25-11-2019, 07:25 AM
মাসির বিয়ে হয়েছিল এই মাত্র বছর-দুয়েক আগে, এমনই এক ফাগুন মাসে। সমুর দাদামশাই গৌরচন্দ্র পটুয়া আগে একজন সাধারণ কুমোড় ছিলেন। কিন্তু রাজনৈতিক পট-পরিবর্তনের পর তাঁর ক্রমে ক্ষমতা, বিত্ত সবই বাড়ে। তাছাড়া বড়োমেয়ে কুসুমকলির বিয়ে তিনি দিয়ে দিয়েছিলেন একদম বালিকা অবস্থায়, ক্লাস এইটে পড়বার সময়। কিন্তু কপাল ফেরবার পর, ছোটোমেয়ে ময়নাকে তিনি লেখাপড়া করান যতদূর সম্ভব। মাসির যদিও লেখাপড়ায় বিশেষকিছু মাথা ছিল না; সে কোনোমতে আর্টসে গ্র্যাজুয়েশন পাশ করে, নার্সিং-এর ট্রেনিং-এ ভর্তি হয়। এই নার্সিং-ট্রেনিং-এর সূত্রে একমাস দিল্লি গিয়ে, মাসি ইন্ডিয়ান-আর্মি-তে সদ্য জয়েন করা সৈনিক রাকেশ চতুর্বেদি-র প্রেমে পড়ে। একদিকে নন্-বেঙ্গলী ও অন্যদিকে আর্মি-ম্যান জামাইকে দাদামশায়ের একেবারেই পছন্দ ছিল না। কিন্তু আদোরের ছোটোমেয়ের জেদের কাছে তিনি হার মানেন। তাড়াহুড়ো করে রাকেশ আর ময়নার বিয়ে হয়ে যায়। বিয়ের পর-পরই রাকেশ বউ নিয়ে সাতজেলিয়ায় শ্বশুরবাড়িতে আসে। রাকেশ ছিল প্রবল হুল্লোড়বাজ মানুষ। ঠিকঠাক বন্ধুসঙ্গ পেলে তার নেশা মাত্রাছাড়া হয়ে যেত। এমন করেই একদিন গ্রামের ছেলেদের হুজুগে সে একটা ছিপ-নৌকায় বেড়িয়ে পড়ল বাঘ দেখতে। গৌরচন্দ্র সেদিন বাড়ি ছিলেন না; ফলে কারুর বাঁধা রাকেশ মানল না। এক-পেটি আর-এস-এর বোতল নৌকা বোঝাই করে, সে সদলবলে নৌকো ভাসাল হইহই করে। ময়না অনেক কেঁদেও তাকে থামাতে পরল না। তারপর তিনদিন-তিনরাত তারা বেপাত্তা। অবশেষে গৌরচন্দ্রের উদ্যোগে কোস্টাল-পুলিশের একটা স্পেশাল-ফোর্স অনেক খোঁজাখুঁজির পর, তাদের কুমীরমারির একটা প্রত্যন্ত জঙ্গুলে খাঁড়ি থেকে উদ্ধার করে। চারজনের মধ্যে দু’জন স্পট-ডেড, আর বাকি দু’জন মারাত্মকভাবে আহত। এই মৃতদের মধ্যে অন্যতম একজন ছিল ভারতীয় সৈনিক রাকেশ চতুর্বেদী; যার কাঁধ থেকে অনেকখানি মাংস খেয়ে গিয়েছিল একটি পূর্ণবয়স্ক মাদি বাঘ!...