Thread Rating:
  • 8 Vote(s) - 3.13 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Romance তুমি এলে তাই
#6
Part -4

রুপসা ফোনটা কেটে দেবার পর কিছুক্ষন চুপ করে বসে থাকলো… মনের ভেতরে ছোটো বোনের ইয়ার্কি করে বলা… ‘তোর ও’… ‘আমার পেয়ারী পেয়ারী বৌদি’…কথাগুলো যেন বারে বারে নাড়া দিয়ে যাচ্ছে…বুকের ভেতরের খুশী… সারা মুখে উজ্জল হাসি ছড়িয়ে দিয়েছে…সম্বিত ফিরে এলো… ওর জুনিয়ার… পিয়াল হাসিমুখে সামনে দাঁড়িয়ে… Sir…any good newz? Another promotion?

না না…তেমন কিছু না…এমনি…একটা কথা মনে পড়ে গেল… বলো… মিটিং আছে…তাই তো?

হ্যাঁ…খুব টেনশান হচ্ছে…প্রেজেন্টেশানটা একবার দেখে নিলে ভালো হয়।

Don’t worry… আমার দেখা আছে…u just need 2 present as I told…i think boss wud be pleased to invite us fr dinner tonight…

পিয়াল হেসে ফেলে বলল… if so…credit will go entirely to u Sir.

পরের দিনই রুপসা আবার ফোন করল দুপুরে…পরের শনিবার সকালের ফ্লাইটে আসছে…কোলকাতা পৌঁছে আগে ভবানীপুরের বাড়ীতে যাবে…অফিস থেকে বেরিয়ে অরিত্র যেন ওকে নিয়ে আসে। বাড়ী ফিরে যদি বলতে ভুলে যায় ভেবে ও তখন ই দিদানকে ফোন করে জানিয়ে দিল যে রুপসা আসছে। দেখতে দেখতে শনিবার এসে গেল, রুপসা কে নিয়ে ট্রেনে ফিরতে অসুবিধা হবে বলে ও আজ গাড়ী নিয়েই অফিস চলে এসেছে। একটু তাড়াতাড়ি অফিস থেকে বেরিয়ে পড়ল যাতে তাড়াতাড়ি ভবানীপুর থেকে বেরিয়ে পড়া যায়। ওখানে গিয়ে যতটা তাড়াতাড়ি বেরোতে পারবে ভেবেছিল তা আর হল না, ছোটো জেঠিমা আর পুবালীদি একেবারে ছেঁকে ধরল ওকে। কেন ও আসে না…মাঝে মাঝে তো আসতে পারে…ওরা কি পর নাকি…এটা তো ওর নিজেরই বাড়ী…এখানে এসে না থাকুক…ঘুরে যেতে কি অসুবিধা। কিছুতেই না খাইয়ে ছাড়লো না…খেয়ে আরো কিছুক্ষন কাটিয়ে বেরোতে বেরোতে সাড়ে চারটে আর বাড়ী পৌঁছোতে প্রায় সাড়ে সাতটা বেজে গেল। মাঝে একবার দাদুকে ফোন করে জানিয়ে দিয়েছে যে ওরা আসছে…না হলে চিন্তা করবে।

ভাইবোন এসে গেলে দিদান টিভিটা বন্ধ করে দিয়ে বলল… রুপসা…আয়..আয়…কতদিন পরে এলি…মনে পড়ে না নাকি রে এই বুড়ো বুড়ী গুলোকে?

রুপসা দিদান কে জড়িয়ে ধরে বলল… আমার ঠিক মনে পড়ে…তোমার নাতি বরং ভুলে যায়…জিজ্ঞেস কর…একটা ফোন পর্যন্ত করে কিনা…ভাগ্যিস আমি সেদিন ফোন করলাম…না হলে তো এত বড় খবরটা জানতেই পারতাম না।

শুক্লাদি কাছেই দাঁড়িয়েছিল…মৌ শুক্লাদির পেছনে থেকে চোখ বড় বড় করে রুপসা কে দেখছিল। সারা মুখে বেশ একটা কৌতুহল…দিদিটা কেমন হবে কে জানে…যদিও শুনেছে দিদিটা খুব মিশুকে…

রুপসা ওকে দেখতে পেয়েই তাড়াতাড়ি করে গিয়ে… হাত ধরে বলল… এই…তুমি মৌ… তাই না… চলো…আমি নিজেই আলাপ করে নিচ্ছি… আমি কে জানো তো?
রুপসা যে এত তাড়াতাড়ি ওকে কাছে টেনে নেবে বুঝতে পারেনি… কয়েকদিন ধরে শুনছে একটা ভালো দিদি আসবে… কিন্তু এত ভালো বুঝতে পারেনি। ঘাড় নেড়ে জানালো…ও জানে।

দুটো অপরিচিত মেয়ে যে মন থেকে চাইলে কত তাড়াতাড়িকাছাকাছি চলে আসতে পারে তা বোধ হয় রুপসা আর মৌকে না দেখলে বোঝা যেত না। মৌ এর ঘরে বিছানায় বসে দুজনে আড্ডা দিচ্ছে…মনেই হচ্ছে না…ওদের একটু আগে দেখা হয়েছে… আর…ওদের একজন কথা বলতে পারে না। রুপসাই বেশি কথা বলছে…মৌ কখোনো হাসি মুখে…হাত বা মাথা নেড়ে ওর সাথে নীরবে কথা বলে যাচ্ছে।মাঝে একবার শুক্লাদি এসে ওদের কে কিছু স্ন্যকস আর কফি দিয়ে গিয়েছিল। অরিত্র ক্লাব থেকে ঘুরে এসে উপরে গিয়ে মৌ এর ঘরে উঁকি দিতেই রুপসা চেঁচিয়ে উঠল…এই দাদাভাই…ভেতরে আয় না…তুই কি রে…আমাদের কে ফেলে রেখে নিজে বেশ কেটে পড়লি।

আরে না…কেটে পড়িনি…পুজ়োর মিটিং ছিল…একবার মুখটা দেখিয়ে এলাম। তোরা তো শুনলাম…জমিয়ে আড্ডা দিচ্ছিস। তা…কি নিয়ে আড্ডা হচ্ছে শুনি।
রুপসা মুখটা একটু গম্ভীরকরে বলল…উঁ…হুঁ…তোকে বলা যাবে না…মেয়েদের গোপন আলোচনা ছেলেদের শুনতে নেই…জানিস না নাকি?

ঠিক আছে…আমি যাই…তোরা আড্ডা দে…
আরে বোস না…এমনি বললাম…আমাদের কি আবার গোপন কথা থাকতে পারে…তোকে নিয়েই কথা হচ্ছিল…
আমি আবার কি করলাম রে?
রুপসা চোখ ছোটো ছোটো করে বলল…ওঃ আমি আবার কি করলাম…এখন না হয় ভাজা মাছটি উল্টে খেতে জানিস না…ছোটো বেলায় কম দুষ্টু ছিলি নাকি…
মৌ অরিত্র আর রুপসার দিকে তাকাতে তাকাতে মুখ টিপে হাসছে দেখে অরিত্র বলল…একদম ওর কথায় বিস্বাস করবে না কিন্তু…সাঙ্ঘাতিক ফাজিল মেয়ে…

রুপসা ওর পিঠে একটা গাট্টা মেরে বলল…এই দাদাভাই…ভালো হবে না বলছি…আমি ফাজিল? আর তুই কি?

আমি আবার কি? আমি খুব ভালো…সবাই তো তাই বলে।
সে তো এখন বলে…তুই এত দুষ্টুমি করতিস যে দাদু তোকে দুষ্টূ বলে ডাকতো…ভুলে গেছিস নাকি?
ডাকতো কি রে…এখোনো মাঝে মাঝে ওই নামে ডাকে…

পরের দিন সকালে যথারীতি অরিত্র পড়ে পড়ে ঘুমোচ্ছিল, রুপসা ওর কাঁধে হাত রেখে আস্তে আস্তে করে ঝাঁকালে চোখ খুলে একবার তাকিয়ে আবার ঘুমোবার জন্য চোখ বুজে ফেললো…রুপসা ধপাস করে ওর পাশে বসে পড়ে বলল…এই দাদাভাই ওঠ না…
অরিত্র কোল বালিশ টাকে আরো ভালো করে জড়িয়ে নিয়ে পাশ ফিরতে ফিরতে বলল…আর একটু ঘুমোতে দে না বাবা…তাড়াতাড়ি উঠে কি করবো…

রুপসা ওর কানের কাছে মুখ নিয়ে গিয়ে দুষ্টুমি করে বলল…তোর জন্য কেউ একজন আসছে…তাই তাড়াতাড়ি উঠবি…আর…কোলবালিশটা কে এমন করে জড়াবার কি আছে…বাড়ীতে তো একজন আছেই জড়িয়ে ধরার জন্য…তার কাছে যেতে পারছিস না?
এই…রুপসা…ভালো হবে না বলছি…

ইস…ভালো হবে না বলছি…কি করবি রে তুই আমার… ব্যাটা বুদ্ধুরাম…কিচ্ছু বুঝিস না…
অরিত্র ঘুরে শুয়ে রুপসার দিকে তাকিয়ে কিছু বলতে গিয়ে থেমে গেল…খুব প্রিয় কেউ একজন হাতে একটা ট্রে…তিনটে চায়েরকাপ তাতে…ওর দিকে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে…
রবিবারের বাজার টা সাধারনত অরিত্র ই করে, মোটামুটি সারা সপ্তাহে কি কি লাগতে পারে দেখে নিয়ে চলে আসে। বাজার থেকে ফিরে ক্লাবে গিয়ে একবার ঘুরে এলো…কালচারাল প্রোগ্রামের মিটিং ছিল…এবারে ওকে জয়েন্ট সেক্রেটারী করে দিয়েছে জোর করে…না গেলে খারাপ দেখাতো…ক্লাব থেকে ফিরে এলে দিদান বললো…রুপসা তোকে দুবার খুঁজে গেছে…। ঘরে ঢুকে দেখে দুজনে কালকের মতো গল্প করছে…রুপসা সরে গিয়ে ওকে বসতে বলে বলল…খুব মজা করছি রে দাদাভাই…আমি কিন্তু সব বলে দিয়েছি…বলেই মুখ টিপে হাসতে শুরু করল…
সব বলে দিয়েছিস মানে…বুঝলাম না…কি বলেছিস?
আরে সেই যে তোর আমাদের বাড়ী থেকে পালাতে গিয়ে বাগানে পা মুচকে সারা রাত বৃষ্টির মধ্যে পড়ে থেকে ধুম জ্বর এসে গিয়েছিল…
অরিত্র হেসে ফেলে বলল…ও আচ্ছা…কি জন্য পালাতে গিয়েছিলাম সেটাও বলেছিস নাকি?
বলবো না মানে…ওটাই তো আসল ব্যাপার…না বললে কি করে বুঝবে।
রুপসা…তুই না একটা যা তা…লজ্জা বলে কিছু নেই…ওটা আবার কেউ বলে নাকি।
রুপসা হেসে ফেলে বলল…দাদাভাই…মাঝে মাঝে আমার কি মনে হয় জানিস? তুই বোধ হয় ছেলেদের মতো দেখতে একটা মেয়ে... তোকে চুমু খেতে ইচ্ছে হয়েছিল…তাই খেয়েছিলাম…এতে আবার লজ্জার কি আছে? বয়স কম ছিল…
থাক তোকে আর পাকামো করতে হবে না…নিজের মাথা টা খারাপ আর এখন ওর মাথা টা খারাপ করছিস।
রুপসা মৌ এর দিকে তাকিয়ে বলল…জানো তো…দাদাভাই তার পর প্রায় এক বছর আমার সাথে কথা বলেনি…কত সাধ্য সাধনা করে যে বাবুর রাগ ভাঙ্গাতে হয়েছিল সে আমি জানি…
রবিবার দুপুরে এমনিতে খেতে কিছুটা দেরী হয়, আজ দিদান আর শুক্লাদি দুজনে মিলে রুপসা এসেছে বলে অনেক রকম রান্না করতে গিয়ে আরো একটু বেশী দেরী হয়ে গিয়েছিল। অরিত্র খাওয়ার পর কিছুক্ষন গড়িয়ে নিয়ে উঠে পড়ল, সবাই বোধ হয় ঘুমোচ্ছে ভেবে ছাদে গিয়ে চুপ করে নদীর দিকে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল…মাঝে মাঝে মনটা খুব অশান্ত হয়ে উঠছে…কি করবে কিছু বুঝে উঠতে পারছিল না…কখন যে রুপসা এসেছে বুঝতে পারেনি। রুপসার ডাকে ফিরে তাকালো…কি রে দাদাভাই…কি ভাবছিস?
কিছুক্ষন চুপ করে থেকে বলল…না…সেরকম কিছু না…এমনি ই ঘুম আসছিল না…

দাদাভাই তুই তো ভবানীপুরের বাড়ীতে গিয়ে মাঝে মাঝে থাকতে পারিস…ছোড়দিরা খুব দুঃখ করছিল

না রে…তুই যতটা সোজা ভাবছিস…তা নয়…উপরের ঘরটা তে গেলেই মনে হয় বাবা বসে আছে…বুকের ভেতর টা কেমন যেন গুমরে ওঠে…শুনেছি বাবা নাকি আমাকে খুব ভালোবাসতো…অফিস থেকে ফিরে আগে আমাকে কোলে নিয়ে আদর …তারপর…অন্য কাজ…গত বছর একদিন গিয়ে থাকার চেষ্টা করেছিলাম…সারারাত ঘুমোতে পারিনি…খালি মনে হচ্ছিল…মা বাবা…আমার দুদিকে বসে…বার বার বলছে…দুষ্টু…তোর দাদু দিদান খুব অসহায়…ওদের কে কোনো কষ্ট দিস না রে… তুই তো জানিস…রুপসা…দাদু, দিদান আর শুক্লাদির আমি ছাড়া আর কেউ নেই, তিনটে মানুষ আমার মুখ চেয়ে বেঁচে আছে…ওদের কষ্ট হবে ভেবে আমি কোথাও যেতে পারিনা…অফিস থেকে বার বার চাপ দিচ্ছে দু বছরের জন্য সিডনি যেতে…কোনো রকমে আটকে রেখেছি কিন্তু সামনের ডিসেম্বরে অন্তত দু মাসের জন্য যেতে হবেই। জানিনা কি হবে…দেখা যাক…যদি আটকাতে পারি…চাকরীটা ছেড়ে দেবো ভেবেছিলাম কিন্ত যেখানে জয়েন করবো সেখানেও তো একই রকম কিছু হতে পারে ভেবে আর এগোই নি… জানি না আমার জীবনে কেন এত সমস্যা…তোরা উপর থেকে হয়তো মনে করিস আমার মতো সুখী আর কেউ নেই…এত সম্পত্তি…দাদুর যা আছে আমি পাবো…ওদিকে ভবানীপুরে এত বড় বাড়ীর ভাগ…বম্বের মতো জায়গায় দু দুটো ফ্ল্যাট…ভালো চাকরী…কিন্তু মনের ভেতরে যে কি আছে আমিই জানি…ভীষন ভয় করতো…যার সাথে বিয়ে হবে সে দাদুদের কে মানিয়ে যদি না নিতে পারে…তার পর জীবনে এলো মৌ…যার দাদুদের কে মানিয়ে না নেবার কথা ভাবার কোনো প্রশ্ন উঠছে না কিন্তু…

রুপসা চুপ করে ওর কথা শুনছিল…থেমে যেতে দেখে ওর দিকে তাকালো…কিন্তু কি দাদাভাই…আমি যতদুর বুঝেছি…মৌ তোকে ভীষন ভাবে চায়…
জানি…
তাহলে? আটকাচ্ছে কোথায়?
ওর অতীত…আমরা তো কেউ জানিনা ও কে…
দাদাভাই…অতীত নিয়ে ভেবে কি লাভ আছে আমি জানি না…
জানি লাভ নেই…কিন্তু…এমনও তো হতে পারে ওর কেউ খুব কাছের আছে…কোনোদিন যদি ওর স্নৃতি ফিরে আসে আর ও তার কাছে ফিরে যেতে চায়…আমার কি উচিত হবে ওকে আটকানো…নাকি…আমি পারবো…
দাদাভাই…এখানে অনেক গুলো যদি আছে…এমন ও তো হতে পারে…তুই যা ভাবছিস … তা নয়… I feel…if you want to see the Light then you have to face the Dark….
অরিত্র কিছুক্ষন চুপ করে থাকার পর বলল…জানি…আমি কাউকে বোঝাতে পারবো না…
বিকালে রুপসা আর মৌকে নিয়ে ভবানীপুরের বাড়ীতে যেতে হবে, জেঠিমা আর পুবালীদি রুপসার কাছ থেকে মৌ এর ব্যাপারে শুনে ফোনেই খুব হইচই করে বলেছে একবার ওদের ওখানে নিয়ে যেতেই হবে। অরিত্র ওদের কে যে আগে জানায়নি তার জন্য দুজনেই খুব অভিমান করে বলেছে…তুই কি আমাদের পর ছাড়া আর কিছু ভাবতে পারিস না।পরে জানাবো ভেবেছিলাম…তারপর আর নানান ঝামেলায় জানানো হয়ে ওঠেনি বলে ওদের কে কোনোরকমে বুঝিয়ে সুঝিয়ে ঠান্ডা করেছে। দুটো নাগাদ বেরোতে হবে, না হলে ফিরতে ফিরতে অনেক রাত হয়ে যাবে বলে অরিত্র রুপসা কে তাড়া লাগালে কি হবে…সেই যে সাজতে বসেছে দুজনে…ওঠার নামই করে না। রুপসা মৌকে একটু একটু করে সাজিয়ে আরো অপরুপা করে তুলছিল…আই লাইনার টা খুব সাবধানে চোখের পাতায় বোলাতে বোলাতে ওর দিকে তাকিয়ে হাত যেন আটকে গেল…কি সুন্দর টানা টানা মায়াবী চোখ…দেখলেই ভালোবাসতে ইচ্ছে করবে…
মৌ এর মুখটা দুহাতে আলতো করে ধরে বলল… এই…মৌ…

মৌ রুপসার দিকে তাকালো জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালে ওর চোখে চোখে রেখে ফিসফিস করে বলল……এই…তুমি আমার বৌদি হবে?

মৌ আস্তে আস্তে করে চোখ নামিয়ে নিল…একটু আগেই যে মুখে হাসি ছিল…এখন সেখানে যেন শ্রাবনের মেঘ…রুপসা বুঝতে পারছিল না ওর মনের ভাষা…যেটুকু বুঝেছে তাতে তো একবার ও মনে হয়নি যে ও দাদাভাই কে পছন্দ করে না…
এই আমার দিকে তাকাও…দাদাভাইকে কি তোমার ভালো লাগে না?
একবার চোখ তুলে ওর দিকে তাকিয়ে মুখ নাবিয়ে নিল…একটু একটু করে শ্রাবনের মেঘ সরে গিয়ে ওর মিষ্টি মুখে লাজুক হাসি ফিরে এসে বোঝালো…ভীষন ভালো লাগে…
তাহলে?
দু চোখের ভাষায় বোঝালো…শুধু কি আমার ভালো লাগলে হবে?
রুপসা একটু চুপ করে থেকে বলল…জানি…আমার দাদাভাই টা কি…বুক ফেটে গেলেও মুখ ফুটবে না…ওর কেন যে মনের ভেতরে এত কিন্তু বুঝি না। একটু থেমে মৌ এর কাঁধে হাত রেখে হাসি মুখে বলল…তুমি পারবে না আমার বুদ্ধু দাদাভাই টাকে দিয়ে বলাতে যে ও তোমাকে চায়?

জেঠিমা আর পুবালী খুব খুশী ওদেরকে পেয়ে। সবাই মিলে গল্প করতে করতে জেঠুও অফিস থেকে ফিরে এলো। কোনো রকমে জেঠিমা আর পুবালীদিকে বোঝাতে পারলেও জেঠুকে বোঝানো খুব মুশকিল হয়ে গেল, সেই এক প্রশ্ন…অরিত্র কেন এই বাড়ীতে আসে না। খুব দুঃখ করে বললো…আমি জানি তোর কষ্টটা কোথায়…কিন্তু একটা কথা তুই বুঝতে চাস না…তোর ও যেমন মা বাবা কে হারানোর দুঃখ আছে, আমারও কি কম কষ্ট হয় নিজের ছোটো ভাইকে আর বৌমাকে হারিয়ে। তাছাড়া…তুই একবার ভাব…আমাদের তিন ভাই এর ছেলে মেয়েদের ভেতরে তুই এক মাত্র ছেলে…একটা মেয়ের তো বিয়ে হয়ে গেছে …পুবালীরও বিয়ের চেষ্টা চলছে…আর বাকি থাকলো রুপসা…ওরা সবাই চলে গেলে আমরা কাকে নিয়ে থাকবো বলতো?...জানি তুই ছাড়া তোর দাদু দিদানের আর কেউ নেই…তবুও আমাদেরও তো তোর উপরে একটা অধিকার আছে…

অরিত্র কিছুক্ষন চুপ করে থেকে বলল…জানি…তোমাদের জন্যও আমার কিছু কর্তব্য আছে… আর জানি বলেই মাঝে মাঝে নিজের উপরে একটা ধিক্কার আসে…সব দিক বজায় রাখতে পারিনা…আমি বোধ হয় একটা অপদার্থ…কি করবো বুঝতে পারি না…

ওদের কথার মাঝে জেঠিমা চলেএল…দুজনেরই মুখ থমথমে দেখে বলল…তুমি কি বলোতো…ছেলেটা এতদিন পর এলো…আর তুমি ওকে নিয়ে পড়ে গেলে…ওর দিকটাও একবার ভেবে দেখো…এইটুকু বয়সে ওকে যা দায়িত্ব নিতে হয়…কটা ছেলে নেয় বলোতো…

জেঠু কিছু বলতে যাচ্ছিল দেখে জেঠিমা থামিয়ে দিয়ে বললো…আরে বাবা…এত চিন্তা করার কিছু নেই… আমাদের ছেলেটাকে আর একটু বড় হতে দাও…বিয়ে হোক…আস্তে আস্তে সব ঠিক হয়ে যাবে…
হলেই ভালো…

আচ্ছা শোনো…তোমার সাথে একটা কথা আছে…দুষ্টু আছে…ওর সামনেই সেরে নেওয়া ভালো…
জেঠু হেসে ফেলে বলল…তুমি এখোনো ওকে দুষ্টু বলা ছাড়লে না…
জেঠিমা অরিত্রর পাশে বসে বলল…ও আমার কাছে চিরকাল দুষ্টুই থাকবে…কি রে…তুই আবার দুষ্টু বললে রাগ করিস না তো?

ঘরের একটু আগের গুমোট হাওয়াটা কেটে যাওয়াতে সবারই ভালো লাগছিল। অরিত্র হেসে বলল…রাগ করবো কেন…ছোটো বেলায় তো কম জ্বালাইনি তোমাদেরকে।

জেঠু হো হো করে হেসে ফেলে বলল…তোর দুষ্টুমি চলে গেলেও নামটা থেকেই গেল…কি বল। তারপর জেঠিমার দিকে তাকিয়ে বলল…বলো…কি বলবে বলছিলে…
বড়দি পুবালীর জন্য একটা ভালো ছেলের কথা বললো আজ…নিজে খুব একটা বিশেষ কিছু জানে না… ভালো ছেলে শুনে তাড়াতাড়ি করে খবরটা দিয়ে বলেছে সব কিছু দেখে নিতে…টিসিএস এ কাজ করে…দুষ্টু…তুই যদি একটু খোঁজ খবর নিয়ে বলতে পারিস…বুঝতেই পারছিস…একটা মাত্র মেয়ে…আজকাল যা হচ্ছে…খুব চিন্তা হয়…তোর জেঠুরতো অফিস ছাড়া আর কিছু জানা নেই…খোঁজ নিতে বললে কবে বাবুর সময় হবে তার ঠিক নেই…
জেঠিমা তুমি চিন্তা কোরোনা…তুমি ডিটেলস টা দিয়ে দাও…আমি সামনের সপ্তাহের ভেতরে খোঁজ নিয়ে নিচ্ছি…ছোড়দি জানেতো? না হলে আবার সেই আগের বারের মতো কান্নাকাটি জুড়ে দেবে।
না… না…অনেক বোঝানোর পর রাজী হয়েছে…এখন আর কোনো সমস্যা নেই…ওর একটাই শর্ত… বিয়ের পরেও চাকরী করতে দিতে হবে…না হলে এত পড়াশোনা করে কি লাভ।
ঠিকই তো বলেছে…
জ্জেঠু জেঠিমার সাথে কথা বলতে বলতে পুবালী এসে অরিত্রর হাত ধরে টেনে বলল…এই ভাই…চল…আমাদের সাথে গল্প করবি…কি খালি…বড়দের সাথে মুখ গোমড়া করে বসে আছিস।
অরিত্র পড়ে যেতে যেতে সামলে নিয়ে বলল…আচ্ছা বাবা…চল…যাচ্ছি…কোন দিকে যাই বলতো…তোর সাথে গল্প না করলে অভিমান করে বসে থাকবি…জেঠু জেঠিমাকে একটু সময় না দিলে তাদেরও খারাপ লাগবে।
পুবালী হাসতে হাসতে বলল…এক কাজ কর না…আজকাল কি সব গাড়ী বেরিয়েছে না…সব জায়গায় চলে…ওই একটা কিনে ফেল…তাহলে আর কোনো সমস্যা থাকবে না, অফিস ফেরত হুস করে চলে আসবি।
জেঠু হাসতে হাসতে বলল…হ্যাঁ…আসার সময় তোকেও তুলে নিয়ে এলে আরো ভালো হয়…
অরিত্র সামনের সপ্তাহের জন্য অপেক্ষা না করে পরের দিনই ওদের অফিসের এইচআর এর অনিন্দ সেন কে ফোন করে পুবালীর জন্য যে ছেলেটির খোঁজ এসেছে তার ব্যাপারে কথা বলে নিল…সেন দা নিজের প্রফেশানের সুবাদে অনেকের সাথে পরিচয় আছে যারা বিভিন্ন কোম্পানীতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে…এছাড়া ও নিজে এর আগে অনেক কোম্পানী ঘুরে আসায় পরিচিতি বেড়েছে…ওনার পক্ষে খোঁজ নেওয়াটা খুব একটা বড় কিছু নাও হতে পারে। সেন দা মাত্র দিন তিনেকের মধ্যে ছেলেটির হাঁড়ির খবর অব্দি জোগাড় করে অরিত্রকে ফোনে সব জানিয়ে দিল। সব দিক থেকে মোটামুটি ভালোই…এগোনো যেতে পারে বলে মনে হতে অরিত্র জেঠিমাকে ফোনে সব জানিয়ে দেবার পর আলাদা করে ছোড়দি কে ও জানাতে হল, পুবালী বার বার করে বলে দিয়েছিল…ওকেও জানাতে। পুবালীর সাথে কথা বলার সময় রুপসা পাশে ছিল, অরিত্রর কথা বলা হয়ে গেলে রুপসা ফোনটা প্রায় কেড়ে নিয়ে…প্রথমেই ওর স্বভাব মতো এক নাগাড়ে কিছুক্ষন বকে গেল…দিদিভাই…এ তো সোনার টুকরো ছেলে মনে হচ্ছে রে…তাই বলে আবার কিছু না দেখে রাজী হবি না কিন্তু…জেঠিমারা যা করবে করুক…তুই কিন্তু মাঝে মাঝে দেখা করবি…না হলে বুঝতে পারবি না…ভেতরে ভেতরে কিছু গন্ডগোল আছে কিনা…সব যদি দেখিস ঠিক আছে তবেই রাজী হবি।ওদিক থেকে পুবালী কিছু একটা বললে…রুপসা হেসে ফেলে বলল…ঠিক আছে রে দিদিভাই…রাখি এখন…জানাস কিন্তু।

অরিত্র ওর হাত থেকে ফোনটা নিয়ে হেসে ফেলে বলল…এই রুপসা…তুই কি ছোড়দির ঠাকুমা নাকি রে…এমন ভাব করছিস যেন…সব কিছু জেনে বুঝে গেছিস।

এই দাদাভাই…ভালো হবে না কিন্তু…তুই কিছু বুঝিস না বলে কি আমি কিছু বুঝবো না নাকি।
আমি আবার কি বুঝি না রে?
তুই কিচ্ছু বুঝিস না…হাঁদারাম কোথাকার…আমি যদি তুই হতাম…কবেই I Love You বলে দিতাম…
খুব সোজা না? নিজে তো আজ অব্দি একটা জোটাতেও পারলি না।

রুপসা চোখ ছোটো ছোটো করে ওর দিকে তাকিয়ে বলল…এই দাদাভাই…বাজে বকবি না…অনেক আগেই আমি জোগাড় করে ফেলেছিলাম…রাজী না হলে কি করবো?

আমি বাজে বকছি নাকি তুই বাজে বকছিস রে? তুই কাউকে জোগাড় করলে আমাকে না বলে থাকতে থাকলি কি করে?
রুপসা ফিক করে হেসে ফেলে বলল…তোকে আবার আলাদা করে কি জানাবো? এই জন্যই তো তোকে হাঁদারাম বলি…
মানে?
মানে আবার কি…ওটা তো তো তুই ছিলি রে…বুঝলিই না আমার ভালোবাসা কতটা খাঁটি ছিল…প্রথম প্রেম…কি রোমান্টিক হয়…
দাঁড়া তোর রোমান্টিক হওয়া আমি দেখাচ্ছি…অসভ্য…ফাজিল মেয়ে কোথাকার…
এই দাদাভাই…চুলে হাত দিবি না কিন্তু…খুব খারাপ হয়ে যাবে…
ওদের ভাই বোনের খুনসুটির মাঝে মৌ ঘরে ঢুকলো একটা প্লেটে কিছু স্ন্যাক্স আর কফি নিয়ে, এতক্ষন দিদানের সাথে কিচেনে ছিল, গালের এক দিকে বোধ হয় হলুদের দাগ, নাকের ডগায় বিন্দু বিন্দু ঘাম। একেবারে শেষের দিকে আসায় বুঝতে পারছিল না ব্যাপারটা কি…দু হাতে খাবারের ট্রে টা ধরে দাঁড়িয়ে থেকেএকবার অরিত্রর দিকে আর একবার রুপসার দিকে তাকাতে তাকাতে বোঝার চেষ্টা করছিল কি ব্যাপার।
অরিত্র ওর অবস্থা দেখে বলল…আমার দিকে তাকিয়ে লাভ নেই…আমি বলতে পারবো না…ওই ফাজিল মেয়েটাকে জিজ্ঞেস কর…যত বড় হচ্ছে তত ফাজলামো বাড়ছে…
রুপসা মৌ এর হাত থেকে ট্রেটা নিয়ে বিছানায় রেখে দিয়ে ওকে জড়িয়ে ধরে কানে কানে বলল…দাদাভাই আমার প্রথম প্রেম বলে পেছনে লাগছিলাম…জানো তো কি রেগে গিয়েছিল…
মৌ মুখ টিপে হাসতে হাসতে অরিত্রর দিকে তাকিয়ে বোঝাবার চেষ্টা করল…তুমি সত্যি ই বুদ্ধুরাম…কিচ্ছু বোঝো না…



দেখতে দেখতে রুপসার ফেরার দিন চলে এলো। আজ বিকেলের ফ্লাইটে ফিরে যাবে। সকাল থেকেই মৌ ওকে কাছ ছাড়া করতে চাইছিল না, মুখে একটুও হাসি নেই।দু চোখে ভীষন কষ্ট পাওয়ার আভাস। রুপসা ওকে বার বার বোঝানোর চেষ্টা করছে…আবার আসবে বলে…কিন্তু কিছুতেই ওর মুখে হাসি ফেরাতে পারছে না।মাঝে দুবার রুপসাকে জড়িয়ে ধরে কান্নাকাটিও করেছে।বেরোবার কিছুক্ষন আগে চোখে মুখে জল দিয়ে নিজেকে একটু স্বাভাবিক করার চেষ্টা করেছে কিন্তু তাতে ওর বিষন্নতা বিন্দুমাত্র কমেনি। দিদান ওর অবস্থা দেখে অরিত্রকে বলল…তুই বরং ওকে সাথে নিয়ে যা…না হলে তোরা বেরিয়ে যাবার পর আরো কান্নাকাটি করবে।
Like Reply


Messages In This Thread
তুমি এলে তাই - by sorbobhuk - 21-01-2019, 11:09 AM
RE: তুমি এলে তাই পার্ট ১ - by sorbobhuk - 21-01-2019, 12:21 PM
RE: তুমি এলে তাই - by arn43 - 12-10-2020, 09:31 PM



Users browsing this thread: 2 Guest(s)