Poll: Did you think the story could have a better ending?
You do not have permission to vote in this poll.
Yes
0%
0 0%
No
0%
0 0%
Total 0 vote(s) 0%
* You voted for this item. [Show Results]

Thread Rating:
  • 5 Vote(s) - 3.4 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
পলাশ এবং তার ভালবাসা - রঙ্গন
#5
অন্তিম পর্ব


University প্রায় ১০-১২ বছর আগে শেষ করেছে রঙ্গনা| আজ দিল্লি থেকে রাজধানী এক্সপ্রেসে করে ফিরছে| এ সি টু টায়ারে টিকেট বুক করা আছে| ট্রেন ছাড়া কিছু আগে ওর খুপরিতে একটা ফুটফুটে বাচ্চা ছেলে ঢুকলো| বছর ৪-৫ বয়স হবে| মুখটা কেমন যেন চেনা লাগছে| কিন্তু বাচ্চাটাকে কোনো দিন দেখেছে বলে মনে করতে পারছে| পাশেই এক বাঙালি পুরুষের গলায় শুনতে পেল, 'হ্যাঁ দিদি কিছু চিন্তা করবেন না| পৌছে ফোন করে দেব| আপনারাও সাবধানে ফিরে যান| ভালো থাকবেন.'
ট্রেন ছাড়ার সময় হয়ে গেছে| বিকেলে ছেড়ে কাল সকাল পৌছে দেবে কলকাতায়, শিয়ালদাতে| ট্রেন ছেড়ে গেলে একজন পুরুষ তার ব্যাগ নিয়ে রঙ্গনার কূপে ঢুকলো| বাচ্চাটা হাত তালি দিয়ে বলে উঠলো, 'বাবা এসে গেছে| বাবা এসে গেছে.'
পুরুষের মুখের দিকে তাকিয়ে রঙ্গনার দমবন্ধ অবস্থা| এ যে পলাশ| এটা পলাশের ছেলে| তাই মুখটা চেনা চেনা লাগছিল| কিন্তু ওকে কোনো দিন দেখেই নি| পলাশের মুখটাই তো বাচ্চার মুখে বসানো| মহা বিরম্ভনার ট্রেন যাত্রা শুরু হলো|
পলাশ নিজের সিটে বসে রঙ্গনাকে দেখে চিনতে পারল| কিন্তু কোনো কথা বলার সাহস হলো না| মাথা নিচু করে নিজের ব্যাগ গুছিয়ে নিল| রিজার্ভেশন চার্ট দেখে নিয়েছে| আর কেউ এই কূপে আসবে না| ওটা তিনজন থাকবে রাতটা|
বাচ্চাটা দুরন্ত| বাবার কথা বেশি শোনে না, নিজের মত বুদ্ধি খাটায়| আলতো গলায় পাকা পাকা কথা বলে| বড়রা কথা না বললেও সে রঙ্গনার সাথে কথা বলা শুরু করে দিয়েছে, 'তোমার নাম কি?'
রঙ্গনা প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে পারল না| মিষ্টি হেসে বলল, 'রঙ্গনা| তোমার নাম কি?'
ছেলেটা উত্তর দিল, 'আমার নাম রণ| তোমার নামটা ভালো রঞ্জনা.'
রঙ্গনা গাল টিপে বলল, 'আমার নাম রঞ্জনা নয়, রঙ্গনা.'
রণ বলল, 'তুমি কোথায় যাবে রঞ্জনা?'
উত্তর দেবার আগে পলাশ বলল, 'রণ বড়দের নাম ধরে বলতে নেই| তাছাড়া তুমি ওনাকে ডিস্টার্ব করো না.'
রণ বলল, 'আমি তো সবার নাম ধরে ডাকি| তোমাকেও তো বাবা বলে ডাকি| আমি তোমাকে ডিস্টার্ব করছি রঞ্জনা?'
রঙ্গনা উত্তর করলো, 'না সোনা| তুমি আমাকে মাসি ডাকতে পারো.'
রণ বলল, 'তুমি মাসি না, তুমি রঞ্জনা| আমার মাসি তো দিল্লিতে থাকে| মাসির বাড়ি থেকে আজ বাড়ি ফিরছি| তুমি কোথায় যাচ্ছ?'
রঙ্গনা রনকে নিজের কাছে টেনে নিল, বলল, 'আমিও আমার বাড়ি যাচ্ছি| আমার বাড়ি কলকাতায়| তোমার কোথায় বাড়ি?'
রণ বলল, 'আমাদের বাড়ি গ্রামে| কলকাতা থেকে আমাদের ট্রেন বদলাতে হবে| তুমি যাবে আমাদের বাড়ি?'
রঙ্গনা বলল, 'তুমি আমাকে নিয়ে যাবে? নিশ্চয় যাব| তোমার গ্রামের নাম কি?'
রণ বলল, 'গ্রামের নাম অনেক বড়, মনে রাখতে পারি না| গ্রামের সবাইকে আমি চিনি.'
রঙ্গনা বলল, 'মাসি বাড়ি কেন গেছিলে? বেড়াতে?'
--'হ্যাঁ, বেড়াতে.'
--'তোমার মা কোথায়? বাড়িতে?'
--'আমার মা নেই রঞ্জনা| আমি কোনো দিন দেখিই নি মাকে.'
শুনে রঙ্গনা অন্তর কেঁপে উঠলো| এতটুকু বাচ্চা মা ছাড়া| মাঝে খাবার দিয়ে গেছে ট্রেনের লোকেরা| সেসব খেতে খেতেই গল্প চলছে| পলাশ একটা গল্পের বই খুলে রেখেছে|

