02-02-2019, 05:11 PM
(This post was last modified: 02-02-2019, 05:12 PM by bourses. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
১লা মে, সকাল ৮:১০
‘একটা দিন যদি একটু যদি সকাল সকাল ওঠে লোকটা... জানে তো বাজার যেতে হবে... আজ আবার টুনির মা কাজ করতে এলো না, ছুতো নাতায় ছুটি করবে...’ তাড়াহুড়ো করে লুচি বেলার জন্য মেখে রাখা ময়দার তাল থেকে লেচি ছিড়তে ছিড়তে গজগজ করতে থাকে সুমিতা। পাশে নিতা লুচি বেলার জন্য বেলন চাকি ঠিক করছে, লেচিগুলো পেলেই বেলতে শুরু করে দেবে সে। আজকের জলখাবারে লুচি আর বেগুনভাজা... সাথে পান্তুয়া।
বড্ড বেলা হয়ে গিয়েছে... কখন সবাইকে জলখাবার দেবে আর কখন রান্না চাপাবে। নিতাটা ধরেছে আজ ছুটি রয়েছে বলে ওকে নিয়ে একটু বেরোবার জন্য... ওরা ঠিক করেছে দুপুরে একটু তাড়াতাড়ি করে খেয়েই বেরিয়ে পড়বে... লেক মার্কেটে যাবে... ফিরে যাবার আগে নিতার কিছু মেয়েলি টুকটাক কেনাকাটা রয়েছে... সেগুলো বৌদিকে সাথে নিয়ে কিনে ফেলতে চায়... আবার কবে কলকাতায় আসা হবে। সুমিতা অবস্য নিতাকে বলেছিল... ‘যা না, সোমেশকে সাথে নিয়ে ঘুরে আয়... ওর ও ভালো লাগবে...’ শুনে নিতা ফোঁস করে উঠেছিল... ‘তোমার নন্দাইয়ের কথা আর বোলো না... ছুটি থাকলেই সারাদিন টিভির মধ্যে ঢুকে বসে থাকবেন বাবু, হয় খেলা না হয় খবর... আর তা ছাড়া এই সব মেয়েলি জিনিস কিনতে ওকে নিয়ে গিয়ে আমি ফাঁসবো নাকি? কিছু বোঝে নাকি ও? ওর চোখে সবকিছুই ভালো... যেটাই দেখাবো... হ্যা গো, এটা ভালো... উত্তর দেবে... হ্যা হ্যা, ভালোই তো... দূর দূর... ওকে নিয়ে গেলে চলবে না... কোন চয়েসই নেই ওর...’ শুনে হেসে ফেলেছিল সুমিতা... ‘ও, আমার নন্দাইয়ের চয়েস নেই? তাহলে কি করে তোকে পছন্দ করল শুনি?’ শুনেই নিতার ফর্সা গাল দুটো লাল হয়ে উঠেছিল... মাথা নিচু করে উত্তর দিয়েছে... ‘জীবনে ওই একবারই ভালো চয়েস করতে পেরেছিল... তারপর থেকে ডাহা ফেল...’ বলেই হো হো করে দুজনেই হাসতে থেকেছে।
সমু কিচেনে ঢুকে স্ত্রীর উদ্দেশ্যে বলে ওঠে... ‘কি হোলো? এই তো উঠে পড়েছি... বাব্বা, ছুটির দিনেও মহারানী একটু ঘুমাতে দেবে না... অন্যদিন তো ভোর হোতে না হোতেই ঠেলে তুলে দাও... তখন কি আমি ল্যাদ খেয়ে পড়ে থাকি? দেখ নিতা, আমার কি হাল হয় তোর বৌদির হাতে পড়ে...’ তারপর নিজের বোনের দিকে ফিরে বলে, ‘কি রে নিতা, একটু চা খাওয়াবি না?’
