে বের করে নেওয়া গেল। অরূপদা আমাদের প্রশের উত্তর দেওয়ার থেকে বেশী আমাদের ব্রেন অয়াশ করার কথা ভেবে উত্তর দিচ্ছিল, সমাজ , দেশ, নিজেদের ভাই বোন ইত্যাদি। এই মানসিক অবস্থায় সে সব কথা আমাদের শক্ত মাথায় ঢোকা কঠিন।
প্রঃ মেয়েদের কিসের ট্রেনিং দেওয়া হয়?
উঃ সব কিছুর। ব্যায়াম, আসন করানো হয়। খালি হাতে কি করে লড়াই করতে হয় তার ট্রেনিং দেওয়া হয়, শুধু আত্মরক্ষা নয়, আক্রমণ করারও ট্রেনিং দেওয়া হয়। বন্দুক চালানোর অভ্যাস করানো হয়। এছাড়া রান্না বান্না , গান, নাচ এসবও আছে।
প্রঃ খাবার দাবার কে বানায়?
উঃ আমরাই হাতে হাতে বানিয়ে নি। খুব সাধারণ খাবার খাই আমরা।
প্রঃ আনাজপাতি নিয়ে আসে কে?
উঃ কেউ নিয়ে আসে না। আমাদের একদম স্পেসিফিক কাজ বা টাস্ক ছাড়া ক্যাম্পের বাইরে যাওয়া বারণ। আর এটা বাজার হাট থেকে অনেক দূরে। বাইরের অঞ্চলে কিছু লোক চেনা আছে। ওরাই আমাদের খবরও দিয়ে থাকে। আলি ওদের সাথে যোগাযোগ করে। ওরাই বিভিন্ন ভাবে যোগান দেয়। দুদিন থাকো আপনা আপনি বুঝতে পারবে। তবে বাইরের লোক কেউ ক্যাম্প অব্দি আসে না। খাবার দাবার নিয়ে এসে একটা পূর্ব নির্দিষ্ট স্থানে এসে রেখে ওরা চলে যায়। সেখান থেকে নিয়ে আসে আমাদের লোক।
প্রঃ এখানে যদি কোনও দিন পুলিশের বা আরক্ষণ বিভাগের লোক চলে আসে আত্মরক্ষা করার মতন যথেষ্ট অস্ত্র আছে?
উঃ এই মুহূর্তে নেই, তবে চলে আসবে কয়েক দিনে। তারপর অবশ্য যারা বেঁচে যাবে তাদের অন্য স্থানে সরে যেতে হবে।
প্রঃ এত যে অস্ত্র , খাবার দাবার, এর পয়সা আসে কোথা থেকে?
উঃ (এই উত্তরটা এলো একটু দেরী তে) এক কথায় বলতে পারো ডাকাতি করে।
আমি আর অদিতি এর ওর মুখ চাওয়া চাওয়ি করলাম।
উঃ বিভিন্ন ভাবে ডাকাতি করতে হয়। হয়ত আমাদের কাছে খবর এলো যে কাছেই বা কোনও গদিতে অনেক টাকা এসেছে। সবাই চলে যাওয়ার পর রাতের অন্ধকারে গদি লোটা হয়। (গলাটা একটু নামিয়ে নিয়ে তারপর বলল) যদি আমরা খবর পাই যে কোনও বড় ব্যবসায়ী কোনও হোটেলে এসে উঠেছে তাহলে সেখানে আমাদের একজন কি দুজন মেয়েকে সাজিয়ে গুছিয়ে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। সব সময় যে কাজ হয় তাতে তেমন নয়, কিন্তু অনেক বারই হয়েছে। ওরা গিয়ে ব্যবসায়ীদের সাথে আলাপ করে। অবশ্য তার আগে একটা খবর আমাদের নিতে হয় যে ওদের কাছে প্রচুর নগদ টাকা আছে কিনা। সেটা সিওর না হয়ে আমরা মেয়েদের পাঠাই না। তো হ্যাঁ, যা বলছিলাম, মেয়েরা বা কোনও মেয়ের ওপর যদি তেমন কোনও ব্যবসাদারের মন এসে যায়, তো নিশ্চিত তার ডাক পড়বে ওর ঘরে। এরপর আর কি, নিজেদের শরীরের মায়াজালে জড়িয়ে ফেলা। তেমন লোক হলে কিছুই করতে হয় না। সোজা কপালে বন্দুক বা গলায় ছুরি ঠেকিয়ে হাত পা বেঁধে তালা ভেঙ্গে লুট করে নেওয়া তার সর্বস্ব, (হেঁসে ফেলল আরতি) আর যদি তেমন ঘুঘু লোক হয় তো খেলাটা সম্পূর্ণ করতে হয়। মানে লোকটা যে কারণে ওকে ঘরে ডেকেছে সেই কাজটা প্রথমে সম্পন্ন করা। তারপর লোকটার দুর্বল মুহূর্তে বা ঘুমন্ত অবস্থায় তার হাত পা বেঁধে তাঁকে লুট করা। আরেকটা কথা বলি।
প্রঃ কি?
