24-01-2019, 02:47 PM
পর্ব ১৫- প্রথম টুইস্টঃ
কোনরকমে দুহাত দিয়ে দরজাটা ঠেলে বাইরে বেরিয়ে যায় সাইদুল। দরজার বাইরেই রাজু, মুখে সেই বিশ্রী রকম হাঁসিটা। একবার রাজুর দিকে তাকায় সাইদুল, কিন্তু পারেনা সেই বিজয়ীর উল্লাস মেনে নিতে। মাথা নিচু করে পাশ কাটিয়ে এগিয়ে চলে সাইদুল।
রাজুঃ শোন সাইদুল, তুই আমায় ভুল ভেবেছিস। প্লিস যাসনা আমার কথাটা মন দিয়ে শোন তুই।
কোনও উত্তর দেয়না সাইদুল, চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকে।
রাজুঃ তোকে কখনো বলিনি। কিন্তু এটা সত্যি সাইকেল নিয়ে যতবার রাস্তায় রূপসার সাথে আমি মুখোমুখি হয়েছি, রূপসা ফ্যালফ্যাল করে আমার দিকে তাকিয়ে থাকতো। আমি জানতাম ও কি চায়। আমি কমবছর হলনা মেয়ে চড়াচ্ছি। আমি মেয়েদের...
রাজুর কথা সম্পূর্ণ হয়না, সাইদুল ফুঁপিয়ে ওঠে। রাজু হয়ত আশাও করেনি যে সাইদুল এতটা ভেঙে পড়বে।
সাইদুলঃ কেন এরকম করলি আমার সাথে রাজু। আমি তো রূপসাকে সত্যি ই ভালোবেসে ফেলেছিলাম।
রাজুঃ এক রাতে কি কখনো কেউ কাউকে ভালোবাসে রে! জীবনটা সত্যি ই হিন্দি সিনেমা নয় রে। রোমান্স ওখানেই হয়। আরে পাগল তুই, জীবনে মেয়ে দেখিস নি তাই এতো তাড়াতাড়ি ভেঙে পড়লি। এটা কিছু নয়রে মানুষের ২০ বছরের বিয়ে করা বউ পালিয়ে যায়।
চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকে সাইদুল। চোখ দিয়ে টপটপ করে জল পড়তে থাকে।
রাজুঃ সাইদুল, আমি যতই খারাপ হইনা কেন, আমি কখনো নিজের থেকে রূপসার কাছে যেতাম না। রূপসাই তুই দোকানে চলে যাওয়ার পর আমার ঘরে এসেছিল, আমার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ল...
রাজুর কথা শেষ হওয়ার আগেই সাইদুল পেছনঘুরে প্রচণ্ড জোরে একটা চড় মারে রাজুকে। এর আগেও ওদের মধ্যে বহুবার লড়াই হয়েছে, গায়ের জোরে হয়ত সাইদুলের চেয়ে রাজু অনেক অনেক এগিয়ে। কিন্তু আজ সত্যি ই এই পরাজিত প্রেমিকের কাছে রাজু নেহাত ই বাচ্চা। প্রায় ঝড়ের বেগে নিজের ডান পা টা দিয়ে রাজুর পেটে কষে একটা লাথি মারে সাইদুল। প্রচণ্ড জোরে চিৎকার করে রাজু মাটিতে গোঙাতে শুরু করে। সাইদুল কোথাও যায়না, ওখানেই দাঁড়িয়ে থাকে। কোনরকমে উঠে দাঁড়ায় রাজু। আজ আর নিজের প্রিয় বন্ধুর ওপর হাত ওঠানোর কোনও ইচ্ছেই ওর নেই। প্রায় আকুতি মিনতি করার মত করে সাইদলুকে বলে
রাজুঃ শোন ভাই, আমি এতটাও খারাপ নই। একটা সুন্দরী মেয়ে আমার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়লে আমি কি করতে পারি বল। আমিও তো মানুষ রে। আমারও শরীরে উত্তেজনা রয়েছে। তুই যাসনা সাইদুল। আমার কথাটা শোন। আমি তোকে কাল রাতেই বোঝাতে চেয়েছিলাম যে এই সম্পর্ক হয়না। তুই একটা বস্তির ছেলে আর ও ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের ছাত্রী। হয়না সাইদুল এটা। এর আগে একবার ও কোনও মেয়ের সাথে সম্পর্কে জড়ালে হয়ত তোর এতটা কষ্ট হতনা। আমার কথা শোন সাইদুল। আয় আজ দুজনে মিলে...
রাজুর পুরো কথা সাইদুল শুনেছিল কিনা জানা নেই। কারন তার আগেই সাইদুল হনহন করে হাঁটতে শুরু করে দিয়েছিল। ওর গন্তব্য কোথায়? কোথায় আবার এই সময় বস্তির আর ১০ টা ছেলে যেখানে যায় সেখানেই। বস্তির স্বর্গ অর্থাৎ চুল্লুখানা এখন ওটাই তো সাইদুলের ঠিকানা।
সেই বিখ্যাত রিংটোনের সাথে সুবীর বাবুর ফোন আবার বেজে ওঠে। গল্পের মাঝে এই ধরনের বাধা সত্যি ই অস্বস্তিকর। অপ্রিয় এই গল্পের মধ্যে সুবীর বাবুও প্রায় নিমজ্জিত হয়ে পড়েছিলেন। নিজের ই এক মেয়ের এই লম্পট কীর্তি শুনে ঠিক কত জল ওনার চোখ দিয়ে গড়িয়ে পড়েছে তার কোনও ইয়ত্তা নেই। হাতে মোবাইলটা নিয়ে দেখেন “রূপসা” হয়ত তীব্র এক যন্ত্রণা ও ঘৃণায় ওনার গা গুলিয়ে উঠেছিল। যাই হোক সুবীর বাবু বহুকষ্টে ফোনটা রিসিভ করেন। হ্যালো বলার মত মানসিক অবস্থায় উনি ছিলেন না। তাই ওপাশ থেকে প্রথমে রূপসার ই গলাটা ভেসে আসে। গলাটা প্রচণ্ড ধরা, অনেকক্ষণ ধরে কান্নাকাটি করলে গলার অবস্থা যেমন হয় ঠিক তেমন।
রূপসাঃ হ্যালো, বাবা প্লিস আমার কথাটা মন দিয়ে শোন। তোমার পাশে কে আছে এখন? আমি কারুর একটা গলা পেয়েছিলাম ফোন করার সময়। কে আছে বাবা? বাবা প্লিস উত্তর দাও। কি হোল বাবা উত্তর দাও।
কোনও উত্তর দিতে পারেন না সুবীর বাবু। ডায়েরীর অভিশাপ যে এভাবে ওনার জীবনে আসবে তা উনি ভাবতেও পারেননি। দুই মেয়েকে ছোট থেকে নীতি আদর্শের শিক্ষা দিয়েছেন উনি আর সেই মেয়েরাই কিনা... ভাবতেও পারেননা সুবীর বাবু, কথা বলা তো অনেক দুরের ব্যাপার।
