31-01-2019, 11:33 AM
তিন
জানি না এত গরমের জন্য কিনা, নাকি এই অদ্ভুত পরিবেশের দরুন যেখানে ঘর পুরোপুরি আলোকিত নয়, দুই গ্লাসেই আমার মাথাটা বেশ ঘোলাটে হয়ে উঠেছে। চার পাশের কোনও বস্তু বা বিষয়ের উপরেই ঠিক একভাবে মন যোগ করতে পারছি না। হতে পারে রাত্রে ঘুম ভালো করে হয় নি তাই অল্পেই চড়ে গেছে। খেয়াল করলাম আমার কেউ কিছু বলছি না। অথচ সেইদিন আমরা ওই দোকানে বসে কত কথা বলছিলাম। আমার না হয় নতুন জায়গা, কিন্তু উনি কেন গুম মেরে গেছেন সেটাই বুঝতে পারছি না। ওনার যে কত গুলো গ্লাস শেষ হয়েছে সেটা আর গুনিনি। বোতল দেখলাম অনেকটাই সাবাড় করে দিয়েছেন। স্ট্যামিনা আছে বলতে হবে। ওনার চোখের নজরও বেশ ঘোলাটে, চোখের কোণে যেন ছোট ছোট দু এক ফোঁটা জল দেখতে পেলাম। ভগবান জানেন কি ভাবছেন। আমি একটু গলা খাঁকারি দিলাম কারণ আমার গ্লাস শেষ। আমি ঠিক বুঝতে পারছিলাম না যে আমার আর চাওয়া ঠিক হবে কিনা। আমার গলা খাকরানির শব্দ পেয়ে উনি যেন ওনার নিদ্রা ভেঙ্গে উঠে সোজা হয়ে বসলেন। এতক্ষনে খেয়াল করলাম ওনার শাড়ির আলগা আঁচলটা ওনার বুকের ওপর থেকে নেমে ওনার কোমরের ওপর অলস ভাবে দড়ির মতন পড়ে আছে। আঁচলের লম্বা অংশটা মাটিতে লুটাচ্ছে। ওনার ঘামে ভেজা ব্লাউজে ঢাকা স্তন, ওনার সুগভীর নাভি আর তার খানিকটা নিচ অব্দি ফর্সা তলপেটের পুরোটাই নগ্ন। কিন্তু ওনার মধ্যে শাড়ির আঁচল ঠিক করার কোনও উদ্যোগ দেখা গেল না। আমার জন্য নির্দিষ্ট করা গ্লাসে তরল ঢেলে আমার হাতে উঠিয়ে দেবার সময় একবার যেন ওনার সাথে আমার চোখাচুখি হল। সাথে সাথে উনি নিজের বুক আর নগ্ন তলপেটের দিকে এক ঝলক দৃষ্টি ফেলে নিলেন। কিন্তু আঁচলটা যেমন ছিল তেমনই রইল। দরজায় টোকা। খুব বিরক্তির সাথে জিজ্ঞেস করলেন “কে?” বাইরে থেকে সেই আগে দেখা মেয়েটার গলা পেলাম। “আসব?” গলা চড়িয়ে বললেন “ এখনও চড়ে নি। আরও আধ ঘণ্টা পরে আয়।“ কার চড়ার জন্য উনি অপেক্ষা করছেন ভগবানই জানেন। তবে একটা জিনিস বুঝতে পারছিলাম যে আর বেশী গিললে দুপুরের খাওয়া মাটি হয়ে যাবে। এখন বেশী মদ গিললে আমি ভালো করে খেতে পারি না।
আরও কিছুক্ষণ এরকম নিরবে কেটে গেল। ওনার যেন হঠাৎ কি মনে পড়াতে লাফিয়ে সোজা হয়ে বসলেন। “হুক্কা খেয়েছ কখনও? “ আমাকে জিজ্ঞেস করলেন বেশ উত্তেজিত ভাবে। বললাম “ খেয়েছি বাইরে থাকতে দু একবার।“ উনি যেন প্রায় দৌড়ে বাইরে বেড়িয়ে গেলেন। দরজা খুলে বেড়িয়ে যাওয়ার সময় শুনলাম আমাকে বলছেন “ ভালো হুক্কা আছে আমাদের কাছে। একবার চেখে দেখ। “ বাকি কথাটা শুনতে পেলাম না। বুঝলাম ওনার স্বামী নিশ্চই হুক্কা সেবন করেন। এই রকম বাড়িতে হুক্কার চল থাকাটা খুব একটা অদ্ভুত ব্যাপার নয়। কিন্তু উনি হুক্কাও টানেন। নিশ্চই ওনার বরকে লুকিয়ে লুকিয়ে। তবে বর বাড়ির ফিরে বুঝতে পারবে না যে বউ মদ খেয়েছে সেটা মেনে নেওয়া সত্যি কঠিন। ওনার পা নাই বা টলল, নাই বা ওনার কথা বার্তার কোনও হের ফের হল, কিন্তু স্বামী স্ত্রীর মধ্যে কিছু ব্যক্তিগত ব্যাপার থাকে যেখানে এই ব্যাপারটা ধামা চাপা দেওয়া অসম্ভব। একটু পরে উনি ফিরে এলেন সেই মেয়েটাকে সঙ্গে করে। আমার গ্লাস খালি হয়ে গেছে দেখে যেন নিজেকে একটা ধিক্কার দিয়ে আমার কাছে ক্ষমা চাওয়ার ভঙ্গি করে বললেন “এই দেখ, তুমি খালি হাতে বসে আছ?” একটা জিনিস লক্ষ্য করলাম ওনার শাড়ির আঁচলটা ওনার ঘর্মাক্ত ঊর্ধ্বাঙ্গকে অর্ধ নগ্ন অবস্থায় রেখে মাটিতে লুটিয়ে চলেছে আর উনি এই ভাবে ঘরের মধ্যে অশালীন ভাবে ঘুরে বেড়াচ্ছেন ওনার বাঁদিদের সামনে। একটু অদ্ভুত যদিও। অবশ্য উনি যখন আগের বার এই মেয়েটিকে ধমকাচ্ছিলেন তখন ওনার কথা শুনে বুঝতে পেরেছি উনি আগেও এই মেয়েটিকে বলেছেন যে ওনার মদ্যপ অতিথিদের সামনে কিভাবে আচরণ করতে হবে। তার মানে আমিই প্রথম নই, এর আগেও উনি ওনার একাকীত্বের কারণে অন্যান্য মেয়েদের (বা ছেলেদের, এই চিন্তাটাও ঠিক এই মুহূর্তে উড়িয়ে দিতে পারলাম না) এই বাড়িতে নিয়ে এসে এইসব করেছেন। ওনার ব্যাপার স্যাপার খুব যে সুবিধার নয় সেটা বুঝতে পারছিলাম। উনি আমার জন্য পানীয় প্রস্তুত করছিলেন, নিজেকে একদিনের জন্য বেগম মনে হচ্ছিল। মেয়েটা টেবিলের উপর একটা বনেদী হুক্কা রেখে তামাক প্রস্তুত করছিল নিপুণ হাতে। মিনিট খানেক পর অগ্নি সংযোগ করে বোধহয় চলে গেল। কখন যে অগ্নি সংযোগ করল সেটা নেশার ঘোরে ঠিক বুঝতে পারলাম না, আর হুক্কার থিয়োরি আমি ঠিক জানি না। দেখলাম পাইপ থেকে একটা আবছা ধোঁয়াটে ভাব আর একটা অদ্ভুত গন্ধে ঘরটা ভরে যাচ্ছে, কিন্তু ভীষণ ধীরে ধীরে। আমার হাতে গ্লাস্টা ধরিয়ে দিয়ে উনি সেই আলুথালু অবস্থাতেই নিজের জায়গায় বসে পাইপের মুখটা নিজের মুখে পুড়ে দিয়ে ফুরফুর শব্দ করে কয়েকটা টান নিয়ে এক মুখ ধোয়া ছেড়ে দিলেন। আমি ঠিক সেই সময় গ্লাসে এক চুমুক মেরেছি। কেরকম যেন করে উঠল ভেতরটা। এ কি বিশ্রী গন্ধ। আগেও তো পাবে হুক্কা খেয়েছি কয়েকবার, কিন্তু এরকম বাজে গন্ধ তো কোনও দিনও পাই নই। এটা কি? অবশ্য পরের মুহূর্তে মনে হল বারে যেগুলো চলে সেগুলো হল ফ্লেভারড। ফ্লেভার ছাড়া হুক্কার মশলার গন্ধ বোধ করি এমনটাই হয়ে থাকে। আমার অভ্যেস নাই বলেই এমন অদ্ভুত গা গুলিয়ে উঠেছে।
গন্ধটা সত্যি বিশ্রী। মাথাটা কেমন ঝিম ঝিম করছে। চোখের সামনেটা কেমন যেন আবছা হয়ে এসেছে।