উঃ বাইরের এলাকায়, এমনকি কলকাতাতেও মেয়েদের কিছু দালালের সাথে আমাদের চেনা শুনা আছে। ওদের কাছে অনেক মেয়েদের ডিমান্ড আসে। যদি তেমন কোনও বড়লোকের কাছ থেকে ডিমান্ড আসে তো আমাদের যোগাযোগ করে। আমরা একজন মেয়েকে পাঠিয়ে দি। কাজ শেষ না করে কিছু করতে পারলে তো কথাই নেই। তবে এসব ক্ষেত্রে অধিকাংশ ক্ষেত্রে যারা ডাকে তারা একা হয় না। হয়ত তাদের বন্ধু থাকে, বা সিকিউরিটি থাকে। তাই এদের সাথে খেলা শেষ করে সুযোগ বুঝে বাইরে সংকেত দেওয়া হয়। কোথায় টাকা রাখতে পারে ইত্যাদি বুঝে নিতে হয়। তখন বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা আমাদের লোক আচমকা আক্রমণ করে। বাড়ির মালিক যদি নেশা গ্রস্ত না হয়, বা যদি খুব সজাগ থাকে তো বিপদ হতে পারে, তাই চেষ্টা করা হয় শরীরের মিলন শেষ হওয়ার আগেই তার শরীর আর মনকে বশ করে ফেলা, মানে শরীরের খেলায় মাতিয়ে রেখে আর কি। তবে একাধিক লোক থাকলে ব্যাপারটা একটু জটিল হয়ে যায়। সুজাতার যেমন...
প্রঃ হ্যাঁ আমিও সেটাই জানতে চাইছিলাম, সুজাতার কি হয়েছে।
উঃ ওর কপাল খারাপ। নইলে এরকম হত না। একজনের বাগান বাংলো তে ওর যাওয়ার কথা ছিল। সুলেমান বলে একজন দালাল খবর এনেছিল। আগেও অনেকবার খবর দিয়েছে। দু দুটো গাড়ির শো রুম আছে কোলকাতায়। এখানেও একটা বাগান বাড়িও আছে। এখানে নাকি বেশ কিছু কালো ধান্দা করছে। হাট্টা খাট্টা লোক। আর দামী গাড়িতে লাখ লাখ টাকা নিয়ে ঘোরে। আমরা সুজাতাকে পাঠিয়েছিলাম ওর কাছে। এখানে বাগান বাড়িতে একা থাকবে বলে মেয়ের খোঁজ করছিল। খবর ছিল লোকটা নাকি একাই ঘোরে, আর কাউকে বিশ্বাস করে না। দুদিনের জন্য মোটা টাকা দিতেও রাজি হয়েছিল। প্রথম দিন ওর সাথে কাটানোর পর সুজাতা বুঝে গিয়েছিল যে কোথায় আছে ওর টাকার সুটকেস। দ্বিতীয় দিন যখন লোকটা ঘুমাচ্ছিল, সুজাতা টাকার সুটকেস তুলে বেড়িয়ে এলো। কিন্তু বরাত খারাপ ও জানত না যে ওর কয়েকজন লোক বাইরে অপেক্ষা করছিল। সুজাতা আগের দিন যখন লোকটার কাছে গিয়েছিল, তখনও ওরা ছিল, কিন্তু এমন সাধারণ ভাবে ঘুরছিল যে সন্দেহ হয় নি। সুজাতাকে দেখে ওরা বুঝতে পারে যে কিছু একটা হয়েছে। ব্যস গুলি চালায়, সুজাতাও গুলি চালায়। ওদের একজন আহত হয়েছে, কিন্তু সুজাতা বেচারিও গুলি খায়। তারপর পড়ি কি মরি করে কিছুদুরে যেখানে আমাদের গাড়ি ছিল সেখানে এসে পৌঁছায়, বাকিটা তো দেখতেই পেলে।
প্রঃ টাকাগুলো?
