25-01-2019, 11:24 AM
কখন হোটেলে ফিরেছি জানি না । দিনের আলো চোখে খুব বিঁধছে । মনে হচ্ছে যদি কালো অন্ধকার কোনো ঘর থাকতো । দরজা জানলা বন্ধ করে বিছানায় শরীর টা ফেলে দিলাম । চোখে হাত দিয়ে আদ্যপান্ত দেখছি নিজের জীবন টাকে ।জীবনের থেকে কত কি শেখবার আছে । ভুলের আগে সাইরেন বাজিয়ে যদি সবাই কে সচেতন করে দেওয়া যেত তাহলে কিছু ভুল হয়তো কম হতো মানুষের আর ববিন কে কেটে দু ভাগ করতে হতো না । দরজায় নক করলো কেউ । আজ আর কথা বলতে ইচ্ছা করছে না ।
তবুও দরজা খুলতেই দেখলাম ববিন দাঁড়িয়ে । ওর চোখ মুখ দেখে বুঝতে অসুবিধা হলো না অধ্যায় তার পড়া শেষ হয়ে গেছে । চুপ চাপ মুখ নিচু করে আমার বিছানায় বসলো আমার পাশে ।কিছু কথা বলতে চায় কিন্তু বলতে দ্বিধা করছে মনে হয় চোখ মুখ দেখে । বলতে পারে না , ওর যৌবনে এতো ঝড় ওহ নিতে পারে নি । আমি তো এতো দিন ধরে দিনের হিসেবে করে বসে আছি ।
কিছু না বলে জড়িয়ে ধরে আমার বললো "ববি আই লাভ ইউ সো মাচ, আই লাভ ইউ! ইউ আর মাই উইনার ।"
ওর ছোট বেলাটা মনে পড়ে গেলো । পিঠে হাত বুলোতে বুলোতে বললাম "মা ফিরে এসেছে !"
ববিন উত্তর দিলো না ! আমার মুখের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো " রীনা মা কে খোজ করা টা এখনো বাকি ববি !"
তাকে ছাড়া তো অধ্যায় শেষ হওয়া সম্ভব নয় !"
আমি বললাম "যাও তোমার মার কাছে , ওনার সাথে তুমি দু এক দিন কাটাও , আমি দু এক দিন সামলে নেবো !"
"আচ্ছা ববি মা কি তোমায় ক্ষমা করতে পারে না ?"
আমি জানি না শ্রী আমায় ক্ষমা করতে পারে কিনা , কিন্তু ববি কে সংসারের জটিলতা বোঝাতে অনেক সময় লেগে যাবে । "ক্ষমা তিনি আমায় করে দিয়েছেন ববিন কিন্তু আমায় গ্রহণ করতে পারেন নি !"
আমার আর কোনো অনুতাপ নেই !"
ববি উঠে চলে গেলো ! দু তিন দিন শ্রী আর আমার সামনে আসে নি , আমিও তার কাছে যাবার চেষ্টা করি নি । পাচ্ছে ববিনের সুন্দর ছুটি টা নষ্ট হয় । ববিন কে আমি বেশি করে বুঝিয়ে বলেছি মাকে যেন ভালো করে ঘুরিয়ে সব কিছু দেখিয়ে ব্যস্ত রাখে মার মন । নতুন করে এখন শরীরে যৌবনের জোয়ার আসে । শ্রী কে দেখে শ্রী কে ভালোবাসতে ইচ্ছা হয় । কত দিন দেখিনি , কোনো দিন ছুঁয়ে দেখিনি তার শরীর ।
দু দিন আমি আসে পাশেই কাটিয়েছি , ববিন মা কে নিয়ে ঘুরে বেরিয়েছে আমার কথা মতো । আমার আর শ্রীর মিলে মিশে যাওয়া হয়তো ববিনের কাছে সব থেকে বড় আশীর্বাদ হতো কিন্তু তা হবার নয় হয়তো । আদি এসেছে আমার সাথে দেখা করতে । "ইয়ং চ্যাপ , শুধু হোটেলে বসে থাকলে হবে ? আমি তো ভাবলাম আপনি আমার থেকেও সাহসী , কিন্তু মনে হচ্ছে , না আপনিও ভীতু !" মনে মনে ভাবলাম আমি ভিতুই বটে ।
"কি হে কি খবর , তুমি যে আমার সাথে দেখায় করতে আসোনি আর আমি তো তোমার বাড়ি চিনি না !" আমাকে থামিয়ে বললো আদি "চিনি না বললে হবে, কাওকে জিজ্ঞাসা করলেই বলে দিতো যে মুন্নার কনভেন্ট প্রিন্সিপাল এর বাড়ি কোন দিকে । তবে আমার বাড়ি গিয়ে আপনার বিশেষ লাভ হতো না দু দিন আমার নাইট শিফট ছিল ।"
আমার হটাৎ প্রশ্ন জাগলো "আচ্ছা তুমি মাস্টার্স বা FRCS করছো না কেন ? "
মুখ টা চুপসে গেলো আদির। ব্যাপারটা একটু হালকা করবো বলেই ওকে নিয়ে বেরোলাম হোটেলের বাইরে বেলা হয়েছে ঘড়ির দিকে দেখা হয় নি । "চলো তোমার হাসপাতাল দেখাবে !"
