25-01-2019, 11:22 AM
এমন উপমা শ্রী আগেও দিয়েছে অনেক বার গা করি নি ! মেয়েদের এটাই বিশেষত্ব । সব মেয়ে কম বেশি এমনি হয় । কিন্তু মাত্রা ছাড়িয়ে গেলো যখন শ্রী আমাকে স্নেহের তুলনা দিলো । " মেয়েটাকে প্রথম থেকেই আমার সন্দেহ হতো , বন্ধু তো বন্ধু আমাদের বন্ধু হয় না , এতো গলা গ্রীবা কেন ? স্বামী আছে ঘর সংসার কোরনা, কিন্তু অন্যের স্বামীর সাথে এতো মধুমল্লার এর কি আছে ? "
দেবে একটু তোমার মহান দার্শনিক ব্যাখ্যা ? আমার পায়ে ফোস্কা পড়লে তোমার কোনো ভ্রুক্ষেপ থাকে না তার পায়ে মলম লাগাতে যাও? ঘরের মধ্যে অন্য মহিলার অন্তর্বাস আমাকে বিশ্বাস করতে হবে যে তুমি সতী সাবিত্রী ? "
উত্তর দিতে গেলে ববিন কে ঘরে সরিয়ে দিয়ে আসতে হয় । তাই করলাম আর TV তে কার্টুন চালিয়ে ববিন কে বললাম ববিন মা রেগে গেছে এখন তুমি আমাদের দিকে দেখো না কেমন !" ববিন মিষ্টি হাঁসি দেয় বলে বাবা " ইউ আর দি উইনার বলে থামবস আপ করে ।
ফিরে গিয়ে শ্রী কে বলি অনুনয় করে " শ্রী ববিন বড়ো হচ্ছে , এই কথা গুলো কি আমরা আলাদা করে দুজনে বলতে পারি না !"
শ্রী জ্ঞানশুন্য রাগে, আগে এমন রাগ দেখি নি । "সামনের বাসন কোসন গুলো রাগে আছড়ে ফেলতে ফেলতে বললো এ সংসার আমার চাই না , তুমি থাকো তোমার এই সংসার নিয়ে । " ঠিকই তো আমার ভুল । শ্রী কে তো আমি এস গ্র্যান্টেড ধরে নিয়েছি ।ওর সাথে বসেও তো আমার অনেক সময় কাটানোর ছিল । সে ভাবে জিজ্ঞাসাই করা হয় নি ওহ কি চায় । কিন্তু ওহ তো আমাকে বলতে পারতো ।
আমাদের রাগ পর্যায় টা কুটু ভাষায়ে বদলে গেলো । শ্রী থামতে পারলো না । "তোমার ওই ভালো মুখোশের আড়ালে লুকিয়ে আছে শয়তান , না হলে সুন্দর এমন দেব দূতের অবহেলা করে তুমি অন্য নারী সঙ্গ করো !তুমি পিশাচ "
আমার রাগ হচ্ছিলো না , অনুতাপই হচ্ছিলো । দাঁড়ি গোফ না থাকলে দার্শনিক হওয়া যায় না , আর সংসারের মনস্তত্ব খুব জটিল আর জটিলতা না থাকলে কোনো বড়ো ধর্মের প্রতিষ্টা হয় না , সংসার সবচেয়ে বড়ো ধর্ম ।
শ্রী রাগে নিজের ঘরে গিয়ে নিজের জামা কাপড় গুছিয়ে নিতে লাগলো । আমাদের বাড়ি একটু কোনের দিকে তাই আমাদের বাড়ির চেঁচামেচি চট করে বাইরে যায় না । আমি নৈরুন দিয়ে বসে কান পরিষ্কার করছিলাম ।
ওকে নিজের জামা কাপড় গুছোতে দেখে আমার রাগ হলো , গিয়ে দু হাতের বাহু ধরে ওর চোখে চোখ রেখে বললাম , " কি ছেলে মানুষই করছো ?"
এ সন্দেহ তোমার ঠিক নয় শ্রী , স্নেহ খুব অসহায় , ওর সন্তান নেই ববিন কে নিজের সন্তানের মতো দেখে , আমাকে নিজের বন্ধুর মতো পশে পায় , ওকে তোমার এ চোখে দেখা ঠিক নয় !"
এ কথা বললেও মনে মনে আমি অপরাধী , চরিত্র মূল্যাঙ্কন করলে আমি চরিত্রহীন বটে । গলা টা কেঁপে উঠলো । তবুও ঘর ভাঙতে দেয়া যাবে না কিছুতেই " ববিনের দিব্যি আমি আমার মনে কোনো পরস্ত্রী কে জায়গা দি নি । " আমি শরীর দিকে তাকিয়ে বললাম ।
শ্রী আবার গর্জে উঠলো " তোমার এতবড়ো স্পর্ধা লম্পট, তুমি আমার সন্তানের মিথ্যে দিব্যি করছো ইতর কোথাকার ! বেরিয়ে যাও আমার চোখের সামনে থেকে , আমি তোমার মুখ দর্শন করতেও চাই না !"
রাগে আমার শরীর কাঁপতে লাগলো । শ্রী প্রয়োজনের বেশি বলে ফেলেছে , আমার সাথে বসে শান্তিতে এসব কথা বললেও আমি সব কিছু খুলে বলার সাহস রাখতাম , হ্যাঁ আমি এখনো সৎ । কিন্তু আমার সততার প্রমান নেই আমার কাছে । স্নেহের সাথে যা কিছু করেছি তার পর নিজেকে সৎ প্রমান করার আর কোনো রাস্তা নেই । কিন্তু রীনা এখনো জানিনা কেন আমার বুক জুড়ে বসে আছে ।
শ্রী কে টেনে নিয়ে আসলাম উর্মি মাসির ঘরে । খানিকটা ঝাকিয়ে থামিয়ে বললাম " মুখ সামলে কথা বোলো শ্রী , আমি এমন কিছু করিনি যে তোমার স্বামীর অধিকার তুমি হারিয়ে ফেলেছো , আর এই কি তোমার মুখের ভাষা , তুমি কলেজে বাচ্ছাদের এই শেখাবে !"
