03-02-2019, 11:15 AM
পাঁচ
রাস্তায় আর কোনও উল্লেখযোগ্য ব্যাপার ঘটেনি। ঘুম ভাঙল যখন, তখন দেখলাম গাড়িটা বড় রাস্তা ছেড়ে একটা কাঁচা রাস্তা ধরেছে। ঘুম ভাঙলেও শরীরটা সেই আগের মতই অসাড় হয়ে রয়েছে। গাড়িটা এক জায়গায় গিয়ে একটা বড় মাঠের পাশে গিয়ে দাঁড়াল। আমার পাশ থেকে ছেলেটা নেমে মুখ দিয়ে একটা অদ্ভুত আওয়াজ বের করল। কয়েক মুহূর্ত পর আবার ওই দিক থেকে সেই রকমই একটা অদ্ভুত শব্দ এল। ছেলেটা আবার একটা অদ্ভুত শব্দ করল। ওই দিক থেকেও আবার ওর সংকেতের উত্তর। রাস্তার ধারের একটা গাছের নিচ থেকে বেড়িয়ে এল খয়েরি জামা প্যান্ট পরিহিত একজন মাঝ বয়সী লোক। মায়া আরেকটু ভেতর দিকে সরে বসল। লোকটা গাড়ির সামনের সিটেই উঠে বসল। লোকটার শরীর স্বাস্থ্য বেশ সুঠাম। মুখে এক গাল কাঁচা পাকা দাঁড়ি, মনে হয় অনেক দিন শেভ করেননি। গাড়ি ছেড়ে দিল। আমার পাশে বসে থাকা ছেলেটা বলল “ একটু ঘুমিয়েছে, কিন্তু এখন আবার সেন্স ফিরে এসেছে।“ সামনে থেকে শুধু একটা গম্ভীর “হুমম” মতন শব্দ এলো। আরও এক ঘণ্টা মতন চলার পর আমরা একটা বস্তি মতন জায়গায় এসে পৌঁছালাম। গাড়ির শব্দ শুনে অনেক গুলো মেয়ে দেখলাম ঘর থেকে বেড়িয়ে এসেছে। এখানে বৈদ্যুতিক আলো নেই। আমরা যখন পৌঁছেছি তখনও অন্ধকার নয় নি, কিন্তু আকাশ কালো হয়ে এসেছে। চোখ ঘুরিয়ে দেখলাম অধিকাংশই মেয়ে। শুধু সাত আঁটটা অল্পবয়সী ছেলে, মানে বয়স আঠারো উনিশ হবে। আর আরও গুঁটি কয়েক লোক যারা হয় মাঝ বয়সী বা বয়স তার থেকে একটু বেশী। একজন লোককে দেখে মনে হল সেই লিডার। ওর বয়স চল্লিশের সামান্য ওপরে। আমাকে নিয়ে পৌঁছানোর সাথে সাথে বেশ কয়েকটা মেয়ে আর কয়েকটা অল্প বয়সী ছেলে এগিয়ে এলো গাড়ির দিকে। আমাকে ধরাধরি করে নিচে নামিয়ে একটা কুঁড়ে ঘরের ভেতর নিয়ে গেল। আমার ব্যগ দুটো নিয়ে ওরা কি করল সেটা বলতে পারব না। ঘরের ভেতরটা অন্ধকার। একটা ছোট টেবিল আছে আর তার পাশে একটা চেয়ার। দুটোই যে শস্তা কাঠের সেটা বেশ বুঝতে পারলাম। টেবিলের উপর একটা লম্বা মোমবাতি জ্বলছে। আমাকে রেখে দিয়ে ওরা ঘর খালি করে বেড়িয়ে গেল। আমি ঘুমিয়ে পড়লাম। মানসিক ক্লান্তি শরীরের ক্লান্তির থেকে অনেক বেশী কাজ করে। আমি বুঝতে পেরেছি যে আমি বাজে ভাবে ফেঁসে গেছি। এরা কি আতঙ্কবাদী না কি অন্য কিছু। যাই হোক না কেন টোপ ফেলে আমাকে এখানে নিয়ে আসার কারণ কি? কিছুই বুঝতে পারলাম না। ঘুমে আমার কান্না ভেজা চোখ বুজে গেল।
প্রথমেই চোখ খুলে ঠাহর করতে পারলাম না যে কোথায় আছি। চারপাশটা অন্ধকার লাগলো খুব। তারপর ধীরে ধীরে বুঝতে পারলাম যে আমার দিকে ঝুঁকে পড়ে এক জন মাঝ বয়সী মহিলা দাঁড়িয়ে আছেন। সকালে মায়াকে যেমন দেখেছিলাম, এর পোশাকও ঠিক তেমনই। ভেতরে ব্লাউজ বা অন্তর্বাসের কোনও চিহ্ন নেই। হাঁটু অব্দি শাড়ি। মোমবাতি এখনও জ্বলছে। জানি না কতক্ষণ ঘুমিয়েছি। ধড়মড় করে উঠে বসলাম। কিন্তু না এখন শরীর নাড়াতে পারলেও জোর খুব কম। মহিলাটি যেন আমার দুর্বলতার কথা জানে। আমাকে হালকা ধাক্কা দিয়ে শুইয়ে দিল। “খাবার আনছি। একটু খেয়ে নাও।“ ও চলে যাবার আগেই আমি প্রশ্নটা করে বসলাম “আমাকে এখানে নিয়ে আসা হল কেন? আমি কি করেছি? আর তোমরা ঠিক কে? “ ও কোনও উত্তর না দিয়েই বেড়িয়ে গেল। আমি ক্লান্ত শরীরটা নিয়ে পড়ে রইলাম বিছানায়। একবার ইচ্ছে হল উঠে গিয়ে দেখি বাইরে কি হচ্ছে, কারণ বাইরে থেকে অনেক হাঁসি আর জোরালো গলার শব্দ পাচ্ছি। কিন্তু উঠতে পারলাম না। বুঝতে পারছি ওষুধের আবেশ এখনও আমাকে ঘিরে রেখেছে। মহিলা কিছুক্ষণ পরে ফিরে এল। আমাকে ধরে উঠিয়ে বসাল। ওর ছোঁয়ায় বেশ একটা স্নেহের ছোঁয়া ছিল। আমি ওর নগ্ন কাঁধের ওপর নিজের পিঠের ভার ছেড়ে দিলাম। হাতটা মুখের সামনে আসতেই মুখ আপনা থেকে হাঁ হয়ে গেল। আমার মুখে কি যেন একটা দিয়ে দিল। আলু সিদ্ধ ডাল আর ভাত একসাথে মাখিয়ে ডলা পাকিয়ে পাকিয়ে আমাকে খাওয়াচ্ছিল। বোধহয় কিছুটা লঙ্কাও ডলেছে তাতে। ঝাল ঝাল একটা স্বাদ পাচ্ছি জিভে। খাওয়ানো শেষ করে থালাটা টেবিলে রেখে আমার কাছে ফিরে এসে আমার হাত ধরে আমাকে দাঁড় করিয়ে বাইরে নিয়ে গেল। বাইরে একটা জটলা আর সেখানে না জানি কি হচ্ছে। উচ্চ স্বরে মহিলা আর পুরুষদের গলার শব্দ আসছে ওখান থেকে। আমরা কিন্তু ওই দিকে গেলাম না। চলে গেলাম বাড়ির পেছন দিকে। একটা কল ছিল। সেটাকে পাম্প করে আমাকে ইশারা করল জলে মুখ ধুয়ে নিতে। আমিও সেই মতন করলাম। সামান্য একটু দূরে একটা জায়গা দেখিয়ে বলল “ওইখানে গিয়ে টয়লেট করে নাও। রাত্রে আর বেরোতে পারবে না। আর ভুলেও পালানোর চেষ্টা করবে না।“ শেষের কথাটা না বললেও চলত। আমার শরীরে এমন শক্তি নেই যে এখন এই অচেনা জায়গা থেকে পালিয়ে যেতে পারব। আর আমার কাছে কোনও টাকা পয়সা নেই। পালিয়ে যাবই বা কোথায়! ওর থেকে একটু দূরে গিয়ে ফাঁকা অন্ধকার জায়গা দেখে হাঁটু মুড়ে মাটিতে বসে শাড়ি আর সায়া কোমরের ওপর উঠিয়ে নিলাম। সারা দিনের জমা জল বেড়িয়ে গেল শরীরের থেকে। শেষ হওয়ার পর স্বাভাবিক ভাবেই খেয়াল করলাম যোনীদেশ ধোয়ার জল নেই। বুঝলাম এখানে জল না থাকায় এরা কেউ ধোয় না নিজেদের গোপন জায়গাগুলো। আর সেটাই অভ্যাসে দাঁড়িয়ে গেছে। আমি ফিরে এলাম ওর কাছে শাড়ি ঠিক করতে করতে। মাঠে ঘাঁটে সাপ খোপ নেই তো? এখন কি শেষ মেষ সাপের কামড় খেয়ে জীবন দিতে হবে? ও আমাকে নিয়ে আবার ফিরে গেল সেই ঘরটাতে। “শুয়ে পড়ো। কাল সকাল সকাল উঠতে হবে। অনেক কাজ এখানে। রাত্রে টয়লেট যাবার দরকার পড়লে কিছু করার নেই। ওইখানেই করে নিও। কিছু করার নেই।“ আমাকে মাটির ঘরের একটা কোণের দিকে ইঙ্গিত করে দিল। আমি গিয়ে শুয়ে পড়তেই ও মোমবাতিটা নিভিয়ে দিয়ে চলে গেল। যাওয়ার আগে দরজা বন্ধ করে দিল। শব্দ শুনে মনে হল যে বাইরে থেকে তালা মেরে দিয়ে চলে গেছে।
