09-01-2020, 12:19 PM
পর্ব ( ৯)
★আমি বললাম কি জন্য,,,, আম্মু বলল সেটা তো আর জানিনা তোর খালা মণি ফোন দিয়ে তোকে যেতে বলল।
আমি এত রাতে খালামনির বাসায় যাব?
(আব্বু) এত রাত হয়েছে তো কি হয়েছে,, বাইক নিয়ে যা,, মেয়েটা খুব ভালো সব সময় হাসিখুশি থাকে আজ আবার হঠাৎ করে কি হলো। তুই যে দেখে আয়।
★আমি আব্বুর কথা শুনে এক দৃষ্টি দিয়ে আব্বুর দিকে তাকিয়ে আছি আব্বুর সামনে কখনো বাইকের কথা উচ্চারণ করতে পারি না,,, আর আব্বু আজকে বলছে আমি বাইক নিয়ে যাওয়ার জন্য,,,।
★আমি ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিলাম,, তারপর বাইক নিয়ে রওয়ানা দিলাম।
★২ ৩ মিনিট যাওয়ার পরই ঝিরঝির বৃষ্টি শুরু হয়েছে,,৮ ৯ মিনিটে পৌছে গেলাম,,, কলিং বেল চাপতে যাব এমন সময় মনে হল,, মাথার ব্যান্ডেজের কথা,,,
হায় আল্লাহ এখন যদি আপু দেখে আমার মাথায় ব্যান্ডেজ নাই,,, তাহলে তো সর্বনাশ কি করা যায়,, বাইরে বৃষ্টির বেগ হালকা বাড়ছে,,, আবার ভিজে বাসায় রওনা দিলাম?
বাসায় এসে কলিংবেল চাপতেই আম্মু এসে দরজা খুলে দিল,, আমাকে দেখে বলল কিরে গেলি কখন আসলি কখন,।
আমি বললাম যায় নাই তো,,
(আম্মু) না যেয়ে ফিরে আসলি যে।
(((((আম্মুকে তো কোন ভাবেই বলা যাবে না ব্যান্ডেজ এর কথা কি করা যায়)))))
(আমি) এইতো আম্মু মোবাইলটা ফেলে গিয়েছিলাম?
(আম্মু) এখন তো বৃষ্টি নেমে গেছে আর যাওয়ার দরকার নাই,,,, বৃষ্টিতে ভিজলে তোর আবার শরীর খারাপ করবে।
(আমি) না আম্মু কিচ্ছু হবে না আর খালা মণি এত রাতে ফোন দিয়েছে না গেলে কেমন দেখা যায় না,,, আম্মু বলল ঠিক আছে তাহলে ছাতা নিয়ে যা??
আমি আমার রুমে এসে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে ভালোভাবে ব্যান্ডেজ টা মাথায় বেঁধে নিলাম? ছাতা না নিয়ে রওয়ানা দিলাম,,,, বাইক আমি চালালে ছাতা ধরবে কে আমার বউ?
একবারে ভিজে খালামণির বাসার
কলিংবেল চাপ দিলাম,,,, খালা মণি দরজা খুলে দিল,,, আমাকে দেখে তো খালামণি পাগল হওয়ার দশা,,, তোর মাথায় ব্যান্ডেজ কেন,,,,
আমি)তেরকম কিছু না,,, একটু খেলতে গিয়ে ব্যাথা পেয়েছি।
তাহলে তুই এই ব্যান্ডেজ নিয়ে ভিজে ভিজে আসতে গিলে কেন। আগে গিয়ে মাথাটা মুছে ফেল,,,, তা না হলে তোর আবার শরীর খারাপ করবে।
(আমি) খালামণি কিচ্ছু হবে না আমার আপু কই?