শ্রী জবাব দেয় " সে কি তোমার কাছ থেকে আমায় শিখে নিতে হবে ? একটা দুশ্চরিত্রের কাছ থেকে !"
আমার সমস্ত শরীর রাগে কেঁপে উঠলো " শ্রী কে শরীর ঝাকিয়ে বলতে চাইলাম আর একটি বার আমায় দুশ্চরিত্র বলো, আমি তোমার জিভ টেনে চিরে ফেলবো !"
কিন্তু অঘটন টা ঘটেই গেলো ভবিতব্যের মতো । হাতের নৈরুন টা গিঁথে গেলো ঝাকাতে গিয়ে শ্রীর গলায় । ফিনকি দিয়ে দর দর করে রক্ত বেরোতে থাকলো । আমি রক্ত দেখে ভয় পেয়ে উঠলাম । সামনে থাকা তোয়ালে দিয়ে গলার ক্ষত টা চেপে ধরবার চেষ্টা করলাম ।
কিন্তু ভগবানের এমনি ইচ্ছা , শ্রী ভাবলো আমি বোধ হয় শ্রী কে নৈরুন দিয়ে আঘাত করবার চেষ্টা করেছি । রাগে অন্ধ হয়ে যে ভাবে ছিল সে ভাবে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেলো । পরনের শাড়ী টুকুও না পাল্টে । আমি হতবাক হয়ে সোফায় মুখ ঢেকে বসে রইলাম ।
দীর্ঘ 14 বছর চললো আমাদের থানা পুলিশ । জেল কাকে বলে দেখতে হলো, না জানি কোন আশীর্বাদে । শুধু সহৃদয় ছিলেন অবিনাশ দা , আর তার প্রভাব উচ্চ মহলে , চাকরি টা খোয়াতে হয় নি । নিয়ম মতো করে ছ মাসে এক বার ববিন কে নিয়ে আসতাম আমার কাছে , বাবার শখের বাড়ি টা পড়ো বাড়ি হয়ে গেছে ।
আর লোকে আমায় পাগলই বলে ।
যে পাঠক রা 498 জানে না তারা বুঝবে না 498 কত বড়ো অভিশাপ পুরুষের জীবনে । আমার জীবনে এমন অভিশাপ আসতো না যদি নাকি শ্রী খবর না পেট যে স্নেহ সন্তান সম্ভবা । আমি আপ্রাণ চেষ্টা করেছিলাম যদি শ্রী কে ফিরিয়ে আনা যায় । স্নেহ সন্তান সম্ভবা এই খবর পাওয়ার পর আমার সব চেষ্টা ব্যর্থ হয়ে গেছে । কিন্তু শ্রী চলে যাবার 5 মাস পর্যন্ত স্নেহ ব্যাঙ্গালোরে সিদ্ধার্থ কে নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা করিয়েছে , সেটা শ্রী জানে না বুঝতেও চায় না । তার এমন ধারণা বদ্ধমূল যে স্নেহের সন্তান আমার ঔষরস জাত ।
ববিন কে সম্পর্কের এই টানা পড়েন বুঝে নিতে কষ্ট হয় নি । আর ছোট থেকেই আমার খুব আসে পাশে ছিল ববিন তাই বাবা কে খুঁজতে চায় নি নিজের কাছে সে ভাবে । মায়ের অজান্তেই রোজ ফোন করে কথা বলতো আমার সাথে । শ্রীর স্ত্রী হয়ে যা ভূমিকা নেভানোর সেটা করে গেছে ববিন নিজে । এমন কি জিজ্ঞাসা করে নিতো আমি খেয়েছি কিনা আর অপেক্ষা করতো কখন কোর্ট অনুমতি দেবে আমায় ববিন কে দেখতে । সবার সামনেই ছুটে চলে আসতো আমার কাছে । তিন চারদিনের জন্য আমায় বেঁচে থাকতে হতো গোটা 6 মাস । তার পর আবার অপেক্ষা ।
না চাইতেই সব ভরণ পোষণের খরচ দিয়ে গেছি আমি অগ্রিম. এক দিন জজ সাহেব হেঁসে বলেই ফেললেন, আপনার সত্যি ভাগ্য খারাপ, এক দিনের জন্য দেখলাম না আপনি স্ত্রীর প্রতি কোনোঅবহেলা করেছেন ।" তাই রায় শোনানোর আগে জজ সাহেব কে অনেক বেগ পেতে হয়েছিল , ঘটনাটা নিছক অকস্মাৎ প্রমান করবার জন্য । এটা কে বেনিফিট অফ ডাউট বলা হয় । আমার তো কোনো ক্রিমিনাল রেকর্ড নেই আর আমার হয়ে সখ্য দিয়েছিলো অনেকে , তাই এটা প্রমান করা শরীর সম্ভব হয় নি যে শ্রী কে ক্ষতি করবার জন্য আমি অস্ত্র হাতে নিয়েছিলাম ।