না সেই রাত্রে আর আমার ঘুম ভাঙেনি। ঘুম ভাঙল একদম কাক ডাকা ভোরে। তবে কাকের ডাকে আমার ঘুম ভাঙেনি, ঘুম ভেঙ্গেছে কালকের রাতে দেখা সেই মহিলার ঠ্যালা খেয়ে। “উঠে পড়ো, বেলা হয়ে গেছে। হাত ঘড়ির দিকে চোখ ফেরাতে দেখলাম ঘড়িটা হাতে নেই। “ মিন মিন করে জিজ্ঞেস করলাম “কটা বাজে?” বলল “ সাড়ে পাঁচ। চলো মুখ ধুয়ে নাও। আমারই ব্যাগ থেকে আমার ব্রাশ আর নিয়ে এসেছে। টেবিলের ওপর রেখে দিয়ে চলে গেল। আজ দিনের আলোয় নেশাহীন অবস্থায় ভালো করে মহিলা কে দেখলাম। বয়স ছত্রিশ সাইত্রিশ হবে। তার থেকে খুব বেশী হতেই পারে না। শরীরের গঠন বেশ লোভনীয়। এখনও ব্লাউজ পরে নি। আলোয় বুঝতে পারলাম শরীরের নিচের ভাগেও শাড়ির নিচে আর কিছু নেই। আমি বুঝতে পারলাম এরকম পরিবেশে বিদ্রোহী হয়ে তেমন কোনও লাভ নেই। সুযোগ বুঝে কোপ মারতে হবে। এখনই পালানোর চেষ্টা করলে সেটা হবে ছেলেমানুষী। আমি ব্রাশে পেস্ট মাখিয়ে বেড়িয়ে এলাম। বাইরে বেড়িয়ে এসে দেখলাম অনেক মেয়ে আর কালকের দেখা ছেলেগুলো দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কেউ দাঁতন করছে, কেউ বা ব্রাশ করছে। সবার চেহারাতেই একটা শিক্ষার ছাপ স্পষ্ট। অথচ আশ্চর্য এই যে এরা এখানে কি করছে সেটা বুঝতে পারছি না। সেই মহিলা আমার আগে আগেই চলেছে সেই কল পাড়ের দিকে। খেয়াল করে দেখলাম কোনও মেয়ের গায়েই ব্লাউজ বা অন্তর্বাসের চিহ্ন নেই। অনেকে তো এমন পাতলা শাড়ি পরেছে যে ওদের যৌন কেশের আভাসও বোঝা যাচ্ছে শাড়ির বাইরে থেকে। এখানে থাকতে হলে আমাকেও বোধহয় এমন ভাবেই থাকতে হবে এরপর থেকে। কিন্তু পালাতে হলে পালাব কি করে? কিছু দিন আগে একটা সিনেমা দেখেছিলাম। তাতে জার্মানির ক্যাম্প থেকে এক যুদ্ধ বন্দীর পালানোর ঘটনা আছে, মানে সেটা নিয়েই গল্প। মনে পড়ে গেল যে কোথাও থেকে পালাতে হলে প্রথমেই এখানেকার ভূগোলটা বুঝে ফেলতে হবে। চোখ কান খোলা রাখতে হবে। আর সবার আগে কিছু টাকার ব্যবস্থা করতে হবে। আর তারও আগে বুঝতে হবে এরা কারা আর আমার কাছ থেকে এরা কি চায়। আর সেই সাথে বিশ্বস্ত হয়ে উঠতে হবে এদের লিডারের কাছে। একটু সময় সাপেক্ষ ব্যাপার বুঝতে পারছি, কিন্তু এছাড়া অন্য কোনও উপায় নেই। আর একবার পালিয়ে যেতে পারলে পুলিশ ডেকে এনে সব কটাকে যদি না খুন করিয়েছি তো আমার নাম বদলে দেব। অন্তত জেলের ঘানি তো টানাবোই টানাবো। নইলে শান্তিতে মরতেও পারব না। নির্লজ্জের মতন সবার সামনে দাঁতে ব্রাশ ঘষতে ঘষতে এগিয়ে গেলাম কলের দিকে। ওখানেও অনেক ভিড়। অনেকেই আমার দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছে। তবে তেমন ভাবে তাকিয়ে দেখার মতন ভাব নেই কারোর মধ্যে। একজন নতুন প্রাণী এখানে এসেছে, ব্যস এই যা। আমি কলের কাছে এগিয়ে যেতেই সবাই কলের সামনে থেকে সরে দাঁড়াল। একজন এগিয়ে এসে পাম্প করা শুরু করল। আমি মুখ ধুয়ে ওখান থেকে সরে পড়লাম। প্রাতকৃত্য করার প্রয়োজন, কিন্তু কোথায় যাই। ওই মহিলা দেখলাম ঘরে ফিরে এসেছে। আমি যখন চারপাশের মেয়েদের দেখতে ব্যস্ত ছিলাম তখন উনি কোথায় যেন চলে গিয়েছিল। এখন আবার ফিরে এসেছে। আমার অবস্থা বোধহয় বুঝেই আমাকে বলল “ওইটা নিয়ে মাঠে চলে যাও। বেশীক্ষণ লাগিও না। অরূপদা অপেক্ষা করছে।“ কিছুই করার নেই। মগটা নিয়ে আবার এগিয়ে গেলাম কলের দিকে। আবারও একজন মগের ভেতর জল ভরে দিল আমার। বেশ বড় মগ। আমি এগিয়ে গেলাম মাঠের দিকে। একটু দূরে দূরে অনেকগুলো মেয়ে আর দু একটা ছেলেও এসেছে তখন। ভীষণ অস্বস্তি হচ্ছে ভেতর ভেতর। কিন্তু আর কিছু করার নেই। একটা ছেলে আর একটা মেয়ের মাঝখানে গিয়ে শাড়ি আর সায়া তুলে বসে পড়লাম। কারোর মুখে কোনও কথা নেই। কাজ শেষ করে পরিষ্কার করে ধুয়ে ফিরে এলাম ঘরে। এখন অপেক্ষা করার ছাড়া গতি নেই। একটু পরে সেই মহিলা আবার ফিরে এল। হেঁসে বলল “ফ্রেশ হয়ে গেছ?” এও ইংরেজি ঝাড়ছে দেখে আরও আশ্চর্য হয়ে গেলাম। মাথা নাড়িয়ে বোঝালাম হ্যাঁ। “আমার নাম মিনতি।“ বলল আমাকে। আমি বললাম “রুমি।“ ও হেঁসে বলল “নাইস তো মিট ইউ রুমি মাই ফ্রেন্ড। এসো আমার সাথে। বিশ্বাস করো, এখানে থাকতে খারাপ লাগবে না।“ শালা একবার বেরোই তোমাদের মজা দেখাচ্ছি। কিন্তু ভাবখানা করে রাখলাম যেন আমি ভীষণ ঘাবড়ে রয়েছি, মানে ভয়ে কাঁপছি রীতিমত। ভয় যে ছিলই সেটা আর নতুন করে কি বলব। তবে একটা জিনিস বুঝলাম পালের গোদার সাথে দেখা করতে যাচ্ছি, সুতরাং কালকে আমার ;.,ের কথাটা ওর সামনে ভালো করে খুলে বলব। ওই আধা ডাক্তারের চাকরিটা আজই খাবো আমি।
আরেকটা কুঁড়ে ঘরের মধ্যে আমাকে নিয়ে গেল। ঘরের জানলা দরজা সব খোলা। ছোট ঘর। একটা আধ ভাঙ্গা কাঠের টেবিল আর দুটো চেয়ার। একটা জলের কুঁজো। অরূপদা কে দেখলাম। এ হল সেই কাল দেখা লিডার। চেয়ারে একটা মেয়ে বসেছিল আমার মতন পোশাকে। দেখে বুঝলাম ও নিজেও খুব ঘাবড়ে আছে এই নতুন পরিস্থিতিতে। আমার সাথে একবার শুধু চোখাচুখি হল মেয়েটার। ও মুখ ঘুরিয়ে নিল। অরূপদা বিছানায় বসেছিল। আমাকে দেখে উঠে দাঁড়াল। ইশারায় বসতে বলল চেয়ারে। মিনতি কে ইশারায় ঘর থেকে চলে যেতে বলল। আমি বসতেই উঠে এসে আমার সাথে হাত মিলিয়ে বলল “ওয়েলকাম তো আওয়ার ক্যাম্প।“ আমি কিছু বলে ওঠার আগেই আমার পাশে বসা মেয়েটি বলে উঠলো “আপনার কি উগ্রপন্থী, আতঙ্কবাদী না অন্য কিছু?” আমি ওর কথার খেই ধরে নিয়ে বললাম “না কি নকশাল? আর আমাকে এখানে ধরে আনার কি মানে? আপনার কোন পাকা ধানে আমি মই দিয়েছি। ” অরূপদা একটু হেঁসে বলল “সব কথা খুলে বলার জন্যই তোমাদের এখানে ডেকে এনেছি। তবে তার আগে একটা কথা বলে দি। সেটা হল আমার পরিচয়। আমার নাম অরূপ সান্যাল। * ইউনিভার্সিটি থেকে পাশ করেছি, মাস্টার্স করেছি। পরে পি এইচ ডি ও করেছি। তবে যাক সে কথা। এই ক্যাম্পটার দখলে আমি। আমাদের আরও অনেক গুলো শাখা আছে। হ্যাঁ, আমাকে সবাই অরূপদা বলে ডাকে। তবে নিয়ম হল আমাকে আপনি করে বলতে পারবে না তোমরা কেউ। এইবার আসি তোমাদের প্রশ্নের উত্তরে।