22-01-2019, 09:37 AM
চতুর্থ খণ্ডঃ
পর্ব ১- মানবের প্রত্যাবর্তনঃ
সত্য বাবুঃ “ঠিক আছে তুমি বিশ্বাস করোনা। আমিও তোমায় বিশ্বাস করাতে যাবনা। তুমি বাবা হিসেবে একজন গবেষক হিসেবে যতটা ভালো একজন স্বামী হিসেবে ঠিক ততটাই উদাসীন”- কি সুবীর বাবু মনে পড়ে কথাটা আপনাকে কে বলেছিল? হাঁ অন্য কেউ নয় আপনার ই স্ত্রী মালতী দেবী এই কথাগুলো আপনাকে উদ্দেশ্য করে বলেছিলেন। আর উত্তরে আপনি কি বলেছিলেন মনে আছে?
সুবীর বাবু মাথা নিচু করে বসে থাকে। হয়ত হতাশার থেকেও আশঙ্কাই ওনাকে বেশি গ্রাস করেছে। এরপর সত্য বাবুর মুখ থেকে উনি ঠিক কি শুনতে চলেছেন তার আভাস সত্য বাবু কিছুক্ষন আগেই ওনাকে দিয়ে দিয়েছেন।
সুবীর বাবুঃ “স্বামী হিসেবে আমি কেমন তা তোমার পক্ষে বোঝা সম্ভব নয়। যে চিরকাল শুধু কিকরে একটু সুখ পাওয়া যায় সে কথা ভেবে গেলো, সে কি করে দায়িত্ব কর্তব্য নিয়ে বুঝবে” ঠিক এই কথাটাই আপনি বলেছিলেন মালতী দেবীকে। কথাটা কি সত্যি সুবীর বাবু? নিজেই বলুন সত্যি কি?
এতক্ষনে মুখ খোলেন সুবীর বাবু। সত্য বাবুর দিকে তাকিয়ে বলে ওঠেন
সুবীর বাবুঃ দেখুন সত্য বাবু, স্বামী স্ত্রীর মধ্যে এরকম ভুল বোঝাবুঝি একটু আধটু তো হয়েই থাকে। কিন্তু তা আবার নিজের থেকে ঠিক ও হয়ে যায়। এতে কোনও ভুল নেই। আমি সময় করে ওকে ঠিক ই বুঝিয়ে বলে দিতাম।
সত্য বাবুঃ বলে দিতাম- তারমানে বলেননি তো? একবার ও ভাবেননি যে আপনার এই কথাটা ঠিক কি পরিমান অভিমানের সঞ্চার করতে পারে। একটু ভেবে দেখুন।
সুবীর বাবুঃ না আমি ওর হাত ধরে ক্ষমা চেয়েছিলাম। ওকে বুঝিয়েছিলাম। আমি স্বীকার করেছিলাম আমার বিশাল ভুল হয়ে গেছে বলে। কিন্তু ও বুঝতে চায়নি। আমার ওপর একটা অভিমান পুষেই রেখে দিয়েছে।
সত্য বাবুঃ তা সেটা কি উনি অন্যায় করেছেন? নারীর অভিমান বড্ড কঠিন ও অনমনীয়। যতই হোক মালতী দেবীও একজন নারী। আপনি ভাবলেন কি করে উনি এতো সহজে আপনার এই এতো বড় অপমান ভুলে যাবেন?
সুবীর বাবুঃ বিশ্বাস করুন সত্য বাবু। আমি এরপরেও ওকে অনেকবার এই ব্যাপারে বুঝিয়েছি, ক্ষমা চেয়েছি। কিন্তু ও আমায় কথাই বলতে...
সুবীর বাবুর কথা সম্পূর্ণ করতে না দিয়ে সত্য বাবু বলে ওঠেন
সত্য বাবুঃ সুবীর বাবু আপনাদের এতো বছরের দাম্পত্য জীবনে কখনো মালতিকে নিয়ে আপনার কোনও অভিযোগ আছে কি? দুই মেয়ের পড়াশুনার ক্ষতির কথা ভেবে আপনি নিজের স্ত্রীকে শারীরিক ভাবে অভুক্ত রাখলেন। একবারও কি ভেবেছেন যে ওর ও শরীরে একটা ক্ষিদে আছে। ওর ও আপনাকে আদর করতে ইচ্ছে হয়। না সুবীর বাবু আপনি ভাবেন নি।
সুবীর বাবু হতাশায় মাথা নিচু করে নেন। সত্য বাবু আবার বলে ওঠেন
সত্য বাবুঃ সেদিন রাতের কথা একবার ভাবুন সুবীর বাবু। মানব বাবু আপনাদের বাড়িতে এসেছিলেন, আপনারা আকণ্ঠ মদ্যপান করলেন। তার আগে মালতী দেবীর আচরনে আপনি তো এটা বুঝেছিলেন বহুদিন বাদে শারীরিক মিলনের ইচ্ছায় উনি পাগল হয়ে আছেন। সুবীর বাবু আপনার জীবনের সবচেয়ে বড় রহস্যটা এবার আপনার সামনে ফাঁস করব।
সুবীর বাবু প্রায় চমকে গিয়ে সত্য বাবুর দিকে তাকালেন। রহস্য বলতে উনি ঠিক কি বলতে চেয়েছেন।
সত্য বাবুঃ সুবীর বাবু, সেদিন মানব অনেক চালাকি করেছিল। কিন্তু একটা কথা জানেন তো মেয়েদের ষষ্ঠ ইন্দ্রিয়টা প্রচণ্ড শক্তিশালী। মালতী দেবীর উলঙ্গ হয়ে কাপড় পাল্টানো, মানবের চুপিসাড়ে তা লক্ষ্য করা, আপনার স্থির হয়ে বসে থাকা, আপনার ই পোশাক পড়ে মানব বাবুর আপনার শোয়ার ঘরে প্রবেশ করা- এসব ই কি নেহাত ই কাকতালীয়। একজন বিবাহিত মহিলা কি এতটাই বোকা। আমি অন্তত মনে করিনা। আকণ্ঠ মদ্যপান আপনি করেছিলেন কিন্তু মালতী দেবী তো স্বাভাবিক ছিলেন তাহলে?
