25-01-2019, 11:25 AM
রীনা মুখের শব্দ ছিনিয়ে নেই তার গোপন মনের অনুভূতি । , তার চিন্তার অক্ষর গুলো এলোমেলো হয়ে পাকিয়ে যাচ্ছে , চোখের সামনে লম্বা লাইনের মতো ঝরে পড়ছে অজানা কোনো তথ্য সংকলনের আশায় । তার বিগত জীবনে হাজার মানুষের ভিড়ে এমন কোনো মানুষ আসে নি , যাকে বোধির বাবার সাথে মিলিয়ে নেয়া যায় শুধু একজন ছাড়া !"
বারান্দার ইটের পিলারে রীনার পিঠ টা থেকে যায় মানুষ টাকে না পাওয়ার চরম শুন্যতা নিয়ে । রীনা যাকে এক বারের জন্য দেখবে বলে লড়াই টা এখনো লড়ে যাচ্ছে , যাকে জীবনে জিতিয়ে দেবার আশা নিয়ে নিঃশেষে নিজেকে বিলিয়ে দিয়েছে , যাকে সুখে রাখবে বলে নিজের সন্তান কে পিতৃস্নেহ থেকে বঞ্চিত করেছে , সে মানুষটা ঘরেও এসেছিলো নিভৃতে , বুঝতেও দেয় নি তার অস্তিত্বের কথা । আর নিজের সংসার ভেঙে গেছে বলে সমবেদনা নিয়েও আসে নি একটি বার তার কাছে , এমন মানুষটা কে যদি ফিরে পাওয়া যেত । লোভে চক চক করে ওঠে রীনার চোখ, বুকের শুন্যতা নিয়ে শেষ নিঃস্বাস দিয়ে ঠেলে দেয় শব্দ গুলো স্বর নালী দিয়ে আদির দিকে ।
" নাম কি ওনার !"
" আরে বোলো না , যেদিন প্রথম এলেন আমায় বললেন তোমায় নালিশ করবেন , আমি নাকি ওনার নাম চুরি করেছি । "
হাত থেকে কাঁচের গ্লাস টা খসে যায় যেমন করে পালক হাবাস ভেসে মাটিতে নুইয়ে যায় কাঁচের ভাঙা টুকরো গুলো ছড়িয়ে পড়ে এদিকে ও দিকে জীবনের সব ভাঙা টুকরো টুকরো স্বপ্ন গুলোর মতো । রীনার বার্ধক্যের গোধূলিতে ভাঙা কাঁচের টুকরো গুলো মধুর স্মৃতির মতো জ্বল জ্বল করে ওঠে ।
দপ করে ম্লান হয়ে নিভে যায় আদির মুখের রক্তিম রাগের সূর্য টুকু ভাঙা কাছে । নীরবে মায়ের পাশে গিয়ে দাঁড়ায় আদি । জড়িয়ে ধরে মাকে বিত্তবানের মাটিতে পুঁতে দেয়া দুটো অশথগাছ এর মতো । যার আজ ডাল পালা ছাড়িয়ে স্নিগ্ধ ঝরনা ধারায় ঝরিয়ে দেবে পুড়ে যাওয়া দুটো মনের মরুভূমিকে । নতুন ফুল হয়তো ফুটবে না , কিন্তু যে মানুষ টাকে ক্ষমা করা যেত তাকে ক্ষমা করে কাছে ডেকে মহান হবার বাতুলতা বোধ করে নি রীনা কোনোদিন।
ঘরের নির্জনতায় দুটো স্তব্ধ মন হাতড়ে খুঁজে বেড়ায় তাদেরই হারিয়ে যাওয়া অস্থিমজ্জার কোনো শরীরের অন্য প্রত্যঙ্গ কে । তাদেরই স্রষ্টার মহানুভব আর মূল্য বোধ কে খুঁজতে থাকে না পাওয়া হতাশার অনুপ্রেরণায় । চকিতে মাকে ঘরে রেখে বেরিয়ে যায় আদি । এ ৰেরিয়ে যাওয়া কোনো একান্ত অপমান আর লাঞ্ছনার নয়, আদি তার মূল্যবোধ খুঁজে পেয়েছে নিশ্চয়ই। তার পদখেয়ে বরুনের সেই যৌবনের দৃঢ়তা দেখতে পায় রীনা । তাকে আজ বাধা দেয়া ঠিক হবে না ।
আদির ফোন বেজে যাচ্ছে অনর্গল । বোধির নাম টা জ্বল জ্বল করে ভেসে উঠছে রীনার দিকে আদির মোবাইল স্ক্রিন থেকে । নিজেকে সামলে নিলেও ববিনের কানে পৌঁছবে জীবনে প্রথম রীনার কোনো মুখের শব্দ তার পার্টি একান্ত আঙ্গিক হয়ে ।
সাহস নিয়ে ফোন তোলে রীনা ! " কাকিমা , আদি কি পার্সেল পেয়েছে !"