রঙ্গনা দেখল বিধাতার কি পরিহাস| পলাশ যে ওকে লাগামহীন ভালবাসত আজ তার সাথে একটা কথাও বলছে না| ওর ছেলের সাথে কথা বলে পলাশের খবর নিতে পারছে কিছু কিছু| পলাশকে ও ত্যাগ করেছিল যে পলাশ ওকে যৌনভাবে তৃপ্ত করতে পারবে না| সন্তান জন্ম দিতে পারবে কিনা তাতেও ওর সন্দেহ ছিল| আজ সেই পলাশ নিজের ছেলেকে নিয়ে কলকাতায় ফিরছে| আর যে সুখের আশায় রঙ্গনা 'ভালো' ছেলেকে বিয়ে করলো তাতে কি সে সুখী হতে পারল? ওর সাথে ওদের ক্লাসের আদিত্যর বিয়ে হয়েছে| ব্যবসার কাজে ওকে এত ব্যস্ত থাকতে হয় যে রঙ্গনাকে দেবার মত সময় নেই| ওকে এত বেশি ছোটাছুটি করতে হয় যে রঙ্গনা ওকে পায়ই না| দিল্লিতে দেখা হলো দিন পনের পরে| তাও এক বেলায় জন্যে| ওকে সব সময় সঙ্গে নিয়ে কাজে যায় না আদি, যাওয়া সম্ভব না| সেটা রঙ্গনাও বোঝে| তাই ওর প্রতিক্ষায় দিন গোনে| একটা বাচ্চা চেয়েছিল রঙ্গনা| আদি দিতে পারে নি| ডাক্তার বলেছে আদি কোনদিন বাবা হতে পারবে না|
বিধাতা ওর জীবনের জন্যে সব থেকে বড় পরিহাসের জন্যে আজকের দিনটা বেছে নিয়েছেন| নাহলে রণ আর পলাশের সাথে এক সাথে ট্রেনযাত্রায় সফর সঙ্গী হবে কেন| আরও তো কত লোক আছে, কত কূপ আছে| সব বেছে বেছে এই কম্বিনেশন টাই বা হলো কেন? রঙ্গনা প্লেনে যাতায়াত পছন্দ করে না| কানের ওপর চাপ পড়ে| তাই পারতপক্ষে প্লেন এড়িয়ে চলে| ট্রেনে ফার্স্ট ক্লাসে যায় না| একা অন্যের সাথে কেমন একটা লাগে| তার থেকে টু টায়ার ভালো| অন্তত চার জন লোক থাকে|
রঙ্গনা আর রণ নিজেদের মধ্যে অল্প সময়ে ভাব জমিয়ে ফেলেছে| দুইজনেই গল্পে মশগুল| রণ তো রঙ্গনার কোলে বসে গল্প করছে| হা হা হি হি চলছে| অনেক দিন বাদে পলাশ রঙ্গনার হাসি শুনলো| কিন্তু হাসিতে আগের মত প্রানোচ্ছল ভাবটা নেই| কেমন যেন একটা| হয়ত কোথাও বেদনা আছে|
রাতের খাওয়া শেষ হলে পলাশ রণকে বলল, 'রণ চলে আয়| ঘুমাবি.'
রণ বলল, 'না বাবা আজ আমি রঞ্জনার সাথে থাকব| তুমি কিন্তু আমাকে ঘুমিয়ে পড়লে নিজের কাছে নিয়ে যাবে না.' বাব্বা এত ভাব যে পরস্ত্রীর সাথে রাত কাটাবে|
পলাশ বলল, 'না| ওনাকে ডিস্টার্ব করা হবে| তুই আমার সাথে ঘুমাবি.'
রণ বলল, 'না আমি রঞ্জনার সাথে ঘুমাবো| তোমার সাথে তো রোজ ঘুমাই.'
পলাশ তাও বলল, 'ওনাকে ডিস্টার্ব করা হবে.'
রঙ্গনা বলল, 'রণ তোমার বাবাকে বলে দাও যে আমার ডিস্টার্ব হবে না.'
রণ বলল, 'বাবা ওনার ডিস্টার্ব হবে না.'
পলাশ আর কি করে| যে আসল মা হতে পারত তার কাছে না হয় এক রাত থাকলো|
পলাশ বলল, 'ঠিক আছে| একদম দুষ্টুমি করবি না| লক্ষ্মী হয়ে ঘুমাবি.'
রণ বলল, 'আচ্ছা.'
বলেই রঙ্গনার গলা জড়িয়ে শুয়ে পড়ল| রঙ্গনা রনের মাথায় হাত বুলিয়ে আদর করে দিতে লাগলো| একটা সময় পর রণ ঘুমিয়ে পড়ল|
রণ ঘুমালে রঙ্গনা পলাশের দিকে ফিরে জিজ্ঞাসা করলো, 'আমার সাথে কথা বলবে না?'
পলাশ বলল, 'তুমি তো আমাকে বারণ করেছিলে| আমি কি করে কথা বলি.' রঙ্গনার অন্তর আত্মা কেঁপে উঠলো, কেঁদে উঠলো| পলাশ বদলায় নি| অন্তত রঙ্গনার জন্যে ওর ভালবাসা কমে নি| একই আছে|