(খালা মণি) তোর আপু উপরের রুমে,, মেয়েটা সন্ধ্যা থেকে কিছু না খেয়ে রুমে বসে কান্না করছে,,, কি হয়েছে কি জন্য কান্না করছে কিছুই বলেনা,, আমি কয়েকবার গিয়েছিলাম আমাকে রাগ দেখিয়ে বলল আমাকে একা থাকতে দাও।। বুঝলাম না মেয়েটার কি হয়েছে,,, তুই একটু গিয়ে দেখ বাবা আগে তো কখনো এরকম করে নাই
((((আমি বুঝতে পেরেছি হয়তো আজকে আমার এমন ব্যবহারে আর না হয় অন্য কোনো কারণে কান্না করছে আগে গিয়ে দেখি)))))
আমি আপুর রুমের দরজা ধাক্কা দিব দেখি দরজা খোলা,,, হালকা ধাক্কা দিয়ে ভিতরে ঢুকলাম যেন টের না পাই। আপু এক নাগাড়ে আস্তে আস্তে কেদে যাচ্ছে,,, মনে হচ্ছে যতক্ষণ পর্যন্ত বঙ্গোপসাগরে জোয়ার না লাগে ততক্ষণ পর্যন্ত কান্না চলতেই থাকবে। মেয়েরার এতো কান্না কোথা থেকে আসে আমি তো ভেবে পাই না।
আর বিশেষ করে কিছু কিছু মেয়েরা কান্না করলে অসম্ভব সুন্দর লাগে। মনে হয় বারবার তাদেরকে থাপ্পর দিয়ে কান্না করায়,,, যেন তাদের সেই কান্না মাখা মায়াবী মুখটা দেখতে পাই।
আমারও এখন অপুর সেই কান্না মাখা মায়াবী মুখটা দেখতে ইচ্ছে করতেছে,, না সামনে যাওয়া যাবে না,, কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে সু মিষ্টি কণ্ঠে কান্না শুনি।
★ওমা হঠাৎ করে কান্নার বেগ বেড়ে গেলে কেন,,, টের পেয়ে গেল নাকি আমি জানি পিছনে দাঁড়িয়ে আছি?
★ আমি আস্তে করে গলাটা জারি দিলাম,,, আপু খুব স্পিডে মাথাটা ঘুরিয়ে আমাকে দেখে হতভম্ব হয়ে গেল,, দিশেহারা পাখির মত অবস্থা,,, কান্না অফ হয়ে গেল,,, এবং বলতে শুরু করল। তুই এখানে কিভাবে,,, আর এভাবে ভিজে মাথায় ব্যান্ডেজ নিয়ে,, এত রাতে,,,, আপু এদিক-সেদিক ছুটোছুটি শুরু করলো,, আমি অবাক হয়ে গেলাম,,, আমাকে দেখে আপুর কান্না অফ হয়ে গেলে কেন। আপুর কাজকর্ম গুলো দেখতে লাগলাম।
আপু একটা তোয়ালে এনে বলল,,, মাথাটা ভালোভাবে মুছে ফেল,,, যেন একটু পানিও চুলে না লেগে থাকে। তোর তো গেঞ্জি ভিজে একবারে একাকার হয়ে গেল। কালকে নিশ্চয়ই তোর জ্বর আসবে।
তোর তো একটু ভিজলেই জ্বর চলে আসে।
তোকে কে বললো এত রাতে এখানে আসার জন্য। তুই এক মিনিট দাঁড়া আমি আসছি।
আমি তো আপুর এত কেয়ারিং হতভম্ব হয়ে গিয়েছি,,, আমি মুখ দিয়ে কিছু বলতে পারছি না,, শুধু অবাক হয়ে দেখছি,,, আগে কখনো আপু আমাকে এরকম কেয়ারিং করে নাই।
কিছুক্ষণ পরে আপু একটা কি যেন এনে আমার হাতে দিল?
আমি আপুর দিকে এক দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে আছি,,, কান্না করতে করতে নাকের ডগা লাল হয়ে গিয়েছে,,, চোখগুলো ফুলে গিয়েছে,,, মনে হচ্ছে চোখ দুটি বেরিয়ে আসবে,,, চোখের পানিতে কাজল লেপ্টে গালে একাকার হয়ে গিয়েছে।
আমি তো বুঝতে পারছি না আপু এভাবে কান্নার কারণ কি,,, আমিতো আপুকে কখনো দেখি নাই এভাবে কান্না করতে।
আজকে আমার এমন ব্যবহারের জন্য কান্না করেছে,,, আমার তো মনে হয় না,,, এই সামান্য একটু কথা নিয়ে এভাবে কান্না করবে,,, হয়তো অন্য কিছু হয়েছে।
(আপু) কি হলো এভাবে দাঁড়িয়ে আছিস কেন,,, ওয়াশ রুমে গিয়ে ভিজা গেঞ্জি টা চেঞ্জ করে এটা পড়ে নে।
★এত ক্ষণে আমি আমার হাতের জিনিসটা খেয়াল করলাম,, সুন্দর একটা স্পর্ট ব্র্যান্ডের গেঞ্জি।
(আমি) এটা কি এটাতো মেয়েরার গেঞ্জি এটা আমি পড়বো।
(আপু) তোকে কে বললো এটা মেয়েদের গেঞ্জি যা আগে গিয়ে পড়ে আস?