হঠাৎ লক্ষ্য সাদা মতন কি একটা লম্বা জিনিস আমার দিকে এগিয়ে এসেছে। মাথাটা পরিষ্কার করে একটু ভালো করে চোখ খুলে তাকিয়ে দেখলাম উনি পাইপটা আমার দিকে এগিয়ে দিয়েছেন। হয়ত আমার বলা উচিৎ ছিল যে আমি এখন আর হুক্কা টানব না, কিন্তু কেন জানি না মুখ থেকে বের হল না। উল্টে ওনার হাত থেকে নিয়ে মারলাম একটা মোক্ষম টান। উফফ কি ঝাঁঝালো গন্ধ। কিছুটা ধোঁয়া বোধহয় অসাবধানতা বশত ভেতরে নিয়ে নিয়েছিলাম। ভয়ানক ভাবে বিষম খেলাম। যাক কয়েকবার জোড়ে জোড়ে কেশে নিজেকে সামলে নিলাম। কিন্তু সত্যি এত বাজে গন্ধ ওয়ালা জিনিস খেয়ে কারোর নেশা হয়? আবার আমার মাতাল মন পরক্ষণেই আমাকে বোঝাল যে ধুম্রপানের গন্ধও তো আমার ভালো লাগে না কিন্তু কত কোটি কোটি লোক আর আজকাল মেয়েরাও সেটা বেশ ভালো ভাবে উপভোগ করে। হতে পারে আমার অনভ্যাস। আরও বার কয়েক মারলাম টান। চোখের সামনেটা কেমন যেন আরও ঝাপসা হয়ে গেল। ঠিক কোনও কিছুই ঠিক ঠাক দেখতে পাচ্ছি না। বা হাতে ধরা গ্লাসের উপর থেকে আমার নিয়ন্ত্রণ কেমন যেন নিজের অনিচ্ছা সত্ত্বেও ধীরে ধীরে হারিয়ে ফেলছি। ছিঃ, এখন কি গ্লাস ভাঙ্গব হাত থেকে ফেলে আর তাও আবার পরের বাড়িতে নিমন্ত্রিত হয়ে এসে। একটু নড়ে চড়ে বসলাম। ঠিক করলাম খুব স্বাভাবিক স্বরে বলতে হবে যে আমার একটু ঘুম ঘুম পাচ্ছে কারণ আমার ঘুম ঠিক ভাবে পোরেনি, তাই এখন, এইবার একটু ঘুমাতে যাব। কিন্তু ভেতর থেকে কোনও শব্দ বের হল না। ডান হাতের পেছন দিয়ে কয়েকবার বেশ ভালো ভাবে চোখ ডলে নিলাম। খুব আবছা দেখতে পেলাম উনি একটা স্বচ্ছ তরল ভর্তি গ্লাস হাতে নিয়ে বসে আছেন, সোফার উপর নিজের অর্ধনগ্ন শরীরটার ভার ছেড়ে দিয়েই বসে আছেন, আর মনে হল যেন ঠিক আমার দিকেই তাকিয়ে আছেন। স্পষ্ট না হলেও মনে হল যেন উনার ঠোঁটের কোণে কেমন যেন একটা ক্ষীণ হাঁসি। ভেতর থেকে যেন সব শক্তি শেষ হয়ে গেছে। আমার হাঁটুর থেকে দু ইঞ্চি দূরে রাখা টেবিলটাও যেন কত দূরে মনে হচ্ছে। মানসিক স্থিরতা হারিয়ে যাচ্ছে। মন বলল গ্লাসটা এইবার রেখে দে মা, কিন্তু করলাম ঠিক তার উল্টোটা। ডান হাতে ধরে থাকা পাইপের ধূম ছাড়া মুখে আবার ঠোঁট ছোঁয়ালাম। আরে এ তো গাঁজা। এই গন্ধ আমার চেনা। অনেক আগের চেনা। অনেক বছর এই গন্ধের সাথে কোনও সম্পর্ক না থাকায় প্রথমে ঠিক চিনতে পারিনি, আর তাই এত নোংরা আর বিশ্রী লাগছিল গন্ধটা। মহিলা গাঁজা খান। আরে নিকুচি করেছে মহিলা, উনি আমাকে গাঁজা খাওয়াচ্ছেন। উফফ কি যে করব এখন। সমস্ত মনের জোর এক করে কাঁচের গ্লাসটা টেবিলে নামিয়ে রাখতে গেলাম। কিন্তু গলাটা একদম শুঁকিয়ে গেছে। ডান হাত থেকে কখন যে হুক্কার নলটা মেঝেতে পড়ে গেছে সেটা টের পাইনি। দু হাত দিয়ে গ্লাস্টা মুখের উপর চেপে ধরে ওই বিষাক্ত পানীয় গলায় ঢেলে নিজের গলা ভেজানোর চেষ্টা করলাম। অন্য কেউ হলে নিশ্চিত বুঝতে পারত যে আমার শরীর খারাপ লাগছে, আর সাথে সাথে সাহায্য করতে ছুটে আসত, কিন্তু এই মহিলার মধ্যে কোনও হেল দোল লক্ষ্য করলাম না। একই ভাবে ঠাই বসে আছেন। অবশ্য ওনার অবয়বটাও কেমন যেন ধীরে ধীরে চোখের সামনে থেকে হারিয়ে যাচ্ছে। খালি গ্লাসটা টেবিলে রাখার চেষ্টা করলাম, কিন্তু পারলাম না, চেতনা প্রায় শেষ, বুঝলাম টেবিলের শেষ প্রান্তে পৌঁছানোর আগেই হাত থেকে গ্লাসটা ছেড়ে দিয়েছি, একটা খুব ক্ষীণ শব্দ পেলাম, মাথার পেছন থেকে কেউ একটা বলে উঠল গ্লাসটা ভেঙ্গে ফেলেছি মাটিতে ফেলে। শরীরটাকে আলগা ভাবে সোফার ওপর এলিয়ে দিলাম। এখন আর স্মার্ট হওয়ার চেষ্টা করে লাভ নেই। নেশা যে ভালোই চড়েছে সেটা সবাই বুঝতে পারবে। কিন্তু আধ খোলা চোখে আবছা দেখলাম এখনও মহিলার মধ্যে কোনও হেল দোল নেই। যেই কে সেই। আমার গলা দিয়ে শব্দ বেরনো দূরে থাক, আমার সারা শরীর অদ্ভুত ভাবে অবশ হয়ে গেছে। অদ্ভুত একটা অবস্থা, আবছা আলোয় চারপাশের সব কিছু দেখতে পাচ্ছি, যদিও আবছা, সব কিছু আবছা শুনতে পাচ্ছি, কিন্তু কিছু করার বা বলার বা নড়ার ক্ষমতা অবশিষ্ট নেই একটুও।
নেশার মধ্যে দেখলাম এইবার মহিলা উঠে দাঁড়িয়েছেন। হাতের গ্লাসটা টেবিলে সশব্দে নামিয়ে রেখেছেন। “মায়া, আয়। ওর হয়ে গেছে।“ গলায় একটা যেন কৌতুকের ছোঁয়া। আমার শরীরে কোনও জোর অবশিষ্ট না থাকলেও মাথা যেন ঘোলাটে অবস্থাতেও কাজ করে চলেছে। আবছা বুঝতে পারলাম সেই মেয়েটা আমার চোখের সামনে এসে দাঁড়িয়েছে। “দিদি দাঁড়াতে পারবে?” এখন আর আপনি করে কথা বলছে না মেয়েটা। আর ওর নাম মায়া সেটার সংকেত আমার মস্তিষ্কের কোষগুলো পেয়েছে। আমি বা হাতটা ওর দিকে বাড়ানোর একটা ব্যর্থ চেষ্টা করলাম, কিন্তু হাতটা যেন উঠলই না। নেতিয়ে পড়ে রইলাম। মেয়েটা আমার আধবোজা চোখের সামনে ঝুঁকে আমার সামনে ওর মুখটা নিয়ে এল। আমার ঘাড় ধরে একটু নাড়াল আমাকে। আমি নড়লাম না, না নড়তে পারলাম কই আর। বুঝতে পারলাম আমার হ্যান্ড ব্যাগটা আমার পাশ থেকে তুলে নিয়ে ওর মালকিনের দিকে এগিয়ে দিল। আবছা দেখতে পেলাম ওর মালকিন ব্যাগটা হাতে নিয়েই ব্যাগের চেনটা খুলে ভেতরটা হাতড়ে দেখতে শুরু করে দিয়েছেন। উনি সোফায় বসে পড়লেন আবার। সব টাকা পয়সা ইত্যাদি বের করে টেবিলে রাখলেন পর পর। কিন্তু না টাকা মারার বোধহয় কোনও মতলব ওনার নেই। আবার সব ঠিক মতন ব্যাগের ভেতরে ভরে রেখে মায়ার হাতে ধরিয়ে দিলেন। মায়া ব্যাগটা হাতে নিয়ে আমার কোলে রেখে দিল। আমি ধরতে পারলাম না। কোল থেকে ব্যাগটা পড়েই যাচ্ছিল, কিন্তু বুঝলাম মায়া শেষ মুহূর্তে ধরে নিল ব্যাগটাকে। আমার গালে দুটো আলতো টোকা মেরে বলল “দিদি, ও দিদি উঠতে পারবে?” আমি নড়তে পারলাম না। আমার গালের ওপর পরের বারের টোকাটা বেশ জোড়েই এল। এটাকে ঠিক ঘুম ভাঙানোর টোকা বলা যায় না, বরং বলা যায় যে সপাটে একটা চড় মারল এই কাজের মেয়েটা। সাথে সাথে আমার মাথাটা অন্য দিকে এলিয়ে পড়ল। চোখের কোনায় কি কয়েক ফোঁটা জল এসে জড় হয়েছে? সেটা ঠিক বলতে পারব না। আরেকটা থাপ্পড় পড়ল সজোরে গালের উপর। “ এ তো পুরো আউট।“ পেছনে ফিরে ওর মালকিনের দিকে তাকিয়ে বলল। আমার মস্তিষ্ক আমাকে বলল এ মেয়েটা ঠিক চাকরানির মতন কথা বলছে না, বা ওর গলায় সেই ভয়ের স্বরটাও আর নেই। আবছা শব্দ পেলাম রত্নাদির গলার “মাগিটাকে তুলে নিয়ে যা। আমার কথা আমি রেখেছি। তোমরা কিন্তু...” বাকি কথা গুলো কেমন যেন হারিয়ে যাচ্ছে, কানে পৌঁছালেও, মাথায় পৌঁছাল না। আরেকটা সজোরে থাপ্পড় পড়ল গালের উপর। “গলা শুঁকিয়েছে?” আরেকটা ঠাপ্পড়, “কিরে মাগি, কথা কানে ঢোকে না?” আমার ব্যাগটা দেখলাম মেঝেতে নামিয়ে রেখে উঠে দাঁড়াল। একটা কেমন জানি ভীষণ অট্টহাসি দিয়ে বলল, “গলা শুঁকিয়েছে, চোখের ইশারায় বোঝাচ্ছে। “ দেখলাম ভদকার বোতলটা হাতে তুলে নিল। মুটকিটা খুলে সামনে ছুঁড়ে ফেলে দিল। রত্নাদির সামনেই গলায় ঢক ঢক করে এক গুচ্ছ মদ ঢেলে দিল। বোধহয় একটু বেশীই ঢেলেছে। খক খক করে কয়েকটা কাশি দিল। ডান হাতের পেছনটা দিয়ে নিজের ঠোঁটটা মুছে নিল। পরক্ষণেই আমার বা পাশে সোফার খালি অংশে অনাবৃত ডান হাঁটুটা রেখে আমার মুখের ওপর ঝুঁকে পড়ল। ওর কাজল কালো চোখ গুলো আমার আধবোজা চোখের ওপর স্থির। সে চোখে যেন একটা আগুন জ্বলছে। মনে মনে একটা ভয় ধরে গেল। আমার একাধিক পুরুষ আর নারীর সাথে শয্যা ভাগ করে নেওয়ার অভিজ্ঞতা আছে, কোনও দিন এমন ভয়ের আর অজানা শিরশিরানি ধমনীতে অনুভব করিনি। সে সব খেলার ছলে হয়েছে, কিন্তু বুঝতে পারছি না যে এখন কি হবে। নিজের ঠোঁটটাকে আমার কানের একদম কাছে নিয়ে এসে ফিসফিস করে কোমল গলায় বলল “ পিপাসা পেয়েছে?” একটু থেমে আবার জিজ্ঞেস করল “ কি রে, পিপাসা পেয়েছে?” আমি চোখের ইশারায় কোনও মতে বোঝালাম সত্যি পিপাসায় মরে যাচ্ছি। “পেয়েছে!” হাঁসতে হাঁসতে পেছনে ফিরে বলল। আমার অসহায় চোখের ইশারা ও ধরতে পেরেছে। ডান হাতে আমার মাথার চুলের মুঠি নিজের শক্ত হাতে চেপে ধরল, অসম্ভব জোর মনে হল ওর ওই হাতে। মাথাটাকে নিজের হাতের জোড়ে সোফার পিছন দিকে হেলিয়ে দিয়ে শক্ত করে ধরে রইল। দম বন্ধ হয়ে যাবার জোগাড়। খাবি খাচ্ছি যেন। মুখটা জলের আশায় হাঁ হয়ে গেল আপনা থেকেই। খোলা আধ খাওয়া মদের বোতলটা চেপে ধরল আমার খোলার মুখের ওপর। গন্ধ নয়, কিন্তু ঝাঁজটা নিতে পারছি না আর।
কিন্তু আমার শরীর আমার সাথে বিদ্রোহ করল। আমি চাইছিলাম না আর এই বিষটা নিতে। কিন্তু গলা এত শুঁকিয়ে গেছে যে তরল ব্যাপারটাকে আঁটকে রাখতে পারলাম না। প্রায় বোতল শেষ করে দিল আমার পেটের ভেতর। শেষের কয়েক ফোঁটা নিজের গলার ভেতরে ঢেলে দিয়ে আমার চুলের মুঠিটা ছেড়ে উঠে দাঁড়াল। “এখনও মাগি বমি করছে না। স্ট্যামিনা আছে। এরকমই চাই। নিয়ে চল।“ আধ বোজা চোখে দেখলাম রত্না দি এখনও সোফায় জড় ভরতের মতন বসে আছেন। “কি রে কথা কানে ঢোকেনি? চল নিয়ে চল। ওদের আসতে এখনও সময় লাগবে। তার আগে ডাক্তার আসবে। চল, বসে বসে গাঁজা টানিস না আর। “ মনে হল রত্নাদিরও যেন নেশা হয়ে এসেছে। তাই শুরুতেই ঠিক নড়তে পারল না। মায়া নামক মেয়েটি ওর দিকে দ্রুত পায়ে এগিয়ে গিয়ে একটা চড় বসিয়ে দিল সজোরে আর সশব্দে। কে কার মালকিন বুঝতে পারছি না। আবার একটা ধ্যাতানি দিল রত্নাদিকে “চল ওঠ। তুই একটা সমাজের বোঝা।“ আমার চেতনা হারিয়ে গিয়েও হারিয়ে যাচ্ছে না কেন বুঝতে পারছি না। বার বার মন কে বোঝাতে চাইছি এ কিছুই নই, এ এক দুঃস্বপ্ন। একটু পরেই ঘুম ভেঙ্গে উঠে পড়ব, ব্যস সব আগের মত হয়ে যাবে। উঠেই নিশ্চই ঢাকের শব্দ শুনতে পাব। এখন তো সেই পূজা। কিন্তু কোথায় কি। নেতিয়ে পড়ে পড়ে দেখলাম রত্না দি উঠে দাঁড়ালেন টলমল পায়ে। কি যে হচ্ছে সত্যি বুঝতে পারছি না। রত্না দি যে মায়ার মালকিন নন সেটা বুঝতে পারছি স্পষ্ট। মায়ার একটু আগে দেখা আচরণ ছিল একটা নাটক। এখন তো উল্টো মনে হচ্ছে। নায়িকারা শুরুতে অনেক সময় আসেন না। এখন সময় বুঝে ঠিক সময়ে ক্লাইম্যাক্সে এসে হাজির হয়েছেন তদারকি করতে। রত্না দি যেন সোফা থেকে উঠতে গিয়ে পড়ে যাচ্ছিলেন। তবু নিজেকে সামলে নিলেন। মায়া ওনার দিকে তাকিয়ে বলল “তোকে আমরা ঠকাইনি। তুই আমাদের ঠকিয়েছিস। বেইমান কোথাকার। তোর যা প্রাপ্য সব পাবি। নে এখন কাজ কর। “ একটু আগে যাকে দেখে মনে হচ্ছিল যে ভয়ে কাঁপছে সে এখন তার মালকিনের উপর তুই তুকারি করে চিৎকার করছে।
দুজনে আমাকে এসে দুহাতে ধরে বগলদাবা করে সোফা থেকে উঠিয়ে নিল। আমার নিজের শরীরে যে কোনও জোর অবশিষ্ট নেই সেটা আর কতবার লিখব। তবে হ্যাঁ যেটুকু বাঁচা কুচা ছিল সব মায়ার এই অদ্ভুত পরিবর্তনের পরে কোথায় যেন তলিয়ে গেছে। ওরা দুজন মিলে আমাকে নিয়ে প্রায় টানতে টানতে দরজা অব্দি নিয়ে এল। দূর থেকে একটা যেন বুট জুতোর শব্দ পেলাম। আবার কে আসছে। মনটা ভয়ে সিঁথিয়ে গেল। আর বেশ দৌড়ে দৌড়ে আসছে। কি মুশকিল আরেকটা মেয়ে। বয়স আমার মতন বা আমার থেকে হয়ত সামান্য একটু কম, বেশী কোনও মতেই নয়। এই মেয়েটা দেখলাম শার্ট প্যান্ট পরে এসেছে, পায়ে বুট জুতো। রত্নাদি আর মায়া কে সাহায্য করতে এগিয়ে এলো। চাপা গলায় মায়া কেই উদ্দেশ্য করে বলল “তাড়াতাড়ি ফ্রেশ করিয়ে একে কনে সাজিয়ে নিয়ে বেরোতে হবে গাড়ি করে। ডাক্তারবাবু এই এলেন বলে।