11-11-2019, 07:31 PM
আমি এক কাপ চা বানিয়ে খেয়ে বাথরুমে চলে গেলাম একটা সিগারেট ধরিয়ে। ফিরে এলাম কিছুক্ষন পর। পার্থ উঠে বসেছে। আমাকে দেখে বলল, ‘আরে আমি কি এইখানে শুয়েছিলাম?’ আমি কোন জবাব দিলাম না। তনুও কিছু পরে উঠে পড়লো। যখন ফিরে এলো ওরা এমন ব্যবহার করতে লাগলো যেন কাল রাতে কিছুই হয় নি। একদম সব নর্মাল। আমি শুধু দেখে গেলাম। সত্যি কথা বলতে কি ওদের সাথে কথা বলতে আমার ঘেন্না হচ্ছিল। একসময় ওরা বেড়িয়ে গেল। স্নেহা আমার বিছানায় শুয়েই রইল। তনু স্নেহাকে ডাকার চেষ্টা করেছিল, আমি বলেছিলাম, ‘থাক ঘুমোচ্ছে। উঠলে আমি পাঠিয়ে দেব।‘ পার্থ বলল, ‘সেই ভালো।‘ বলে ওরা চলে গেল। আমি দরজা বন্ধ করে ফিরে এলাম। আমার খাট থেকে বাইরে সবুজ গাছের বন দেখা যায়। আমি স্নেহার পায়ের পাশে বসে দেখতে লাগলাম সবুজ গাছগুলো। শুনতে লাগলাম পাখির ডাক। নিল আকাশে সাদা মেঘ ভেসে বেড়াচ্ছে। ওরা কত স্বাধীন ছোটবেলায় মনে হতো। মনে হতো আমিও কেন ওইরকম উড়ে যেতে পারি না। যেতে পারলে হয়তো এখন বর্ষার কাছে চলে যেতাম কাল রাতের দুঃস্বপ্ন ভুলতে। স্নেহা নড়ে উঠলো। পা বেঁকাতে আমার গায়ে লাগলো। আমি পাটা কোলে তুলে নিয়ে আস্তে আস্তে হাত বুলাতে লাগলাম নিজের মনে। কিছু পরে স্নেহার ঘুম ভেঙ্গে ও দেখল আমি হাত বুলাচ্ছি ওর পায়ে। ও পাটা টেনে নিয়ে বলল, ‘এই কি হচ্ছে? তুমি আমার বড় না? আমার পায়ে হাত দিলে আমার পাপ হবে।‘ আমি বললাম, ‘আমি তোর বড় হতে পারি। কিন্তু আমি তো তোর বন্ধুও। বন্ধুর অধিকার আছে বন্ধুর পায়ে হাত দিতে।‘ স্নেহা চাদর সরিয়ে উঠে বসল। বলল, ‘হ্যাঁ, শুধু তোমার অধিকার আছে। ওরা সব চলে গেছে?’ আমি উত্তর দিলাম, ‘হ্যাঁ। বলেছি তোর ঘুম ভাঙলে তুই চলে যাবি।‘ স্নেহা বলল, ‘আমি বাথরুম থেকে আসছি।‘ কিছুক্ষন পর ও বাথরুম থেকে ফিরে আসাতে আমি বললাম, ‘থ্যাঙ্ক ইউ।‘ স্নেহা আমার দিকে তাকিয়ে বলল, ‘হঠাৎ সকালবেলা থ্যাঙ্ক ইউ? কেন?’ আমি ওকে দেখিয়ে বললাম, ‘তুই যে আমার কথা রেখেছিস তার জন্য।‘ স্নেহা নিজের দিকে তাকিয়ে বলল, ‘কোন কথা?’ আমি বললাম, ‘শোবার সময় ভিতরের সবকিছু খুলে শোওয়া।‘ স্নেহা হেসে উঠলো, সকালবেলার মত তাজা হাসি, বলল, ‘তাহলে? বলেছিলাম না তোমাকে। মানলাম তো? আরে তুমি বলেছ আর আমি না মেনে থাকতে পারি? এই তোমার কাছে টুথ ব্রাশ আছে? মুখটা ধুতে হবে।‘ আমি বললাম, ‘নারে, নতুন নেই।‘ স্নেহা বলল, ‘তাহলে তোমারটাই দাও। দাঁত মেজে নিই। তোমার কোন অব্জেকশন নেই তো?’ আমি উত্তর করলাম, ‘তুই আমারটায় দাঁত মাজবি, তোর কোন অসুবিধে না থাকলে আমার কি।‘ ওকে দেখিয়ে দিলাম কোথায় আছে। ও ব্রাশ আর পেস্ট নিয়ে বেসিনে চলে গেল দাঁত মাজতে। ফিরে এসে বলল, ‘এবারে দয়া করে একটু ঘর ছেড়ে দেবেন। আমি কাপড় পরবো।‘ আমি বললাম, ‘আরে তুই তো কাপড় পরে আছিস।