আমি ওয়াশ রুমে চলে গেলাম,,, আসলেই আমার খুব শীত লাগতেছিল,,, আমি ভিজা গেঞ্জিটা চেঞ্জ করে ওটা পরে নিলাম।
গেঞ্জিটা পরে তো আমি অবাক হয়ে গিয়েছি,,, গেঞ্জিটা আমার বডি সাথে এডজাস্ট,, এবং গেঞ্জিটা ছেলেদেরই,,,
আমি ওয়াশ রুম থেকে বের হয়ে আপুর সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম, এটা তো দেখি ছেলেদের গেঞ্জি এবং আমার বডির সাথে এডজাস্ট,, এটা তোমার কাছে কীভাবে।
(আপু) এটা আমি পছন্দ করে তোর জন্যই কিনেছিলাম দুদিন আগে,,,,, তোকে দিতে পারি নাই,,, ভেবেছিলাম তোকে রাতে দিব,,, তুই চলে গেলি খেলতে,, গেঞ্জিটা তোর পছন্দ হয় নাই।
(আমি) খুব পছন্দ হয়েছে,,, তুমি পছন্দ করে দিয়েছো,, সেটা পছন্দ হবে না,,,,
আপু একটু হেসে বলল তুই এভাবে ভিজে আসতে গেলে কেন।
(আমি) তোমার জন্য,, খালামণি আম্মুর কাছে ফোন দিয়েছে,, তুমি সন্ধ্যা থেকে কিছু না খেয়ে রুমে বসে কান্না করছো,।
তাই বৃষ্টিতে ভিজে চলে আসলাম,, এখন বল কেন এতক্ষণ ধরে কান্না করছো।
(আপু) এমনি?? ((((অভিমানী কণ্ঠে)))))
(আমি) এমনি কখনো কেউই এভাবে কান্না করে,,আমার ত মনে হয় আমি না আসলে সারারাত কান্না করতা? আর কান্না করতে করতে চেহারার কি বিশ্রী অবস্থা করেছ?
কি জন্য এভাবে কান্না করছিলা??
(আপু) তোকে বলতে পারব না,, (((একটু রাগ দেখিয়ে)))
(আমি) আচ্ছা ঠিক আছে আমাকে বলতে না পারলে,, এত রাতে ভিজে কেন আসলাম,,, চলে যাই আমি,।
(আপু) বৃষ্টিতে ভিজেই চলে যাবি,,,(( মায়া কাড়া কন্ঠে)))
(আমি) কি করবো তুমি যেহেতু বলবানা তাহলে থেকে কি করব। আমি আপু আখি জোড়া দিকে তাকিয়ে আছি,, তার আখি জোড়া আমাকে কিছু বোঝাতে চাচ্ছে।
আমি আপুর রুম থেকে বেরিয়ে আসব এমন সময় আমি পিছনে তাকিয়ে দেখি আপু খাটের উপরে বসে,, কান্না কন্টিনিউ করার জন্য রেডি হয়ে আছে।
আমি রুম থেকে বেরিয়ে আসলাম এসে কিছু খাবার নিয়ে পুরোনাই আপুর রুমে গেলাম,,, দেখি কান্না চালু হয়ে গিয়েছে।
আমি তো ভেবে পাই না এভাবে কান্না করে কেন,,, আপু আমার পায়ের শব্দ শুনে পিছন ফিরে তাকাল,,, আমাকে দেখে আর কিছু বলল না,, কান্না করেই যাচ্ছে,,
(আমি) আমি একটু সাহস যুগিয়ে ধমকের সুরে বললাম,,, এভাবে কান্না করছো কেন,, তোমার কান্না দেখে মনে হচ্ছে অতি আপন কেউই চিরদিনের জন্য হারিয়ে গিয়েছে।
(আপু) আমি কান্না করলে তোর কি তুই চলে যা। ((অভিমান ভরা কন্ঠে)))
(আমি) আচ্ছা তুমি কান্না করলে আমার কিচ্ছু না তাহলে আমি চলে যাই। একথা বলে আমি দরজার দিকে পা বাড়ালাম,, পিছন থেকে কে জানি আমার গেঞ্জি টেনে ধরেছে।।
মাথা ঘুরে দেখি আপু? আমি বললাম এভাবে গেঞ্জি ধরে টেনে ধরেছে কেন,, আমাকে যেতে দাও,, আমি জোর করে বের হতে যাবো।
আপু আর শক্ত করে আমার গেঞ্জির টেনে ধরেছে এবং বলতে শুরু করল?
