Poll: Did you think the story could have a better ending?
You do not have permission to vote in this poll.
Yes
0%
0 0%
No
0%
0 0%
Total 0 vote(s) 0%
* You voted for this item. [Show Results]

Thread Rating:
  • 5 Vote(s) - 3.4 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
পলাশ এবং তার ভালবাসা - রঙ্গন
#2
পলাশ এবং তার ভালবাসা

লেখক - রঙ্গন


প্রথম পর্ব


'তুই আমাকে ভালোবাসিস? তুই ভালবাসার কি বুঝিস? আমাকে তো ক্লাসের অনেকেই ভালোবাসে| আমাকে সে কথা বলেওছে| ওদের সবাইকে বাদ দিয়ে আমি তোর সাথে কেন যাব? আচ্ছা তুই আমাকে প্রথমে বলত কেন তুই আমাকে ভালোবাসিস?' ঝড়ের গতিতে রঙ্গনা কথাগুলো পলাশকে শোনাল| যেন আদালতে কোনো জাঁদরেল উকিল জেরা করে চলেছে| কলেজে ফাঁকা ক্লাসরুমে রঙ্গনাকে একা পেয়ে পলাশ ওকে প্রোপোজ করেছিল|
পলাশ বলল, 'কেন ভালোবাসি তা জানি না| তোমাকে আমার খুব ভালো লাগে| সারা জীবন আমি তোমাকে সুখী রাখব.'
রঙ্গনা ওকে থামিয়ে দিয়ে বলল, 'ধুর বাবা!! সারা জীবনের কথা তোকে বলতে হবে| এখনকার কথা বল| তুই কেন আমাকে ভালোবাসিস আর ভালবাসা মানে কি?'
পলাশ বলল, 'ভালবাসার অনেক মানে| ভালবাসা মানে ধোঁয়া ছাড়ার প্রতিশ্রুতি, ভালবাসা মানে এলো চুল মাতোয়ারা, ভালবাসা মানে সময় থামার আগে, ভালবাসা তোমার শুরু আমার সারা....'
রঙ্গনা হাত নেড়ে ওকে বলল, 'থাম পলাশ, ভালবাসার মানে অনেক হয়েছে| আমিও ব্যান্ডের গান শুনি.'
পলাশ আর কি বলবে| রঙ্গনা বলল, 'পলাশ আমি জানি আমায় দেখতে সুন্দরী| সুন্দরী মানে খুব সুন্দরী| ছেলেরা আমাকে দেখলেই আমার প্রেমে পড়ে যায়| তাতে অবশ্য আমি তাদের কোনো দোষ দেখি না| যে বয়সের যে কাজ সেটা তারা করবেই| তার মানে তুইও আমাকে একইভাবে দেখিস? এটা আমি তোর কাছে থেকে আশা করি নাই রে!!'
পলাশ বলল, 'এই জন্যেই আমি তোমাকে প্রোপোজ করতে চাইনি| কিন্তু বিশ্বাস কর আমি তোমাকে না বললে থাকতেও পারতাম না| তুমি আমাকে কি উত্তর দেবে তাতে আমার কোনো আসে যায় না| কিন্তু আমার ভালবাসা তুমি ঠেকাবে কি করে? এটার ওপর তো তোমার কোনো কন্ট্রোল নেই.'
রঙ্গনা পলাশকে বলল, 'ফিল্মি ডায়লগ ছাড়.'
পলাশ বলল, 'ডায়লগ ফিল্মের হতে পারে কিন্তু অনুভূতি আমার| রঙ্গনা আমি তোমার জন্যে সব কিছু করতে পারি?'
রঙ্গনা পলাশের নাছোড় মনোভাব দেখে একটু আশ্চর্য্যই হলো| হলো কি শান্তশিষ্ট ছেলেটার| ওকে ভালো করে নোটিস করার মত সময় নেই ওর|
রঙ্গনা বলল, 'যদি বলি যে তিনতলা থেকে মাটিতে ঝাঁপ দিয়ে ভালবাসা প্রমান করতে, তুই ঝাঁপ দিবি তো?'