রূপসাঃ বাবা, মন দিয়ে আমার কথা শোন। মা, পাগল হয়ে গেছে। উল্টোপাল্টা কথা বলছে। আমার কিছুই মাথায় ঢুকছেনা। এই কথাগুলো মা যে কি করে বলে ছি ছি... বাবা আমার আর তিলোত্তমার লজ্জায় মাথা হেঁট হয়ে যাচ্ছে। তিলোত্তমা প্রচণ্ড ভেঙে পড়েছে।
ওপাশ থেকে ফিসফিস করে বলে ওঠে সত্য বাবু। “মালতী ভয় পেয়েছে সুবীর বাবু। এবার মেয়েদের দিয়ে নিজেকে বাঁচাতে চাইছে”
সুবীর বাবুর মাথায় হয়ত সত্য বাবু বা রূপসা কারুর ই কোনও কথাই আর প্রবেশ করছিল না।
রূপসাঃ বাবা, তুমি কি বুঝতে পারছ কেউ একটা চাইছে তোমায় আর মাকে আলাদা করে দিতে, বাবা বিশাল বড় একটা চক্রান্ত হচ্ছে। হ্যালো হ্যালো হ্যালো বাবা, তুমি উত্তর দাও বাবা।
বেশ কিছুক্ষন দুপাশ ই নিস্তব্ধ। একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বলে ওঠেন সুবীর বাবু।
সুবীর বাবুঃ তোদের বাবা মারা গেছে। আর বাবা বলে ডাকিস না আমায়।
ফোনটা কেটে দেন সুবীর বাবু। দুচোখ বেয়ে তখন ও জল পড়ে চলেছে ওনার।
সত্য বাবুঃ সুবীর বাবু শান্ত হন। ডায়েরীর নাম হয়ত অভিশপ্ত ডায়েরী। কিন্তু এটা মানুষের জীবনের না জানা সত্যগুলোকেই শুধু প্রকাশ করে। ডায়েরীর জন্য অভিশাপ নেমে আসেনা। যে সাংসারিক কলহের মুখ আপনি দেখলেন তা হয়ত আজ নয় তো কাল হওয়ার ই ছিল। আমাকে গল্পটা শেষ করতে দিন দেখবেন সবকিছু আপনি নিজে থেকেই বুঝে যাবেন।
সুবীর বাবুঃ হ্যাঁ সত্য বাবু, আপনি আপনার গল্প চালিয়ে যান। আমিও নিজের জীবনের অন্তরালের সত্যকে জানতে চাই।
সত্য বাবুঃ দেশী মদের সত্যি ই দম আছে। প্রতিটা বিন্দুতে যেন মাদকতার ছোঁয়া। এক একটা বিন্দু সাইদুলের পাকস্থলিতে যায় ও তার সাথে সাথে কাম, অপমান, লজ্জা জীবনের প্রতিটি রিপুই ভীষণভাবে উত্তেজিত হতে থাকে। বারবার চোখের সামনে ভেসে ওঠে রূপসার ঘাড়ের সেই ক্ষতটা। আর সেই ক্ষতর সৃষ্টিকর্তা নিজের অপকর্মের কাহিনী বারবার করে সাইদুলের চোখের সামনে মরীচিকার মত ফুটিয়ে তোলে। ঝাপসা হয়ে ওঠে সাইদুলের চোখ। চোখের সামনেই এক হিংস্র বাঘ ও ততোধিক হিংস্র এক বাঘিনী। নিজেদের মধ্যে কামড়া কামড়ি করে একে অপরকে নিয়ন্ত্রন করার অব্যর্থ প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছে। একি সেই রূপসা যার দুচোখে একদিন সাইদুল হারিয়ে যেতে চেয়েছিল, যার কাঁধে মাথা রেখে একটিবার বলতে চেয়েছিল “রূপসা আমিও হয়ত জীবনে কিছু করতে পারতাম। যদি একটু অর্থ থাকতো আর আব্বুটা এতো কমবয়সে মারা না যেত” হয়ত কাঁদতে কাঁদতে বলতে চেয়েছিল “রূপসা অনেক অনেক ভুল করেছি জীবনে, জানিনা এর শাস্তি কবে পাবো। কিন্তু আমি তোমার সাথে সবভুলে নতুন এক পৃথিবী গড়তে চাই। রূপসা বস্তির এই নোংরা অন্ধকারের জীবন থেকে আমার মুক্তি চাই”
না এই কথাগুলো আর বলা হলনা সাইদুলের। আদর্শবান বাবার মেধাবী কন্যা সমস্ত স্বপ্নকে ভেঙে চুরমার করে দিয়ে ওকে শেষ করে দিলো। চোখের সামনে দেখতে পায় সাইদুল এক নতুন কামুকি রূপসাকে। বিছানার ওপর বসে, পায়ের সাড়ি সায়া প্রায় ঠাই পেরিয়ে জাঙের কাছাকাছি, বুকের ওপর নীল রঙের একটা ফিনফিনে সাড়ি, লম্বা সূচালো বোঁটাগুলো সুস্পষ্টভাবে দৃশ্যমান। ঠোঁটে ঘন লাল রঙের লিপস্টিক। কেউ হয়ত নিজের নোংরা আঙুল দিয়ে ওগুলোকে ঘেঁটে দিয়েছে বেশ করে। কামনার দংশনে মাঝেমধ্যেই লকলকে জিভটা দুই ঠোঁটের ফাঁক দিয়ে বেরিয়ে আসছে। নাকের উত্তপ্ত নিঃশ্বাস কিছুটা আবেশক্রিয়ার মত নিজের বিপরীত লিঙ্গকে আকর্ষণ করে চলেছে। দরজার ঠিক কাছে দাঁড়িয়ে খালি গায়ে ওই ছেলেটি কে? ও তো রাজু। হয়ত ওই সুপুরুষটির জন্যই অপেক্ষা করে আছে রূপসা।
আর পারেনা সাইদুল। প্রচণ্ডভাবে গা টা গুলিয়ে ওঠে। চুল্লুখানার জানলার কাছে গিয়ে কোনরকমে মুখটা বাড়িয়ে বের করে দেয় সমস্ত বিষ। আসলে মদ নয় বাইরে এলো মানুষ হয়ে জন্মানোর তীব্র দ্বেষ ও যন্ত্রণা। কেউ একজন বলে ওঠে “আরে ওটা সাইদুল না, শালা ও তো মদ খেত না, কি হয়েছে বল তো?” ফিসফিস করে অপরজন উত্তর দেয় “আরে একটা মাগীকে কোথা থেকে নিয়ে এসেছে। বিকেলে দেখলাম ও বাড়িতে নেই আর রাজু ঢুকছে” সবাই প্রচণ্ড জোরে হেঁসে ওঠে। “সে আর বলতে। মদ তো খাবেই রে। শালা ওই হারামি রাজুর নজর যার ওপর পড়ে তাকে কি কখনো রাজু ছাড়ে” প্রচণ্ড জোরে অট্টহাস্যে ফেটে পড়ে ওখানে উপস্থিত সকলে। কোনরকমে টলতে টলতে বাইরে বেরোয় সাইদুল। শরীর মন দুই ই যেন অবশ হয়ে এসেছে। হৃদয়ে আর এক বিন্দু ভালোবাসাও মজুত নেই। মনে মনে পন করে সাইদুল “ঘরে ধুকেই চুলের মুটি ধরে সবার আগে রূপসাকে বার করবে। সোজা টানতে টানতে রাজুর ঘরে নিয়ে গিয়ে ছেড়ে দিয়ে আসবে। ও গরীব, অতো হাইফাই মেয়ে ওর চাইনা। আম্মি একটা সাধারন মেয়ে দেখে ঠিক ই বিয়ে দিয়ে দেবে”
