20-11-2019, 09:28 PM
নষ্ট নীড়
এক
সুদিপার স্বামী অনিকেত একটু আগে বাঙ্গালোর চলে গেল। ওর চলে যাওয়ার পর থেকেই আকাশ জুড়ে ঝিরি ঝিরি বৃষ্টি শুরু হয়ে গেছে। ওর ২ বছরের ছেলে টা এখনও ঘুমাচ্ছে। সুদিপা বারান্দায় এসে দাঁড়ালো। রবিবারের আকাশ কালো মেঘের আস্তরনে ঢেকে বৃষ্টি এনেছে। কলকাতায় এ’বছর বর্ষা’র প্রথম বৃষ্টি ভরা রবিবারের সকাল। হালকা ঠাণ্ডা হাওয়া দিচ্ছে। বাতাসে জল ভেসে বেড়াচ্ছে, পাশের বিছানা টা ভিজিয়ে দিল। আকাশের দিকে তাকাল সুদিপা, মেঘের দলে রা যেন দৌড় প্রতিযোগিতা তে নেমেছে। পর্দা টা ঠেলে ঘরের ভেতরে এলো আধ ভিজে খবরের কাগজ দুটো তুলে নিয়ে।সুদিপা ২৬, ৫ ফিট ৩ ইঞ্চি লম্বা, ফরসা না রোগা না মোটা চেহারা। সেক্টর ফাইভ এ নামকরা সফ্টওয়্যার কোম্পানি তে কাজ করে। অনিকেত আছে বিদেশ দপ্তর এ। ওদের বিয়ে হয় বেঙ্গলি বিবাহ সাইট থেকে যোগাযোগ করে। অনিকেত খুব সান্ত এবং ভীষণ ব্যস্ত মানুষ।
সুদিপা শো কেস এর ওপরে রাখা নিজের ছবি টা দেখে। এই শাড়ি টা ও কিনেছিল বাঙ্গালোর এর দোকান থেকে। কাগজ টা দেখতে হটাত ওর মনে পরে দুধ আনতে হবে। তাই নাইটি টা ছেড়ে একটা স্লিভলেস টপ আর কাপ্রি টা পরে নেয়। হাতে ছাতা নিয়ে বের হয় বাজার এর দিকে। এখন বিচ্ছু উঠবে না ও জানে। ফ্ল্যাট থেকে নেমে কিছু টা গিয়েই ই অনুভব করে ওর পিছনে আসছে ওর সামনের ফ্ল্যাট এর লোকটা। ওর আয়ার কাছে শুনেছে এর নাম বাপন পাল। ওর নাকি রাজারহাট এর কাছে দোকান আছে, পয়সা ওয়ালা লোক যাকে বলে। ওর বুঝতে বাকি থাকে না যে ওকে গিলছে বাপন পাল। যাক গে। ও এগিয়ে যায়, গোটা রাস্তা টা ওর পিছনে আসে বাপন। ও যে দোকানে দুধ নেয় সে ওকে চেনে তাই তাড়াতাড়ি ছেড়ে দেয় কিন্তু আজ বাপন কে সামনে দেখে ওকে দাঁড় করিয়ে রাখে। বাপন বেশ কিছু জিনিস নেয়। ওর একটু বিরক্তি লাগে, তাড়া দেয় দোকানী কে কিন্তু সে ব্যাবসাদার, যেখানে বেশি লাভ সেদিকেই দেখবে এটাই স্বাভাবিক। বাপন ওর দিকে তাকিয়ে আছে, ওর শরীর টা গিলছে। বাপন এর বয়েস হয়েছে, ৪২-৪৫ এর মধ্যে হবে। হটাত ওকে জিগ্যেস করে-
- বৌদি আমাদের বিল্ডিং এ থাকেন না?
- হাঁ। সংক্ষিপ্ত উত্তর দেয় ও।
- নাম টা জানতে পারি! আলাপ যখন হল।
- আমি সুদিপা।
- হাই, আমি বাপন পাল।
- ওহ হাই। যত ছোট উত্তর সম্ভব ও দেয় কিন্তু বাপন ছাড়বার পাত্র না।
- আমার রাজারহাট এ মাছের দোকান আছে। ইলিশ, চিংড়ি এর আমি কলকাতা অনলি এজেন্ট।
- ওহ তাই না কি? সুদিপা অবাক হয়।
- আপনাকে আমি খাওয়াব একদিন, বাপন দাঁত বের করে বলে।
ইতিমধ্যে বাপন এর জিনিস নেওয়া হয়ে যায়, তারপর সুদিপা কে দুধ দেয় দোকানদার। সুদিপা তাড়াতাড়ি ফিরে এসে দেখে বিচ্ছু খেলছে। ওকে রেডি করে খাইয়ে কাগজ টা নিয়ে বসে, ইতিমধ্যে কাজের মেয়ে দোলা চলে আসে, ওর জন্যে ম্যাগি করতে বলে। একটু পরেই দরজায় বেল বাজে। ও খুলতে দেখে হাতে একটা প্যাকেট নিয়ে বাপন দাঁড়িয়ে-
- আসুন আসুন। বাপন ভিতরে এসে ওর হাত এ প্যাকেট টা এগিয়ে দেয়
- আপনার জন্য, ইলিশ আর চিংড়ি।
- কত দেব? জিগ্যেস করে সুদিপা।
- এমা। ইস। এমনি খাওয়ালাম। সব কিছু কি পয়সার হিসাবে হয়? আমি তাহলে আসি!
- ইসস। তা হয় না কি। একটু চা খেয়ে যান।
বাপন এদিক ওদিক দেখতে থাকে। বেশ সাজান ফ্ল্যাট। দোলা চা নিয়ে আসে। সামনে বসে চা খায় সুদিপা আর বাপন। সুদিপার কোলে বিচ্ছু। বাপন বিচ্ছু কে কোলে নেয়, আদর করে। তারপর চলে যায়।