রঙ্গনা বলল, 'কেমন আছ?'
পলাশ বলল, 'শুনলে তো রনের কাছে| ভালই আছি| ছেলে খুব দুরন্ত| ওকে সামলাতেই হিমসিম খেয়ে যাচ্ছি| তুমি বলো তোমার কথা?'
রঙ্গনা বলল, 'আমার কোনো কথা নেই পলাশ.'
পলাশ বলল, 'তা হয় নাকি? এত বছর পর দেখা| তোমার নিশ্চয় বিয়ে গেছে, ছেলে মেয়ে কত জন? কত বড়? বর কি করেন?'
রঙ্গনা শুকনো গলায় বলল, 'তোমার আদিত্যর কথা মনে আছে? ওর সাথে আমার বিয়ে হয়েছে| আমার কোনো সন্তান নেই| কোনদিন হবেও না.' রঙ্গনা নিজের হতাশা চাপতে পারল না|
পলাশ বলল, 'আই অ্যাম সরি.'
রঙ্গনা বলল, 'রনের মায়ের কি হয়েছিল?'
পলাশ বলল, 'বাচ্চা হবার সময় খুন কম্পলিকেসি হয়েছিল| ডাক্তাররা বাঁচাতে পারে নি.'
রঙ্গনা দুঃখ প্রকাশ করে বলল, 'আহা রে!! সো স্যাড| তবে তোমার ছেলে খুব সুন্দর| ফুটফুটে, চটপটে.'
পলাশ বলল, 'খুব দুরন্ত| আর পেটে পেটে দুষ্টু বুদ্ধি.'
রঙ্গনা বলল, 'বাচ্চা দুরন্ত না হলে বাড়ি মাথায় করে কে রাখবে? তুমি বুঝবে না শুন্যতাটা কোথায়.'
এইভাবেই ওরা সারা রাত কথা বলে চলল| পলাশ ওর জীবনের কথা ওকে বলল| এম এস সির পর খুব একটা বেরোত না| খুব বড় কিছু করতে পারবে না সেটা ছাত্র জীবনেই বুঝে গেছিল| পড়াশুনা করে ও কলেজ সার্ভিস কমিশনের মাধ্যমে কলেজ চাকরি নিয়ে কলকাতার বাইরে চলে গেল| তারপর বাড়ি থেকে জোর করে ধরে বেঁধে ওকে বিয়ে দিয়ে দেয়| বিয়েতে ইচ্ছে ওর ছিল না| থাকতে পারে না| ওর বউ ভালো মেয়েছিল| কোনো চাহিদা ছিল না| কিন্তু মন্দ কপাল| অকাল প্রয়ান ঘটল|
রঙ্গনা পলাশকে প্রশ্নটা করেই ফেলল, 'পলাশ তুমি আমাকে এখনো ভালোবাসো?'
পলাশ সোজা উত্তর না দিয়ে বলল, 'আমার বউ, কমলার যখন বাচ্চা হবার জন্যে হাসপাতালে নিয়ে গেলাম তখন ডাক্তার পরীক্ষা করে বলল যে মাকে বাঁচানো যাবে না| মাকে বাঁচানোর চেষ্টা করতে গেলে বাচ্চাও মারা যেতে পারে| মার বাঁচার সম্ভাবনা খুবই কম| আমি রণকেই বাঁচাতে বলেছিলা| সেই সময়ের আগে আমি ছেলে বা মেয়ে কোনো সন্তানই ঈশ্বরের