শ্রী মনে মনে জানতো না এমন নয় । কিন্তু কোনো ওয়াজান স্বভিমান তাকে ক্রমাগত নিরস্ত্র করে রাখতো আমার কাছে আসতে । ববিনের সব কোথায় পশে বসে শুনতো কিন্তু আমার প্রতি তার মায়ার প্রকাশ আসে নি আর কোনো দিন আমার জীবনে এতগুলো বছরে । ভগবান আমায় একটা শান্তি দিয়েছিলেন যে আমার পুরো কেস-এ জজ পাল্টায় নি , এমন ভাগ্য খুব কম লোকের হয় , উনি বদলি হয়ে গেলেও আবার , বার বার আমার কেস-এই এসে পড়েছেন , শুনানির দিন ফেলেছেন । । ববিন কখনো ভাবে না যে তার বাবা মা আলাদা আর এতো দিন ধরে তার পাশে থেকে আমি একটাই শিক্ষা দেবার চেষ্টা করেছি যে মানুষের সম্পর্কের মূল্যবোধ তার সেই সম্পর্কের শক্তি , আর ববিন ভবিষ্যৎ জীবনে সেটা যেন না হারায় ।ববিন বাধুক । খুব নামি প্রতিষ্ঠানে ইঞ্জিনিয়ারিং এর মেধাবী ছাত্র । অনেক বড়ো লোকের মতো দেখতে হয়ে গেছে তাকে । ফেইসবুক হোয়াটস আপ এর যুগে সে নিজেকে একেবারে প্রথম শ্রেণীতে রাখে । তার ভবিষ্যতের চিন্তা নেই ।
কিন্তু স্নেহ আমার কাছে আসা থামায় নি । সব কিছু পিছনে রেখে আমার কাছে ছুটে ছুটে আসতো শ্রী চলে যাবার পর । হ্যাঁ দৈহিক সম্ভোগ যে হয় নি এমন নয় , কিন্তু , সে অকপটে স্বীকার করেছে যে সে আমায় ভীষণ ভালো বাসে । আমিও তাকে স্বীকার করেছি যে রীনা আমার সমস্ত মন জুড়ে লুকিয়ে থাকে সারাক্ষন । কিন্তু শ্রীর দিকে অবহেলা করি নি কোনো দিন । যখন যা শুনেছি শ্রী-এর অসুবিধা ছুটে গেছি সাহায্য করতে , তা কলেজে হোক আর কলেজের বাইরে হোক । আর্থিক ভাবে শ্রী সে ভাবে নিজেকে আর গুছিয়ে নিতে পারে নি , বিশেষ করে বাবা মারা যাবার পর । যে টুকু সম্পত্তি বা পয়সা ছিল শ্রী কে তার নিজের লোকেরা বঞ্চিতই করেছে। কারণ শ্রী তাদের কেই জীবনে বড়ো বলে ভেবেছিলো, তাদের গুরুত্ব অনেক অনেক বেশি ছিল আমার মূল্যহীন এমন ভালোবাসার কাছে ।
যদি কাঁদলে সব সমস্যার সমাধান হতো তাহলে আমি রোজ কাঁদতাম । কিন্তু আজ কাল চোখে জল আসে না ।
জীবন তা দেখতে দেখতে কেটে গেছে , চুলেও পাক ধরে গেছে , আমার বাধ্য হয়ে বেছে নেওয়া ব্যাচেলর জীবনের সঙ্গী ছিলেন অবিনাশ দা । 60 এ পা দিলেও আগের মতোই প্রাণবন্ত । সপ্তাহে একটা দিন ওনার সাথে বসেই দু পেগ মদ খেতাম ।
প্রাণের বন্ধু তিনি । অভাব অনটন কিছুই নেই, আমি বর্তমান ওভারশেয়ার , এবং অবিনাশ দার অনুকূল্যে আমি সর্বে সর্বা । আমাকে আক্ষেপ করে বলতেন " আমি জাদু জানি, কিন্তু তোমার সংসার জোড়া লাগাবার জাদু টি শিখতে ভুলে গেছি ।"
প্রথম প্রথম আমিও দিন রাত দাঁড়িয়ে থাকতাম শ্রীর বাড়ির সামনে । যদি বেরিয়ে এক বার আমায় কিছু বলে , বা আমি সুযোগ পাই কিছু বলবো , কিন্তু শ্রী আসে নি । এমন সংযম মানুষের কেন আসে আমি জানি না । শরীর শরীরের সাথে মিশে গেছে কত বার , নারী নক্ষত্র আমি বুঝে নিয়েছিলাম কিন্তু ভুল টা হবার ছিল ।
শ্রী কে আমি হারাতে চাইনি , আর কোর্টেও শ্রী কে হারাতে চাই নি , 14 বছর পর যখন একেবারে আমার মুখের দিকে না তাকিয়ে তাকিয়ে শ্রী বলে " ওই মানুষ টিকে আমার স্বামী বলে মানি না ! আমার ডিভোর্স চাই , বুকের পাঁজর টা গুমোট ধোঁয়ায় পুড়ে গিয়েছিলো !"
এক গাল দাঁড়ি আর কাঁচাপাকা ঝাঁকড়া চুলে কান্নাটা আসতে সংকোচ করে । কান্না একটু চকমকে পোশাক পছন্দ করে মনে হয় । মেয়েদের পোশাক চকমকে হয় তাই কান্নায় তাদের নির্ভেজাল অধিকার । নিঃসংকোচে জিতিয়ে দিতেই মন চেয়েছিলো শ্রী কে । কিন্তু জেতাতে পারি নি শ্রী কে একটা বিষয়ে , যে আমি ইচ্ছাকৃত শ্রী কে আঘাত করতে চাইনি সেদিন ।যদি দোষী সাবস্ত হয়ে 5 বছরের কারাবাস ভোগ করতাম হয় তো নিজেই একটু স্বস্তি পেতাম। কিন্তু ভগবান সত্যি কি নির্দয় আমাকেও ক্ষমার ভিক্ষা দেন নি , আমি নির্দোষ হয়ে শ্রীর সাথে দূরত্ব বাড়িয়ে ফেলেছি আরো খানিকগুন । সেই থেকেই বেনিফিট অফ ডাউট এর তরোয়ালের আগায় নিজের জীবন সপে দিয়েছিলাম । দূরত্ব আরেকটু বেড়ে গেলো সেদিন ।