“ ওরা আমার অসাড় শরীরটাকে প্রায় হ্যাচরাতে হ্যাচরাতে দোতলায় নিয়ে গেল। হাঁটুতে একবার পড়ে গিয়ে ব্যথাও পেলাম যেন। কিন্তু মনের ভয় আর ব্যথা এত বেশী যে হাঁটুর ব্যথা ঠিক অনুভব ই করলাম না। একটা অন্ধকার মতন ঘরে ঢুকিয়ে একটা বড় বিছানার ওপর ধাক্কা মেরে ফেলে দিল ওরা। “তেমন কিন্তু ভারী নয়। “ বোধহয় মায়াই বলল। সঠিক বলতে পারব না কারণ আমি এখন উপুড় হয়ে শুয়ে আছি। হয়ত দশ কি পনের মিনিট আমাকে এইভাবেই আমাকে শোয়া অবস্থায় একলা ফেলে ওরা ঘর থেকে বেড়িয়ে গিয়েছিল। যখন ফিরে এলো তখন ওদের গলা ছাড়াও আরেকজন পুরুষের গলা শুনলাম। এই কি ডাক্তার বাবু। আমার পিছনে দাঁড়িয়ে ওরা ফিস ফিস করে কি পরামর্শ করল সে কথাগুলো আমার ঠিক কানে ঢুকছিল না। একসময় অনুভব করলাম আমার কটন লেগিন্সের কোমরের কাছে এক জোড়া হাত নেমে এল। আমার কুর্তিটা কোমর থেকে তুলে দিয়েছে নিশ্চই। কারণ লেগিন্সের ওপরে পিঠের ওপর একটা গরম ভ্যাঁপসা হাওয়া অনুভব করলাম। ওই হাত জোড়া এইবার সরাসরি লেনিন্সের কোমরের ইলাস্টিক ব্যান্ডটা ধরে এক ঝটকায় নিচে নামানোর চেষ্টা করল। আমার শরীরের ভারের জন্য অবশ্য এত সহজে নামাতে পারল না। একটা সজোরে ক্যাঁচ মতন শব্দ হল, আর তার পরের মুহূর্তেই অনুভব করলাম প্যানটি থেকে বেড়িয়ে থাকা পাছারা মাংসল অংশে সেই ভ্যাঁপসা গরম হাওয়ার ছোঁয়া। সব শক্তি দিয়ে একবার শেষ চেষ্টা করে ঘোরবার চেষ্টা করলাম। ওরাও বোধহয় আমার নড়াচড়াটা লক্ষ্য করেছে। কে একজন বিছানার ধারে এসে আমার দুটো হাত বিছানার সাথে চেপে ধরল। বুঝলাম কোনও এক হাতের (ডান হাতই হবে) কনুই দিয়ে আমার পিঠের ঠিক মধ্যভাগটাকে বিছানার সাথে চেপে রাখল। উফ কি গায়ের জোর রে বাবা। হয় ব্যায়াম করে অথবা গায়ে গতরে খেটে খায়। আর অবশ্য আরেকটা ব্যাপার হতে পারে, সেটা হল এই যে আমার শরীরের হাল এই মুহূর্তে এতই বেহাল যে একটা বাচ্চা মেয়েও আমাকে এইভাগে চেপে ধরে রাখতে পারবে। এক মুহূর্তও সময় নষ্ট না করে কোমরের কাছের হাত জোড়া প্যানটির ইলাস্টিক ব্যান্ডে হাত দিল। লেগিন্সটাকে অন্তত একবার হলেও নামানোর চেষ্টা করেছিল, কিন্তু প্যানটির ক্ষেত্রে তেমনটা করল না। প্রথমেই কোমরের একটু নিচে ব্যান্ডটাতে হাত দিয়ে জোড়ে একটা হ্যাঁচকা টান মারল। আমার অসহায় কোমর আর পাছাটা যেন বিছানার ওপর একটু কেঁপে কেঁপে উঠল। আরেকটা সজোরে ক্যাঁচ মতন শব্দ হল আর তার পরের মুহূর্তেই পাছার নগ্ন চামড়ায় অনুভব করলাম সেই ভ্যাঁপসা গরম হাওয়ার পরশ। আমার পাছা আর পেছন দিকে প্রায় হাঁটু অব্দি পুরোটা থাই নগ্ন করে দিয়েছে। আরেক জোড়া হাত কিন্তু এখনও আমাকে বিছানার সাথে চেপে ধরে রেখেছে। কয়েক মুহূর্তর জন্য ওই হাত জোড়া আমার পায়ের পাশ থেকে সরে কোথায় যেন চলে গেল। এই অচেনা মেয়েগুলো আর এই ছেলেটার সামনে এই ভাবে কোমরের নিচে নগ্ন হয়ে শুয়ে থাকতে যারপরনাই লজ্জা পাবার কথা, কিন্তু আমার মানসিক ভয় এখন লজ্জাভাবটাকে ছাপিয়ে গিয়েছে। পাছার বাদিকের মাংসল বলয়ের উপরের দিকে ঠিক কোমরের নিচে একটা ঠাণ্ডা ভেজা স্পর্শ অনুভব করলাম। ভেজা নরম জিনিসটা দিয়ে আমার নগ্ন ত্বকের ওপর খানিকক্ষণ ঘষে জায়গাটাকে যেন আরও নরম করে ভিজিয়ে দিল। তার ঠিক কয়েক সেকন্ড পরেই একটা তীক্ষ্ণ সুচালো জিনিস সজোরে ঢুকে গেল আমার ভেজা চামড়া ভেদ করে। ওহহ, ইনজেকশন দিচ্ছে লোকটা আমাকে। কয়েক সেকন্ড ব্যস হাত জোড়া সরে গেল পেছন থেকে। ডাক্তারের কাজ শেষ।
একটা মেয়েলি গলা পেলাম “কতক্ষণ থাকবে?” এইবার স্পষ্ট শুনলাম লোকটার গলা “পাঁচ থেকে ছয় ঘণ্টা তো থাকবেই। তবে পুরো বেহুঁশ হবে না। এখন যেমন আছে ঠিক তেমনই থাকবে। নেশাগ্রস্ত হয়ে থাকবে। পুরো বেহুঁশ করে দিলে সমস্যা হবে। কারণ পথে চেকিং হলে একজন অজ্ঞান মহিলাকে নিয়ে কোথায় যাওয়া হচ্ছে সে প্রশ্ন বোঝানো শক্ত। “ মেয়েটা যেন কিছু একটা বলতে যাচ্ছিল। ডাক্তার তাকে একটু গলা চড়িয়ে থামিয়ে দিল। “আহ, বোকার মতন তর্ক করো না এখন। এক কাজ কর। তুমি খবর নাও যে গাড়ি রেডি কিনা। আর সাথে এটাও জেনে নিও যে থানার মধ্যে কোনও খবর গেছে কিনা। “ একটা মেয়ে বলল “সেটা আর এমন কি। থানার বাইরেই তো একজন কে বসিয়ে রেখে এসেছি। তবে একটা জিনিসে ভয় পাচ্ছি, পুরো বেহুঁশ না করে নিয়ে গেলে কেউ ধরলে যদি চিৎকার করে বসে বা কিছু বলে বসে তখন তো পুরো ব্যাপারটা ঘেঁটে যাবে।“ ডাক্তার বললেন “ সে চিন্তা তোমাকে করতে হবে না। চোখ তুলে শুধু চেয়ে থাকবে। কিন্তু কিছু বলতে পারবে না, নড়া চড়া করার কথা ভুলে যাও। ওই মদের নেশা আর গাঁজা আর ইয়ের (ইয়েটা যে কি সেটা আমারও জানার প্রবল আগ্রহ, কারণ আমার দৃঢ় বিশ্বাস ওই ইয়েটা গাজার সাথে মিশিয়ে দিয়েছিল বলেই আমার এখন এই হাল।) নেশাটা ধীরে ধীরে নেমে গেলেও ওষুধের নেশা পাক্কা পাঁচ থেকে ছয় ঘণ্টা থাকবে। তার পরেও ঘণ্টা দুই তিনেক ঘুম ঘুম ভাব থাকবে। অবশ্য সব ঠিক ঠাক থাকলে ততক্ষণে আমরা ডেরায় পৌঁছে যাব। “ খেয়াল করলাম যে মেয়েটি আমাকে বিছানার সাথে চেপে ধরে রেখেছিল সে আমার শরীরের ওপর থেকে নিজের হাত সরিয়ে নিয়েছে। ডাক্তার বোধহয় ঘর থেকে বেড়িয়ে গেল। কারণ অনেকটা দূর থেকে ওর গলার আওয়াজ পেলাম “তোমরাও রেডি হয়ে নাও। আমি আসছি আধা ঘণ্টার মতন পরে। তারপর তোমরা তিন জন বেড়িয়ে যেও। একজন কিছু জিনিস পত্র কিনে নেবে, মেয়েলি জিনিস পত্র আর কি। আরেকজন বাড়িটার থেকে একটু দূরে দাঁড়িয়ে খেয়াল রেখ কোথাও কোনও চড়া চড়া হচ্ছে কিনা। হ্যাঁ ওই তুমি (বুঝলাম এটা রত্না দিকে উদ্দেশ্য করে বলেছে) ছাড়া দুজনের কাছে পিস্তল আছে নিশ্চই। চরের তো আর অভাব নেই। সাবধান থাকা ভালো। তুমি যাবে মেয়েলি জিনিসগুলো কিনতে। আর তুমি যাবে গাড়িটার কাছে। থানার সামনেই আছে। গিয়ে এমন ভাব দেখাবে যেন তোমার দাদার বউ হঠাত করে অসুস্থ হয়ে পড়েছে, এখানে ডাক্তার পাচ্ছে না। তাই একটু দূরে নিয়ে যেতে হবে। ও হ্যাঁ ব্যাগটা এখানেই রেখে যাচ্ছি। খেয়াল রেখ।“ ডাক্তার বেড়িয়ে গেল।
