22-01-2019, 10:46 AM
পর্ব ১০- মানবের পরিনামঃ
সত্য বাবুঃ একি সুবীর বাবু নিজের ই কন্যাকে নিজের স্ত্রী বেশ্যা এটা জানিয়ে দিলেন? আপনি কি উন্মাদ হয়ে পড়েছেন।
সুবীর বাবু কোনও উত্তর ই দেন না, শুধু মাথা নিচু করে বসে থাকেন। সত্য বাবু বুঝতে পারেন সুবীর বাবু ঠিক কতটা ভেঙে পড়েছেন।
সত্য বাবুঃ আসলে যা হয়েছে তার জন্য কেউ দায়ী নয়। আপনাকে তো আগেই বলেছি যা ঘটছে তা শুধুই এই ডায়েরীর অভিশাপের জন্য। যদি ডায়েরিটা আপনার হাতে না...
সুবীর বাবুঃ এই ডায়েরীর অভিশাপ আমার ই ওপরে কেন সত্য বাবু? বর্ণালীর ব্যাপারে যা ঘটেছে তা যে অনিচ্ছাকৃত এতো স্বয়ং ভগবান ও জানেন। আর আমি যে জমিদারবাড়ির দূরসম্পর্কের বংশধর সে ব্যাপারে আমিও নিশ্চিত নই। বাবা দাদুদের থেকে আমি কিছুই শুনিনি কোনোদিন। আর এতোবছর পর এই অভিশাপ আমার ই ওপর এসে কেন পড়ল?
সুবীর বাবুর গলার তীব্রতা দেখে সত্য বাবু খুব সহজেই অনুমান করতে পারেন যে সুবীর বাবুর মানসিক অবস্থা আর গল্প শোনার অনুকুল নয়।
সুবীর বাবুঃ বর্ণালীর ব্যাপারে জানেন, আমাদের এতো পুরনো সব ঘটনা জানেন তারমানে এটাও নিশ্চয়ই জানেন যে আমরা কলকাতার আদি মানুষ নই। আমাদের আদি বাড়ি মেদিনীপুরে। মানব বা বর্ণালীর সাথে পরিচয় হয় কলেজে।
সত্য বাবুঃ আহ সুবীর বাবু আমি সব ই জানি। এগুলো বলে অযথা সময় নষ্ট করার কি দরকার। হ্যাঁ তবে এটা খুব ই গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন যে কেন আপনি ই এই অভিশাপের কবলে পড়লেন। কেন অন্য কেউ নয় মানে আপনার কোনও পূর্বপুরুষ নয়? কিন্তু এটা বললে তো আমার গল্পের সমস্ত আকর্ষণ ই নষ্ট হয়ে যাবে। আর আকর্ষণহীন গল্প আমি লোককে কি করে বলি বলুন তো? আচ্ছা ঠিক আছে আপনার যা মানসিক অবস্থা তাতে আসল রহস্যটা আপনার কাছে ফাঁস না করে কোনও উপায় নেই দেখছি।
আচ্ছা সুবীর বাবু আপনার নিশ্চয়ই মনে আছে আপনি জমিদার বাড়িতে এসেছিলেন রবিবার। ঠিক তার আগেরদিন অর্থাৎ শনিবার রাতে জমিদার বাড়িতে এক ঘটনা ঘটেছিল। যার কথা এই ইহজগতে প্রায় কেউ ই জানেনা।
সুবীর বাবুঃ এ আবার নতুন কি রহস্য? আমার আর ভালো লাগছে না সত্য বাবু। আপনি আমায় মুক্ত করুন আর ডায়েরিটা নিজের সাথেই নিয়ে চলে যান। আমার সত্যি ই ভালো লাগছে না। যা ঘটে গেছে আমার জীবনে তা আমি মেনে নিলাম কিন্তু আর আমার ভালো লাগছে না।
সত্য বাবুঃ আহ সুবীর বাবু এতো অধৈর্য হলে চলবে? এই রহস্যটা আপনার কাছে ফাঁস করে দিলে আপনি অনেক প্রশ্নের ই উত্তর পেয়ে যাবেন। কি হোল শুনবেন তো?