সুবীর বাবুঃ (প্রচণ্ড জোরে মাথা নাড়াতে নাড়াতে)না সত্য বাবু আপনার ইঙ্গিত আমি মানিনা। আপনি ঠিক বলছেন না।
ঈষৎ হেঁসে সত্য বাবু বলে ওঠেন
সত্য বাবুঃ মানসিক ভাবে প্রস্তুত হন সুবীর বাবু। আপনার জীবনের সবচেয়ে বড় আঘাতটা আসতে চলেছে।
সত্য বাবুর ইঙ্গিত অনায়াসেই বুঝে যান সুবীর বাবু। উনি জানেন গল্পটা শেষ অবধি না শুনেও ওনার নিস্তার নেই। স্থির হয়ে সত্য বাবুর গল্প শোনা শুরু করেন সুবীর বাবু।
সত্য বাবুঃ যৌনতা মানুষের জীবনের অঙ্গ। আমরা লজ্জায় একে দূরে সরিয়ে রাখতে পারি কিন্তু অবজ্ঞা করতে পারিনা। আর সবচেয়ে বড় সত্য এটাই যে মানুষের মোট ৬ খানা রিপুর মধ্যে এই কামরিপুর জন্যই মানুষ সবচেয়ে বেশি অপরাধ বা পাপ করে ফেলে। মালতী দেবীও মানুষ, সুবীর বাবু।
সুবীর বাবু কোনও উত্তর দেন না, শুধু শান্ত হয়ে শুনতে থাকেন। সত্য বাবু এই প্রথমবার ডায়েরিটা খোলা শুরু করেন। সুবীর বাবুর বাড়িতে এই প্রথমবারের জন্য ডায়েরিটা খোলা হয়।
সত্য বাবুঃ প্রথম খণ্ড- পর্ব ১৭- সুবীরের উত্তেজনা। মনে পড়ছে সুবীর বাবু? মনে করুন সুবীর বাবু। আপনি সম্পূর্ণ মত্ত ছিলেন, মালতী দেবীর নগ্ন শরীরটা দেখার জন্য আপনার কাছে মানব বাবু নানারকম ছলচাতুরি করে চলেছিলেন, বিভিন্ন কায়দায় আপনার কামরিপুকে উত্তেজিত করে চলেছিলেন। আপনাদের মধ্যে অনেকক্ষণ কথা হয় সুবীর বাবু। তা অন্তত ৪০ মিনিট তো হবেই। মালতী দেবী সেইসময় রান্নাঘরে ছিলেন। আপনারা দুজনে ঠিক এখানে বসে ছিলেন। এর কিছুক্ষন পর মালতী দেবী হাতে একটা ব্যাগ নিয়ে বাথরুমের দিকে এগিয়ে গেলেন। আর তারপর “সুবীর চল একটা খেলা খেলি আজ। তুই আর আমি ছাড়া কেউ তা জানবে না। আমি যাই করিনা কেন তুই আমায় লক্ষ্য করবি। আর এমন ভাবে লক্ষ্য করবি যেন তুই লুকিয়ে আমায় দেখছিস আর আমি কিছুই বুঝতে পারছিনা। তোর বউ খুব সুন্দরী রে” মনে পড়ে সুবীর বাবু।
লজ্জায় দুহাত দিয়ে সুবীর বাবু মুখ ঢেকে দেন। সত্য বাবু নিজের কথা বন্ধ করেন না।
সত্য বাবুঃ লজ্জা পাওয়ার কিছুই নেই সুবীর বাবু। আসল রহস্যটা বা আপনার কাছে গোপন একটি ব্যাপার শোনার জন্য প্রস্তুত হয়ে যান।
সুবীর বাবু কোনরকমে মানসিকভাবে প্রস্তুত হয়ে উঠে বসেন।
সত্য বাবুঃ আমরা যে এখানে বসে এতো কথা বলছি আপনি কি মনে করেন রান্নাঘরে এইমুহূর্তে কেউ থাকলে শুনতে পাচ্ছেনা? ভালো করে ভাবুন সুবীর বাবু। পরিস্থিতিটা ঠিক এরকম ই ছিল। সুবীর বাবু, আপনার আর মানববাবুর প্রতিটা কথাই মালতী দেবী সেদিন শুনতে পেয়েছিলেন। কি মনে হচ্ছে আপনার ওনার মনের অবস্থা সবকিছু শুনে কি হয়েছিল?