“ একটু থেমে উঠে গিয়ে একটা গ্লাস নিয়ে গিয়ে কুঁজো থেকে জল নিয়ে গলায় ঢেলে নিল। ও নিজে না বললেও আমি আর এখানে কাউকে আপনি সম্বোধন করতে পারব না, কারণ ভেতর থেকে আসবে না। গ্লাসটা কুঁজোর ওপরেই উল্টো করে রেখে দিয়ে ফিরে এল বিছানায়। পদ্মাসনে উঠে বসল বিছানার ওপর। ওপরের দিকে তাকিয়ে কি যেন একটা ভেবে নিল, তারপর শুরু করল নিজের কথা। এখানে বলে রাখি এই সব আঁতেলদের আমি একফোঁটা সহ্য করতে পারি না। পৃথিবীর কোনও লিডার, ধর্মগুরু বা সত্যিকারের ইন্টলেকটুয়াল আঁতেল হয় বলে দেখিনি। তবে আজকের দিনে এই সব আঁতেলদেরই অনেক শিক্ষিত যুবক যুবতীরা মাথায় তুলে রেখেছে। আমার ক্ষমতা থাকলে এদের পেছনে এক লাথি মেরে পৃথিবী থেকে বিদায় করে দিতাম। এদের একটা সাধারণ জিনিস হল এই যে এরা অনেকক্ষণ ধরে ভেবে ভেবে কমন সেন্স মার্কা কিছু কথা বলবে আর চিবিয়ে চিবিয়ে বলবে। মাঝে মাঝে এক রাশ নিঃশ্বাস জুড়ে দেবে, ভাব খানা এমন যে আত্মমন্থন করে কথা গুলো পেট থেকে বের করে আনছে। এদের সবটাই আমার নাটক বলে মনে হয়। এদের চিবিয়ে চিবিয়ে কথা বলার স্টাইল দেখলে মাঝে মাঝে মনে হয় যে পিছনে গিয়ে ছয় কি সাতটা হামানদিস্তার বাড়ি মারি, এক দফায় সব কথাগুলো এদের পেট থেকে বেড়িয়ে আসবে, সামনে বসে যে বা যারা শুনছে অন্তত তাদের এই আতলেমি সহ্য করতে হবে না। এর ক্ষেত্রেও দেখলাম এর কোনও ব্যতিক্রম হল না।
একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে ও শুরু করল নিজের ভাষণ “ হ্যাঁ তোমরা ঠিকই বলেছ, আমি আর আমরা এখানে যারা আছি তাড়া উগ্রপন্থী। যেমন আগে বললাম আমাদের অনেক শাখা আছে। তবে আমরা নকশাল নই। ওদের সাথে আমাদের কোনও সম্পর্ক নেই। আমরা কোনও রাজনৈতিক দলের সাথেও সম্পর্ক রাখি না। আমরা ওপেন রিলেশনে বিশ্বাস করি। সে যাই হোক না কেন মানসিক বা শারীরিক। তবে জোর খাটানো পছন্দ করি না মোটেই। “ আমি জানি এই লেখাগুলো পড়তে কারোর কয়েক সেকন্ডের বেশী লাগতে পারে না। কিন্তু এই মহান লিডার এই কথাগুলো চিবিয়ে চিবিয়ে বলতে সময় নিল প্রায় দশ মিনিট। মাঝে মাঝেই সবার চিন্তায় উনি কোথায় যেন হারিয়ে যাচ্ছিলেন। ন্যাকা। লোকটা সুবিধের নয় সেটা প্রথম আলাপেই আমার মনে হল। এর প্রিয়ভাজন হয়ে উঠতে হবে। তবে, একে নজরে নজরে রাখতে হবে। ও আরও কিছু বলতে যাচ্ছিল কিন্তু তার আগেই আমি ফস করে বলে বসলাম “ আপনি, সরি তুমি বলছিলে যে তোমরা জোর করে কিছু করো না, কিন্তু কাল আমার সচেতন অসাড় শরীরটাকে এখানে নিয়ে আসার আগে তোমাদের ওই মাঝ পথে পড়াশুনা ছেড়ে দেওয়া আধা ডাক্তারটা আমাকে ;., করেছে। সেটার জন্য তার কি শাস্তি হবে আমি জানতে চাই।“ অরূপ কিছুক্ষণ আমার মুখের দিকে যোগীর মতন চোখ নিয়ে তাকিয়ে থাকলো। তারপর হেঁসে বলল “ না ও করতে পারে না। ওকে আমি অনেক দিন থেকে চিনি। ও শুধু তোমাকে পরীক্ষা করে দেখেছে যে তুমি ভারজিন কি না। ব্যস আর কিছু নয়। সেই নেশাগ্রস্ত অবস্থায় তোমার কিছু ভুল হয়েছে। ও যে তোমাকে পরীক্ষা করেছে সেটা ও নিজের মুখেই কাল রাত্রেই আমাকে স্বীকার করে গেছে। আর ...” একটু থেমে একই রকম হাঁসি মুখে বলল “ আর ও বলেছে তুমি ভারজিন নও। আর ওর ধারণা তুমি এর আগে অনেকবার পুরুষ বা পুরুষদের সাথে সহবাসে লিপ্ত হয়েছ। “ আমার কানগুলো গরম হয়ে গেল। আমার পাশে বসে থাকা মেয়েটার মধ্যে কোনও বিকার লক্ষ্য করলাম না। “ভার্জিন কি না সেটা চেক করার একটাই কারণ। যদি তুমি সত্যিই কোনও দিন মন আর শরীর দিয়ে আমাদের কমরেড হয়ে উঠতে পারো তো বুঝতে পারবে যে আমাদের কিছু কাজে মেয়েদের শরীরের সাহায্য নিতে হয়। সব কিছু বল প্রয়োগ করে হয় না, বা বলা ভালো যে সেফ ও নয়।” অরূপ চুপ করার কয়েক সেকন্ড পর মেয়েটা বলে উঠলো “ তার মানে আপনি বলতে চান যে একটা মেয়ে ওই হেভি সিডেটিভের কারণে বুঝতে পারবে না যে সে রেপড হচ্ছে কি না?” হেঁসে উঠলো জোড়ে। “আমি তা বলি নি, কিন্তু ও তার আগে ড্রিঙ্ক করেছে গাঁজা টেনেছে। তাই ওর হ্যালুসিনেসন হওয়াটা আশ্চর্য কিছু নয়।“ মেয়েটা অরুপের এই উত্তরে আরও জোড়ে হেঁসে বলে উঠলো “ হ্যালুসিনেসন কাকে বলে জানা আছে? * ইউনিভার্সিটিতে কি ডাক্তারি পড়ানো হয়? এই লোকগুলোকে মুরগি বানিয়ে রেখে দিয়েছেন সেটা বুঝতে পারছি, আর এখন আমাদের ব্রেন অয়াশ চলছে। ভালো। ব্রেন থাকলে সেটা অয়াশ করা এতটা সোজা হবে না সেটা আগেই বলে রাখছি। রেপ করতে পারেন, কিন্তু মাথা ঘোরাতে পারবেন না।“ কাল আমি যে কটা জিনিস লক্ষ্য করেছিলাম দেখলাম মেয়েটা বোকার মতন আগ বাড়িয়ে সেইগুলো জিজ্ঞেস করে বসল। “ বাই দা ওয়ে, এখানে অধিকাংশ মেয়েদের পেটে স্ট্রেচ মার্ক দেখছি। কেন? সতের বছরের একটা মেয়ের পেটেও দেখেছি। একটু যদি খুলে বলেন তাহলে খুশি হব।“ একটু সুযোগ পেলে আমি হয়ত ওকে থামিয়ে দিতাম। কারণ কিছু জিনিস নিজেরা খুজে বার করলে বেশী ভালো হয়। কিন্তু যখন প্রশ্নটা ও করেই দিয়েছে তখন আর কিছুই করার নেই। কান খাড়া করে রইলাম উত্তরের প্রত্যাশায়। উত্তর এলো আর সেটা এতটাই খেলো আর শস্তা যে কি বলব। লোকটা যে একটা ভণ্ড সেটা বুঝতে আর বাকি রইল না। * ইউনিভার্সিটির ডিগ্রী সত্যি আছে কিনা সেটা একবার হলেও দেখার কৌতূহল আমাকে পেয়ে বসেছে। অবশ্য এখন চাইলে আমি স্থির জানি যে কিছু একটা দেখিয়ে দেবে। তবে সেটা জাল না আসল সেটা জানতে হবে সুনিশ্চিত ভাবে।