"খুব আনন্দ নিয়ে বললো এখনই চলুন !"
নানা কথা বলতে বলতে হাসপাতালের দিকে এগিয়ে চললাম । মুন্নার হাসপাতাল যত ছোট ভেবে ছিলাম ততো ছোট নয় । একটা ব্যাপার বুঝতেই পারলাম যে আদি ওই হাসপাতালের প্রাণ কেন্দ্র । ওর এই হাসপাতালে এতো লোকের ভালোবাসা জড়িয়ে আছে ভাবতেই অবাক লাগলো । এমন কেউ নেই যে আদি কে চেনে না । বেয়ারা থেকে নার্স তাকে একের পর এক অভিবাদন করে যাচ্ছে ।
"আচ্ছা হাইয়ার স্টাডি যেটা বলছিলাম , তুমি হাইয়ার স্টাডি করতে চাও না? "
আদি আমার দিকে তাকিয়ে নিষ্পাপ একটা হাসি দিয়ে বলে "কেন এই তো বেশ ! এখানে ওসবের দরকার পড়ে না !"
আমি একটু হেসে বললাম " ওখানে দরকার পড়ে না কিন্তু অন্য জায়গায় ?"
"না অন্য জায়গায় যাবার কোনো ইচ্ছে যে আমার নেই !" আদি উত্তর দেয়! আমি যা চাইছি তা আদির থেকে পাচ্ছি না । ঘুইরে প্রশ্ন করতে হলো "কেন এমন কেন ?"
"মা কে ছেড়ে অনেক দিন বাইরে ছিলাম আর মন চায় না , আর মাকে ছেড়ে ভালো লাগে না দেখলেন না এতদিন আপনাদের বাড়ি যাওয়া হয় নি !"
হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে কি মনে করে আদি কে বললাম "চলো হোটেলে ফিরে যাই ।"
আদি বললো চলুন । একটু হেসে বললো "আমার বাড়ি চাইলে এক কাপ চা খাওয়াতে পারি , হাসপাতালের ঠিক পিছনে । পড়ে বলবেন "বাড়ি নিয়ে গেলাম না ।"
যতই মিশছি আদির সাথে ততই যেন গভীর একটা টান অনুভব করছি , আমাদের একে অপরকে যেন নখদর্পনে চেনা । ভালোই লাগলো ,বললাম "চলো তোমার মায়ের হাতের চা খেয়ে আসবো ।"
ঘড়ি দেখে আদি বললো "ভাগ্য ভালো মা বাড়িতেই আছেন ।" আমি জিজ্ঞাসা করলাম কেন ?
"বাহ্ উনি অন্যদিন কলেজে থাকেন আজ উনি ফিরে এসেছেন , মাঝে মাঝে ফিরে আসেন । ঘড়িতে ২ :00 বাজে দুপুর গড়িয়ে গেছে খেয়াল করি নি ।
ছোট্ট বাড়ি দু তিনটে ঘর আর বারান্দা , হিল স্টেশনের বাড়ির মতো । বাইরেই বারান্দায় আমায় বসতে দিয়ে আদি ভিতরে চলে গেলো । বাড়ির বাইরে আদিত্যর নাম প্লেট লেখা দেখে ভালো লাগলো ।
তুমি যে আমার নাম চুরি করে নিয়েছো হে ছোকরা! যেন আমার নাম বরুন সেন গুপ্ত , আর তুমি আগে শুধু এটি আদিত্য বসিয়ে নিয়েছো নাম টা কিন্তু বেশ ভালো আদিত্য বরুন সেনগুপ্ত । না আমার নাম এভাবে ব্যবহার করা চলবে না ।তোমার মাকে কমপ্লেন করতে হবে ।
আদি এক গাল হেসে বললো " মা আসলে বলুন , আমিও বলি আদিত্য যা বরুণ তাই দুটো রাখবার কি দরকার ছিল ।
আদি ভিতরে বোধ হয় মা কে বলতে গেলো আমি এসেছি । আমি বারান্দায় বসে রইলাম ।
কিছু ক্ষনের মধ্যেই আদি বেরিয়ে এসে বললো চলুন হাত মুখ ধুয়ে নিন "মা বললেন এসেছেন যখন তখন গরিবের বাড়ি দু মুঠো খেয়েই যাবেন ।"
আমি কিন্তু কিন্তু করলাম । তার পর মনে হলো না চা হোক পরে না হয় আরেক দিন আসা যাবে ।
আদি বললো "ভাবছেন কি চা আসছে না , ভাত খাবেন ।" কেমন দ্বিধা গ্রস্ত হয়ে হাত মুখ ধুয়ে খাবার টেবিলে বসলাম ।তোমার মাকে কৈ দেখছি না ? উনি আসছেন নিন আপনি খেতে শুরু করুন ।"