এমন এক নারী যাকে আজ আমার সহধর্মিনীর জায়গা থেকে এক চুল নড়াই নি , আজও যার উপস্থিতিতে আমার ঘরের লক্ষ্মী জেগে উঠবে এই বিশ্বাসে ঘুম থেকে উঠি, আর যাকে আমার সন্তানের মা এর সম্পূর্ণ শ্রদ্ধা দিয়ে তার সব অভিশাপ মাথা পেতে নিয়েছি আমার জীবন পাথেয় হিসাবে, তাকে কি করে আলাদা করা যায় আমার জীবন , আত্মা আর আদর্শ থেকে । কি ভাবে শ্রী কে আলাদা করবো কেউ শিখিয়ে দেয় নি বোকার মতো শুধু নিজের বয়স বাড়িয়ে ফেলেছি সমাধানের উপায় খুঁজতে খুঁজতে । আর যান্ত্রিক ভাবে অফিসের একঃ টেবিল থেকে অন্যটেবিলে সরে গেছি মাঝখানের এতগুলো বছর ।
শ্রীর অপরিণত শিশু সুলভ মনে আমার হয় তো জায়গা নেই কিন্তু তার প্রতি আমার ভালোবাসাও অকৃত্তিম।তার করুনা আমার হয় তো প্রাপ্য নয় কিন্তু আমি গলা ফাটিয়ে বলতে পারি যে এই সমাজের দাঁড়িপাল্লাটাই ভুল । এই সমাজ -এ যারা হায়নার মতো আমায় পিছু পিছু ঘুরে বেড়ায় আমার দোষ গুনের এনাটমি করবে বলে , তারা জানে না যে একাধিক ভালোবাসাও অবস্থান করে মানুষের মনে তবে ভিন্ন রূপে । আর যৌনতা শুধু শারীরিক ভারসাম্য আর চারিত্রিক রূপ মাত্র , তাকে কলুষিত করে জোর করে সম্পর্কের মধ্যে টেনে নামানোটাই সমাজের মান নির্ধারণকারী ভন্ডদের প্রধান কাজ ।যারা যৌন্য আবেশে লিপ্ত হয় তাদের ছাড়া কারোর অধিকার থাকা উচিত নয় কি ভুল আর কি ঠিক বিচার করার । তারা শুধু কাদা ছিটিয়ে দিতে জানে কিন্তু কাদা পরিষ্কার করতে জানে না ।
যারা আমায় অসৎ চরিত্রের আখ্যা দিচ্ছেন তারাই ভেবে দেখুন আপনার জীবনে কি এমন কিছু ঘটে নি , এমন কিছু কি ঘটে নি যার সঠিক ব্যাখ্যা আপনি আপনার স্ত্রী কে দিতে পারবেন না , নিশ্চয়ই আছে । কখনো ঘটে যাওয়া কোনো আবেগ, একটা চুমু, বা ঈষৎ ভালোবেসে বাহু বন্ধন, বা নিজের অজান্তে একটু শারীরিক সুখ ভোগ ? আর যদি ঘটে তাহলে আপনার কি অভিমত ? আমি নিজেকে দুর্বল ভাবতে পারি না । আমাকেও দিনের শেষে ক্লান্ত বিধ্বস্ত হয়েই ঘরে ফিরতে হয় , আমার কাঁধে আমি কোনো নারীর হাতের কোমল স্পর্শ পাই না , আমাকেও যুদ্ধ করতে হয় রোজ আমার একাকিত্বের সাথে আর তাকে রোজ কুস্তি লড়ে হারিয়ে তারপর একটা দিন কাটাতে হয় ।পাই না আজ পনেরো বছর যে আমায় বুঝবে ।কেউ আমাকে বিকেলের চা করে খাওয়ায় না , আর বাজারে গিয়ে আমায় ভাবতে হয় , কি কিনবো ? সব স্বাদ করোক আমাকে একটা স্বাদের কথা জানান দেয় , শুধু স্বাধীনতার , একাকিত্বের দাস হয়ে নয় ।
আমার নিজের এই অভিশপ্ত একলা জীবনে এটাই আমার অভিশাপ , আর শ্রীর কাছ থেকে তা মাথা পেতে নিয়েছি আমার ভুলের প্রায়শ্চিত্ত করবো বলে । একলা থাকার পরাধীনতা মানুষ কে একটু একটু করে নিঃশেষ করে দেয় । সেই জন্যই মানুষ জেলের এর সৃষ্টি করে করেছে , অপরাধীদের জেলে পাঠানো হয় । সেখানে একলা থেকে তাদের কৃত কর্মের প্রায়শ্চিত্ত করতে হয় । স্বাধীনতার থেকে বড়ো আনন্দ হয় না , তাই হতো রীনা সেই স্বাধীনতা খুঁজতে গিয়ে হারিয়ে গেছে কোথাও । আর মানুষ কে সমাজ শাস্তি দেয় তার চরম একাকিত্বের।
আমার পরাধীনতা আমাকে ছোট্ট ভুলের জন্য আজীবন কারাবাস শুনিয়েছে , আমি আমার চিন্তার কারাগারে বন্দি থাকবো আজীবন । আসতে আসতে আমার চারপাশটাই হারিয়ে যাবে আমার কাছ থেকে একদিন, আর বাধক্যের শেওলা পড়বে আমার শরীরে , মন আমার যতই প্রবীণ হোক না কেন আমার পরিবেশ আমার আমিত্বে ছাপ দিয়ে দেবে " আমি বর্জিত !"