অরূপ আবার উপরের দিকে খানিকক্ষণ তাকিয়ে বসে রইল। আরেকটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে কিছু একটা বলতে যাচ্ছিল, কিন্তু এইবার আমি একটা কথা মুখ ফস্কে না বলে পারলাম না। “একটা কথা বলব? তুমি করেই বলছি কারন সেটাই তোমার নির্দেশ। এত থেমে থেমে আঁতেলদের মতন কথা আমার ঠিক পছন্দ নয়। তুমি যে আকাশ থেকে কথা পেড়ে আনছ না সেটা কমন সেন্স। সোজা কথা সোজা ভাবেই বলে দাও। এই ধ্যাস্টামি গুলো বাঁচিয়ে রাখো অন্য দের জন্য। যাদের তুমি ব্রেন অয়াশ করে ফেলেছ ইতিমধ্যে। টেবিলের ওপর বিবেকানন্দের বই দেখছি। লোকটা আদৌ তোমার মতন আঁতেল ছিলেন না। অল্প কথায় না ভেবে ঝেড়ে ফেলো। মনে ধরলে তাতেই ধরবে আর তা না হলে পুরোটাই অন্তত আমার কানে নাটকের মতন শোনাবে। বেসিকালি এই চিবিয়ে চিবিয়ে কথা বলাটা আমি সহ্য করতে পারি না।“ শেষের কথাগুলো বললাম বেশ জোড়ে আর চিবিয়ে চিবিয়ে যাতে ওর আঁতে ভালো মতন ঘা দেওয়া যায়। ও কিছু একটা উত্তর দিত কিন্তু দিতে পারল না। ওর মুখে অবশ্য হাঁসিটা এখনও লেগে আছে। এটা অধিকাংশ ক্ষেত্রে ব্রেন অয়াশ করার ক্ষেত্রে কাজ করে। মুখ থেকে হাঁসি মিলিয়ে যেতে দেওয়া যাবে না। সাইকোলজির শেষ নির্দেশ। কিন্তু ওর উত্তর আর আমাদের শোনা হল না। কারণ বাইরে কি একটা চেঁচামেচি শুনেই ও উঠে পড়ল আর সেই সাথে আমরাও। একটা ছেলে হাঁপাতে হাঁপাতে এসে বলল “সুজাতা দিদি ফিরেছে। গুলি খেয়েছে। পেটে একটা আর পিঠে একটা।“ আমি আমার পাশে বসা মেয়েটার দিকে একবার তাকালাম। ও নিজেও আমার দিকে তাকিয়ে আছে। জীবনে কোনও দিন গুলি বার করি নি। কোনও কথা না বলে আমরা দুজনেই উঠে দাঁড়ালাম। অরুপের পিছন পিছন ছুটলাম সাম সুজাতার শরীর পরীক্ষা করতে। অন্তর্বাস না থাকায় দুজনেরই ভারী অংশগুলো অশ্লীল ভাবে লাফাচ্ছিল , কিন্তু সে দিকে খেয়াল করার মতন সময় আর এখন নেই আমাদের হাতে। ছুটতে ছুটতেই আমি মেয়েটাকে জিজ্ঞেস করলাম “তুমিও কি ডাক্তার?” বলল “আমার নাম অদিতি। আমি “anesthetist”। তুমি?” ছুটতে ছুটতেই বললাম “গাইনো। তবে ছেলেদের কিছু চিকিৎসাও আমি করেছি, অন্তত ডিগ্রী আছে। তবে কোনও দিন গুলি...” কথা শেষ হবার আগেই একটা খোলা জায়গায় গিয়ে পৌঁছালাম। অরূপ আমাদের অনেক আগেই পৌঁছে গেছে। আমাদের থেকে অনেক বেশী স্পীডে দৌড়ায় আর সেটাই স্বাভাবিক। সুজাতা নামক মেয়েটিকে সবাই ঘিরে রেখেছে। আমার কালকের রেপিস্ট মাটিতে বসে ওর নাড়ি পরীক্ষা করছে। কিছু একটা বলতে যাচ্ছিল কিন্তু আমাকে আর অদিতিকে দেখেই থেমে গেল। বলল “এই জাক্তার এসে গেছে। আসল ডাক্তার আর পুরো পুরি ডাক্তার। এরাই দেখুক।“ উঠে গেল। অরূপ বলল “ সব ব্যবস্থা আছে। তবে ওষুধ খুব বেশী নেই।“ আমি একটু পরীক্ষা করে উঠে দাঁড়িয়ে বললাম “এখানে কোনও আর্মি ক্যাম্প নেই? বা সার্জেন? আমি সার্জারি করি বটে তবে এই জিনিস আগে কখনও করি নি। “ আমাকে সুজাতা বলল “চিন্তা নেই অনেক দিন আগেই মরতাম, এতদিন অরূপদা বাঁচিয়ে রেখেছিল। মরলে ক্ষতি নেই। তবে একজন কমরেডের হাতে মরব এই যা শান্তি। আর্মি আমাকে দেখলে এমনি মেরে ফেলবে। ওদের দোষ দি না। বুর্জোয়া সমাজটাই আমাদের শ্ত্রু। “ এরা কি সত্যি এই ভণ্ডটাকে এত বিশ্বাস করে। হয় আমার বোঝার ভুল বা লোকটা সত্যি একটা বিরল লোক। বললাম “অপারেট করতে হবে।“ অরূপ প্রায় চেঁচিয়ে উঠল “হ্যাঁ হ্যাঁ। তবে তাই করে ফেলো। ওকে নিয়ে আয় তোরা সবাই।“ এটাও একটা আতলেমির লক্ষণ। সবাই কে বয়স, স্থান কাল পাত্র বিচার না করে “তুই তুই” করে সম্বোধন করা। এটাও নাকি ইন্টেলেক্ট প্রদর্শন করার একটা চিহ্ন। চারপাশে চোখ ঘুরিয়ে দেখলাম কয়েকজন মহিলার বয়স ওনার থেকেও বেশী। যদিও বেশ সুঠাম ওদের স্বাস্থ্য। তবে বয়স ব্যাপারটা একটা সময়ের পর ঢেকে রাখা যায় না, অন্তত মেয়েদের ক্ষেত্রে।
সত্যি সিডেটিভ ড্রাগ খুব কম আছে এখানে। কিন্তু দেখলাম অদিতি অদ্ভুত নৈপুণ্যের সাথে ঠিক যেটুকু দরকার ততটুকু দিয়ে ব্যাপারটা ম্যানেজ করে নিল। আধুনিক হাসপাতালের ওটি তে যেসব সুযোগ সুবিধা পাওয়া যায় তার কিছুই নেই এখানে। তবু আমাদের দুজনকে লড়তে হবে এই মেয়েটার জন্য। সুজাতা অজ্ঞানও হল না। কিন্তু ঝিমিয়ে গেল। কোনও দিন গুলি বের না করলেও কাটা ছেঁড়া শুরু করে দিলাম। সময় খুব কম। অদ্ভুত মনের জোর মেয়েটার। মাঝে মাঝে চিৎকার করছিল বটে, কিন্তু বেঁচে গেল। আগের দিনে জ্ঞান থাকা অবস্থাতেই হাত পা চেপে ধরে শল্য চিকিৎসা করা হত। আজ তাই করতে হল। এ কোন সেঞ্চুরি তে পড়লাম রে বাবা। কিন্তু অদিতির ওষুধের গুনে আর ডোসে মেয়েটার কষ্ট যে অনেকটা কমে গেছে সেটা বুঝতে পারছিলাম। দুটো গুলি বার করে, জায়গাগুলো কে ডিসইনফেক্ট করে স্টিচ করে দিলাম। ব্যান্ডেজ বেঁধে দিলাম। সুজাতা শেষ পর্যায়ে ঝিমিয়ে পড়েছিল। বার বার দেখতে হচ্ছিল যে বেঁচে আছে কি না। এখানে যন্ত্রপাতি খুব একটা নেই। তাই হাতে ধরে ধরে দেখতে হচ্ছে। না মেয়েটা বেঁচে গেল। তিন চার রকমের ইনজেকশন দিয়ে কাজ শেষ করলাম দুজনে। অদ্ভুত জিনিস হল আমাদের গোল করে ঘিরে দাঁড়িয়ে সবাই আমাদের কার্যকলাপ দেখছিল এতক্ষন। কারোর বমি পায় নি, কারোর মাথা ঘোরায় নি এত রক্ত দেখে। কেউ ওখান থেকে সরে যায় নি। আমরা কাজ শেষ করতেই অরূপ চেঁচিয়ে উঠল “আমি হ্যাপি, ভীষণ হ্যাপি আমার নতুন কমরেডদের নিয়ে। এই প্রথম গুলি খেয়ে এসে মনে হয় বেঁচে গেল আমার বোন। এর আগে সবাই চলে গেছে আমাকে ছেড়ে। কিন্তু সুজাতা ছিল আমার বোন। ও বেঁচে গেল। নিজের বোন না হলেও ওকে আমি সবার থেকে বেশী বিশ্বাস করতাম। আমি তোমাদের ওপর ভীষণ খুশি। আমি কৃতজ্ঞ। “ শেষ কথা গুলো বলল আমার আর অদিতির দিকে তাকিয়ে। আমাদের মধ্যে একবার চোখাচুখি হল। আমি ইশারায় বললাম এখন মুখ না খুলতে। স্বস্তি পেলাম এই দেখে যে অদিতি মুখ থামিয়েছে। কিছু একটা বলতে গিয়েও চেপে গেল। সব শেষে দেখলাম রমা এসে মিনতির সাথে ওকে আস্তে আস্তে হাঁটিয়ে নিয়ে চলে গেল কোনও একটা ঘরের দিকে। সত্যি অদ্ভুত ক্ষমতা আর মনের জোর । এই অবস্থায় হাঁটছে কি করে?