সুবীর বাবু প্রায় চমকে গেলেন এই কথা শুনে। কোনও উত্তর না দিয়ে সত্য বাবুর দিকে তাকিয়ে থাকলেন।
সত্য বাবুঃ আগুনে এক চামচে ঘি ঢাললে কি হয় জানেন? আগুন টা দাউদাউ করে জ্বলে ওঠে। সুবীর বাবু, আত্মত্যাগের ও একটা সীমা আছে। মেয়েরা ভালো মানুষ হোল, নাম কার হোল? আপনার। আপনি গবেষণায় বিশাল নাম করলেন, সম্মান কে পেলো? একা আপনি। মালতী দেবী কি পেলেন? স্বামী, মেয়ে, সংসার এই দেখে তো নিজের জীবনটাই নষ্ট করে গেলেন। সবকিছু তো উনি মুখ বুজে সহ্য করে গিয়েছিলেন কিন্তু কাম, কামদহন এ বড় যন্ত্রণার সুবীর বাবু, বড় যন্ত্রণার। মালতী দেবীর মন, শরীর দুই ই এই একটা ঘণ্টা রান্নাঘরে একে অপরের সাথে লড়াই করে চলেছিল। হয়ত সবসময় মন আর শরীরের লড়াইতে মন জেতেনা। এক লক্ষ বারে একবার হলেও শরীর জেতে। তাই হয়েছিল সুবীর বাবু। মালতী দেবীর শরীরে আগুনের ঝল্কা ঝরছিল আর মনে ছিল চরম দ্বিধা।
সুবীর বাবুঃ এ আপনি কি বলছেন, এটা হতে পারেনা। আমি বিশ্বাস করিনা।
কথাটা বেশ জোরে চিৎকার করেই বলে ফেলেছিলেন সুবীর বাবু। হয়ত উনি ভুলেই গিয়েছিলেন ওনার সামনে কোনও মানুষ নয় এক অতৃপ্ত আত্মা বসে আছে। সত্য বাবু শুধুই একটু মুখ টিপে হাসলেন।
সত্য বাবুঃ শুধু গল্পটা পড়ে শোনানোর জন্য আমি এখানে আসিনি সুবীর বাবু। প্রতিটা গল্পই একটা শিক্ষা। সেই শিক্ষাটা আপনাকে দেওয়ার জন্যই আমি এসেছি। একটিবার স্মৃতি রোমন্থন করুন সুবীরবাবু। মনব বাবুর যাওয়ার কিছু পরে আপনি গেলেন ঠিক ওই কুয়োটার পেছনে। আপনার চোখ মানববাবুর দিকে, ওনার হাতটা নিজের প্রকাণ্ড যৌনাঙ্গকে প্রচণ্ড জোরে নাড়িয়ে চলেছে, এরপর ধীরে ধীরে মালতী দেবীর শরীর থেকে লজ্জার সমস্ত আবরন সরে যায়। আপনিও তো এই দৃশ্য দেখে চরম উত্তেজিত হয়ে পড়েছিলেন। তাহলে একি ঘটনা কেন মালতী দেবীর ক্ষেত্রেও ঘটবে না। মানব বাবুকে কিন্তু বাথরুম এর সামনে থেকে ভালোই বোঝা যাচ্ছিল। জানেন মেয়েদের যখন যৌন আকাঙ্খা চরমে পৌছায় তার সবচেয়ে বড় লক্ষন কি? ওরা পুরুষকে নিজের শরীর দেখিয়ে আকৃষ্ট করতে চায়। হাঁ এবার এই আকর্ষণটা কার উদ্দেশ্যে সেটাই রহস্য।
সুবীর বাবু মাথা নিচু করে বসে থাকলেন। একটাও কথা বলার মত অবস্থায় উনি ছিলেন না।
সত্য বাবুঃ এরপর পর্ব ১৮- মানবের খেলা (ডায়েরিটা খুলে ওনাকে দেখিয়ে) এটার মধ্যেই আসল রহস্য লুকিয়ে আছে। আপনি আর মানব বাবু ছিলেন শোয়ার ঘরে। মালতী দেবী ছিলেন এই কুয়োপাড়ে। কুয়োপাড় থেকে প্রায় সম্পূর্ণ শোয়ার ঘরটাই দেখা যায়। আপনারা ছিলেন মত্ত বেহুঁশ। মালতী দেবী ছিলেন স্বাভাবিক। আপনাদের সমস্ত কথাবার্তা যে উনি শুনতে পাচ্ছেন আপনাদেরকে ভালোভাবে দেখতে পাচ্ছেন এটাই তো স্বাভাবিক। উনি কিছুই বুঝছেন না গান্ধারীর মত চোখে কালো কাপড় বেঁধে আছেন এটাই তো অস্বাভাবিক। আর এরপরের ঘটনা তো সারা জীবনে আপনি কোনোদিন ভুলতে পারবেন না। আপনার পোশাক মানব বাবুর শরীরে আর মানব বাবুর পোশাক আপনার শরীরে। কিন্তু এতো বড় একটা খেলা একটা অনাচার একি সত্যি ই মালতী দেবী কিছুই জানলেন না বা বুঝলেন না। ভেবে দেখুন সুবীর বাবু।
সুবীর বাবু মাথা নিচু করে তাকিয়ে থাকলেন।
সত্য বাবুঃ হাঁ সুবীর বাবু এবার আমিও দেখতে পাচ্ছি, আমার কথা আপনি ভালো মতই বুঝতে পারছেন। আপনি বিশ্বাস ও করতে শুরু করেছেন। আমরা চলে আসি তার কিছুক্ষন পর, অর্থাৎ বাসন মাজা হয়ে গেলে মালতী দেবীর ঘরে প্রবেশ করার ঘটনা। সবার আগে উনি যা করেছিলেন তা হোল যেখানে মানব বাবুর শোয়ার ব্যাবস্থা অর্থাৎ মানবের জায়গায় যেখানে আপনি শুয়ে আছেন সেখানে তাকানো। যে মানুষটার সাথে উনি সারা জীবন কাটালেন শুধুই কি পোশাক পরিবর্তন করে তাকে আড়াল করা যায়? না সুবীর বাবু যায়না। মালতী দেবীও আপনাকে চিনতে পেরেছিলেন।
কিছুটা রাগ, কিছুটা ঘৃণা আর কিছুটা উত্তেজনায় সুবীর বাবু টগবগ করে ফুটতে লাগলেন।