সারা শরীর দিয়ে ঘামের দুর্গন্ধ আর মুখ দিয়ে তীব্র মদের দুর্গন্ধ- এ ওর থেকে ১০ হাত দূরে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষকেও জানান দেয় “ওই দেখ আজ সাইদুল মদ খেয়ে ঘরে ঢুকছে। ওর আম্মির কত বড় বড় কথা ছিল, দেখ কি অবস্থা ওর” দুপাশে তাকায় সাইদুল, সবাই ওর দিকে তাকিয়ে হাসছে। লজ্জায় অপমানে ওর মাথা নিচু হয়ে যায়। মনে মনে বলে ওঠে “সব হয়েছে ওই বেশ্যাটার জন্য। আজ ই ওকে ঘর থেকে তাড়াবো”
বাড়ির কাছাকাছি পৌঁছে যায় সাইদুল। বুকের মধ্যে তখন আগুন জ্বলছে। দরজাটার সামনে দাঁড়িয়ে আগে নিজেকে নিয়ন্ত্রন করে নেয়। মনে মনে পন করে “অনেক হয়েছে ভালোমানুষি আর নয়। এই শেষ। এবার ওই বেশ্যাটাকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বার করব” প্রচণ্ড জোরে দরজায় ধাক্কা দেয় সাইদুল। দরজাটা ভেতর থেকে বন্ধ ছিলনা, শুধুই ভেজানো ছিল। বিকট একটা আওয়াজ হয়ে দরজাটা খুলে যায়। ভেতরের দৃশ্য সাইদুলের ভেতরের সমস্ত রাগ আক্রোশকে শতগুন বাড়িয়ে দিলেও এক অদ্ভুত বিস্ময় ওকে গ্রাস করে।
একটা নীল সাড়ি পড়ে রূপসা। খাটের ওপর চারপাশে ফুল ছড়ানো। মালাগুলো ছিঁড়ে বিছানার ওপর ই পড়ে আছে। হয়ত কিছুক্ষণ আগে এগুলোই রূপসার চুলের খোঁপায় শোভা পাচ্ছিল। আবার সাইদুলের হৃদয়টা ব্যাকুল হয়ে যায়, ঠিক এইভাবেই আজ রাতে ও রূপসার সাথে ফুলশয্যা করতে চেয়েছিল। রূপসাকে নিজের বুকের সমস্ত ভালোবাসা উজাড় করে পাগল করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু এই বাসর শয্যায় ওর কোনও স্থান নেই। ওর জায়গায় রয়েছে রাজু। রূপসার কোমরকে পেছন থেকে এক হাতে জড়িয়ে, ওর মুখকে নিজের দিকে করে ঠোঁটের লিপস্টিক গুলো প্রায় রাবারের মত করে মুছে দিয়ে নিজের মুখে লাগিয়ে নিয়েছে রাজু। দরজাটা খোলার আগের মুহূর্ত অবধি যে রূপসার রসালো ঠোঁটটা রাজুর ই মুখের মধ্যে ছিল তা সাইদুলের বুঝতে কোনও অসুবিধা থাকেনা। সাইদুলকে দেখে কিছুটা ঘাবড়ে যায় রূপসা, কিন্তু সামান্য বিচলিত না হয়ে রাজু বলে ওঠে
রাজুঃ তোর জন্যই দরজাটা বন্ধ করিনি রে। তুই দরজাটা বন্ধ করে চলে আয়। আজ আমাদের তিনজনের ফুলশয্যা।
রাজুর কথায় হয়ত সাইদুল এতটাও রাগ করেনি, যতটা রাগ ওর হয় রাজুর কথার প্রত্যুত্তরে রূপসার ওই অদ্ভুত হাঁসিটায়। অবাক দৃষ্টিতে সাইদুল তাকিয়ে থাকে রূপসার দিকে। রূপসা একবার সাইদুলের দিকে তাকায়, কিন্তু পরক্ষনেই আবার রাজুর ঘাড়ের ওপর নিজের দুহাত ছড়িয়ে দিয়ে ওর মুখের দিকে অগ্রসর হয়। নিজেকে বিশ্বাস করতে পারছিলনা সাইদুল। প্রচণ্ড উত্তেজনা ও তীব্রতার সাথে রাজু ও রূপসা দুজন দুজনকে কিস করতে শুরু করে। এই তীব্রতায় হয়ত মাঝে মধ্যেই রূপসার ঠোঁটটা ফস্কে যাচ্ছিল রাজুর মুখের ভেতর থেকে, কিন্তু রূপসাই আবার স্বেচ্ছায় নিজের ঠোঁট রাজুর মুখের ভেতর ঢুকিয়ে দেয়। দুজনের ই মুখের ভেতর থেকে উম উম্ম করে শব্দ বাইরে বেরিয়ে আসতে শুরু হয়। রাজু দুহাত দিয়ে রূপসাকে বিছানার ওপর ফেলে দেয়। প্রায় ঝাঁপিয়ে পড়ে ওর ওপর, কাঁধের দুদিকে হাত দিয়ে নীল ব্লাউজটায় দুপাশ থেকে একটা চাপ দেয়। সাইদুলের ছখেরে ই সামনে ওর প্রেয়সীর ব্লাউজটা দুপাশ থেকে ছিঁড়ে ফেটে যায়। নিজেকে আর শান্ত রাখতে পারেনা সাইদুল। কিকরেই বা রাখবে। প্রেম তো অনেক আগেই ফুড়ুৎ করে উড়ে গেছে। কিন্তু মাতাল চোখের সামনে যে সুস্বাদু নারীর শরীরটা দেখতে পাচ্ছে তা তো আর অস্বীকার করা যায়না। জিভটা লকলক করে ওঠে সাইদুলের। নিজের অজান্তেই বিড়বিড় করে ওঠে সাইদুল “তুই একা খাবিনা রাজু আমিও খাবো। ওই বেশ্যাটা আমায় অনেক কাঁদিয়েছে, ওকে আমিও খাবো” দ্রুত নিজের জামাটা খুলে ছুঁড়ে ফেলে সাইদুল। রাজু রূপসার গলা থেকে নিজের মুখটা তুলে সাইদুলের দিকে তাকিয়ে হেঁসে ফেলে। দুই ঠোঁটের ফাঁক দিয়ে জিভটা বার করে সাইদুলকে অঙ্গভঙ্গি করে। যেন এটাই বলতে চায় যে “উম হেবি খেতে রে তোর বউকে” রাজুর এই ইঙ্গিতকেও ছাপিয়ে যায় যখন রূপসা পেছন থেকে উঠে এসে জিভটা বার করে রাজুর বুকটা চাঁটতে শুরু করে। সাইদুলের ভেতর থেকে কে একটা বলে ওঠে “জেগে ওঠ সাইদুল। চোখের সামনে যে খাবার পাচ্ছিস তাকে আর ফেরত দিস না”
রুদ্ধশ্বাসে দৌড়ে গিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে সাইদুল.................................