রাস্তায় আর কোনও উল্লেখযোগ্য ব্যাপার ঘটেনি। ঘুম ভাঙল যখন, তখন দেখলাম গাড়িটা বড় রাস্তা ছেড়ে একটা কাঁচা রাস্তা ধরেছে। ঘুম ভাঙলেও শরীরটা সেই আগের মতই অসাড় হয়ে রয়েছে। গাড়িটা এক জায়গায় গিয়ে একটা বড় মাঠের পাশে গিয়ে দাঁড়াল। আমার পাশ থেকে ছেলেটা নেমে মুখ দিয়ে একটা অদ্ভুত আওয়াজ বের করল। কয়েক মুহূর্ত পর আবার ওই দিক থেকে সেই রকমই একটা অদ্ভুত শব্দ এল। ছেলেটা আবার একটা অদ্ভুত শব্দ করল। ওই দিক থেকেও আবার ওর সংকেতের উত্তর। রাস্তার ধারের একটা গাছের নিচ থেকে বেড়িয়ে এল খয়েরি জামা প্যান্ট পরিহিত একজন মাঝ বয়সী লোক। মায়া আরেকটু ভেতর দিকে সরে বসল। লোকটা গাড়ির সামনের সিটেই উঠে বসল। লোকটার শরীর স্বাস্থ্য বেশ সুঠাম। মুখে এক গাল কাঁচা পাকা দাঁড়ি, মনে হয় অনেক দিন শেভ করেননি। গাড়ি ছেড়ে দিল। আমার পাশে বসে থাকা ছেলেটা বলল “ একটু ঘুমিয়েছে, কিন্তু এখন আবার সেন্স ফিরে এসেছে।“ সামনে থেকে শুধু একটা গম্ভীর “হুমম” মতন শব্দ এলো। আরও এক ঘণ্টা মতন চলার পর আমরা একটা বস্তি মতন জায়গায় এসে পৌঁছালাম। গাড়ির শব্দ শুনে অনেক গুলো মেয়ে দেখলাম ঘর থেকে বেড়িয়ে এসেছে। এখানে বৈদ্যুতিক আলো নেই। আমরা যখন পৌঁছেছি তখনও অন্ধকার নয় নি, কিন্তু আকাশ কালো হয়ে এসেছে। চোখ ঘুরিয়ে দেখলাম অধিকাংশই মেয়ে। শুধু সাত আঁটটা অল্পবয়সী ছেলে, মানে বয়স আঠারো উনিশ হবে। আর আরও গুঁটি কয়েক লোক যারা হয় মাঝ বয়সী বা বয়স তার থেকে একটু বেশী। একজন লোককে দেখে মনে হল সেই লিডার। ওর বয়স চল্লিশের সামান্য ওপরে। আমাকে নিয়ে পৌঁছানোর সাথে সাথে বেশ কয়েকটা মেয়ে আর কয়েকটা অল্প বয়সী ছেলে এগিয়ে এলো গাড়ির দিকে। আমাকে ধরাধরি করে নিচে নামিয়ে একটা কুঁড়ে ঘরের ভেতর নিয়ে গেল। আমার ব্যগ দুটো নিয়ে ওরা কি করল সেটা বলতে পারব না। ঘরের ভেতরটা অন্ধকার। একটা ছোট টেবিল আছে আর তার পাশে একটা চেয়ার। দুটোই যে শস্তা কাঠের সেটা বেশ বুঝতে পারলাম। টেবিলের উপর একটা লম্বা মোমবাতি জ্বলছে। আমাকে রেখে দিয়ে ওরা ঘর খালি করে বেড়িয়ে গেল। আমি ঘুমিয়ে পড়লাম। মানসিক ক্লান্তি শরীরের ক্লান্তির থেকে অনেক বেশী কাজ করে। আমি বুঝতে পেরেছি যে আমি বাজে ভাবে ফেঁসে গেছি। এরা কি আতঙ্কবাদী না কি অন্য কিছু। যাই হোক না কেন টোপ ফেলে আমাকে এখানে নিয়ে আসার কারণ কি? কিছুই বুঝতে পারলাম না। ঘুমে আমার কান্না ভেজা চোখ বুজে গেল।
প্রথমেই চোখ খুলে ঠাহর করতে পারলাম না যে কোথায় আছি। চারপাশটা অন্ধকার লাগলো খুব। তারপর ধীরে ধীরে বুঝতে পারলাম যে আমার দিকে ঝুঁকে পড়ে এক জন মাঝ বয়সী মহিলা দাঁড়িয়ে আছেন। সকালে মায়াকে যেমন দেখেছিলাম, এর পোশাকও ঠিক তেমনই। ভেতরে ব্লাউজ বা অন্তর্বাসের কোনও চিহ্ন নেই। হাঁটু অব্দি শাড়ি। মোমবাতি এখনও জ্বলছে। জানি না কতক্ষণ ঘুমিয়েছি। ধড়মড় করে উঠে বসলাম। কিন্তু না এখন শরীর নাড়াতে পারলেও জোর খুব কম। মহিলাটি যেন আমার দুর্বলতার কথা জানে। আমাকে হালকা ধাক্কা দিয়ে শুইয়ে দিল। “খাবার আনছি। একটু খেয়ে নাও।“ ও চলে যাবার আগেই আমি প্রশ্নটা করে বসলাম “আমাকে এখানে নিয়ে আসা হল কেন? আমি কি করেছি? আর তোমরা ঠিক কে? “ ও কোনও উত্তর না দিয়েই বেড়িয়ে গেল। আমি ক্লান্ত শরীরটা নিয়ে পড়ে রইলাম বিছানায়। একবার ইচ্ছে হল উঠে গিয়ে দেখি বাইরে কি হচ্ছে, কারণ বাইরে থেকে অনেক হাঁসি আর জোরালো গলার শব্দ পাচ্ছি। কিন্তু উঠতে পারলাম না। বুঝতে পারছি ওষুধের আবেশ এখনও আমাকে ঘিরে রেখেছে। মহিলা কিছুক্ষণ পরে ফিরে এল। আমাকে ধরে উঠিয়ে বসাল। ওর ছোঁয়ায় বেশ একটা স্নেহের ছোঁয়া ছিল। আমি ওর নগ্ন কাঁধের ওপর নিজের পিঠের ভার ছেড়ে দিলাম। হাতটা মুখের সামনে আসতেই মুখ আপনা থেকে হাঁ হয়ে গেল। আমার মুখে কি যেন একটা দিয়ে দিল। আলু সিদ্ধ ডাল আর ভাত একসাথে মাখিয়ে ডলা পাকিয়ে পাকিয়ে আমাকে খাওয়াচ্ছিল। বোধহয় কিছুটা লঙ্কাও ডলেছে তাতে। ঝাল ঝাল একটা স্বাদ পাচ্ছি জিভে। খাওয়ানো শেষ করে থালাটা টেবিলে রেখে আমার কাছে ফিরে এসে আমার হাত ধরে আমাকে দাঁড় করিয়ে বাইরে নিয়ে গেল। বাইরে একটা জটলা আর সেখানে না জানি কি হচ্ছে। উচ্চ স্বরে মহিলা আর পুরুষদের গলার শব্দ আসছে ওখান থেকে। আমরা কিন্তু ওই দিকে গেলাম না। চলে গেলাম বাড়ির পেছন দিকে। একটা কল ছিল। সেটাকে পাম্প করে আমাকে ইশারা করল জলে মুখ ধুয়ে নিতে। আমিও সেই মতন করলাম। সামান্য একটু দূরে একটা জায়গা দেখিয়ে বলল “ওইখানে গিয়ে টয়লেট করে নাও। রাত্রে আর বেরোতে পারবে না। আর ভুলেও পালানোর চেষ্টা করবে না।“ শেষের কথাটা না বললেও চলত। আমার শরীরে এমন শক্তি নেই যে এখন এই অচেনা জায়গা থেকে পালিয়ে যেতে পারব। আর আমার কাছে কোনও টাকা পয়সা নেই। পালিয়ে যাবই বা কোথায়! ওর থেকে একটু দূরে গিয়ে ফাঁকা অন্ধকার জায়গা দেখে হাঁটু মুড়ে মাটিতে বসে শাড়ি আর সায়া কোমরের ওপর উঠিয়ে নিলাম। সারা দিনের জমা জল বেড়িয়ে গেল শরীরের থেকে। শেষ হওয়ার পর স্বাভাবিক ভাবেই খেয়াল করলাম যোনীদেশ ধোয়ার জল নেই। বুঝলাম এখানে জল না থাকায় এরা কেউ ধোয় না নিজেদের গোপন জায়গাগুলো। আর সেটাই অভ্যাসে দাঁড়িয়ে গেছে। আমি ফিরে এলাম ওর কাছে শাড়ি ঠিক করতে করতে। মাঠে ঘাঁটে সাপ খোপ নেই তো? এখন কি শেষ মেষ সাপের কামড় খেয়ে জীবন দিতে হবে? ও আমাকে নিয়ে আবার ফিরে গেল সেই ঘরটাতে। “শুয়ে পড়ো। কাল সকাল সকাল উঠতে হবে। অনেক কাজ এখানে। রাত্রে টয়লেট যাবার দরকার পড়লে কিছু করার নেই। ওইখানেই করে নিও। কিছু করার নেই।“ আমাকে মাটির ঘরের একটা কোণের দিকে ইঙ্গিত করে দিল। আমি গিয়ে শুয়ে পড়তেই ও মোমবাতিটা নিভিয়ে দিয়ে চলে গেল। যাওয়ার আগে দরজা বন্ধ করে দিল। শব্দ শুনে মনে হল যে বাইরে থেকে তালা মেরে দিয়ে চলে গেছে।