‘ স্নেহা জবাব দিল, ‘না মশাই, যেগুলো তুমি ছেড়ে শুতে বলেছ সেইগুলো পরতে হবে আমাকে। যাবো না?’ আমি হাসলাম, বললাম, ‘কেন আমার সামনেই পর। কি আছে তাতে?’ স্নেহা আমার হাত ধরে টেনে ঘর থেকে বার করে দিয়ে বলল, ‘অনেক কিছু আছে। তুমি দয়া করে যাও।‘ আমি বেড়িয়ে এলাম। নিজের সাহসে নিজেই তারিফ করলাম। কাল রাতে ঘটনার পর এখনও আমার মজা করার ইচ্ছে আছে। আমার পার্থর সাথে দরকার ছাড়া কথা বলা হয় না। তনুর সাথে কথা বলা বন্ধ করে দিয়েছি প্রায়। দু একদিন ফোন করেছিল, আমি হ্যাঁ না বলে ছেড়ে দিয়েছিলাম। স্নেহার সাথে রেগুলার কথা বলি। কেন জানি মনে হয় আমি স্নেহার সাথে মুক্ত মনে কথা বলতে পারছি। একদিন রাতে আমি আর কাজী বসে টিভি দেখছি। দরজায় শব্দ হোল। আমি কাজীর দিকে তাকালাম। কে এলো আবার রাতে? ঘড়িতে দেখলাম রাত আটটা বাজে। এমনিতে সবাইকে বলা আছে আমার ঘরে যেন কেউ না আসে, যা কথাবার্তা হবে সব সাইটে। তনু বা পার্থর আসার চান্স নেই। কারন সেই ঘটনার পর থেকে আমি যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছি। তাহলে কে? আমি কাজীকে বললাম, ‘যা তো দেখত গিয়ে কে এলো? অন্য কাউকে দেখলে না করে দিবি।‘ কাজী উঠে চলে গেল। আবার ফিরে এলো। আমি দেখি পিছন পিছন স্নেহা ঢুকছে। খুব ভালো লাগলো স্নেহাকে দেখে। ওর হাতে একটা ব্যাগ, কালো রঙের। আমি হেসে বললাম, ‘আরে তুই এই রাতে? মা ছাড়ল?’ স্নেহা বলল, ‘ছাড়বে না কেন? বলে এলাম তোমার কাছে যাচ্ছি। ব্যস। দাঁড়াও ব্যাগটা রেখে আসি।‘ ও আমার ঘরে ঢুকে ব্যাগ রাখতে চলে গেল। আমি ওকে দেখতে লাগলাম প্রান ভরে। তরতাজা কিছু দেখলে মনটা তো শান্তি পায়। একটা লং স্কার্ট পরে আছে, উপরে একটা ছোট টপ। ভালো লাগছে দেখতে। ব্যাগ রেখে স্নেহা বাইরে এসে আমার পাশের চেয়ারে বসে কাজীকে বলল, ‘কিগো কাজীদা, কেমন আছো?’ কাজী উত্তর দিল, ‘ভালো আছি গো। আর তুমি?’ স্নেহা হেসে বলল, ‘আমিও ভালো আছি।‘ কাজী ‘তোমরা গল্প করো’ বলে উঠে নিজের ঘরে চলে গেল। আমি টিভি দেখলে কাজী বেশিক্ষন বসে না আমার সামনে। আমার অন্য কোন সিরিয়াল দেখার ইন্টারেস্ট নেই। একটু খবর শুনে চলে যাই ফ্যাশন টিভি দেখতে। মেয়ে দেখেই আমার সময় কেটে যায়। আর কাজী সেটা জানেও। কাজী চলে যাবার পর স্নেহাকে জিজ্ঞেস করলাম, ‘তুই যে চলে এলি তোর মা তো একা এখন ঘরে।‘ স্নেহা উত্তর দিল, ‘আরে মা এইসময় থোরি ঘরে থাকে। বেড়িয়ে গেছে কারো সাথে গল্প করতে। মায়ের কম বন্ধু আছে নাকি এই পাড়ায়? মাই এগিয়ে দিয়ে গেল।‘ আমি ভাবলাম সেটা স্নেহা ঠিক বলেছে। এখন কার সাথে মাড়াতে গেছে কে জানে। আমি স্নেহাকে জিজ্ঞেস করলাম, ‘তোর ওই ব্যাগে কি আছে?’ স্নেহা বলল, ‘রাতে শোবার কাপড় জামা।‘ আমি আকাশ থেকে পড়লাম, জিজ্ঞেস করলাম, ‘কাপড় জামা মানে? তুই এখানে থাকবি নাকি?’ স্নেহা ঘাড় নেড়ে উত্তর দিল, ‘হ্যাঁ মশাই থাকব। সকালবেলা চলে যাবো আবার। ব্যাগ এখানেই থাকবে।‘