25-01-2019, 11:19 AM
মাকে কথা বলতে নিষেধ করলাম । সতীশ ডাক্তার কে ফোন করলাম , অবশেষে ফোনেই পাওয়া গেলো । "আরে বরুন কোনো চিন্তা নেই তুমি তো সব জানো তোমার বাবা মারা যাওয়ার পর থেকেই তোমার মা শরীর স্বাস্থ্যের দিকে নজর দিতেন না । যা ওষুধ দিয়েছি চলুক , এটা কমন প্রব্লেম । তবে পারলে মাকে একটা চেঞ্জ এ নিয়ে যাও ! এমনি ভয় পাবার বিশেষ কিছু নেই ! আজ রাত্রে ঘুমাবেন , হাটা চলা হচ্ছে না বলেই কমপ্লিকেশন এরাইজ করছে "। কাল সময় পেলে আমার কাছে এসো একটা ইসিজি করে নেবো ক্ষণ !"
হ্যা বা না কিছু বলতে হলো না উনি নিজেই ফোন টা কেটে দিলেন । রীনার দিকে তাকিয়ে বললাম "মার কাছে কি থাকা যাবে আজ রাত টা , যদি রাতে আমি ঘুমিয়ে পড়ি ? " রীনা খানিকটা ভেবে বললো "বরুণদা আপনি না হয় একবার দিদি কে গিয়ে বলে আসুন তাহলে আর অসুবিধে নেই !"
মা একটু ঘুমানো গলায় বলে উঠলেন "ওকে কেন মিছি মিছি কষ্ট দিবি বাবা , আমি একটু ঘুমালেই ঠিক হয়ে যাবে ! তুই বরণ ওকে দিয়ে আসিস রাত্রে ।" আমি ভাবলাম না একটা মেয়ে মানুষের থাকার দরকার আছে । ছেলে হলে কোনো অসুবিধা ছিল না , রাতে কোথায় কি অসুবিধা হয় ! মাকে কিছু বললাম না গায়ে উড়াপের কম্বল দিয়ে ঢেকে ঘুমাতে বললাম ।ফ্যান চালিয়ে রাখা আছে । রীনা বললো ডাক্তার ভাত বারণ করেছে আমি নিজে দুধ এনে রেখে দিয়েছি একটু পরে গরম করে খাইয়ে দিচ্ছি । আপনি বরণ আমার দিদি কে খবর টা দিয়ে আসুন ।"
দেরি না করে সীমা দের বাড়িতে উপস্থিত হলাম । আমায় দেখে সীমার মা বাইরে বেরিয়ে আসলেন । খুব অনুনয় করে ভিতরে আস্তে বললেও ভিতরে গিয়ে বসার উৎসাহ পেলাম না । বিনীত অনুরোধ বলে যা হয় সে ভাবেই বললাম "মার শরীর আজ বিশেষ ভালো নেই , যদি রীনা আজ মার কাছে থেকে যায় খুব ভালো হয় পুরোনো বুকের ব্যাথা একটু বেড়েছে । রাত্রিতে যদি দরকার পরে মেয়েদেরই সুবিধা হয় আমরা ছেলেরা তো সেভাবে পারি না !" আর বাকিটা বলতে হলো না ।
উনি আগ্রহ করেই বললেন "এ কথা তুমি বাড়ি বয়ে দিতে এলে , ফোন করলেই হতো । দাড়াও আমি দেখে আসি ! ইস মাসিমা সেই গত বছর থেকে ভুগছেন । " বলেই ভিতরে চলে গেলেন । ভারী হুজ্জুদী শুরু হলো । জনা তিনেক আত্মীয় তার সাথে জোগাড় হলো আমার মাকে দর্শনের জন্য । ভদ্রতার খাতিরে কিছু বলা গেলো না । কিন্তু ওরা হাজার কথা মার্ সাথে বলবেন কেন হলো ,কবে হলো ,আগে ওষুধ খায় নি কেন , ঠিক কি হয়েছিল , এখন কেমন, কেমন করছে , ওষুধ ঠিক দিয়েছে কিনা আর তার পর আয়ুর্বেদ হোমিওপ্যাথি আর শেষে সেনে দের বাড়ি, মন্ডল বাড়ি ব্যানার্জি বাড়ির কত রুগীর তুলনা সংকলন হবে কে জানে । আর শেষে আসবে ডাক্তার আর তাদের স্বনামধন্য চিকিৎসা তাও সব মিলিয়ে 45 মিনিট । চোয়ালে চোয়াল লাগিয়ে এগিয়ে গেলাম দলের দলপতি হয়ে বিশ্বভ্রমণে ।
জাত গোত্র নিয়ে সত্যি অতো টানাটানি হলো না যতটা আমি ভেবেছিলাম । এক গাল হেসে সীমার মা আমার মা কে স্বান্তনার সুশ্রুত বাণী শুনিয়ে গেলেন । বাকি অথিতিরা শুধু শ্রোতার মতো মাথা নাড়িয়ে গেলো । মিনিট দশেকের মধ্যে যাত্রা পালা এমন হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়বে ভাবি নি । যাবার আগে সীমার মা বিশেষ কিছু প্রবচন শুনিয়ে গেলেন রীনা কে " দেখিস তুই পড়ে পড়ে ঘুমাস না , বরুন কে ডাকবি । আর খেয়ে যা বাড়ি থেকে !" শোবার আলাদা ঘর আছে সেখানে কেউ আসলেই তবে ব্যবহার হয় আর সেখানেই মার ঠাকুর ঘর । আমি ভদ্র লোকের মতো রীনার শোবার ঘর দেখিয়ে দিলাম সীমার মাকে "এখানেই রীনা ঘুমাক , আমি ওদিকে ওই ঘরে শুবো , ডাকলে আমি উঠে যাই অসুবিধা নেই । আর ওঘরে আপনার বালিশ বিছানা সবই আছে । "
সীমার মা আমার হাত ধরে বললেন "পাগল, ওকে নিয়ে ভাবতে হবে না , ওহ এক কোণে পড়ে থাকবে ক্ষণ ! একটা রাত্রের তো ব্যাপার !" ওদের এই অনুকম্পার কি কারণ টা আমি সত্যি জানি না জানলে রীনা কে ও জিজ্ঞাসা করতাম তাকে বলির পাঠা কেন হতে হলো । তারা বিদায় নিলেন । ঘরের বাতাবরণ ফিরে আসলো । একটু স্বস্তি হলো বটে কিন্তু মাকে নিয়ে চিন্তা টা মনেই থেকে গেলো । রীনা কে বললাম মাকে আগে দুধ টা খাইয়ে দাও নাহলে মা ঘুমিয়ে পড়বেন । তার পর আমরা না হয় এক সাথে খাবো !"