পলাশ নিস্তরঙ্গ গলায় বলল, 'একবার বলেই দেখো না!!'
রঙ্গনা ভাবলো কি দরকার| বললে যদি সত্যিই ঝাঁপ দেয়! রঙ্গনা বলল, 'আচ্ছা তোকে ঝাঁপ দিতে হবে না| ভবতোষ স্যার আমাদের খুব বাজে পড়ায়| মানে আমি তো কিছু বুঝতে পারি না৷ আর দেখিসই তো প্র্যাক্টিক্যাল ক্লাসে কতটুকু সময় থাকে৷ কিন্তু ওর হাতে প্রাকটিক্যাল আছে বলে আমরা কেউ কিছু বলতে পারি না| বললেই নাম্বার কম দেবে| তুই পারবি ওকে সোজা করতে?'
পলাশ বলল, 'পারব, কাল প্রাকটিক্যাল আছে তো!'
রঙ্গনা ওকে কাটাতে না পেরে বিপজ্জনক খেলাটা খেলেই ফেলল| ভাবলো ঝাঁপ দিয়ে মরলে কারোর কিছু লাভ হবে না| বরঞ্চ ভবতোষ স্যারকে যদি ট্রিট করা যায় তাহলে সবার মঙ্গল হবে| রঙ্গনার অবশ্য সবার মঙ্গল করতে বয়েই গেছে| সবার হলে আদিত্য মানে আদিরও হবে| আদিত্য, পলাশ আর রঙ্গনার সাথে ভার্সিটিতে পড়ে| আদিত্যকে রঙ্গনা মনে মনে ভালবাসে| ভার্সিটিতে সবাই রঙ্গনার জন্যে মরলেও রঙ্গনা আদির জন্যে চিন্তা করে| এত বড়লোকের ছেলে| গাড়ি করে ক্লাস করতে আসে| ওর বাবা শিল্পপতি| কিন্তু কেন যে আদি এমবিএ না পড়ে কেমিস্ট্রি পড়তে এসেছে সেটা রঙ্গনার জানা নেই| আদিকে জিজ্ঞাসা করতেও পারে নি| ওর সাথে কথা বলতেই রঙ্গনা একমাত্র হিচখিচ করে| গলা কাঁপে, তালগোল পাকায়|

পরের দিন প্রাকটিক্যাল ক্লাসে ভবতোষ স্যার যথা রীতি ফাঁকি মেরে চলেছেন| একটা নমুনার অ্যাসিড দিয়ে দ্রবণ (সলুইশন) বানাতে বলে উনি বললেন, 'আমি একটু আসছি| হেড ডেকেছেন.'
চলে যেতেই সঞ্জয় বলল, 'মালটাকে প্রত্যেকদিনই কেউ না ডাকে| হয়ত কোথাও গিয়ে সিগারেট ফুঁকছে.'
কোয়েল বলল, 'তাছাড়া আর কি? আর প্রাকটিক্যাল ক্লাসের সময়ই ওনার যত রাজ্যের জরুরি কাজ.'