জানি না এত গরমের জন্য কিনা, নাকি এই অদ্ভুত পরিবেশের দরুন যেখানে ঘর পুরোপুরি আলোকিত নয়, দুই গ্লাসেই আমার মাথাটা বেশ ঘোলাটে হয়ে উঠেছে। চার পাশের কোনও বস্তু বা বিষয়ের উপরেই ঠিক একভাবে মন যোগ করতে পারছি না। হতে পারে রাত্রে ঘুম ভালো করে হয় নি তাই অল্পেই চড়ে গেছে। খেয়াল করলাম আমার কেউ কিছু বলছি না। অথচ সেইদিন আমরা ওই দোকানে বসে কত কথা বলছিলাম। আমার না হয় নতুন জায়গা, কিন্তু উনি কেন গুম মেরে গেছেন সেটাই বুঝতে পারছি না। ওনার যে কত গুলো গ্লাস শেষ হয়েছে সেটা আর গুনিনি। বোতল দেখলাম অনেকটাই সাবাড় করে দিয়েছেন। স্ট্যামিনা আছে বলতে হবে। ওনার চোখের নজরও বেশ ঘোলাটে, চোখের কোণে যেন ছোট ছোট দু এক ফোঁটা জল দেখতে পেলাম। ভগবান জানেন কি ভাবছেন। আমি একটু গলা খাঁকারি দিলাম কারণ আমার গ্লাস শেষ। আমি ঠিক বুঝতে পারছিলাম না যে আমার আর চাওয়া ঠিক হবে কিনা। আমার গলা খাকরানির শব্দ পেয়ে উনি যেন ওনার নিদ্রা ভেঙ্গে উঠে সোজা হয়ে বসলেন। এতক্ষনে খেয়াল করলাম ওনার শাড়ির আলগা আঁচলটা ওনার বুকের ওপর থেকে নেমে ওনার কোমরের ওপর অলস ভাবে দড়ির মতন পড়ে আছে। আঁচলের লম্বা অংশটা মাটিতে লুটাচ্ছে। ওনার ঘামে ভেজা ব্লাউজে ঢাকা স্তন, ওনার সুগভীর নাভি আর তার খানিকটা নিচ অব্দি ফর্সা তলপেটের পুরোটাই নগ্ন। কিন্তু ওনার মধ্যে শাড়ির আঁচল ঠিক করার কোনও উদ্যোগ দেখা গেল না। আমার জন্য নির্দিষ্ট করা গ্লাসে তরল ঢেলে আমার হাতে উঠিয়ে দেবার সময় একবার যেন ওনার সাথে আমার চোখাচুখি হল। সাথে সাথে উনি নিজের বুক আর নগ্ন তলপেটের দিকে এক ঝলক দৃষ্টি ফেলে নিলেন। কিন্তু আঁচলটা যেমন ছিল তেমনই রইল। দরজায় টোকা। খুব বিরক্তির সাথে জিজ্ঞেস করলেন “কে?” বাইরে থেকে সেই আগে দেখা মেয়েটার গলা পেলাম। “আসব?” গলা চড়িয়ে বললেন “ এখনও চড়ে নি। আরও আধ ঘণ্টা পরে আয়।“ কার চড়ার জন্য উনি অপেক্ষা করছেন ভগবানই জানেন। তবে একটা জিনিস বুঝতে পারছিলাম যে আর বেশী গিললে দুপুরের খাওয়া মাটি হয়ে যাবে। এখন বেশী মদ গিললে আমি ভালো করে খেতে পারি না।
আরও কিছুক্ষণ এরকম নিরবে কেটে গেল। ওনার যেন হঠাৎ কি মনে পড়াতে লাফিয়ে সোজা হয়ে বসলেন। “হুক্কা খেয়েছ কখনও? “ আমাকে জিজ্ঞেস করলেন বেশ উত্তেজিত ভাবে। বললাম “ খেয়েছি বাইরে থাকতে দু একবার।“ উনি যেন প্রায় দৌড়ে বাইরে বেড়িয়ে গেলেন। দরজা খুলে বেড়িয়ে যাওয়ার সময় শুনলাম আমাকে বলছেন “ ভালো হুক্কা আছে আমাদের কাছে। একবার চেখে দেখ। “ বাকি কথাটা শুনতে পেলাম না। বুঝলাম ওনার স্বামী নিশ্চই হুক্কা সেবন করেন। এই রকম বাড়িতে হুক্কার চল থাকাটা খুব একটা অদ্ভুত ব্যাপার নয়। কিন্তু উনি হুক্কাও টানেন। নিশ্চই ওনার বরকে লুকিয়ে লুকিয়ে। তবে বর বাড়ির ফিরে বুঝতে পারবে না যে বউ মদ খেয়েছে সেটা মেনে নেওয়া সত্যি কঠিন। ওনার পা নাই বা টলল, নাই বা ওনার কথা বার্তার কোনও হের ফের হল, কিন্তু স্বামী স্ত্রীর মধ্যে কিছু ব্যক্তিগত ব্যাপার থাকে যেখানে এই ব্যাপারটা ধামা চাপা দেওয়া অসম্ভব। একটু পরে উনি ফিরে এলেন সেই মেয়েটাকে সঙ্গে করে। আমার গ্লাস খালি হয়ে গেছে দেখে যেন নিজেকে একটা ধিক্কার দিয়ে আমার কাছে ক্ষমা চাওয়ার ভঙ্গি করে বললেন “এই দেখ, তুমি খালি হাতে বসে আছ?” একটা জিনিস লক্ষ্য করলাম ওনার শাড়ির আঁচলটা ওনার ঘর্মাক্ত ঊর্ধ্বাঙ্গকে অর্ধ নগ্ন অবস্থায় রেখে মাটিতে লুটিয়ে চলেছে আর উনি এই ভাবে ঘরের মধ্যে অশালীন ভাবে ঘুরে বেড়াচ্ছেন ওনার বাঁদিদের সামনে। একটু অদ্ভুত যদিও। অবশ্য উনি যখন আগের বার এই মেয়েটিকে ধমকাচ্ছিলেন তখন ওনার কথা শুনে বুঝতে পেরেছি উনি আগেও এই মেয়েটিকে বলেছেন যে ওনার মদ্যপ অতিথিদের সামনে কিভাবে আচরণ করতে হবে। তার মানে আমিই প্রথম নই, এর আগেও উনি ওনার একাকীত্বের কারণে অন্যান্য মেয়েদের (বা ছেলেদের, এই চিন্তাটাও ঠিক এই মুহূর্তে উড়িয়ে দিতে পারলাম না) এই বাড়িতে নিয়ে এসে এইসব করেছেন। ওনার ব্যাপার স্যাপার খুব যে সুবিধার নয় সেটা বুঝতে পারছিলাম। উনি আমার জন্য পানীয় প্রস্তুত করছিলেন, নিজেকে একদিনের জন্য বেগম মনে হচ্ছিল। মেয়েটা টেবিলের উপর একটা বনেদী হুক্কা রেখে তামাক প্রস্তুত করছিল নিপুণ হাতে। মিনিট খানেক পর অগ্নি সংযোগ করে বোধহয় চলে গেল। কখন যে অগ্নি সংযোগ করল সেটা নেশার ঘোরে ঠিক বুঝতে পারলাম না, আর হুক্কার থিয়োরি আমি ঠিক জানি না। দেখলাম পাইপ থেকে একটা আবছা ধোঁয়াটে ভাব আর একটা অদ্ভুত গন্ধে ঘরটা ভরে যাচ্ছে, কিন্তু ভীষণ ধীরে ধীরে। আমার হাতে গ্লাস্টা ধরিয়ে দিয়ে উনি সেই আলুথালু অবস্থাতেই নিজের জায়গায় বসে পাইপের মুখটা নিজের মুখে পুড়ে দিয়ে ফুরফুর শব্দ করে কয়েকটা টান নিয়ে এক মুখ ধোয়া ছেড়ে দিলেন। আমি ঠিক সেই সময় গ্লাসে এক চুমুক মেরেছি। কেরকম যেন করে উঠল ভেতরটা। এ কি বিশ্রী গন্ধ। আগেও তো পাবে হুক্কা খেয়েছি কয়েকবার, কিন্তু এরকম বাজে গন্ধ তো কোনও দিনও পাই নই। এটা কি? অবশ্য পরের মুহূর্তে মনে হল বারে যেগুলো চলে সেগুলো হল ফ্লেভারড। ফ্লেভার ছাড়া হুক্কার মশলার গন্ধ বোধ করি এমনটাই হয়ে থাকে। আমার অভ্যেস নাই বলেই এমন অদ্ভুত গা গুলিয়ে উঠেছে।
গন্ধটা সত্যি বিশ্রী। মাথাটা কেমন ঝিম ঝিম করছে। চোখের সামনেটা কেমন যেন আবছা হয়ে এসেছে।