(আপু) আরেক পা সামনে বাড়ালে তোর ঠ্যাং ভেঙ্গে ফেলবো।
আমিতো যথারীতি অবাক এতক্ষন এভাবে কান্না করলো,,, আর এখন সব ভুলে আমাকে না যাওয়ার জন্য সন্ত্রাসীদের মতো খুব হুমকি দিচ্ছে।
(আপু) এই বৃষ্টিতে ডিজে যাওয়ার দরকার নেই,, তা না হলে শরীর আবার অসুস্থ হবে? তুই আজকে থেকে যা।
(আমি) আচ্ছা ঠিক আছে তুমি যা বলবে আমি তাই শুনবো,,, এখন খাবার নিয়ে আসছি খেয়ে নাও?
(আপু) না আমি খাব না।
(আমি) কি জন্য খাবা না বলবে তো,,
আপু …………?
আরে বাবা কি জন্য খাবে না বলবা তো।
আচ্ছা আমার আজকে এমন ব্যবহারের জন্য,,,
আপু কিছু না বলে চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে,,,
(আমি) আচ্ছা আমি সরি আসলে ওই সময় আমার রাগ উঠে গিয়েছিল,, তাই তোমাকে কথাগুলো বলে ফেলেছি,,, এই যে কান ধরে প্রমিস করছি,,, আর কখনো তোমার সাথে রাগ দেখিয়ে কথা বলব না,,
তুমি যা বলবে তাই করবো।
আপু তারপরেও চুপ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে,।
(আমি) খাবে ও না কথা বলবে না,,, আচ্ছা ঠিক আছে তুমি খেলে খাও না খাইলে নাই। আমি চলে যাই।
(আপু) আমি খাব তুই আমার সাথে খেতে হবে।
(আমি) আচ্ছা ঠিক আছে খাব।
খাওয়া শেষ করে আমি বললাম বৃষ্টিতে এখন শেষ আমি চলে যাই আব্বু রাতে বাড়িতে আসছে।
(আপু) তুই এত রাতে একা যেতে পারবি?
(আমি)হ্যাঁ পারবো বাইক নিয়ে আসছি তো।
(আমি) আচ্ছা ঠিক আছে পৌঁছে আমাকে ফোন দিবে,,, আর আমি ফোন দিলে ফোন ধরবে,,,, রাতের মত যদি ফোন না ধরিস দেখিস আমি কি করি??( একটু অভিমানী কণ্ঠে)
★আমি বুঝতে পেরেছি আমি ফোন ধরি নাই আমার ফোন ওয়েটিং এ পেয়েছে এজন্যই তো অভিমান করেছে।
(আমি) আচ্ছা ঠিক আছে তোমার ফোন সর্বপ্রথম ধরবো তারপর অন্য সবার ফোন?
আপু একটু খুশি হয়েছে চেহারার দিকে তাকিয়ে বুঝতে পেরেছে।
আমি আপুর থেকে বিদায় নিয়ে বাইক স্টার্ট করব,, এমন সময় আপু একটা তোয়ালে এনে আমার হাতে দিয়ে বলল,,
বাইচেছ যদি রাস্তায় বৃষ্টি আসে,,, তাহলে তো সমস্যা হবে।
আমি ত আপুর এত কেয়ারিং দেখে অবাক এর উপর অবাক আজকে রাতে না আসলে আপুর এতটা কেয়ারিং চরিত্রটা দেখতে পারতাম না।
আমি বাসায় এসে আম্মুকে বুঝিয়ে বললাম আপু ঐরকম কিছু হয় নাই,, তারপরও আপুকে ফোন দিয়ে আমি শুতে চলে গেলাম,,,
সকাল 9 টায় ঘুম থেকে উঠলাম তারপর ফ্রেশ হয়ে,,, নাস্তা করে মোবাইলের দিকে ১০টা বাইক নিয়ে রিয়ার বাড়ির সামনে। এমন সময় আপুর ফোন?
হায় আল্লাহ আপু তো জানে আজকে আমি কলেজে যাব না।
আমার মাথায় ব্যান্ডেজ।
এখন কি করি।
ফোন ধরলে আবার কি না কি বলে,,
ফোন না ধরলেও সমস্যা।
আমি ফোন ধরলাম,,, আপু বলতে শুরু করল তুই কোথায়,, এখন কি বলি।
(আমি) এই ত আপু আমি তো বাসায়।
(আপু) আচ্ছা ঠিক আছে তুই থাক আম্মু তোর জন্য পিঠা বানাইছে,, আমি নিয়ে আসছি।
হায় খুদা আমাকে কেউ ওটাই নেও।
এখন আমাকে আবার যেতে হবে বাসায়???