এক জন ভদ্রমহিলা এসে টেবিলে আমার খাবার বেড়ে দিলো । বাড়িতে কাজ করেন হয়তো । আমি আদি কে বললাম আমি কিন্তু অল্পই খাই ।
আদি হাসলো কিছু বললো না ।
মুখে খাবার তুলতেই , মাথা টা ঘুরে উঠলো । গলা দিয়ে খাবার টা কিছুতেই নামছে না , চোখ টা ভিজে গেছে বুঝতেই পারি নি । চোখের নোনা জল টা
মুখে মিশে যাচ্ছে , এতো দিন ধরে মনের অবচেতনে যাকে খুঁজে গিয়েছি ভাগ্য এভাবে তাকে মিলিয়ে দেবে ভাবি নি । দু চোখ মেলে তাকে দেখবার আশায় অসাড় হয়ে গেছে আমার শরীর । পিছনেই দাঁড়িয়ে কিছু করছে আদি । এক বার ছুঁয়ে দেখতে ইচ্ছে করছে ছেলেটাকে ।
প্রাণ ভোরে ডাকতেও পারছিনা আদি আয় ।
হ্যাঁ সেই এক স্বাদ , এই এক মাধুর্য , উফফ!!! ভাতের থালা পরেই রইলো । খাওয়া আর হলো না । কথা দিয়েছি খোঁজার চেষ্টা করবো না তাকে । আদি একটু আশ্চর্য হয়ে বললো "কি শরীর খারাপ করছে ?" আমি বললাম "হ্যাঁ ওই আর কি !"
উঠে বাইরে জলের গ্লাস নিয়ে বারান্দায় হাত ধুয়ে আদির দিকে না তাকিয়েই যাবার উদ্যোগ নিলাম । দু চোখের জল লুকোতেই হবে ।সামনে দাঁড়ালে আমি হয়তো নিজেকে সামলাতে পারবো না । ছোবার লোভে পিছন থেকেই কাঁধ টা চেপে ধরলাম আদির । নিজের শরীরে বিদ্যুতের একটা শিহরণ বয়ে গেলো ।
" আদি আসি ! " বলে বেরিয়ে আসলাম রুদ্ধশ্বাসে । হতচিকিত হয়ে আদি দাঁড়িয়ে রইলো । বুঝতে পারলো না আমার এমন ব্যবহারের কি কারণ ।
দূর থেকে রীনার কণ্ঠস্বর শুনতে পেলাম "কি আদি উনি খেয়ে গেলেন না আর তুমি যেতে দিলে ? "
বাকি কথা গুলো মিলিয়ে গেলো বাতাসে । আমি হাসপাতালের রাস্তা ধরে ছুটছি হোটেলের দিকে ববিন কে খুঁজবো বলে ।
কোনো রকমে হোটেলের ঘরে এসে দরজা বন্ধ করে দিলাম । না এ হতে পারে না, শ্রীর কাছে আগেই হেরে বসে আছি, এর পর রীনার কাছে না , পারবোই না । সবার অলক্ষ্যে আমাকে এখুনি এই শহর ছেড়ে বেরিয়ে যেতে হবে । কাওকে কিছু বলা যাবে না , আমি পারবো না রীনার সামনে দাঁড়াতে । কি নিয়ে দাঁড়াবো আমি আদির সামনে ? আর তার পর শ্রী আর ববিন ? ওরা কি ভাববে আমায় !
এখন উপলব্ধি করছি মানুষ কেন কাপুরুষ হতে চায় । আর কোনোকিছুর জায়গা থাকে না তার মনে শুধু পরাজয়ের গ্লানি ছাড়া , তাই বাইরের খোলস ছেড়ে নিজের পরিচয় পরিচয় ভুলে যেতে চায় প্রায়শ্চিত্তের জ্বালায় । আবার কেউ সেই খোলস গায়ে নিয়ে বাঁচতে থাকে বিত্তবানের মতো প্রায়শ্চিত্তের আগুনে জ্বলতে জ্বলতে ।
মনে আনন্দের বান এসেছে আজ , কিন্তু সেখানে স্নান করার অধিকার নেই , যাবোই বা কোথায় ? ববিনের সাথে দেখা না করে আমার যাওয়া হবে না । ওর জন্যই আমার মায়া , শ্রীর মায়া কাটিয়ে ফেলবো , রীনার মায়া কাটিয়ে ফেলবো । কিন্তু আদি তো কোনো অন্যায় করে নি, ওকে বঞ্চিত করা পাপ হবে । না, হিসাবের খাতায় ডানদিক আর বা দিক এক রাখতে হবে । প্রায়শ্চিত্তই যখন করতে নেমেছি দুজনের আমাকে বিচার করার সমান অধিকার , একে ওপরের জীবনে জড়িয়ে আছে যে!