হঠাৎ লক্ষ্য সাদা মতন কি একটা লম্বা জিনিস আমার দিকে এগিয়ে এসেছে। মাথাটা পরিষ্কার করে একটু ভালো করে চোখ খুলে তাকিয়ে দেখলাম উনি পাইপটা আমার দিকে এগিয়ে দিয়েছেন। হয়ত আমার বলা উচিৎ ছিল যে আমি এখন আর হুক্কা টানব না, কিন্তু কেন জানি না মুখ থেকে বের হল না। উল্টে ওনার হাত থেকে নিয়ে মারলাম একটা মোক্ষম টান। উফফ কি ঝাঁঝালো গন্ধ। কিছুটা ধোঁয়া বোধহয় অসাবধানতা বশত ভেতরে নিয়ে নিয়েছিলাম। ভয়ানক ভাবে বিষম খেলাম। যাক কয়েকবার জোড়ে জোড়ে কেশে নিজেকে সামলে নিলাম। কিন্তু সত্যি এত বাজে গন্ধ ওয়ালা জিনিস খেয়ে কারোর নেশা হয়? আবার আমার মাতাল মন পরক্ষণেই আমাকে বোঝাল যে ধুম্রপানের গন্ধও তো আমার ভালো লাগে না কিন্তু কত কোটি কোটি লোক আর আজকাল মেয়েরাও সেটা বেশ ভালো ভাবে উপভোগ করে। হতে পারে আমার অনভ্যাস। আরও বার কয়েক মারলাম টান। চোখের সামনেটা কেমন যেন আরও ঝাপসা হয়ে গেল। ঠিক কোনও কিছুই ঠিক ঠাক দেখতে পাচ্ছি না। বা হাতে ধরা গ্লাসের উপর থেকে আমার নিয়ন্ত্রণ কেমন যেন নিজের অনিচ্ছা সত্ত্বেও ধীরে ধীরে হারিয়ে ফেলছি। ছিঃ, এখন কি গ্লাস ভাঙ্গব হাত থেকে ফেলে আর তাও আবার পরের বাড়িতে নিমন্ত্রিত হয়ে এসে। একটু নড়ে চড়ে বসলাম। ঠিক করলাম খুব স্বাভাবিক স্বরে বলতে হবে যে আমার একটু ঘুম ঘুম পাচ্ছে কারণ আমার ঘুম ঠিক ভাবে পোরেনি, তাই এখন, এইবার একটু ঘুমাতে যাব। কিন্তু ভেতর থেকে কোনও শব্দ বের হল না। ডান হাতের পেছন দিয়ে কয়েকবার বেশ ভালো ভাবে চোখ ডলে নিলাম। খুব আবছা দেখতে পেলাম উনি একটা স্বচ্ছ তরল ভর্তি গ্লাস হাতে নিয়ে বসে আছেন, সোফার উপর নিজের অর্ধনগ্ন শরীরটার ভার ছেড়ে দিয়েই বসে আছেন, আর মনে হল যেন ঠিক আমার দিকেই তাকিয়ে আছেন। স্পষ্ট না হলেও মনে হল যেন উনার ঠোঁটের কোণে কেমন যেন একটা ক্ষীণ হাঁসি। ভেতর থেকে যেন সব শক্তি শেষ হয়ে গেছে। আমার হাঁটুর থেকে দু ইঞ্চি দূরে রাখা টেবিলটাও যেন কত দূরে মনে হচ্ছে। মানসিক স্থিরতা হারিয়ে যাচ্ছে। মন বলল গ্লাসটা এইবার রেখে দে মা, কিন্তু করলাম ঠিক তার উল্টোটা। ডান হাতে ধরে থাকা পাইপের ধূম ছাড়া মুখে আবার ঠোঁট ছোঁয়ালাম। আরে এ তো গাঁজা। এই গন্ধ আমার চেনা। অনেক আগের চেনা। অনেক বছর এই গন্ধের সাথে কোনও সম্পর্ক না থাকায় প্রথমে ঠিক চিনতে পারিনি, আর তাই এত নোংরা আর বিশ্রী লাগছিল গন্ধটা। মহিলা গাঁজা খান। আরে নিকুচি করেছে মহিলা, উনি আমাকে গাঁজা খাওয়াচ্ছেন। উফফ কি যে করব এখন। সমস্ত মনের জোর এক করে কাঁচের গ্লাসটা টেবিলে নামিয়ে রাখতে গেলাম। কিন্তু গলাটা একদম শুঁকিয়ে গেছে। ডান হাত থেকে কখন যে হুক্কার নলটা মেঝেতে পড়ে গেছে সেটা টের পাইনি। দু হাত দিয়ে গ্লাস্টা মুখের উপর চেপে ধরে ওই বিষাক্ত পানীয় গলায় ঢেলে নিজের গলা ভেজানোর চেষ্টা করলাম। অন্য কেউ হলে নিশ্চিত বুঝতে পারত যে আমার শরীর খারাপ লাগছে, আর সাথে সাথে সাহায্য করতে ছুটে আসত, কিন্তু এই মহিলার মধ্যে কোনও হেল দোল লক্ষ্য করলাম না। একই ভাবে ঠাই বসে আছেন। অবশ্য ওনার অবয়বটাও কেমন যেন ধীরে ধীরে চোখের সামনে থেকে হারিয়ে যাচ্ছে। খালি গ্লাসটা টেবিলে রাখার চেষ্টা করলাম, কিন্তু পারলাম না, চেতনা প্রায় শেষ, বুঝলাম টেবিলের শেষ প্রান্তে পৌঁছানোর আগেই হাত থেকে গ্লাসটা ছেড়ে দিয়েছি, একটা খুব ক্ষীণ শব্দ পেলাম, মাথার পেছন থেকে কেউ একটা বলে উঠল গ্লাসটা ভেঙ্গে ফেলেছি মাটিতে ফেলে। শরীরটাকে আলগা ভাবে সোফার ওপর এলিয়ে দিলাম। এখন আর স্মার্ট হওয়ার চেষ্টা করে লাভ নেই। নেশা যে ভালোই চড়েছে সেটা সবাই বুঝতে পারবে। কিন্তু আধ খোলা চোখে আবছা দেখলাম এখনও মহিলার মধ্যে কোনও হেল দোল নেই। যেই কে সেই। আমার গলা দিয়ে শব্দ বেরনো দূরে থাক, আমার সারা শরীর অদ্ভুত ভাবে অবশ হয়ে গেছে। অদ্ভুত একটা অবস্থা, আবছা আলোয় চারপাশের সব কিছু দেখতে পাচ্ছি, যদিও আবছা, সব কিছু আবছা শুনতে পাচ্ছি, কিন্তু কিছু করার বা বলার বা নড়ার ক্ষমতা অবশিষ্ট নেই একটুও।
নেশার মধ্যে দেখলাম এইবার মহিলা উঠে দাঁড়িয়েছেন। হাতের গ্লাসটা টেবিলে সশব্দে নামিয়ে রেখেছেন। “মায়া, আয়। ওর হয়ে গেছে।“ গলায় একটা যেন কৌতুকের ছোঁয়া। আমার শরীরে কোনও জোর অবশিষ্ট না থাকলেও মাথা যেন ঘোলাটে অবস্থাতেও কাজ করে চলেছে। আবছা বুঝতে পারলাম সেই মেয়েটা আমার চোখের সামনে এসে দাঁড়িয়েছে। “দিদি দাঁড়াতে পারবে?” এখন আর আপনি করে কথা বলছে না মেয়েটা। আর ওর নাম মায়া সেটার সংকেত আমার মস্তিষ্কের কোষগুলো পেয়েছে। আমি বা হাতটা ওর দিকে বাড়ানোর একটা ব্যর্থ চেষ্টা করলাম, কিন্তু হাতটা যেন উঠলই না। নেতিয়ে পড়ে রইলাম। মেয়েটা আমার আধবোজা চোখের সামনে ঝুঁকে আমার সামনে ওর মুখটা নিয়ে এল। আমার ঘাড় ধরে একটু নাড়াল আমাকে। আমি নড়লাম না, না নড়তে পারলাম কই আর। বুঝতে পারলাম আমার হ্যান্ড ব্যাগটা আমার পাশ থেকে তুলে নিয়ে ওর মালকিনের দিকে এগিয়ে দিল। আবছা দেখতে পেলাম ওর মালকিন ব্যাগটা হাতে নিয়েই ব্যাগের চেনটা খুলে ভেতরটা হাতড়ে দেখতে শুরু করে দিয়েছেন। উনি সোফায় বসে পড়লেন আবার। সব টাকা পয়সা ইত্যাদি বের করে টেবিলে রাখলেন পর পর। কিন্তু না টাকা মারার বোধহয় কোনও মতলব ওনার নেই। আবার সব ঠিক মতন ব্যাগের ভেতরে ভরে রেখে মায়ার হাতে ধরিয়ে দিলেন। মায়া ব্যাগটা হাতে নিয়ে আমার কোলে রেখে দিল। আমি ধরতে পারলাম না। কোল থেকে ব্যাগটা পড়েই যাচ্ছিল, কিন্তু বুঝলাম মায়া শেষ মুহূর্তে ধরে নিল ব্যাগটাকে। আমার গালে দুটো আলতো টোকা মেরে বলল “দিদি, ও দিদি উঠতে পারবে?” আমি নড়তে পারলাম না। আমার গালের ওপর পরের বারের টোকাটা বেশ জোড়েই এল। এটাকে ঠিক ঘুম ভাঙানোর টোকা বলা যায় না, বরং বলা যায় যে সপাটে একটা চড় মারল এই কাজের মেয়েটা। সাথে সাথে আমার মাথাটা অন্য দিকে এলিয়ে পড়ল। চোখের কোনায় কি কয়েক ফোঁটা জল এসে জড় হয়েছে? সেটা ঠিক বলতে পারব না। আরেকটা থাপ্পড় পড়ল সজোরে গালের উপর। “ এ তো পুরো আউট।“ পেছনে ফিরে ওর মালকিনের দিকে তাকিয়ে বলল। আমার মস্তিষ্ক আমাকে বলল এ মেয়েটা ঠিক চাকরানির মতন কথা বলছে না, বা ওর গলায় সেই ভয়ের স্বরটাও আর নেই। আবছা শব্দ পেলাম রত্নাদির গলার “মাগিটাকে তুলে নিয়ে যা। আমার কথা আমি রেখেছি। তোমরা কিন্তু...” বাকি কথা গুলো কেমন যেন হারিয়ে যাচ্ছে, কানে পৌঁছালেও, মাথায় পৌঁছাল না। আরেকটা সজোরে থাপ্পড় পড়ল গালের উপর। “গলা শুঁকিয়েছে?” আরেকটা ঠাপ্পড়, “কিরে মাগি, কথা কানে ঢোকে না?” আমার ব্যাগটা দেখলাম মেঝেতে নামিয়ে রেখে উঠে দাঁড়াল। একটা কেমন জানি ভীষণ অট্টহাসি দিয়ে বলল, “গলা শুঁকিয়েছে, চোখের ইশারায় বোঝাচ্ছে। “ দেখলাম ভদকার বোতলটা হাতে তুলে নিল। মুটকিটা খুলে সামনে ছুঁড়ে ফেলে দিল। রত্নাদির সামনেই গলায় ঢক ঢক করে এক গুচ্ছ মদ ঢেলে দিল। বোধহয় একটু বেশীই ঢেলেছে। খক খক করে কয়েকটা কাশি দিল। ডান হাতের পেছনটা দিয়ে নিজের ঠোঁটটা মুছে নিল। পরক্ষণেই আমার বা পাশে সোফার খালি অংশে অনাবৃত ডান হাঁটুটা রেখে আমার মুখের ওপর ঝুঁকে পড়ল। ওর কাজল কালো চোখ গুলো আমার আধবোজা চোখের ওপর স্থির। সে চোখে যেন একটা আগুন জ্বলছে। মনে মনে একটা ভয় ধরে গেল। আমার একাধিক পুরুষ আর নারীর সাথে শয্যা ভাগ করে নেওয়ার অভিজ্ঞতা আছে, কোনও দিন এমন ভয়ের আর অজানা শিরশিরানি ধমনীতে অনুভব করিনি। সে সব খেলার ছলে হয়েছে, কিন্তু বুঝতে পারছি না যে এখন কি হবে। নিজের ঠোঁটটাকে আমার কানের একদম কাছে নিয়ে এসে ফিসফিস করে কোমল গলায় বলল “ পিপাসা পেয়েছে?” একটু থেমে আবার জিজ্ঞেস করল “ কি রে, পিপাসা পেয়েছে?” আমি চোখের ইশারায় কোনও মতে বোঝালাম সত্যি পিপাসায় মরে যাচ্ছি। “পেয়েছে!” হাঁসতে হাঁসতে পেছনে ফিরে বলল। আমার অসহায় চোখের ইশারা ও ধরতে পেরেছে। ডান হাতে আমার মাথার চুলের মুঠি নিজের শক্ত হাতে চেপে ধরল, অসম্ভব জোর মনে হল ওর ওই হাতে। মাথাটাকে নিজের হাতের জোড়ে সোফার পিছন দিকে হেলিয়ে দিয়ে শক্ত করে ধরে রইল। দম বন্ধ হয়ে যাবার জোগাড়। খাবি খাচ্ছি যেন। মুখটা জলের আশায় হাঁ হয়ে গেল আপনা থেকেই। খোলা আধ খাওয়া মদের বোতলটা চেপে ধরল আমার খোলার মুখের ওপর। গন্ধ নয়, কিন্তু ঝাঁজটা নিতে পারছি না আর।
কিন্তু আমার শরীর আমার সাথে বিদ্রোহ করল। আমি চাইছিলাম না আর এই বিষটা নিতে। কিন্তু গলা এত শুঁকিয়ে গেছে যে তরল ব্যাপারটাকে আঁটকে রাখতে পারলাম না। প্রায় বোতল শেষ করে দিল আমার পেটের ভেতর। শেষের কয়েক ফোঁটা নিজের গলার ভেতরে ঢেলে দিয়ে আমার চুলের মুঠিটা ছেড়ে উঠে দাঁড়াল। “এখনও মাগি বমি করছে না। স্ট্যামিনা আছে। এরকমই চাই। নিয়ে চল।“ আধ বোজা চোখে দেখলাম রত্না দি এখনও সোফায় জড় ভরতের মতন বসে আছেন। “কি রে কথা কানে ঢোকেনি? চল নিয়ে চল। ওদের আসতে এখনও সময় লাগবে। তার আগে ডাক্তার আসবে। চল, বসে বসে গাঁজা টানিস না আর। “ মনে হল রত্নাদিরও যেন নেশা হয়ে এসেছে। তাই শুরুতেই ঠিক নড়তে পারল না। মায়া নামক মেয়েটি ওর দিকে দ্রুত পায়ে এগিয়ে গিয়ে একটা চড় বসিয়ে দিল সজোরে আর সশব্দে। কে কার মালকিন বুঝতে পারছি না। আবার একটা ধ্যাতানি দিল রত্নাদিকে “চল ওঠ। তুই একটা সমাজের বোঝা।“ আমার চেতনা হারিয়ে গিয়েও হারিয়ে যাচ্ছে না কেন বুঝতে পারছি না। বার বার মন কে বোঝাতে চাইছি এ কিছুই নই, এ এক দুঃস্বপ্ন। একটু পরেই ঘুম ভেঙ্গে উঠে পড়ব, ব্যস সব আগের মত হয়ে যাবে। উঠেই নিশ্চই ঢাকের শব্দ শুনতে পাব। এখন তো সেই পূজা। কিন্তু কোথায় কি। নেতিয়ে পড়ে পড়ে দেখলাম রত্না দি উঠে দাঁড়ালেন টলমল পায়ে। কি যে হচ্ছে সত্যি বুঝতে পারছি না। রত্না দি যে মায়ার মালকিন নন সেটা বুঝতে পারছি স্পষ্ট। মায়ার একটু আগে দেখা আচরণ ছিল একটা নাটক। এখন তো উল্টো মনে হচ্ছে। নায়িকারা শুরুতে অনেক সময় আসেন না। এখন সময় বুঝে ঠিক সময়ে ক্লাইম্যাক্সে এসে হাজির হয়েছেন তদারকি করতে। রত্না দি যেন সোফা থেকে উঠতে গিয়ে পড়ে যাচ্ছিলেন। তবু নিজেকে সামলে নিলেন। মায়া ওনার দিকে তাকিয়ে বলল “তোকে আমরা ঠকাইনি। তুই আমাদের ঠকিয়েছিস। বেইমান কোথাকার। তোর যা প্রাপ্য সব পাবি। নে এখন কাজ কর। “ একটু আগে যাকে দেখে মনে হচ্ছিল যে ভয়ে কাঁপছে সে এখন তার মালকিনের উপর তুই তুকারি করে চিৎকার করছে।
দুজনে আমাকে এসে দুহাতে ধরে বগলদাবা করে সোফা থেকে উঠিয়ে নিল। আমার নিজের শরীরে যে কোনও জোর অবশিষ্ট নেই সেটা আর কতবার লিখব। তবে হ্যাঁ যেটুকু বাঁচা কুচা ছিল সব মায়ার এই অদ্ভুত পরিবর্তনের পরে কোথায় যেন তলিয়ে গেছে। ওরা দুজন মিলে আমাকে নিয়ে প্রায় টানতে টানতে দরজা অব্দি নিয়ে এল। দূর থেকে একটা যেন বুট জুতোর শব্দ পেলাম। আবার কে আসছে। মনটা ভয়ে সিঁথিয়ে গেল। আর বেশ দৌড়ে দৌড়ে আসছে। কি মুশকিল আরেকটা মেয়ে। বয়স আমার মতন বা আমার থেকে হয়ত সামান্য একটু কম, বেশী কোনও মতেই নয়। এই মেয়েটা দেখলাম শার্ট প্যান্ট পরে এসেছে, পায়ে বুট জুতো। রত্নাদি আর মায়া কে সাহায্য করতে এগিয়ে এলো। চাপা গলায় মায়া কেই উদ্দেশ্য করে বলল “তাড়াতাড়ি ফ্রেশ করিয়ে একে কনে সাজিয়ে নিয়ে বেরোতে হবে গাড়ি করে। ডাক্তারবাবু এই এলেন বলে।