চলবে.....
★আমি বললাম কি জন্য,,,, আম্মু বলল সেটা তো আর জানিনা তোর খালা মণি ফোন দিয়ে তোকে যেতে বলল।
আমি এত রাতে খালামনির বাসায় যাব?
(আব্বু) এত রাত হয়েছে তো কি হয়েছে,, বাইক নিয়ে যা,, মেয়েটা খুব ভালো সব সময় হাসিখুশি থাকে আজ আবার হঠাৎ করে কি হলো। তুই যে দেখে আয়।
★আমি আব্বুর কথা শুনে এক দৃষ্টি দিয়ে আব্বুর দিকে তাকিয়ে আছি আব্বুর সামনে কখনো বাইকের কথা উচ্চারণ করতে পারি না,,, আর আব্বু আজকে বলছে আমি বাইক নিয়ে যাওয়ার জন্য,,,।
★আমি ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিলাম,, তারপর বাইক নিয়ে রওয়ানা দিলাম।
★২ ৩ মিনিট যাওয়ার পরই ঝিরঝির বৃষ্টি শুরু হয়েছে,,৮ ৯ মিনিটে পৌছে গেলাম,,, কলিং বেল চাপতে যাব এমন সময় মনে হল,, মাথার ব্যান্ডেজের কথা,,,
হায় আল্লাহ এখন যদি আপু দেখে আমার মাথায় ব্যান্ডেজ নাই,,, তাহলে তো সর্বনাশ কি করা যায়,, বাইরে বৃষ্টির বেগ হালকা বাড়ছে,,, আবার ভিজে বাসায় রওনা দিলাম?
বাসায় এসে কলিংবেল চাপতেই আম্মু এসে দরজা খুলে দিল,, আমাকে দেখে বলল কিরে গেলি কখন আসলি কখন,।
আমি বললাম যায় নাই তো,,
(আম্মু) না যেয়ে ফিরে আসলি যে।
(((((আম্মুকে তো কোন ভাবেই বলা যাবে না ব্যান্ডেজ এর কথা কি করা যায়)))))
(আমি) এইতো আম্মু মোবাইলটা ফেলে গিয়েছিলাম?
(আম্মু) এখন তো বৃষ্টি নেমে গেছে আর যাওয়ার দরকার নাই,,,, বৃষ্টিতে ভিজলে তোর আবার শরীর খারাপ করবে।
(আমি) না আম্মু কিচ্ছু হবে না আর খালা মণি এত রাতে ফোন দিয়েছে না গেলে কেমন দেখা যায় না,,, আম্মু বলল ঠিক আছে তাহলে ছাতা নিয়ে যা??
আমি আমার রুমে এসে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে ভালোভাবে ব্যান্ডেজ টা মাথায় বেঁধে নিলাম? ছাতা না নিয়ে রওয়ানা দিলাম,,,, বাইক আমি চালালে ছাতা ধরবে কে আমার বউ?
একবারে ভিজে খালামণির বাসার
কলিংবেল চাপ দিলাম,,,, খালা মণি দরজা খুলে দিল,,, আমাকে দেখে তো খালামণি পাগল হওয়ার দশা,,, তোর মাথায় ব্যান্ডেজ কেন,,,,
আমি)তেরকম কিছু না,,, একটু খেলতে গিয়ে ব্যাথা পেয়েছি।
তাহলে তুই এই ব্যান্ডেজ নিয়ে ভিজে ভিজে আসতে গিলে কেন। আগে গিয়ে মাথাটা মুছে ফেল,,,, তা না হলে তোর আবার শরীর খারাপ করবে।
(আমি) খালামণি কিচ্ছু হবে না আমার আপু কই?