রীনা বললো "শুনলে না দিদি বলে গেলো খেয়ে আসতে ! আমি একটু পর গিয়ে না হয় খেয়ে আসবো ক্ষণ, বরণ তোমার খাবার বেড়ে মাকে দুধ টা দি !"
বলে রীনা মার কাছে চলে গেলো রান্না ঘর থেকে দুধ নিয়ে । আমি নিজের কাপড় জামা ছাড়তে লাগলাম । ঘড়িতে ঢং ঢং করে আটটা বাজলো । এতো তাড়া তাড়ি খেতে ইচ্ছে করছে না একটু চা পেলে বড়ো ভালো হতো ।
শ্রী ফোন করেছে । সব কিছুই গোড়া থেকে জানা শ্রীর। নিজের বাবার শারীরিক অসুস্থতার বিবরণ দিয়ে জিজ্ঞাসা করলো " আচ্ছা আমি কি ওখানে চলে আসবো?" আমি বললাম " না না রীনা এখানে সব সময় মাকে দেখে রাখছে , তুমি তোমার কাজ শেষ করেই আসো, আর তো মোটে এক দিন!" শ্রী বিশেষ কিছু বললো না, হয় তো মন ভালো নেই । খানিকটা চুপ করে থেকে বললো " তুমি খাওয়া দাওয়া ঠিক মতো করো।" আমিও ফোন টা বিছানার পশে রেখে রীনার দিকে তাকালাম । " চা হবে একটু ?"
মনের কথা বলতে না বলতে রীনা বললো "5 মিনিট । আমি চা করে আনছি " ! যাবার আগে বলে গেলো " মা কিন্তু ঘুমিয়ে পড়েছিলেন, দুধ খাওয়া শেষ, হয়তো এখুনি ঘুমিয়ে পড়বেন আবার । তুমি মনে হচ্ছে এখুনি খাবে না , যাই হোক আমি চা দিয়ে খেতে যাবো না হলে টুকি টাকি কাজ করে ফিরতে দেরি হয়ে যাবে আমার ।"
আমি বললাম " না তুমি সময় নাও আমার তাড়া নেই , আমি একটু রিলাক্স হতে চাই ! 10 টার সময় খাবো তুমি তখন আসলেও হবে !"
রীনা চা রেখে চলে গেল। আমি তৃপ্তি ভরে চায়ে চুমুক দিতে দিতে একটু বসে টিভি দেখতে থাকলাম । মায়ের কোনো অসুবিধা হলে মা ডাক দেয় বাবু বাবু বলে । TV এর ভলিউম কমিয়ে রাখলাম , যাতে মা ডাকলে শুনতে পাওয়া যায় । টিভি দেখতে দেখতে 10 টা বাজলো খেয়ালি নেই ২ ঘন্টা কেটে গেছে । মার ঘরে গিয়ে দেখলাম মা ঘুমাচ্ছেন । আস্তে আস্তে রীনা গেট খুলে ভিতরে আসলো তার আওয়াজ পেলাম ।
অনেক দিন পর রীনার সাথে একটু মনের কথা বলা যাবে । সুযোগই পাই নি ব্যস্ততায় । রীনা জিজ্ঞাসা করলো " ভাত বেড়ে দি !"
আমি বললাম "কি করেছো রান্না ?" রীনা মন টা বিষাদ করে বললো " না গো আজ বিশেষ কিছু করার সময় পাই নি , আলু ভাজা ,ঝিঙে আলুর পোস্ত, পাপড়ের ডালনা আর ডাল । আমি তো জানি না মা আজ নিরামিষ খান। মা বললেন নিরামিষ করতে "
আমি হেসে বললাম "এটা কম হলো ?" রীনা কিছু বললো না । আমি রীনার দিকে তাকিয়ে বেশ বুঝতে পারলাম তার এই মিথ্যে সংসার দু দিনে ভেঙে যাবে । আমাকে আর দেখতেও পাবে না । সত্যিই তো পোড়ার মুখী আমায় কেন এ মন দিয়ে বসলো । আমি জিজ্ঞাসা করলাম " আচ্ছা দিন গুলো কেমন দেখতে দেখতে কেটে গেল তাই না ?"