উত্তর দিতে পারে না রীনা " ববিন ...আর কিছু বলতে পারে না , বুক খালি করে কেঁদে ওঠে , ববিন ফোনএই অনুভব করে সেই অদ্ভুত শুন্যতা কে, গলা তার নিচে নেমে আসে । স্নেহের আকুলতায় " রীনা মা ..বলে থমকে যায় সে !
কাঁদতে কাঁদতে রীনা প্রশ্ন করে " বাবা কোথায় ববিন !তুই কবে আসবি আমার কাছে !"
বোধি সত্যি জানে না বাবা কোথায় । " রীনা মা খুব তাড়াতাড়ি আসবো তোমার কাছে ! " আজ আর কিছু না বললেও মন ভরে যাবে । অনেক গুলো মানুষ এতো বছর পর খুঁজে পেয়েছে তাদের সম্পর্কের সুতো গুলো , একে অপরকে শক্ত করে বাঁধবে বলে ।
একটু পড়ে বাড়ি আসে আদি । তার মুখ ভার করে রেখেছে জমে থাকা 27 বছরের অভিমান । মার দিকে তাকিয়ে বলে " এগুলো তোমার খুব দরকার মা !" বলে কিছু একটা হাতে দেয় রীনার ।
চেয়ার ধরে চেয়ারেই বসে পড়ে রীনা । আদি সামনে থেকে লুকিয়ে গেছে । বোধি হয়তো আবার ফোন করেছে । ভাই ভাইয়ের প্রেম টা তাদের বুঝে নিতে হবে । সেখানে রীনা নাই বা দাঁড়ালো ।
কি ভেবে হাতের কাগজে মোড়া আদির দেওয়া প্যাকেট টা খুলে দেখ চায় তার মন । দেখে সযত্নে সামনে সাজিয়ে রাখে টেবিলের উপর । স্নান করতে হবে তাকে । নিজের চুলের গোছা হাতে করে সাজিয়ে সযন্তে মাথায় গুঁজে নেয় , টাওয়াল টা উঠিয়ে নিয়ে ।
টেবিলে আদির দেয়া সিঁদুরের কৌটো আর হাতের পলার দিকে তাকিয়ে মৃদু হেসে ওঠে রীনা । আর কোনো অভিমান নেই দুপুরের । আদিও হয়তো নামের পাশে বরুন সেনগুপ্ত লিখবে ।
রীনা উঁকি মেরে পর্দা সরিয়ে দেখতে চায় আদি কে পরম মমতায় । আদি তখন যত্ন করে কোলে সাজিয়ে অধ্যায়ের পাতা গুলো উল্টে যাচ্ছে অবিরত । এই নতুন বরুনের আজ আর ভয় নেই । পর্দা টা এখনো ঘড়ির পেন্ডুলামের মতো দুলছে রীনার চোখের সমানে।দূরে কোনো ফেরিওয়ালা এখনো হেঁকে চলেছে একা , কিছু জমে থাকা তার জীবনের বিকিকিনির প্রায়শ্চিত্ত করবে বলে !
সমাপ্ত
বারান্দার ইটের পিলারে রীনার পিঠ টা থেকে যায় মানুষ টাকে না পাওয়ার চরম শুন্যতা নিয়ে । রীনা যাকে এক বারের জন্য দেখবে বলে লড়াই টা এখনো লড়ে যাচ্ছে , যাকে জীবনে জিতিয়ে দেবার আশা নিয়ে নিঃশেষে নিজেকে বিলিয়ে দিয়েছে , যাকে সুখে রাখবে বলে নিজের সন্তান কে পিতৃস্নেহ থেকে বঞ্চিত করেছে , সে মানুষটা ঘরেও এসেছিলো নিভৃতে , বুঝতেও দেয় নি তার অস্তিত্বের কথা । আর নিজের সংসার ভেঙে গেছে বলে সমবেদনা নিয়েও আসে নি একটি বার তার কাছে , এমন মানুষটা কে যদি ফিরে পাওয়া যেত । লোভে চক চক করে ওঠে রীনার চোখ, বুকের শুন্যতা নিয়ে শেষ নিঃস্বাস দিয়ে ঠেলে দেয় শব্দ গুলো স্বর নালী দিয়ে আদির দিকে ।
" নাম কি ওনার !"