পলাশ আর রঙ্গনা ব্যাপারটা খেয়াল করলো| ক্লাসের সবাই বিরক্ত|
পলাশ জানে ভবতোষ স্যার প্রাকটিক্যালে ফাঁকিবাজ| কিন্তু ওনার বিষয়ের ওপর অগাধ জ্ঞান| আর থিওরি ক্লাসে অসাধারণ পড়ান| অন্তত পলাশের তাই মনে হয়| আসলে যে অংশ উনি পড়ান সেটা সত্যি খুব কঠিন৷ মনোযোগ দিয়ে না শুনলে বা পরে ভাল করে না পড়লে তারপরের ক্লাসে আর লিঙ্ক পাওয়া যায় না৷ সবাই পরীক্ষার আগে ভাল করে পড়ে, কিন্তু সারা বছর নিয়মিত পড়ে না৷ তাই ওনার ক্লাসে অসুবিধা হয়৷ পলাশ প্রত্যেকদিন পড়াশোনা করা ছেলে৷ তাই ওর অসুবিধা নেই৷ জানে স্যারের অনেক ডেপ্থ আছে৷ কোনো কোশ্চেন করলে ওনার জবাব কখনো এমন হয় না যে 'গুড কোশ্চেন| আমি একটু দেখে পরের দিন বলব'. সাথে সাথে ওনার উত্তর তৈরী থাকে| উনি জানেন| পলাশ অনেক দিনই ক্লাসের বাইরে কেমিস্ট্রি নিয়ে আলোচনা করেছে| তাতে ওর প্রতি পলাশের শ্রদ্ধা আরও বেড়েছে| স্যারও পলাশকে স্নেহ করেন| উৎসাহ দেন যাতে ও আরও ভালো পড়ে কোনো ভালো প্রতিষ্ঠানে পি এইচ ডি করতে পারে| উনি বলেও রেখেছেন যে আই আই টি'র এক প্রফেসর স্যারের বন্ধু| এখানের পড়া শেষ হলে তার কাছে পলাশকে পাঠাবেন| প্রাকটিক্যাল ক্লাসে পলাশের খুব অসুবিধা হয় না| ডিরেকশন পড়ে বাকিটা ও ম্যানেজ করে নিতে পারে| ক্লাসের সবাই তা পারে না| রঙ্গনা পারে না| তার ছেলে বন্ধুদের সাথে মেলামেশা, সাজগজের পিছনে অনেক সময় ব্যয় করতে হয়| তাই পড়ার জন্যে বেশি সময় দিতে পারে না| নিজের নয়নজুড়ানো রূপের সাথে মানান সই একটা ডিগ্রী দরকার| সেটা সায়েন্স থেকেই হলেই ভালো| কেমিস্ট্রি বেশ একটা গ্ল্যামারাস সাবজেক্ট|
অনেক সময় হলো স্যার ফিরছেন না| নমুনা অ্যাসিডে দিয়ে ফোটাতেই দ্রবণ তৈরী হয়ে গেছে| অবশ্য ফোটানোর আগে ওতে জল মেশাতে হয়েছিল| এরপর কি করতে হবে তা বলে যান নি| পলাশ ডিরেকশন পড়ে বুঝতে পেরেছে কি করতে হবে| কিন্তু কাজ না করে স্যারের অপেক্ষা করছে| বাকিরা গালগল্প শুরু করেছে| মেয়েদের পিছনে লাগা শুরু করেছে| আর চারিদিকে হা হা হি হি চলছে| রঙ্গনা যথারীতি ছেলদের সাথে হা হা হি হি করছে| পলাশ দেখল ওকে| ওকেই দেখছে| আগেও দেখেছে| কিন্তু রঙ্গনা অবশ্যই পলাশের দিকে নজর দেয় না| পলাশ স্মার্ট নয়| পড়ুয়া, বাকিরা ওকে গাতু ছাত্র বলে| গাতুয়া|

বেশ কিছু সময় পড়ে ভবতোষ স্যার ক্লাসে এলেন| সবাই গল্প থামিয়ে স্যারের কাছে গেল| এর পর কি করতে হবে সেটা স্যার এবার বলবেন|
বোর্ডের সামনে স্যার চক নিয়ে তৈরী পরবর্তী পদক্ষেপ বোঝাবার জন্যে| সবাইকে অবাক করে দিয়ে পলাশ বলল, 'স্যার, আমার একটা কোশ্চেন আছে?'