দীর্ঘ নিঃস্বাস ফেলে রীনা । আমি বলতে থাকি " এই সব মনের সম্পর্কে কোনো সুখ নেই , যেখানে আমাদের সম্পর্কেই প্রতিবন্ধকতা সেখানে সে সম্পর্ক মরেই যাবে এক দিন।" রীনা আবার দীর্ঘ নিঃস্বাস ফেলে " সম্পর্কে পাপ থাকলে সে সম্পর্ক ঠিক মরে যাবে , তবে কাওকে ভালোবাসা পাপ হতে পারে না, সে ,যে সম্পর্কের মধ্যেই বাধা থাকুক না কেন !" আমি নীরব হয়ে থাকি ।রীনা ফের বলে "মা কি ঘুমাচ্ছে ?" আমি বললাম "হ্যাঁ মনে হয় না রাত্রে আর উঠতে পারবে ! ওই ইঞ্জেকশান দিলে মা ঘুমান ।"
"চলো এসেও আর দেরি করো না তোমায় খেতে দিয়ে দি ! আমি মার ঘরেই থাকবো তুমি শান্তি তে ঘুমাও দরকার হলে ডাকবো ক্ষণ ! আর হ্যা আমরা বাজারেও যাই মন্দিরেও যাই , আবার যে শিক্ষক সে কারো বাবা , তেমন ভাই বা কারো ছেলে , ঠিক তেমন কৃষ্ণ এই এতো রূপে আমাদের সামনে আসেন , আমাদের ভালোবাসা কি তার রূপ বিচার করে ভালোবাসে , তিনি যে রূপেই থাকুন না কেন আমরা তাকে ভালোবাসি , সে ভালোবাসায় খাদ হয় না । আমি জানি না আমি কখনো আমার কৃষ্ণের রুক্মিণী বা সত্যভামা হতে পারবো কিনা , কিন্তু এতো আমার প্রার্থনা স্বয়ং ঈশ্বর এর প্রতি , তিনি যেত তাকে সুখে শান্তিতে ভালো রাখেন ! " বলে রীনা রান্না ঘরের দিকে গেল । নির্বাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম , বলার ভাষায় এমন ভাবে হারিয়ে যায় যে মন খালি করে দেয় ।
মন টা খুব খালি খালি লাগছে এই ভেবে যে দু দিন পরে রীনার অস্তিত্ব ও এ বাড়ি থেকে মুছে যাবে । মানুষ বড়ো নির্দয় । প্রয়োজন ছাড়া অন্য মানুষ কে সে মনে জায়গা দিতে চায় না ! তাই বোধ হয় শহরের বড়ো বড়ো রাস্তার ব্রিজ ভেঙে পড়ে যায় । তাই হয়তো মানুষ খুন হলে অন্য মানুষেরা নির্বিকারে পরের দিনের রোজনামচা হাতে বেরিয়ে পড়ে । পশু রা পারে না । আমি কুকুরকেও দেখেছি অন্য মৃত কুকুরের শরীর আগলে রাস্তায় বসে থাকতে । আসলে তাদের কোনো রোজনামচাই থাকে না । ভাগ্যিস এই দুনিয়ায় ধাতব শহরে পাখি হয়ে জন্মায় নি , প্রকৃতি তো পাখিদের লোহার ফল খেতে শেখায় নি , এ শহরে জলেও মূত্র মল মিশে থাকে । আর নতুন দূর্বা ঘাস গুলো সবুজ হয়ে ওঠে বিচারের আশায় যদিও তাদের এখানে ওখানে বেড়ে ওঠার শুনানি হয় না ! সব স্বপ্ন গুলোকেই উপড়ে ফেলতে হয় ক্ষনিকের জল রঙা স্বপ্নে ! কেউ মনে রাখে নি রাস্তার ধারের লাইট পোস্ট টা বুড়ো হয়ে গেছে , রাতের জোনাকি পোকারা মরে যায় না কেন ? রোজ রাত্রেই তাদের দেখা যায় , সত্যি কি বিরক্তিকর জীবন , নিজের জীবন দিয়ে অন্য কে আলো দিতে হয় । আর রীনা কে অন্যের ঘর গুছিয়ে দিতে হয় একটুকরো ভালোবাসার প্রসাদের আশায় ।
মধ্যবিত্ত খাওয়ায় এমন রাজকীয় স্বাদ পাই না সচর আচর । মনে কে স্বান্তনা দি ! অনেক ভাগ্য করে এমন মেয়ে পেয়েছি যে এ জীবন ভালোবেসে ধন্য করে দিলো । এ কদিনে শ্রীর ভালোবাসাও ফিকে হয়ে গেছে । যখনি রীনার হাতের খাবার খাই প্রাণ মন ভরে উঠে । মাঝে মাঝে ভাবি সম্পর্কের গন্ডি টেনে মানুষ মানুষ কে না জানি কত ছোট করে ফেলেছে । কেমন হতো যদি বন্ধু ভাই মা বোন না থাকতো আর শুধু একটা সম্পর্ক থাকতো শুধু মানুষের , আর আরেকটা মানুষ কে চিনতাম শুধু মানুষ বলে । শুনেছি নেকড়ে বাঘেদের এমন সম্পর্ক হয় , তারা নিজের সমাজে থাকে সবাই এক সাথে কেউ ছোট বড়ো নয় , কোনো দলপতির খাতির দারিও নয়। গন্ধ শুঁকে চিনে যায় সে নেকড়ে কিনা আর তাকে কোনো পরীক্ষা দিতে হয় না । আমাদের তো সেই ছোট থেকে বাবা মা পরীক্ষা দিতে শেখায় " বোলো বাবাই মা বেশি ভালো না বাবা !" অবোধ মন খেলনার দিকে চলে যায় , কখনো বা বাবা আর কখনো বা মাকেই দাঁড়িপাল্লায় তুলতে শিখে যায় । স্বামী স্ত্রীর বেলাতেও তাই হয় বৈকি । স্ত্রী রা তাদের স্বামী দের অমুকের স্বামী তমুকের স্বামীর মতো কাটা মুরগির দিয়ে ওজন করে , পাঁজর না টেংরি যে যেটা চায় । কখনো কখনো স্বামীর নিরপরাধ ব্যর্থতা কেও নিশানা করতে ছাড়ে না । নারী তাই সীমাহীন । সেই সীমাহীন জগতে তাদের সাথে তাল মেলাতে গিয়ে না জানি কত পরিবার খেই হারিয়ে দূরে সরে যায় একে অন্য থেকে , টুকরো হয়ে যায় গ্রাম , নগর , শহর, দেশ সভ্যতা । কিন্তু তাও মানুষ শুধরে নিতে পারে না ভেঙে যাওয়ার খেলা কে । হয় তো আমার মতো করে ভাবতে পারে না এ সমাজ । ভাবলে সমাজের রূপরেখা বদলে যেত । তাবলে কদর্য মানসিকতা নিয়ে 10 জন নারীকে চোদার বাসনা নিয়ে ভালোবাসা,ভালোবাসা নয় । রীনা কে দেখে স্ত্রীর সংজ্ঞা একটু একটু করে আবছা হয়ে আসে ! আর সে আমার ক্ষমাহীন অপরাধ ।