এই অপেক্ষা বড়ো অপেক্ষা একটা করে ঘড়ির কাটা টিক টক করছে , কখন আসবে ববিন তাকে সাক্ষী রেখেই আমার পথ চলা, জানি দুজনের কাছে সমান অপরাধী আমি কিন্তু শ্রীর জেনে রাখতে হবে রীনার সন্তান আদি আমার সন্তান, আর তা বলতে না পারলে আমার কোনো প্রায়শ্চিত্তই হবে না ।
ঘন্টা দেড়েক হবে হোটেলের ওয়েটার আমায় খবর দিয়ে গেলো ববিন ফিরে এসেছে, আদি আর আসেই নি হোটেলে, হয় তো ওর মন ভেঙে গেছে আমার ব্যবহারে । বাইরে বেরিয়ে দেখলাম বিকেল হচ্ছে আস্তে আস্তে।
রীনার সামনে দাঁড়ানো আমার ভীষ্মের শরশয্যার মতো । আমার যে ইচ্ছা মৃত্যু । ববিন দৌড়ে হাঁপাতে হাঁপাতে এসে বললো " শুনলাম তুমি অস্থির হয়ে বসে আছো আমায় দেখবে বলে ।"
আমি বাচ্ছাদের মতো ববিনের হাত ধরে ভয়ার্ত চোখে বললাম " ববিন আমায় এখুনি চলে যেতে হবে , তবে যাবার আগে কিছু কথা বলে যেতে চাই ।"
আমি জানি না তোর বিচারে আমি কেমন বাবা , কিন্তু আদির প্রতি জীবন ভর না জেনে অন্যায় করা হয়ে গেছে !"
" কি বলতে চাইছো বলতঃ , বুঝতে পারছি না !" ববি কেঁপে উঠলো । অজানা সংকেত সে ঠিকই ধরতে পেরেছে ।
"রীনা মার সাথে দেখা করতে যাবি? " আমি আগ্রহ ভোরে ববিনের চোখে তাকিয়ে থাকি !
ধপ করে বসে পরে ববিন , মা কে সে বড়ো ভালো বাসে, আমার মতো সে মা কে ভাগ করতে পারবে না । হাজার হলেও সংসারের খুঁটি নাটি এখনো বুঝতে শেখেনি । হয়তো ছুটি শেষ করে ফিরে যাবে নিজের অন্য পৃথিবীতে , তাকে নিজের পৃথিবীতে ফিরিয়ে দিতে আমায় অনেক সাহস দিতে হবে, কিন্তু এই মোহের মায়াজালে সে লক্ষ্য ভ্রষ্ট হয়ে পড়বে । সঙ্গে যদি আদি কে নেয় নিক , ভালোই হবে। এতদিন মায়ের দায়িত্ব নিলো আমায় দেখে শুনে । এখন বাবার দায়িত্ব নিক আদি কে দেখে ।
একটু কাঁধে হাত রাখতে ভয়ে বলে উঠলো ববিন " মা কিন্তু একেবারে ভেঙে পড়বে !"
আমি কাঁধে হাত রেখে বললাম " চল না যাই দুজনে , সেই জন্যই তো আমি পাশে চাই তোকে, আর যে নতুন করে পথ হাঁটার সাহস নেই , তুই তো আমার সাহস , সম্বল !"
"এখনই যাবে ?" ববিন অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করলো !
আমি বললাম হ্যাঁ ববিন আর দেরি চলে না , আমার প্রায়চিত্তের পার্থ যে বড়ো দুর্গম, আর শ্রীর অপরাধী হয়ে নিজেকে কুঁকড়ে রাখতে পারতাম হয়তো কিন্তু রীনার সামনে আমার সে শক্তিও নেই !"
"তুই আমায় সাহস দে বোধি তুই আমার জ্ঞানের সপ্ত বোধ , তোর জ্ঞানেই আমার মহাপ্রয়াণ আসুক, কালের অতলে অধ্যায় তলিয়ে যাক ক্ষতি নেই , কিন্তু আমার অনেক কাজ তোকেই তো শেষ করতে হবে ?
পারবি না, দেখ আমার মুখের দিকে দেখ পারবি না!"
আমি জানি তুই পারবি আমায় প্রায়শ্চিত্তের পথ করে দিতে !"
আমার হাত ধরে উঠে একটা নিঃস্বাস ফেললো , তার বুক কতটা জমে পাথর হয়েছে সে অনুমান আমি করতে পারি ।
ববি জানে সে তার বাবা কে হারাতে চলেছে , এই কঠিন উপলব্ধি তে কোনো মহাপ্রয়াণ হয় না , এ শুধু লুকিয়ে পালিয়ে বাঁচা ।কিন্তু যাবার পথ তাকেই করে দিতে হবে , অধ্যায় তার পড়া শেষ হয়ে গেছে । এমন অধ্যায় শেষ হয় না , বরুন সেনগুপ্তের পথের শেষ কোথায় পাঠক জানবে না ! বাস্তব মননশীল সত্তায় আমরা আফসোস করি ইশ যদি রীনা আর শ্রী যদি ফিরে আসতো আর কি বা ক্ষতি হতো !