প্রায় সাইক্লোনের বেগে একটা ভারী হাত নেমে আসে, ঠিক সুবীর বাবু আর সত্য বাবুর মাঝে। কিছু বুঝে ওঠার আগেই সত্য বাবুর গালে অন্তত একনাগাড়ে ৪-৫ টা চড়। হুমড়ি খেয়ে মাটিতে পড়ে যান সত্য বাবু। কোনরকমে উঠে দাঁড়িয়ে সামনের দিকে দেখেন। ঠিক যেভাবে কোনও মাছকে জল থেকে ডাঙায় তুললে ছটপট করতে শুরু করে ঠিক সেরকম ই পাগলের মত ছটপট করতে শুরু করে দেয় সত্য বাবু। গলা কাঁপতে শুরু করে, মুখ দিয়ে বিড়বিড় করে কিছু একটা বলার চেষ্টা করছিলেন কিন্তু তা সুবীর বাবুর কান অবধি পৌছায় না। চোখদুটো প্রায় ওপরের দিকে উঠে যায়। হথাত সংজ্ঞাহীন হয়ে মাটিতেই লুটিয়ে পড়েন সত্যবাবু।
“যা শালা মালটা কি টেঁসে গেলো নাকি? শালা এই মালটা পটল তুললে তো সব বিগড়ে যাবে”
চোখের সামনে যেন একটা উচ্চপ্রযুক্তির হলিউড ফিল্ম দেখলেন সুবীরবাবু। কিছুতেই ঘোর কাটিয়ে উঠতে পারছিলেন না। কে যে এই কাণ্ডটা ঘটিয়ে দিলো তাও একবার চোখ তুলে দেখার সাহস হলনা।
“হ্যাঁ রে সুবীর, তোর বাড়িতে দড়ি আছে। মালটাকে ভালো করে দড়ি দিয়ে বাঁধি। এই তো কুয়োর দড়িতে কিন্তু ব্যাপক হবে, আরে এতো শালা তোর আসল গুপ্তধন রে। ভালো করে সামলে রাখ একে”
চোখের সামনে যে মানুষটা সুবীর বাবু দেখলেন তাকে দেখে সত্যি ওনার ও হার্টফেল হওয়ার ই কথা। অ্যাঁ করে ভয়ে প্রচণ্ড জোরে চেঁচিয়ে উঠলেন সুবীর বাবু।
“আরে তুই কাকে ভয় পাচ্ছিস সুবীর? আমি তো তোর বাল্যবন্ধু মানব”
হ্যাঁ করে তাকিয়ে থাকেন সুবীর বাবু।
মানবঃ তুই কবে থেকে ভুতে বিশ্বাস করতে শুরু করলি রে? আচ্ছা বাবা এই দেখ। (সত্য বাবুর মুখটা এক হাতে কিছুটা ওপরে তুলে) আচ্ছা ভুতের ঠোঁট ফেটে কি রক্ত পড়ে?
এতক্ষনে শান্ত হন সুবীর বাবু। “কিন্তু তুই...”
মানবঃ শোন সুবীর, হাতে একদম সময় নেই। একটা বিশাল চক্রান্ত হয়েছে শেষ কয়েকমাস ধরে...
মানব বাবুর কথা শেষ হয়না। তার আগেই সুবীর বাবু কিছুটা উত্তেজিত হয়েই বলে ওঠেন
সুবীর বাবুঃ জানি রে। বর্ণালীর আমি কোনও ক্ষতি করতে চাইনি। ওটা শুধুই একটা ভুল ছিল। কিন্তু তার বদলে তুই আমার যা ক্ষতি করলি...
মানব বাবুঃ বিশ্বাস কর সুবীর আমি তোর কোনও ক্ষতি ই করিনি। করেছে অন্য একজন। বিশাল এক চক্রান্ত হয়েছে তোর সাথে। তুই মাথা ঠাণ্ডা রাখ, যেকোনো সময় পুলিশ বাড়িতে আসবে, তোর হাতে একটাই প্রমান তা হোল সত্য বাবু। আমার কথাগুলো মন দিয়ে শোন তবেই তুই বাঁচবি নয়ত নিজেকে কিছুতেই মুক্ত করতে পারবি না তুই।
সুবীর বাবুর মাথা প্রায় খারাপ হয়ে যাওয়ার অবস্থা। অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে মানব বাবুর দিকে।
সুবীর বাবুঃ তাহলে কি সত্য বাবু শুধু এতো চালাকি করে আমায় মিথ্যে কথা বলে গেলেন। আর আমি সব সত্য ভেবে বিশ্বাস করে গেলাম।
মানব বাবুঃ না সত্য বাবু সব মিথ্যে কথা বলেন নি, অনেকটাই ধ্রুব সত্য। শোন সুবীর তুই নিজেকে শান্ত কর, বিশাল একটা চক্রান্ত হয়েছে তোর সাথে। তোকে আমি ছাড়া কেউ ই এই মায়াজাল থেকে বার করতে পারবে না।
চুপ করে মাথা নিচু করে বসে থাকেন সুবীর বাবু।
মানব বাবুঃ সত্য বাবু তোকে এপ্রিল ফুল বানায়নি সুবীর। ওর গল্পে অধিকাংশই সত্য। কিন্তু তোর মেয়েরা। ছি ছি সুবীর, তুই তো আমার চেয়েও অধম রে। ওই দুটো নিষ্পাপ ফুলের কুঁড়ির সম্বন্ধে এতো নোংরা কথা বাবা হয়ে শুনতে পারলি তুই? ছি ছি, আমার ই লজ্জা করছে। তোর মেয়েরা কোনও অন্যায় করেনি। বিশাল একটা চক্রান্ত হয়েছে তোর সাথে।
মাথা নিচু করে থাকে সুবীর বাবু। বেশ কিছুক্ষন চুপ করে থাকে মানব।
মানব বাবুঃ হ্যাঁ, তুই ভালো মানুষ তাই হয়ত এই ফাঁদগুলো বুঝতে পারিস নি। আসলে আমি তো সত্য বাবুর আসল পরিচয় জানি তাই... হয়ত। যাই হোক, তোর সম্পূর্ণ ব্যাপারটা বিশ্বাস করার একটাই কারন ওই চাওয়ালা। তুই সত্যি ই ভুত দেখেছিস সুবীর। আর তার ওপর একের পর এক টুইস্ট। কখনো বংশী ভিলেন, কখনো বংশী আবার সম্পূর্ণ পালটি খেয়ে হিরো। একের পর এক টুইস্ট, লোকটা যতই বদ হোক, সাইকোলজি সাবজেক্ট টা প্রচণ্ড ভালোই বোঝে।
কিন্তু সুবীর ডায়েরীর আসল টুইস্ট তো এবার থেকে আমি দেবো রে। আজ হোল প্রথম টুইস্ট। এরপর একের পর এক টুইস্ট আসবে আর তোর চোখের সামনে সব পরিস্কার হবে।
সুবীর বাবুঃ ডায়েরীটা কি সত্যি ই অভিশপ্ত?
