24-01-2019, 06:01 PM
এদিকে সমরাঙ্গনের মাঝে সারথির বেশে থাকা উল্লম যুবরাজ দেখছিলেন, দুই মহাবীরের দ্বৈত সমর। ধনুক আর অসি নষ্ট হয়ে যাওয়া হংস কে লক্ষ্য করে, ধনুকে শর যোজনা করে আকর্ণ ছিলা টেনে ধরলেন জিষ্ণু। যুবরাজ দেখলেন এক ভয়ঙ্কর খুনে চোখ জিষ্ণুর। যেন পুরিয়ে ফেলবে সামনের শত্রু কে। ঠিক তখন ই রথের ঘর্ঘর ধ্বনি তে সামনে তাকিয়ে দেখলেন বিশাল দেহি এক ব্রাহ্মন রথে চড়ে এগিয়ে আসছেন। খোলা গায়ে সাদা উপবীত ধুলো মিশ্রিত বায়ুমণ্ডলেও দৃশ্যমান। জিষ্ণু রথের আওয়াজ পেতেই চোখের পলক ফেলার আগেই একসাথে দুইটি শর যোজনা করে ফেলেছিল। কিন্তু রথে চড়ে থাকা মানুষ টি কে দেখেই যেন চোখের আগুন নিভে গেল মুহূর্তেই। ততক্ষনে রথারোহী সামনে এসে গেছেন। বেশ উচ্চস্বরে জিষ্ণু কে লক্ষ্য করেই বললেন উনি
- সামান্য একজন অতিরথ কে হত্যা করে কি হবে বীর”। কথা টি জিষ্ণুর থেকেও বিঁধল বেশী হংস কে। মাথা নিচু করে হংস বসে রইল রণাঙ্গনের লাল মাটিতে। ঠোঁটে এক চিলতে হাসি খেলে গেল জিষ্ণুর। আর ধৃষ্টতা না করে ধনুকে যোজিত শর দুটি পুনরায় স্থান পেল তূণীর এ। ধনুক নামিয়ে করজোড়ে দাঁড়িয়ে জিষ্ণু বলে উঠল-
- প্রনাম গুরুদেব। সত্যই যে দেশে মহাবীর হংস একজন অতিরথ মাত্র সেই দেশের বাকি বীর দেড় সাথে যুদ্ধ করা ভাগ্যের ব্যাপার”। কি যে খুশী হলেন পরাঞ্জয় সেটা বলার নয়। ইচ্ছে করছিল প্রিয়তম ছাত্রের শিষ চুম্বন করতে প্রান ভরে। আঘ্রান নিতে মাথার। কিন্তু এটা ওনার পাঠশালা নয়। সমরাঙ্গন। আর ব্রাহ্মন হয়েও তিনি পরশুরাম তুল্য মহাবীর।
- এখানে আমি তোমার গুরু নই শিষ্য শ্রেষ্ঠ। এখানে আমি তোমার প্রতিপক্ষ মাত্র।
- আপনার মতন প্রতিপক্ষ কখনই “মাত্র” হতে পারে না গুরুদেব। কিন্তু ভেবে দেখুন আজকে আমাদের যুদ্ধে শুধু কি আপনি ই যুদ্ধ করবেন না? যেই পক্ষই হারুক , হারবেন তো শুধু আপনি।
- হা হা হা হা, মহাবীর তোমাকে তো আমি কথার যুদ্ধ করতে শেখাই নি, তোমাকে আমি অসি, ধনুক যুদ্ধে বীর বানিয়েছিলাম। কথার যুদ্ধ নিশ্চয়ই তুমি তোমার প্রাণপ্রিয় মহাসখার কাছে শিখেছ”। কথার মধ্যে যে শ্লেষ ছিল সেটা জিষ্ণু গায়ে মাখল না। সামান্য এক দুর্মতি যুবরাজের খেয়ালের আদেশ পালন করতে আসা, নিজের গুরুর সাথে যুদ্ধ টলানোর মতন কথার বান ওর কাছে মজুদ আছে।