অবাক হলো কারণ পলাশের কোনো কোশ্চেন থাকে না| স্যার যা বলেন সেটা ও বোঝে| ও সত্যি বোঝে, ভান করে না| আর থিওরিতে কোনো অসুবিধা হলে অফ পিরিয়ড-এ গিয়ে জেনে আসে| ক্লাসে প্রশ্ন করে সময় নষ্ট করে না|
স্যার পলাশের দিকে ঘুরে তাকিয়ে বললেন, 'বল পলাশ| কি তোমার প্রশ্ন?'
পলাশ বলল, 'স্যার আপনি এত সময় কোথায় ছিলেন?'
ক্লাসের সবাই চুপ করে গেল| জলের ফোনটা মেঝেতে পড়লে তার আওয়াজ শোনা যাবে| রঙ্গনার দিকে পলাশ তাকিয়ে দেখল ও অবাক মুখ করে মুচকি হাসছে| কেউ ভাবতে পারে না যে স্যারকে এই প্রশ্নটা করা যায়| যেখানে সবাই তেল দিয়ে চলে যাতে নম্বরটা ঠিক মত ওঠে, কিন্তু ওর কি কোনো হুঁশ নেই? কাকে কি বলছে? ভার্সিটির বাইরেও ওনার প্রবল প্রতিপত্তি আছে, তাই হেড পর্যন্ত কিছু বলেন না| আর পলাশ? কোথাকার কে হে হরিদাস পাল যে ভবতোষ স্যারকে তার অনুপস্থিতির কারণ জিজ্ঞাসা করছে|
স্যার অবাক করা গলায় জিজ্ঞাসা করলেন, 'কি বললে?'
পলাশ আবার বলল, 'স্যার আপনি এত সময় কোথায় ছিলেন?'
স্যার বললেন, 'এটা তোমার জানার কথা নয় যে আমি কোথায় ছিলাম| তাও বলছি যে আমি হেডের ঘরে ছিলাম.'
পলাশ বলল, 'না স্যার, আপনি মিথ্যা কথা বলছেন| আমাদের প্রাকটিক্যাল ক্লাসে আপনি কখন থাকেন না| সব জরুরি কাজ আপনার এই ক্লাসটার সময় থাকে| কখনও আপনাকে কাজের সময় পাওয়া যায় না.'
স্যারের করা চাউনিও পলাশকে থামাতে পারল না| আজ তো পলাশ বলবেই| কাউকে যে সে কথা দিয়েছে ভবতোষ স্যারকে ট্রিট করবে|
স্যার চেঁচিয়ে উঠে বললেন, 'থাম পলাশ| আমি কোথায় ছিলাম সেটার কৈফিয়ত তোমাকে দেব না| তার জন্যে হেড আছেন, দরকার পড়লে তার আমি বলব.'
ঝগড়া শুরু হতেই ল্যাবের অ্যাসিস্ট্যান্টরা হেডকে ডেকে এনেছেন| ভবতোষ স্যারের ক্লাসে গন্ডগোল মানে খবর আছে|
হেড চলে এলেও পলাশ বলল, 'আপনাকে কৈফিয়ত দিতে হবে| কারণ ক্লাসটা আমাদের, আপনি না থাকলে ক্ষতিটা আমাদের| আপনি ফাঁকি মারলে আমরা ফাঁকে পরবো.'
স্যার বললেন, 'চুপ একেবারে চুপ, নাহলে পরীক্ষার সময় দেখে নেব.'
পলাশ তাও হিম্মত করে বলল, 'ধোর মশাই কি দেখবেন আপনি? নম্বর কম দেবেন তো? বেশ তাই হবে| আপনার ক্ষমতা হবে না আমাকে ফেল করানোর.'
হেড বললেন, 'আস্তে| কি হয়েছে বলবে তো?'
ভবতোষ স্যার বললেন, 'আমাকে মিথ্যাবাদী বলেছে| আমি নাকি একটু আগে আপনার সাথে ছিলাম না?'
