28-11-2019, 01:43 PM
তনুর ভুরু কুঁচকে এলো, বলল, ‘কাজী? কাজী কি?’ আমি বললাম, ‘মনে করে দেখ কাজীর ঘরে তুই আর কাজী কি করেছিলি?’ তনুর মুখ সাদা, ঠোঁট কাঁপতে লেগেছে। তবু শেষ চেষ্টা করে বলল, ‘কিছুই করি নি। তুই মিথ্যে কথা বলছিস।‘ আমি বললাম, ‘মিথ্যে কথা? তোকে একেকটা সময়ের বিবরন পরিস্কার করে বলে দিতে পারি। কাজীকে দিয়ে কিভাবে তোর মাইতে হাত দেওয়া করিয়েছিস, কিভাবে তোর পা টিপিয়েছিস, কিভাবে কাজীকে দিয়ে তোর গুদ চাটিয়েছিস। সব বলে দিতে পারি।‘ তনু বলল, ‘কাজী তোকে এইগুলো বলেছে?’ আমি বললাম, ‘কাজী কেন বলবে? আমি ওই মাঝের ঘরে থেকে সব দেখেছি। আর সব তুলে রেখেছি আমার মোবাইলে।‘ তনু ছোঁ মেরে আমার মোবাইল তুলে নিল। আমি বলে উঠলাম, ‘উহু, মোবাইলে এখন নেই, আমার ল্যাপটপে ওঠানো সব। আর যদি বেশি পাঁয়তারা করিস পার্থকে, স্নেহাকে সব দেখিয়ে দেবো। আরও বেশি হলে EXBII forum এ আপলোড করে দেবো। পুরো দুনিয়া দেখবে তোর কীর্তি। শুধু বলে দে কবে পাঠাবি বর্ষার কাছে আমার ছবিগুলো।‘ তনুকে দেখে কেমন অসহায় মনে হতে লাগলো। ও যদি জানতো আমার হাতে কিছুই নেই। তনু উঠে দাঁড়ালো। আমার দিকে তাকিয়ে শুধু বলতে পারলো, ‘ঠিক আছে দীপ তুই যেটা ভালো বুঝবি সেটাই করবি। আমার মনে হয় আমাদের সম্পর্ক না থাকাই ভালো।‘ তনুর ঠোঁট কাঁপছে। ও চলতে লাগলো, দেখে মনে হচ্ছে হয়তো পরে যাবে। আমি বললাম, ‘তোকে কি বাড়ী ছেড়ে আসবো? তুই তো কাঁপছিস?’ তনু আমার দিকে না তাকিয়ে বলল, ‘না আমি ঠিক আছি। তোকে কষ্ট করতে হবে না। আমি চলে যেতে পারবো।‘ আমি আবার একটু কাঁটা ঘায়ে নুনের ছিঁটে দিয়ে বললাম, ‘পারলে ২৫ হাজার টাকা ফেরত দিস।‘ আমি ঘরের বাইরে যাই নি। ধরাম করে দরজা বন্ধ হবার শব্দ পেলাম। আস্তে করে ঘরের বাইরে বেড়িয়ে দরজা বন্ধ করে আয়েশ করে একটা সিগারেট ধরালাম। নিজেকে কোনদিন এতো স্বাধীন মনে হয় নি। আজ যেন আমার পাখা মেলে উড়তে ইচ্ছে করছে। আমি চট করে তনুর ফোনে ফোন করলাম। যথারীতি স্নেহা তুলে বলল, ‘কি গো কি হোল? বললে মাকে?’ আমি বললাম, ‘মাকে বলেছিলাম। তোর মা রাজি হয় নি। একটা কথা বলে দিই তোকে, তোর মায়ের সাথে এ ব্যাপারে আমার তুমুল হয়ে গেছে। তোর মা বলেছে আমার সাথে আর কোন সম্পর্ক রাখবে না। খুব আপসেট তোর মা। তুই কিন্তু ভুলেও জিজ্ঞেস করিস না আমার কথা। ঠিক আছে?’ স্নেহা বলল, ‘তাহলে?’ আমি বললাম, ‘তাহলে মাহলে কিছু না। এখন ফোন রাখ। আর কল লগে গিয়ে নাম্বার ডিলিট করে দে। রাখলাম আমি।‘ আমি ফোন রেখে দিলাম। খাবার খেতে বসলাম। অনেক শান্তিতে খাবো আজ। শান্তিতে ঘুমবো। শুধু মনটা খারাপ লাগবে স্নেহার জন্য। কিছু পেতে গেলে কিছু তো ছাড়তে হবে। সেটা ভেবে আমি খেতে লাগলাম।তারপর থেকে আমি পার্থকে খুব ক্লোসলি ফলো করতে লাগলাম ওর ভিতর কি আছে দেখতে। কিন্তু সেরকম কিছু দেখতে পেলাম না। যথারীতি আমাদের মধ্যে কথা খুব কমই হয়। সাইট প্রায় শেষের মুখে। আরেকটা কাজ পাবার কথা চলছে। ক্লায়েন্ট আমাদের কাজে খুশি হয়ে ওই কাজটাও দেবার কথা ভাবছে। কিন্তু তাতে সময় লাগবে। আমার এখন স্টাফ কমাতে হবে। স্টাফের কথা মনে করতেই পার্থর নাম মনে এসে গেল। কিন্তু তনুর সাথে সেদিনের ব্যাপারের পর বলতেও পারছি না যে পার্থকে তুলে নিতে। তনু ভাববে আমিই জোর করে ওকে তুলে দিয়েছি। কি যে