23-11-2019, 08:54 PM
কলকল করে বয়ে চলেছে রায়মঙ্গল, এই হাত-বিশেক দূরে, নদী-বাঁধের উঁচু আল-পথের ওপাড়ে। এখন মাঝ-ফাল্গুনের অবসন্ন দুপুর। দূরে-দূরে গাছগাছালির ফাঁকে এক-টানা ডেকে চলেছে বিরহী কোকিল। দুপুরের রোদটায় কেমন একটা ঝিম-ধরানো নেশা। সেই নেশাতেই বুঝি মাতাল হয়ে, আমগাছটার বোলে-বোলে উড়ে বেড়াচ্ছে মৌমাছির দল।…
চুপ করে মাটির দাওয়ায়, দেওয়ালে পিঠ দিয়ে বসেছিল সমু। প্রতিদিনই দুপুর-বিকেলে এমন একটানা নিঃশব্দ-নিঃসঙ্গ প্রকৃতির দিকে একা-একা চেয়ে বসে থাকে ও। কারও সঙ্গে কথা বলে না, উঠে কোথাও বেড়াতেও যায় না এদিক-ওদিক। দিনের-পর-দিন এমন করেই নীরবে একা বসে থাকে ও।
কলকাতায় থাকলে, এখন ও ইকলেজে। পড়ছে ক্লাস নাইনের মাঝামাঝি। কিন্তু… সে-সব সোজা হিসেব ওলোট-পালোট হয়ে গেছে ছ-মাস আগেই।… সেদিনও সমু আর পাঁচটা দিনের মতো ইকলেজে গিয়েছিল। কিন্তু হঠাৎ টিফিনের পর পুলিশ তাকে কলেজ থেকে অসময়ে ফেরত নিয়ে যেতে আসে। অবাক সমু ছ-নম্বর বস্তিতে নিজেদের ঘর পর্যন্ত চিনে আর ফিরতে পরেনি সেদিন। অর্ধেক বস্তিটাই ততক্ষণে পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছে!... মর্গ থেকে রিলিজ হওয়া যে-দুটো পোড়া, দলা পাকানো শরীরকে তারপর নিয়ম মেনে মুখাগ্নি করেছিল সে, পুলিশে না বলে দিলে ও চিনতেই পারত না, এই দুটো পোড়া-লাশ ওর মা আর বাবার!...
তারপর থেকেই সমু এখানে চলে এসেছে।… এই গ্রামটার নাম ‘উইডো-পাড়া’। গ্রাম মানে, সুন্দরবন লাগোয়া গোসাবা ব্লকের মধ্যে এটা একটা ক্ষুদ্র ব-দ্বীপ। এই দ্বীপটার বয়স ষাট-সত্তর বছরের বেশী নয়। রায়মঙ্গল আর ঠাকুরাণীর জলধারা দ্বীপটাকে অন্যদিকের সাতজেলিয়া আর মোল্লাখালি-র থেকে বিচ্ছিন্ন করেছে। সাতজেলিয়া আর মোল্লাখালি বর্দ্ধিষ্ণু গ্রাম। দ্বীপ-দুটো আয়তনেও অনেক বড়ো। ওখানে কলেজ, স্বাস্থ্যকেন্দ্র, বাজার, ফেরিঘাট সবই আছে। তাই এই উইডো-পাড়া থেকে যে-কোনো প্রয়োজনেই নৌকো ভাসাতে হয় সাতজেলিয়া কিম্বা মোল্লাখালি-র দিকে। এখানে ঘরে-ঘরে সকলের নৌকা আছে। কারণ এটা কলকাতা শহর নয়। এখানের মূল পরিবহন-ব্যবস্থাই হল জল-যান। এই জল-প্রদেশে সাইকেল-বাইকের মতোই নারী-পুরুষ সকলেই তাই নৌকা চালাতে পারে।… উইডো-পাড়া দ্বীপটা অন্য দুটো আপাত স্বচ্ছল ও জনপূর্ণ বড়ো দ্বীপের থেকে বেশ খানিকটা দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থিত। এই দ্বীপের পূবদিকে রায়মঙ্গলের ওপাড়ে যে ঘন সবুজ দ্বীপের রেখাটা মাথা উঁচু করে রয়েছে, ওটাই ‘মরণঝাঁপি’। ওখানে শুধুই জঙ্গল। ওই জঙ্গলেই বাস বনের রাজার! মাঝে-মাঝে নিস্তব্ধ মাঝরাতে তাঁর সেই চাপা গর্জন ভেসে আসে এপাড়েও!...
চুপ করে মাটির দাওয়ায়, দেওয়ালে পিঠ দিয়ে বসেছিল সমু। প্রতিদিনই দুপুর-বিকেলে এমন একটানা নিঃশব্দ-নিঃসঙ্গ প্রকৃতির দিকে একা-একা চেয়ে বসে থাকে ও। কারও সঙ্গে কথা বলে না, উঠে কোথাও বেড়াতেও যায় না এদিক-ওদিক। দিনের-পর-দিন এমন করেই নীরবে একা বসে থাকে ও।
কলকাতায় থাকলে, এখন ও ইকলেজে। পড়ছে ক্লাস নাইনের মাঝামাঝি। কিন্তু… সে-সব সোজা হিসেব ওলোট-পালোট হয়ে গেছে ছ-মাস আগেই।… সেদিনও সমু আর পাঁচটা দিনের মতো ইকলেজে গিয়েছিল। কিন্তু হঠাৎ টিফিনের পর পুলিশ তাকে কলেজ থেকে অসময়ে ফেরত নিয়ে যেতে আসে। অবাক সমু ছ-নম্বর বস্তিতে নিজেদের ঘর পর্যন্ত চিনে আর ফিরতে পরেনি সেদিন। অর্ধেক বস্তিটাই ততক্ষণে পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছে!... মর্গ থেকে রিলিজ হওয়া যে-দুটো পোড়া, দলা পাকানো শরীরকে তারপর নিয়ম মেনে মুখাগ্নি করেছিল সে, পুলিশে না বলে দিলে ও চিনতেই পারত না, এই দুটো পোড়া-লাশ ওর মা আর বাবার!...
তারপর থেকেই সমু এখানে চলে এসেছে।… এই গ্রামটার নাম ‘উইডো-পাড়া’। গ্রাম মানে, সুন্দরবন লাগোয়া গোসাবা ব্লকের মধ্যে এটা একটা ক্ষুদ্র ব-দ্বীপ। এই দ্বীপটার বয়স ষাট-সত্তর বছরের বেশী নয়। রায়মঙ্গল আর ঠাকুরাণীর জলধারা দ্বীপটাকে অন্যদিকের সাতজেলিয়া আর মোল্লাখালি-র থেকে বিচ্ছিন্ন করেছে। সাতজেলিয়া আর মোল্লাখালি বর্দ্ধিষ্ণু গ্রাম। দ্বীপ-দুটো আয়তনেও অনেক বড়ো। ওখানে কলেজ, স্বাস্থ্যকেন্দ্র, বাজার, ফেরিঘাট সবই আছে। তাই এই উইডো-পাড়া থেকে যে-কোনো প্রয়োজনেই নৌকো ভাসাতে হয় সাতজেলিয়া কিম্বা মোল্লাখালি-র দিকে। এখানে ঘরে-ঘরে সকলের নৌকা আছে। কারণ এটা কলকাতা শহর নয়। এখানের মূল পরিবহন-ব্যবস্থাই হল জল-যান। এই জল-প্রদেশে সাইকেল-বাইকের মতোই নারী-পুরুষ সকলেই তাই নৌকা চালাতে পারে।… উইডো-পাড়া দ্বীপটা অন্য দুটো আপাত স্বচ্ছল ও জনপূর্ণ বড়ো দ্বীপের থেকে বেশ খানিকটা দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থিত। এই দ্বীপের পূবদিকে রায়মঙ্গলের ওপাড়ে যে ঘন সবুজ দ্বীপের রেখাটা মাথা উঁচু করে রয়েছে, ওটাই ‘মরণঝাঁপি’। ওখানে শুধুই জঙ্গল। ওই জঙ্গলেই বাস বনের রাজার! মাঝে-মাঝে নিস্তব্ধ মাঝরাতে তাঁর সেই চাপা গর্জন ভেসে আসে এপাড়েও!...