সুবীর বাবু কোনও উত্তর দেন না শুধুই চোখ বন্ধ করে বসে থাকেন।
সত্য বাবুঃ (কিছুটা গম্ভীর হয়ে) জমিদার বাড়িতে অযাচিত ব্যাক্তির আগমন আমরা পছন্দ করিনা সুবীর বাবু। আপনি এসেছিলেন সেটা হয়ত আগে থেকেই ঠিক ছিল, কিন্তু অকারনে কোনও ব্যাক্তি জমিদারবাড়িতে আসবেন তা আমাদের খুব একটা পছন্দ নয়। আশেপাশের লোকজনকে একটু জিজ্ঞেস করে দেখতে পারেন, জমিদার বাড়ি থেকে খুব কম মানুষ ই বেঁচে ফিরতে পেরেছেন, তার মধ্যে আপনি একজন।
এতক্ষন হুঁশ ফেরে সুবীর বাবুর। সুতানুটিতে পৌঁছানোর পর থেকেই তো সুবীর বাবু একের পর এক রটনা শুনেছেন। মনে পড়ে যায় কারখানা গেট থেকে কিছুটা দুরের সেই চা দোকানের কথা। ওই চাওয়ালা যে আসলে ভুত তা ওর সাথে কথা বলার সময় একবারও মনে হয়নি সুবীর বাবুর। প্রায় দৌড়াতে দৌড়াতে যখন উনি জমিদার বাড়ি থেকে বাইরে এলেন অজস্র লোকের ভিড়, একটি মৃতদেহ ও সামনে গিয়ে দেখা সেটা ওই চাওয়ালার। সবাই বলে উনি নাকি আগের দিন রাতে জমিদার বাড়িতে গিয়েছিলেন এবং সেখানেই মারা যান। সত্যি সেই রবিবার ছিল সুবীর বাবুর জীবনের সবচেয়ে বাজে দিন। ভুতে বিশ্বাস কোনোদিন ই সুবীর বাবু করতেন না, কিন্তু হয়ত এই ক্রমিক ঘটনাগুলোর পর ওনার ও মনে ভুতের অস্তিত্ব বদ্ধমূল হয়ে যায়।
সত্য বাবুঃ কি হোল কি ভাবছেন সুবীর বাবু?
সুবীর বাবুঃ চাওয়ালা। আমি সেদিন প্রথম ভুত চা দোকানেই দেখেছিলাম।
সত্য বাবুঃ আপনার কি মাথা খারাপ হয়ে গেলো সুবীর বাবু। কি চাওয়ালা? কে চাওয়ালা? আরে না না ওসব কিছুই নয়। আপনি শুনুন মন দিয়ে।
কিকরে মানব বাবু জানলেন যে পরদিন আপনি জমিদার বাড়িতে যাবেন জানিনা। কিন্তু শনিবার সন্ধ্যে নাগাদ জমিদার বাড়িতে মানব এসে উপস্থিত। প্রথমে উনি জমিদার বাড়ির বাইরে অর্থাৎ ওই বাগান অঞ্চলটায় অনেকক্ষণ ঘোরাঘুরি করলেন, কিছু একটা খুঁজছিলেন। প্রথম ওর কাছে আমি ই যাই।
সত্য বাবুঃ একি এই সন্ধ্যে বেলা আপনি এখানে কি করছেন? আর এভাবে কি খুঁজছেন? আর আপনাকে তো আগে এখানে কখনো দেখিনি।
আমায় দেখে প্রায় থতমত খেয়ে যান মানব বাবু। আমতা আমতা করে বলে ওঠেন
মানব বাবুঃ আজ্ঞে, আমি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গবেষণার কাজে এখানে এসেছি। আমার এক বন্ধু সুবীর, সুবীর সেন আমাকে এখানে পাঠিয়েছে।
সুবীর, সুবীর সেন এই নামটা শুনে আমি প্রায় চমকেই উঠি। কারন ডায়েরিতে একদম শেষ পৃষ্ঠায় ঠিক এই নামটাই উল্লেখ ছিল। তার আগে অবধি আমরা কেউ ই প্রায় জানতাম না যে এই সুবীর সেন আসলে আমাদের ই বংশধর, সেন পদবী দেখে আমরা বুঝে যাই, আপনি ই সেই যে আমাদের অভিশাপকে বহন করে চলবেন।
আমি কিছু বলার আগেই মানব বাবু নিজের হাতের সুটকেসটা সামনে নিয়ে আসেন। আমি অবাক হয়ে যাই। কিছু বোঝার আগেই মানব বাবু সুটকেসটা আমার সামনেই খুলে দেন। ভেতরে প্রচুর টাকার বান্ডিল। আমি বুঝে গেছিলাম এই লোকটার নিশ্চয়ই কোনও কুমতলব আছে। কিন্তু মনে মনে প্রচণ্ড হাঁসিও পাচ্ছিল কারন মানব বাবু তখন ও জানতেন না যে আমরা সকলেই মৃত, ঠিক যার যার সাথে ও মিলিত হবে তাদের প্রত্যেকেই মৃত। আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেঁসে মানব বাবু বলে ওঠেন
মানব বাবুঃ দাদা, আপনার অবস্থা দেখে তো মনে হচ্ছে যে অর্থনৈতিক অবস্থা আর আগের মত নেই। এই সুটকেস এ ১ লক্ষ টাকা আছে। পরে আরও পাবেন। শুধু আমার একটা উপকার করতে হবে আপনাকে।