না সেই রাত্রে আর আমার ঘুম ভাঙেনি। ঘুম ভাঙল একদম কাক ডাকা ভোরে। তবে কাকের ডাকে আমার ঘুম ভাঙেনি, ঘুম ভেঙ্গেছে কালকের রাতে দেখা সেই মহিলার ঠ্যালা খেয়ে। “উঠে পড়ো, বেলা হয়ে গেছে। হাত ঘড়ির দিকে চোখ ফেরাতে দেখলাম ঘড়িটা হাতে নেই। “ মিন মিন করে জিজ্ঞেস করলাম “কটা বাজে?” বলল “ সাড়ে পাঁচ। চলো মুখ ধুয়ে নাও। আমারই ব্যাগ থেকে আমার ব্রাশ আর নিয়ে এসেছে। টেবিলের ওপর রেখে দিয়ে চলে গেল। আজ দিনের আলোয় নেশাহীন অবস্থায় ভালো করে মহিলা কে দেখলাম। বয়স ছত্রিশ সাইত্রিশ হবে। তার থেকে খুব বেশী হতেই পারে না। শরীরের গঠন বেশ লোভনীয়। এখনও ব্লাউজ পরে নি। আলোয় বুঝতে পারলাম শরীরের নিচের ভাগেও শাড়ির নিচে আর কিছু নেই। আমি বুঝতে পারলাম এরকম পরিবেশে বিদ্রোহী হয়ে তেমন কোনও লাভ নেই। সুযোগ বুঝে কোপ মারতে হবে। এখনই পালানোর চেষ্টা করলে সেটা হবে ছেলেমানুষী। আমি ব্রাশে পেস্ট মাখিয়ে বেড়িয়ে এলাম। বাইরে বেড়িয়ে এসে দেখলাম অনেক মেয়ে আর কালকের দেখা ছেলেগুলো দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কেউ দাঁতন করছে, কেউ বা ব্রাশ করছে। সবার চেহারাতেই একটা শিক্ষার ছাপ স্পষ্ট। অথচ আশ্চর্য এই যে এরা এখানে কি করছে সেটা বুঝতে পারছি না। সেই মহিলা আমার আগে আগেই চলেছে সেই কল পাড়ের দিকে। খেয়াল করে দেখলাম কোনও মেয়ের গায়েই ব্লাউজ বা অন্তর্বাসের চিহ্ন নেই। অনেকে তো এমন পাতলা শাড়ি পরেছে যে ওদের যৌন কেশের আভাসও বোঝা যাচ্ছে শাড়ির বাইরে থেকে। এখানে থাকতে হলে আমাকেও বোধহয় এমন ভাবেই থাকতে হবে এরপর থেকে। কিন্তু পালাতে হলে পালাব কি করে? কিছু দিন আগে একটা সিনেমা দেখেছিলাম। তাতে জার্মানির ক্যাম্প থেকে এক যুদ্ধ বন্দীর পালানোর ঘটনা আছে, মানে সেটা নিয়েই গল্প। মনে পড়ে গেল যে কোথাও থেকে পালাতে হলে প্রথমেই এখানেকার ভূগোলটা বুঝে ফেলতে হবে। চোখ কান খোলা রাখতে হবে। আর সবার আগে কিছু টাকার ব্যবস্থা করতে হবে। আর তারও আগে বুঝতে হবে এরা কারা আর আমার কাছ থেকে এরা কি চায়। আর সেই সাথে বিশ্বস্ত হয়ে উঠতে হবে এদের লিডারের কাছে। একটু সময় সাপেক্ষ ব্যাপার বুঝতে পারছি, কিন্তু এছাড়া অন্য কোনও উপায় নেই। আর একবার পালিয়ে যেতে পারলে পুলিশ ডেকে এনে সব কটাকে যদি না খুন করিয়েছি তো আমার নাম বদলে দেব। অন্তত জেলের ঘানি তো টানাবোই টানাবো। নইলে শান্তিতে মরতেও পারব না। নির্লজ্জের মতন সবার সামনে দাঁতে ব্রাশ ঘষতে ঘষতে এগিয়ে গেলাম কলের দিকে। ওখানেও অনেক ভিড়। অনেকেই আমার দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছে। তবে তেমন ভাবে তাকিয়ে দেখার মতন ভাব নেই কারোর মধ্যে। একজন নতুন প্রাণী এখানে এসেছে, ব্যস এই যা। আমি কলের কাছে এগিয়ে যেতেই সবাই কলের সামনে থেকে সরে দাঁড়াল। একজন এগিয়ে এসে পাম্প করা শুরু করল। আমি মুখ ধুয়ে ওখান থেকে সরে পড়লাম। প্রাতকৃত্য করার প্রয়োজন, কিন্তু কোথায় যাই। ওই মহিলা দেখলাম ঘরে ফিরে এসেছে। আমি যখন চারপাশের মেয়েদের দেখতে ব্যস্ত ছিলাম তখন উনি কোথায় যেন চলে গিয়েছিল। এখন আবার ফিরে এসেছে। আমার অবস্থা বোধহয় বুঝেই আমাকে বলল “ওইটা নিয়ে মাঠে চলে যাও। বেশীক্ষণ লাগিও না। অরূপদা অপেক্ষা করছে।“ কিছুই করার নেই। মগটা নিয়ে আবার এগিয়ে গেলাম কলের দিকে। আবারও একজন মগের ভেতর জল ভরে দিল আমার। বেশ বড় মগ। আমি এগিয়ে গেলাম মাঠের দিকে। একটু দূরে দূরে অনেকগুলো মেয়ে আর দু একটা ছেলেও এসেছে তখন। ভীষণ অস্বস্তি হচ্ছে ভেতর ভেতর। কিন্তু আর কিছু করার নেই। একটা ছেলে আর একটা মেয়ের মাঝখানে গিয়ে শাড়ি আর সায়া তুলে বসে পড়লাম। কারোর মুখে কোনও কথা নেই। কাজ শেষ করে পরিষ্কার করে ধুয়ে ফিরে এলাম ঘরে। এখন অপেক্ষা করার ছাড়া গতি নেই। একটু পরে সেই মহিলা আবার ফিরে এল। হেঁসে বলল “ফ্রেশ হয়ে গেছ?” এও ইংরেজি ঝাড়ছে দেখে আরও আশ্চর্য হয়ে গেলাম। মাথা নাড়িয়ে বোঝালাম হ্যাঁ। “আমার নাম মিনতি।“ বলল আমাকে। আমি বললাম “রুমি।“ ও হেঁসে বলল “নাইস তো মিট ইউ রুমি মাই ফ্রেন্ড। এসো আমার সাথে। বিশ্বাস করো, এখানে থাকতে খারাপ লাগবে না।“ শালা একবার বেরোই তোমাদের মজা দেখাচ্ছি। কিন্তু ভাবখানা করে রাখলাম যেন আমি ভীষণ ঘাবড়ে রয়েছি, মানে ভয়ে কাঁপছি রীতিমত। ভয় যে ছিলই সেটা আর নতুন করে কি বলব। তবে একটা জিনিস বুঝলাম পালের গোদার সাথে দেখা করতে যাচ্ছি, সুতরাং কালকে আমার ;.,ের কথাটা ওর সামনে ভালো করে খুলে বলব। ওই আধা ডাক্তারের চাকরিটা আজই খাবো আমি।
আরেকটা কুঁড়ে ঘরের মধ্যে আমাকে নিয়ে গেল। ঘরের জানলা দরজা সব খোলা। ছোট ঘর। একটা আধ ভাঙ্গা কাঠের টেবিল আর দুটো চেয়ার। একটা জলের কুঁজো। অরূপদা কে দেখলাম। এ হল সেই কাল দেখা লিডার। চেয়ারে একটা মেয়ে বসেছিল আমার মতন পোশাকে। দেখে বুঝলাম ও নিজেও খুব ঘাবড়ে আছে এই নতুন পরিস্থিতিতে। আমার সাথে একবার শুধু চোখাচুখি হল মেয়েটার। ও মুখ ঘুরিয়ে নিল। অরূপদা বিছানায় বসেছিল। আমাকে দেখে উঠে দাঁড়াল। ইশারায় বসতে বলল চেয়ারে। মিনতি কে ইশারায় ঘর থেকে চলে যেতে বলল। আমি বসতেই উঠে এসে আমার সাথে হাত মিলিয়ে বলল “ওয়েলকাম তো আওয়ার ক্যাম্প।“ আমি কিছু বলে ওঠার আগেই আমার পাশে বসা মেয়েটি বলে উঠলো “আপনার কি উগ্রপন্থী, আতঙ্কবাদী না অন্য কিছু?” আমি ওর কথার খেই ধরে নিয়ে বললাম “না কি নকশাল? আর আমাকে এখানে ধরে আনার কি মানে? আপনার কোন পাকা ধানে আমি মই দিয়েছি। ” অরূপদা একটু হেঁসে বলল “সব কথা খুলে বলার জন্যই তোমাদের এখানে ডেকে এনেছি। তবে তার আগে একটা কথা বলে দি। সেটা হল আমার পরিচয়। আমার নাম অরূপ সান্যাল। * ইউনিভার্সিটি থেকে পাশ করেছি, মাস্টার্স করেছি। পরে পি এইচ ডি ও করেছি। তবে যাক সে কথা। এই ক্যাম্পটার দখলে আমি। আমাদের আরও অনেক গুলো শাখা আছে। হ্যাঁ, আমাকে সবাই অরূপদা বলে ডাকে। তবে নিয়ম হল আমাকে আপনি করে বলতে পারবে না তোমরা কেউ। এইবার আসি তোমাদের প্রশ্নের উত্তরে।