মানব বাবুঃ (প্রচণ্ড জোরে হেঁসে) এই ডায়েরীটা আমি ই কিনেছিলাম রে, পাড়ার দোকান থেকে। ২০ টাকা দাম নিয়েছিল। কিন্তু সত্যি ই কি অভিশপ্ত ডায়েরী বলে কিছু আছে? জমিদারবাড়ির অভিশাপ কি ভুয়ো? এর উত্তর তো অভিশপ্ত ডায়েরী শেষ হলেই পাবো। আপাতত ডায়েরীর গল্প বলার দায়িত্ব আমি নিলাম। দেখ কেমন একের পর এক টুইস্ট দি।
কোনরকমে দুহাত দিয়ে দরজাটা ঠেলে বাইরে বেরিয়ে যায় সাইদুল। দরজার বাইরেই রাজু, মুখে সেই বিশ্রী রকম হাঁসিটা। একবার রাজুর দিকে তাকায় সাইদুল, কিন্তু পারেনা সেই বিজয়ীর উল্লাস মেনে নিতে। মাথা নিচু করে পাশ কাটিয়ে এগিয়ে চলে সাইদুল।
রাজুঃ শোন সাইদুল, তুই আমায় ভুল ভেবেছিস। প্লিস যাসনা আমার কথাটা মন দিয়ে শোন তুই।
কোনও উত্তর দেয়না সাইদুল, চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকে।
রাজুঃ তোকে কখনো বলিনি। কিন্তু এটা সত্যি সাইকেল নিয়ে যতবার রাস্তায় রূপসার সাথে আমি মুখোমুখি হয়েছি, রূপসা ফ্যালফ্যাল করে আমার দিকে তাকিয়ে থাকতো। আমি জানতাম ও কি চায়। আমি কমবছর হলনা মেয়ে চড়াচ্ছি। আমি মেয়েদের...
রাজুর কথা সম্পূর্ণ হয়না, সাইদুল ফুঁপিয়ে ওঠে। রাজু হয়ত আশাও করেনি যে সাইদুল এতটা ভেঙে পড়বে।
সাইদুলঃ কেন এরকম করলি আমার সাথে রাজু। আমি তো রূপসাকে সত্যি ই ভালোবেসে ফেলেছিলাম।
রাজুঃ এক রাতে কি কখনো কেউ কাউকে ভালোবাসে রে! জীবনটা সত্যি ই হিন্দি সিনেমা নয় রে। রোমান্স ওখানেই হয়। আরে পাগল তুই, জীবনে মেয়ে দেখিস নি তাই এতো তাড়াতাড়ি ভেঙে পড়লি। এটা কিছু নয়রে মানুষের ২০ বছরের বিয়ে করা বউ পালিয়ে যায়।
চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকে সাইদুল। চোখ দিয়ে টপটপ করে জল পড়তে থাকে।
রাজুঃ সাইদুল, আমি যতই খারাপ হইনা কেন, আমি কখনো নিজের থেকে রূপসার কাছে যেতাম না। রূপসাই তুই দোকানে চলে যাওয়ার পর আমার ঘরে এসেছিল, আমার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ল...
রাজুর কথা শেষ হওয়ার আগেই সাইদুল পেছনঘুরে প্রচণ্ড জোরে একটা চড় মারে রাজুকে। এর আগেও ওদের মধ্যে বহুবার লড়াই হয়েছে, গায়ের জোরে হয়ত সাইদুলের চেয়ে রাজু অনেক অনেক এগিয়ে। কিন্তু আজ সত্যি ই এই পরাজিত প্রেমিকের কাছে রাজু নেহাত ই বাচ্চা। প্রায় ঝড়ের বেগে নিজের ডান পা টা দিয়ে রাজুর পেটে কষে একটা লাথি মারে সাইদুল। প্রচণ্ড জোরে চিৎকার করে রাজু মাটিতে গোঙাতে শুরু করে। সাইদুল কোথাও যায়না, ওখানেই দাঁড়িয়ে থাকে। কোনরকমে উঠে দাঁড়ায় রাজু। আজ আর নিজের প্রিয় বন্ধুর ওপর হাত ওঠানোর কোনও ইচ্ছেই ওর নেই। প্রায় আকুতি মিনতি করার মত করে সাইদলুকে বলে
রাজুঃ শোন ভাই, আমি এতটাও খারাপ নই। একটা সুন্দরী মেয়ে আমার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়লে আমি কি করতে পারি বল। আমিও তো মানুষ রে। আমারও শরীরে উত্তেজনা রয়েছে। তুই যাসনা সাইদুল। আমার কথাটা শোন। আমি তোকে কাল রাতেই বোঝাতে চেয়েছিলাম যে এই সম্পর্ক হয়না। তুই একটা বস্তির ছেলে আর ও ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের ছাত্রী। হয়না সাইদুল এটা। এর আগে একবার ও কোনও মেয়ের সাথে সম্পর্কে জড়ালে হয়ত তোর এতটা কষ্ট হতনা। আমার কথা শোন সাইদুল। আয় আজ দুজনে মিলে...
রাজুর পুরো কথা সাইদুল শুনেছিল কিনা জানা নেই। কারন তার আগেই সাইদুল হনহন করে হাঁটতে শুরু করে দিয়েছিল। ওর গন্তব্য কোথায়? কোথায় আবার এই সময় বস্তির আর ১০ টা ছেলে যেখানে যায় সেখানেই। বস্তির স্বর্গ অর্থাৎ চুল্লুখানা এখন ওটাই তো সাইদুলের ঠিকানা।
সেই বিখ্যাত রিংটোনের সাথে সুবীর বাবুর ফোন আবার বেজে ওঠে। গল্পের মাঝে এই ধরনের বাধা সত্যি ই অস্বস্তিকর। অপ্রিয় এই গল্পের মধ্যে সুবীর বাবুও প্রায় নিমজ্জিত হয়ে পড়েছিলেন। নিজের ই এক মেয়ের এই লম্পট কীর্তি শুনে ঠিক কত জল ওনার চোখ দিয়ে গড়িয়ে পড়েছে তার কোনও ইয়ত্তা নেই। হাতে মোবাইলটা নিয়ে দেখেন “রূপসা” হয়ত তীব্র এক যন্ত্রণা ও ঘৃণায় ওনার গা গুলিয়ে উঠেছিল। যাই হোক সুবীর বাবু বহুকষ্টে ফোনটা রিসিভ করেন। হ্যালো বলার মত মানসিক অবস্থায় উনি ছিলেন না। তাই ওপাশ থেকে প্রথমে রূপসার ই গলাটা ভেসে আসে। গলাটা প্রচণ্ড ধরা, অনেকক্ষণ ধরে কান্নাকাটি করলে গলার অবস্থা যেমন হয় ঠিক তেমন।
রূপসাঃ হ্যালো, বাবা প্লিস আমার কথাটা মন দিয়ে শোন। তোমার পাশে কে আছে এখন? আমি কারুর একটা গলা পেয়েছিলাম ফোন করার সময়। কে আছে বাবা? বাবা প্লিস উত্তর দাও। কি হোল বাবা উত্তর দাও।