আমি অবাক হয়ে তাকাই ওনার দিকে। আমার এই অবস্থা দেখে মানব বাবু বলে ওঠেন
মানব বাবুঃ দাদা, কোনও চিন্তা নেই, আপনি কোনও বিপদে পড়বেন না। যা হবে সব আমি সামলে নেবো। কাল সকালে এখানে একটা শিকার করব। একটা পাগলা কুকুর বড্ড বার বেড়েছে।
কথাটা শেষ করেই কোমরে গোঁজা পিস্তলটা আমায় দেখালেন মানব বাবু।
প্রায় চিৎকার করে ওঠেন সুবীর বাবু।
সুবীর বাবুঃ কি বলছেন আপনি, মানব আমায় প্রানে মারতে চেয়েছিল। এতদিনের বন্ধুত্ব এভাবে ও শেষ করে দিতে চেয়েছিল।
সত্য বাবুঃ হ্যাঁ সুবীর বাবু এটা সত্যি। প্রতিহিংসা আর যৌন আকাঙ্খায় মানুষ সব ই পারে। সেদিন আপনার বাড়িতে মত্ত অবস্থায় মালতীর শরীরের স্বাদ পাওয়ার পর মানব জানোয়ার হয়ে গিয়েছিল। মানবের মনে এই ধারনা বদ্ধমূল হয়ে গিয়েছিল যে মালতী অভুক্ত মালতীও মানবকে চায় সজ্জাসঙ্গী হিসেবে। অবশ্য এরসাথে যোগ হয়েছিল আরও একটি জিনিষ। তা হোল পুরনো রাগের প্রতিহিংসা। বর্ণালীকে যে মানব ও ভালোবাসতো। বর্ণালীর সাথে আপনি যা করেছেন তা তো মানবের পক্ষে কোনওকালেই মেনে নেওয়া সম্ভব ছিলনা।
কিন্তু সুবীর বাবু মানব ও তো মানুষ তাই ও একটাই ভুল করে ফেলেছিল। কি বলুন তো?
সুবীর বাবু কোনও উত্তর দেন না, চুপ করে বসে থাকেন।
সত্য বাবুঃ (কিছুটা গম্ভীর হয়ে) ডায়েরীর কারনহেতু অন্য কোনও কারনে জমিদার বাড়িতে কেউ এলে সে বেঁচে ফেরেনা সুবীর বাবু।
সুবীর বাবু প্রায় চমকে ওঠেন। সত্য বাবুর কথা উনি নিজের কানকে বিশ্বাস করাতে পারছিলেন না।
সুবীর বাবুঃ কি বলছেন আপনি। মানব কি...
সত্য বাবুঃ হ্যাঁ সুবীর বাবু আপনি ঠিক ই ধরেছেন আপনার প্রিয় বন্ধু মানব মৃত। জমিদার বাড়িতে অতৃপ্ত আত্মাদের হাতে উনি মৃত।
দুহাতে নিজের মুখ ঢেকে দেন সুবীর বাবু। যা ক্ষতি ই করুক মানব ওর সবচেয়ে পুরনো বন্ধু। মানবের এই মৃত্যু কিছুতেই ওর পক্ষে মেনে নেওয়া সম্ভব নয়।
সুবীর বাবুঃ তাহলে কি মানবের আত্মা এতসব করল?
সত্য বাবুঃ একদম ঠিক ধরেছেন আপনি। অতৃপ্ত আত্মা যে ভয়ঙ্কর হয় সুবীর বাবু। যতক্ষণ না নিজের শেষ আঁশটুকু পুরন হচ্ছে এরা কিছুতেই শান্তি পায়না। মালতীর দেহটা ভোগ করতে না পারলে যে মানবের আত্মা কখনো শান্তি পেতনা। আর রাজু ও সাইদুলের মত দুই নরকের কীটের হাতে আপনার স্ত্রীকে তুলে দিয়ে মানব আপনার প্রতি যে প্রতিহিংসা মনে পুষে রেখেছিল তাও চরিতার্থ করে নিল।
সুবীর দুচোখ বন্ধ করে বসে থাকেন। নিজের এই পরিনতির চেয়েও বেশি কষ্ট ওনার মানবের জন্য। জীবনে বহুবার ওনাদের দুজনের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে কিন্তু তার পরিনতি এই? সুবীরবাবুর দুচোখ বেয়ে জলের ধারা বইতে শুরু করে। অবাক হয়ে যান সত্য বাবুও।
সত্য বাবুঃ আপনি প্রকৃতই ভালো মানুষ। নয়ত যে মানুষটা আপনার এতো বড় সর্বনাশ করল আপনি কিনা তার ই জন্যে নিজের চোখের জল ফেলছেন। সত্যি ই আপনার এই পরিনতির জন্য আমার প্রচণ্ড কষ্ট হচ্ছে সুবীর বাবু। কিন্তু আমায় তো আমার গল্প শেষ করতেই হবে।
হথাত ফোনটা বেজে ওঠে সুবীর বাবুর। ফোনের এই রিং ভীষণভাবে চমকে দেয় সুবীরবাবুকে। হাতে ফোনটা উঠিয়ে দেখেন রূপসার ফোন এসেছে। দুচোখ ভালো করে মুছে ফোনটা রিসিভ করেন
সুবীর বাবুঃ হ্যাঁ রূপসা বল। কি বলবি বল?