হেড বললেন, 'একটু আগে উনি আমার সাথে ছিলেন| একটা গুরুত্বপূর্ণ মিটিং করছিলাম.'
পলাশ বলল, 'সে হতে পারে| আজ আপনার সাথে ছিলেন| কিন্তু বাকি দিন গুলো? সব দিন তো স্যার আপনার সাথে মিটিং-এ থাকেন না?'
হেড বাকিদের জিজ্ঞাসা করলেন, 'ভবতোষবাবু ক্লাসে থাকেন না?'
সবাই চুপ করে গেল| রঙ্গনার মুখে সব সময় খই ফোটে, তার মুখ অধঃক্ষেপের মত পড়ে আছে| তালা মারা|
পলাশ বলল, 'ওদের আবার টানছেন কেন? নম্বর কম পাবার ভয়ে কেউ কিছু বলবে না| সবাই জানে| এমনকি ল্যাবের সব কেমিক্যাল পর্যন্ত সাক্ষী দেবে কে ঠিক আর কে ভুল? আপনিও কি স্যার সত্যি জানেন না নাকি?'
শেষের অস্বস্তিকর প্রশ্নটা হেডকে করলো|
হেড বললেন, 'ঠিক আছে| এখন কাজে যাও| আমি স্যারের সাথে কথা বলব.'
পলাশ বলল, 'সেই ভালো| পারলে বোঝান| নাহলে পরের দিন আবার একই কির্তন গাইব.'
পলাশের মুখের চটে ভবতোষ স্যার আর মুখ খোলেন নি| তারপর থেকে আর কোনদিন ক্লাসের সময় গুরুত্বপূর্ণ মিটিং থাকত না|

পলাশ রঙ্গনাকে বলল, 'আমার কাজ আমি করে দেখিয়েছি| বলেছি তো তোমার জন্যে আমি সব করতে রাজি আছি| তোমার উত্তর আমায় কবে দেবে?'
রঙ্গনা সেদিন ওই রুদ্র মূর্তি দেখে যেমন বিস্ময়ে অভিভূত হয়েছিল, তেমনি নিজেকে গরবিনীও মনে হয়েছিল| তার জন্যে মুখ চোরা পলাশ ওই রকম দোর্দণ্ডপ্রতাপ ভবতোষ ব্যানার্জির সাথে ঝগড়া করলো| নিজের সম্ভাব্য উজ্জ্বল ভবিষ্যতকে বিপন্ন করে| ভবতোষ, আই আই টির প্রফেসর, পলাশের পি এইচ ডি…..সবাই ব্যাপারগুলো জানত| তা সত্ত্বেও যে পলাশ লড়ল তার জন্যে সত্যি অসীম সাহিসী হতে হয়| হ্যাঁ, পাহাড় অতিক্রম বা জঙ্গল পার করার মত নিজের জীবনের ভবিষ্যত বাজি রেখে পলাশ যুদ্ধ জিতে এসেছে| আদি তো রঙ্গনার দিকে ভালো কথাই বলে না| অন্য সবাই ওর রূপে মোহিত| ওর কথা শুনে কেউ নিজেকে নিয়ে পলাশের মত খেলত না| রঙ্গনা নিশ্চিত| দেখতে সুপুরুষ না হতে পারে পলাশের মধ্যে একটা সহসী মানসিকতা আছে যেটা যে কোনো নারী তার পুরুষের মধ্যে খুঁজবে| নারীকে নিরাপত্তা দেবে পলাশ৷ আমাদের সমাজে পুরুষদের কাছে মেয়েরা নিরাপত্তা চায়৷ সামাজিক এবং অর্থনৈতিক দুইধরণেরই৷ পলাশ মেধাবী, যারা ওর সাথে পড়ে তাদের অনেকের থেকেই বেশি| কিন্তু হয়ত ওর ঐদিনের গোঁয়ারতুমির জন্যে ফলাফলের সময় হয়ত কোনো পজিশন পাবে না| রঙ্গনা জানে আর কোথাও পজিশন না পেলেও পলাশ ওর হৃদয়ে ঠিক পজিশন নিয়ে ফেলেছে| রঙ্গনা দেখল পলাশকে নতুনভাবে, নতুন ভূমিকায়| কাউকে ও বলেনি হঠাৎ পলাশ কেন ক্ষেপে গিয়েছিল| চায় না সবাই ওকে আর পলাশকে নিয়ে আলোচনা করুক|
রঙ্গনা পলাশকে বলল, 'পরীক্ষা শেষ হলে আমাদের বাড়ি নিয়ে গিয়ে তোকে উত্তর দেব| এর আগে আমার সাথে যোগাযোগ করবি না| মন দিয়ে পড়াশুনা কর| ঠিক আছে?'