সত্য বাবুঃ রান্নাঘরে বাসনগুলো রেখে দিয়ে উনি সবার আগে আপনার ঘরে শুয়ে থাকা মানবের দিকে দেখলেন। তারপর আবার আপনার দিকে এগিয়ে এসে বাইরে থেকে দরজাটা বন্ধ করে দিলেন। মালতী দেবীর মন ওনার শরীরের ক্ষিদের কাছে হেরে গেছিল সুবীর বাবু। যে তীব্র কামদহনে উনি জর্জরিত হচ্ছিলেন এতদিন ধরে সেই যন্ত্রণাই ওনাকে বাধ্য করে এই পদক্ষেপ নিতে। এর পরে মানব বাবুর আর মালতী দেবীর শরীর একে অপরের স্পর্শ ভোগ করে এতো আপনি জানেন। তাই আর নতুন করে কিছু বলছিনা।
সুবীর বাবু প্রচণ্ড হতাশায় নিজের মাথা চেপে ধরলেন।
সত্য বাবুঃ নিজের শরীরের ক্ষিদের কাছে হয়ত সাময়িকভাবে উনি নিজেকে সমর্পণ করেছিলেন। মানবের শরীরের প্রতিটা স্পর্শ ওনার শরীরে আগুন জ্বালিয়েছিল এটা সত্যি। পুরুষ শরীরের বলবান পেশীগুলো যখন ওনার শরীরকে দুমড়ে মুচড়ে কামনার তীব্র দহনে জর্জরিত করে তুলেছিল উনি হারিয়ে গিয়েছিলেন, মনে হয়নি উনি পরস্ত্রী। কিন্তু মালতী দেবী নিজেকে সম্পূর্ণভাবে মানবের কাছে সমর্পণ করতে পারেননি। ওনার হৃদয়ে যে আপনার ই নাম লেখা ছিল সুবীর বাবু। উনি পারেন নি নিজের বিবেককে বিসর্জন দিতে। নিজেকে মানবের লোভনীয় বাহুডোর থেকে মুক্ত করে উনি আপনার ই কাছে ফিরে এসেছিলেন। হয়ত এরপর ও সংসারের টান আর দুই মানুষের পরস্পরের প্রয়োজনীয়তায় সব ঠিক হয়ে যেত। কিন্তু ওই- নারীর অভিমান যে বড় কঠোর আর অনমনীয় সুবীর বাবু।
সুবীর বাবু জানেন ওনার নিজের ই পরিবারে কিছু ঘটনা ঘটে গেছে যা উনি জানেন না। সত্য বাবুর এই ইঙ্গিত উনি খুব ভালো করেই বুঝলেন। উনি এটাও জানেন ওনার আড়ালে ওনার পরিবারে ঠিক কি ঘটেছে সেই রহস্যই ধীরে ধীরে সত্য বাবু ওনার সামনে প্রকাশ করবেন।
সত্য বাবুঃ না সুবীর বাবু, কে সেই অশরীরী তা আমি এইমুহূর্তেই আপনাকে বলবনা। এটাই তো গল্পের সবচেয়ে বড় রহস্য। তারচেয়ে বরং আরও কিছু পর থেকে আমি গল্প শুরু করি। আপনার আর মালতী দেবীর মধ্যে অভিমান চরমে পৌছায়। মালতী দেবী আপনাকে এড়িয়ে চলতে শুরু করে। আপনিও ওনাকে আর আগের মত নিজের কলেজের বা সহশিক্ষকদের ব্যাপারে কিছুই বলেন না। এক কথায় আপনাদের মধ্যে এক অদৃশ্য কিন্তু শক্তিশালী প্রাচীর তৈরি হয়। ধীরে ধীরে আপনি নিজের কাজের চাপে আবার ব্যস্ত হয়ে যান, এবং স্বামী স্ত্রীর এই মনমালিন্যকে সম্পূর্ণ অবজ্ঞা করে দূরে সরিয়ে দেন। আপনার তো না হয় কাজের চাপ ছিল, ব্যস্ত জীবন ছিল কিন্তু মালতী দেবীর কাছে কি ছিল? কোন অদৃশ্য বলে উনিও আপনার ই পথে চলতে শুরু করেন। অভিমান ক্ষনস্থায়ী ব্যাপার। মানুষ নিজের ই প্রয়োজনে অভিমানকে দূরে সরিয়ে সব ঠিক করে নেয়। কিন্তু মালতী দেবীর এমন কি হোল যে উনিও আপনাকে এড়িয়ে চলা শুরু করলেন? ভেবেছেন কখনো?
সত্য বাবুর ইঙ্গিত অত্যন্ত ভালোভাবেই বুঝে যান সুবীর বাবু।
সত্য বাবুঃ আপনি যে বুঝে গেছেন সে ব্যাপারে আমি ১০০ ভাগ নিশ্চিত। এবার আসি এর কয়েকদিন পরের কথায়। রূপসা আর তিলোত্তমা ১ সপ্তাহের জন্য পিসির দেশের বাড়িতে ঘুরতে গিয়েছিল। আপনি আর মালতী দেবী সম্পূর্ণ একা। আপনি সেদিন কলেজে চলে যান। তারপর মালতী দেবী বাড়িতে একাই ছিলেন এবং সংসারের কাজকর্ম সারছিলেন। দরজায় একটা কড়া নাড়ার আওয়াজ। দরজা খুলে মালতী দেবী দেখেন বাইরে মানব বাবু দাঁড়িয়ে।
চমকে উঠলেন সুবীর বাবু। কথাগুলো সত্যবাবু প্রায় এক নিঃশ্বাসে বলে ফেলেছিলেন। উনি আবার শুরু করলেন।
সত্য বাবুঃ ভুতের ভয় কেটে যাওয়া আর মালতী দেবীর পরিবর্তিত পরিস্থিতির সাথে মানিয়ে নেওয়া সব ই লুকিয়ে আছে এই মানবের প্রত্যাবর্তনের ওপর।
পর্ব ১- মানবের প্রত্যাবর্তনঃ
সত্য বাবুঃ “ঠিক আছে তুমি বিশ্বাস করোনা। আমিও তোমায় বিশ্বাস করাতে যাবনা। তুমি বাবা হিসেবে একজন গবেষক হিসেবে যতটা ভালো একজন স্বামী হিসেবে ঠিক ততটাই উদাসীন”- কি সুবীর বাবু মনে পড়ে কথাটা আপনাকে কে বলেছিল? হাঁ অন্য কেউ নয় আপনার ই স্ত্রী মালতী দেবী এই কথাগুলো আপনাকে উদ্দেশ্য করে বলেছিলেন। আর উত্তরে আপনি কি বলেছিলেন মনে আছে?