"ভেতরে আসবো !" রীনা আমার শোবার ঘরের বাইরে থেকে ডাকলো । খেয়ে খোলা গা টা একটু বিছানায় পেতে ভাবছি এই সময় টা কে কি করে থামিয়ে দেয়া যায় ? যদিও জানি এ সময় থামবে না , সৃষ্টির বিনাশ সম্ভব নয় সৃষ্টি এমন হাজার বিনাশ থেকেই নতুন রূপে সৃষ্টি হয়েই জন্ম নিয়েছে বারংবার । যেমন আমার মন রীনার ভালোবাসার জন্ম দিয়েছে নাম গোত্র হীন কোনো সম্পর্কের ছত্রাকের মতো । কিন্তু ভাগ্যের কি নিষ্ঠুর পরিহাস ছত্রাকে ফুল ফোটে না । উঠে রীনা কে জড়িয়ে ধরলাম। আর তো কিছু ভালো লাগছে না।
ওর নরম বুকে মাথা রাখলে মায়ের আঁচলের মতো স্নিগ্ধ স্পর্শ পাই , শ্রীর কাছে তো এমন পাই না । অথচ স্বামীর সব কর্তব্য করেও শ্রী আজ অধরা আমার কাছে । কালো বিষন্নতার মেঘ নেমে এসেছে রীনার দু চোখে । " আর তো মোটে একটা দিন তবুও এমন মুখ ভার করে থাকবে !" আমি তাকিয়ে বললাম । রীনা বললো " শুয়ে পড়ো আমি মার কাছে যাই !" আমি নরম হাত দুটো ধরে বুকে জড়িয়ে বললাম " তোমার ক্লান্তি আসে না ? " রীনা এড়িয়ে গিয়ে বললো " মা ঘুমাচ্ছে ।" আমি অনুনয় করলাম "থাকো না আজ রাত টা আমার কাছে , আমার তো তোমায় কিছু দেওয়ার থাকতে পারে ? তুমি কি নেবে না ? " রীনার চোখ টা আনন্দে চক চক করে ওঠে ।
রীনা কাম রক্তিম হয়ে চুমু খায় আবেশে , "মাথায় করে রাখবো দেবে আমায় ?" সচ্ছল জলের মতো পবিত্র সম্মান আর ভালোবাসা ছাড়া আমার তাকে দেওয়ার মতো কিছু নেই , তার এই পরিব্রাজিকা জীবনে তাকে শুন্য হাতের পাথেয় নিয়েই পথ হাটতে হবে ! স্নেহ শ্রী র মতো নারী রা তা বুঝবে না হয়তো । যার জ্ঞানে পরম ঐশ্বর্য্য, চেতনায় দয়ার উদারতা, অসীম সহ্য শক্তি, আর সেবার অকৃত্তিম দেবী রূপ , অহংকার হীন এমন রূপবতী কোনো সাধারণ মেয়ে কে আমার তুচ্ছ জীবনে কি দিয়ে আর ছোট করতে পারি ?
রীনা আমায় ছাড়িয়ে বলে " মাকে দেখে আসি তার পর কিছু ক্ষণ থাকবো তোমার কাছে কেমন ! বেশি ক্ষণ থাকতে বোলো না , যদি লোভ জন্মায় মনে? " । মনে হলো ব্যাথায় মুখ টা ঘুরিয়ে নিলো , বেরিয়ে গেল আমার ঘর থেকে ঝটকা কালবৈশাখীর মতো মুখে হাত দিয়ে । আমার অবচেতন মনে কামনার আগুন টাও নিভে গেছে । গান টার কথা মনে পড়লো " খাড়ে থে হাম তেরি রওনক এ শাম- মে , লুটেঙ্গে হুসন তেরি উমরু ভর দিল- এ তামান্না লিয়ে- তেরি আঁখো কি বিজলি কি ধার থি ও, মেরে সারে ইরাদে বদল দিয়ে !"
রীনা এসে আমার খাটে বসলো । " এবার তুমি বদমাইশি করবে তাই তো !"
আমার মনে লাখ লাখ তীরের মতো প্রশ্নের ঝড় আসতে থাকে। যদি কোনো মন্ত্র বলে অসম্ভব কে সম্ভব করা যেত ।" আচ্ছা তুমি কি করে আমাকে ক্ষমা করতে পারো ?"
আমার চোখেই তো তুমি তোমার সর্বনাশ দেখেছিলে । তবুও এমন করে ধরা দেয়া কেন ? "
রীনা আমার প্রশ্নের উত্তর দেয় না পাল্টে প্রশ্ন করে " ববিন কে কেন ভালোবাসো বলতো দেখি ?"
আমার মাথায় আসলো না , তবুও এক ঝটিকায় উত্তর দিলাম " ওহ আমার ছেলে, আমার প্রাণ !" রীনা মাথা নাড়ে " না হলো না !"
আমি বললাম "এ আবার কেমন কথা ?আমি বাবা আমি আমার ছেলে কে ভালো বাসবো না ?"
রীনা আমায় শুধরে দিয়ে বললো " না ওটা স্নেহ ওটা ভালোবাসা নয় , তুমি ববিন কে ভালোবাসো কারণ ওর মধ্যে দিয়ে তুমি তোমার শৈশব দেখতে পাও , ওর আনন্দের মুহূর্তে নিজের আনন্দ গুলো খুঁজে পাও ।আমরা তো নিজেদের শৈশব দেখতে পাই না , আনন্দে কেটে যায় শৈশব , সেই অনাবিল আনন্দ খুঁজে পেতে বার বার শৈশবে ফিরে যেতে চায় আমাদের মন , আর পারি না বলেই ছেলে মেয়েদের মধ্যে শৈশব খুঁজে পাওয়ার চেষ্টা করি তাদের আরো বেশি করে ভালোবাসি !"
"তোমার ব্যবহার, তোমার মনের চিন্তা ভাবনা স্বচ্ছ জীবন যাপন এটা পাওয়া তোমার গুরুজনদের দেয়া শিক্ষা থেকে , তাকে আমি শ্রদ্ধা করি । কিন্তু কেন ভালোবাসি যেন ? তুমি মানুষকে যোগ্য সন্মান দাও বলে ! যেমন আমায় সন্মান দিয়েছো তোমার চোখে আমি কখনো আমার অসম্মান দেখিনি , নিজে সমর্পন করেছো আমার কাছে নিজের দায়বদ্ধতা সামনে রেখে , এর চেয়ে সৎ চেতনা আর কি বা আশা করা যায় !"