রূপসাঃ (রূপসার গলা ভেজা ভেজা) বাবা তোমার কি হয়েছে? কেন তুমি ওরকম বললে আমায়? মা এতো ভালো, আমাদের জন্য এতো করেছে, কেন এরকম বললে বাবা?
সুবীর বাবুঃ আমায় ক্ষমা করে দে মা। তোদেরকে কিছুই বোঝাতে পারব না কেন আমি এরকম বললাম।
রূপসাঃ বাবা, প্লিস আমার কথাটা শোন তুমি। মা সত্যি ই নিজের বান্ধবীর কাছে গেছে। আমি নিজে মাকে ছেড়ে দিয়ে এসেছি। শেষ কয়েকদিন ধরে তোমার আর মায়ের মধ্যে কিসের যে এতো ঝগড়া জানিনা। সেই কারনেই হয়ত মা তোমায় বলেনি যে মায়ের এক ছোটবেলার বান্ধবী হাওড়াতে নতুন বাড়ি করেছে। কেন এতো ভুল বুঝছ বাবা? মা ওরকম নয় তুমি যা ভাবছ।
সুবীর বাবুঃ আমায় ক্ষমা কর মা। কিন্তু এই কয়েকটা মাসে আমাদের সংসারটা ওলট পালট হয়ে গেছে মা। এমন অনেককিছুই ঘটে চলেছে যা আমরা কেউ ই জানতাম না। তোরা মন দিয়ে পড়াশুনা কর মানুষের মত মানুষ হ ব্যাস এটাই চাই আমি।
রূপসাঃ বাবা তুমি মাথা ঠাণ্ডা রাখো সব ঠিক হয়ে যাবে।
সুবীর বাবুঃ কিছুই ঠিক হবেনা রে মা। সব ওলট পালট হয়ে গেছে। আমি ফোনটা রাখলাম।
সুবীর বাবু ফোনটা কেটে দিলেন। সত্য বাবু হয়ত কিছু একটা বলতে যাচ্ছিলেন কিন্তু সুবীর বাবুই বলে উঠলেন
সুবীর বাবুঃ মানবের মৃতদেহটা কোথায় সত্য বাবু? আমি ওর সৎকার করতে চাই। আমি চাই ওর আত্মা শান্তি পাক। ও আমার যতই ক্ষতি করে থাক ও আমার ছোটবেলার বন্ধু।
সত্য বাবুঃ আপনাকে যতই দেখছি মুগ্ধ হচ্ছি। আপনি সত্যি অসাধারন এক মানুষ। হ্যাঁ মানবের দেহ জমিদার বাড়ির পেছনে পুঁতে দেওয়া হয়েছে। কাকপক্ষীতেও টের পায়নি। আপনি ওর সৎকারের ব্যাবস্থা করুন।
সুবীর বাবু চুপ করে অন্যমনস্ক হয়ে থাকেন।
সত্য বাবুঃ গল্প আর বেশিদুর নয়। তার আগে বলি তিলোত্তমা সত্যই ভালো মেয়ে, হয়ত প্রনয়ঘটিত কারনেই রাজুর বদসঙ্গে পড়েছে। কিন্তু যে মেয়ের সাথে আপনি এতক্ষন কথা বললেন তার গল্প শোনার পর আপনার মনে হবে এই ইহজগতে আপন বলে কেউ নয়।
রূপসা আর সাইদুলের প্রেম ও হৃদয়ের আদানপ্রদানের গল্প তো আপনাকে অনেক আগেই শুনিয়েছি। আচ্ছা সুবীর বাবু আজকের দিনে কি প্রেম বলে কোনও বস্তুর অস্তিত্ব রয়েছে? জানি আপনার ও সেই বিশ্বাস চলে গেছে। প্রেম না শরীরের সুখ কোন বস্তুটা মানুষকে বেশি আকর্ষণ করে। ওহ ভুল করলাম মানুষ নয় নারীকে প্রেম না শরীরের আকর্ষণ কোনটা বেশি টানে। এতো ভাবতে হবেনা সুবীর বাবু। এর উত্তর নিয়েই শুরু হবে রূপসা আর সাইদুলের সেই গল্প যা তৃতীয় খণ্ডে অসমাপ্ত ছিল।
সত্য বাবুঃ একি সুবীর বাবু নিজের ই কন্যাকে নিজের স্ত্রী বেশ্যা এটা জানিয়ে দিলেন? আপনি কি উন্মাদ হয়ে পড়েছেন।
সুবীর বাবু কোনও উত্তর ই দেন না, শুধু মাথা নিচু করে বসে থাকেন। সত্য বাবু বুঝতে পারেন সুবীর বাবু ঠিক কতটা ভেঙে পড়েছেন।
সত্য বাবুঃ আসলে যা হয়েছে তার জন্য কেউ দায়ী নয়। আপনাকে তো আগেই বলেছি যা ঘটছে তা শুধুই এই ডায়েরীর অভিশাপের জন্য। যদি ডায়েরিটা আপনার হাতে না...