তবুও দরজা খুলতেই দেখলাম ববিন দাঁড়িয়ে । ওর চোখ মুখ দেখে বুঝতে অসুবিধা হলো না অধ্যায় তার পড়া শেষ হয়ে গেছে । চুপ চাপ মুখ নিচু করে আমার বিছানায় বসলো আমার পাশে ।কিছু কথা বলতে চায় কিন্তু বলতে দ্বিধা করছে মনে হয় চোখ মুখ দেখে । বলতে পারে না , ওর যৌবনে এতো ঝড় ওহ নিতে পারে নি । আমি তো এতো দিন ধরে দিনের হিসেবে করে বসে আছি ।
কিছু না বলে জড়িয়ে ধরে আমার বললো "ববি আই লাভ ইউ সো মাচ, আই লাভ ইউ! ইউ আর মাই উইনার ।"
ওর ছোট বেলাটা মনে পড়ে গেলো । পিঠে হাত বুলোতে বুলোতে বললাম "মা ফিরে এসেছে !"
ববিন উত্তর দিলো না ! আমার মুখের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো " রীনা মা কে খোজ করা টা এখনো বাকি ববি !"
তাকে ছাড়া তো অধ্যায় শেষ হওয়া সম্ভব নয় !"
আমি বললাম "যাও তোমার মার কাছে , ওনার সাথে তুমি দু এক দিন কাটাও , আমি দু এক দিন সামলে নেবো !"
"আচ্ছা ববি মা কি তোমায় ক্ষমা করতে পারে না ?"
আমি জানি না শ্রী আমায় ক্ষমা করতে পারে কিনা , কিন্তু ববি কে সংসারের জটিলতা বোঝাতে অনেক সময় লেগে যাবে । "ক্ষমা তিনি আমায় করে দিয়েছেন ববিন কিন্তু আমায় গ্রহণ করতে পারেন নি !"
আমার আর কোনো অনুতাপ নেই !"
ববি উঠে চলে গেলো ! দু তিন দিন শ্রী আর আমার সামনে আসে নি , আমিও তার কাছে যাবার চেষ্টা করি নি । পাচ্ছে ববিনের সুন্দর ছুটি টা নষ্ট হয় । ববিন কে আমি বেশি করে বুঝিয়ে বলেছি মাকে যেন ভালো করে ঘুরিয়ে সব কিছু দেখিয়ে ব্যস্ত রাখে মার মন । নতুন করে এখন শরীরে যৌবনের জোয়ার আসে । শ্রী কে দেখে শ্রী কে ভালোবাসতে ইচ্ছা হয় । কত দিন দেখিনি , কোনো দিন ছুঁয়ে দেখিনি তার শরীর ।
দু দিন আমি আসে পাশেই কাটিয়েছি , ববিন মা কে নিয়ে ঘুরে বেরিয়েছে আমার কথা মতো । আমার আর শ্রীর মিলে মিশে যাওয়া হয়তো ববিনের কাছে সব থেকে বড় আশীর্বাদ হতো কিন্তু তা হবার নয় হয়তো । আদি এসেছে আমার সাথে দেখা করতে । "ইয়ং চ্যাপ , শুধু হোটেলে বসে থাকলে হবে ? আমি তো ভাবলাম আপনি আমার থেকেও সাহসী , কিন্তু মনে হচ্ছে , না আপনিও ভীতু !" মনে মনে ভাবলাম আমি ভিতুই বটে ।
"কি হে কি খবর , তুমি যে আমার সাথে দেখায় করতে আসোনি আর আমি তো তোমার বাড়ি চিনি না !" আমাকে থামিয়ে বললো আদি "চিনি না বললে হবে, কাওকে জিজ্ঞাসা করলেই বলে দিতো যে মুন্নার কনভেন্ট প্রিন্সিপাল এর বাড়ি কোন দিকে । তবে আমার বাড়ি গিয়ে আপনার বিশেষ লাভ হতো না দু দিন আমার নাইট শিফট ছিল ।"
আমার হটাৎ প্রশ্ন জাগলো "আচ্ছা তুমি মাস্টার্স বা FRCS করছো না কেন ? "
মুখ টা চুপসে গেলো আদির। ব্যাপারটা একটু হালকা করবো বলেই ওকে নিয়ে বেরোলাম হোটেলের বাইরে বেলা হয়েছে ঘড়ির দিকে দেখা হয় নি । "চলো তোমার হাসপাতাল দেখাবে !"