- গুরুদেব আজকে এই সমরাঙ্গনে আমি যাই করছি সেটা আপনার ই আশীর্বাদ। শুধু শস্ত্র নয়, শাস্ত্র জ্ঞান ও আপনি ই আমাকে দিয়েছেন। আর সেই জ্ঞান থেকেই বলতে পারি, আপনি ই শিখিয়েছিলেন, অহং, লোভ আর পরশ্রীকাতরতা এই তিনটে অবগুন মানুষ কে মানব থেকে দানব বানায়। আমি কিন্তু নিজের অপমান সয়েছি, নিজেকে রাজপুত্র থেকে দাস বানিয়েছি, কিন্তু এখন ও মানুষ ই আছি, দানব হই নি।আর আপনি যদি হলপ করে বলতে পারেন এখানে প্রতিপক্ষের বেশে উপস্থিত মানুষ গুলো মানুষ নেই আর ,দানবে পরিনত হয়েছে, তাহলে আমার গুরুদেবের দিব্যি আজকে আমার গুরুদেবের আদেশে বসুন্ধরার বানে ছিন্ন বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে প্রত্যেকের শরীর। গুরুদেবের আদেশে জিষ্ণু অস্ত্র ধরে শুধু মাত্র সত্য কেই প্রতিষ্ঠা করতে। কোন অন্ধ শক্তির খেলায় মেতে নিজের বল প্রদর্শন করতে নয়। আর মহাসখার কথা যদি বলবেন তবে যতদূর আমি জানি আপনিও মহাসখা কে কম ভালবাসেন না”।
পরাঞ্জয়ের প্রান যেন জুড়িয়ে গেল। ইচ্ছে করছিল সামনের দেবতুল্য বীর টি কে নিজের কোলে নিয়ে সহস্র চুম্বনে মস্তক ভরিয়ে দিতে। নিজের গর্ব হচ্ছিল আজকে যে সে জিষ্ণুর গুরু। শাস্ত্র বিদ্যায় এই পরাজয় আজকে পরাঞ্জয় কে মোহিত করে দিল যেন। উনি অপলকেই দেখতে থাকলেন সন্তানের থেকেও প্রিয় নিজের ছাত্র কে। এদিকে জিষ্ণু বলেই চলে--
- এবারে আপনি অনুমতি দিলে আমার নিজের দুই হাত কে আপনার পায়ে ছুঁইয়ে পুণ্য অর্জন করতে চাই। অনেক দিন হয়ে গেছে গুরুদেব , চরন স্পর্শের অনুমতি দিন”। মহাবীর পরাঞ্জয়ের চোখে জল। উনি রথ থেকে নেমে সামনে এগিয়ে চললেন। এ যেন পর্বতের এগিয়ে যাওয়া মহম্মদের দিকে। দুই পক্ষই তৃষ্ণার্ত, যুদ্ধের জন্য নয়। একে অপরের সান্নিধ্যের জন্য। জিষ্ণু পা ছুঁয়ে প্রনাম করতেই পরাঞ্জয় সজোরে বুকে টেনে নিলেন জিষ্ণু কে। চোখের জল যেন বাঁধ ভাঙ্গা পরাঞ্জয়ের। জিষ্ণু কে বুকে নিয়ে মাথায় চুমু যেন থামতেই চায় না বৃদ্ধ পরাঞ্জয়ের। উল্লম যুবরাজ অবাক হয়ে অশ্রু সজল চোখে অবলোকন করতে থাকল এই গুরু শিশ্যের মিলন।
- “তবে আজকে সমাপ্ত হোক এই যুদ্ধ হংসের পরাজয় দিয়ে”
- আপনার আদেশ শিরোধার্য গুরুদেব, দয়া করে বল্লভপুরের মহাসেনা কে নিয়ে আপনি ফিরে যান।
- বেশ তবে তাই হোক। আর তুমি কি চাও আমার কাছে জিষ্ণু?
- আপনার তো আমাকে অদেয় কিছুই নেই গুরুদেব, আর যদি দিতেই চান তবে আমাকে চিরকাল এমন ই অজেয় থাকার আশীর্বাদ দিন আর সত্য থেকে বিমুখ না হবার বিশেষ জ্ঞান আর আশীর্বাদ দিন.........আর একটি অনুরোধ গুরুদেব, এই সারথির বেশে থাকা যুবা টি আমার বিশেষ প্রিয়। একে ও আপনি আপনার অমৃত সমান আশীর্বাদ দিন দয়া করে”। জিষ্ণুর কথা শুনে উল্লম যুবরাজ বিজয় যেন খেই হারিয়ে ফেললেন। জিষ্ণুর প্রিয় শুনে নিজেকে সত্যি যেন স্থির রাখতে পারলেন না যুবরাজ। রথ থেকে নেমে প্রায় দৌড়ে গিয়েই মহাবীর পরাঞ্জয়ের পায়ে সাষ্টাঙ্গে প্রনামে রত হলেন উল্লম যুবরাজ.........