সুবীর বাবুঃ এই ডায়েরীর অভিশাপ আমার ই ওপরে কেন সত্য বাবু? বর্ণালীর ব্যাপারে যা ঘটেছে তা যে অনিচ্ছাকৃত এতো স্বয়ং ভগবান ও জানেন। আর আমি যে জমিদারবাড়ির দূরসম্পর্কের বংশধর সে ব্যাপারে আমিও নিশ্চিত নই। বাবা দাদুদের থেকে আমি কিছুই শুনিনি কোনোদিন। আর এতোবছর পর এই অভিশাপ আমার ই ওপর এসে কেন পড়ল?
সুবীর বাবুর গলার তীব্রতা দেখে সত্য বাবু খুব সহজেই অনুমান করতে পারেন যে সুবীর বাবুর মানসিক অবস্থা আর গল্প শোনার অনুকুল নয়।
সুবীর বাবুঃ বর্ণালীর ব্যাপারে জানেন, আমাদের এতো পুরনো সব ঘটনা জানেন তারমানে এটাও নিশ্চয়ই জানেন যে আমরা কলকাতার আদি মানুষ নই। আমাদের আদি বাড়ি মেদিনীপুরে। মানব বা বর্ণালীর সাথে পরিচয় হয় কলেজে।
সত্য বাবুঃ আহ সুবীর বাবু আমি সব ই জানি। এগুলো বলে অযথা সময় নষ্ট করার কি দরকার। হ্যাঁ তবে এটা খুব ই গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন যে কেন আপনি ই এই অভিশাপের কবলে পড়লেন। কেন অন্য কেউ নয় মানে আপনার কোনও পূর্বপুরুষ নয়? কিন্তু এটা বললে তো আমার গল্পের সমস্ত আকর্ষণ ই নষ্ট হয়ে যাবে। আর আকর্ষণহীন গল্প আমি লোককে কি করে বলি বলুন তো? আচ্ছা ঠিক আছে আপনার যা মানসিক অবস্থা তাতে আসল রহস্যটা আপনার কাছে ফাঁস না করে কোনও উপায় নেই দেখছি।
আচ্ছা সুবীর বাবু আপনার নিশ্চয়ই মনে আছে আপনি জমিদার বাড়িতে এসেছিলেন রবিবার। ঠিক তার আগেরদিন অর্থাৎ শনিবার রাতে জমিদার বাড়িতে এক ঘটনা ঘটেছিল। যার কথা এই ইহজগতে প্রায় কেউ ই জানেনা।
সুবীর বাবুঃ এ আবার নতুন কি রহস্য? আমার আর ভালো লাগছে না সত্য বাবু। আপনি আমায় মুক্ত করুন আর ডায়েরিটা নিজের সাথেই নিয়ে চলে যান। আমার সত্যি ই ভালো লাগছে না। যা ঘটে গেছে আমার জীবনে তা আমি মেনে নিলাম কিন্তু আর আমার ভালো লাগছে না।
সত্য বাবুঃ আহ সুবীর বাবু এতো অধৈর্য হলে চলবে? এই রহস্যটা আপনার কাছে ফাঁস করে দিলে আপনি অনেক প্রশ্নের ই উত্তর পেয়ে যাবেন। কি হোল শুনবেন তো?
সুবীর বাবু কোনও উত্তর দেন না শুধুই চোখ বন্ধ করে বসে থাকেন।
সত্য বাবুঃ (কিছুটা গম্ভীর হয়ে) জমিদার বাড়িতে অযাচিত ব্যাক্তির আগমন আমরা পছন্দ করিনা সুবীর বাবু। আপনি এসেছিলেন সেটা হয়ত আগে থেকেই ঠিক ছিল, কিন্তু অকারনে কোনও ব্যাক্তি জমিদারবাড়িতে আসবেন তা আমাদের খুব একটা পছন্দ নয়। আশেপাশের লোকজনকে একটু জিজ্ঞেস করে দেখতে পারেন, জমিদার বাড়ি থেকে খুব কম মানুষ ই বেঁচে ফিরতে পেরেছেন, তার মধ্যে আপনি একজন।
এতক্ষন হুঁশ ফেরে সুবীর বাবুর। সুতানুটিতে পৌঁছানোর পর থেকেই তো সুবীর বাবু একের পর এক রটনা শুনেছেন। মনে পড়ে যায় কারখানা গেট থেকে কিছুটা দুরের সেই চা দোকানের কথা। ওই চাওয়ালা যে আসলে ভুত তা ওর সাথে কথা বলার সময় একবারও মনে হয়নি সুবীর বাবুর। প্রায় দৌড়াতে দৌড়াতে যখন উনি জমিদার বাড়ি থেকে বাইরে এলেন অজস্র লোকের ভিড়, একটি মৃতদেহ ও সামনে গিয়ে দেখা সেটা ওই চাওয়ালার। সবাই বলে উনি নাকি আগের দিন রাতে জমিদার বাড়িতে গিয়েছিলেন এবং সেখানেই মারা যান। সত্যি সেই রবিবার ছিল সুবীর বাবুর জীবনের সবচেয়ে বাজে দিন। ভুতে বিশ্বাস কোনোদিন ই সুবীর বাবু করতেন না, কিন্তু হয়ত এই ক্রমিক ঘটনাগুলোর পর ওনার ও মনে ভুতের অস্তিত্ব বদ্ধমূল হয়ে যায়।
সত্য বাবুঃ কি হোল কি ভাবছেন সুবীর বাবু?
সুবীর বাবুঃ চাওয়ালা। আমি সেদিন প্রথম ভুত চা দোকানেই দেখেছিলাম।
সত্য বাবুঃ আপনার কি মাথা খারাপ হয়ে গেলো সুবীর বাবু। কি চাওয়ালা? কে চাওয়ালা? আরে না না ওসব কিছুই নয়। আপনি শুনুন মন দিয়ে।
কিকরে মানব বাবু জানলেন যে পরদিন আপনি জমিদার বাড়িতে যাবেন জানিনা। কিন্তু শনিবার সন্ধ্যে নাগাদ জমিদার বাড়িতে মানব এসে উপস্থিত। প্রথমে উনি জমিদার বাড়ির বাইরে অর্থাৎ ওই বাগান অঞ্চলটায় অনেকক্ষণ ঘোরাঘুরি করলেন, কিছু একটা খুঁজছিলেন। প্রথম ওর কাছে আমি ই যাই।
সত্য বাবুঃ একি এই সন্ধ্যে বেলা আপনি এখানে কি করছেন? আর এভাবে কি খুঁজছেন? আর আপনাকে তো আগে এখানে কখনো দেখিনি।
আমায় দেখে প্রায় থতমত খেয়ে যান মানব বাবু। আমতা আমতা করে বলে ওঠেন
মানব বাবুঃ আজ্ঞে, আমি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গবেষণার কাজে এখানে এসেছি। আমার এক বন্ধু সুবীর, সুবীর সেন আমাকে এখানে পাঠিয়েছে।
সুবীর, সুবীর সেন এই নামটা শুনে আমি প্রায় চমকেই উঠি। কারন ডায়েরিতে একদম শেষ পৃষ্ঠায় ঠিক এই নামটাই উল্লেখ ছিল। তার আগে অবধি আমরা কেউ ই প্রায় জানতাম না যে এই সুবীর সেন আসলে আমাদের ই বংশধর, সেন পদবী দেখে আমরা বুঝে যাই, আপনি ই সেই যে আমাদের অভিশাপকে বহন করে চলবেন।
আমি কিছু বলার আগেই মানব বাবু নিজের হাতের সুটকেসটা সামনে নিয়ে আসেন। আমি অবাক হয়ে যাই। কিছু বোঝার আগেই মানব বাবু সুটকেসটা আমার সামনেই খুলে দেন। ভেতরে প্রচুর টাকার বান্ডিল। আমি বুঝে গেছিলাম এই লোকটার নিশ্চয়ই কোনও কুমতলব আছে। কিন্তু মনে মনে প্রচণ্ড হাঁসিও পাচ্ছিল কারন মানব বাবু তখন ও জানতেন না যে আমরা সকলেই মৃত, ঠিক যার যার সাথে ও মিলিত হবে তাদের প্রত্যেকেই মৃত। আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেঁসে মানব বাবু বলে ওঠেন
মানব বাবুঃ দাদা, আপনার অবস্থা দেখে তো মনে হচ্ছে যে অর্থনৈতিক অবস্থা আর আগের মত নেই। এই সুটকেস এ ১ লক্ষ টাকা আছে। পরে আরও পাবেন। শুধু আমার একটা উপকার করতে হবে আপনাকে।
আমি অবাক হয়ে তাকাই ওনার দিকে। আমার এই অবস্থা দেখে মানব বাবু বলে ওঠেন
মানব বাবুঃ দাদা, কোনও চিন্তা নেই, আপনি কোনও বিপদে পড়বেন না। যা হবে সব আমি সামলে নেবো। কাল সকালে এখানে একটা শিকার করব। একটা পাগলা কুকুর বড্ড বার বেড়েছে।
কথাটা শেষ করেই কোমরে গোঁজা পিস্তলটা আমায় দেখালেন মানব বাবু।
প্রায় চিৎকার করে ওঠেন সুবীর বাবু।
সুবীর বাবুঃ কি বলছেন আপনি, মানব আমায় প্রানে মারতে চেয়েছিল। এতদিনের বন্ধুত্ব এভাবে ও শেষ করে দিতে চেয়েছিল।
সত্য বাবুঃ হ্যাঁ সুবীর বাবু এটা সত্যি। প্রতিহিংসা আর যৌন আকাঙ্খায় মানুষ সব ই পারে। সেদিন আপনার বাড়িতে মত্ত অবস্থায় মালতীর শরীরের স্বাদ পাওয়ার পর মানব জানোয়ার হয়ে গিয়েছিল। মানবের মনে এই ধারনা বদ্ধমূল হয়ে গিয়েছিল যে মালতী অভুক্ত মালতীও মানবকে চায় সজ্জাসঙ্গী হিসেবে। অবশ্য এরসাথে যোগ হয়েছিল আরও একটি জিনিষ। তা হোল পুরনো রাগের প্রতিহিংসা। বর্ণালীকে যে মানব ও ভালোবাসতো। বর্ণালীর সাথে আপনি যা করেছেন তা তো মানবের পক্ষে কোনওকালেই মেনে নেওয়া সম্ভব ছিলনা।
কিন্তু সুবীর বাবু মানব ও তো মানুষ তাই ও একটাই ভুল করে ফেলেছিল। কি বলুন তো?
সুবীর বাবু কোনও উত্তর দেন না, চুপ করে বসে থাকেন।
সত্য বাবুঃ (কিছুটা গম্ভীর হয়ে) ডায়েরীর কারনহেতু অন্য কোনও কারনে জমিদার বাড়িতে কেউ এলে সে বেঁচে ফেরেনা সুবীর বাবু।
সুবীর বাবু প্রায় চমকে ওঠেন। সত্য বাবুর কথা উনি নিজের কানকে বিশ্বাস করাতে পারছিলেন না।
সুবীর বাবুঃ কি বলছেন আপনি। মানব কি...
সত্য বাবুঃ হ্যাঁ সুবীর বাবু আপনি ঠিক ই ধরেছেন আপনার প্রিয় বন্ধু মানব মৃত। জমিদার বাড়িতে অতৃপ্ত আত্মাদের হাতে উনি মৃত।
দুহাতে নিজের মুখ ঢেকে দেন সুবীর বাবু। যা ক্ষতি ই করুক মানব ওর সবচেয়ে পুরনো বন্ধু। মানবের এই মৃত্যু কিছুতেই ওর পক্ষে মেনে নেওয়া সম্ভব নয়।
সুবীর বাবুঃ তাহলে কি মানবের আত্মা এতসব করল?
সত্য বাবুঃ একদম ঠিক ধরেছেন আপনি। অতৃপ্ত আত্মা যে ভয়ঙ্কর হয় সুবীর বাবু। যতক্ষণ না নিজের শেষ আঁশটুকু পুরন হচ্ছে এরা কিছুতেই শান্তি পায়না। মালতীর দেহটা ভোগ করতে না পারলে যে মানবের আত্মা কখনো শান্তি পেতনা। আর রাজু ও সাইদুলের মত দুই নরকের কীটের হাতে আপনার স্ত্রীকে তুলে দিয়ে মানব আপনার প্রতি যে প্রতিহিংসা মনে পুষে রেখেছিল তাও চরিতার্থ করে নিল।
সুবীর দুচোখ বন্ধ করে বসে থাকেন। নিজের এই পরিনতির চেয়েও বেশি কষ্ট ওনার মানবের জন্য। জীবনে বহুবার ওনাদের দুজনের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে কিন্তু তার পরিনতি এই? সুবীরবাবুর দুচোখ বেয়ে জলের ধারা বইতে শুরু করে। অবাক হয়ে যান সত্য বাবুও।
সত্য বাবুঃ আপনি প্রকৃতই ভালো মানুষ। নয়ত যে মানুষটা আপনার এতো বড় সর্বনাশ করল আপনি কিনা তার ই জন্যে নিজের চোখের জল ফেলছেন। সত্যি ই আপনার এই পরিনতির জন্য আমার প্রচণ্ড কষ্ট হচ্ছে সুবীর বাবু। কিন্তু আমায় তো আমার গল্প শেষ করতেই হবে।
হথাত ফোনটা বেজে ওঠে সুবীর বাবুর। ফোনের এই রিং ভীষণভাবে চমকে দেয় সুবীরবাবুকে। হাতে ফোনটা উঠিয়ে দেখেন রূপসার ফোন এসেছে। দুচোখ ভালো করে মুছে ফোনটা রিসিভ করেন
সুবীর বাবুঃ হ্যাঁ রূপসা বল। কি বলবি বল?