যখন এমন ভয় ঘিরে ধরে মানুষের মনে, মানুষ আসতে আসতে মৃত্যুর প্রহর গুনতে থাকে । কিছু মানুষ শেষ শক্তি টুকু সঞ্চয় করে বদলে দেবার লড়াই করে, কেউ পারে আর কেউ পারে না , গ্রহরাশিও বোধ হয় তাদের অনুকূলে থাকে না যারা হেরে যায় বদলাতে গিয়ে ।
শেষে নিজের আত্ম সন্মান বোধ বাঁচাতে সমাজের থেকে আলাদা হয়ে চুপি সাড়ে নিজের পরিচয় পাওয়া " আমার দেহ" থেকেও বিচ্ছিন্ন করে নেয় নিজেকে । অনেকে তাদের বিদ্রুপ করে কাপুরুষ বলে , আমার ইচ্ছে করে তাদেরই মতো কাপুরুষ সাজতে , শুধু বীর ভোগ্য বসুন্ধরায় বীরেরই জয় জয় কার হয় । কেউ ভেবেও দেখেনা এক মুহূর্তের জন্য এমন অনেক বীরেরা তাদের বীরত্ব কে ধরে রাখতে পারে নি ক্ষণিক মাত্র । তারা মানুষ গোত্রের থেকে একটু আলাদা । আমার ছাই পাশ আবোল তাবোল এমন অনেক খেয়াল খুশি আমি লিখে রেখে যাই আমার মোটা খাতায় । দুটো খাতা ভরে গেছে , নাম দিয়েছি অধ্যায় ।
দেবে একটু তোমার মহান দার্শনিক ব্যাখ্যা ? আমার পায়ে ফোস্কা পড়লে তোমার কোনো ভ্রুক্ষেপ থাকে না তার পায়ে মলম লাগাতে যাও? ঘরের মধ্যে অন্য মহিলার অন্তর্বাস আমাকে বিশ্বাস করতে হবে যে তুমি সতী সাবিত্রী ? "
উত্তর দিতে গেলে ববিন কে ঘরে সরিয়ে দিয়ে আসতে হয় । তাই করলাম আর TV তে কার্টুন চালিয়ে ববিন কে বললাম ববিন মা রেগে গেছে এখন তুমি আমাদের দিকে দেখো না কেমন !" ববিন মিষ্টি হাঁসি দেয় বলে বাবা " ইউ আর দি উইনার বলে থামবস আপ করে ।
ফিরে গিয়ে শ্রী কে বলি অনুনয় করে " শ্রী ববিন বড়ো হচ্ছে , এই কথা গুলো কি আমরা আলাদা করে দুজনে বলতে পারি না !"
শ্রী জ্ঞানশুন্য রাগে, আগে এমন রাগ দেখি নি । "সামনের বাসন কোসন গুলো রাগে আছড়ে ফেলতে ফেলতে বললো এ সংসার আমার চাই না , তুমি থাকো তোমার এই সংসার নিয়ে । " ঠিকই তো আমার ভুল । শ্রী কে তো আমি এস গ্র্যান্টেড ধরে নিয়েছি ।ওর সাথে বসেও তো আমার অনেক সময় কাটানোর ছিল । সে ভাবে জিজ্ঞাসাই করা হয় নি ওহ কি চায় । কিন্তু ওহ তো আমাকে বলতে পারতো ।
আমাদের রাগ পর্যায় টা কুটু ভাষায়ে বদলে গেলো । শ্রী থামতে পারলো না । "তোমার ওই ভালো মুখোশের আড়ালে লুকিয়ে আছে শয়তান , না হলে সুন্দর এমন দেব দূতের অবহেলা করে তুমি অন্য নারী সঙ্গ করো !তুমি পিশাচ "
আমার রাগ হচ্ছিলো না , অনুতাপই হচ্ছিলো । দাঁড়ি গোফ না থাকলে দার্শনিক হওয়া যায় না , আর সংসারের মনস্তত্ব খুব জটিল আর জটিলতা না থাকলে কোনো বড়ো ধর্মের প্রতিষ্টা হয় না , সংসার সবচেয়ে বড়ো ধর্ম ।
শ্রী রাগে নিজের ঘরে গিয়ে নিজের জামা কাপড় গুছিয়ে নিতে লাগলো । আমাদের বাড়ি একটু কোনের দিকে তাই আমাদের বাড়ির চেঁচামেচি চট করে বাইরে যায় না । আমি নৈরুন দিয়ে বসে কান পরিষ্কার করছিলাম ।
ওকে নিজের জামা কাপড় গুছোতে দেখে আমার রাগ হলো , গিয়ে দু হাতের বাহু ধরে ওর চোখে চোখ রেখে বললাম , " কি ছেলে মানুষই করছো ?"
এ সন্দেহ তোমার ঠিক নয় শ্রী , স্নেহ খুব অসহায় , ওর সন্তান নেই ববিন কে নিজের সন্তানের মতো দেখে , আমাকে নিজের বন্ধুর মতো পশে পায় , ওকে তোমার এ চোখে দেখা ঠিক নয় !"
এ কথা বললেও মনে মনে আমি অপরাধী , চরিত্র মূল্যাঙ্কন করলে আমি চরিত্রহীন বটে । গলা টা কেঁপে উঠলো । তবুও ঘর ভাঙতে দেয়া যাবে না কিছুতেই " ববিনের দিব্যি আমি আমার মনে কোনো পরস্ত্রী কে জায়গা দি নি । " আমি শরীর দিকে তাকিয়ে বললাম ।
শ্রী আবার গর্জে উঠলো " তোমার এতবড়ো স্পর্ধা লম্পট, তুমি আমার সন্তানের মিথ্যে দিব্যি করছো ইতর কোথাকার ! বেরিয়ে যাও আমার চোখের সামনে থেকে , আমি তোমার মুখ দর্শন করতেও চাই না !"
রাগে আমার শরীর কাঁপতে লাগলো । শ্রী প্রয়োজনের বেশি বলে ফেলেছে , আমার সাথে বসে শান্তিতে এসব কথা বললেও আমি সব কিছু খুলে বলার সাহস রাখতাম , হ্যাঁ আমি এখনো সৎ । কিন্তু আমার সততার প্রমান নেই আমার কাছে । স্নেহের সাথে যা কিছু করেছি তার পর নিজেকে সৎ প্রমান করার আর কোনো রাস্তা নেই । কিন্তু রীনা এখনো জানিনা কেন আমার বুক জুড়ে বসে আছে ।
শ্রী কে টেনে নিয়ে আসলাম উর্মি মাসির ঘরে । খানিকটা ঝাকিয়ে থামিয়ে বললাম " মুখ সামলে কথা বোলো শ্রী , আমি এমন কিছু করিনি যে তোমার স্বামীর অধিকার তুমি হারিয়ে ফেলেছো , আর এই কি তোমার মুখের ভাষা , তুমি কলেজে বাচ্ছাদের এই শেখাবে !"
শ্রী জবাব দেয় " সে কি তোমার কাছ থেকে আমায় শিখে নিতে হবে ? একটা দুশ্চরিত্রের কাছ থেকে !"