- তোমার অনুরোধ আমার কাছে আমার সন্তানের আবদারের থেকেও অনেক বেশী জিষ্ণু। আমি আশীর্বাদ করছি, উল্লম যুবরাজ যেন প্রকৃত অর্থেই মহান বীর হন। তোমার মতই যেন সত্য কে প্রতিষ্ঠা করতেই ওর অসি ঝলসে ওঠে। আশীর্বাদ করি অনেক বড় গরিমার উত্তরাধিকারি হও।
- সামান্য একজন অতিরথ কে হত্যা করে কি হবে বীর”। কথা টি জিষ্ণুর থেকেও বিঁধল বেশী হংস কে। মাথা নিচু করে হংস বসে রইল রণাঙ্গনের লাল মাটিতে। ঠোঁটে এক চিলতে হাসি খেলে গেল জিষ্ণুর। আর ধৃষ্টতা না করে ধনুকে যোজিত শর দুটি পুনরায় স্থান পেল তূণীর এ। ধনুক নামিয়ে করজোড়ে দাঁড়িয়ে জিষ্ণু বলে উঠল-
- প্রনাম গুরুদেব। সত্যই যে দেশে মহাবীর হংস একজন অতিরথ মাত্র সেই দেশের বাকি বীর দেড় সাথে যুদ্ধ করা ভাগ্যের ব্যাপার”। কি যে খুশী হলেন পরাঞ্জয় সেটা বলার নয়। ইচ্ছে করছিল প্রিয়তম ছাত্রের শিষ চুম্বন করতে প্রান ভরে। আঘ্রান নিতে মাথার। কিন্তু এটা ওনার পাঠশালা নয়। সমরাঙ্গন। আর ব্রাহ্মন হয়েও তিনি পরশুরাম তুল্য মহাবীর।
- এখানে আমি তোমার গুরু নই শিষ্য শ্রেষ্ঠ। এখানে আমি তোমার প্রতিপক্ষ মাত্র।
- আপনার মতন প্রতিপক্ষ কখনই “মাত্র” হতে পারে না গুরুদেব। কিন্তু ভেবে দেখুন আজকে আমাদের যুদ্ধে শুধু কি আপনি ই যুদ্ধ করবেন না? যেই পক্ষই হারুক , হারবেন তো শুধু আপনি।
- হা হা হা হা, মহাবীর তোমাকে তো আমি কথার যুদ্ধ করতে শেখাই নি, তোমাকে আমি অসি, ধনুক যুদ্ধে বীর বানিয়েছিলাম। কথার যুদ্ধ নিশ্চয়ই তুমি তোমার প্রাণপ্রিয় মহাসখার কাছে শিখেছ”। কথার মধ্যে যে শ্লেষ ছিল সেটা জিষ্ণু গায়ে মাখল না। সামান্য এক দুর্মতি যুবরাজের খেয়ালের আদেশ পালন করতে আসা, নিজের গুরুর সাথে যুদ্ধ টলানোর মতন কথার বান ওর কাছে মজুদ আছে।
- গুরুদেব আজকে এই সমরাঙ্গনে আমি যাই করছি সেটা আপনার ই আশীর্বাদ। শুধু শস্ত্র নয়, শাস্ত্র জ্ঞান ও আপনি ই আমাকে দিয়েছেন। আর সেই জ্ঞান থেকেই বলতে পারি, আপনি ই শিখিয়েছিলেন, অহং, লোভ আর পরশ্রীকাতরতা এই তিনটে অবগুন মানুষ কে মানব থেকে দানব বানায়। আমি কিন্তু নিজের অপমান সয়েছি, নিজেকে রাজপুত্র থেকে দাস বানিয়েছি, কিন্তু এখন ও মানুষ ই আছি, দানব হই নি।আর আপনি যদি হলপ করে বলতে পারেন এখানে প্রতিপক্ষের বেশে উপস্থিত মানুষ গুলো মানুষ নেই আর ,দানবে পরিনত হয়েছে, তাহলে আমার গুরুদেবের দিব্যি আজকে আমার গুরুদেবের আদেশে বসুন্ধরার বানে ছিন্ন বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে প্রত্যেকের শরীর। গুরুদেবের আদেশে জিষ্ণু অস্ত্র ধরে শুধু মাত্র সত্য কেই প্রতিষ্ঠা করতে। কোন অন্ধ শক্তির খেলায় মেতে নিজের বল প্রদর্শন করতে নয়। আর মহাসখার কথা যদি বলবেন তবে যতদূর আমি জানি আপনিও মহাসখা কে কম ভালবাসেন না”।