(খালা মণি) তোর আপু উপরের রুমে,, মেয়েটা সন্ধ্যা থেকে কিছু না খেয়ে রুমে বসে কান্না করছে,,, কি হয়েছে কি জন্য কান্না করছে কিছুই বলেনা,, আমি কয়েকবার গিয়েছিলাম আমাকে রাগ দেখিয়ে বলল আমাকে একা থাকতে দাও।। বুঝলাম না মেয়েটার কি হয়েছে,,, তুই একটু গিয়ে দেখ বাবা আগে তো কখনো এরকম করে নাই
((((আমি বুঝতে পেরেছি হয়তো আজকে আমার এমন ব্যবহারে আর না হয় অন্য কোনো কারণে কান্না করছে আগে গিয়ে দেখি)))))
আমি আপুর রুমের দরজা ধাক্কা দিব দেখি দরজা খোলা,,, হালকা ধাক্কা দিয়ে ভিতরে ঢুকলাম যেন টের না পাই। আপু এক নাগাড়ে আস্তে আস্তে কেদে যাচ্ছে,,, মনে হচ্ছে যতক্ষণ পর্যন্ত বঙ্গোপসাগরে জোয়ার না লাগে ততক্ষণ পর্যন্ত কান্না চলতেই থাকবে। মেয়েরার এতো কান্না কোথা থেকে আসে আমি তো ভেবে পাই না।
আর বিশেষ করে কিছু কিছু মেয়েরা কান্না করলে অসম্ভব সুন্দর লাগে। মনে হয় বারবার তাদেরকে থাপ্পর দিয়ে কান্না করায়,,, যেন তাদের সেই কান্না মাখা মায়াবী মুখটা দেখতে পাই।
আমারও এখন অপুর সেই কান্না মাখা মায়াবী মুখটা দেখতে ইচ্ছে করতেছে,, না সামনে যাওয়া যাবে না,, কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে সু মিষ্টি কণ্ঠে কান্না শুনি।
★ওমা হঠাৎ করে কান্নার বেগ বেড়ে গেলে কেন,,, টের পেয়ে গেল নাকি আমি জানি পিছনে দাঁড়িয়ে আছি?
★ আমি আস্তে করে গলাটা জারি দিলাম,,, আপু খুব স্পিডে মাথাটা ঘুরিয়ে আমাকে দেখে হতভম্ব হয়ে গেল,, দিশেহারা পাখির মত অবস্থা,,, কান্না অফ হয়ে গেল,,, এবং বলতে শুরু করল। তুই এখানে কিভাবে,,, আর এভাবে ভিজে মাথায় ব্যান্ডেজ নিয়ে,, এত রাতে,,,, আপু এদিক-সেদিক ছুটোছুটি শুরু করলো,, আমি অবাক হয়ে গেলাম,,, আমাকে দেখে আপুর কান্না অফ হয়ে গেলে কেন। আপুর কাজকর্ম গুলো দেখতে লাগলাম।
আপু একটা তোয়ালে এনে বলল,,, মাথাটা ভালোভাবে মুছে ফেল,,, যেন একটু পানিও চুলে না লেগে থাকে। তোর তো গেঞ্জি ভিজে একবারে একাকার হয়ে গেল। কালকে নিশ্চয়ই তোর জ্বর আসবে।
তোর তো একটু ভিজলেই জ্বর চলে আসে।
তোকে কে বললো এত রাতে এখানে আসার জন্য। তুই এক মিনিট দাঁড়া আমি আসছি।
আমি তো আপুর এত কেয়ারিং হতভম্ব হয়ে গিয়েছি,,, আমি মুখ দিয়ে কিছু বলতে পারছি না,, শুধু অবাক হয়ে দেখছি,,, আগে কখনো আপু আমাকে এরকম কেয়ারিং করে নাই।
কিছুক্ষণ পরে আপু একটা কি যেন এনে আমার হাতে দিল?
আমি আপুর দিকে এক দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে আছি,,, কান্না করতে করতে নাকের ডগা লাল হয়ে গিয়েছে,,, চোখগুলো ফুলে গিয়েছে,,, মনে হচ্ছে চোখ দুটি বেরিয়ে আসবে,,, চোখের পানিতে কাজল লেপ্টে গালে একাকার হয়ে গিয়েছে।
আমি তো বুঝতে পারছি না আপু এভাবে কান্নার কারণ কি,,, আমিতো আপুকে কখনো দেখি নাই এভাবে কান্না করতে।
আজকে আমার এমন ব্যবহারের জন্য কান্না করেছে,,, আমার তো মনে হয় না,,, এই সামান্য একটু কথা নিয়ে এভাবে কান্না করবে,,, হয়তো অন্য কিছু হয়েছে।
(আপু) কি হলো এভাবে দাঁড়িয়ে আছিস কেন,,, ওয়াশ রুমে গিয়ে ভিজা গেঞ্জি টা চেঞ্জ করে এটা পড়ে নে।
★এত ক্ষণে আমি আমার হাতের জিনিসটা খেয়াল করলাম,, সুন্দর একটা স্পর্ট ব্র্যান্ডের গেঞ্জি।
(আমি) এটা কি এটাতো মেয়েরার গেঞ্জি এটা আমি পড়বো।
(আপু) তোকে কে বললো এটা মেয়েদের গেঞ্জি যা আগে গিয়ে পড়ে আস?