আমার সমস্ত শরীর রাগে কেঁপে উঠলো " শ্রী কে শরীর ঝাকিয়ে বলতে চাইলাম আর একটি বার আমায় দুশ্চরিত্র বলো, আমি তোমার জিভ টেনে চিরে ফেলবো !"
কিন্তু অঘটন টা ঘটেই গেলো ভবিতব্যের মতো । হাতের নৈরুন টা গিঁথে গেলো ঝাকাতে গিয়ে শ্রীর গলায় । ফিনকি দিয়ে দর দর করে রক্ত বেরোতে থাকলো । আমি রক্ত দেখে ভয় পেয়ে উঠলাম । সামনে থাকা তোয়ালে দিয়ে গলার ক্ষত টা চেপে ধরবার চেষ্টা করলাম ।
কিন্তু ভগবানের এমনি ইচ্ছা , শ্রী ভাবলো আমি বোধ হয় শ্রী কে নৈরুন দিয়ে আঘাত করবার চেষ্টা করেছি । রাগে অন্ধ হয়ে যে ভাবে ছিল সে ভাবে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেলো । পরনের শাড়ী টুকুও না পাল্টে । আমি হতবাক হয়ে সোফায় মুখ ঢেকে বসে রইলাম ।
দীর্ঘ 14 বছর চললো আমাদের থানা পুলিশ । জেল কাকে বলে দেখতে হলো, না জানি কোন আশীর্বাদে । শুধু সহৃদয় ছিলেন অবিনাশ দা , আর তার প্রভাব উচ্চ মহলে , চাকরি টা খোয়াতে হয় নি । নিয়ম মতো করে ছ মাসে এক বার ববিন কে নিয়ে আসতাম আমার কাছে , বাবার শখের বাড়ি টা পড়ো বাড়ি হয়ে গেছে ।
আর লোকে আমায় পাগলই বলে ।
যে পাঠক রা 498 জানে না তারা বুঝবে না 498 কত বড়ো অভিশাপ পুরুষের জীবনে । আমার জীবনে এমন অভিশাপ আসতো না যদি নাকি শ্রী খবর না পেট যে স্নেহ সন্তান সম্ভবা । আমি আপ্রাণ চেষ্টা করেছিলাম যদি শ্রী কে ফিরিয়ে আনা যায় । স্নেহ সন্তান সম্ভবা এই খবর পাওয়ার পর আমার সব চেষ্টা ব্যর্থ হয়ে গেছে । কিন্তু শ্রী চলে যাবার 5 মাস পর্যন্ত স্নেহ ব্যাঙ্গালোরে সিদ্ধার্থ কে নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা করিয়েছে , সেটা শ্রী জানে না বুঝতেও চায় না । তার এমন ধারণা বদ্ধমূল যে স্নেহের সন্তান আমার ঔষরস জাত ।
ববিন কে সম্পর্কের এই টানা পড়েন বুঝে নিতে কষ্ট হয় নি । আর ছোট থেকেই আমার খুব আসে পাশে ছিল ববিন তাই বাবা কে খুঁজতে চায় নি নিজের কাছে সে ভাবে । মায়ের অজান্তেই রোজ ফোন করে কথা বলতো আমার সাথে । শ্রীর স্ত্রী হয়ে যা ভূমিকা নেভানোর সেটা করে গেছে ববিন নিজে । এমন কি জিজ্ঞাসা করে নিতো আমি খেয়েছি কিনা আর অপেক্ষা করতো কখন কোর্ট অনুমতি দেবে আমায় ববিন কে দেখতে । সবার সামনেই ছুটে চলে আসতো আমার কাছে । তিন চারদিনের জন্য আমায় বেঁচে থাকতে হতো গোটা 6 মাস । তার পর আবার অপেক্ষা ।
না চাইতেই সব ভরণ পোষণের খরচ দিয়ে গেছি আমি অগ্রিম. এক দিন জজ সাহেব হেঁসে বলেই ফেললেন, আপনার সত্যি ভাগ্য খারাপ, এক দিনের জন্য দেখলাম না আপনি স্ত্রীর প্রতি কোনোঅবহেলা করেছেন ।" তাই রায় শোনানোর আগে জজ সাহেব কে অনেক বেগ পেতে হয়েছিল , ঘটনাটা নিছক অকস্মাৎ প্রমান করবার জন্য । এটা কে বেনিফিট অফ ডাউট বলা হয় । আমার তো কোনো ক্রিমিনাল রেকর্ড নেই আর আমার হয়ে সখ্য দিয়েছিলো অনেকে , তাই এটা প্রমান করা শরীর সম্ভব হয় নি যে শ্রী কে ক্ষতি করবার জন্য আমি অস্ত্র হাতে নিয়েছিলাম ।
শ্রী মনে মনে জানতো না এমন নয় । কিন্তু কোনো ওয়াজান স্বভিমান তাকে ক্রমাগত নিরস্ত্র করে রাখতো আমার কাছে আসতে । ববিনের সব কোথায় পশে বসে শুনতো কিন্তু আমার প্রতি তার মায়ার প্রকাশ আসে নি আর কোনো দিন আমার জীবনে এতগুলো বছরে । ভগবান আমায় একটা শান্তি দিয়েছিলেন যে আমার পুরো কেস-এ জজ পাল্টায় নি , এমন ভাগ্য খুব কম লোকের হয় , উনি বদলি হয়ে গেলেও আবার , বার বার আমার কেস-এই এসে পড়েছেন , শুনানির দিন ফেলেছেন । । ববিন কখনো ভাবে না যে তার বাবা মা আলাদা আর এতো দিন ধরে তার পাশে থেকে আমি একটাই শিক্ষা দেবার চেষ্টা করেছি যে মানুষের সম্পর্কের মূল্যবোধ তার সেই সম্পর্কের শক্তি , আর ববিন ভবিষ্যৎ জীবনে সেটা যেন না হারায় ।ববিন বাধুক । খুব নামি প্রতিষ্ঠানে ইঞ্জিনিয়ারিং এর মেধাবী ছাত্র । অনেক বড়ো লোকের মতো দেখতে হয়ে গেছে তাকে । ফেইসবুক হোয়াটস আপ এর যুগে সে নিজেকে একেবারে প্রথম শ্রেণীতে রাখে । তার ভবিষ্যতের চিন্তা নেই ।