সুমিতা জানে সমুর ঘুম থেকে উঠেই চা চাই... না হলে ওকে দিয়ে কোন কাজ করানো যাবে না... তাই ননদের দিকে ফিরে বললো, ‘তুই লুচিটা না বেলে বরং একটু দাদার জন্য চায়ের জল চাপিয়ে দে, আমার এদিকটায় লেচি পাকানো হয়ে গেছে, আমি বরং লুচি গুলো বেলছি... তুই চা করে ভাজতে শুরু করে দিস...’ তারপর স্বামীর দিকে তাকিয়ে বলল, ‘ও, আমার পাল্লায় পড়ে জীবনটা একেবারে নরক হয়ে গেছে, তাই তো? এ কথা তুমি বললে তো? নিতা শাক্ষী রইল কিন্তু!’
তাড়াতারি করে সমু নিজের কথা সামলায়, ‘আরে না, না, সেটা বলছিনা, এই ভাবে সব কথা ধরে নাকি সোনা... তুমি না আমার... বলে সুমিতার ঘনিষ্ট হবার চেষ্টা করে সে। সুমিতা চট করে আটকায় তাকে, ইশারায় নিতাকে দেখায়... সমুও চুপ করে ভালো ছেলের মত মুখ করে দাঁড়িয়ে পড়ে। নিতা দাদাদের প্রেম দেখে মিচকি মিচকি হাসতে থাকে হাতের কাজ করতে করতে।
সুমিতা সমুর উদ্দেশ্যে বলে, ‘এই, আজকে একটু ভালো দেখে পাঁঠার মাংস নিয়ে আসবে তো বাজার থেকে... দুপুরে ভাবছি মাংস আর ভাত করে দেব... বেশি কিছু রাঁধবো না আর... না হলে তাড়াতাড়ি সারতে পারবো না... আমরা আবার একটু বেরুবো।’
শুনে সমু নাকটাকে কুঁচকে বলে, ‘শুধু মাংস আর ভাত? ব্যস? এ বাবা, ছুটির দিনে শুধু দুটো পদ? এ আবার হয় নাকি, একটু মাছ হবে না?’
‘উফফফফ... একটা দিনও বাবুর মাছ ছাড়া চলবে না... মেছো বাঙালী কোথাকার...’ তারপর কি ভেবে সুমিতা বলে, ‘আচ্ছা, তোমাকে ভাবতে হবে না... এই নিতা... চা-টা করে না দেখ তো, ডীপ ফ্রিজে বোধহয় ট্যাংরা মাছ রাখা আছে... ওটাও না হয় একট সর্ষেবাটা দিয়ে নেড়ে দেব, বাবুর ইচ্ছা যখন... ওনার আবার ট্যাংরা মাছ খুব প্রিয়।’
সুমিতার কথা শুনে নিতা পাশ থেকে বলে ওঠে, ‘ওই তোমার দোষ বৌদি... তুমিই দাদাকে আসকারা দিয়ে মাথায় তুলে রেখেছ... যেই দাদা বলল মাছ হবে না? অমনি ওনার মাথায় খেলে গেল কি করে নিজের বরকে মাছ খাওয়াবে... সত্যিই পারোও বটে... আমার বর বললে বলতাম খেতে ইচ্ছা হয়েছে যাও বাইরে থেকে অডার দিয়ে আনাও, আমি রাঁধতে পারবো না...।’
ননদের কথা শুনে ইষৎ হাসে সুমিতা... মনে মনে ভাবে... তোমার বর ব্যাঙ্গালোর শহরে বিদেশী কোম্পনীতে বিশাল চাকরি করে... তোমার ইচ্ছা হলেই যখন তখন বাইরে থেকে অডার দিয়ে খাবার আনিয়ে নাও... কিন্তু আমাদের কত বুঝে চলতে হয় সেটা তো জানো না... আজ তোমরা রয়েছ বলে এত রকমের জলখাবার আর রান্না হচ্ছে... তা না হলে ওই একরকম করেই আমরা চালিয়ে নিই... সমুও যে খুব খারাপ চাকরি করে তা নয়... একটা বেসরকারী অফিসের আধিকারিক পদেই রয়েছে সেও, কিন্তু এই তিন কামরার ফ্ল্যাটের জন্য প্রতিমাসের কিস্তির টাকা আর বাবলুটার কলেজের পড়ার খরচা চালিয়ে কতটুকুই বা হাতে থাকে... এই ভাবেই তো সংসার চালিয়ে নিয়েই চলেছে সে... বাইরের কারুকে বুঝতে দেয় না বলেই না... আজ যে কত দিন পর তোমার দাদা পাঁঠার মাংস আনবে সে সেই জানে... অন্যদিন হলে তো পঞ্চাশ টাকার মুর্গির মাংস ছুটির দিনে বাঁধা... আর প্রতি রবিবার একবার করে সাপ্তাহিক মাছ এনে ডীপ ফ্রিজে ঢুকিয়ে রাখা... সেটা দিয়েই সারাটা সপ্তাহ কাটিয়ে দেয়া। অবস্য তাতে তার কোন ক্ষোভ নেই... সেও জানে এই ভাবে না চললে বাবলুটা মানুষ হবে না... ছেলেটার জন্যই তো সব... একদিন বাবলু যখন বড় চাকরি করবে, তখন আর তাদের এই ভাবে কষ্ট করতে হবে না...। ভাবতে ভাবতে মুখ তুলে স্বামীর দিকে তাকায়। সমুর বুঝতে বাকি থাকে না স্ত্রীর মনের মধ্যে কি চলছে... স্মিত হেসে মাথা হেলায় সে... যেন চোখের ভাষায় স্ত্রীকে বলে... ভাবছ কেন... ও ঠিক ম্যানেজ হয়ে যাবে... চিন্তা কর না... আমি তো আছি...। সমুর চোখের ভাষায় ভরসা পায় সুমিতা... সেও জানে... সমু যখন আছে, তখন সব ঠিক হয়ে যাবে... সে যে ওর জীবনের সব থেকে বড় ভরসা... ও যে সব ওর কাছে...।
‘তুমিও খাবে তো, বৌদি?’ নিতার প্রশ্নে চটক ভাঙে সুমিতার। স্বামীর থেকে মুখ ফিরিয়ে লুচি বেলায় মন দেয় সে... ‘না রে, আমি আর খাবো না... ওই একবার সকালে হলেই হয়... আমার চায়ের অত নেশা নেই... তুই বরং তোর দাদার সাথে সোমেশ আর বাবাকেও চা দিস... বুঝলি?’
শশুর মশাইয়ের কথা মনে আসতেই তার মনে পড়ে যায় গত দিনের কথাগুলো। গতকাল প্রায় সারাটা দিন সে খেয়াল করেছে শশুর মশাইকে অনেকবার করে বাথরুমে যেতে... আর শুধু যেতে না... বেশ কিছুটা সময় নিয়ে বাথরুমেই ঢুকে থাকছেন...। পরে ওয়াশিং মেশিনে আরো বেশ কয়টা লুঙ্গি খেয়াল করেছে সে... এ কি শুরু করেছেন উনি... এই ভাবে এত হস্তমৈথুন করলে তো শরীর খারাপ হয়ে যাবে... মুখে কিছু বলতেও পারছে না সে... সমুকেও এ কথা বলা যায় না... না যায় নিতাকে কিছু বলা... কি যে একটা ফ্যাসাদে পড়ল সে... তার বুঝতে অসুবিধা হয় না... এ সবই ঘটছে সেদিনের রাতের ঐ ঘটনার পর থেকে... নয় তো বাবাকে এই এত বছরের মধ্যে কখনও এই ভাবে দেখে নি সে... এতটা যৌন ক্ষুদা বাবার? ভাবতে ভাবতে একটু যেন অবাকই লাগে তার... কই, সমু তো তারই ছেলে... তার মধ্যে তো এত যৌনখিদে কখনও দেখে নি সে... একবার ওদের হলে বেশ কিছুদিন আর কিছু হয় না... হ্যা... বিয়ের পর পরই অবস্য রোজই হত, প্রায় দিনে দুই তিন বার করেই হত, কিন্তু এই বয়স এসে সমুর আর সে ইচ্ছাটা যেন অনেকটাই প্রশমিত হয়ে পড়েছে... বরং তারই যেন এখনও ইচ্ছাটা মরে যায় নি... মাঝে মধ্যেই ইচ্ছাটা ভিষন ভাবে চাগাড় দিয়ে ওঠে... সমু সারাদিনের কাজের চাপে ক্লান্ত থাকে বলে আর করা হয়ে ওঠে না... তাই সেও মনের ইচ্ছাটা মনেই চেপে রাখে... মিথুনের কথা মাথায় আসতেই উপলব্ধি করে তলপেটের মধ্যেটা সিরসির করে ওঠে যেন... ওই জায়গাটায় আদ্রতা অনুভূত হয় তার... জোর করে মনটাকে কাজের দিকে ফেরাবার চেষ্টা করে সুমিতা...