কাছে কামনা করি নাই| যে হয় সে যেন সুস্থ হয় এটাই আমার চাওয়া ছিল| কিন্তু যখন শুনলাম কমলা আর বাঁচবে না তখন ঈশ্বরের কাছে খুব প্রার্থনা করেছিলাম আমার যেন একটা মেয়ে হয়| কিন্তু ততদিনে না ততদিনে কেন অনেক আগে থেকেই আমার ভাগ্য লিখন হয়ে গেছে| আমার মেয়ে হলো না| রণ হলো.'
রঙ্গনা বুঝতে না পেরে জিজ্ঞাসা করলো, 'তুমি মেয়ে চেয়েছিলে কেন?'
পলাশ ভান না করে উত্তর দিল, 'তাহলে মেয়ের নাম দিতাম রঙ্গনা.'
উত্তর শুনে রঙ্গনা না কেঁদে পারে নি| অনেক সময় থম মেরে বসে ছিল| দুচোখ বেয়ে অশ্রুধারা নেমে ওর রাতে পোশাক ভিজিয়ে দিয়েছিল| পলাশ ওকে কোনো সান্ত্বনা দিতে পারে নি|
অনেক সময় পড়ে রঙ্গনা পলাশকে জিজ্ঞাসা করলো, 'রনের ভালো নাম কি?'
পলাশ বলল, 'রঙ্গন.'
রঙ্গনা আর কিছু জিজ্ঞাসা করতে পারে নি| কাঁদতে কাদঁতে রণকে জড়িয়ে ঘুমিয়ে পড়েছিল| ঘুম ভাঙ্গলো সকালে| রনের গলার আওয়াজে|
পলাশ উঠে গেছে| ঘুম থেকে উঠেই রণকে আদর করে দুই গালে দুটো চুমু খেল| রণও ওকে ওর গালে হামি দিল| ওরা আবার নিজেদের নিয়ে মেতে উঠলো|
আর পলাশের সাথে বেশি কথা হলো না| কিছু সময় পরেই ট্রেন শিয়ালদায় ঢুকবে| পলাশের কোনো ঠিকানা রণ দিতে পারে নি| কোনো নাম্বারও না|
শিয়ালদায় যখন ট্রেনে থেকে নেমে বিচ্ছিন্ন হবার সময় এলো তখন রণ কান্না জুড়ে দিল| রঞ্জনাকে ওদের বাড়ি নিয়ে যাবে| পলাশ কষ্ট করে ওকে সামলালো| রঙ্গনার কোনো কনট্যাক্ট ইনফরমেশন পলাশ চায় নি|
স্টেশনে নেমে রঙ্গনা পলাশকে জিজ্ঞাসা করলো, 'আবার কবে দেখা হবে?'
পলাশ বলল, 'আবার কবে দেখা হবে? হয়ত কোনো দিন এমনি পথ চলতে চলতে দেখা হয়ে যাবে.'
পলাশ আর রঙ্গন শিয়ালদা সাউথের দিকে পা বাড়ালো|


**********

Namaskar সমাপ্তি Namaskar
[+] 3 users Like johndurrant's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: পলাশ এবং তার ভালবাসা - রঙ্গন - by johndurrant - 09-12-2019, 07:58 PM



Users browsing this thread: