24-11-2019, 09:56 PM
ঘটাং করে একটা শব্দ হল কাছেই। ঘাড় ঘুরিয়ে কলতলার দিকে তাকাল সমু। মূল মাটির এই বাড়িটা থেকে কলতলাটা উঠোন দিয়ে কয়েক-পা এগিয়ে বামদিকে। সমু দেখল, মাসি এসে কলতলার সামনে নীচু হয়ে কাচা-ভর্তি সিলভারের-বালতিটা রাখল। তারপর উঠোনের তারে মেলতে লাগল ভিজে জামা-কাপড়গুলো। মাসি নীচু হচ্ছে, উঁচু হচ্ছে… আর মাসির নধর বুক-দুটো… চেষ্টা করেও চোখ সরাতে পারল না সমু। ওর শরীরটা নিজের অজান্তেই উত্তপ্ত হয়ে উঠল আবার। একটা বাঁধ-ভাঙা কী যেন অবয়বহীন আবেগ, ওই চোরা-ঘূর্ণির রায়মঙ্গলের জলে ক্রমশ তলিয়ে নিয়ে যেতে চাইল সমুকে!...
সমুর ভালোনাম সম্বিৎ তাঁতি। সে পড়ত মানিকতলার একটা সরকারী-সাহায্যপ্রাপ্ত মাধ্যমিক কলেজে ক্লাস-এইটে। ক্লাসে বরাবরই প্রথম পাঁচজনের মধ্যে থাকত সমু। এই নিয়ে তার বাবার কম গর্ব ছিল না। সমুর বাবা বাপ্পাদার গ্যারেজে মোটোর-মেকানিকের কাজ করতেন। মা দু-বাড়িতে রান্নার কাজ। বাবা বিয়ের পর, কাজের খোঁজে গ্রাম থেকে কলকাতায় চলে আসেন। সমুর জন্ম থেকে বেড়ে ওঠা, তাই সবই এই ছ-নম্বর বস্তির ভাড়া ঘরটাতেই।… সেদিন একটু ঘুষ-ঘুষে জ্বর আসায় বাবা আর কাজে বেরোননি। মাও রান্নার কাজ সেরে ফিরে এসেছিল দুপুর বারোটা নাগাদ। বস্তির অন্য একটা ঘরে যখন আসন্ন ভোটের জন্য জমা করে রাখা পেটোগুলো একসঙ্গে ফাটে, তখন দুপুর দেড়টা মতো হবে; মা-বাবা তখন দু’জনে একসঙ্গে খেতে বসেছিলেন।…
সমুর মায়ের নাম ছিল কুসুমকলি। আর তার মায়ের থেকে প্রায় ন’বছরের ছোটো এই মসির নাম ময়নামতি। মাসি মায়ের থেকেও বেশী লম্বা আর সুন্দরী। গায়ের রঙ চন্দন-বাটার মতো ফর্সা। টিকোলো নাক, ঢেউ খেলানো পিঠ পর্যন্ত চুল, সুন্দর লম্বাটে মুখশ্রী এবং পাঁচ-ছয় হাইটের মধ্যেই মাসির শরীরের সমস্ত খাঁজ-ভাঁজ একদম যাকে বলে পারফেক্ট-ভাবে সজ্জিত!... কিন্তু মাসির জীবনও বহু চড়াই-উৎরাই পেড়িয়ে এখন এই বিজন-দ্বীপে এসে থেমেছে।…
এই পাড়াটার এমন অদ্ভুদ নামকরণের কারণ, এই গ্রামে কেবল কয়েকঘর বিধবাই বাস করে। আরও স্পষ্ট করে বললে, যে-সব হতভাগিনীর স্বামী অকালে বাঘের পেটে গেছে, এই অরণ্য-প্রদেশের কু-সংস্কারে তারা অপয়া। তাই তাদের একরকম নির্বাসন দেওয়া হয়েছে এই দ্বীপে।... অঞ্চলের পুরোনো মানুষরা অবশ্য বলে থাকেন, অনেকদিন আগে এক গোরা সাহেব এই জঙ্গলে বাঘের পেটে যায়। সাহেব শিকারী ছিল; প্রায়সই এ তল্লাটে আসত। তখনই এক দেশী মাগীর সঙ্গে সাহেবের খুব আশনাই হয়। সাহেব ম’লে গ্রামের লোকেরা সেই জাত খোওয়ানো হতভাগিনীকে প্রথম এক-ঘরে করে এই দ্বীপে নির্বাসন দিয়েছিল। সাহেবের না বিয়ে করা বিধবা হলেও, সেই স্ত্রীলোকটির স্মৃতিতেই ‘বিধবা’-র ইংরেজি ‘উইডো’ নামটা এই দ্বীপের সঙ্গে জড়িয়ে গেছে।...