"খুব আনন্দ নিয়ে বললো এখনই চলুন !"
নানা কথা বলতে বলতে হাসপাতালের দিকে এগিয়ে চললাম । মুন্নার হাসপাতাল যত ছোট ভেবে ছিলাম ততো ছোট নয় । একটা ব্যাপার বুঝতেই পারলাম যে আদি ওই হাসপাতালের প্রাণ কেন্দ্র । ওর এই হাসপাতালে এতো লোকের ভালোবাসা জড়িয়ে আছে ভাবতেই অবাক লাগলো । এমন কেউ নেই যে আদি কে চেনে না । বেয়ারা থেকে নার্স তাকে একের পর এক অভিবাদন করে যাচ্ছে ।
"আচ্ছা হাইয়ার স্টাডি যেটা বলছিলাম , তুমি হাইয়ার স্টাডি করতে চাও না? "
আদি আমার দিকে তাকিয়ে নিষ্পাপ একটা হাসি দিয়ে বলে "কেন এই তো বেশ ! এখানে ওসবের দরকার পড়ে না !"
আমি একটু হেসে বললাম " ওখানে দরকার পড়ে না কিন্তু অন্য জায়গায় ?"
"না অন্য জায়গায় যাবার কোনো ইচ্ছে যে আমার নেই !" আদি উত্তর দেয়! আমি যা চাইছি তা আদির থেকে পাচ্ছি না । ঘুইরে প্রশ্ন করতে হলো "কেন এমন কেন ?"
"মা কে ছেড়ে অনেক দিন বাইরে ছিলাম আর মন চায় না , আর মাকে ছেড়ে ভালো লাগে না দেখলেন না এতদিন আপনাদের বাড়ি যাওয়া হয় নি !"
হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে কি মনে করে আদি কে বললাম "চলো হোটেলে ফিরে যাই ।"
আদি বললো চলুন । একটু হেসে বললো "আমার বাড়ি চাইলে এক কাপ চা খাওয়াতে পারি , হাসপাতালের ঠিক পিছনে । পড়ে বলবেন "বাড়ি নিয়ে গেলাম না ।"
যতই মিশছি আদির সাথে ততই যেন গভীর একটা টান অনুভব করছি , আমাদের একে অপরকে যেন নখদর্পনে চেনা । ভালোই লাগলো ,বললাম "চলো তোমার মায়ের হাতের চা খেয়ে আসবো ।"
ঘড়ি দেখে আদি বললো "ভাগ্য ভালো মা বাড়িতেই আছেন ।" আমি জিজ্ঞাসা করলাম কেন ?
"বাহ্ উনি অন্যদিন কলেজে থাকেন আজ উনি ফিরে এসেছেন , মাঝে মাঝে ফিরে আসেন । ঘড়িতে ২ :00 বাজে দুপুর গড়িয়ে গেছে খেয়াল করি নি ।
ছোট্ট বাড়ি দু তিনটে ঘর আর বারান্দা , হিল স্টেশনের বাড়ির মতো । বাইরেই বারান্দায় আমায় বসতে দিয়ে আদি ভিতরে চলে গেলো । বাড়ির বাইরে আদিত্যর নাম প্লেট লেখা দেখে ভালো লাগলো ।
তুমি যে আমার নাম চুরি করে নিয়েছো হে ছোকরা! যেন আমার নাম বরুন সেন গুপ্ত , আর তুমি আগে শুধু এটি আদিত্য বসিয়ে নিয়েছো নাম টা কিন্তু বেশ ভালো আদিত্য বরুন সেনগুপ্ত । না আমার নাম এভাবে ব্যবহার করা চলবে না ।তোমার মাকে কমপ্লেন করতে হবে ।
আদি এক গাল হেসে বললো " মা আসলে বলুন , আমিও বলি আদিত্য যা বরুণ তাই দুটো রাখবার কি দরকার ছিল ।
আদি ভিতরে বোধ হয় মা কে বলতে গেলো আমি এসেছি । আমি বারান্দায় বসে রইলাম ।
কিছু ক্ষনের মধ্যেই আদি বেরিয়ে এসে বললো চলুন হাত মুখ ধুয়ে নিন "মা বললেন এসেছেন যখন তখন গরিবের বাড়ি দু মুঠো খেয়েই যাবেন ।"
আমি কিন্তু কিন্তু করলাম । তার পর মনে হলো না চা হোক পরে না হয় আরেক দিন আসা যাবে ।
আদি বললো "ভাবছেন কি চা আসছে না , ভাত খাবেন ।" কেমন দ্বিধা গ্রস্ত হয়ে হাত মুখ ধুয়ে খাবার টেবিলে বসলাম ।তোমার মাকে কৈ দেখছি না ? উনি আসছেন নিন আপনি খেতে শুরু করুন ।"
এক জন ভদ্রমহিলা এসে টেবিলে আমার খাবার বেড়ে দিলো । বাড়িতে কাজ করেন হয়তো । আমি আদি কে বললাম আমি কিন্তু অল্পই খাই ।
আদি হাসলো কিছু বললো না ।
মুখে খাবার তুলতেই , মাথা টা ঘুরে উঠলো । গলা দিয়ে খাবার টা কিছুতেই নামছে না , চোখ টা ভিজে গেছে বুঝতেই পারি নি । চোখের নোনা জল টা
মুখে মিশে যাচ্ছে , এতো দিন ধরে মনের অবচেতনে যাকে খুঁজে গিয়েছি ভাগ্য এভাবে তাকে মিলিয়ে দেবে ভাবি নি । দু চোখ মেলে তাকে দেখবার আশায় অসাড় হয়ে গেছে আমার শরীর । পিছনেই দাঁড়িয়ে কিছু করছে আদি । এক বার ছুঁয়ে দেখতে ইচ্ছে করছে ছেলেটাকে ।
প্রাণ ভোরে ডাকতেও পারছিনা আদি আয় ।
হ্যাঁ সেই এক স্বাদ , এই এক মাধুর্য , উফফ!!! ভাতের থালা পরেই রইলো । খাওয়া আর হলো না । কথা দিয়েছি খোঁজার চেষ্টা করবো না তাকে । আদি একটু আশ্চর্য হয়ে বললো "কি শরীর খারাপ করছে ?" আমি বললাম "হ্যাঁ ওই আর কি !"