“ একটু থেমে উঠে গিয়ে একটা গ্লাস নিয়ে গিয়ে কুঁজো থেকে জল নিয়ে গলায় ঢেলে নিল। ও নিজে না বললেও আমি আর এখানে কাউকে আপনি সম্বোধন করতে পারব না, কারণ ভেতর থেকে আসবে না। গ্লাসটা কুঁজোর ওপরেই উল্টো করে রেখে দিয়ে ফিরে এল বিছানায়। পদ্মাসনে উঠে বসল বিছানার ওপর। ওপরের দিকে তাকিয়ে কি যেন একটা ভেবে নিল, তারপর শুরু করল নিজের কথা। এখানে বলে রাখি এই সব আঁতেলদের আমি একফোঁটা সহ্য করতে পারি না। পৃথিবীর কোনও লিডার, ধর্মগুরু বা সত্যিকারের ইন্টলেকটুয়াল আঁতেল হয় বলে দেখিনি। তবে আজকের দিনে এই সব আঁতেলদেরই অনেক শিক্ষিত যুবক যুবতীরা মাথায় তুলে রেখেছে। আমার ক্ষমতা থাকলে এদের পেছনে এক লাথি মেরে পৃথিবী থেকে বিদায় করে দিতাম। এদের একটা সাধারণ জিনিস হল এই যে এরা অনেকক্ষণ ধরে ভেবে ভেবে কমন সেন্স মার্কা কিছু কথা বলবে আর চিবিয়ে চিবিয়ে বলবে। মাঝে মাঝে এক রাশ নিঃশ্বাস জুড়ে দেবে, ভাব খানা এমন যে আত্মমন্থন করে কথা গুলো পেট থেকে বের করে আনছে। এদের সবটাই আমার নাটক বলে মনে হয়। এদের চিবিয়ে চিবিয়ে কথা বলার স্টাইল দেখলে মাঝে মাঝে মনে হয় যে পিছনে গিয়ে ছয় কি সাতটা হামানদিস্তার বাড়ি মারি, এক দফায় সব কথাগুলো এদের পেট থেকে বেড়িয়ে আসবে, সামনে বসে যে বা যারা শুনছে অন্তত তাদের এই আতলেমি সহ্য করতে হবে না। এর ক্ষেত্রেও দেখলাম এর কোনও ব্যতিক্রম হল না।
একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে ও শুরু করল নিজের ভাষণ “ হ্যাঁ তোমরা ঠিকই বলেছ, আমি আর আমরা এখানে যারা আছি তাড়া উগ্রপন্থী। যেমন আগে বললাম আমাদের অনেক শাখা আছে। তবে আমরা নকশাল নই। ওদের সাথে আমাদের কোনও সম্পর্ক নেই। আমরা কোনও রাজনৈতিক দলের সাথেও সম্পর্ক রাখি না। আমরা ওপেন রিলেশনে বিশ্বাস করি। সে যাই হোক না কেন মানসিক বা শারীরিক। তবে জোর খাটানো পছন্দ করি না মোটেই। “ আমি জানি এই লেখাগুলো পড়তে কারোর কয়েক সেকন্ডের বেশী লাগতে পারে না। কিন্তু এই মহান লিডার এই কথাগুলো চিবিয়ে চিবিয়ে বলতে সময় নিল প্রায় দশ মিনিট। মাঝে মাঝেই সবার চিন্তায় উনি কোথায় যেন হারিয়ে যাচ্ছিলেন। ন্যাকা। লোকটা সুবিধের নয় সেটা প্রথম আলাপেই আমার মনে হল। এর প্রিয়ভাজন হয়ে উঠতে হবে। তবে, একে নজরে নজরে রাখতে হবে। ও আরও কিছু বলতে যাচ্ছিল কিন্তু তার আগেই আমি ফস করে বলে বসলাম “ আপনি, সরি তুমি বলছিলে যে তোমরা জোর করে কিছু করো না, কিন্তু কাল আমার সচেতন অসাড় শরীরটাকে এখানে নিয়ে আসার আগে তোমাদের ওই মাঝ পথে পড়াশুনা ছেড়ে দেওয়া আধা ডাক্তারটা আমাকে ;., করেছে। সেটার জন্য তার কি শাস্তি হবে আমি জানতে চাই।“ অরূপ কিছুক্ষণ আমার মুখের দিকে যোগীর মতন চোখ নিয়ে তাকিয়ে থাকলো। তারপর হেঁসে বলল “ না ও করতে পারে না। ওকে আমি অনেক দিন থেকে চিনি। ও শুধু তোমাকে পরীক্ষা করে দেখেছে যে তুমি ভারজিন কি না। ব্যস আর কিছু নয়। সেই নেশাগ্রস্ত অবস্থায় তোমার কিছু ভুল হয়েছে। ও যে তোমাকে পরীক্ষা করেছে সেটা ও নিজের মুখেই কাল রাত্রেই আমাকে স্বীকার করে গেছে। আর ...” একটু থেমে একই রকম হাঁসি মুখে বলল “ আর ও বলেছে তুমি ভারজিন নও। আর ওর ধারণা তুমি এর আগে অনেকবার পুরুষ বা পুরুষদের সাথে সহবাসে লিপ্ত হয়েছ। “ আমার কানগুলো গরম হয়ে গেল। আমার পাশে বসে থাকা মেয়েটার মধ্যে কোনও বিকার লক্ষ্য করলাম না। “ভার্জিন কি না সেটা চেক করার একটাই কারণ। যদি তুমি সত্যিই কোনও দিন মন আর শরীর দিয়ে আমাদের কমরেড হয়ে উঠতে পারো তো বুঝতে পারবে যে আমাদের কিছু কাজে মেয়েদের শরীরের সাহায্য নিতে হয়। সব কিছু বল প্রয়োগ করে হয় না, বা বলা ভালো যে সেফ ও নয়।” অরূপ চুপ করার কয়েক সেকন্ড পর মেয়েটা বলে উঠলো “ তার মানে আপনি বলতে চান যে একটা মেয়ে ওই হেভি সিডেটিভের কারণে বুঝতে পারবে না যে সে রেপড হচ্ছে কি না?” হেঁসে উঠলো জোড়ে। “আমি তা বলি নি, কিন্তু ও তার আগে ড্রিঙ্ক করেছে গাঁজা টেনেছে। তাই ওর হ্যালুসিনেসন হওয়াটা আশ্চর্য কিছু নয়।“ মেয়েটা অরুপের এই উত্তরে আরও জোড়ে হেঁসে বলে উঠলো “ হ্যালুসিনেসন কাকে বলে জানা আছে? * ইউনিভার্সিটিতে কি ডাক্তারি পড়ানো হয়? এই লোকগুলোকে মুরগি বানিয়ে রেখে দিয়েছেন সেটা বুঝতে পারছি, আর এখন আমাদের ব্রেন অয়াশ চলছে। ভালো। ব্রেন থাকলে সেটা অয়াশ করা এতটা সোজা হবে না সেটা আগেই বলে রাখছি। রেপ করতে পারেন, কিন্তু মাথা ঘোরাতে পারবেন না।“ কাল আমি যে কটা জিনিস লক্ষ্য করেছিলাম দেখলাম মেয়েটা বোকার মতন আগ বাড়িয়ে সেইগুলো জিজ্ঞেস করে বসল। “ বাই দা ওয়ে, এখানে অধিকাংশ মেয়েদের পেটে স্ট্রেচ মার্ক দেখছি। কেন? সতের বছরের একটা মেয়ের পেটেও দেখেছি। একটু যদি খুলে বলেন তাহলে খুশি হব।“ একটু সুযোগ পেলে আমি হয়ত ওকে থামিয়ে দিতাম। কারণ কিছু জিনিস নিজেরা খুজে বার করলে বেশী ভালো হয়। কিন্তু যখন প্রশ্নটা ও করেই দিয়েছে তখন আর কিছুই করার নেই। কান খাড়া করে রইলাম উত্তরের প্রত্যাশায়। উত্তর এলো আর সেটা এতটাই খেলো আর শস্তা যে কি বলব। লোকটা যে একটা ভণ্ড সেটা বুঝতে আর বাকি রইল না। * ইউনিভার্সিটির ডিগ্রী সত্যি আছে কিনা সেটা একবার হলেও দেখার কৌতূহল আমাকে পেয়ে বসেছে। অবশ্য এখন চাইলে আমি স্থির জানি যে কিছু একটা দেখিয়ে দেবে। তবে সেটা জাল না আসল সেটা জানতে হবে সুনিশ্চিত ভাবে।