আমি ওয়াশ রুমে চলে গেলাম,,, আসলেই আমার খুব শীত লাগতেছিল,,, আমি ভিজা গেঞ্জিটা চেঞ্জ করে ওটা পরে নিলাম।
গেঞ্জিটা পরে তো আমি অবাক হয়ে গিয়েছি,,, গেঞ্জিটা আমার বডি সাথে এডজাস্ট,, এবং গেঞ্জিটা ছেলেদেরই,,,
আমি ওয়াশ রুম থেকে বের হয়ে আপুর সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম, এটা তো দেখি ছেলেদের গেঞ্জি এবং আমার বডির সাথে এডজাস্ট,, এটা তোমার কাছে কীভাবে।
(আপু) এটা আমি পছন্দ করে তোর জন্যই কিনেছিলাম দুদিন আগে,,,,, তোকে দিতে পারি নাই,,, ভেবেছিলাম তোকে রাতে দিব,,, তুই চলে গেলি খেলতে,, গেঞ্জিটা তোর পছন্দ হয় নাই।
(আমি) খুব পছন্দ হয়েছে,,, তুমি পছন্দ করে দিয়েছো,, সেটা পছন্দ হবে না,,,,
আপু একটু হেসে বলল তুই এভাবে ভিজে আসতে গেলে কেন।
(আমি) তোমার জন্য,, খালামণি আম্মুর কাছে ফোন দিয়েছে,, তুমি সন্ধ্যা থেকে কিছু না খেয়ে রুমে বসে কান্না করছো,।
তাই বৃষ্টিতে ভিজে চলে আসলাম,, এখন বল কেন এতক্ষণ ধরে কান্না করছো।
(আপু) এমনি?? ((((অভিমানী কণ্ঠে)))))
(আমি) এমনি কখনো কেউই এভাবে কান্না করে,,আমার ত মনে হয় আমি না আসলে সারারাত কান্না করতা? আর কান্না করতে করতে চেহারার কি বিশ্রী অবস্থা করেছ?
কি জন্য এভাবে কান্না করছিলা??
(আপু) তোকে বলতে পারব না,, (((একটু রাগ দেখিয়ে)))
(আমি) আচ্ছা ঠিক আছে আমাকে বলতে না পারলে,, এত রাতে ভিজে কেন আসলাম,,, চলে যাই আমি,।
(আপু) বৃষ্টিতে ভিজেই চলে যাবি,,,(( মায়া কাড়া কন্ঠে)))
(আমি) কি করবো তুমি যেহেতু বলবানা তাহলে থেকে কি করব। আমি আপু আখি জোড়া দিকে তাকিয়ে আছি,, তার আখি জোড়া আমাকে কিছু বোঝাতে চাচ্ছে।
আমি আপুর রুম থেকে বেরিয়ে আসব এমন সময় আমি পিছনে তাকিয়ে দেখি আপু খাটের উপরে বসে,, কান্না কন্টিনিউ করার জন্য রেডি হয়ে আছে।
আমি রুম থেকে বেরিয়ে আসলাম এসে কিছু খাবার নিয়ে পুরোনাই আপুর রুমে গেলাম,,, দেখি কান্না চালু হয়ে গিয়েছে।
আমি তো ভেবে পাই না এভাবে কান্না করে কেন,,, আপু আমার পায়ের শব্দ শুনে পিছন ফিরে তাকাল,,, আমাকে দেখে আর কিছু বলল না,, কান্না করেই যাচ্ছে,,
(আমি) আমি একটু সাহস যুগিয়ে ধমকের সুরে বললাম,,, এভাবে কান্না করছো কেন,, তোমার কান্না দেখে মনে হচ্ছে অতি আপন কেউই চিরদিনের জন্য হারিয়ে গিয়েছে।
(আপু) আমি কান্না করলে তোর কি তুই চলে যা। ((অভিমান ভরা কন্ঠে)))
(আমি) আচ্ছা তুমি কান্না করলে আমার কিচ্ছু না তাহলে আমি চলে যাই। একথা বলে আমি দরজার দিকে পা বাড়ালাম,, পিছন থেকে কে জানি আমার গেঞ্জি টেনে ধরেছে।।
মাথা ঘুরে দেখি আপু? আমি বললাম এভাবে গেঞ্জি ধরে টেনে ধরেছে কেন,, আমাকে যেতে দাও,, আমি জোর করে বের হতে যাবো।
আপু আর শক্ত করে আমার গেঞ্জির টেনে ধরেছে এবং বলতে শুরু করল?