কোনও উত্তর দিতে পারেন না সুবীর বাবু। ডায়েরীর অভিশাপ যে এভাবে ওনার জীবনে আসবে তা উনি ভাবতেও পারেননি। দুই মেয়েকে ছোট থেকে নীতি আদর্শের শিক্ষা দিয়েছেন উনি আর সেই মেয়েরাই কিনা... ভাবতেও পারেননা সুবীর বাবু, কথা বলা তো অনেক দুরের ব্যাপার।
রূপসাঃ বাবা, মন দিয়ে আমার কথা শোন। মা, পাগল হয়ে গেছে। উল্টোপাল্টা কথা বলছে। আমার কিছুই মাথায় ঢুকছেনা। এই কথাগুলো মা যে কি করে বলে ছি ছি... বাবা আমার আর তিলোত্তমার লজ্জায় মাথা হেঁট হয়ে যাচ্ছে। তিলোত্তমা প্রচণ্ড ভেঙে পড়েছে।
ওপাশ থেকে ফিসফিস করে বলে ওঠে সত্য বাবু। “মালতী ভয় পেয়েছে সুবীর বাবু। এবার মেয়েদের দিয়ে নিজেকে বাঁচাতে চাইছে”
সুবীর বাবুর মাথায় হয়ত সত্য বাবু বা রূপসা কারুর ই কোনও কথাই আর প্রবেশ করছিল না।
রূপসাঃ বাবা, তুমি কি বুঝতে পারছ কেউ একটা চাইছে তোমায় আর মাকে আলাদা করে দিতে, বাবা বিশাল বড় একটা চক্রান্ত হচ্ছে। হ্যালো হ্যালো হ্যালো বাবা, তুমি উত্তর দাও বাবা।
বেশ কিছুক্ষন দুপাশ ই নিস্তব্ধ। একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বলে ওঠেন সুবীর বাবু।
সুবীর বাবুঃ তোদের বাবা মারা গেছে। আর বাবা বলে ডাকিস না আমায়।
ফোনটা কেটে দেন সুবীর বাবু। দুচোখ বেয়ে তখন ও জল পড়ে চলেছে ওনার।
সত্য বাবুঃ সুবীর বাবু শান্ত হন। ডায়েরীর নাম হয়ত অভিশপ্ত ডায়েরী। কিন্তু এটা মানুষের জীবনের না জানা সত্যগুলোকেই শুধু প্রকাশ করে। ডায়েরীর জন্য অভিশাপ নেমে আসেনা। যে সাংসারিক কলহের মুখ আপনি দেখলেন তা হয়ত আজ নয় তো কাল হওয়ার ই ছিল। আমাকে গল্পটা শেষ করতে দিন দেখবেন সবকিছু আপনি নিজে থেকেই বুঝে যাবেন।
সুবীর বাবুঃ হ্যাঁ সত্য বাবু, আপনি আপনার গল্প চালিয়ে যান। আমিও নিজের জীবনের অন্তরালের সত্যকে জানতে চাই।
সত্য বাবুঃ দেশী মদের সত্যি ই দম আছে। প্রতিটা বিন্দুতে যেন মাদকতার ছোঁয়া। এক একটা বিন্দু সাইদুলের পাকস্থলিতে যায় ও তার সাথে সাথে কাম, অপমান, লজ্জা জীবনের প্রতিটি রিপুই ভীষণভাবে উত্তেজিত হতে থাকে। বারবার চোখের সামনে ভেসে ওঠে রূপসার ঘাড়ের সেই ক্ষতটা। আর সেই ক্ষতর সৃষ্টিকর্তা নিজের অপকর্মের কাহিনী বারবার করে সাইদুলের চোখের সামনে মরীচিকার মত ফুটিয়ে তোলে। ঝাপসা হয়ে ওঠে সাইদুলের চোখ। চোখের সামনেই এক হিংস্র বাঘ ও ততোধিক হিংস্র এক বাঘিনী। নিজেদের মধ্যে কামড়া কামড়ি করে একে অপরকে নিয়ন্ত্রন করার অব্যর্থ প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছে। একি সেই রূপসা যার দুচোখে একদিন সাইদুল হারিয়ে যেতে চেয়েছিল, যার কাঁধে মাথা রেখে একটিবার বলতে চেয়েছিল “রূপসা আমিও হয়ত জীবনে কিছু করতে পারতাম। যদি একটু অর্থ থাকতো আর আব্বুটা এতো কমবয়সে মারা না যেত” হয়ত কাঁদতে কাঁদতে বলতে চেয়েছিল “রূপসা অনেক অনেক ভুল করেছি জীবনে, জানিনা এর শাস্তি কবে পাবো। কিন্তু আমি তোমার সাথে সবভুলে নতুন এক পৃথিবী গড়তে চাই। রূপসা বস্তির এই নোংরা অন্ধকারের জীবন থেকে আমার মুক্তি চাই”
না এই কথাগুলো আর বলা হলনা সাইদুলের। আদর্শবান বাবার মেধাবী কন্যা সমস্ত স্বপ্নকে ভেঙে চুরমার করে দিয়ে ওকে শেষ করে দিলো। চোখের সামনে দেখতে পায় সাইদুল এক নতুন কামুকি রূপসাকে। বিছানার ওপর বসে, পায়ের সাড়ি সায়া প্রায় ঠাই পেরিয়ে জাঙের কাছাকাছি, বুকের ওপর নীল রঙের একটা ফিনফিনে সাড়ি, লম্বা সূচালো বোঁটাগুলো সুস্পষ্টভাবে দৃশ্যমান। ঠোঁটে ঘন লাল রঙের লিপস্টিক। কেউ হয়ত নিজের নোংরা আঙুল দিয়ে ওগুলোকে ঘেঁটে দিয়েছে বেশ করে। কামনার দংশনে মাঝেমধ্যেই লকলকে জিভটা দুই ঠোঁটের ফাঁক দিয়ে বেরিয়ে আসছে। নাকের উত্তপ্ত নিঃশ্বাস কিছুটা আবেশক্রিয়ার মত নিজের বিপরীত লিঙ্গকে আকর্ষণ করে চলেছে। দরজার ঠিক কাছে দাঁড়িয়ে খালি গায়ে ওই ছেলেটি কে? ও তো রাজু। হয়ত ওই সুপুরুষটির জন্যই অপেক্ষা করে আছে রূপসা।
আর পারেনা সাইদুল। প্রচণ্ডভাবে গা টা গুলিয়ে ওঠে। চুল্লুখানার জানলার কাছে গিয়ে কোনরকমে মুখটা বাড়িয়ে বের করে দেয় সমস্ত বিষ। আসলে মদ নয় বাইরে এলো মানুষ হয়ে জন্মানোর তীব্র দ্বেষ ও যন্ত্রণা। কেউ একজন বলে ওঠে “আরে ওটা সাইদুল না, শালা ও তো মদ খেত না, কি হয়েছে বল তো?” ফিসফিস করে অপরজন উত্তর দেয় “আরে একটা মাগীকে কোথা থেকে নিয়ে এসেছে। বিকেলে দেখলাম ও বাড়িতে নেই আর রাজু ঢুকছে” সবাই প্রচণ্ড জোরে হেঁসে ওঠে। “সে আর বলতে। মদ তো খাবেই রে। শালা ওই হারামি রাজুর নজর যার ওপর পড়ে তাকে কি কখনো রাজু ছাড়ে” প্রচণ্ড জোরে অট্টহাস্যে ফেটে পড়ে ওখানে উপস্থিত সকলে। কোনরকমে টলতে টলতে বাইরে বেরোয় সাইদুল। শরীর মন দুই ই যেন অবশ হয়ে এসেছে। হৃদয়ে আর এক বিন্দু ভালোবাসাও মজুত নেই। মনে মনে পন করে সাইদুল “ঘরে ধুকেই চুলের মুটি ধরে সবার আগে রূপসাকে বার করবে। সোজা টানতে টানতে রাজুর ঘরে নিয়ে গিয়ে ছেড়ে দিয়ে আসবে। ও গরীব, অতো হাইফাই মেয়ে ওর চাইনা। আম্মি একটা সাধারন মেয়ে দেখে ঠিক ই বিয়ে দিয়ে দেবে”