উঠে বাইরে জলের গ্লাস নিয়ে বারান্দায় হাত ধুয়ে আদির দিকে না তাকিয়েই যাবার উদ্যোগ নিলাম । দু চোখের জল লুকোতেই হবে ।সামনে দাঁড়ালে আমি হয়তো নিজেকে সামলাতে পারবো না । ছোবার লোভে পিছন থেকেই কাঁধ টা চেপে ধরলাম আদির । নিজের শরীরে বিদ্যুতের একটা শিহরণ বয়ে গেলো ।
" আদি আসি ! " বলে বেরিয়ে আসলাম রুদ্ধশ্বাসে । হতচিকিত হয়ে আদি দাঁড়িয়ে রইলো । বুঝতে পারলো না আমার এমন ব্যবহারের কি কারণ ।
দূর থেকে রীনার কণ্ঠস্বর শুনতে পেলাম "কি আদি উনি খেয়ে গেলেন না আর তুমি যেতে দিলে ? "
বাকি কথা গুলো মিলিয়ে গেলো বাতাসে । আমি হাসপাতালের রাস্তা ধরে ছুটছি হোটেলের দিকে ববিন কে খুঁজবো বলে ।
কোনো রকমে হোটেলের ঘরে এসে দরজা বন্ধ করে দিলাম । না এ হতে পারে না, শ্রীর কাছে আগেই হেরে বসে আছি, এর পর রীনার কাছে না , পারবোই না । সবার অলক্ষ্যে আমাকে এখুনি এই শহর ছেড়ে বেরিয়ে যেতে হবে । কাওকে কিছু বলা যাবে না , আমি পারবো না রীনার সামনে দাঁড়াতে । কি নিয়ে দাঁড়াবো আমি আদির সামনে ? আর তার পর শ্রী আর ববিন ? ওরা কি ভাববে আমায় !
এখন উপলব্ধি করছি মানুষ কেন কাপুরুষ হতে চায় । আর কোনোকিছুর জায়গা থাকে না তার মনে শুধু পরাজয়ের গ্লানি ছাড়া , তাই বাইরের খোলস ছেড়ে নিজের পরিচয় পরিচয় ভুলে যেতে চায় প্রায়শ্চিত্তের জ্বালায় । আবার কেউ সেই খোলস গায়ে নিয়ে বাঁচতে থাকে বিত্তবানের মতো প্রায়শ্চিত্তের আগুনে জ্বলতে জ্বলতে ।
মনে আনন্দের বান এসেছে আজ , কিন্তু সেখানে স্নান করার অধিকার নেই , যাবোই বা কোথায় ? ববিনের সাথে দেখা না করে আমার যাওয়া হবে না । ওর জন্যই আমার মায়া , শ্রীর মায়া কাটিয়ে ফেলবো , রীনার মায়া কাটিয়ে ফেলবো । কিন্তু আদি তো কোনো অন্যায় করে নি, ওকে বঞ্চিত করা পাপ হবে । না, হিসাবের খাতায় ডানদিক আর বা দিক এক রাখতে হবে । প্রায়শ্চিত্তই যখন করতে নেমেছি দুজনের আমাকে বিচার করার সমান অধিকার , একে ওপরের জীবনে জড়িয়ে আছে যে!