“ ওরা আমার অসাড় শরীরটাকে প্রায় হ্যাচরাতে হ্যাচরাতে দোতলায় নিয়ে গেল। হাঁটুতে একবার পড়ে গিয়ে ব্যথাও পেলাম যেন। কিন্তু মনের ভয় আর ব্যথা এত বেশী যে হাঁটুর ব্যথা ঠিক অনুভব ই করলাম না। একটা অন্ধকার মতন ঘরে ঢুকিয়ে একটা বড় বিছানার ওপর ধাক্কা মেরে ফেলে দিল ওরা। “তেমন কিন্তু ভারী নয়। “ বোধহয় মায়াই বলল। সঠিক বলতে পারব না কারণ আমি এখন উপুড় হয়ে শুয়ে আছি। হয়ত দশ কি পনের মিনিট আমাকে এইভাবেই আমাকে শোয়া অবস্থায় একলা ফেলে ওরা ঘর থেকে বেড়িয়ে গিয়েছিল। যখন ফিরে এলো তখন ওদের গলা ছাড়াও আরেকজন পুরুষের গলা শুনলাম। এই কি ডাক্তার বাবু। আমার পিছনে দাঁড়িয়ে ওরা ফিস ফিস করে কি পরামর্শ করল সে কথাগুলো আমার ঠিক কানে ঢুকছিল না। একসময় অনুভব করলাম আমার কটন লেগিন্সের কোমরের কাছে এক জোড়া হাত নেমে এল। আমার কুর্তিটা কোমর থেকে তুলে দিয়েছে নিশ্চই। কারণ লেগিন্সের ওপরে পিঠের ওপর একটা গরম ভ্যাঁপসা হাওয়া অনুভব করলাম। ওই হাত জোড়া এইবার সরাসরি লেনিন্সের কোমরের ইলাস্টিক ব্যান্ডটা ধরে এক ঝটকায় নিচে নামানোর চেষ্টা করল। আমার শরীরের ভারের জন্য অবশ্য এত সহজে নামাতে পারল না। একটা সজোরে ক্যাঁচ মতন শব্দ হল, আর তার পরের মুহূর্তেই অনুভব করলাম প্যানটি থেকে বেড়িয়ে থাকা পাছারা মাংসল অংশে সেই ভ্যাঁপসা গরম হাওয়ার ছোঁয়া। সব শক্তি দিয়ে একবার শেষ চেষ্টা করে ঘোরবার চেষ্টা করলাম। ওরাও বোধহয় আমার নড়াচড়াটা লক্ষ্য করেছে। কে একজন বিছানার ধারে এসে আমার দুটো হাত বিছানার সাথে চেপে ধরল। বুঝলাম কোনও এক হাতের (ডান হাতই হবে) কনুই দিয়ে আমার পিঠের ঠিক মধ্যভাগটাকে বিছানার সাথে চেপে রাখল। উফ কি গায়ের জোর রে বাবা। হয় ব্যায়াম করে অথবা গায়ে গতরে খেটে খায়। আর অবশ্য আরেকটা ব্যাপার হতে পারে, সেটা হল এই যে আমার শরীরের হাল এই মুহূর্তে এতই বেহাল যে একটা বাচ্চা মেয়েও আমাকে এইভাগে চেপে ধরে রাখতে পারবে। এক মুহূর্তও সময় নষ্ট না করে কোমরের কাছের হাত জোড়া প্যানটির ইলাস্টিক ব্যান্ডে হাত দিল। লেগিন্সটাকে অন্তত একবার হলেও নামানোর চেষ্টা করেছিল, কিন্তু প্যানটির ক্ষেত্রে তেমনটা করল না। প্রথমেই কোমরের একটু নিচে ব্যান্ডটাতে হাত দিয়ে জোড়ে একটা হ্যাঁচকা টান মারল। আমার অসহায় কোমর আর পাছাটা যেন বিছানার ওপর একটু কেঁপে কেঁপে উঠল। আরেকটা সজোরে ক্যাঁচ মতন শব্দ হল আর তার পরের মুহূর্তেই পাছার নগ্ন চামড়ায় অনুভব করলাম সেই ভ্যাঁপসা গরম হাওয়ার পরশ। আমার পাছা আর পেছন দিকে প্রায় হাঁটু অব্দি পুরোটা থাই নগ্ন করে দিয়েছে। আরেক জোড়া হাত কিন্তু এখনও আমাকে বিছানার সাথে চেপে ধরে রেখেছে। কয়েক মুহূর্তর জন্য ওই হাত জোড়া আমার পায়ের পাশ থেকে সরে কোথায় যেন চলে গেল। এই অচেনা মেয়েগুলো আর এই ছেলেটার সামনে এই ভাবে কোমরের নিচে নগ্ন হয়ে শুয়ে থাকতে যারপরনাই লজ্জা পাবার কথা, কিন্তু আমার মানসিক ভয় এখন লজ্জাভাবটাকে ছাপিয়ে গিয়েছে। পাছার বাদিকের মাংসল বলয়ের উপরের দিকে ঠিক কোমরের নিচে একটা ঠাণ্ডা ভেজা স্পর্শ অনুভব করলাম। ভেজা নরম জিনিসটা দিয়ে আমার নগ্ন ত্বকের ওপর খানিকক্ষণ ঘষে জায়গাটাকে যেন আরও নরম করে ভিজিয়ে দিল। তার ঠিক কয়েক সেকন্ড পরেই একটা তীক্ষ্ণ সুচালো জিনিস সজোরে ঢুকে গেল আমার ভেজা চামড়া ভেদ করে। ওহহ, ইনজেকশন দিচ্ছে লোকটা আমাকে। কয়েক সেকন্ড ব্যস হাত জোড়া সরে গেল পেছন থেকে। ডাক্তারের কাজ শেষ।
একটা মেয়েলি গলা পেলাম “কতক্ষণ থাকবে?” এইবার স্পষ্ট শুনলাম লোকটার গলা “পাঁচ থেকে ছয় ঘণ্টা তো থাকবেই। তবে পুরো বেহুঁশ হবে না। এখন যেমন আছে ঠিক তেমনই থাকবে। নেশাগ্রস্ত হয়ে থাকবে। পুরো বেহুঁশ করে দিলে সমস্যা হবে। কারণ পথে চেকিং হলে একজন অজ্ঞান মহিলাকে নিয়ে কোথায় যাওয়া হচ্ছে সে প্রশ্ন বোঝানো শক্ত। “ মেয়েটা যেন কিছু একটা বলতে যাচ্ছিল। ডাক্তার তাকে একটু গলা চড়িয়ে থামিয়ে দিল। “আহ, বোকার মতন তর্ক করো না এখন। এক কাজ কর। তুমি খবর নাও যে গাড়ি রেডি কিনা। আর সাথে এটাও জেনে নিও যে থানার মধ্যে কোনও খবর গেছে কিনা। “ একটা মেয়ে বলল “সেটা আর এমন কি। থানার বাইরেই তো একজন কে বসিয়ে রেখে এসেছি। তবে একটা জিনিসে ভয় পাচ্ছি, পুরো বেহুঁশ না করে নিয়ে গেলে কেউ ধরলে যদি চিৎকার করে বসে বা কিছু বলে বসে তখন তো পুরো ব্যাপারটা ঘেঁটে যাবে।“ ডাক্তার বললেন “ সে চিন্তা তোমাকে করতে হবে না। চোখ তুলে শুধু চেয়ে থাকবে। কিন্তু কিছু বলতে পারবে না, নড়া চড়া করার কথা ভুলে যাও। ওই মদের নেশা আর গাঁজা আর ইয়ের (ইয়েটা যে কি সেটা আমারও জানার প্রবল আগ্রহ, কারণ আমার দৃঢ় বিশ্বাস ওই ইয়েটা গাজার সাথে মিশিয়ে দিয়েছিল বলেই আমার এখন এই হাল।) নেশাটা ধীরে ধীরে নেমে গেলেও ওষুধের নেশা পাক্কা পাঁচ থেকে ছয় ঘণ্টা থাকবে। তার পরেও ঘণ্টা দুই তিনেক ঘুম ঘুম ভাব থাকবে। অবশ্য সব ঠিক ঠাক থাকলে ততক্ষণে আমরা ডেরায় পৌঁছে যাব। “ খেয়াল করলাম যে মেয়েটি আমাকে বিছানার সাথে চেপে ধরে রেখেছিল সে আমার শরীরের ওপর থেকে নিজের হাত সরিয়ে নিয়েছে। ডাক্তার বোধহয় ঘর থেকে বেড়িয়ে গেল। কারণ অনেকটা দূর থেকে ওর গলার আওয়াজ পেলাম “তোমরাও রেডি হয়ে নাও। আমি আসছি আধা ঘণ্টার মতন পরে। তারপর তোমরা তিন জন বেড়িয়ে যেও। একজন কিছু জিনিস পত্র কিনে নেবে, মেয়েলি জিনিস পত্র আর কি। আরেকজন বাড়িটার থেকে একটু দূরে দাঁড়িয়ে খেয়াল রেখ কোথাও কোনও চড়া চড়া হচ্ছে কিনা। হ্যাঁ ওই তুমি (বুঝলাম এটা রত্না দিকে উদ্দেশ্য করে বলেছে) ছাড়া দুজনের কাছে পিস্তল আছে নিশ্চই। চরের তো আর অভাব নেই। সাবধান থাকা ভালো। তুমি যাবে মেয়েলি জিনিসগুলো কিনতে। আর তুমি যাবে গাড়িটার কাছে। থানার সামনেই আছে। গিয়ে এমন ভাব দেখাবে যেন তোমার দাদার বউ হঠাত করে অসুস্থ হয়ে পড়েছে, এখানে ডাক্তার পাচ্ছে না। তাই একটু দূরে নিয়ে যেতে হবে। ও হ্যাঁ ব্যাগটা এখানেই রেখে যাচ্ছি। খেয়াল রেখ।“ ডাক্তার বেড়িয়ে গেল।