করি, এ এক আচ্ছা ফ্যাসাদে পরা গেল। কিছুই মনের মধ্যে আসছে না। প্রায় এক মাস কেটে গেছে সেই ঘটনার পর। স্নেহার সাথে তো কথাই হয় না। তনু ফোন করে না। আমার যে ওদের ব্যাপার মনে হয় তাও নয়। সেদিন মেল খুলে চমকে উঠলাম পার্থর মেল দেখে। এমডিকে, ডাইরেক্টরকে মেল করেছে কপি আমাকে দিয়েছে। রেজিগনেশন। পার্থ রেজিগনেশন লেটার দিয়েছে। ইমিডিয়েট এফেক্ট। পড়ে দেখলাম পার্সোনাল কারন দেখিয়েছে। ভাবতে লাগলাম কেন দিল। আমি ডেকে পাঠালাম ওকে অফিসে। পার্থ এলো, শান্ত হয়ে উলটো দিকের চেয়ারে বসল। আমার দিকে তাকাতে আমি জিজ্ঞেস করলাম, ‘এটা আবার কি করলি? কিসের জন্য?’ পার্থ একটা সিগারেট আমাকে অফার করে একটা নিজে ধরালো। বলল, ‘নাহ, আর এখানে ভালো লাগছে না।‘ আমি জিজ্ঞেস করলাম, ‘কোন স্পেসিফিক কারন?’ পার্থ মাথা নাড়াল, বলল, ‘না না কোন কারন নেই। তোকে পার্সোনালি একটা কথা বলি দীপ। তনু চাইছে না আমি এই চাকরি আর কন্টিনিউ করি। ও চাইছে আমি যেন অন্য কোথাও চাকরি খুঁজি।‘ আমি বললাম, ‘পেয়েছিস কোথাও?’ পার্থ আবার মাথা নাড়াল, বলল, ‘না পাই নি। তবে পেয়ে যাবো ঠিক। সে নিয়ে ভাবছি না।‘ আমি উত্তর করলাম, ‘পেয়ে যাবি মানে? কোন একটা চাকরি পেয়ে তো এটা ছাড়বি? সংসার আছে, মেয়ে আছে। কি খাবি?’ পার্থ শান্ত হয়ে জবাব দিলো, ‘কিন্তু শান্তি তো পাবো। তনুর কোথাও কোন একটা অসুবিধে আছে যেটা ও খুলে বলছে না। জিজ্ঞেস করলেই বলে চলো আর ভালো লাগছে না এক কোম্পানি। এখানে তো মিশি বলতে তোরই সাথে তাও সেই রাতের ঘটনার পর থেকে সেটাও কমে গেছে। তুই আমার বন্ধু ছিলি, আছিস এবং থাকবি। তুই আমাকে কি সাজেস্ট করিস অশান্তি না চলে যাওয়া। যতদিন না এই চাকরি ছেড়ে যাবো ততদিন তনুর গঞ্জনা শুনে যেতে হবে। তোকে লুকিয়ে লাভ নেই দীপ যে তনুর কিছু কিছু ঘটনা আমিও মেনে নিতে পারি নি। কিন্তু বৌ, একসাথে জীবন কাটাবার শপথ নিয়ে ছিলাম সেটা তো আর অস্বীকার করতে পারি না। তাই ভালো চলেই যাওয়া। যাবো, জানি না আদৌ যেতে পারবো কিনা, কিন্তু চলে আমাকে যেতে হবেই।‘ আমি ওকে বললাম, ‘পার্থ আমার মনে হয় একটু বেশি বাচালতা হয়ে যাচ্ছে। তনুর মতই সব এটাই ভেবে নিচ্ছিস কেন? কোন কিছু হলে ও কি তোকে খাওয়াবে না স্নেহাকে ও দেখতে পারবে? ও কেন এতো ছেলেমানুষি করছে। ওকে বোঝা।‘ পার্থ একমুখ ধোঁওয়া ছেড়ে বলল, ‘তুই হয়তো কয়েক বছর ওর সাথে মিশছিস, কিন্তু আমি ওকে হাড়ে হাড়ে যে চিনি। ও যেটা ভেবেছে সেটাই ও করবে। ওর জন্য হয়তো মেয়েটাও ঠিক মত মানুষ হতে পারবে না। জানি না ওর মনে কি আছে। কিন্তু ওই যে আছে না একটা কথা কপালে নাইকো ঘি ঠকঠকালে হবে কি। আমার কপালে সেটাই নেই। ওকে ঠিক বুঝতে পারলাম না জানিস। অধরাই রয়ে গেল তনু।‘ আমি উত্তর দিলাম, ‘তোর দোষ এটা। তুই ঠিক মত ওকে চালাতে পারিস নি। ও যেটা বলেছে সেটাই মেনে নিয়েছিস। তোকে শাসন করা উচিত ছিল। সেদিন রাত আমার কাছে একটা ভয়াবহ রাত হয়ে থাকবে। কিন্তু আমি জানি তুই যদি ওকে এতোটা ছাড় না দিতিস তাহলে এটা ও করতে পারতো না।‘ পার্থ হাত উল্টে বলল, ‘কি করবো বল। বাপ মায়ের একমাত্র মেয়ে। ভীষণ আদুরে ছিল আর জেদি। ভেবেছিলাম সংসারের সুখ আনতে যদি ওকে প্রাধান্য দিই তাহলে আখেরে হয়তো ভালোই হবে। ওর জন্য আমি বাইরে গেছি আমার যাওয়ার ইচ্ছে ছিল না।