সুবীর বাবু মাথা নিচু করে বসে থাকে। হয়ত হতাশার থেকেও আশঙ্কাই ওনাকে বেশি গ্রাস করেছে। এরপর সত্য বাবুর মুখ থেকে উনি ঠিক কি শুনতে চলেছেন তার আভাস সত্য বাবু কিছুক্ষন আগেই ওনাকে দিয়ে দিয়েছেন।
সুবীর বাবুঃ “স্বামী হিসেবে আমি কেমন তা তোমার পক্ষে বোঝা সম্ভব নয়। যে চিরকাল শুধু কিকরে একটু সুখ পাওয়া যায় সে কথা ভেবে গেলো, সে কি করে দায়িত্ব কর্তব্য নিয়ে বুঝবে” ঠিক এই কথাটাই আপনি বলেছিলেন মালতী দেবীকে। কথাটা কি সত্যি সুবীর বাবু? নিজেই বলুন সত্যি কি?
এতক্ষনে মুখ খোলেন সুবীর বাবু। সত্য বাবুর দিকে তাকিয়ে বলে ওঠেন
সুবীর বাবুঃ দেখুন সত্য বাবু, স্বামী স্ত্রীর মধ্যে এরকম ভুল বোঝাবুঝি একটু আধটু তো হয়েই থাকে। কিন্তু তা আবার নিজের থেকে ঠিক ও হয়ে যায়। এতে কোনও ভুল নেই। আমি সময় করে ওকে ঠিক ই বুঝিয়ে বলে দিতাম।
সত্য বাবুঃ বলে দিতাম- তারমানে বলেননি তো? একবার ও ভাবেননি যে আপনার এই কথাটা ঠিক কি পরিমান অভিমানের সঞ্চার করতে পারে। একটু ভেবে দেখুন।
সুবীর বাবুঃ না আমি ওর হাত ধরে ক্ষমা চেয়েছিলাম। ওকে বুঝিয়েছিলাম। আমি স্বীকার করেছিলাম আমার বিশাল ভুল হয়ে গেছে বলে। কিন্তু ও বুঝতে চায়নি। আমার ওপর একটা অভিমান পুষেই রেখে দিয়েছে।
সত্য বাবুঃ তা সেটা কি উনি অন্যায় করেছেন? নারীর অভিমান বড্ড কঠিন ও অনমনীয়। যতই হোক মালতী দেবীও একজন নারী। আপনি ভাবলেন কি করে উনি এতো সহজে আপনার এই এতো বড় অপমান ভুলে যাবেন?
সুবীর বাবুঃ বিশ্বাস করুন সত্য বাবু। আমি এরপরেও ওকে অনেকবার এই ব্যাপারে বুঝিয়েছি, ক্ষমা চেয়েছি। কিন্তু ও আমায় কথাই বলতে...
সুবীর বাবুর কথা সম্পূর্ণ করতে না দিয়ে সত্য বাবু বলে ওঠেন
সত্য বাবুঃ সুবীর বাবু আপনাদের এতো বছরের দাম্পত্য জীবনে কখনো মালতিকে নিয়ে আপনার কোনও অভিযোগ আছে কি? দুই মেয়ের পড়াশুনার ক্ষতির কথা ভেবে আপনি নিজের স্ত্রীকে শারীরিক ভাবে অভুক্ত রাখলেন। একবারও কি ভেবেছেন যে ওর ও শরীরে একটা ক্ষিদে আছে। ওর ও আপনাকে আদর করতে ইচ্ছে হয়। না সুবীর বাবু আপনি ভাবেন নি।
সুবীর বাবু হতাশায় মাথা নিচু করে নেন। সত্য বাবু আবার বলে ওঠেন
সত্য বাবুঃ সেদিন রাতের কথা একবার ভাবুন সুবীর বাবু। মানব বাবু আপনাদের বাড়িতে এসেছিলেন, আপনারা আকণ্ঠ মদ্যপান করলেন। তার আগে মালতী দেবীর আচরনে আপনি তো এটা বুঝেছিলেন বহুদিন বাদে শারীরিক মিলনের ইচ্ছায় উনি পাগল হয়ে আছেন। সুবীর বাবু আপনার জীবনের সবচেয়ে বড় রহস্যটা এবার আপনার সামনে ফাঁস করব।
সুবীর বাবু প্রায় চমকে গিয়ে সত্য বাবুর দিকে তাকালেন। রহস্য বলতে উনি ঠিক কি বলতে চেয়েছেন।
সত্য বাবুঃ সুবীর বাবু, সেদিন মানব অনেক চালাকি করেছিল। কিন্তু একটা কথা জানেন তো মেয়েদের ষষ্ঠ ইন্দ্রিয়টা প্রচণ্ড শক্তিশালী। মালতী দেবীর উলঙ্গ হয়ে কাপড় পাল্টানো, মানবের চুপিসাড়ে তা লক্ষ্য করা, আপনার স্থির হয়ে বসে থাকা, আপনার ই পোশাক পড়ে মানব বাবুর আপনার শোয়ার ঘরে প্রবেশ করা- এসব ই কি নেহাত ই কাকতালীয়। একজন বিবাহিত মহিলা কি এতটাই বোকা। আমি অন্তত মনে করিনা। আকণ্ঠ মদ্যপান আপনি করেছিলেন কিন্তু মালতী দেবী তো স্বাভাবিক ছিলেন তাহলে?