" আরে বোলো না , যেদিন প্রথম এলেন আমায় বললেন তোমায় নালিশ করবেন , আমি নাকি ওনার নাম চুরি করেছি । "
হাত থেকে কাঁচের গ্লাস টা খসে যায় যেমন করে পালক হাবাস ভেসে মাটিতে নুইয়ে যায় কাঁচের ভাঙা টুকরো গুলো ছড়িয়ে পড়ে এদিকে ও দিকে জীবনের সব ভাঙা টুকরো টুকরো স্বপ্ন গুলোর মতো । রীনার বার্ধক্যের গোধূলিতে ভাঙা কাঁচের টুকরো গুলো মধুর স্মৃতির মতো জ্বল জ্বল করে ওঠে ।
দপ করে ম্লান হয়ে নিভে যায় আদির মুখের রক্তিম রাগের সূর্য টুকু ভাঙা কাছে । নীরবে মায়ের পাশে গিয়ে দাঁড়ায় আদি । জড়িয়ে ধরে মাকে বিত্তবানের মাটিতে পুঁতে দেয়া দুটো অশথগাছ এর মতো । যার আজ ডাল পালা ছাড়িয়ে স্নিগ্ধ ঝরনা ধারায় ঝরিয়ে দেবে পুড়ে যাওয়া দুটো মনের মরুভূমিকে । নতুন ফুল হয়তো ফুটবে না , কিন্তু যে মানুষ টাকে ক্ষমা করা যেত তাকে ক্ষমা করে কাছে ডেকে মহান হবার বাতুলতা বোধ করে নি রীনা কোনোদিন।
ঘরের নির্জনতায় দুটো স্তব্ধ মন হাতড়ে খুঁজে বেড়ায় তাদেরই হারিয়ে যাওয়া অস্থিমজ্জার কোনো শরীরের অন্য প্রত্যঙ্গ কে । তাদেরই স্রষ্টার মহানুভব আর মূল্য বোধ কে খুঁজতে থাকে না পাওয়া হতাশার অনুপ্রেরণায় । চকিতে মাকে ঘরে রেখে বেরিয়ে যায় আদি । এ ৰেরিয়ে যাওয়া কোনো একান্ত অপমান আর লাঞ্ছনার নয়, আদি তার মূল্যবোধ খুঁজে পেয়েছে নিশ্চয়ই। তার পদখেয়ে বরুনের সেই যৌবনের দৃঢ়তা দেখতে পায় রীনা । তাকে আজ বাধা দেয়া ঠিক হবে না ।
আদির ফোন বেজে যাচ্ছে অনর্গল । বোধির নাম টা জ্বল জ্বল করে ভেসে উঠছে রীনার দিকে আদির মোবাইল স্ক্রিন থেকে । নিজেকে সামলে নিলেও ববিনের কানে পৌঁছবে জীবনে প্রথম রীনার কোনো মুখের শব্দ তার পার্টি একান্ত আঙ্গিক হয়ে ।
সাহস নিয়ে ফোন তোলে রীনা ! " কাকিমা , আদি কি পার্সেল পেয়েছে !"
উত্তর দিতে পারে না রীনা " ববিন ...আর কিছু বলতে পারে না , বুক খালি করে কেঁদে ওঠে , ববিন ফোনএই অনুভব করে সেই অদ্ভুত শুন্যতা কে, গলা তার নিচে নেমে আসে । স্নেহের আকুলতায় " রীনা মা ..বলে থমকে যায় সে !
কাঁদতে কাঁদতে রীনা প্রশ্ন করে " বাবা কোথায় ববিন !তুই কবে আসবি আমার কাছে !"
বোধি সত্যি জানে না বাবা কোথায় । " রীনা মা খুব তাড়াতাড়ি আসবো তোমার কাছে ! " আজ আর কিছু না বললেও মন ভরে যাবে । অনেক গুলো মানুষ এতো বছর পর খুঁজে পেয়েছে তাদের সম্পর্কের সুতো গুলো , একে অপরকে শক্ত করে বাঁধবে বলে ।
একটু পড়ে বাড়ি আসে আদি । তার মুখ ভার করে রেখেছে জমে থাকা 27 বছরের অভিমান । মার দিকে তাকিয়ে বলে " এগুলো তোমার খুব দরকার মা !" বলে কিছু একটা হাতে দেয় রীনার ।
চেয়ার ধরে চেয়ারেই বসে পড়ে রীনা । আদি সামনে থেকে লুকিয়ে গেছে । বোধি হয়তো আবার ফোন করেছে । ভাই ভাইয়ের প্রেম টা তাদের বুঝে নিতে হবে । সেখানে রীনা নাই বা দাঁড়ালো ।
কি ভেবে হাতের কাগজে মোড়া আদির দেওয়া প্যাকেট টা খুলে দেখ চায় তার মন । দেখে সযত্নে সামনে সাজিয়ে রাখে টেবিলের উপর । স্নান করতে হবে তাকে । নিজের চুলের গোছা হাতে করে সাজিয়ে সযন্তে মাথায় গুঁজে নেয় , টাওয়াল টা উঠিয়ে নিয়ে ।
টেবিলে আদির দেয়া সিঁদুরের কৌটো আর হাতের পলার দিকে তাকিয়ে মৃদু হেসে ওঠে রীনা । আর কোনো অভিমান নেই দুপুরের । আদিও হয়তো নামের পাশে বরুন সেনগুপ্ত লিখবে ।
রীনা উঁকি মেরে পর্দা সরিয়ে দেখতে চায় আদি কে পরম মমতায় । আদি তখন যত্ন করে কোলে সাজিয়ে অধ্যায়ের পাতা গুলো উল্টে যাচ্ছে অবিরত । এই নতুন বরুনের আজ আর ভয় নেই । পর্দা টা এখনো ঘড়ির পেন্ডুলামের মতো দুলছে রীনার চোখের সমানে।দূরে কোনো ফেরিওয়ালা এখনো হেঁকে চলেছে একা , কিছু জমে থাকা তার জীবনের বিকিকিনির প্রায়শ্চিত্ত করবে বলে !
সমাপ্ত