কিন্তু স্নেহ আমার কাছে আসা থামায় নি । সব কিছু পিছনে রেখে আমার কাছে ছুটে ছুটে আসতো শ্রী চলে যাবার পর । হ্যাঁ দৈহিক সম্ভোগ যে হয় নি এমন নয় , কিন্তু , সে অকপটে স্বীকার করেছে যে সে আমায় ভীষণ ভালো বাসে । আমিও তাকে স্বীকার করেছি যে রীনা আমার সমস্ত মন জুড়ে লুকিয়ে থাকে সারাক্ষন । কিন্তু শ্রীর দিকে অবহেলা করি নি কোনো দিন । যখন যা শুনেছি শ্রী-এর অসুবিধা ছুটে গেছি সাহায্য করতে , তা কলেজে হোক আর কলেজের বাইরে হোক । আর্থিক ভাবে শ্রী সে ভাবে নিজেকে আর গুছিয়ে নিতে পারে নি , বিশেষ করে বাবা মারা যাবার পর । যে টুকু সম্পত্তি বা পয়সা ছিল শ্রী কে তার নিজের লোকেরা বঞ্চিতই করেছে। কারণ শ্রী তাদের কেই জীবনে বড়ো বলে ভেবেছিলো, তাদের গুরুত্ব অনেক অনেক বেশি ছিল আমার মূল্যহীন এমন ভালোবাসার কাছে ।
যদি কাঁদলে সব সমস্যার সমাধান হতো তাহলে আমি রোজ কাঁদতাম । কিন্তু আজ কাল চোখে জল আসে না ।
জীবন তা দেখতে দেখতে কেটে গেছে , চুলেও পাক ধরে গেছে , আমার বাধ্য হয়ে বেছে নেওয়া ব্যাচেলর জীবনের সঙ্গী ছিলেন অবিনাশ দা । 60 এ পা দিলেও আগের মতোই প্রাণবন্ত । সপ্তাহে একটা দিন ওনার সাথে বসেই দু পেগ মদ খেতাম ।
প্রাণের বন্ধু তিনি । অভাব অনটন কিছুই নেই, আমি বর্তমান ওভারশেয়ার , এবং অবিনাশ দার অনুকূল্যে আমি সর্বে সর্বা । আমাকে আক্ষেপ করে বলতেন " আমি জাদু জানি, কিন্তু তোমার সংসার জোড়া লাগাবার জাদু টি শিখতে ভুলে গেছি ।"
প্রথম প্রথম আমিও দিন রাত দাঁড়িয়ে থাকতাম শ্রীর বাড়ির সামনে । যদি বেরিয়ে এক বার আমায় কিছু বলে , বা আমি সুযোগ পাই কিছু বলবো , কিন্তু শ্রী আসে নি । এমন সংযম মানুষের কেন আসে আমি জানি না । শরীর শরীরের সাথে মিশে গেছে কত বার , নারী নক্ষত্র আমি বুঝে নিয়েছিলাম কিন্তু ভুল টা হবার ছিল ।
শ্রী কে আমি হারাতে চাইনি , আর কোর্টেও শ্রী কে হারাতে চাই নি , 14 বছর পর যখন একেবারে আমার মুখের দিকে না তাকিয়ে তাকিয়ে শ্রী বলে " ওই মানুষ টিকে আমার স্বামী বলে মানি না ! আমার ডিভোর্স চাই , বুকের পাঁজর টা গুমোট ধোঁয়ায় পুড়ে গিয়েছিলো !"
এক গাল দাঁড়ি আর কাঁচাপাকা ঝাঁকড়া চুলে কান্নাটা আসতে সংকোচ করে । কান্না একটু চকমকে পোশাক পছন্দ করে মনে হয় । মেয়েদের পোশাক চকমকে হয় তাই কান্নায় তাদের নির্ভেজাল অধিকার । নিঃসংকোচে জিতিয়ে দিতেই মন চেয়েছিলো শ্রী কে । কিন্তু জেতাতে পারি নি শ্রী কে একটা বিষয়ে , যে আমি ইচ্ছাকৃত শ্রী কে আঘাত করতে চাইনি সেদিন ।যদি দোষী সাবস্ত হয়ে 5 বছরের কারাবাস ভোগ করতাম হয় তো নিজেই একটু স্বস্তি পেতাম। কিন্তু ভগবান সত্যি কি নির্দয় আমাকেও ক্ষমার ভিক্ষা দেন নি , আমি নির্দোষ হয়ে শ্রীর সাথে দূরত্ব বাড়িয়ে ফেলেছি আরো খানিকগুন । সেই থেকেই বেনিফিট অফ ডাউট এর তরোয়ালের আগায় নিজের জীবন সপে দিয়েছিলাম । দূরত্ব আরেকটু বেড়ে গেলো সেদিন ।
এমন এক নারী যাকে আজ আমার সহধর্মিনীর জায়গা থেকে এক চুল নড়াই নি , আজও যার উপস্থিতিতে আমার ঘরের লক্ষ্মী জেগে উঠবে এই বিশ্বাসে ঘুম থেকে উঠি, আর যাকে আমার সন্তানের মা এর সম্পূর্ণ শ্রদ্ধা দিয়ে তার সব অভিশাপ মাথা পেতে নিয়েছি আমার জীবন পাথেয় হিসাবে, তাকে কি করে আলাদা করা যায় আমার জীবন , আত্মা আর আদর্শ থেকে । কি ভাবে শ্রী কে আলাদা করবো কেউ শিখিয়ে দেয় নি বোকার মতো শুধু নিজের বয়স বাড়িয়ে ফেলেছি সমাধানের উপায় খুঁজতে খুঁজতে । আর যান্ত্রিক ভাবে অফিসের একঃ টেবিল থেকে অন্যটেবিলে সরে গেছি মাঝখানের এতগুলো বছর ।
শ্রীর অপরিণত শিশু সুলভ মনে আমার হয় তো জায়গা নেই কিন্তু তার প্রতি আমার ভালোবাসাও অকৃত্তিম।তার করুনা আমার হয় তো প্রাপ্য নয় কিন্তু আমি গলা ফাটিয়ে বলতে পারি যে এই সমাজের দাঁড়িপাল্লাটাই ভুল । এই সমাজ -এ যারা হায়নার মতো আমায় পিছু পিছু ঘুরে বেড়ায় আমার দোষ গুনের এনাটমি করবে বলে , তারা জানে না যে একাধিক ভালোবাসাও অবস্থান করে মানুষের মনে তবে ভিন্ন রূপে । আর যৌনতা শুধু শারীরিক ভারসাম্য আর চারিত্রিক রূপ মাত্র , তাকে কলুষিত করে জোর করে সম্পর্কের মধ্যে টেনে নামানোটাই সমাজের মান নির্ধারণকারী ভন্ডদের প্রধান কাজ ।যারা যৌন্য আবেশে লিপ্ত হয় তাদের ছাড়া কারোর অধিকার থাকা উচিত নয় কি ভুল আর কি ঠিক বিচার করার । তারা শুধু কাদা ছিটিয়ে দিতে জানে কিন্তু কাদা পরিষ্কার করতে জানে না ।
যারা আমায় অসৎ চরিত্রের আখ্যা দিচ্ছেন তারাই ভেবে দেখুন আপনার জীবনে কি এমন কিছু ঘটে নি , এমন কিছু কি ঘটে নি যার সঠিক ব্যাখ্যা আপনি আপনার স্ত্রী কে দিতে পারবেন না , নিশ্চয়ই আছে । কখনো ঘটে যাওয়া কোনো আবেগ, একটা চুমু, বা ঈষৎ ভালোবেসে বাহু বন্ধন, বা নিজের অজান্তে একটু শারীরিক সুখ ভোগ ? আর যদি ঘটে তাহলে আপনার কি অভিমত ? আমি নিজেকে দুর্বল ভাবতে পারি না । আমাকেও দিনের শেষে ক্লান্ত বিধ্বস্ত হয়েই ঘরে ফিরতে হয় , আমার কাঁধে আমি কোনো নারীর হাতের কোমল স্পর্শ পাই না , আমাকেও যুদ্ধ করতে হয় রোজ আমার একাকিত্বের সাথে আর তাকে রোজ কুস্তি লড়ে হারিয়ে তারপর একটা দিন কাটাতে হয় ।পাই না আজ পনেরো বছর যে আমায় বুঝবে ।কেউ আমাকে বিকেলের চা করে খাওয়ায় না , আর বাজারে গিয়ে আমায় ভাবতে হয় , কি কিনবো ? সব স্বাদ করোক আমাকে একটা স্বাদের কথা জানান দেয় , শুধু স্বাধীনতার , একাকিত্বের দাস হয়ে নয় ।
আমার নিজের এই অভিশপ্ত একলা জীবনে এটাই আমার অভিশাপ , আর শ্রীর কাছ থেকে তা মাথা পেতে নিয়েছি আমার ভুলের প্রায়শ্চিত্ত করবো বলে । একলা থাকার পরাধীনতা মানুষ কে একটু একটু করে নিঃশেষ করে দেয় । সেই জন্যই মানুষ জেলের এর সৃষ্টি করে করেছে , অপরাধীদের জেলে পাঠানো হয় । সেখানে একলা থেকে তাদের কৃত কর্মের প্রায়শ্চিত্ত করতে হয় । স্বাধীনতার থেকে বড়ো আনন্দ হয় না , তাই হতো রীনা সেই স্বাধীনতা খুঁজতে গিয়ে হারিয়ে গেছে কোথাও । আর মানুষ কে সমাজ শাস্তি দেয় তার চরম একাকিত্বের।
আমার পরাধীনতা আমাকে ছোট্ট ভুলের জন্য আজীবন কারাবাস শুনিয়েছে , আমি আমার চিন্তার কারাগারে বন্দি থাকবো আজীবন । আসতে আসতে আমার চারপাশটাই হারিয়ে যাবে আমার কাছ থেকে একদিন, আর বাধক্যের শেওলা পড়বে আমার শরীরে , মন আমার যতই প্রবীণ হোক না কেন আমার পরিবেশ আমার আমিত্বে ছাপ দিয়ে দেবে " আমি বর্জিত !"
যখন এমন ভয় ঘিরে ধরে মানুষের মনে, মানুষ আসতে আসতে মৃত্যুর প্রহর গুনতে থাকে । কিছু মানুষ শেষ শক্তি টুকু সঞ্চয় করে বদলে দেবার লড়াই করে, কেউ পারে আর কেউ পারে না , গ্রহরাশিও বোধ হয় তাদের অনুকূলে থাকে না যারা হেরে যায় বদলাতে গিয়ে ।
শেষে নিজের আত্ম সন্মান বোধ বাঁচাতে সমাজের থেকে আলাদা হয়ে চুপি সাড়ে নিজের পরিচয় পাওয়া " আমার দেহ" থেকেও বিচ্ছিন্ন করে নেয় নিজেকে । অনেকে তাদের বিদ্রুপ করে কাপুরুষ বলে , আমার ইচ্ছে করে তাদেরই মতো কাপুরুষ সাজতে , শুধু বীর ভোগ্য বসুন্ধরায় বীরেরই জয় জয় কার হয় । কেউ ভেবেও দেখেনা এক মুহূর্তের জন্য এমন অনেক বীরেরা তাদের বীরত্ব কে ধরে রাখতে পারে নি ক্ষণিক মাত্র । তারা মানুষ গোত্রের থেকে একটু আলাদা । আমার ছাই পাশ আবোল তাবোল এমন অনেক খেয়াল খুশি আমি লিখে রেখে যাই আমার মোটা খাতায় । দুটো খাতা ভরে গেছে , নাম দিয়েছি অধ্যায় ।