সুবীর বাবুঃ (প্রচণ্ড জোরে মাথা নাড়াতে নাড়াতে)না সত্য বাবু আপনার ইঙ্গিত আমি মানিনা। আপনি ঠিক বলছেন না।
ঈষৎ হেঁসে সত্য বাবু বলে ওঠেন
সত্য বাবুঃ মানসিক ভাবে প্রস্তুত হন সুবীর বাবু। আপনার জীবনের সবচেয়ে বড় আঘাতটা আসতে চলেছে।
সত্য বাবুর ইঙ্গিত অনায়াসেই বুঝে যান সুবীর বাবু। উনি জানেন গল্পটা শেষ অবধি না শুনেও ওনার নিস্তার নেই। স্থির হয়ে সত্য বাবুর গল্প শোনা শুরু করেন সুবীর বাবু।
সত্য বাবুঃ যৌনতা মানুষের জীবনের অঙ্গ। আমরা লজ্জায় একে দূরে সরিয়ে রাখতে পারি কিন্তু অবজ্ঞা করতে পারিনা। আর সবচেয়ে বড় সত্য এটাই যে মানুষের মোট ৬ খানা রিপুর মধ্যে এই কামরিপুর জন্যই মানুষ সবচেয়ে বেশি অপরাধ বা পাপ করে ফেলে। মালতী দেবীও মানুষ, সুবীর বাবু।
সুবীর বাবু কোনও উত্তর দেন না, শুধু শান্ত হয়ে শুনতে থাকেন। সত্য বাবু এই প্রথমবার ডায়েরিটা খোলা শুরু করেন। সুবীর বাবুর বাড়িতে এই প্রথমবারের জন্য ডায়েরিটা খোলা হয়।
সত্য বাবুঃ প্রথম খণ্ড- পর্ব ১৭- সুবীরের উত্তেজনা। মনে পড়ছে সুবীর বাবু? মনে করুন সুবীর বাবু। আপনি সম্পূর্ণ মত্ত ছিলেন, মালতী দেবীর নগ্ন শরীরটা দেখার জন্য আপনার কাছে মানব বাবু নানারকম ছলচাতুরি করে চলেছিলেন, বিভিন্ন কায়দায় আপনার কামরিপুকে উত্তেজিত করে চলেছিলেন। আপনাদের মধ্যে অনেকক্ষণ কথা হয় সুবীর বাবু। তা অন্তত ৪০ মিনিট তো হবেই। মালতী দেবী সেইসময় রান্নাঘরে ছিলেন। আপনারা দুজনে ঠিক এখানে বসে ছিলেন। এর কিছুক্ষন পর মালতী দেবী হাতে একটা ব্যাগ নিয়ে বাথরুমের দিকে এগিয়ে গেলেন। আর তারপর “সুবীর চল একটা খেলা খেলি আজ। তুই আর আমি ছাড়া কেউ তা জানবে না। আমি যাই করিনা কেন তুই আমায় লক্ষ্য করবি। আর এমন ভাবে লক্ষ্য করবি যেন তুই লুকিয়ে আমায় দেখছিস আর আমি কিছুই বুঝতে পারছিনা। তোর বউ খুব সুন্দরী রে” মনে পড়ে সুবীর বাবু।
লজ্জায় দুহাত দিয়ে সুবীর বাবু মুখ ঢেকে দেন। সত্য বাবু নিজের কথা বন্ধ করেন না।
সত্য বাবুঃ লজ্জা পাওয়ার কিছুই নেই সুবীর বাবু। আসল রহস্যটা বা আপনার কাছে গোপন একটি ব্যাপার শোনার জন্য প্রস্তুত হয়ে যান।
সুবীর বাবু কোনরকমে মানসিকভাবে প্রস্তুত হয়ে উঠে বসেন।
সত্য বাবুঃ আমরা যে এখানে বসে এতো কথা বলছি আপনি কি মনে করেন রান্নাঘরে এইমুহূর্তে কেউ থাকলে শুনতে পাচ্ছেনা? ভালো করে ভাবুন সুবীর বাবু। পরিস্থিতিটা ঠিক এরকম ই ছিল। সুবীর বাবু, আপনার আর মানববাবুর প্রতিটা কথাই মালতী দেবী সেদিন শুনতে পেয়েছিলেন। কি মনে হচ্ছে আপনার ওনার মনের অবস্থা সবকিছু শুনে কি হয়েছিল?