(আপু) আরেক পা সামনে বাড়ালে তোর ঠ্যাং ভেঙ্গে ফেলবো।
আমিতো যথারীতি অবাক এতক্ষন এভাবে কান্না করলো,,, আর এখন সব ভুলে আমাকে না যাওয়ার জন্য সন্ত্রাসীদের মতো খুব হুমকি দিচ্ছে।
(আপু) এই বৃষ্টিতে ডিজে যাওয়ার দরকার নেই,, তা না হলে শরীর আবার অসুস্থ হবে? তুই আজকে থেকে যা।
(আমি) আচ্ছা ঠিক আছে তুমি যা বলবে আমি তাই শুনবো,,, এখন খাবার নিয়ে আসছি খেয়ে নাও?
(আপু) না আমি খাব না।
(আমি) কি জন্য খাবা না বলবে তো,,
আপু …………?
আরে বাবা কি জন্য খাবে না বলবা তো।
আচ্ছা আমার আজকে এমন ব্যবহারের জন্য,,,
আপু কিছু না বলে চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে,,,
(আমি) আচ্ছা আমি সরি আসলে ওই সময় আমার রাগ উঠে গিয়েছিল,, তাই তোমাকে কথাগুলো বলে ফেলেছি,,, এই যে কান ধরে প্রমিস করছি,,, আর কখনো তোমার সাথে রাগ দেখিয়ে কথা বলব না,,
তুমি যা বলবে তাই করবো।
আপু তারপরেও চুপ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে,।
(আমি) খাবে ও না কথা বলবে না,,, আচ্ছা ঠিক আছে তুমি খেলে খাও না খাইলে নাই। আমি চলে যাই।
(আপু) আমি খাব তুই আমার সাথে খেতে হবে।
(আমি) আচ্ছা ঠিক আছে খাব।
খাওয়া শেষ করে আমি বললাম বৃষ্টিতে এখন শেষ আমি চলে যাই আব্বু রাতে বাড়িতে আসছে।
(আপু) তুই এত রাতে একা যেতে পারবি?
(আমি)হ্যাঁ পারবো বাইক নিয়ে আসছি তো।
(আমি) আচ্ছা ঠিক আছে পৌঁছে আমাকে ফোন দিবে,,, আর আমি ফোন দিলে ফোন ধরবে,,,, রাতের মত যদি ফোন না ধরিস দেখিস আমি কি করি??( একটু অভিমানী কণ্ঠে)
★আমি বুঝতে পেরেছি আমি ফোন ধরি নাই আমার ফোন ওয়েটিং এ পেয়েছে এজন্যই তো অভিমান করেছে।
(আমি) আচ্ছা ঠিক আছে তোমার ফোন সর্বপ্রথম ধরবো তারপর অন্য সবার ফোন?
আপু একটু খুশি হয়েছে চেহারার দিকে তাকিয়ে বুঝতে পেরেছে।
আমি আপুর থেকে বিদায় নিয়ে বাইক স্টার্ট করব,, এমন সময় আপু একটা তোয়ালে এনে আমার হাতে দিয়ে বলল,,
বাইচেছ যদি রাস্তায় বৃষ্টি আসে,,, তাহলে তো সমস্যা হবে।
আমি ত আপুর এত কেয়ারিং দেখে অবাক এর উপর অবাক আজকে রাতে না আসলে আপুর এতটা কেয়ারিং চরিত্রটা দেখতে পারতাম না।
আমি বাসায় এসে আম্মুকে বুঝিয়ে বললাম আপু ঐরকম কিছু হয় নাই,, তারপরও আপুকে ফোন দিয়ে আমি শুতে চলে গেলাম,,,
সকাল 9 টায় ঘুম থেকে উঠলাম তারপর ফ্রেশ হয়ে,,, নাস্তা করে মোবাইলের দিকে ১০টা বাইক নিয়ে রিয়ার বাড়ির সামনে। এমন সময় আপুর ফোন?
হায় আল্লাহ আপু তো জানে আজকে আমি কলেজে যাব না।
আমার মাথায় ব্যান্ডেজ।
এখন কি করি।
ফোন ধরলে আবার কি না কি বলে,,
ফোন না ধরলেও সমস্যা।
আমি ফোন ধরলাম,,, আপু বলতে শুরু করল তুই কোথায়,, এখন কি বলি।
(আমি) এই ত আপু আমি তো বাসায়।
(আপু) আচ্ছা ঠিক আছে তুই থাক আম্মু তোর জন্য পিঠা বানাইছে,, আমি নিয়ে আসছি।
হায় খুদা আমাকে কেউ ওটাই নেও।
এখন আমাকে আবার যেতে হবে বাসায়???
চলবে.....