এই অপেক্ষা বড়ো অপেক্ষা একটা করে ঘড়ির কাটা টিক টক করছে , কখন আসবে ববিন তাকে সাক্ষী রেখেই আমার পথ চলা, জানি দুজনের কাছে সমান অপরাধী আমি কিন্তু শ্রীর জেনে রাখতে হবে রীনার সন্তান আদি আমার সন্তান, আর তা বলতে না পারলে আমার কোনো প্রায়শ্চিত্তই হবে না ।
ঘন্টা দেড়েক হবে হোটেলের ওয়েটার আমায় খবর দিয়ে গেলো ববিন ফিরে এসেছে, আদি আর আসেই নি হোটেলে, হয় তো ওর মন ভেঙে গেছে আমার ব্যবহারে । বাইরে বেরিয়ে দেখলাম বিকেল হচ্ছে আস্তে আস্তে।
রীনার সামনে দাঁড়ানো আমার ভীষ্মের শরশয্যার মতো । আমার যে ইচ্ছা মৃত্যু । ববিন দৌড়ে হাঁপাতে হাঁপাতে এসে বললো " শুনলাম তুমি অস্থির হয়ে বসে আছো আমায় দেখবে বলে ।"
আমি বাচ্ছাদের মতো ববিনের হাত ধরে ভয়ার্ত চোখে বললাম " ববিন আমায় এখুনি চলে যেতে হবে , তবে যাবার আগে কিছু কথা বলে যেতে চাই ।"
আমি জানি না তোর বিচারে আমি কেমন বাবা , কিন্তু আদির প্রতি জীবন ভর না জেনে অন্যায় করা হয়ে গেছে !"
" কি বলতে চাইছো বলতঃ , বুঝতে পারছি না !" ববি কেঁপে উঠলো । অজানা সংকেত সে ঠিকই ধরতে পেরেছে ।
"রীনা মার সাথে দেখা করতে যাবি? " আমি আগ্রহ ভোরে ববিনের চোখে তাকিয়ে থাকি !
ধপ করে বসে পরে ববিন , মা কে সে বড়ো ভালো বাসে, আমার মতো সে মা কে ভাগ করতে পারবে না । হাজার হলেও সংসারের খুঁটি নাটি এখনো বুঝতে শেখেনি । হয়তো ছুটি শেষ করে ফিরে যাবে নিজের অন্য পৃথিবীতে , তাকে নিজের পৃথিবীতে ফিরিয়ে দিতে আমায় অনেক সাহস দিতে হবে, কিন্তু এই মোহের মায়াজালে সে লক্ষ্য ভ্রষ্ট হয়ে পড়বে । সঙ্গে যদি আদি কে নেয় নিক , ভালোই হবে। এতদিন মায়ের দায়িত্ব নিলো আমায় দেখে শুনে । এখন বাবার দায়িত্ব নিক আদি কে দেখে ।
একটু কাঁধে হাত রাখতে ভয়ে বলে উঠলো ববিন " মা কিন্তু একেবারে ভেঙে পড়বে !"
আমি কাঁধে হাত রেখে বললাম " চল না যাই দুজনে , সেই জন্যই তো আমি পাশে চাই তোকে, আর যে নতুন করে পথ হাঁটার সাহস নেই , তুই তো আমার সাহস , সম্বল !"
"এখনই যাবে ?" ববিন অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করলো !
আমি বললাম হ্যাঁ ববিন আর দেরি চলে না , আমার প্রায়চিত্তের পার্থ যে বড়ো দুর্গম, আর শ্রীর অপরাধী হয়ে নিজেকে কুঁকড়ে রাখতে পারতাম হয়তো কিন্তু রীনার সামনে আমার সে শক্তিও নেই !"
"তুই আমায় সাহস দে বোধি তুই আমার জ্ঞানের সপ্ত বোধ , তোর জ্ঞানেই আমার মহাপ্রয়াণ আসুক, কালের অতলে অধ্যায় তলিয়ে যাক ক্ষতি নেই , কিন্তু আমার অনেক কাজ তোকেই তো শেষ করতে হবে ?
পারবি না, দেখ আমার মুখের দিকে দেখ পারবি না!"
আমি জানি তুই পারবি আমায় প্রায়শ্চিত্তের পথ করে দিতে !"
আমার হাত ধরে উঠে একটা নিঃস্বাস ফেললো , তার বুক কতটা জমে পাথর হয়েছে সে অনুমান আমি করতে পারি ।
ববি জানে সে তার বাবা কে হারাতে চলেছে , এই কঠিন উপলব্ধি তে কোনো মহাপ্রয়াণ হয় না , এ শুধু লুকিয়ে পালিয়ে বাঁচা ।কিন্তু যাবার পথ তাকেই করে দিতে হবে , অধ্যায় তার পড়া শেষ হয়ে গেছে । এমন অধ্যায় শেষ হয় না , বরুন সেনগুপ্তের পথের শেষ কোথায় পাঠক জানবে না ! বাস্তব মননশীল সত্তায় আমরা আফসোস করি ইশ যদি রীনা আর শ্রী যদি ফিরে আসতো আর কি বা ক্ষতি হতো !