সমু চায়ের কাপ হাতে বেরিয়ে যায় কিচেন থেকে... নিতাও ওর বরের আর বাবার জন্য চা দিতে চলে গেছে... সুমিতা বেলা লুচিগুলো ভাজতে মন দেয়...
‘একটু তেল হবে?’ পেছন থেকে শশুর মশাইয়ের গলা ভেসে আসে...
‘এখন?’ ফিরে প্রশ্ন করে সুমিতা।
‘হ্যা... মানে... ওই আর কি... একটু হলে ভালো হতো...’ কুন্ঠিত উত্তর অখিলেশের।
শশুরের হাত থেকে তেলের বাটিটা নিয়ে তাতে তেল ঢেলে আবার ফিরিয়ে দেয় সুমিতা। তারপর ফিরে আবার লুচি ভাজায় মন দেয়। নিচু স্বরে একটু যেন কঠিন ভাবেই প্রশ্ন করে, ‘এতগুলো লুঙ্গি এক দিনে কাচায় পড়ে কি করে বাবা?’
‘একজন বিপত্নিকের আর এর থেকে কি করার আছে বৌমা...’ চাপা স্বরে উত্তর আসে অখিলেশের কাছ থেকে।
শুনে থমকে যায় সুমিতা। তেলের কড়ার দিকে তাকিয়ে চুপ করে ভাবতে থাকে সে... ঠিকই তো... এখানে তো বাবার কোন দোষ সে দেখে না... একজনের বিয়োগে আর একটা মানুষের সব ইচ্ছা অনিচ্ছা কি মরে যায়? আর সেদিক দিয়ে দেখতে গেলে এই ঘটনার জন্য কিছু অংশে তারাও তো দায়ী... সেদিন যদি তারা আর একটু সংযত হত, তা হলে হয়তো ওদেরকে ওই ভাবে অসতর্ক অবস্থায় মৈথুনরত দেখে এই বয়সে এসে এই রকম কান্ডকারখানা উনি শুরুই করতেন না... আগে তো কখনো শশুরকে এই জিনিস করতে সে দেখে নি... নিজেরই কেমন একটা অপরাধ বোধ হতে লাগে তার... এ ভাবে হয়তো না বললেও পারতো সে...
ঘুরে সে শশুর মশাইকে নিজের সমবেদনা জানাতে যায়... কিন্তু দেখে ততক্ষনে কখন নিরবে অখিলেশ কিচেন ছেড়ে বেরিয়ে গিয়েছেন। কড়াই থেকে ধোঁয়া উঠতে দেখে সম্বিত পায় সুমিতা, তাড়াতাড়ি কড়াই থেকে পুড়ে কালো হয়ে যাওয়া লুচিটাকে খুন্তি দিয়ে তুলে বাস্কেটে ফেলে দেয়। একটা চাপা দীর্ঘনিঃশ্বাস বেরিয়ে আসে তার বুকের থেকে।
ক্রমশ...