সুবীর বাবু প্রায় চমকে গেলেন এই কথা শুনে। কোনও উত্তর না দিয়ে সত্য বাবুর দিকে তাকিয়ে থাকলেন।
সত্য বাবুঃ আগুনে এক চামচে ঘি ঢাললে কি হয় জানেন? আগুন টা দাউদাউ করে জ্বলে ওঠে। সুবীর বাবু, আত্মত্যাগের ও একটা সীমা আছে। মেয়েরা ভালো মানুষ হোল, নাম কার হোল? আপনার। আপনি গবেষণায় বিশাল নাম করলেন, সম্মান কে পেলো? একা আপনি। মালতী দেবী কি পেলেন? স্বামী, মেয়ে, সংসার এই দেখে তো নিজের জীবনটাই নষ্ট করে গেলেন। সবকিছু তো উনি মুখ বুজে সহ্য করে গিয়েছিলেন কিন্তু কাম, কামদহন এ বড় যন্ত্রণার সুবীর বাবু, বড় যন্ত্রণার। মালতী দেবীর মন, শরীর দুই ই এই একটা ঘণ্টা রান্নাঘরে একে অপরের সাথে লড়াই করে চলেছিল। হয়ত সবসময় মন আর শরীরের লড়াইতে মন জেতেনা। এক লক্ষ বারে একবার হলেও শরীর জেতে। তাই হয়েছিল সুবীর বাবু। মালতী দেবীর শরীরে আগুনের ঝল্কা ঝরছিল আর মনে ছিল চরম দ্বিধা।
সুবীর বাবুঃ এ আপনি কি বলছেন, এটা হতে পারেনা। আমি বিশ্বাস করিনা।
কথাটা বেশ জোরে চিৎকার করেই বলে ফেলেছিলেন সুবীর বাবু। হয়ত উনি ভুলেই গিয়েছিলেন ওনার সামনে কোনও মানুষ নয় এক অতৃপ্ত আত্মা বসে আছে। সত্য বাবু শুধুই একটু মুখ টিপে হাসলেন।
সত্য বাবুঃ শুধু গল্পটা পড়ে শোনানোর জন্য আমি এখানে আসিনি সুবীর বাবু। প্রতিটা গল্পই একটা শিক্ষা। সেই শিক্ষাটা আপনাকে দেওয়ার জন্যই আমি এসেছি। একটিবার স্মৃতি রোমন্থন করুন সুবীরবাবু। মনব বাবুর যাওয়ার কিছু পরে আপনি গেলেন ঠিক ওই কুয়োটার পেছনে। আপনার চোখ মানববাবুর দিকে, ওনার হাতটা নিজের প্রকাণ্ড যৌনাঙ্গকে প্রচণ্ড জোরে নাড়িয়ে চলেছে, এরপর ধীরে ধীরে মালতী দেবীর শরীর থেকে লজ্জার সমস্ত আবরন সরে যায়। আপনিও তো এই দৃশ্য দেখে চরম উত্তেজিত হয়ে পড়েছিলেন। তাহলে একি ঘটনা কেন মালতী দেবীর ক্ষেত্রেও ঘটবে না। মানব বাবুকে কিন্তু বাথরুম এর সামনে থেকে ভালোই বোঝা যাচ্ছিল। জানেন মেয়েদের যখন যৌন আকাঙ্খা চরমে পৌছায় তার সবচেয়ে বড় লক্ষন কি? ওরা পুরুষকে নিজের শরীর দেখিয়ে আকৃষ্ট করতে চায়। হাঁ এবার এই আকর্ষণটা কার উদ্দেশ্যে সেটাই রহস্য।
সুবীর বাবু মাথা নিচু করে বসে থাকলেন। একটাও কথা বলার মত অবস্থায় উনি ছিলেন না।
সত্য বাবুঃ এরপর পর্ব ১৮- মানবের খেলা (ডায়েরিটা খুলে ওনাকে দেখিয়ে) এটার মধ্যেই আসল রহস্য লুকিয়ে আছে। আপনি আর মানব বাবু ছিলেন শোয়ার ঘরে। মালতী দেবী ছিলেন এই কুয়োপাড়ে। কুয়োপাড় থেকে প্রায় সম্পূর্ণ শোয়ার ঘরটাই দেখা যায়। আপনারা ছিলেন মত্ত বেহুঁশ। মালতী দেবী ছিলেন স্বাভাবিক। আপনাদের সমস্ত কথাবার্তা যে উনি শুনতে পাচ্ছেন আপনাদেরকে ভালোভাবে দেখতে পাচ্ছেন এটাই তো স্বাভাবিক। উনি কিছুই বুঝছেন না গান্ধারীর মত চোখে কালো কাপড় বেঁধে আছেন এটাই তো অস্বাভাবিক। আর এরপরের ঘটনা তো সারা জীবনে আপনি কোনোদিন ভুলতে পারবেন না। আপনার পোশাক মানব বাবুর শরীরে আর মানব বাবুর পোশাক আপনার শরীরে। কিন্তু এতো বড় একটা খেলা একটা অনাচার একি সত্যি ই মালতী দেবী কিছুই জানলেন না বা বুঝলেন না। ভেবে দেখুন সুবীর বাবু।
সুবীর বাবু মাথা নিচু করে তাকিয়ে থাকলেন।
সত্য বাবুঃ হাঁ সুবীর বাবু এবার আমিও দেখতে পাচ্ছি, আমার কথা আপনি ভালো মতই বুঝতে পারছেন। আপনি বিশ্বাস ও করতে শুরু করেছেন। আমরা চলে আসি তার কিছুক্ষন পর, অর্থাৎ বাসন মাজা হয়ে গেলে মালতী দেবীর ঘরে প্রবেশ করার ঘটনা। সবার আগে উনি যা করেছিলেন তা হোল যেখানে মানব বাবুর শোয়ার ব্যাবস্থা অর্থাৎ মানবের জায়গায় যেখানে আপনি শুয়ে আছেন সেখানে তাকানো। যে মানুষটার সাথে উনি সারা জীবন কাটালেন শুধুই কি পোশাক পরিবর্তন করে তাকে আড়াল করা যায়? না সুবীর বাবু যায়না। মালতী দেবীও আপনাকে চিনতে পেরেছিলেন।
কিছুটা রাগ, কিছুটা ঘৃণা আর কিছুটা উত্তেজনায় সুবীর বাবু টগবগ করে ফুটতে লাগলেন।
সত্য বাবুঃ রান্নাঘরে বাসনগুলো রেখে দিয়ে উনি সবার আগে আপনার ঘরে শুয়ে থাকা মানবের দিকে দেখলেন। তারপর আবার আপনার দিকে এগিয়ে এসে বাইরে থেকে দরজাটা বন্ধ করে দিলেন। মালতী দেবীর মন ওনার শরীরের ক্ষিদের কাছে হেরে গেছিল সুবীর বাবু। যে তীব্র কামদহনে উনি জর্জরিত হচ্ছিলেন এতদিন ধরে সেই যন্ত্রণাই ওনাকে বাধ্য করে এই পদক্ষেপ নিতে। এর পরে মানব বাবুর আর মালতী দেবীর শরীর একে অপরের স্পর্শ ভোগ করে এতো আপনি জানেন। তাই আর নতুন করে কিছু বলছিনা।
সুবীর বাবু প্রচণ্ড হতাশায় নিজের মাথা চেপে ধরলেন।
সত্য বাবুঃ নিজের শরীরের ক্ষিদের কাছে হয়ত সাময়িকভাবে উনি নিজেকে সমর্পণ করেছিলেন। মানবের শরীরের প্রতিটা স্পর্শ ওনার শরীরে আগুন জ্বালিয়েছিল এটা সত্যি। পুরুষ শরীরের বলবান পেশীগুলো যখন ওনার শরীরকে দুমড়ে মুচড়ে কামনার তীব্র দহনে জর্জরিত করে তুলেছিল উনি হারিয়ে গিয়েছিলেন, মনে হয়নি উনি পরস্ত্রী। কিন্তু মালতী দেবী নিজেকে সম্পূর্ণভাবে মানবের কাছে সমর্পণ করতে পারেননি। ওনার হৃদয়ে যে আপনার ই নাম লেখা ছিল সুবীর বাবু। উনি পারেন নি নিজের বিবেককে বিসর্জন দিতে। নিজেকে মানবের লোভনীয় বাহুডোর থেকে মুক্ত করে উনি আপনার ই কাছে ফিরে এসেছিলেন। হয়ত এরপর ও সংসারের টান আর দুই মানুষের পরস্পরের প্রয়োজনীয়তায় সব ঠিক হয়ে যেত। কিন্তু ওই- নারীর অভিমান যে বড় কঠোর আর অনমনীয় সুবীর বাবু।
সুবীর বাবু জানেন ওনার নিজের ই পরিবারে কিছু ঘটনা ঘটে গেছে যা উনি জানেন না। সত্য বাবুর এই ইঙ্গিত উনি খুব ভালো করেই বুঝলেন। উনি এটাও জানেন ওনার আড়ালে ওনার পরিবারে ঠিক কি ঘটেছে সেই রহস্যই ধীরে ধীরে সত্য বাবু ওনার সামনে প্রকাশ করবেন।
সত্য বাবুঃ না সুবীর বাবু, কে সেই অশরীরী তা আমি এইমুহূর্তেই আপনাকে বলবনা। এটাই তো গল্পের সবচেয়ে বড় রহস্য। তারচেয়ে বরং আরও কিছু পর থেকে আমি গল্প শুরু করি। আপনার আর মালতী দেবীর মধ্যে অভিমান চরমে পৌছায়। মালতী দেবী আপনাকে এড়িয়ে চলতে শুরু করে। আপনিও ওনাকে আর আগের মত নিজের কলেজের বা সহশিক্ষকদের ব্যাপারে কিছুই বলেন না। এক কথায় আপনাদের মধ্যে এক অদৃশ্য কিন্তু শক্তিশালী প্রাচীর তৈরি হয়। ধীরে ধীরে আপনি নিজের কাজের চাপে আবার ব্যস্ত হয়ে যান, এবং স্বামী স্ত্রীর এই মনমালিন্যকে সম্পূর্ণ অবজ্ঞা করে দূরে সরিয়ে দেন। আপনার তো না হয় কাজের চাপ ছিল, ব্যস্ত জীবন ছিল কিন্তু মালতী দেবীর কাছে কি ছিল? কোন অদৃশ্য বলে উনিও আপনার ই পথে চলতে শুরু করেন। অভিমান ক্ষনস্থায়ী ব্যাপার। মানুষ নিজের ই প্রয়োজনে অভিমানকে দূরে সরিয়ে সব ঠিক করে নেয়। কিন্তু মালতী দেবীর এমন কি হোল যে উনিও আপনাকে এড়িয়ে চলা শুরু করলেন? ভেবেছেন কখনো?
সত্য বাবুর ইঙ্গিত অত্যন্ত ভালোভাবেই বুঝে যান সুবীর বাবু।
সত্য বাবুঃ আপনি যে বুঝে গেছেন সে ব্যাপারে আমি ১০০ ভাগ নিশ্চিত। এবার আসি এর কয়েকদিন পরের কথায়। রূপসা আর তিলোত্তমা ১ সপ্তাহের জন্য পিসির দেশের বাড়িতে ঘুরতে গিয়েছিল। আপনি আর মালতী দেবী সম্পূর্ণ একা। আপনি সেদিন কলেজে চলে যান। তারপর মালতী দেবী বাড়িতে একাই ছিলেন এবং সংসারের কাজকর্ম সারছিলেন। দরজায় একটা কড়া নাড়ার আওয়াজ। দরজা খুলে মালতী দেবী দেখেন বাইরে মানব বাবু দাঁড়িয়ে।
চমকে উঠলেন সুবীর বাবু। কথাগুলো সত্যবাবু প্রায় এক নিঃশ্বাসে বলে ফেলেছিলেন। উনি আবার শুরু করলেন।
সত্য বাবুঃ ভুতের ভয় কেটে যাওয়া আর মালতী দেবীর পরিবর্তিত পরিস্থিতির সাথে মানিয়ে নেওয়া সব ই লুকিয়ে আছে এই মানবের প্রত্যাবর্তনের ওপর।