উঃ সুজাতা সাহসী মেয়ে। এত কষ্ট করে যে টাকায় ওর হাত পড়েছে সে টাকা হাত ছাড়া করার মেয়ে ও নয়।
প্রঃ এই অরূপদাকে তোমরা কতদিন ধরে চেন?
উঃ আমি এখানে এসেছি তা প্রায় বছর তিন হয়ে গেছে। অবশ্য আগে আমাদের ঘাঁটি অন্য জায়গায় ছিল। জানা জানি হয়ে যাওয়ায় আমরা দু বছর হল এখানে মুভ করেছি। জায়গাটা খুজে পাওয়া বেশ মুশকিল।
প্রঃ অরূপদার বয়স কত?
উঃ তেতাল্লিশ। ও হ্যাঁ ওর স্ত্রীও আছে এখানে। বিনীতা দিকে তোমরা দেখনি। আমরা সবাই বয়স বেশী কম যাই হোক না কেন অরূপদা আর বিনীতাদি ডাকি। ও ফিল্ডে আছে। আটত্রিশ বছর বয়স। এই জায়গা দাঁড় করাতে ওর প্রতিদান কম নয়।
প্রঃ ফিল্ড মানে বাইরে কাজে গেছে?
উঃ হ্যাঁ। আগের মাসে একটা মেয়েকে অ্যাসিড দিয়ে পোড়ান হয়েছিল। মেয়েটি বাঁচে নি। ওর এক আত্মীয় এখানে আছে আমাদের মধ্যে। মেয়েটার বর বড়লোকের একমাত্র ছেলে। টাকা দিয়ে পুরো ব্যাপারটা চেপে দেওয়া হয়েছে।
প্রঃ তার মানে আজ ওকে লুণ্ঠন করা হবে?
উঃ না সে কাজ কাল হয়ে গেছে। আজ ভোরের মধ্যেই এখানে ফিরে আসার কথা ছিল। কিন্তু কিছু একটা কারণে দেরী হয়েছে। তবে শুনেছি কাজ হয়ে গেছে। বিনীতাদি অক্ষত। (একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল) অক্ষত ঠিক বলা যায় না। অচেনা অজানা কারুর সাথে নিজের অনিচ্ছা সত্ত্বেও শোয়ার পর শরীর অক্ষত থাকে না। তবে হ্যাঁ যা খবর এসেছে লাখ চারেক টাকা নগদ লুট করা গেছে। আমাদের ওখানকার এজেন্টের কাছে কিছু টাকা জমা দেওয়া হয়েছে। আনাজপাতির টাকা মেটাতে হবে। আজ সন্ধ্যার আগে পৌঁছে যাওয়া উচিৎ। আলাপ হলে দেখবে ভীষণ খোলা মনের মানুষ, খুব স্বাধীনচেতা।
প্রঃ আচ্ছা একটা জিনিস লক্ষ্য করলাম যে এখানে যারা আছে তাদের প্রায় সবাই একবার অন্তত প্রেগন্যান্ট হয়েছে। কি করে এটা সম্ভব হল?
উঃ ওই যে বললাম অবাধে যৌন মিলন করলে...
কথায় খেদ পড়ল। আলি একটা ছেলেকে নিয়ে এসে ঘরে ঢুকেছে। আমাদের দেখে ও কথা বলতে ইতস্তত করছে দেখে আমরা উঠে পড়তে যাচ্ছিলাম, কিন্তু আরতি আমাদের বসতে বলল। ইশারায় আলি দাকে বুঝিয়ে দিল যে আমাদের সামনে ওরা কথা বার্তা বলতে পারে।