সারা শরীর দিয়ে ঘামের দুর্গন্ধ আর মুখ দিয়ে তীব্র মদের দুর্গন্ধ- এ ওর থেকে ১০ হাত দূরে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষকেও জানান দেয় “ওই দেখ আজ সাইদুল মদ খেয়ে ঘরে ঢুকছে। ওর আম্মির কত বড় বড় কথা ছিল, দেখ কি অবস্থা ওর” দুপাশে তাকায় সাইদুল, সবাই ওর দিকে তাকিয়ে হাসছে। লজ্জায় অপমানে ওর মাথা নিচু হয়ে যায়। মনে মনে বলে ওঠে “সব হয়েছে ওই বেশ্যাটার জন্য। আজ ই ওকে ঘর থেকে তাড়াবো”
বাড়ির কাছাকাছি পৌঁছে যায় সাইদুল। বুকের মধ্যে তখন আগুন জ্বলছে। দরজাটার সামনে দাঁড়িয়ে আগে নিজেকে নিয়ন্ত্রন করে নেয়। মনে মনে পন করে “অনেক হয়েছে ভালোমানুষি আর নয়। এই শেষ। এবার ওই বেশ্যাটাকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বার করব” প্রচণ্ড জোরে দরজায় ধাক্কা দেয় সাইদুল। দরজাটা ভেতর থেকে বন্ধ ছিলনা, শুধুই ভেজানো ছিল। বিকট একটা আওয়াজ হয়ে দরজাটা খুলে যায়। ভেতরের দৃশ্য সাইদুলের ভেতরের সমস্ত রাগ আক্রোশকে শতগুন বাড়িয়ে দিলেও এক অদ্ভুত বিস্ময় ওকে গ্রাস করে।
একটা নীল সাড়ি পড়ে রূপসা। খাটের ওপর চারপাশে ফুল ছড়ানো। মালাগুলো ছিঁড়ে বিছানার ওপর ই পড়ে আছে। হয়ত কিছুক্ষণ আগে এগুলোই রূপসার চুলের খোঁপায় শোভা পাচ্ছিল। আবার সাইদুলের হৃদয়টা ব্যাকুল হয়ে যায়, ঠিক এইভাবেই আজ রাতে ও রূপসার সাথে ফুলশয্যা করতে চেয়েছিল। রূপসাকে নিজের বুকের সমস্ত ভালোবাসা উজাড় করে পাগল করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু এই বাসর শয্যায় ওর কোনও স্থান নেই। ওর জায়গায় রয়েছে রাজু। রূপসার কোমরকে পেছন থেকে এক হাতে জড়িয়ে, ওর মুখকে নিজের দিকে করে ঠোঁটের লিপস্টিক গুলো প্রায় রাবারের মত করে মুছে দিয়ে নিজের মুখে লাগিয়ে নিয়েছে রাজু। দরজাটা খোলার আগের মুহূর্ত অবধি যে রূপসার রসালো ঠোঁটটা রাজুর ই মুখের মধ্যে ছিল তা সাইদুলের বুঝতে কোনও অসুবিধা থাকেনা। সাইদুলকে দেখে কিছুটা ঘাবড়ে যায় রূপসা, কিন্তু সামান্য বিচলিত না হয়ে রাজু বলে ওঠে
রাজুঃ তোর জন্যই দরজাটা বন্ধ করিনি রে। তুই দরজাটা বন্ধ করে চলে আয়। আজ আমাদের তিনজনের ফুলশয্যা।
রাজুর কথায় হয়ত সাইদুল এতটাও রাগ করেনি, যতটা রাগ ওর হয় রাজুর কথার প্রত্যুত্তরে রূপসার ওই অদ্ভুত হাঁসিটায়। অবাক দৃষ্টিতে সাইদুল তাকিয়ে থাকে রূপসার দিকে। রূপসা একবার সাইদুলের দিকে তাকায়, কিন্তু পরক্ষনেই আবার রাজুর ঘাড়ের ওপর নিজের দুহাত ছড়িয়ে দিয়ে ওর মুখের দিকে অগ্রসর হয়। নিজেকে বিশ্বাস করতে পারছিলনা সাইদুল। প্রচণ্ড উত্তেজনা ও তীব্রতার সাথে রাজু ও রূপসা দুজন দুজনকে কিস করতে শুরু করে। এই তীব্রতায় হয়ত মাঝে মধ্যেই রূপসার ঠোঁটটা ফস্কে যাচ্ছিল রাজুর মুখের ভেতর থেকে, কিন্তু রূপসাই আবার স্বেচ্ছায় নিজের ঠোঁট রাজুর মুখের ভেতর ঢুকিয়ে দেয়। দুজনের ই মুখের ভেতর থেকে উম উম্ম করে শব্দ বাইরে বেরিয়ে আসতে শুরু হয়। রাজু দুহাত দিয়ে রূপসাকে বিছানার ওপর ফেলে দেয়। প্রায় ঝাঁপিয়ে পড়ে ওর ওপর, কাঁধের দুদিকে হাত দিয়ে নীল ব্লাউজটায় দুপাশ থেকে একটা চাপ দেয়। সাইদুলের ছখেরে ই সামনে ওর প্রেয়সীর ব্লাউজটা দুপাশ থেকে ছিঁড়ে ফেটে যায়। নিজেকে আর শান্ত রাখতে পারেনা সাইদুল। কিকরেই বা রাখবে। প্রেম তো অনেক আগেই ফুড়ুৎ করে উড়ে গেছে। কিন্তু মাতাল চোখের সামনে যে সুস্বাদু নারীর শরীরটা দেখতে পাচ্ছে তা তো আর অস্বীকার করা যায়না। জিভটা লকলক করে ওঠে সাইদুলের। নিজের অজান্তেই বিড়বিড় করে ওঠে সাইদুল “তুই একা খাবিনা রাজু আমিও খাবো। ওই বেশ্যাটা আমায় অনেক কাঁদিয়েছে, ওকে আমিও খাবো” দ্রুত নিজের জামাটা খুলে ছুঁড়ে ফেলে সাইদুল। রাজু রূপসার গলা থেকে নিজের মুখটা তুলে সাইদুলের দিকে তাকিয়ে হেঁসে ফেলে। দুই ঠোঁটের ফাঁক দিয়ে জিভটা বার করে সাইদুলকে অঙ্গভঙ্গি করে। যেন এটাই বলতে চায় যে “উম হেবি খেতে রে তোর বউকে” রাজুর এই ইঙ্গিতকেও ছাপিয়ে যায় যখন রূপসা পেছন থেকে উঠে এসে জিভটা বার করে রাজুর বুকটা চাঁটতে শুরু করে। সাইদুলের ভেতর থেকে কে একটা বলে ওঠে “জেগে ওঠ সাইদুল। চোখের সামনে যে খাবার পাচ্ছিস তাকে আর ফেরত দিস না”
রুদ্ধশ্বাসে দৌড়ে গিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে সাইদুল.................................