বিছানায় টেনে নিলাম রীনা কে । চোখে চোখ রেখে বললাম " সত্যি বিশ্বাস করো আমি নিরুপায়, তোমায় দেখে আমার যৌন লালবাসা হয়েছিল বৈকি , সেটা একটা ঘটনার প্রবাহ মাত্র , কিন্তু তোমাকে জানার পর তোমাকে শারীরিক সুখ ভোগ করবো বলে তোমায় পাশে রাখবো এমন পিশাচ আমি নই । আমি লোভী কিন্তু বেইমান হতে পারি না । "
হ্যা বা না কিছু বলতে হলো না উনি নিজেই ফোন টা কেটে দিলেন । রীনার দিকে তাকিয়ে বললাম "মার কাছে কি থাকা যাবে আজ রাত টা , যদি রাতে আমি ঘুমিয়ে পড়ি ? " রীনা খানিকটা ভেবে বললো "বরুণদা আপনি না হয় একবার দিদি কে গিয়ে বলে আসুন তাহলে আর অসুবিধে নেই !"
মা একটু ঘুমানো গলায় বলে উঠলেন "ওকে কেন মিছি মিছি কষ্ট দিবি বাবা , আমি একটু ঘুমালেই ঠিক হয়ে যাবে ! তুই বরণ ওকে দিয়ে আসিস রাত্রে ।" আমি ভাবলাম না একটা মেয়ে মানুষের থাকার দরকার আছে । ছেলে হলে কোনো অসুবিধা ছিল না , রাতে কোথায় কি অসুবিধা হয় ! মাকে কিছু বললাম না গায়ে উড়াপের কম্বল দিয়ে ঢেকে ঘুমাতে বললাম ।ফ্যান চালিয়ে রাখা আছে । রীনা বললো ডাক্তার ভাত বারণ করেছে আমি নিজে দুধ এনে রেখে দিয়েছি একটু পরে গরম করে খাইয়ে দিচ্ছি । আপনি বরণ আমার দিদি কে খবর টা দিয়ে আসুন ।"
দেরি না করে সীমা দের বাড়িতে উপস্থিত হলাম । আমায় দেখে সীমার মা বাইরে বেরিয়ে আসলেন । খুব অনুনয় করে ভিতরে আস্তে বললেও ভিতরে গিয়ে বসার উৎসাহ পেলাম না । বিনীত অনুরোধ বলে যা হয় সে ভাবেই বললাম "মার শরীর আজ বিশেষ ভালো নেই , যদি রীনা আজ মার কাছে থেকে যায় খুব ভালো হয় পুরোনো বুকের ব্যাথা একটু বেড়েছে । রাত্রিতে যদি দরকার পরে মেয়েদেরই সুবিধা হয় আমরা ছেলেরা তো সেভাবে পারি না !" আর বাকিটা বলতে হলো না ।
উনি আগ্রহ করেই বললেন "এ কথা তুমি বাড়ি বয়ে দিতে এলে , ফোন করলেই হতো । দাড়াও আমি দেখে আসি ! ইস মাসিমা সেই গত বছর থেকে ভুগছেন । " বলেই ভিতরে চলে গেলেন । ভারী হুজ্জুদী শুরু হলো । জনা তিনেক আত্মীয় তার সাথে জোগাড় হলো আমার মাকে দর্শনের জন্য । ভদ্রতার খাতিরে কিছু বলা গেলো না । কিন্তু ওরা হাজার কথা মার্ সাথে বলবেন কেন হলো ,কবে হলো ,আগে ওষুধ খায় নি কেন , ঠিক কি হয়েছিল , এখন কেমন, কেমন করছে , ওষুধ ঠিক দিয়েছে কিনা আর তার পর আয়ুর্বেদ হোমিওপ্যাথি আর শেষে সেনে দের বাড়ি, মন্ডল বাড়ি ব্যানার্জি বাড়ির কত রুগীর তুলনা সংকলন হবে কে জানে । আর শেষে আসবে ডাক্তার আর তাদের স্বনামধন্য চিকিৎসা তাও সব মিলিয়ে 45 মিনিট । চোয়ালে চোয়াল লাগিয়ে এগিয়ে গেলাম দলের দলপতি হয়ে বিশ্বভ্রমণে ।
জাত গোত্র নিয়ে সত্যি অতো টানাটানি হলো না যতটা আমি ভেবেছিলাম । এক গাল হেসে সীমার মা আমার মা কে স্বান্তনার সুশ্রুত বাণী শুনিয়ে গেলেন । বাকি অথিতিরা শুধু শ্রোতার মতো মাথা নাড়িয়ে গেলো । মিনিট দশেকের মধ্যে যাত্রা পালা এমন হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়বে ভাবি নি । যাবার আগে সীমার মা বিশেষ কিছু প্রবচন শুনিয়ে গেলেন রীনা কে " দেখিস তুই পড়ে পড়ে ঘুমাস না , বরুন কে ডাকবি । আর খেয়ে যা বাড়ি থেকে !" শোবার আলাদা ঘর আছে সেখানে কেউ আসলেই তবে ব্যবহার হয় আর সেখানেই মার ঠাকুর ঘর । আমি ভদ্র লোকের মতো রীনার শোবার ঘর দেখিয়ে দিলাম সীমার মাকে "এখানেই রীনা ঘুমাক , আমি ওদিকে ওই ঘরে শুবো , ডাকলে আমি উঠে যাই অসুবিধা নেই । আর ওঘরে আপনার বালিশ বিছানা সবই আছে । "
সীমার মা আমার হাত ধরে বললেন "পাগল, ওকে নিয়ে ভাবতে হবে না , ওহ এক কোণে পড়ে থাকবে ক্ষণ ! একটা রাত্রের তো ব্যাপার !" ওদের এই অনুকম্পার কি কারণ টা আমি সত্যি জানি না জানলে রীনা কে ও জিজ্ঞাসা করতাম তাকে বলির পাঠা কেন হতে হলো । তারা বিদায় নিলেন । ঘরের বাতাবরণ ফিরে আসলো । একটু স্বস্তি হলো বটে কিন্তু মাকে নিয়ে চিন্তা টা মনেই থেকে গেলো । রীনা কে বললাম মাকে আগে দুধ টা খাইয়ে দাও নাহলে মা ঘুমিয়ে পড়বেন । তার পর আমরা না হয় এক সাথে খাবো !"