পলাশ বলল, 'এত দিন যখন পারলাম, তাহলে আর কত দিনও পারব| তুমি ভালো করে পড়| আর কিছুর দরকার হলে আমাকে কন্টাক্ট কর.'
ফার্স্ট ইয়ারের পরীক্ষা চলাকালীন আর কোনো যোগাযোগ রইল না ওদের মধ্যে| পলাশ দেখা বা ফোন করার চেষ্টা করে নি| রঙ্গনা মনে মনে চাইছিল ওকে ফোন করুক, দেখা করুক| কিন্তু সেটা না করলেও ও আবার খুশিও হয়েছে| ওর কথা মান্য করেছে বলে|

পরীক্ষা শেষ হলে রঙ্গনা পলাশকে ওদের বাড়ি নিয়ে গেল| পলাশ দেখল ও বড়লোকের মেয়ে| অনেক বড় বাড়ি| বাড়ি তো নয় যেন অট্টালিকা| গাড়ি বারান্দা, বাগান| সব আছে| মালি, ঠাকুর, চাকর|
নিজের বেড ঢোকার আগে ও ওদের কিছু খাবার দিয়ে যেতে বলল ওদের চাকরকে| ওর বেডরুম সুন্দর গোছানো, পরিস্কার পরিচ্ছন্ন| সব কিছুতে রুচির ছাপ| পলাশ অবাক হয়ে দেখল| ওর পরিবারের আর্থিক অবস্থা খারাপ না হলেও রঙ্গনাদের মত না|
খাবারগুলো খাওয়া শেষ করলে রঙ্গনা পলাশকে বলতে শুরু করলো, 'আমি যা বলেছিলাম তা তুই করে দেখিয়েছিস| আমি গর্বিত তোর জন্যে| কিন্তু তোকে কমিট করবার আগে আমি কিছু বলতে চাই| সেগুলো শোনার পরও যদি মনে হয় আমার সাথে সম্পর্ক রাখবি তাহলে তাই হবে.'
পলাশ আগ্রহের সাথে বলল, 'বলো রঙ্গনা, তোমার কথা বলো| আমি শুনব.'
রঙ্গনা বলল, 'এমন নয় যে তুই আমাকে প্রথম প্রোপোজ করেছিস| এর আগেও অনেক আমাকে প্রোপোজ করেছিল| তার মধ্যে আবার চার জনের সাথে আমি প্রেমও করেছি| তার মধ্যে তিন জনের সাথে ঘনিষ্ঠ ছিলাম| বুঝতে পারছিস তো ঠিক কি বলতে চাইছি?'
পলাশ বলল, 'সে তুমি প্রেম করতেই পার| প্রেম করলে সম্পর্ক তো ঘনিষ্ঠ হবেই| এতে বোঝার বা না বোঝার কি আছে?'