রূপসাঃ (রূপসার গলা ভেজা ভেজা) বাবা তোমার কি হয়েছে? কেন তুমি ওরকম বললে আমায়? মা এতো ভালো, আমাদের জন্য এতো করেছে, কেন এরকম বললে বাবা?
সুবীর বাবুঃ আমায় ক্ষমা করে দে মা। তোদেরকে কিছুই বোঝাতে পারব না কেন আমি এরকম বললাম।
রূপসাঃ বাবা, প্লিস আমার কথাটা শোন তুমি। মা সত্যি ই নিজের বান্ধবীর কাছে গেছে। আমি নিজে মাকে ছেড়ে দিয়ে এসেছি। শেষ কয়েকদিন ধরে তোমার আর মায়ের মধ্যে কিসের যে এতো ঝগড়া জানিনা। সেই কারনেই হয়ত মা তোমায় বলেনি যে মায়ের এক ছোটবেলার বান্ধবী হাওড়াতে নতুন বাড়ি করেছে। কেন এতো ভুল বুঝছ বাবা? মা ওরকম নয় তুমি যা ভাবছ।
সুবীর বাবুঃ আমায় ক্ষমা কর মা। কিন্তু এই কয়েকটা মাসে আমাদের সংসারটা ওলট পালট হয়ে গেছে মা। এমন অনেককিছুই ঘটে চলেছে যা আমরা কেউ ই জানতাম না। তোরা মন দিয়ে পড়াশুনা কর মানুষের মত মানুষ হ ব্যাস এটাই চাই আমি।
রূপসাঃ বাবা তুমি মাথা ঠাণ্ডা রাখো সব ঠিক হয়ে যাবে।
সুবীর বাবুঃ কিছুই ঠিক হবেনা রে মা। সব ওলট পালট হয়ে গেছে। আমি ফোনটা রাখলাম।
সুবীর বাবু ফোনটা কেটে দিলেন। সত্য বাবু হয়ত কিছু একটা বলতে যাচ্ছিলেন কিন্তু সুবীর বাবুই বলে উঠলেন
সুবীর বাবুঃ মানবের মৃতদেহটা কোথায় সত্য বাবু? আমি ওর সৎকার করতে চাই। আমি চাই ওর আত্মা শান্তি পাক। ও আমার যতই ক্ষতি করে থাক ও আমার ছোটবেলার বন্ধু।
সত্য বাবুঃ আপনাকে যতই দেখছি মুগ্ধ হচ্ছি। আপনি সত্যি অসাধারন এক মানুষ। হ্যাঁ মানবের দেহ জমিদার বাড়ির পেছনে পুঁতে দেওয়া হয়েছে। কাকপক্ষীতেও টের পায়নি। আপনি ওর সৎকারের ব্যাবস্থা করুন।
সুবীর বাবু চুপ করে অন্যমনস্ক হয়ে থাকেন।
সত্য বাবুঃ গল্প আর বেশিদুর নয়। তার আগে বলি তিলোত্তমা সত্যই ভালো মেয়ে, হয়ত প্রনয়ঘটিত কারনেই রাজুর বদসঙ্গে পড়েছে। কিন্তু যে মেয়ের সাথে আপনি এতক্ষন কথা বললেন তার গল্প শোনার পর আপনার মনে হবে এই ইহজগতে আপন বলে কেউ নয়।
রূপসা আর সাইদুলের প্রেম ও হৃদয়ের আদানপ্রদানের গল্প তো আপনাকে অনেক আগেই শুনিয়েছি। আচ্ছা সুবীর বাবু আজকের দিনে কি প্রেম বলে কোনও বস্তুর অস্তিত্ব রয়েছে? জানি আপনার ও সেই বিশ্বাস চলে গেছে। প্রেম না শরীরের সুখ কোন বস্তুটা মানুষকে বেশি আকর্ষণ করে। ওহ ভুল করলাম মানুষ নয় নারীকে প্রেম না শরীরের আকর্ষণ কোনটা বেশি টানে। এতো ভাবতে হবেনা সুবীর বাবু। এর উত্তর নিয়েই শুরু হবে রূপসা আর সাইদুলের সেই গল্প যা তৃতীয় খণ্ডে অসমাপ্ত ছিল।