রীনা বললো "শুনলে না দিদি বলে গেলো খেয়ে আসতে ! আমি একটু পর গিয়ে না হয় খেয়ে আসবো ক্ষণ, বরণ তোমার খাবার বেড়ে মাকে দুধ টা দি !"
বলে রীনা মার কাছে চলে গেলো রান্না ঘর থেকে দুধ নিয়ে । আমি নিজের কাপড় জামা ছাড়তে লাগলাম । ঘড়িতে ঢং ঢং করে আটটা বাজলো । এতো তাড়া তাড়ি খেতে ইচ্ছে করছে না একটু চা পেলে বড়ো ভালো হতো ।
শ্রী ফোন করেছে । সব কিছুই গোড়া থেকে জানা শ্রীর। নিজের বাবার শারীরিক অসুস্থতার বিবরণ দিয়ে জিজ্ঞাসা করলো " আচ্ছা আমি কি ওখানে চলে আসবো?" আমি বললাম " না না রীনা এখানে সব সময় মাকে দেখে রাখছে , তুমি তোমার কাজ শেষ করেই আসো, আর তো মোটে এক দিন!" শ্রী বিশেষ কিছু বললো না, হয় তো মন ভালো নেই । খানিকটা চুপ করে থেকে বললো " তুমি খাওয়া দাওয়া ঠিক মতো করো।" আমিও ফোন টা বিছানার পশে রেখে রীনার দিকে তাকালাম । " চা হবে একটু ?"
মনের কথা বলতে না বলতে রীনা বললো "5 মিনিট । আমি চা করে আনছি " ! যাবার আগে বলে গেলো " মা কিন্তু ঘুমিয়ে পড়েছিলেন, দুধ খাওয়া শেষ, হয়তো এখুনি ঘুমিয়ে পড়বেন আবার । তুমি মনে হচ্ছে এখুনি খাবে না , যাই হোক আমি চা দিয়ে খেতে যাবো না হলে টুকি টাকি কাজ করে ফিরতে দেরি হয়ে যাবে আমার ।"
আমি বললাম " না তুমি সময় নাও আমার তাড়া নেই , আমি একটু রিলাক্স হতে চাই ! 10 টার সময় খাবো তুমি তখন আসলেও হবে !"
রীনা চা রেখে চলে গেল। আমি তৃপ্তি ভরে চায়ে চুমুক দিতে দিতে একটু বসে টিভি দেখতে থাকলাম । মায়ের কোনো অসুবিধা হলে মা ডাক দেয় বাবু বাবু বলে । TV এর ভলিউম কমিয়ে রাখলাম , যাতে মা ডাকলে শুনতে পাওয়া যায় । টিভি দেখতে দেখতে 10 টা বাজলো খেয়ালি নেই ২ ঘন্টা কেটে গেছে । মার ঘরে গিয়ে দেখলাম মা ঘুমাচ্ছেন । আস্তে আস্তে রীনা গেট খুলে ভিতরে আসলো তার আওয়াজ পেলাম ।
অনেক দিন পর রীনার সাথে একটু মনের কথা বলা যাবে । সুযোগই পাই নি ব্যস্ততায় । রীনা জিজ্ঞাসা করলো " ভাত বেড়ে দি !"
আমি বললাম "কি করেছো রান্না ?" রীনা মন টা বিষাদ করে বললো " না গো আজ বিশেষ কিছু করার সময় পাই নি , আলু ভাজা ,ঝিঙে আলুর পোস্ত, পাপড়ের ডালনা আর ডাল । আমি তো জানি না মা আজ নিরামিষ খান। মা বললেন নিরামিষ করতে "
আমি হেসে বললাম "এটা কম হলো ?" রীনা কিছু বললো না । আমি রীনার দিকে তাকিয়ে বেশ বুঝতে পারলাম তার এই মিথ্যে সংসার দু দিনে ভেঙে যাবে । আমাকে আর দেখতেও পাবে না । সত্যিই তো পোড়ার মুখী আমায় কেন এ মন দিয়ে বসলো । আমি জিজ্ঞাসা করলাম " আচ্ছা দিন গুলো কেমন দেখতে দেখতে কেটে গেল তাই না ?"
দীর্ঘ নিঃস্বাস ফেলে রীনা । আমি বলতে থাকি " এই সব মনের সম্পর্কে কোনো সুখ নেই , যেখানে আমাদের সম্পর্কেই প্রতিবন্ধকতা সেখানে সে সম্পর্ক মরেই যাবে এক দিন।" রীনা আবার দীর্ঘ নিঃস্বাস ফেলে " সম্পর্কে পাপ থাকলে সে সম্পর্ক ঠিক মরে যাবে , তবে কাওকে ভালোবাসা পাপ হতে পারে না, সে ,যে সম্পর্কের মধ্যেই বাধা থাকুক না কেন !" আমি নীরব হয়ে থাকি ।রীনা ফের বলে "মা কি ঘুমাচ্ছে ?" আমি বললাম "হ্যাঁ মনে হয় না রাত্রে আর উঠতে পারবে ! ওই ইঞ্জেকশান দিলে মা ঘুমান ।"
"চলো এসেও আর দেরি করো না তোমায় খেতে দিয়ে দি ! আমি মার ঘরেই থাকবো তুমি শান্তি তে ঘুমাও দরকার হলে ডাকবো ক্ষণ ! আর হ্যা আমরা বাজারেও যাই মন্দিরেও যাই , আবার যে শিক্ষক সে কারো বাবা , তেমন ভাই বা কারো ছেলে , ঠিক তেমন কৃষ্ণ এই এতো রূপে আমাদের সামনে আসেন , আমাদের ভালোবাসা কি তার রূপ বিচার করে ভালোবাসে , তিনি যে রূপেই থাকুন না কেন আমরা তাকে ভালোবাসি , সে ভালোবাসায় খাদ হয় না । আমি জানি না আমি কখনো আমার কৃষ্ণের রুক্মিণী বা সত্যভামা হতে পারবো কিনা , কিন্তু এতো আমার প্রার্থনা স্বয়ং ঈশ্বর এর প্রতি , তিনি যেত তাকে সুখে শান্তিতে ভালো রাখেন ! " বলে রীনা রান্না ঘরের দিকে গেল । নির্বাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম , বলার ভাষায় এমন ভাবে হারিয়ে যায় যে মন খালি করে দেয় ।
মন টা খুব খালি খালি লাগছে এই ভেবে যে দু দিন পরে রীনার অস্তিত্ব ও এ বাড়ি থেকে মুছে যাবে । মানুষ বড়ো নির্দয় । প্রয়োজন ছাড়া অন্য মানুষ কে সে মনে জায়গা দিতে চায় না ! তাই বোধ হয় শহরের বড়ো বড়ো রাস্তার ব্রিজ ভেঙে পড়ে যায় । তাই হয়তো মানুষ খুন হলে অন্য মানুষেরা নির্বিকারে পরের দিনের রোজনামচা হাতে বেরিয়ে পড়ে । পশু রা পারে না । আমি কুকুরকেও দেখেছি অন্য মৃত কুকুরের শরীর আগলে রাস্তায় বসে থাকতে । আসলে তাদের কোনো রোজনামচাই থাকে না । ভাগ্যিস এই দুনিয়ায় ধাতব শহরে পাখি হয়ে জন্মায় নি , প্রকৃতি তো পাখিদের লোহার ফল খেতে শেখায় নি , এ শহরে জলেও মূত্র মল মিশে থাকে । আর নতুন দূর্বা ঘাস গুলো সবুজ হয়ে ওঠে বিচারের আশায় যদিও তাদের এখানে ওখানে বেড়ে ওঠার শুনানি হয় না ! সব স্বপ্ন গুলোকেই উপড়ে ফেলতে হয় ক্ষনিকের জল রঙা স্বপ্নে ! কেউ মনে রাখে নি রাস্তার ধারের লাইট পোস্ট টা বুড়ো হয়ে গেছে , রাতের জোনাকি পোকারা মরে যায় না কেন ? রোজ রাত্রেই তাদের দেখা যায় , সত্যি কি বিরক্তিকর জীবন , নিজের জীবন দিয়ে অন্য কে আলো দিতে হয় । আর রীনা কে অন্যের ঘর গুছিয়ে দিতে হয় একটুকরো ভালোবাসার প্রসাদের আশায় ।
মধ্যবিত্ত খাওয়ায় এমন রাজকীয় স্বাদ পাই না সচর আচর । মনে কে স্বান্তনা দি ! অনেক ভাগ্য করে এমন মেয়ে পেয়েছি যে এ জীবন ভালোবেসে ধন্য করে দিলো । এ কদিনে শ্রীর ভালোবাসাও ফিকে হয়ে গেছে । যখনি রীনার হাতের খাবার খাই প্রাণ মন ভরে উঠে । মাঝে মাঝে ভাবি সম্পর্কের গন্ডি টেনে মানুষ মানুষ কে না জানি কত ছোট করে ফেলেছে । কেমন হতো যদি বন্ধু ভাই মা বোন না থাকতো আর শুধু একটা সম্পর্ক থাকতো শুধু মানুষের , আর আরেকটা মানুষ কে চিনতাম শুধু মানুষ বলে । শুনেছি নেকড়ে বাঘেদের এমন সম্পর্ক হয় , তারা নিজের সমাজে থাকে সবাই এক সাথে কেউ ছোট বড়ো নয় , কোনো দলপতির খাতির দারিও নয়। গন্ধ শুঁকে চিনে যায় সে নেকড়ে কিনা আর তাকে কোনো পরীক্ষা দিতে হয় না । আমাদের তো সেই ছোট থেকে বাবা মা পরীক্ষা দিতে শেখায় " বোলো বাবাই মা বেশি ভালো না বাবা !" অবোধ মন খেলনার দিকে চলে যায় , কখনো বা বাবা আর কখনো বা মাকেই দাঁড়িপাল্লায় তুলতে শিখে যায় । স্বামী স্ত্রীর বেলাতেও তাই হয় বৈকি । স্ত্রী রা তাদের স্বামী দের অমুকের স্বামী তমুকের স্বামীর মতো কাটা মুরগির দিয়ে ওজন করে , পাঁজর না টেংরি যে যেটা চায় । কখনো কখনো স্বামীর নিরপরাধ ব্যর্থতা কেও নিশানা করতে ছাড়ে না । নারী তাই সীমাহীন । সেই সীমাহীন জগতে তাদের সাথে তাল মেলাতে গিয়ে না জানি কত পরিবার খেই হারিয়ে দূরে সরে যায় একে অন্য থেকে , টুকরো হয়ে যায় গ্রাম , নগর , শহর, দেশ সভ্যতা । কিন্তু তাও মানুষ শুধরে নিতে পারে না ভেঙে যাওয়ার খেলা কে । হয় তো আমার মতো করে ভাবতে পারে না এ সমাজ । ভাবলে সমাজের রূপরেখা বদলে যেত । তাবলে কদর্য মানসিকতা নিয়ে 10 জন নারীকে চোদার বাসনা নিয়ে ভালোবাসা,ভালোবাসা নয় । রীনা কে দেখে স্ত্রীর সংজ্ঞা একটু একটু করে আবছা হয়ে আসে ! আর সে আমার ক্ষমাহীন অপরাধ ।
"ভেতরে আসবো !" রীনা আমার শোবার ঘরের বাইরে থেকে ডাকলো । খেয়ে খোলা গা টা একটু বিছানায় পেতে ভাবছি এই সময় টা কে কি করে থামিয়ে দেয়া যায় ? যদিও জানি এ সময় থামবে না , সৃষ্টির বিনাশ সম্ভব নয় সৃষ্টি এমন হাজার বিনাশ থেকেই নতুন রূপে সৃষ্টি হয়েই জন্ম নিয়েছে বারংবার । যেমন আমার মন রীনার ভালোবাসার জন্ম দিয়েছে নাম গোত্র হীন কোনো সম্পর্কের ছত্রাকের মতো । কিন্তু ভাগ্যের কি নিষ্ঠুর পরিহাস ছত্রাকে ফুল ফোটে না । উঠে রীনা কে জড়িয়ে ধরলাম। আর তো কিছু ভালো লাগছে না।
ওর নরম বুকে মাথা রাখলে মায়ের আঁচলের মতো স্নিগ্ধ স্পর্শ পাই , শ্রীর কাছে তো এমন পাই না । অথচ স্বামীর সব কর্তব্য করেও শ্রী আজ অধরা আমার কাছে । কালো বিষন্নতার মেঘ নেমে এসেছে রীনার দু চোখে । " আর তো মোটে একটা দিন তবুও এমন মুখ ভার করে থাকবে !" আমি তাকিয়ে বললাম । রীনা বললো " শুয়ে পড়ো আমি মার কাছে যাই !" আমি নরম হাত দুটো ধরে বুকে জড়িয়ে বললাম " তোমার ক্লান্তি আসে না ? " রীনা এড়িয়ে গিয়ে বললো " মা ঘুমাচ্ছে ।" আমি অনুনয় করলাম "থাকো না আজ রাত টা আমার কাছে , আমার তো তোমায় কিছু দেওয়ার থাকতে পারে ? তুমি কি নেবে না ? " রীনার চোখ টা আনন্দে চক চক করে ওঠে ।
রীনা কাম রক্তিম হয়ে চুমু খায় আবেশে , "মাথায় করে রাখবো দেবে আমায় ?" সচ্ছল জলের মতো পবিত্র সম্মান আর ভালোবাসা ছাড়া আমার তাকে দেওয়ার মতো কিছু নেই , তার এই পরিব্রাজিকা জীবনে তাকে শুন্য হাতের পাথেয় নিয়েই পথ হাটতে হবে ! স্নেহ শ্রী র মতো নারী রা তা বুঝবে না হয়তো । যার জ্ঞানে পরম ঐশ্বর্য্য, চেতনায় দয়ার উদারতা, অসীম সহ্য শক্তি, আর সেবার অকৃত্তিম দেবী রূপ , অহংকার হীন এমন রূপবতী কোনো সাধারণ মেয়ে কে আমার তুচ্ছ জীবনে কি দিয়ে আর ছোট করতে পারি ?
রীনা আমায় ছাড়িয়ে বলে " মাকে দেখে আসি তার পর কিছু ক্ষণ থাকবো তোমার কাছে কেমন ! বেশি ক্ষণ থাকতে বোলো না , যদি লোভ জন্মায় মনে? " । মনে হলো ব্যাথায় মুখ টা ঘুরিয়ে নিলো , বেরিয়ে গেল আমার ঘর থেকে ঝটকা কালবৈশাখীর মতো মুখে হাত দিয়ে । আমার অবচেতন মনে কামনার আগুন টাও নিভে গেছে । গান টার কথা মনে পড়লো " খাড়ে থে হাম তেরি রওনক এ শাম- মে , লুটেঙ্গে হুসন তেরি উমরু ভর দিল- এ তামান্না লিয়ে- তেরি আঁখো কি বিজলি কি ধার থি ও, মেরে সারে ইরাদে বদল দিয়ে !"
রীনা এসে আমার খাটে বসলো । " এবার তুমি বদমাইশি করবে তাই তো !"
আমার মনে লাখ লাখ তীরের মতো প্রশ্নের ঝড় আসতে থাকে। যদি কোনো মন্ত্র বলে অসম্ভব কে সম্ভব করা যেত ।" আচ্ছা তুমি কি করে আমাকে ক্ষমা করতে পারো ?"
আমার চোখেই তো তুমি তোমার সর্বনাশ দেখেছিলে । তবুও এমন করে ধরা দেয়া কেন ? "
রীনা আমার প্রশ্নের উত্তর দেয় না পাল্টে প্রশ্ন করে " ববিন কে কেন ভালোবাসো বলতো দেখি ?"
আমার মাথায় আসলো না , তবুও এক ঝটিকায় উত্তর দিলাম " ওহ আমার ছেলে, আমার প্রাণ !" রীনা মাথা নাড়ে " না হলো না !"
আমি বললাম "এ আবার কেমন কথা ?আমি বাবা আমি আমার ছেলে কে ভালো বাসবো না ?"
রীনা আমায় শুধরে দিয়ে বললো " না ওটা স্নেহ ওটা ভালোবাসা নয় , তুমি ববিন কে ভালোবাসো কারণ ওর মধ্যে দিয়ে তুমি তোমার শৈশব দেখতে পাও , ওর আনন্দের মুহূর্তে নিজের আনন্দ গুলো খুঁজে পাও ।আমরা তো নিজেদের শৈশব দেখতে পাই না , আনন্দে কেটে যায় শৈশব , সেই অনাবিল আনন্দ খুঁজে পেতে বার বার শৈশবে ফিরে যেতে চায় আমাদের মন , আর পারি না বলেই ছেলে মেয়েদের মধ্যে শৈশব খুঁজে পাওয়ার চেষ্টা করি তাদের আরো বেশি করে ভালোবাসি !"
"তোমার ব্যবহার, তোমার মনের চিন্তা ভাবনা স্বচ্ছ জীবন যাপন এটা পাওয়া তোমার গুরুজনদের দেয়া শিক্ষা থেকে , তাকে আমি শ্রদ্ধা করি । কিন্তু কেন ভালোবাসি যেন ? তুমি মানুষকে যোগ্য সন্মান দাও বলে ! যেমন আমায় সন্মান দিয়েছো তোমার চোখে আমি কখনো আমার অসম্মান দেখিনি , নিজে সমর্পন করেছো আমার কাছে নিজের দায়বদ্ধতা সামনে রেখে , এর চেয়ে সৎ চেতনা আর কি বা আশা করা যায় !"
বিছানায় টেনে নিলাম রীনা কে । চোখে চোখ রেখে বললাম " সত্যি বিশ্বাস করো আমি নিরুপায়, তোমায় দেখে আমার যৌন লালবাসা হয়েছিল বৈকি , সেটা একটা ঘটনার প্রবাহ মাত্র , কিন্তু তোমাকে জানার পর তোমাকে শারীরিক সুখ ভোগ করবো বলে তোমায় পাশে রাখবো এমন পিশাচ আমি নই । আমি লোভী কিন্তু বেইমান হতে পারি না । "