প্রায় সাইক্লোনের বেগে একটা ভারী হাত নেমে আসে, ঠিক সুবীর বাবু আর সত্য বাবুর মাঝে। কিছু বুঝে ওঠার আগেই সত্য বাবুর গালে অন্তত একনাগাড়ে ৪-৫ টা চড়। হুমড়ি খেয়ে মাটিতে পড়ে যান সত্য বাবু। কোনরকমে উঠে দাঁড়িয়ে সামনের দিকে দেখেন। ঠিক যেভাবে কোনও মাছকে জল থেকে ডাঙায় তুললে ছটপট করতে শুরু করে ঠিক সেরকম ই পাগলের মত ছটপট করতে শুরু করে দেয় সত্য বাবু। গলা কাঁপতে শুরু করে, মুখ দিয়ে বিড়বিড় করে কিছু একটা বলার চেষ্টা করছিলেন কিন্তু তা সুবীর বাবুর কান অবধি পৌছায় না। চোখদুটো প্রায় ওপরের দিকে উঠে যায়। হথাত সংজ্ঞাহীন হয়ে মাটিতেই লুটিয়ে পড়েন সত্যবাবু।
“যা শালা মালটা কি টেঁসে গেলো নাকি? শালা এই মালটা পটল তুললে তো সব বিগড়ে যাবে”
চোখের সামনে যেন একটা উচ্চপ্রযুক্তির হলিউড ফিল্ম দেখলেন সুবীরবাবু। কিছুতেই ঘোর কাটিয়ে উঠতে পারছিলেন না। কে যে এই কাণ্ডটা ঘটিয়ে দিলো তাও একবার চোখ তুলে দেখার সাহস হলনা।
“হ্যাঁ রে সুবীর, তোর বাড়িতে দড়ি আছে। মালটাকে ভালো করে দড়ি দিয়ে বাঁধি। এই তো কুয়োর দড়িতে কিন্তু ব্যাপক হবে, আরে এতো শালা তোর আসল গুপ্তধন রে। ভালো করে সামলে রাখ একে”
চোখের সামনে যে মানুষটা সুবীর বাবু দেখলেন তাকে দেখে সত্যি ওনার ও হার্টফেল হওয়ার ই কথা। অ্যাঁ করে ভয়ে প্রচণ্ড জোরে চেঁচিয়ে উঠলেন সুবীর বাবু।
“আরে তুই কাকে ভয় পাচ্ছিস সুবীর? আমি তো তোর বাল্যবন্ধু মানব”
হ্যাঁ করে তাকিয়ে থাকেন সুবীর বাবু।
মানবঃ তুই কবে থেকে ভুতে বিশ্বাস করতে শুরু করলি রে? আচ্ছা বাবা এই দেখ। (সত্য বাবুর মুখটা এক হাতে কিছুটা ওপরে তুলে) আচ্ছা ভুতের ঠোঁট ফেটে কি রক্ত পড়ে?
এতক্ষনে শান্ত হন সুবীর বাবু। “কিন্তু তুই...”
মানবঃ শোন সুবীর, হাতে একদম সময় নেই। একটা বিশাল চক্রান্ত হয়েছে শেষ কয়েকমাস ধরে...
মানব বাবুর কথা শেষ হয়না। তার আগেই সুবীর বাবু কিছুটা উত্তেজিত হয়েই বলে ওঠেন
সুবীর বাবুঃ জানি রে। বর্ণালীর আমি কোনও ক্ষতি করতে চাইনি। ওটা শুধুই একটা ভুল ছিল। কিন্তু তার বদলে তুই আমার যা ক্ষতি করলি...
মানব বাবুঃ বিশ্বাস কর সুবীর আমি তোর কোনও ক্ষতি ই করিনি। করেছে অন্য একজন। বিশাল এক চক্রান্ত হয়েছে তোর সাথে। তুই মাথা ঠাণ্ডা রাখ, যেকোনো সময় পুলিশ বাড়িতে আসবে, তোর হাতে একটাই প্রমান তা হোল সত্য বাবু। আমার কথাগুলো মন দিয়ে শোন তবেই তুই বাঁচবি নয়ত নিজেকে কিছুতেই মুক্ত করতে পারবি না তুই।
সুবীর বাবুর মাথা প্রায় খারাপ হয়ে যাওয়ার অবস্থা। অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে মানব বাবুর দিকে।
সুবীর বাবুঃ তাহলে কি সত্য বাবু শুধু এতো চালাকি করে আমায় মিথ্যে কথা বলে গেলেন। আর আমি সব সত্য ভেবে বিশ্বাস করে গেলাম।
মানব বাবুঃ না সত্য বাবু সব মিথ্যে কথা বলেন নি, অনেকটাই ধ্রুব সত্য। শোন সুবীর তুই নিজেকে শান্ত কর, বিশাল একটা চক্রান্ত হয়েছে তোর সাথে। তোকে আমি ছাড়া কেউ ই এই মায়াজাল থেকে বার করতে পারবে না।
চুপ করে মাথা নিচু করে বসে থাকেন সুবীর বাবু।
মানব বাবুঃ সত্য বাবু তোকে এপ্রিল ফুল বানায়নি সুবীর। ওর গল্পে অধিকাংশই সত্য। কিন্তু তোর মেয়েরা। ছি ছি সুবীর, তুই তো আমার চেয়েও অধম রে। ওই দুটো নিষ্পাপ ফুলের কুঁড়ির সম্বন্ধে এতো নোংরা কথা বাবা হয়ে শুনতে পারলি তুই? ছি ছি, আমার ই লজ্জা করছে। তোর মেয়েরা কোনও অন্যায় করেনি। বিশাল একটা চক্রান্ত হয়েছে তোর সাথে।
মাথা নিচু করে থাকে সুবীর বাবু। বেশ কিছুক্ষন চুপ করে থাকে মানব।
মানব বাবুঃ হ্যাঁ, তুই ভালো মানুষ তাই হয়ত এই ফাঁদগুলো বুঝতে পারিস নি। আসলে আমি তো সত্য বাবুর আসল পরিচয় জানি তাই... হয়ত। যাই হোক, তোর সম্পূর্ণ ব্যাপারটা বিশ্বাস করার একটাই কারন ওই চাওয়ালা। তুই সত্যি ই ভুত দেখেছিস সুবীর। আর তার ওপর একের পর এক টুইস্ট। কখনো বংশী ভিলেন, কখনো বংশী আবার সম্পূর্ণ পালটি খেয়ে হিরো। একের পর এক টুইস্ট, লোকটা যতই বদ হোক, সাইকোলজি সাবজেক্ট টা প্রচণ্ড ভালোই বোঝে।
কিন্তু সুবীর ডায়েরীর আসল টুইস্ট তো এবার থেকে আমি দেবো রে। আজ হোল প্রথম টুইস্ট। এরপর একের পর এক টুইস্ট আসবে আর তোর চোখের সামনে সব পরিস্কার হবে।
সুবীর বাবুঃ ডায়েরীটা কি সত্যি ই অভিশপ্ত?
মানব বাবুঃ (প্রচণ্ড জোরে হেঁসে) এই ডায়েরীটা আমি ই কিনেছিলাম রে, পাড়ার দোকান থেকে। ২০ টাকা দাম নিয়েছিল। কিন্তু সত্যি ই কি অভিশপ্ত ডায়েরী বলে কিছু আছে? জমিদারবাড়ির অভিশাপ কি ভুয়ো? এর উত্তর তো অভিশপ্ত ডায়েরী শেষ হলেই পাবো। আপাতত ডায়েরীর গল্প বলার দায়িত্ব আমি নিলাম। দেখ কেমন একের পর এক টুইস্ট দি।