পরাঞ্জয়ের প্রান যেন জুড়িয়ে গেল। ইচ্ছে করছিল সামনের দেবতুল্য বীর টি কে নিজের কোলে নিয়ে সহস্র চুম্বনে মস্তক ভরিয়ে দিতে। নিজের গর্ব হচ্ছিল আজকে যে সে জিষ্ণুর গুরু। শাস্ত্র বিদ্যায় এই পরাজয় আজকে পরাঞ্জয় কে মোহিত করে দিল যেন। উনি অপলকেই দেখতে থাকলেন সন্তানের থেকেও প্রিয় নিজের ছাত্র কে। এদিকে জিষ্ণু বলেই চলে--
- এবারে আপনি অনুমতি দিলে আমার নিজের দুই হাত কে আপনার পায়ে ছুঁইয়ে পুণ্য অর্জন করতে চাই। অনেক দিন হয়ে গেছে গুরুদেব , চরন স্পর্শের অনুমতি দিন”। মহাবীর পরাঞ্জয়ের চোখে জল। উনি রথ থেকে নেমে সামনে এগিয়ে চললেন। এ যেন পর্বতের এগিয়ে যাওয়া মহম্মদের দিকে। দুই পক্ষই তৃষ্ণার্ত, যুদ্ধের জন্য নয়। একে অপরের সান্নিধ্যের জন্য। জিষ্ণু পা ছুঁয়ে প্রনাম করতেই পরাঞ্জয় সজোরে বুকে টেনে নিলেন জিষ্ণু কে। চোখের জল যেন বাঁধ ভাঙ্গা পরাঞ্জয়ের। জিষ্ণু কে বুকে নিয়ে মাথায় চুমু যেন থামতেই চায় না বৃদ্ধ পরাঞ্জয়ের। উল্লম যুবরাজ অবাক হয়ে অশ্রু সজল চোখে অবলোকন করতে থাকল এই গুরু শিশ্যের মিলন।
- “তবে আজকে সমাপ্ত হোক এই যুদ্ধ হংসের পরাজয় দিয়ে”
- আপনার আদেশ শিরোধার্য গুরুদেব, দয়া করে বল্লভপুরের মহাসেনা কে নিয়ে আপনি ফিরে যান।
- বেশ তবে তাই হোক। আর তুমি কি চাও আমার কাছে জিষ্ণু?
- আপনার তো আমাকে অদেয় কিছুই নেই গুরুদেব, আর যদি দিতেই চান তবে আমাকে চিরকাল এমন ই অজেয় থাকার আশীর্বাদ দিন আর সত্য থেকে বিমুখ না হবার বিশেষ জ্ঞান আর আশীর্বাদ দিন.........আর একটি অনুরোধ গুরুদেব, এই সারথির বেশে থাকা যুবা টি আমার বিশেষ প্রিয়। একে ও আপনি আপনার অমৃত সমান আশীর্বাদ দিন দয়া করে”। জিষ্ণুর কথা শুনে উল্লম যুবরাজ বিজয় যেন খেই হারিয়ে ফেললেন। জিষ্ণুর প্রিয় শুনে নিজেকে সত্যি যেন স্থির রাখতে পারলেন না যুবরাজ। রথ থেকে নেমে প্রায় দৌড়ে গিয়েই মহাবীর পরাঞ্জয়ের পায়ে সাষ্টাঙ্গে প্রনামে রত হলেন উল্লম যুবরাজ.........
- তোমার অনুরোধ আমার কাছে আমার সন্তানের আবদারের থেকেও অনেক বেশী জিষ্ণু। আমি আশীর্বাদ করছি, উল্লম যুবরাজ যেন প্রকৃত অর্থেই মহান বীর হন। তোমার মতই যেন সত্য কে প্রতিষ্ঠা করতেই ওর অসি ঝলসে ওঠে। আশীর্বাদ করি অনেক বড় গরিমার উত্তরাধিকারি হও।
অমৃতের সন্ধানে - নিজের মনের নগ্ন নিস্তব্ধতাকে একটু কথা বলতে দাও।