রঙ্গনা বলল, 'ওহ তুই বুঝতে পারছিস না| ঘনিষ্ঠ মানে বেশ ঘনিষ্ঠ| মানে আমাদের শারীরিক সম্পর্ক হয়েছিল.' বলব না বলব না করে রঙ্গনা বলেই ফেলল| ভয় হচ্ছিল যদি সব শুনে চলে যায় আর বাকি বন্ধুদের কথাগুলো রটিয়ে দেয়| পলাশকে অবশ্য সেরকম মনে হয় নি| তবুও একটা সংশয় ছিল|
পলাশ বলল, 'দেখো আমি প্রেমের মধ্যে শরীরের থেকে মনকে বেশি গুরুত্ব দিই| আমি তোমাকে ভালোবাসি আর তুমি যদি আমাকে ভালোবাসো তাহলেই হলো| আমাকে ছেড়ে কোনো দিন যেও না| আমার সাথে থাকলে আমাকে কোনদিন ঠকিয়ো না| আমি তোমাকে খুব সুখে রাখব.'
রঙ্গনা খুব খুশি হলো যে পলাশ ওকে ওর অতীত সমেত গ্রহণ করতে রাজি হয়েছে দেখে| মনে হলো প্রকৃত মানুষ পেল| যাকে মনের কথা নির্ভাবনায় খুলে বলা যায়| নিজেকে উন্মুক্ত করে রাখতে পারবে| কোনো মুখোশ পড়ে সারাটা জীবন কাটাতে হবে না| ঈশ্বর ওর জন্যে পলাশকে বানিয়েছেন|
রঙ্গনা বলল, 'পলাশ আমি কিন্তু প্রেমের ক্ষেত্রে শুধু মনে বিশ্বাসী নই| শরীরও আমার কাছে খুব গুরুত্বপূর্ণ| মানসিক ও শারীরিক মিলন সঠিক হলে সার্থক যুগল তৈরী হয়| আমাকে গ্রহণ কর.'
পলাশ বলল, 'মানে? তুমি তো আমারই| আবার কি গ্রহণ করব?'
রঙ্গনা বলল, 'গ্রহণ করবে মানে আমাকে শারীরিকভাবে গ্রহণ কর| আমাকে তৃপ্ত কর.'

পলাশ ওর সরাসরি প্রস্তাব পেয়ে অবাক হয়ে বলল, 'রঙ্গনা, ব্যাপারটা খুব তাড়াতাড়ি হয়ে যাচ্ছে না? তাছাড়া তোমার বাড়ির লোকজন কি ভাববেন?'
রঙ্গনা বলল, 'বাড়ির লোকজন কেউ নেই| আর আমি না বললে কেউ আমার ঘরে আসবে না| তুমি আমাকে ছেড়ে যাবে সেটা তো ঠিক| আমিও তোমাকে ছাড়ব না| তাহলে বাধা কোথায়? আমি তো মনে মনে এইদিনটার সেই কবে থেকে তৈরী| তুমি না রাজি হলে ছেড়ে দাও.'
পলাশ সঙ্গে সঙ্গে বলে উঠলো, 'না না| তুমি চেয়ছ আর আমি দেব না তাও কি হয়?'
পলাশ উঠে রঙ্গনার কাছে গেল| ওর মুখখানি দুইহাতের করতলে করে অঞ্জলি দেবার মত করে তুলে ধরল| তারপর ওর নয়ন নিজের নয়ন মিলিত করলো| কি গভীর ওই নয়নযুগল| কি আছে ওই মৃগননয়নির কৃষ্ণবর্ণের চক্ষুমনিতে? কত রহস্য লুকিয়ে রেখেছে আমার প্রানের সখী| পলাশ রঙ্গনার চক্ষুজোড়ায় আত্মভোলা দৃস্টি দিয়ে ওকে আরও গভীর অবধি চেনার চেস্টা করছে৷
Like Reply


Messages In This Thread
RE: পলাশ এবং তার ভালবাসা - রঙ্গন - by johndurrant - 09-12-2019, 07:55 PM



Users browsing this thread: