11-11-2019, 07:32 PM
আমি একটু ত্রস্ত হয়ে পড়লাম। কাজীকে ডাকলাম, ‘এই কাজী শোন এদিকে।‘ কাজী আসতে বললাম, ‘এই দ্যাখ এই পাগলীর কাণ্ড। ও এখানে থাকবে। তুই রান্না করেছিস তো?’কাজী বিজ্ঞের মত ঘাড় নেড়ে বলল, ‘আমি জানি ও থাকবে। দুপুরে বৌদি বলছিল স্নেহা অনেকদিন ধরে বলছে নাকি ও কাকুর কাছে গিয়ে থাকবে। আপনাকে ওর রান্নার জন্য ভাবতে হবে না।‘ আমি স্নেহার দিকে তাকাতে দেখি স্নেহা মুচকি হাসছে। আমি বললাম, ‘ও আমাকে সারপ্রাইস দেওয়া না? মনে মনে তোমরা সব ঠিক করে রেখেছিলে।‘ কাজীর দিকে তাকিয়ে বললাম, ‘হতভাগা, তুই কেন বলিস নি?’ কাজী স্নেহার দিকে তাকিয়ে বলল, ‘স্নেহা বলতে বারন করেছিল।‘ কাজী আবার চলে গেল ওর ঘরে। আমি বললাম, ‘আমি তোর মাকে ফোন করে জানবো কিন্তু। আমাকে জড়িয়ো না আবার।‘ স্নেহা জিজ্ঞেস করলো, ‘তোমার ল্যাপটপ কই, দাও।‘ আমি বললাম, ‘ওই আলমারিতে আছে, বার করে নে।‘ স্নেহা উঠে বলল, ‘তুমি টিভি দেখ। আমি ল্যাপটপে বসছি।‘ স্নেহা ঘরে চলে গেল। আমি মনে মনে খুব খুশি। স্নেহার সাথে সময় কাটাবো এর থেকে আর খুশির কি থাকতে পারে। আমি মাঝে একবার তনুকে ফোন করলাম। জিজ্ঞেস করলাম, ‘আরে স্নেহা তোকে বলে এসেছে যে আমার কাছে থাকবে?’ তনু বলল, ‘হ্যাঁ, কদিন ধরে বলছিল আমি রাতে কাকুর কাছে থাকব। নেট করতে পারবে না কি যেন বলছিল। বাবা, তোদের দুটোতে যা ভাব।‘ আমি কোন জবাব দিলাম না। কিছু পরে তনু আবার বলল, ‘দীপ, তুই কি ঠিক করেছিস আমার সাথে ভালভাবে কথা বলবি না? ওই দিনের ঘটনা তোকে এতো নাড়া দিলো যে কথা বলাই প্রায় বন্ধ করে দিলি?’ আমি বললাম, ‘এই ভালো আছি তনু। তোদের সাথে এতো বেশি মিশে গেছিলাম যে কোন ছোট ঘটনাও আমাকে নাড়া দিত। এটা তো অনেক বড়। তুইও দেখবি ভালো থাকবি।‘ তনুর যেন কত দুঃখ, এমন গলায় বলল, ‘ভালো লাগে না রে তোর সাথে কথা না বললে।‘ আমি বললাম, ‘মানিয়ে নে। একদিন না একদিন তো আমাদের যেতেই হবে। এখন থেকে সেটা হলেই মনে হয় আমাদের পক্ষে ভালো। তুইও পার্থকে সময় দিতে পারবি। আমার একটু একা লাগবে। কিন্তু আমি মানিয়ে নেব।‘ তনু যেন আমাকে কিনে নিয়েছে এমনভাবে বলল, ‘ঠিক আছে দেখব কতদিন না এসে পারিস আমার কাছে।‘ আমি কিছু না বলে ফোন ধরে রাখলাম। তনুও ধরে রেখেছিল। উত্তর না পাওয়ায় ফোন কেটে দিল। আমি টিভি দেখতে থাকলাম। স্নেহা ঘরে বলে ফ্যাশন টিভি চালিয়ে দিলাম আওয়াজ কম করে। মদ খাচ্ছি আর দেখছি। স্নেহা কখন এসে গেছে জানি না। ও টিভি দেখে বলল, ‘উফফ, বাবা, তোমার সারাদিন মেয়ে আর মেয়ে। কি দেখছ ওই সব পোশাক পরা মেয়েগুলোকে?’ আমি ধরা পরে গিয়ে হেসে ফেললাম, মুখে বললাম, ‘এই ব্রা প্যান্টি পরা মেয়ে আর কোথায় পাবি দেখতে? আমার ভালো লাগে।‘ স্নেহা মুখ বেঁকিয়ে বলল, ‘তোমার তো আরও ভালো লাগতো যদি এরা এইসব না পরে ঘুরে বেড়াতো।‘ আমি হাতে তালি দিয়ে বললাম, ‘উফফ, গ্রেট হতো তাহলে। এই শালা ইন্ডিয়ান গর্ভমেন্ট সেন্সর বসিয়ে এতো বাজে করেছে। ইউ টিউবে সব খোলামেলা দেখা যায় জানিস।‘ স্নেহা চলে যেতে যেতে বলল, ‘আমার জেনে কাজ নেই। তুমি জানো। আর সেন্সর সব তোমাদের মত লোকেদের জন্যই হয়েছে, বুঝলে সেক্সি।‘ আমি ওকে ধরতে গেলাম ‘কি বললি, কি বললি’ বলে, কিন্তু ও ততক্ষনে পালিয়ে গেছে। আমি হেসে আবার মনোযোগ দিলাম টিভিতে। প্রায় সাড়ে দশটা নাগাদ কাজী এসে বলল, ‘স্যার, খাবেন এখন?’ আমি বললাম, ‘দ্যাখ স্নেহা খায় কিনা।‘ কাজী ঘরে ঢুকে বলল, ‘স্নেহা এখন খাবে?’ স্নেহার ঘর থেকে আওয়াজ পেলাম, ‘ডি খাবে এখন?’ স্নেহা কাজীর সামনে আমাকে ডি বলে ডাকে। কাজী উত্তর দিল, ‘হ্যাঁ, স্যার খাবেন।‘ স্নেহা বলল, ‘তাহলে দিয়ে দাও।‘ কাজী খাবার বাড়তে গেল। কিছু পরে স্নেহা এসে পাশে বসতে আমি জিজ্ঞেস করলাম, ‘নেট বন্ধ করে এসেছিস তো?’ স্নেহা বলল, ‘বুদ্ধি দিও না। আমি চলে আসবো আর নেট খোলা রাখবো, ভাবলে কি করে?’ আমি হার স্বীকার করে বললাম, ‘ঠিক আছে, বেশি কথা বলতে হবে না।‘ স্নেহা ছোট্ট করে আমার পায়ে চিমটি কাটল, তারপর বলল, ‘এফ টিভি বন্ধ করে দিলে কেন? কাজীদা আছে বলে। বলবো ওকে তুমি কি দেখছ?’ আমি সাহস দেখিয়ে বললাম, ‘বল না। আমার কি আছে।‘ কাজী খাবার দিল। আমরা খেতে শুরু করলাম। খাওয়া শেষে আমি উঠে একটা সিগারেট জ্বালিয়ে ছাদে চলে গেলাম ঘুরতে। স্নেহা আবার ল্যাপটপে বসে গেল। আমি তখনো ছাদে পায়চারি করছি, কাজী এসে বলল, ‘স্যার আমি শুতে যাচ্ছি। আপনি দরজাটা বন্ধ করে দেবেন। জল দিয়ে দিয়েছি ঘরে।‘ কাজী জিজ্ঞেসও করলো না স্নেহা কোথায় শোবে। ও জানে আমার কাছেই শোবে স্নেহা। একা একা স্নেহা শুতে ভয় পাবে। আমি আরও কিছুক্ষন থেকে চলে এলাম ঘরে ছাদের দরজা বন্ধ করে। স্নেহা তখনো ল্যাপটপে। আমি বললাম, ‘আরে ওত মনিটরের সামনে থাকলে চোখ খারাপ হয়ে যাবে।‘ ও মুখ তুলে জিজ্ঞেস করলো, ‘তুমি কি শোবে এখন?’ আমি বললাম, ‘কি করবো আর। শুই। তুই একটু পরে শুয়ে পরিস। আমার কাছেই শুবি তো?’ স্নেহা আমার দিকে চোখ বড় বড় করে বলল, ‘নাগো, আমি না ছাদে গিয়ে শোব।‘ হেসে ফেলল আমার মুখ দেখে। আবার বলল, ‘আচ্ছা ডি, এই প্রশ্ন কেউ করে? তোমার কাছে এসেছি তোমার কাছে শোব নাতো কার কাছে শোব?’ আমি একটু যেন ইতস্তত দেখিয়ে বললাম, ‘না তুই এখন বড় হয়েছিস। তোর আলাদা জগত হতেই পারে।‘ স্নেহা জবাব দিল, ‘তোমার কাছে অন্তত না। এখনও পর্যন্ত।‘ আমি বাথরুম থেকে পেচ্ছাপ করে এলাম। এসে দেখি ও নিচে নেমে বসেছে ল্যাপটপ নিয়ে। আমি ঢুকতেই স্নেহা বলল, ‘তুমি লাইট নিভিয়ে শুতে পারো। আমার জন্য লাইট জ্বালাতে হবে না।‘ আমি ওকে উত্তর দিতে যাবো ফোন বেজে উঠলো। স্নেহা বলল, ‘বাবা, এতো রাতে কার ফোন আবার তোমার কাছে?’ আমি দেখলাম পার্থ। জানালাম স্নেহাকে, ‘কার আবার তোর বাবার। দেখি কি বলছে?’ আমি হ্যালো বলাতে অপার থেকে পার্থ বলল, ‘শুনলাম স্নেহা তোর কাছে গেছে। দেখিস ও যাতে তোকে ডিস্টার্ব না করে।‘ আমি বললাম, ‘ভাবিস না। ও ঠিক আছে। আমাকে কোন ডিস্টার্ব করছে না।‘ পার্থ বলল, ‘একটু তনুর সাথে কথা বল।‘ তনু ফোন নিয়ে বলল, ‘কিরে, মেয়েটা তোকে ডিস্টার্ব করছে নাতো। যদি ল্যাপটপ না ছাড়তে চায় তাহলে অন্য ঘরে ওকে বসিয়ে দিস। নাহলে তোর ঘুমের ডিস্টার্ব হবে।‘ আমি বললাম, ‘আরে তোরা ফালতু চিন্তা করা ছেড়ে দে। আমার কাছে আছে তোরা নিশ্চিন্তে থাকতে পারিস।‘