অরূপ আবার উপরের দিকে খানিকক্ষণ তাকিয়ে বসে রইল। আরেকটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে কিছু একটা বলতে যাচ্ছিল, কিন্তু এইবার আমি একটা কথা মুখ ফস্কে না বলে পারলাম না। “একটা কথা বলব? তুমি করেই বলছি কারন সেটাই তোমার নির্দেশ। এত থেমে থেমে আঁতেলদের মতন কথা আমার ঠিক পছন্দ নয়। তুমি যে আকাশ থেকে কথা পেড়ে আনছ না সেটা কমন সেন্স। সোজা কথা সোজা ভাবেই বলে দাও। এই ধ্যাস্টামি গুলো বাঁচিয়ে রাখো অন্য দের জন্য। যাদের তুমি ব্রেন অয়াশ করে ফেলেছ ইতিমধ্যে। টেবিলের ওপর বিবেকানন্দের বই দেখছি। লোকটা আদৌ তোমার মতন আঁতেল ছিলেন না। অল্প কথায় না ভেবে ঝেড়ে ফেলো। মনে ধরলে তাতেই ধরবে আর তা না হলে পুরোটাই অন্তত আমার কানে নাটকের মতন শোনাবে। বেসিকালি এই চিবিয়ে চিবিয়ে কথা বলাটা আমি সহ্য করতে পারি না।“ শেষের কথাগুলো বললাম বেশ জোড়ে আর চিবিয়ে চিবিয়ে যাতে ওর আঁতে ভালো মতন ঘা দেওয়া যায়। ও কিছু একটা উত্তর দিত কিন্তু দিতে পারল না। ওর মুখে অবশ্য হাঁসিটা এখনও লেগে আছে। এটা অধিকাংশ ক্ষেত্রে ব্রেন অয়াশ করার ক্ষেত্রে কাজ করে। মুখ থেকে হাঁসি মিলিয়ে যেতে দেওয়া যাবে না। সাইকোলজির শেষ নির্দেশ। কিন্তু ওর উত্তর আর আমাদের শোনা হল না। কারণ বাইরে কি একটা চেঁচামেচি শুনেই ও উঠে পড়ল আর সেই সাথে আমরাও। একটা ছেলে হাঁপাতে হাঁপাতে এসে বলল “সুজাতা দিদি ফিরেছে। গুলি খেয়েছে। পেটে একটা আর পিঠে একটা।“ আমি আমার পাশে বসা মেয়েটার দিকে একবার তাকালাম। ও নিজেও আমার দিকে তাকিয়ে আছে। জীবনে কোনও দিন গুলি বার করি নি। কোনও কথা না বলে আমরা দুজনেই উঠে দাঁড়ালাম। অরুপের পিছন পিছন ছুটলাম সাম সুজাতার শরীর পরীক্ষা করতে। অন্তর্বাস না থাকায় দুজনেরই ভারী অংশগুলো অশ্লীল ভাবে লাফাচ্ছিল , কিন্তু সে দিকে খেয়াল করার মতন সময় আর এখন নেই আমাদের হাতে। ছুটতে ছুটতেই আমি মেয়েটাকে জিজ্ঞেস করলাম “তুমিও কি ডাক্তার?” বলল “আমার নাম অদিতি। আমি “anesthetist”। তুমি?” ছুটতে ছুটতেই বললাম “গাইনো। তবে ছেলেদের কিছু চিকিৎসাও আমি করেছি, অন্তত ডিগ্রী আছে। তবে কোনও দিন গুলি...” কথা শেষ হবার আগেই একটা খোলা জায়গায় গিয়ে পৌঁছালাম। অরূপ আমাদের অনেক আগেই পৌঁছে গেছে। আমাদের থেকে অনেক বেশী স্পীডে দৌড়ায় আর সেটাই স্বাভাবিক। সুজাতা নামক মেয়েটিকে সবাই ঘিরে রেখেছে। আমার কালকের রেপিস্ট মাটিতে বসে ওর নাড়ি পরীক্ষা করছে। কিছু একটা বলতে যাচ্ছিল কিন্তু আমাকে আর অদিতিকে দেখেই থেমে গেল। বলল “এই জাক্তার এসে গেছে। আসল ডাক্তার আর পুরো পুরি ডাক্তার। এরাই দেখুক।“ উঠে গেল। অরূপ বলল “ সব ব্যবস্থা আছে। তবে ওষুধ খুব বেশী নেই।“ আমি একটু পরীক্ষা করে উঠে দাঁড়িয়ে বললাম “এখানে কোনও আর্মি ক্যাম্প নেই? বা সার্জেন? আমি সার্জারি করি বটে তবে এই জিনিস আগে কখনও করি নি। “ আমাকে সুজাতা বলল “চিন্তা নেই অনেক দিন আগেই মরতাম, এতদিন অরূপদা বাঁচিয়ে রেখেছিল। মরলে ক্ষতি নেই। তবে একজন কমরেডের হাতে মরব এই যা শান্তি। আর্মি আমাকে দেখলে এমনি মেরে ফেলবে। ওদের দোষ দি না। বুর্জোয়া সমাজটাই আমাদের শ্ত্রু। “ এরা কি সত্যি এই ভণ্ডটাকে এত বিশ্বাস করে। হয় আমার বোঝার ভুল বা লোকটা সত্যি একটা বিরল লোক। বললাম “অপারেট করতে হবে।“ অরূপ প্রায় চেঁচিয়ে উঠল “হ্যাঁ হ্যাঁ। তবে তাই করে ফেলো। ওকে নিয়ে আয় তোরা সবাই।“ এটাও একটা আতলেমির লক্ষণ। সবাই কে বয়স, স্থান কাল পাত্র বিচার না করে “তুই তুই” করে সম্বোধন করা। এটাও নাকি ইন্টেলেক্ট প্রদর্শন করার একটা চিহ্ন। চারপাশে চোখ ঘুরিয়ে দেখলাম কয়েকজন মহিলার বয়স ওনার থেকেও বেশী। যদিও বেশ সুঠাম ওদের স্বাস্থ্য। তবে বয়স ব্যাপারটা একটা সময়ের পর ঢেকে রাখা যায় না, অন্তত মেয়েদের ক্ষেত্রে।
সত্যি সিডেটিভ ড্রাগ খুব কম আছে এখানে। কিন্তু দেখলাম অদিতি অদ্ভুত নৈপুণ্যের সাথে ঠিক যেটুকু দরকার ততটুকু দিয়ে ব্যাপারটা ম্যানেজ করে নিল। আধুনিক হাসপাতালের ওটি তে যেসব সুযোগ সুবিধা পাওয়া যায় তার কিছুই নেই এখানে। তবু আমাদের দুজনকে লড়তে হবে এই মেয়েটার জন্য। সুজাতা অজ্ঞানও হল না। কিন্তু ঝিমিয়ে গেল। কোনও দিন গুলি বের না করলেও কাটা ছেঁড়া শুরু করে দিলাম। সময় খুব কম। অদ্ভুত মনের জোর মেয়েটার। মাঝে মাঝে চিৎকার করছিল বটে, কিন্তু বেঁচে গেল। আগের দিনে জ্ঞান থাকা অবস্থাতেই হাত পা চেপে ধরে শল্য চিকিৎসা করা হত। আজ তাই করতে হল। এ কোন সেঞ্চুরি তে পড়লাম রে বাবা। কিন্তু অদিতির ওষুধের গুনে আর ডোসে মেয়েটার কষ্ট যে অনেকটা কমে গেছে সেটা বুঝতে পারছিলাম। দুটো গুলি বার করে, জায়গাগুলো কে ডিসইনফেক্ট করে স্টিচ করে দিলাম। ব্যান্ডেজ বেঁধে দিলাম। সুজাতা শেষ পর্যায়ে ঝিমিয়ে পড়েছিল। বার বার দেখতে হচ্ছিল যে বেঁচে আছে কি না। এখানে যন্ত্রপাতি খুব একটা নেই। তাই হাতে ধরে ধরে দেখতে হচ্ছে। না মেয়েটা বেঁচে গেল। তিন চার রকমের ইনজেকশন দিয়ে কাজ শেষ করলাম দুজনে। অদ্ভুত জিনিস হল আমাদের গোল করে ঘিরে দাঁড়িয়ে সবাই আমাদের কার্যকলাপ দেখছিল এতক্ষন। কারোর বমি পায় নি, কারোর মাথা ঘোরায় নি এত রক্ত দেখে। কেউ ওখান থেকে সরে যায় নি। আমরা কাজ শেষ করতেই অরূপ চেঁচিয়ে উঠল “আমি হ্যাপি, ভীষণ হ্যাপি আমার নতুন কমরেডদের নিয়ে। এই প্রথম গুলি খেয়ে এসে মনে হয় বেঁচে গেল আমার বোন। এর আগে সবাই চলে গেছে আমাকে ছেড়ে। কিন্তু সুজাতা ছিল আমার বোন। ও বেঁচে গেল। নিজের বোন না হলেও ওকে আমি সবার থেকে বেশী বিশ্বাস করতাম। আমি তোমাদের ওপর ভীষণ খুশি। আমি কৃতজ্ঞ। “ শেষ কথা গুলো বলল আমার আর অদিতির দিকে তাকিয়ে। আমাদের মধ্যে একবার চোখাচুখি হল। আমি ইশারায় বললাম এখন মুখ না খুলতে। স্বস্তি পেলাম এই দেখে যে অদিতি মুখ থামিয়েছে। কিছু একটা বলতে গিয়েও চেপে গেল। সব শেষে দেখলাম রমা এসে মিনতির সাথে ওকে আস্তে আস্তে হাঁটিয়ে নিয়ে চলে গেল কোনও একটা ঘরের দিকে। সত্যি অদ্ভুত ক্ষমতা আর মনের জোর । এই অবস্থায় হাঁটছে কি করে?